গল্প_তুমি_নামক_নেশা Part: 02
#লেখিকা_Sabirina_Khanam
আয়াশ আপনমনে মিহির কথা চিন্তা করে গান গাচ্ছিল। ঠিক তখন তার রুমে প্রবেশ করল তার মা, মিসেস আসমা চৌধুরী । সে রুমে ঢূকেই সোজা একটা প্রশ্নের তীর ছুড়লো আয়াশের দিকে। সে প্রশ্ন করলো আয়াশকে,,,
এমনটা কেন করলি আয়াশ তুই???
,,, মা কি করেছি আমি? তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
,,, আবার বলছিস কি করেছি আমি? একটা মেয়ের জীবন সম্পর্কে ভাবলি না?
,,,একটু বুঝিয়ে বল আমায় মা
,,, তুই অবুঝ শিশু না আয়াশ
,,, কি করলাম আমি সেটা তো আমায় বলবে??
,,,মিডিয়া এর সামনে কেন প্রপোজ করলি মেয়েটাকে? তুই জানিস ব্রেকিং নিউজ হিসেবে এখন তোর এই কাজটাই প্রচার হচ্ছে।
,,, ওহ
,,, বাহ কি ভাব তোর? তোর কি এটাকে কোন সিম্পল ব্যাপার লাগছে আয়াশ?
আয়াশ নিশ্চুপ।
,,,জানিস আয়াশ, একটা মেয়ের পান থেকে চুন খসলেই অনেক দোষ বের করা হয়। আর আজ যখন তুই ওকে সবার সামনে প্রপোজ করলি, মেয়েটার পরিবার তাকে কত কথা শুনাচ্ছে তোর ধারনা আছে কোনো? পাড়া প্রতিবেশী ওকে কত কথা শুনাচ্ছে চিন্তা কর তো একবার।
আয়াশ বুঝতে পারল সে অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছে। নিজের মনের কথা ওকে এভাবে জানানো উচিত হয়নি। কিন্তু সে তো মিহিকে নিজের জীবনে বিশেষ মানুষ হিসেবে বুঝাতে চেয়েছিল। কিন্তু তার দ্বারা একটা মস্ত বড় ভুল হয়ে গেছে।
আয়াশের মা আবার বলল,,,, আমরা আগামী শুক্রবার মিহি মায়ের বাসায় যাব। ওর বাবা মায়ের কাছে বিয়ের কথা বলতে।
আয়াশের চোখে মুখে একটা উচ্ছাস দেখা গেলো। আয়াশ ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,
মা thank you thank you thank you sooo much. I love u মা।
আয়াশের মা বলে,,, হইছে আর মাকে ভালবাসা দেখাতে হবেনা আমায়। শুধু কোনো কাজ যখন করবা তখন একটু ভেবে চিন্তা করে করো।
,,, ওকে মা।
,,, হুম এখন ঘুমা, গুড নাইট।
,,, গুড নাইট।
আয়াশের মা চলে গেল। আর আয়াশ মিহির কথা চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে গেল।
অন্যদিকে আমি নির্ঘুম রাত পার করছি। চোখ বন্ধ করলেই সে আজ যখন আয়াশ আমায় প্রপোজ করেছিল সেই মুহুর্তের কথা মনে পরছে আমার। আমি যতই ভুলতে চাইছে তার ততই সেই মুহুর্তের কথা মনে পরছে। আমি বিছানা থেকে উঠে গেলাম তাহাজ্জুদ এর নামাজ আদায় করতে উঠল। অজু করে এসে আমি জায়নামাজ এ দাড়ালাম। নামাজ শেষে সবার ভালোর জন্যে দুয়া করলাম । তারপর মিহি আবার একটু পড়তে বসলাম কিন্তু আজ হয়ত আমাকে শয়তান এ ধরছ্র তাই পড়তেও বসতে মন চাইছেনা। আমি উঠে গেলাম আর চলে গেলাম বেল্কনিতে। আমার কিছু ভালো লাগছে না। আমি আকাশের পানে তাকিয়ে তার মা বাবার কথা চিন্তা করতে লাগলাম। দীর্ঘশ্বাস ফেলে চিন্তা করতে থাকলাম আজ যদি আমার বাবা মা বেচে থাকত তাহলে হয়ত আমার জীবন গল্পটা অন্যরকম হতো। নিজের শরীরের পোড়া দাগগুলো দেখে আমি বারবার আতকে উঠছি। আজ আমি এতিম দেখে সবাই তাকে ঠকায়, খারাপ আচরন করে। হয়ত আয়াশও ওকে ফাদে ফালানোর চেস্টা করছে। চোখ ঠেকে মিহির নোনাজল গড়িয়ে পরছে। আজকের দুনিয়াতে কাউকেই আর বিশ্বাস করা যায়না।
সকালে পরোটা ভাজছি আমি সবার জন্যে। তখন আমার কাছে আসল রিসা। মেয়েটা বয়সে আমার চেয়ে ছোট তবে আমায় নাম ধরেই ডাকে। সেটা ডাকুক আমার কোন সমস্যা নাই। তবে দিনকে দিন মেয়ে মেয়েটার কথা বলা, চলাফেরা আমার ভালো ঠেকছে না। যাইহোক রিসা আমার কাছে আসলো আর বলল,,,
এই মিহি শুনো, আমার কলেজে দেরি হয়ে যাচ্ছে, তুমি আমাকে জলদি একটু চাউমিন বানায় দাও তো।
,,, রিসা বোন আজ পরোটা খাও, আমি কাল বানায় খাওয়াবনি।
,,, আমি তোমাকে আমার জন্যে চাউমিন বানাতে বলছি। তোমার থেকে শুনতে চাইনি আমি কি খাব আর কি খাব না। (চিৎকার করে)
,,, প্লিজ রিসা শুনো। আমার এরপর আরও কিছু কাজ আছে। সেগুলো শেষ না করা পর্যন্ত আমাকে মামি ভার্সিটিতে যেতে দিবেনা। আমার হাতে বেশি সময়ও নেই। তাই বলছিলাম।
,,, আমি কিছু শুনতে চাইনা তুমি আমাকে এখনই বানায় দিবা মানে দিবা।(চিৎকার করে)
,,,এতো চিৎকার করে বলার কি আছে এখানে রিসা?
,,,কি আমি চিৎকার করি হ্যা আমি চিৎকার করি? তুমি এখন আমায় খারাপ প্রমান করতে চাইছ?? ( আরও জোরে চিৎকার করে)
তখনই মামি এসে বলল,,, কি হয়েছে? এত চেচামেচি কিসের?
রিসা কাদোকাদো মুখ করে বলল,,, মা দেখ আমি একটু চাউমিন খেতে চাইসি তখন মিহি বলছে আমায় যে নিজের খাওন নিজে বানায় খেতে। আমু বলছি যে মিহি আমায় তো কলেজে যেতে হবে তুমি একটু জলদি করে বানায় দাওনা আমায়। তখন মিহি আমায় চড় মারল।।
আমি বললাম,,, না মামি রিসা মিথ্যা কথা বলছে। আমি ওকে চড় মারিনি।
রিসা বলল,,, মা দেখ আবার মিথ্যাবাদী বলছে আমায়।
মামি আমাকে এলপাথাড়ি মারতে মারতে বলল,,, শয়তান ছেড়ি, তোর লজ্জা সরম নাই? আমাদের টাই গিলস আবার আমার মেয়েকেই চড় মারিস? আবার আমার মেয়েকে মিথ্যাবাদী বলিস? তোর সাহস তো কম না রে।
আমি বললাম,,,, মামি আমায় বিশ্বাস কর প্লিজ।
,,, তোর মত বাজারের মেয়েকে বিশ্বাস করব? হাসালি মিহি। কাল যা করলি আর কেউ তোকে বিশ্বাস কি মুখও দেখতে চাইবেনা। নেহাত আমার মরা স্বামী আমায় বলে গেছিল তাই নাহলে তোকে কবে বের করে দিতাম। রিসা শুন আম তোকে চাউমিন মানায় দিচ্ছি। মিহি যা এখন এখান থেকে। আমার সামনে আসবি না। যা।
আমি কাদতে কাদতে বেড়িয়ে গেলাম সেখানে থেকে। নিজেকে স্বাভাবিক করে হাত মুখ ধুয়ে না খেয়েই বেড়িয়ে গেলাম ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। অন্যমনস্ক হয়ে হাটছিল আমি। একটা গাড়ি সামনে হঠাৎ করে এসে আমার পথ আটকাল। তখন একটা গাড়ি থেকে একজন বেরিয়ে এলো। আর আমার পথ আটকাল। লোকটা মাস্ক পড়া বিধায় আমি তার মুখ দেখতেও পারছিনা আর চিনতে পারা তো দুরের গল্প। লোকটি আমার সামনে এগিয়ে আসছে। আমি বুঝলাম না আমি কেন চুপ করে দারায় আছি। আমার তো পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়া উচিত ছিল তাইনা?
কালো মাস্ক পরা লোক টা আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে মাস্কটা হাল্কা সরালো। সামনের লোকটাকে দেখে আমি চমকে উঠলাম। এই লোক আর কেউ না রকস্টার আয়াশ। আমি তাকিয়ে আছি তার চেহারা দিকে। সে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,,,
হাই মিহি মাই জান।
আমি বললাম,,, আপনি এখানে কি করছেন?
সে চারপাশ তাকিয়ে বলল,,, আমার মনে হয়না জায়গাটা তোমার কিনা হবে। এটা পাব্লিক প্লেস। যে কোনো পাব্লিক এখানে আসতে পারবে।
আমি চিন্তা করলাম লোকটা ভুল কিছু বলেনি। আমি আজিরা একটা প্রশ্ন করে ফেলেছি। আমি বললাম,,,
ভালো কথা। তো আপনি আমার সামনে দাঁড়ায় আছেন কেন?
,,,তোমার সামনে রাস্তার যে অংশটুকু আছে তাও রাস্তার অংশ। যে কোনো পাব্লিক এখানে দাড়াতে পারবে।
আমি বললাম,,, আমার সামনে দাঁড়িয়ে আর গাড়ি দিয়ে আমার পথ আটকানোর মানে কি?
,,,, আমার বউ এর পথ আমি আটকিয়েছি এতে কার বাপের কি?
,,, আমার অনেক সমস্যা এতে।
,,, ওহ মানে স্বীকার করছ তুমি আমার বউ।
,,, আমি তা বলিনি।
,,, তুমি তাই বলেছ।
,,, উফ পথ ছারুন।
,,, আমার পাশেও যাওয়ার জন্যে অনেক যায়গা আছে। চাইলে যেতে পারো।
আমিও আয়াশের কথায় বকা বনে গেলাম। আমি আয়াশের পাশ দিয়ে যেতে লাগলাম। সে সাথে সাথেই আমার হাত ধরে ফেলে। আয়াশ আমার হাতের পড়া অংশ ধরায় আমি হাতে ব্যথায় চিৎকার করে উঠলাম। তখন অনেক লোক জড় হয়ে গেল সেখানে। অনেকে অনেক কথা বলাবলি করতে লাগলো। একটা ছেলে এসে আয়াশকে ধাক্কা দিল আর বলল,,,,
মেয়ে দেখলেই লুচ্চামি করতে ইচ্ছে হয় তাইনা???
চলবে…..
(ভুল ত্রুটি মাফ করবেন। রেসপন্স পেলে পরবর্তী পর্ব দিব। গঠনমূলক মন্তব্যের আশা করছি।)