আড়ালে_ভালোবাসি পার্ট_৩২

আড়ালে_ভালোবাসি পার্ট_৩২
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||||

সালেহা বেগম চিৎকার করে বলছে

_”আমাকে মেরে ফেলবে।তোমরা আমার কথা কেনো বিশ্বাস করছো না।এই যে দেখো আমাকে মেরেছে।দেখো দেখো

নিশাত হতবম্ব হয়ে যায় কি বলবে বুঝতে পারছেনা।ওপাশ থেকে আমজাদ হাবিব বলে

_”সরি আমি পরে কথা বলছি।

কথাটা বলে আমজাদ হাবিব কেটে দেয়।নিশাত আরো কয়েকবার কল করে কোনো লাভ পায় না। ছোট ছোট চোখ করে আরহানের দিকে তাকিয়ে বলে

_”আমার মনে হয় তোমার যাওয়া উচিৎ।আম্মু কেমন পাগলামি করছিলো।আমি তো কিছু বুঝছি না।হটাৎ আম্মুর কি হলো সেদিন তো দেখলাম খুব ভালো আছে তাহলে?

নিশাত চোখের কোণে পানি চলে আসছে। কোন ছোট বেলায় মা মারা গেছে।সালেহা বেগমের মধ্যে নিজের মা কে খুজে পেয়েছিল আজ তার এই অবস্থা কিছুতেই মানতে পারছে না নিশাত।

আরহান এগিয়ে এসে নিশাতের গালে হাত রেখে বলে

_” মূল্যহীন সম্পর্কে মূল্যায়ন খুঁজতে যাওয়া বোকামি।আর আমার নিশা কে কেউ বোকা ভাববে সেটা আমি মেনে নিতে পারবো না।

নিশাত কি বুঝলো কে জানে। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আরহানের দিকে।আরহান চোখের পাতায় চুমু দিয়ে বলে

_”এই ছোট মাথায় ওতো কিছু ঢুকানোর দরকার নেই।তুমি শুধু নিজের কথা ভাবো আর এই টিভি

নিশাত কে রেখে টিভির দিকে গিয়ে ডিসের লাইনের তার কেটে দেয়। নিশাত অবাক হয়ে বলে

_”এই তুমি কি পাগল হলে কি করছো?

আরহান মুচকি হেসে বলে

_”আমার বউয়ের টেনশন কেটে দিলাম।তোমার টেনশন মানে আমার টেনশন।বউ মানে আমি।আমি মানে বউ।তাহলে বউয়ের টেনশন আমার হলো।ব্যাপারটা এক না।

নিশাত নিজের মাথায় হাত দিয়ে বলে

_”উফফ আমার মাথা ধরে যাচ্ছে তোমার কথায়।এত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কথা বলো বাবা গো।

কথাটা বলে নিশাত রান্না ঘরের দিকে যায়।আরহান মুচকি হেসে জয়কে ফোন দেয়।

দুইবার রিং হতেই জয় ফোন ধরে ঘুম ঘুম কণ্ঠে বলে

_”হ্যালো কে বলছেন?

আরহান ধমক দিয়ে বলে

_”এখন তোর ঘুমানোর সময়?রাতে কি করেছিস ?

আরহানের ধমকে জয়ের ঘুম হাওয়া।বিছানা থেকে উঠে বলে

_”হা বল।কি খবর?

আরহান বাকা হেসে বলে

_”খেলা তো জমে গেছে।যেমন টা চাইছিলাম তেমনি হচ্ছে।এখন দেখার পালা কত দিন নিজের কুকীর্তি লুকিয়ে রাখে।

_”নেক্সট প্ল্যান কি?

_”আজকে রাতে কাজটা করতে হবে।তাহলে অর্ধেক কাজ শেষ। অনেক উড়া উড়েছে এখন পাখা কাটার পালা। বাই হুক বাই ক্রুক সবাই কে সবার অপরাধের শাস্তি দেবই।

_”ওকে।তাহলে আমি আসছি তোকে নিতে।

_”হুম আসিস নাহলে এই মহারানী বাইরে যেতে দেবে না।

জয় হাসতে হাসতে ফোন কেটে দেয়।আরহান ফোন কেটে ঈশার কাছে গিয়ে গল্প করতে থাকে।

নিশাত রান্না করছে।ঈশার ফেভরেট লুচি আলুর দম রান্না করছে সাথে আরহানের পছন্দের গাজরের হালুয়া।

নিশাত রান্নার মাঝে চুল এসে সামনে পড়ছে।নিশাত চুলের সাথে যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে ।

আরহান নিশাত কে এদিক সেদিন তাকিয়ে খুঁজছে।নিচে নেমে রান্না ঘরের দিকে চোখ যেতেই দেখে নিশাত চুলের সাথে যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে ।

আরহান হেসে নিশাতের কাছে যেতেই নিশাত চিল্লিয়ে বলে

_”তুমি এখানে কি করছ?ঈশা একা আছে না? যাও ওর কাছে যাও

আরহান নিশাতের কোমর জড়িয়ে বলে

_”ঈশা অনলাইনে ড্রেস দেখছে।তো এই মহারাজ কি তার রানীর কোনো সাহায্য করতে পারে?

নিশাত কেনুই দিয়ে ধাক্কা মেরে বলে

_”মহারাজ কি আটা মাখতে পারবে ?

নিমিষেই আরহানের মুখ চুপসে যায়। আড় চোখে তাকিয়ে বলে

_” এমনি মহারাজ না রাজকুমার এর মহারাজ।

আরহান চলে যেতে গেলে নিশাত হাত ধরে আটকে দেয়।আরহান তাকাতেই নিশাত চোখ দিয়ে আটা মাখতে বলে।

আরহান মুখটা ছোট করে বলে

_”করতেই হবে?

নিশাত মুচকি হেসে মাথা নাড়ায়।আরহান আটা মাখতে শুরু করে ।নিশাত রান্না করছে আর আড় চোখে আরহানকে দেখে নিচ্ছে ।

ঈশা ড্রেস দেখতে দেখতে নিচে নেমে ওদের দেখে সোফায় বসে।দরজায় বেল পড়তে ঈশা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।

জয় এসেছে।ঈশা কে দেখে জয় মুচকি হাসে বলে

_”কেমন আছো?

ঈশা মাথা নাড়িয়ে বুঝায় তাই দেখে জয় ভ্রু কুচকে বলে

_”কথা বলতে পারো না?

ঈশা বেকুব হয়ে তাকিয়ে থাকে।জয় আবার বলে

_”কিহলো?কথা বলতে সমস্যা হচ্ছে ?

_”পারি তো

_”তাহলে মুখে না বলে ইশারা করছো কেনো?

_”এমনি।

জয় ভিতরে আসতে আসতে বলে

_” আরহান কোথায়?

ঈশা দেখিয়ে বলে

_”ভাইয়া রান্না ঘরে।

জয় আরহানকে দেখে বলে

_”বাহ বাহ! পার্মানেন্ট রান্না শুরু করে দিলে নাকি?

আরহান অসহায় মুখ করে বলে

_”ভাই বাঁচা আমাকে।এই রাক্ষসী দেখ আমার অবস্থা নাজেহাল করে দিয়েছে।

জয় হাসতে হাসতে বলে

_”ঠিক হইছে ।

_”তোকে আমি পরে দেখছি।

নিশাত পাশ থেকে বলে

_”এত দিন দেখে ও হয়নি?যা দেখার পরে দেখো এখন আমার হেল্প করো

আরহান দাতে দাত চেপে বলে

_”এবার বুঝছি সবাই কেনো বারণ করে বিয়ে করতে।

নিশাত আড় চোখে তাকাতেই আরহান হাসার চেষ্টা করে বলে

_”ঈশা তোমার ড্রেস পছন্দ হইছে ?জয় সব গুলো অর্ডার করে দে তো

জয় ঈশার দিকে তাকিয়ে বলে

_”দেখি কোন ড্রেস পছন্দ করেছ?

ঈশা ফোন এগিয়ে দিতেই জয় মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে ।

_”এর থেকে এইটা বেশি ভালো।

_”না আমি যেইগুলো বলেছি ওইগুলো ভালো।

_”বাচ্চা মানুষ ওতো জেদ করতে নেই।

ঈশা নাক ফুলিয়ে বলে

_”আমি বাচ্চা না।

জয় মাথাটা ঈশার মুখের কাছে নিয়ে বলে

_”তাহলে কি বাচ্চার মা?

ঈশা রেগে তাকায়।নিশাত লুচি ভাজতে ভাজতে বলে

_”তোমরা বসো আমি নিয়ে আসছি।

ঈশা রেগে গিয়ে সোফায় বসে।জয় হাসতে হাসতে সামনের সোফায় বসে।

১সপ্তাহ পর

আরহান ল্যাপটপে কাজ করছে জয় পাশে বসে দেখছে ।জয় নিশাত দের সাথে থাকে।ঈশা আর নিশাত এক সাথে আর জয় আরহান এক সাথে।ঈশা আবার কলেজে যাচ্ছে।নিশাত আর আরহান ঈসাকে আবার আগের মত করেছে।

আরহান ল্যাপটপ রেখে নিশাত কে ডাক দেয়।নিশাত দৌড়ে এসে বলে

_”হা কি হইছে এভাবে চিল্লাচ্ছ কেনো?

আরহান ভ্রু কুচকে বলে

_”তোমাকে দৌড় দৌড়ি করতে বারণ করছি না? যাই হোক চলো নিউজ দেখবে

নিশাত কিছু বলার আগেই আরহান নিশাতকে নিজে সোফায় বসায়। জয় আর ঈশা ও আছে।

আরহান টিভি অন করতেই নিউজ আসে।সবাই মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে।

_”এই মুহুর্তের ব্রেকিং নিউজ প্রফেসর আমজাদ হাবিব এর স্ত্রী সালেহা বেগম।যিনি নিজে একজন ফ্যাশন ডিজাইনার তিনি আমজাদ হাবিবের একমাত্র সন্তান আরহান আবরার কে খুন করেছেন।তার বিরুদ্ধে কিছু প্রমাণ পুলিশের কাছে আছে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করার আগেই মিসেস সালেহা বেগম সব স্বীকার করেন।ঘটনা সূত্রে জানা গেছে আমজাদ হাবিবের একমাত্র সন্তান আরহান আবরার সালেহা বেগম এর সতীনের সন্তান।জি আমজাদ হাবিবের প্রথম স্ত্রীর ছেলে আরহান আবরার।মূলত নিজের সতীনের সন্তান কে সহ্য করতে না পেরে মারার চেষ্টা করে।আরো বিস্তারিত জানানো হবে ভিডিও ক্লিপে যেখান মিসেস সালেহা বেগম সকল কথা স্বীকার করেছেন।ভিডিও চালু করা হলো

নিশাত সহ সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে টিভির স্ক্রিনে।আরহানের মুখে বাকা হাসি যেনো সে আগে থেকে জানতো এমন কিছু হবে।

জয়ের দিকে তাকাতেই আরহান চোখ মারে।জয় মুচকি হেসে টিভির দিকে মনোযোগ দেয়।

সালেহা বেগম মাথায় হাত দিয়ে আছে সামনে প্রেস পিডিয়া আছে।এই কয়দিনে সালেহা বেগমের চেহারার নাজেহাল অবস্থা হয়েছে।আগের মত উজ্জলতা নেই।চোখের নিচে কালো দাগ চুল গুলো উস্কোখুস্কো হয়ে আছে। নিজেকে পরিপাটি রাখা মানুষটার এই অবস্থা দেখে নিশাতের খারাপ লাগলো।

সব অনুভূতি সাইডে রেখে টিভির দিকে মনোযোগ সহকারে শুনতে থাকে নিশাত।

সালেহা বেগম কে একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে ।নিজেকে যথাযত ঠিক রেখে তিনি বলেন

_”হা আমি আরহান কে মারার চেষ্টা করেছি।

সালেহা বেগমের কথায় একজন সাংবাদিক পাল্টা প্রশ্ন করেন

_”মারার চেষ্টা করেছেন মানে? আমরা ঠিক বুঝলাম না ।আরহান আবরার তো বেচে নেই।

সালেহা বেগম সোজা হয়ে বলে

_” হা মারার চেষ্টা করেছি ।আরহান বেচে আছে।আমাকে মারার জন্য ফিরে আসছে।আমাকে মেরে ফেলবে ।

সালেহা বেগম এর মুখে আতঙ্কের ছাপ। মনে হচ্ছে কিছু একটা নিয়ে খুব ভয় পেয়ে আছে ।নিজের চোখে পানি মুছে বলে

_”আমার স্বামী আমজাদ হাবিব এর প্রথম স্ত্রী ক্যান্সারে মারা যায়।আমি ছিলাম আমার স্বামীর অফিসের পি এ। আমার একটা ছিল হবার পর আমার প্রথম স্বামী আমার সন্তান আর আমাকে ছেড়ে চলে যায়।নিজের একমাত্র সন্তান কে নিয়ে চাকরি করে ভালোই চলছিল।আমজাদ হাবিব প্রায়
আরহান কে অফিসে নিয়ে আসতেন।আরহান আর ইমন (সালেহা বেগম এর সন্তান) তখন ছোট ছিল।দুইজন খুব ভাল বন্ধুত্ব হয়ে যায়।সেই কারণে আমজাদ হাবিব আমাকে প্রায় উনার বাসায় ইমন কে নিয়ে যেতে বলতেন এভাবে আস্তে আস্তে আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক হয়।একদিন হটাত আমজাদ হাবিব আমাকে বিয়ে পস্তাব দেয় আর বলে আমার ছেলের সব দায়িত্ব নেবে বিনিময়ে আরহান কে মায়ের ভালোবাসায় বড়ো করতে হবে।
আমি নিজের ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে রাজি হয়ে যাই।ইমন আর আরহান কে আমি আলাদা করে দেখতাম না।দুইজনকে খুব ভালোবাসতাম কিন্ত বিপত্তি ঘটলো আরহানের জেদ।

এইটুকু বলে সালেহা বেগম ডুকরে কেঁদে উঠেন।

চলবে

(আস্তে আস্তে রহস্যের সমাধান করবো।সবাই জানেন আমার স্কুল খুলে দিয়েছে তাই অনেকটা ব্যাস্ত থাকছি দুইদিন গল্প হয়তো দিতে পারবো না।স্কুলের প্রাইভেটের অবস্থা কি সেটা বুঝতে হবে।মাথা ব্যাথা শুরু হইছে ।কেমন হইছে জানাবেন।ছোট করে দেওয়ার জন্য ক্ষমা করবেন )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here