নিরালায় ভালোবাসি পর্ব-১২

0
740

নিরালায় ভালোবাসি
কলমে : তুহিনা পাকিরা
১১ .

এস,কে স্যার এর ক্লাসটা আজ ইচ্ছের কাছে সম্পূর্ণ নতুন। তিনি মাঝে মাঝেই ক্লাস নিতে আসেন। রক্তিমা ইচ্ছেকে আগে থেকেই বলে রেখেছে, এস,কে স্যার ভীষণ রাগী। তবে ইচ্ছের এই 50 মিনিটের ক্লাসে মোটেও স্যারকে রাগী মনে হয়নি। তিনি বেশ ভালোই হেসে হেসে লেকচার দিচ্ছিলেন। কিন্তু ইচ্ছের ভাবনাটা হুট করেই যেনো পরিবর্তন হয়ে গেল।

রোল কলের সময় সবাই নিজের অ্যাটেনডেন্স দিলেও একমাত্র বাদ যায় ইচ্ছে। নিজের নাম পেরোতেই সে উঠে দাঁড়িয়েছিল। সেই মুহূর্তে ও পাশের মেয়েটিকে ইশারা করলেও সে স্যার কে জানায়নি যে 10 রোলের মেয়েটি এখানে অ্যাটেন্ড রয়েছে। ইচ্ছের মনে আছে প্রথম দিনের ক্লাসে রক্তিমা সেই দিনের প্রতিটা ক্লাসে ইচ্ছের সমস্যার কথা স্যারদের বলেছিল। তারপর থেকে প্রতিটা ক্লাসে স্যার নিজেই ইচ্ছের অ্যাটেনডেন্স দিয়ে দেয়। কিন্তু এস, কে স্যার সম্পূর্ণ নতুন ইচ্ছের কাছে। দুজনেই দুজনকে চেনে না। আর পাশের মেয়েটাও কিছু না বলায় ইচ্ছে উঠে দাঁড়ায়। ততক্ষনে এস, কে স্যার অ্যাটেনডেন্স এর খাতা টা নিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। ইচ্ছেকে দেখে তিনি বুঝতে পারলেন যে মেয়েটি অ্যাটেনডেন্স দিতে ভুলে গেছে । তাই তিনি ধমক দিয়ে বললেন, ” আমি সবাই কে প্রথম দিনই জানিয়েছি, যে আমার ক্লাস মানে মনোযোগটা আমার পড়ানোর দিকেই থাকবে। কিন্তু তোমার দেখি উল্টো। মন কোথায় ছিল, বাড়িতে?

প্রতিটা ধমকেই কেঁপে উঠলো ইচ্ছে। ইচ্ছের মাথার সিঁদুর দেখে স্যার বুঝলেন যে ইচ্ছে বিবাহিত।

– ” ও তোমার মন তবে সংসারে রেখে এসেছ না। পড়াশোনা করতে না চাইলে করবে না। কিন্তু ক্লাসে ডিস্টার্ব আমি একদম পছন্দ করি না। এইবারের মতো মাফ করছি। নেক্সট টাইম থেকে যখন ক্লাসে এন্ট্রি নেবে আশা করি ক্লাসটা সুষ্ঠু ভাবে করতেই আসবে। ”

ইচ্ছে মাথা নামিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। খুব কষ্ট হচ্ছে ওর। সব থেকে বেশি খারাপ লাগলো এটা দেখে যে ক্লাসের 26 টা ছেলে মেয়ে কেউ কিছু বললো না। সবাই যে যার মতো বসে বসে ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। কিন্তু কিছুই বললো না। হয়তো এই পরিস্থিতিতে ওদের বেশ আনন্দ লাগছে ওকে দেখে।

-” নাম কি ? ”

বলতে পারলো না। কিছুক্ষণ আগেই গুছিয়ে রাখা খাতাটা ব্যাগ থেকে বের করে পেনটা বের করতে যেতেই স্যার ধমকে উঠলেন।

– ” নিজেকে কী ভাবো? ভাব নিচ্ছো আমার সামনে! বললাম না তোমার নাম কী? বাংলা বোঝো না? ”

ইচ্ছে পেন দিয়ে খাতায় কিছু একটা লিখতে গেলো। স্যার পুনরায় রেগে গেলেন। ইচ্ছের কাছে এগিয়ে গিয়ে হাত থেকে খাতাটা কেঁড়ে নিয়ে বললেন, “গেট লস্ট। তোমাকে এখানে আমি দেখতে চাইছি না। ”

তখনই বোধ হয় পাশের মেয়েটি একটু সদয় হলো। তাই অবশেষে স্যার কে বললো, ” স্যার ওর নাম ইচ্ছে। ”

– ” বাহ্ ইচ্ছে। তো ইচ্ছে নামটা বাবা মা শখ করে ইচ্ছে রেখেছে বলে নিজে যা ইচ্ছে তাই করে বেড়াচ্ছো। খুব ভালো। তবে নিজের মন মর্জি চলতে চাইলে অন্য কোথাও চলো। আমার ক্লাসে এই সব আমি চাই না। আন্ডারস্ট্যান্ড? ”
ঘাঁড় নাড়ে ইচ্ছে। স্যারের মনে ইচ্ছেকে একটু অন্যরকম লাগলো। মেয়েটিকে দেখে তার মনে হচ্ছে যে এই মেয়েটি তাকে ভয় পাচ্ছে। কিংবা ভয় পাওয়া তার স্বভাব। কিন্তু মেয়েটি এমন কথা না শোনার মতো বিহেবিয়র করছে কেনো? কিন্তু এই মুহূর্তে তিনি আর কিছু বলতে চাইলেন না। ইচ্ছের ঘাঁড় নাড়া দেখে ওকে পুনরায় সাবধান করে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেল।

সেই মুহূর্তে কেউ কেউ ইচ্ছেকে দেখে হাসলো। তো কেউবা স্যার কে সত্যিটা বলতে পারলো না বলে মনে কষ্ট লাগলো। এই ক্লাসের প্রতিটা ছেলে মেয়ে এই স্যারকে ভালোই ভয় পায়।

সবার সামনে নিজেকে আর হাসির পাত্র করতে পারলো না ইচ্ছে। ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলো। আগেই ও নীরবকে টেক্সট করে জানিয়ে দিয়েছে যে ও একা বাড়ি ফিরতে পারবে। সেই মতোই ইচ্ছে বেরিয়ে গেলো। ক্যাম্পাসের বাইরে আসতেই টিপটিপ করে বৃষ্টি শুরু হলো। কিন্তু ইচ্ছে বৃষ্টির মধ্যেই হাঁটা দিলো। আজকের অপমানটা খুব কষ্ট লাগছে। আগেও খারাপ লাগতো। একটু আগেই নীরবের বলা কথা তারপর ক্লাসের ঘটনা কিচ্ছু ভালো লাগছে না। কিচ্ছু না।

ইচ্ছে যখন বাড়িতে গেল তখন বৃষ্টি তে ভালোই ভিজে গেছে ও। একে শীতকাল, তার উপর বৃষ্টি সব মিলিয়ে কাঁপতে কাঁপতে বাড়িতে ফিরেছে ইচ্ছে। কিন্তু বাড়িতে এসেই একটা পোঁড়া গন্ধ নাকে এসে লাগলো ইচ্ছেই। বাড়িতে একেই রুমা দেবী নেই। তার উপর আজ আশাও কাজে আসেনি। তাহলে কী পুড়ছে? কথাটা ভেবেই ইচ্ছে রান্না ঘরে ছুটলো। ঠিক তখনই নীরব উপর থেকে ছুটে নেমে এলো। ইচ্ছে গিয়ে দেখে নুডলস্ পুড়ে কিচ্ছু নেই। পুরো কালো হয়ে গেছে। নীরব ছুটে গিয়ে মাথায় হাত দিয়ে দিলো। কিছুক্ষণ আগেই ও নুডলস্ টা ওভেনে বসিয়ে উপরে গিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই বসের কল। কয়েক দিন একটা নিউ প্রজেক্টে ওরা ব্যস্ত থাকলেও আজ প্রজেক্টটা সাবমিট করে দিয়েছে নীরব। তার জন্যেই অফিস নীরবের অফ কয়েকদিন। বিয়ের ছুটিটা তখন নীরব পাইনি, তাই এখনই ওর ছুটিটা অফিস থেকে গ দেওয়া হয়েছে। ওই কথা বলা শেষে নীরবের নাকে উটকো গন্ধ টা এসে লাগে।

ইচ্ছে ততক্ষনে ওভেন থেকে কড়াই নামিয়ে সব নতুন করে আবার বসিয়ে দিয়েছে। ও বুঝতে পেরেছে নীরবের হয়তো খিদে পেয়েছে। নীরব চুপ করে ইচ্ছের দিকেই তাকিয়ে রইলো। কিন্তু ইচ্ছেকে দেখেই বুঝতে পেরেছে যে এই মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজে একাকার। তাই কথা না বাড়িয়ে ওকে জোর করে ঘরে নিয়ে গেল।

– ” যা আগে গিয়ে চেঞ্জ কর। শরীর খারাপ করবে।”
ইচ্ছেও চুপচাপ গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো। নীচে গিয়ে ইচ্ছে এক দিকে নুডলস্ বানাচ্ছে। অপর দিকে নীরব চা করতে লাগলো। নুডলস্ এর সাথে চা খেতে ওর বেশ ভালো লাগে।

বিকেলের শেষ আলোয় দুজনে মিলে বারান্দায় বসে বসে নুডলস্ আর চা খাওয়ার ছলে নীরব ইচ্ছেকে আজ রাগিয়ে ইচ্ছের ভাগের নুডলস্ খেতে চাইলেও সেই কাজে সফল সে হয়নি। কারণ ইচ্ছে নুডলস্ ছুঁয়েও দেখছে না। ফাঁকা চায়ের কাপেই চুমুক দিয়ে চলেছে সেই কখন থেকে। কোন খেয়ালে সে আছে কে জানে?

(চলবে)
{ বিঃ : পরের পর্বে ধামাকা। আমার জন্যে না, পাঠক পাঠিকা দের জন্যে।}

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here