পাহাড়ে মেঘের ছায়া পর্ব – ২৭

0
559

উপন্যাসঃ পাহাড়ে মেঘের ছায়া
পর্ব – ২৭
(নূর নাফিসা)
.
.
২৭.
মেঘের জন্য অপেক্ষা করতে করতে কখন তার চোখ লেগে এসেছে বুঝতেই পারেনি নাফিসা! হঠাৎ কারো স্পর্শ অনুভব করতে পেরে চোখ খুলে তাকালো সে। দেখলো মেঘ তার পাশে বসে ওড়না সরিয়ে কামড়ের জায়গা তুলো দিয়ে পরিষ্কার করছে। মেঘের চোখে তাকিয়ে দেখলো ভেজা চোখ লাল হয়ে আছে! তুলা দিয়ে পরিষ্কার করে সেখানে মলম লাগিয়ে দিলো মেঘ। ডিসপেনসারি থেকে তুলা, মলম আর টেবলেট নিয়ে এসেছে। নাফিসা ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো বারোটা বাজতে চলেছে! প্রায় তিন ঘন্টা বাইরে ছিলো মেঘ! মলম লাগাতেই ক্ষত জায়গায় জ্বালা করতে লাগলো! নাফিসা চোখের পানি ফেলছে আর মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘ ব্যান্ডেজ করে দিলো। একটা টেবলেট নিয়ে নাফিসার হাতে দিলো আর পানির গ্লাস পাশে এগিয়ে দিলো। এতোক্ষণ সময়ে নাফিসা মেঘের দিকে তাকিয়ে থাকলেও মেঘ একবারের জন্যও তাকায়নি তার দিকে! নাফিসা উঠে বসে টেবলেট খেয়ে নিলো। মেঘ মাদুরটা মাটিতে বিছিয়ে কাথা আর বালিশ মাদুরে ফেলে মশারি টানাতে লাগলো। নাফিসা মৃদু স্বরে বললো,
– খাটে এসে শুয়ে পড়ুন।
মেঘ তার কথায় পাত্তা না দিয়ে মশারি টানিয়ে নিচে শুয়ে পড়লো। নাফিসা বুঝতেই পারছে খুব রেগে আছে তার উপর। একদমই উচিত হয়নি মেঘকে উল্টাপাল্টা কথা বলার! কিন্তু এখন রাগ ভাঙাবে কিভাবে! পরক্ষণে মেঘের করা দুষ্টুমির কথা মনে হতেই নাফিসা খাট থেকে নেমে মাদুরে মেঘের পাশে শুয়ে পড়লো। মেঘ একটু সরে গেলে নাফিসাও চেপে গেলো তার দিকে। মেঘ এবার মাদুর থেকে উঠে খাটে চলে এলো। নাফিসা মুচকি হেসে কাথাটা ভালো করে জড়িয়ে মাদুরেই শুয়ে রইলো।
সকালে ঘুম ভাঙতেই নিজেকে খাটে আবিষ্কার করলো নাফিসা! সে তো মাদুরে শুয়ে ছিলো, খাটে এলো কিভাবে! মেঘ এনেছে নিশ্চয়ই। আশেপাশে তাকিয়ে মেঘকে দেখতে পেলো না। মাটিতে করা বিছানাও নেই, সব গুছানো! মেঘই করেছে নিশ্চয়ই! কিন্তু সে কোথায় গেছে! নাফিসা উঠে খাটের বিছানা গুছিয়ে নিলো। নামাজ পড়ে আম্মির সাথে রান্নার কাজে সাহায্য করলো। খরগোশ ছানাদের ঘাস খাওয়ালো। নাস্তা রেডি করে ফেলেছে মেঘ একবারের জন্যও বাসায় আসেনি! আম্মি জিজ্ঞেস করলো,
– নাফিসা মেঘ কোথায়? সকাল থেকে দেখছি না যে!
– জানি না তো। আমিও সকাল থেকে দেখছি না। আমার কাছে বলে যায়নি।
– সকাল সকাল কোথায় বেরিয়ে গেলো! মোবাইলটা নিয়ে আয় তো!
নাফিসা মোবাইল নিয়ে এলে আম্মি মেঘের নম্বরে ডায়াল করলো। মেঘের ফোন বন্ধ!
– ফোন তো বন্ধ! তুই চা বাগানে যাবি না?
– হ্যাঁ।
– তাহলে যাচ্ছিস না কেন?
– হ্যাঁ যাচ্ছি।
নাফিসা খেয়ে চা বাগানে যাওয়ার জন্য রেডি হলো। সে খাওয়ার সময় আম্মিকেও খায়িয়ে ওষুধ খায়িয়েছে। কাল রাতের ঘটনা ভাবতে ভাবতে নাফিসা চা বাগানে চলে এলো। চোখ যেন আশেপাশে মেঘকেই খুজে বেড়াচ্ছে। চা বাগান থেকে এসেও শুনলো মেঘ এখনো বাসায় আসেনি! ফোনও বন্ধ! আম্মি টেনশন করছে আর নাফিসার মনে ভয় হানা দিচ্ছে! মেঘ কি তার উপর খুব অভিমান করেছে! মেঘ কি তার কথায় কষ্ট পেয়ে তাকে ছেড়ে চলে গেলো! সে কি ঢাকা ফিরে গেছে নাকি অন্যকোথাও! তার আবার কোনো বিপদ হয়নি তো! নানান কথা চিন্তা করতে করতে বিকেল হয়ে গেছে! সে দ্রুত পাহাড়ে বাচ্চাদের পড়ানোর জন্য বেরিয়ে পড়লো। মেঘ তো পাহাড়ে আসে, এখানে নিশ্চয়ই তাকে পেয়ে যাবে। বাচ্চাদের পড়াতেও ভালো লাগছে না। মন শুধু মেঘের অপেক্ষায় আছে! সকাল থেকে বিকেল পেরিয়ে যাচ্ছে এখনো মেঘের দেখা মিললো না! রিসোর্টে, বাজারের দিকেও খুঁজেছে নাফিসা। আজ বিকেলে চা বাগানেও যায়নি সে। মেঘের অভাব হারে হারে টের পাচ্ছে! সে ও যে মেঘকে ভালোবেসে ফেলেছে তা আজ স্পষ্ট অনুভব করতে পারছে! একবার কাছে পেলে তো অভিমান ভাঙ্গার চেষ্টা করতো। কোথায় গেছে মেঘ, আসছে না কেন তার কাছে! জামাকাপড় তো সবই এখানে আছে! মেঘ কি সত্যি সত্যিই চলে গেছে তার কথায়! এই অপূর্ব মানুষটাকে এতো কাছে পেয়েও কি সে হারিয়ে ফেললো! ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে, চোখেও অশ্রু ঝরছে! রুমে একা বসে বসে কান্না করছে নাফিসা! মাগরিবের নামাজটা আদায় করেছে। মোনাজাতে থেকেই মেঘের কন্ঠ শুনতে পেল! আলহামদুলিল্লাহ বলে মোনাজাত শেষ করলো। দরজার কাছে এসে শুনতে পেল,
– কোথায় গিয়েছিলে মেঘ?
– একটা কাজে বেরিয়েছিলাম আম্মি। সেখান থেকে রেলস্টেশনে গেলাম টিকেট কাটতে। কাল ঢাকা যাবো।
– ওহ, আচ্ছা। ফোন বন্ধ কেন তোমার? দিনকাল ভালো না, এদিকে চিন্তায় ছিলাম। একবার জানাবে না!
– আম্মি ফোনে চার্জ না থাকায় বন্ধ ছিলো। সরি, খুব সকালে বের হওয়ার কারণে বলে যেতে পারিনি।
– ঠিক আছে। হাতমুখ ধুয়ে এবার বিশ্রাম নাও। চোখ মুখ কেমন হয়ে আছে!
মেঘ নাফিসাকে টপকিয়ে ঘরে ঢুকলো। নাফিসা নিজে থেকেই জিজ্ঞেস করলো,
– গোসল করবেন এখন?
মেঘ কোনো জবাব দিলো না। মোবাইল চার্জে লাগিয়ে নিজের হাতে জামাকাপড় আর তোয়ালে নিয়ে বাথরুমের দিকে চলে গেলো! মেঘের অবহেলা নাফিসার সহ্য হচ্ছে না, সারাদিন বাইরে থেকে এখন একটুও কথা বললো না তার সাথে! কিভাবে একা একা চলে গেলো গোসল করতে! আজ কি তার লজ্জা লাগছে না! নাফিসা স্বেচ্ছায় বাথরুমের সামনে এসে দাড়িয়ে রইলো। মেঘ গোসল করে নিজের জামাকাপড় নিজেই ধুয়ে বেরিয়েছে! আজ নাফিসার জন্য কাজ ফেলে রাখেনি! মনটা খারাপ করে নাফিসা মেঘের পিছু পিছু ঘরে এলো। মেঘ ব্যাগে জামাকাপড় গুছানো শুরু করেছে! সে কি সত্যিই চলে যাবে! না, এটা হতে পারে না! যেতে দিবে না তাকে। সে যে তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, ভালোবাসে তাকে। বউকে ফেলে রেখে কেন যাবে সে! দায়িত্ব নিয়েছিলো না, সেই দায়ে তাকে আটকে রাখবে।
নাফিসা খাবার নিয়ে এলো মেঘের জন্য। মেঘ হাত ধুয়ে খেতে বসলে নাফিসা তার নিজের প্লেটও এখানে নিয়ে এলো। আজ মেঘের সাথে খাবে। মেঘ কিছু বললো না। নিজের খাওয়াতে মনযোগ দিয়েছে। তবে একটা বিষয় লক্ষ্য করেছে নাফিসা বাটি থেকে তরকারি নিয়েছে কিন্তু মাছ নেয়নি। কাল থেকে এখন পর্যন্ত নাফিসার মুখের দিকেও তাকায়নি। তবে এটা আন্দাজ করতে পেরেছে নাফিসা ওড়না ছড়িয়ে গলায় ফেলে রেখেছে বেন্ডেজের জন্য। চুপচাপ খাওয়া শেষ হলে নাফিসা থালাবাটি রেখে এলো। মেঘ ল্যাপটপও ব্যাগে তুলে রাখলো। নাফিসা খাটের পাশে দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– কাল কি আপনি সত্যিই চলে যাবেন?
মেঘ তার কথায় উত্তর না দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। নাফিসার খুব খারাপ লাগছে। মেঘ তাকে এতোটা অবহেলা করে কিভাবে ! একবার কথা বলছে না, তার দিকে তাকাচ্ছেও না! ক্ষমা চাওয়ার সুযোগটাও দিচ্ছে না!
নাফিসা মুখ চেপে ধরে কান্না করছে! মেঘকে সে কিছুতেই যেতে দিবে না! মেঘকে আটকানোর জন্য এই রাতটাই আছে তার কাছে। সে চোখের পানি মুছে ইশার আযানের পরপরই নামাজ আদায় করলো। মেঘের জন্য আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো। ব্যাগ থেকে জামাকাপড় সব আলমারিতে তুলে রাখলো। হঠাৎ চোখ পড়লো প্যাকেটের উপর। মেঘ তাকে শাড়ি এনে দিয়েছিলো! মেঘের এনে দেওয়া শাড়ি থেকে একটা শাড়ি হাতে নিলো। লাল রঙ তো মেঘের পছন্দ, তাই সে লাল শাড়িটাই হাতে নিয়েছে। এটা পড়বে সে এখন।
দরজা লাগিয়ে শাড়ি পড়া শুরু করলো। মেঘ এসে দরজা ধাক্কাতেই দেখলো ভেতর থেকে বন্ধ! টোকা দিয়ে নক করলো দুইবার কোনো সাড়া নেই। নাফিসা বুঝতে পেরেছে মেঘ এসেছে কিন্তু তার শাড়ি পড়া শেষ হয়নি তাই খুলছে না! মেঘ বিরক্তিসহিত দাতে দাত চেপে বললো,
– আজকের রাতটাও কি ঘরে জায়গা হবে না?
– আসছি।
যদি আবার রাগ করে চলে যায়! তাই নাফিসা অর্ধেক শাড়ি পড়েই দরজা খুলে দিয়ে দ্রুত আবার ঘরের এক কোনে এসে শাড়ির কুচি ঠিক করতে লাগলো! মেঘ দরজা ঠেলে ঘরে পা রাখতেই নাফিসাকে লজ্জিত অবস্থায় দেখে আবার দরজা চাপিয়ে বাইরে চলে এলো। নাফিসা যথাসম্ভব দ্রুত শাড়ি পড়া শেষ করলো। মেঘকে দেখতে না পেয়ে দরজা খুলে বাইরে উঁকি দিলো। মেঘ পকেটে দুহাত রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে উঠুনে দাড়িয়ে আছে। নাফিসাকে দরজা খুলতে দেখে মেঘ ভেতরে প্রবেশ করলো। তার দিকে তেমনভাবে না তাকালেও মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তার। খুব দেখতে ইচ্ছে করছে শাড়িতে তার মেঘাকে কেমন লাগছে। কিন্তু মাথা তুলে তাকালো না সে! ল্যাপটপ টেবিলে নামানো দেখে কাপড়ের ব্যাগ খুজতে লাগলো। আলমারি খুললে নাফিসা এসে আলমারি লাগিয়ে দিলো আর আলমারিতে পিঠ ঠেকিয়ে মেঘের সামনে এসে দাড়ালো। মেঘ পাশ কাটিয়ে চলে আসতে নিলে নাফিসা তার শার্টের কলার টেনে ধরে বললো,
– এমন করছেন কেন আপনি? আমাকে দেখছেন না কেন? কথা বলছেন না কেন আমার সাথে! সরি ওসব বলার জন্য!
মেঘ হাত ছুটাতে ছুটাতে অন্যদিকে তাকিয়েই বললো,
– শাড়ি পড়ে যাতে আমার সামনে কেউ না আসে!
মেঘ তাকে ছাড়িয়ে জগ থেকে ঢেলে পানি খাচ্ছে। নাফিসা তার সামনে এসে দাড়িয়ে বললো,
– একশো বার আসবো।
মেঘ খাটে উঠে একপাশে শুয়ে পড়লো। নাফিসাও উঠে মেঘের পিঠে মাথা ঠেকিয়ে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো। মেঘ তার হাত সরাতে চাইলে আর শক্ত করে শার্ট আঁকড়ে ধরলো নাফিসা ! অপরাধী কন্ঠে বিড়বিড় করে বললো,
– সরি বলেছি তো। প্লিজ ক্ষমা করে দিন।
নাফিসা হাত বাড়িয়ে মেঘের শার্টের প্রথম দুইটা বোতাম খুলে উন্মুক্ত বুকে হাত রাখলো। মেঘ বুঝতে পারছে না হঠাৎ কি হয়ে গেছে তার মেঘার! গম্ভীর সুরে বললো,
– কেউ যেন আমাকে টাচ না করে।
– হাজার বার টাচ করবো। আপনার কি! টাচ করলে কি করবেন আপনি?
– মেরে ফেলবো একেবারে!
– ফেলুন, মেরে ফেললে মরে যাবো।
মেঘ আর রাগ নিয়ে থাকতে পারলো না! মুখে হাসি ফুটিয়ে হঠাৎ করেই পেছনে ঘুরে মেঘার উপর আধশোয়া অবস্থায় থেকে বললো,
– মেরে ফেলবো?
নাফিসা মেঘের মুখে হাসি দেখে সেও মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করে বললো,
– মেরে ফেলুন।
– রক্ষা পাবে না কিন্তু!
– বাধা দিবো না।
মেঘ শাড়ির আঁচল সরিয়ে কামড়ের জায়গা দেখে বললো,
– এখনো খুব ব্যাথা পাও?
– উহুম!
অত:পর স্বেচ্ছায় নাফিসা বাধ্য করেছে মেঘকে, ভালোবাসা আজ পূর্ণভাবে পাওয়ার জন্য! এ ছাড়া আর কোনো উপায় দেখেনি তার মানুষটাকে আটকে রাখার!
আজকের সকালটা খুবই সুন্দর! ঘুম ভাঙতে দেড়ি হয়েছে, নাফিসা নিজেকে আবিষ্কার করেছে তার প্রিয় মেঘের উন্মুক্ত বুকে! আষ্টেপৃষ্টে আগলে রেখেছে মেঘ তাকে! এক আঙুল নেড়ে মেঘের বুকের লোমের সাথে খেলা করছে মিসেস মেঘা চৌধুরী।
– ঘুম ভেঙে গেছে মেঘা?
মেঘের ঘুমঘুম কন্ঠ শুনতে তার কাছে খুব মধুর লাগছে! লোকটা কতটা পাজি, একটুও বুঝতে দেয়নি সে এতোক্ষণ সজাগ ছিলো! মেঘা তো জানতো মেঘ এখনো ঘুমাচ্ছে, সে তো আর তার মুখের দিকে তাকায়নি! লজ্জা পেয়ে মেঘা মেঘের বুকের লোমের মাঝে নাক ডুবালো! মাতাল সুরে জবাব দিলো ,
– হুম। আপনি কি আজ সত্যিই চলে যাবেন?
মেঘ শরীর কাপিয়ে নিশব্দে হেসে বললো,
– সেজন্য কাল রাতে কাছে এসেছো তুমি?
নাফিসা কোন জবাব দিলো না। চুপচাপ তার বুকে মুখ লুকিয়ে রেখেছে। মেঘ আবার বলতে লাগলো,
– তুমিই তো বলেছো চলে যেতে। শুধু শুধু আর থাকবো কেন! ট্রেনের টিকেটও কেটে ফেলেছি। ভালোবাসো না তো, অযথা থেকে লাভ কি!
– এখনো প্রমাণ দিতে হবে ভালোবাসার! যাবেন না আপনি। আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারবেন না আপনি! বিয়ে করে দায়িত্ব নিয়েছেন না, এক মুহুর্তের জন্যও ছেড়ে যেতে পারবেন না!
মেঘ মৃদু হেসে নাফিসাকে টেনে বালিশে তুললো। নাফিসার চোখের পানি মুছে দিয়ে চোখের কোনায় চুমু দিয়ে বললো,
– তাও ভালোবাসিস স্বীকার করবি না?
নাফিসা মেঘের কপালে ঠোঁটের ছোয়া দিয়ে বললো,
– স্বীকার করেই তো কাছে এসেছি।
– ওরে আমার দুষ্টিরে!
– দেখি, ছাড়ুন। বেলা হয়ে গেছে অনেক। আম্মির সাথে রান্নার কাজে হেল্প করতে হবে।
– আমার মা কিন্তু বাবাকে তুমি করে বলে।
– চেষ্টা করবো আমিও।
– রান্না কি তুমি করবে?
– কি খাবেন, বলুন।
– আমার বিরিয়ানি খুব পছন্দের।
– ওকে, আমি রান্না করে খাওয়াবো।
– মুরগির মাংস আছে?
– হুম।
– ফ্রিজ নেই, রাখছো কোথায়?
– পাশের বাসায়।
– ওকে। যাও।
– আপনি না উঠলে যাবো কিভাবে!
– আরেকটু থাকো।
মেয়েকে শাড়ি পড়ে ঘর থেকে বের হতে দেখে রোকসানার চোখ জ্বলজ্বল করছে! খুব সুখী মনে হচ্ছে তার মেয়েকে! মেয়ে কি তাহলে মেঘকে মেনে নিতে পেরেছে! মেয়ের সুখ দেখার প্রত্যাশাই তো করছিলো সে। এখন নিশ্চিন্তে বাকি জীবন পাড় করে দিতে পারবে। যেভাবেই হোক, তার মেয়ের জন্য মেঘের মতো ছেলেকেই পাঠিয়ে দিয়েছেন উপরওয়ালা!
আম্মিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নাফিসা লজ্জা পেয়েছে। তবু্ও স্বাভাবিকভাবে জিজ্ঞেস করলো,
– এভাবে তাকিয়ে আছো কেন আমার দিকে! দেখোনি নাকি কখনো?
– দেখেছি তো। আজ আবার নতুন করে দেখছি রূপবতীকে! মেঘ এনে দিয়েছে শাড়ি?
নাফিসা মুচকি হেসে মাথা নেড়ে হ্যাঁ জবাব দিলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here