নিরালায় ভালোবাসি পর্ব-২৭ শেষ পর্ব

0
2614

নিরালায় ভালোবাসি
কলমে : তুহিনা পাকিরা
২৭ . / সমাপ্ত

ইচ্ছেদের বাড়ির উঠোনে সকলে মিলে এক বৈঠক বসেছে বলা চলে। আসলে সকলে মিলে গল্প গুজব করছে। এইতো কিছুক্ষণ পড়েই আবার সকল আত্মীয় যে যে বাড়িতে চলে যাবে। তাদের হয়তো আর দেখা হবে না। তাই শেষ বেলায় জমিয়ে আড্ডা না দিলে চলে না। তার উপর তপতীর হাতের গরম গরম চা তো রয়েছে। বারান্দার সোফায় বসে ইচ্ছে সেই দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। সকলকে কতো ভালো লাগছে একসাথে। দুই বাড়ির কতো আত্মীয়, বন্ধু মজা তো হবেই। নেই কেবল ইচ্ছে আর তাথৈ। ইচ্ছে তবু ওদের দিকে নজর রেখে উপর থেকেই ওদের কথা শুনতে পারছে। তবে তাথৈ সেই যে দুপুরে এসে ঘুমিয়েছে এখনও ঘুমোচ্ছে। যদিও বা কতক্ষণই বা হবে ঘুমিয়েছে! আসলে ইচ্ছে বেশিক্ষণ শুয়ে বসে থাকতে পারে না। ঘুম তো ঠিক থাক হয়ও না। বেশির ভাগ রাতই ও জেগে বসে থাকে। নীরবের অগোচরে। পাছে নীরব টের পেলে ও ইচ্ছেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

নীচে সকলে নীরবকে ধরেছে। তাদের কথা হলো, বিয়ের সময় তো ছোটো করে করেছিস। ছেলে, মেয়ের বিয়ে কিন্তু মহা ধুমে করতে হবে। এই কথায় অনেকেই হেসে গড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে ধীরের মেয়ে তৃধা। ধীরের কোলে বসে মাঝে মাঝে মাথার ফুলের ক্রাউন টা কপালের দিকে টানছে আর আপন মনে খিল খিল করে হাসছে। যে হাসিতে ইচ্ছের প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে। ওদের বাবুও তো এই ভাবেই হাসবে। ভাবলেই মনে এক অন্যরকম নামবিহীন অনুভূতি হচ্ছে। নিজের পেটে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলো ইচ্ছে। পাশের ছোটো টেবিলে তখন তাথৈ এর হাত থেকে নেওয়া ডাইরির উপর ইরা পাইচারি করছে। বলতে গেলে পাহারা দিচ্ছে। আশ্চর্য্যের বিষয় হলেও ইরা আজও ইচ্ছের কাছেই রয়েছে। সেবার ইচ্ছে ছেড়ে দেবার পর ইরা উড়ে গেলেও পরে আবার ও নিজের বাড়িতে ফিরে এসেছিল। তার পর থেকে এখানেই রয়েছে।

ইচ্ছে দেখলো রজত আর ইপশি ওকে হাত নেরে বাই বলছে। তাই ইচ্ছেও হাত নেড়ে বাই করে দিলো। এখন ওরা বাড়ি ফিরে যাবে। ওদেরও বিয়ে হয়েছে আজ তিন বছর। খুব খুব সুখে আছে ওরা। ইপশি আজও একই রকম আছে। বিশেষ করে রজতের কাছে। ইপশির বোকা বোকা কাণ্ডে রজত বিরক্ত হয় না। বরং রোজকার এক জীবনে একটা খুশির ঝিলিক রয়েছে ওদের জীবনে। আর এইটাই ইচ্ছের ভালো লাগে। ওরা দুজনে ভালোবাসায় একে অপরকে বদলাতে বলেনি আর না চেষ্টা করেছে।

ইরার ডানা ঝাপটিয়ে বারান্দার উপরের গ্রীলে গিয়ে বসলো। ডাইরির পাতাগুলো বিকেলের হাওয়ায় উড়ছে। ইচ্ছে ডাইরিটা হাতে নিলো। অনেক শব্দের বাস এই ডাইরিটা। নীরব তো ইচ্ছের ভালোবাসা। আর যখন থেকে নীরব কে ভালোবাসতে শুরু করেছে ইচ্ছে, তবে থেকে প্রতিটা অনুভূতি এই পাতাগুলোয় বন্ধ করেছে ইচ্ছে। কিন্তু শুধু কী ভালোবাসার অনুভূতি, কোনো অভিমান, দীর্ঘশ্বাস কী এই ডাইরির পাতায় নেই? না আছে। ইচ্ছের জীবনের দীর্ঘশ্বাসটা এই ডাইরির পাতায় বন্ধ আছে। নিজের জীবনের সবথেকে বড়ো কষ্ট, যে নীরব ওকে ওর মতো প্রথমে ভালোবাসেনি। যার জন্যে ইচ্ছের রোজ মনে হয় নীরব ওকে করুনা করেছে। ইচ্ছের রোজ মনে হয় নীরবের ওকে ভালো না বাসার জন্যে আজ ও কথা বলতে পারে না। ইচ্ছের রোজ মনে হয় নীরব যদি ওকে সেই দিন বিয়ে করতো তবে হয়তো সুবীর নামক লোকটার সাথে ইচ্ছের কোনো দিনও দেখা হতো না। ভালো থাকত ও, ভালো থাকতো সুবীর, সুবীরের স্ত্রী- সন্তান। ইচ্ছে আজকের সময়েও জানে না তারা কোথায়? এর জন্যে ইচ্ছে নীরবকে যতই ভালোবাসুক, কিন্তু ক্ষমা করতে পারবে না। এই দীর্ঘশ্বাস টা আজও ইচ্ছেকে দগ্ধ করে।। কিন্তু এই বিষয়ে কোনোদিন নীরবকে বুঝতে দেইনি। পুরোটাই যেনো নীরবের ভালোবাসায় ডুবে রয়েছে। যার উত্থান কোনো দিনও হবে না। আর নীরবকে ভালোবেসেও সেই দীর্ঘশ্বাসটা ইচ্ছে যত্ন করে জমিয়ে রেখেছে। কোনো কোনো ক্লান্ত দুপুরে সেই দীর্ঘশ্বাস একটু একটু করে খরচ করে ইচ্ছে। সেই দীর্ঘশ্বাসের মাঝেও তখন কেমন যেনো একটা শান্তি লাগে। হয়তো দিন শেষে ভালোবাসার মানুষটাকে আপন করে পাওয়ার জন্যে।

ইচ্ছের আজও মাঝে মাঝে মনে হয় ও নীরবকে হয়তো বন্দী করে রেখেছে। আর যাই হোক ইচ্ছে তো কথা বলতে পারে না, আর না জীবনে কখনো পারবে। তাও কেনো নীরব ওকে এতো ভালোবাসে। এটা ইচ্ছেকে রোজ ভাবায়। ভালো বাসলে মনে হয় ও তো নীরবের যোগ্য নয়। আবার ভালোবাসে না ভাবলেই আজও নিজের শ্বাস প্রশ্বাসের তীব্র এক কষ্ট অনুভব করে ইচ্ছে। কিন্তু সত্যি এটাই নীরব জীবনে একজনকেই ভালোবেসেছে আর আজও বাসে, সে হলো ইচ্ছে। হয়তো ভালোবাসতে সময় লেগেছে কিন্তু নিরালায় ও কেবল ইচ্ছেকেই ভালোবাসে। ভালোবাসতে কেমন দুই সেকেন্ড লাগে না তেমনি মাঝে মাঝে দুই যুগের ও কম পড়ে। আর এটা তো দোষের না। আজকাল দিনের হুট হাট পরিবর্তন হওয়া ভালোবাসার চেয়ে ঢের গুন ভালো। অন্তত দিন শেষে ভালোবাসার মানুষটা হাত ধরার জন্যে তো থাকবে, ফাঁকি তো আর দেবে না।

ডায়রির শেষ পাতাটা অল্টালো ইচ্ছে। বর্তমানে ওর জীবনের সব চেয়ে দুঃখের বিষয় হলো, ওকে এক চিন্তা ঘায়েল করেছে। কোনো ভাবে ওর বাবুও ওর মতো বোবা হবে না তো? চিন্তায় চিন্তায় রোজ ও প্রায় অর্ধমৃত। ডক্টর যদিও বলেছে এর কোনো সম্ভাবনা নেই, তাও ইচ্ছে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না। গলার স্বর ছাড়া এই জীবন যে কতটা কষ্টের তারা কেবল ওর মতো মানুষেরা বোঝে। বোঝে প্রতিটা বোবা প্রাণী।

সাত বছর পর,,,

সন্ধ্যে সাতটা থেকে রুমা দেবীকে পাগল করে দিচ্ছে তার নাতি। একটাই প্রশ্ন, বাবা কখন আসবে? আর প্রতিবারই রুমা দেবী বলে চলেছেন, এক্ষুনি এসে যাবে। কিন্তু তার নাতি তো তা শুনবে না। আজ খুব তাড়াতাড়ি পড়া করে নীচে নেমেছে ও। আগেই বুঝেছে ওর ঠাম্মি বাইরে চেয়ার পেতে দাদু, দিদার সাথে গল্প করছে। গত সাত বছরে পরিবর্তন অনেক হয়েছে। সর্ব প্রথমটা হলো নিভৃত; নীরব ও ইচ্ছের একমাত্র ছেলে। বর্তমানে স্ট্যান্ডার্ড টু এর ছাত্র। স্কুল টা বেশি দূর না। এই তো ঠিক সামনেই বিবেকানন্দ শিক্ষা নিকেতন। আরও পরিবর্তন হয়েছে। যেমন ধীরের মা বর্তমানে বেঁচে নেই। বছর তিন হলো তিনি গত হয়েছেন। ইচ্ছেও একটা বাড়ির কাছে নিজের একটা বিজনেস শুরু করেছে বুটিক হাউজ। দুই শাশুড়ি, বৌমা অবসরে সেখানেই নিজের সময় ব্যয় করছে বর্তমানে। নীরব ও নিজের কাজে যথেষ্ট দায়িত্ববান। রোজ তো অফিস আছেই। তার সাথে আছে বউ, স্ত্রী, ছেলের দায়িত্ত্ব। যার কোনো তাতেই সে কোনো কমতি রাখে না। মোট কথা ভালোবাসায় মোড়া জীবনটা বেশ ভালোই চলছে। অপরদিকে ইচ্ছের বাবা মায়ের বয়স হয়েছে। আসলে মেঘে মেঘে বেলা অনেকাংশেই গড়িয়েছে। ধীর, তপতীর সংসার ভালোই চলছে। তৃধাও বড়ো হয়েছে। ক্লাস ফাইভে উঠেছে সে। ছোট্ট নীর এখন বড়ো হয়েছে। সংসারের হাল ধরেছে। মেয়ে খুঁজছে বিয়ের জন্যে। এই ভাবেই সকলের জীবন চলছে।

রাত ঠিক সাড়ে আটটার দিকে নীরব বাড়ি ফিরলো। বাবাকে দেখেই নিভৃত তাড়াতাড়ি বাড়ির ভিতরে নিয়ে গেলো। সাত বছরের ছেলেটা এইটুকু বুঝেছে যে ওর বাবা অফিস থেকে এসেছে, ভীষণ ক্লান্ত। তাই আগে বাবার জন্যে এক গ্লাস জল এনে প্রথমেই যেটা বাবাকে আনতে দিয়েছিল সেইটাই চেয়েছে। নীরব জলটুকু খেয়ে ভ্রু কুঁচকে ছেলেকে জিজ্ঞেস করলো,

– ” কী জন্যে আইসক্রিম গুলো আনতে বললি শুনি? নির্ঘাত মা কে হার্ট করেছিস? ”

তৎক্ষণাৎ না সূচক মাথা নাড়ে নিভৃত। নীরবের কোলে আয়েশ করে বসে বলে,

– ” আমি না বাবা, ওই স্কুলের ঝন্টু। ওই তো মা কে খারাপ কথা বলেছে। আর আমিও রেগে গিয়ে ওর নাকে এক পাঞ্চ মেরেছি। মিস ও মা কে বলে দিয়েছে। সেই থেকেই মা চুপ করে উপরে বারান্দায় বসে রয়েছে। আমার তো মা কে দেখে কষ্ট হচ্ছিল, তাই তোমাকে কিনে আনতে বললাম। তুমি এনেছো তো?”

গম্ভীর মুখে ছেলের দিকে তাকিয়ে রইল নীরব। পরক্ষণেই নিভৃতের মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলল, ” আমার ব্যাগ থেকে নিয়ে নে। ”

নীরব উপরে চলে গেল। নিভৃত ছোটো ছোটো হাতে নীরবের ব্যাগ থেকে সব কটা বক্স বের করে রান্নাঘরে চলে গেলো।

————————–

সবে গরমের শুরু। রাতের দিকটা বারান্দায় বেশ ভালোই হাওয়া আসে। এখানে ছোটো বেঞ্চের মতো একটা বসার জায়গা রাখা রয়েছে। ইচ্ছে তার একধারে বসে রয়েছে। দৃষ্টি তার সামনে। আজ স্কুলে ঝন্টু বলে ছেলেটা হুট করেই ইচ্ছের কাছে এসে বললো, ” অ্যান্টি তুমি তো বোবা। তাহলে তোমার এত ভালো ঘরে কীকরে বিয়ে হয়েছে?”

কথাটা যদি ঝন্টুর নিজের হতো তবে ইচ্ছে কষ্ট পেতো না। আসলে কথাটা ঝন্টুর মায়ের কিংবা আমাদের সমাজের লোকেদের। তোমার মধ্যে খুঁত ধরার পর তাদের প্রথম সমস্যা হলো তুমি মানুষটা এতো খুঁতের মাঝেও ভালো আছো! কেনো থাকবে? তোমাদের উচিত খুব খারাপ থাকা। ঝন্টুর মাও ইচ্ছের কথা বলতে না পারার জন্যে অনেক কথা বলে আর তারই কোনো অংশবিশেষ ছোট্ট সাত – আট বছরের ঝন্টু শুনেছে। আর সেটাই গিয়ে ইচ্ছেকে বলেছে। আর এটাই খারাপ লাগার কারণ ইচ্ছের। বেশি খারাপ লেগেছে নিভৃত এই কথাটা শুনেছে। সেই মুহূর্তে নিভৃত কাঁদো কাঁদো হয়ে ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে ছিল। আর নিভৃতের সেই দৃষ্টি ইচ্ছের বুকে দাগ কেটেছে। ওর জন্যে কী তবে নিভৃত কে কথা শুনতে হয়! এটাই ভেবে কষ্ট পাচ্ছে ইচ্ছে। কে জানে নিভৃত হয়তো এবার থেকে ওর মা কে পছন্দ করবে না। হয়তো ভালোবাসবে না।

ইচ্ছের পাশে গিয়ে নীরব বসতেই ইচ্ছে অতি দ্রুত নিজের চোখের জল টুকু মুছে নিলো। নীরব সবই বুঝলো। এই বিষয়টা ওকে প্রতিনিয়ত পোঁড়ায়। বুকের মধ্যে তীব্র এক ব্যথা ওকে ঘিরে ধরে। এটাই হয়তো অনুশোচনা। সামনের অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে নীরব ইচ্ছেকে বললো, ” জীবনে কোনদিন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না ইচ্ছে। রোজ মনে হয় তোর ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা না আমার আছে না আমি তোকে তোর মত ভালোবাসার যোগ্যতা রাখি। রোজ একটা আফসোস নিয়ে ঘুমাতে যাই যে, আমি কেনো তোকে তোর আগে থেকে ভালোবাসলাম না। কেনো এতটা দেরি করেছিলাম! কেনো? ”

মাথা নেড়ে না বোঝায় ইচ্ছে। নীরবের চোখের কোণের লুকানো জল টুকু মুছে ওর পাশে নীরবের একটা হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। কখনো বা নীরবের টিশার্টের হাতায় নিজের মুখ ঘষে।

– ” আমার তোর কাছে ক্ষমা চাওয়ার মতো মুখ আজ অব্দি হয়নি। আসলে আমার দোষের পরিমাণটা আমার কাছে কয়েক মণ ভারী মনে হয়। আমি পারি না তোর কাছে ক্ষমা চাইতে। কিন্তু রোজ মনে মনে আমি তোর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। আর আমি চাইও না তুই আমাকে ক্ষমা কর। ”

সাইন লাগুয়েজ শিখেছে ইচ্ছে এবং নীরব দুজনেই। তাই ইচ্ছের প্রতিটা কথা নীরব বোঝে। সেই ইশারাতেই ইচ্ছে বোঝালো, ” না নীরব তুমি ভুল ভাবো। আর আমার কাছে ক্ষমা তুমি চাইবে না। আমি তোমাকে যতটা ভালোবাসি তার দ্বিগুণ তুমি বাসো। আর একটা ফালতু বকলে আমি কিন্তু বাপের বাড়ি চলে যাবো। তখন বুঝবে মজা। ”

মুখ বেজার করে ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে নীরব বললো,
“ঠ্যাং ভাইঙ্গা ঘরে ফ্যাইলা রাখুম। তহন বুঝবা তুমি বউ।”

চোখ গোলগোল করে নীরবের দিকে তাকালো ইচ্ছে। বলে কী এই ছেলে। তবুও ইচ্ছে ফিক করে হেসে দিলো। তার সাথে নীরব ও। নিজের হাতের তালুতে ছোটো টিপখান দেখে নীরব ইচ্ছেকে ইশারা করলো। কখন এটা খুলে গেছে কে জানে। ইচ্ছেও নীরবের ইশারা বুঝে আয়না না দেখেই টিপখান কপালের ঠিক মাঝখানে পড়ে নিলো।আর নীরব তা মুগ্ধ হয়ে দেখলো। আসলে বিধাতা তোমার সোলমেট কে তোমার কাছে ঠিক পাঠিয়ে দেয়। নীরব ও এই বিষয়ে অনেকবার অবাক হয়েছে। কী করে তার মন মত গুন ইচ্ছের মধ্যে গিয়েছে নীরব জানে না। তবে বেশ ভালো লাগে।

ইচ্ছে আর নীরব হাত ধরে বসেছিল। সেই সময় দুজনের মাথার মধ্যিখান দিয়ে একটা ছোট্ট মাথা বেরিয়ে এলো।
হাতে একটা বোলে নানান ফ্লেভারের আইসক্রিম। নিভৃত পুরো আইস ক্রিম এর বোল টা ইচ্ছের হাতে দিয়ে বললো,
– ” তোমার জন্যে আনিয়েছি মা। শুধু তুমি খাবে কাউকে দেবেনা মনে থাকবে! এমন কি বাবাকেও না। ”

কথাটা বলা মাত্রই নিভৃত কে কাতুকুতু দিলো নীরব।
– ” ওমনি না। আর আমি যে কষ্ট করে আনলাম আমার জন্যে একটুকু নয় বল। সব খালি মায়ের জন্যে। বলি বাবা কি বানের জলে ভেসে এসেছে নাকি!”

হেসে উঠলো নিভৃত ও ইচ্ছে। নিভৃতকে নীরবের থেকে ছাড়িয়ে ওর মাথায় স্নেহের চুম্বন এঁকে দিলো ইচ্ছে। নিভৃত ও খুশি হয়ে ইচ্ছের গালে একটা চুমু দিয়ে পালিয়ে গেল। পরমুহূর্তে আবারও ছুটতে ছুটতে এসে নীরবকে ও চুমু দিয়ে নিচে ছুট লাগলো নিভৃত।

নিভৃতের যাওয়ার প্রাণে তাকিয়ে হেসে উঠলো নীরব, ইচ্ছে। এক হাতে ইচ্ছেকে জড়িয়ে ধরে নীরব বললো,

– ” ও কথা যদি বলতে না পারে তাই নিয়ে তো খুব টেনশনে ছিলিস। এখন দেখ তোর থেকেও ও বেশি কথা বলে। ”

মাথা নাড়ে ইচ্ছে। হাসি ও পায়। বারান্দার গ্রীলে ইরা
” পিকু” বলে ডাকছে। নীচে দুই বাড়ির লোকেরা আড্ডা দিচ্ছে, নিভৃত আর তৃধা ছুটাছুটি করছে।

– “এইভাবেই বোধহয় এক একটা যুগ কেটে যায়, তাইনা ইচ্ছে!”

মাথা নাড়ে ইচ্ছে। মাথা রাখে নীরবের কাঁধে। হালকা হাসে নীরব। এইভাবে ও নিরালায় ভালোবাসা হয়। নীরব ইচ্ছেকে খুব খুব ভালোবাসে। ইচ্ছের আগে থেকে নয় ইচ্ছের অনেক পর থেকে। কিন্তু সত্যি এটাই দেরিতে হলেও ভালোবাসাটা ওর কেবল ইচ্ছের জন্যেই ছিল। হয়তো শব্দেরা ইচ্ছের মুখে খেলা করে না। কিন্তু নীরব ঠিকই বোঝে ইচ্ছের কী চায়। সেটা আগেও বুঝত, আজও বোঝে, আর সারাটা জীবন বুঝবে। এর জন্যে খুব বেশি মীরাক্কেল করে ইচ্ছেকে কথা বলতে হবে এমন নয়। নীরব ইচ্ছেকে এই রূপেই ভালোবাসে। এটাই ওদের নিরালায় ভালোবাসা। তাই দুজনের হৃদয়ও হয়তো এই মুহূর্তে বলে চলেছে” নিরালায় ভালোবাসি।”

।। সমাপ্ত ।।

{ বিঃ : আমি শেষ পর্বে ইচ্ছের মুখে ভাষা দিইনি। ভালোবাসাতো আছে আর কি শব্দের খুব দরকার! ওদের জন্যে না হয় ভাষাহীন ভালোবাসাই রইলো।
গল্প টা আজ শেষ। অনেক অপেক্ষা করিয়েছি এই গল্পে আপনাদের। ক্ষমা করবেন। আজ অন্তত কেমন হয়েছে সকলে জানাবেন। ভালো, খারাপ দুই ই বলবেন। পরের টা তবে আরো ভালো করতে সুবিধা হবে। }

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here