নিরালায় ভালোবাসি
কলমে : তুহিনা পাকিরা
১৪ .
বিকেলের হাওয়ায় বারান্দার ইরার আপন নীড় হাওয়ার শন শন শব্দে ঝনঝন করে নড়ছে। সাথে বেচারাও নড়ছে। মাঝে মাঝে ডানা ঝাপটে বলে চলেছে ,”ইছে, ইছে, ।”
বারান্দার গ্রীলে মাথা ঠেকিয়ে বাইরের প্রকৃতিতে হারিয়ে রয়েছে ইচ্ছে। শীতের শেষ আর বসন্তের শুরু, এই আবহাওয়ার মধ্যে এক মাধুর্য্য রয়েছে। আচ্ছা সবাই কী তা অনুভব করে? সকালের ভোরের আলোর সাদা আকাশটাকে দেখে দিন শুরু থেকে শুরু করে বেলার রোদের আলোর ছটার মাঝেও এক আলাদা অনুভুতি লুকিয়ে আছে। আর বিকেল শুরুর মুহূর্তকে বলে বোঝানো আর যাই হোক আমার কম্ম নয়। বিকেলের হাওয়া মৃদুমন্দগতিতে শুধু বয়ে চলে এমন না। সেই বাতাস যেনো কানে কানে বলে যায়, “শোনো হে রমণী শোনো, তোমার চেনা এই আকাশটা বহু দিনের পুরোনো। এই যে তোমার দেখা এই শহরে ছিল এক উপন্যাস এর প্রেমিকা। ছিল কোনো কাব্যিক। যার বুনোন শৈলী তোমার চোখে ভাসে, তবে তুমি তো বোঝো না হে রমণী। ওই যে পাখির গুঞ্জন, তারা রোজ গায় কবির প্রেমের হাজারো গান। সেই গানেরই প্রেমে তুমি
অপেক্ষায় রও যেই মুহূর্তের, ওই রাস্তার ধারে হেঁটে যাওয়া তোমার প্রেমিক সে আজ কখন আসবে? এসে কী তবে ভালোবাসি বলবে? নাকি না দেখেই চলে যাবে?”
প্রকৃতির সত্তা থেকে ইচ্ছে যখন বেরিয়ে এলো তখনও ইরা ” ইছে” করে ডেকে চলেছে। ইচ্ছের বড্ড রাগ হলো। ইচ্ছে নাম যদি পারিস তবে ‘ ইচ্ছে ‘ ডাক ‘ ইছে ‘ কেনো ডাকবি রে? যদি বা ইরা হলো ইচ্ছের সতীন। আগে ছিল না এই কয়দিন হয়েছে। কারণ এখন দেখা যায় ইরার সাথেই নীরবের যত ভাব। নীরব আঠার মতো ইরার পিছনে পড়ে থেকে কথা শিখিয়েছে। যেমন ‘ নীরব ‘ আর ‘ ইছে ‘। নিজের নামটা খুব ভালোভাবেই ইরার ঠোঁটোস্ত করিয়েছে নীরব। কেবল ইচ্ছের বেলায় গাফিলতি দিয়ে এই কাজ করেছে। তাই তো নামটা ইচ্ছে পর্যন্ত পৌঁছায়নি। মাঝের স্টেশনে ট্রেন না থেমে সোজা গন্তব্যে পৌঁছিয়ে গেছে যেনো। ইরা আবারও ডানা ঝাপটিয়ে ‘ ইছে ‘ বলতেই ইচ্ছে ইরার খাঁচায় একটা হালকা করে বারি মেরে ঘরে চলে গেল। শুধু বলা হলো না, ” আমার নামের পিন্ডি চটকাবিনা। নামটা কে নিয়ে মাঝে মাঝে আমি দুঃখ প্রকাশ করলেও নামটা আমি বড্ড ভালোবাসি।” জীবনে নামটাই কেবল ওর অজান্তে কেউ একজন অন্তত ভালো রেখেছে। নাহলে অনেকের এমন এমন নাম হয় তারা ভাবে জন্মের সময় যদি নিজের পছন্দের নামটা চুজ করতে পারতো। কিন্তু সব কিছু সম্ভব হয় না।
———-
বিছানা জুড়ে কম করে পাঁচটা শাড়ি ছড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু কার শাড়ি তা ইচ্ছে জানে না। ওর তো নয় আবার রুমা দেবীর ও না। তাহলে?
নীরব টিশার্ট গায়ে জড়াতে জড়াতে বললো, ” দেখ তো শাড়ি গুলো পছন্দ কিনা?”
ভ্রু কুঁচকে শাড়ির দিকে তাকালো ইচ্ছে। শাড়ি গুলো যে ওর জন্যে আনা তা ইচ্ছে ভালো মতোই জানে। আর শাড়ি গুলো যে ইচ্ছের পছন্দ হবে তা নীরব ও ভালো মতোই জানে। সামনেই ধীরের বিয়ে। সেই উপলক্ষেই নীরব শাড়িগুলো ইচ্ছের জন্যে এনেছে। যদিও বা ওরা শপিং এ গিয়েছিল। কিন্তু সেখানে ইচ্ছে কিচ্ছুটি নেই নি। ওর মতে শাড়ি ওর লাগবে না। টাকা নষ্ট করার কী আছে। কিন্তু নীরব অন্য প্রকৃতির। শুধু শাড়ি তো সে কেনেনি পাশে রয়েছে প্রতিটা শাড়ির সাথে ম্যাচিং পাঞ্জাবি, কোট। ধীরের বিয়ের প্রতিটা অনুষ্ঠানে ওদের ড্রেস যেনো একই হয়, এই ভাবনায় শপিং। যদিও বা ভাবনাটা এসেছে ইপশি আর রজতের ড্রেস কম্বিনেশন দেখে। তাই নীরব ও অ্যাপ্লাই করলো নিজের ক্ষেত্রে।
ইচ্ছে র শাড়ি তো খুব পছন্দ হয়েছে। কিন্তু সব থেকে বেশি কিছু যদি ওকে আকৃষ্ট করে তবে তা নীরবের নীল পাঞ্জাবিটা। কী অসম্ভব সুন্দর! তাই হয়তো শাড়ির থেকে আগে পাঞ্জাবিটা খুলেই দেখে নিলো। যেনো ভাবাও হয়ে গেলো এই পাঞ্জাবিতে কেমন লাগতে পারে নীরবকে।
লাল একখান শাড়ি নীরবের ভারী পছন্দের। সেটাই নীরব হাতে নিয়ে ইচ্ছেকে দেখালো। ইচ্ছেও নীরবের দেখাদেখি নীল পাঞ্জাবিটা ওর চোখের সামনে তুলে অঙ্গভঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলো কতো সুন্দর।
– ” বাহ্, লাল রঙে মিশে গেছে নীল।”
————————
সকাল থেকেই বিয়ে বাড়িতে হাঁক পড়ে গেছে। এই মুহূর্তে বাড়ির সকলে মিলে তারাহুরো করছে গায়ে হলুদের জন্যে। ছেলের হলুদ যত তাড়াতাড়ি হবে ততই না মেয়ের বাড়িতে হলুদ যাবে। পাশের বাড়ির বোস গিন্নি থেকে শুরু করে ইচ্ছের পরিবারের কতো আত্মীয় জড়ো হয়েছে আজ। ধীরকে বসানো হয়েছে হলুদ মাখাতে। বোস গিন্নি হাঁক দিয়ে বললো, ” কী গো নবনীতা? ইচ্ছে কে পাঠাবে তো এখানে তো আরেক এঁয়ো লাগবে। তাড়াতাড়ি পাঠাও। ওদিকে তেল হলুদে দেরি হয়ে যাবে তো।”
কথা শেষ হতে দেরি তার আগেই ইচ্ছের দূর সম্পর্কের এক পিসি বলে উঠলো, ” একই বলো বৌদি, ইচ্ছেকে জি করে এই কাজ করবে? ও তো বিধবা।”
কখনো শুয়ে, কখনো হেলে ধীরের জবরদস্ত ছবি তুলছিল নীরব। কিন্তু নিজের স্ত্রীকে নিয়ে বলা কথায় চমকে যায় নীরব। হাতের ক্যামেরা দিয়ে দূর থেকে আসা ইচ্ছের কয়েকটা ছবি তুলতে তুলতে বলে, ” জীবিত এই আমাকে এতো তাড়াতাড়ি মারবেন না প্লিজ।”
সেই পিসি কে বোস গিন্নি কানে কানে বলে দিলেন ইচ্ছের বিয়ের কথা। আসলে তিনি তা জানতেন না। পাশ থেকে ইচ্ছের বয়সী সেঁজুতি নিজের মাকে সবার সামনেই বলে, ” বিধবা আবার কী? পৃথিবী থেকে কারোর বিদায় নেওয়া মানে এটা না যে সেই মানুষটা নেই তাই আমার জীবনের কোনো মূল্য নেই। কেউ চলে গেলো মানে জীবন আমার জন্যে নতুন কিছু রেখেছে। ”
নীরব সাবলীল ভাবে মেয়েটির নিকটে গিয়ে বললো, ” আপনার নাম জানতে পারি.? ”
নিজের মন মর্জি চলা, রাগী মেয়েটি বিরক্তির সাথে বললো, ” আমি সেঁজুতি। ” বলেই মেয়েটি সেখান থেকে পালিয়ে যাই।
নীরবের মেয়েটাকে কেমন যেনো মনে হলো। যেনো নিজেই নিজের রাজা। দূর থেকে নীরবকে এইভাবে কারোর সাথে কথা বলতে দেখে ইচ্ছের ভালো লাগলো না। কেমন যেনো জেলাস দিল হলো।
_(চলবে)
{ বিঃ: কী লিখেছি জানি না। শরীরটা খারাপ ছিল, তাই গল্প দিতে দেরী হলো। এবার রেগুলার পর্ব দেবো আশা করি।}