প্রণয় প্রহেলিকা পর্ব-২৫

0
684

#প্রণয়_প্রহেলিকা (কপি করা নিষিদ্ধ)
#২৫তম_পর্ব

অনল একটু সময় নিয়ে বললো,
“আপনি যে মিথ্যে কথা বলে এখানে ঢুকেছেন কেউ না জানুক আমি জানি। ওই ছিনতাই এর কথাটা সম্পূর্ণ বানোয়াট ছিলো। একটা মুভির লাইন টু লাইন কপি। বাড়ির সবাই বিশ্বাস করলেও আমি কিন্তু করি নি। কারণ মিথ্যের লংকায় একটা সত্যের আগুন ই যথেষ্ট। আপনার সব চুরি হলো, দামি ঘড়িটা থেকে গেলো অদ্ভুত না? যাই হোক, আমি বাধা দেই নি কারণ আপনি দাদাজানের চিকিৎসা করেছিলেন। তবে আপনার মতলব যে খুব সুবিধার নয় সেটা আমি জানি। আজ লুকোচুরি ছেড়ে সরাসরি জানতে চাচ্ছি, কি মতলবে এসেছেন আপনি?”

অনলের প্রশ্নে ঈষৎ বিস্মিত হলেও ভড়কালো না দীপ্ত। বরং তার ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠলো বিচিত্র হাসি। বিনা সংকোচে সে মুখোমুখি হলো অনলের। নির্লিপ্ত কন্ঠে বললো,
“যদি বলি আমার মতলব ধারাকে নিজের করে পাওয়া!”

কথাটি কর্ণকুহরে যেয়ে মস্তিষ্কে ঝংকার তুললো। অনলের মনে হলো কেউ তার হৃদয় খুবলে খাচ্ছে। হৃদয়ের অন্তস্থলে অসহনীয় তীব্র ব্যথার সাথে এক অসামান্য আক্রোশ, ক্রোধ তাকে ঘিরে ধরলো। শান্ত ঝিলের মতো চোখজোড়ায় ধপ করে আগুন জ্বলে উঠলো। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ হারালো না অনল। নিজেকে সংযত রেখে বললো,
“স্বপ্ন দেখা ভালো, তবে অবাস্তব স্বপ্ন দেখা ক্ষতিকর। আমি তাজ্জব হচ্ছি আপনার সাহস দেখে, আমার সামনে আমার বউ এর দিকে কুনজর দিচ্ছেন। অদ্ভুত! আমি ভদ্র মানুষ বলে আমার ভদ্রতার সুযোগ নিবেন না।”
“কিসের বউ! একটা বিয়ে যার ভিত্তি নেই সেটার জোর দেখাচ্ছেন? ইভেন সেলিম আংকেল এই বিয়ে মানেন না! উপরন্তু ধারার বয়স কত! উনিশ হলেও আমার জানা মতে সার্টিফিকেটে তার বয়স আঠারো বছর হতে এখনো চার মাস বাকি। সুতরাং বাংলাদেশের আইনে ও এখনো নাবালিকা। তাহলে কিসের বিয়ে আর কিসের বউ”

অনল এবার কিছুক্ষণ শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো দীপ্তের দিকে। গাল ফুলিয়ে তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে এক হাত পকেটে পুড়ে শান্ত কন্ঠে বললো,
” আপনার ওই সেলিম আংকেলকে বলে দিবেন তার যা করার করে নিতে। আমার বউ আমার ই থাকবে। অস্ট্রেলিয়ায় বসে হুমড়ি তুমড়ি না করে দেশে এসে মুখোমুখি কথাটা বলতে। যখন আমার ফুপুকে রেখে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করতে ব্যাস্ত ছিলেন, তখন তার ভাবা উচিত ছিলো তার একটা মেয়ে আছে। সুতরাং আই হ্যাড নট ওর্ডারড হিজ গ্লাস অফ অপিনিয়ন। গো টেল হিম৷ আর একদিন সময় দিচ্ছি। আমার বাড়ি ছেড়ে চলে যাবেন। চাচু আর বাবা ঘাড় দিয়ে বের করুক তার পূর্বেই আপনি নিজ থেকে বেরিয়ে যান”

বলেই ভেতরে পা বাড়াতে নিলে দীপ্ত হিনহিনে কন্ঠে বলে উঠে,
“আর ইউ স্ক্যায়ারড অফ মি? ভয় পাচ্ছো সত্যি তোমার ধারাকে নিয়ে ছু মন্তর না হয়ে যাই। অবশ্য হতেই পারো। আফটার অল আমি যা চাই, তা আদায় করেই ছাড়ি”

কথাটা শেষ করতে পারলো না দীপ্ত তার আগেই তার চোয়ালে সজোরে একটা মুষ্টিবদ্ধ হাতের ঘু’ষি এসে পড়লো। আকস্মিক ঘটনায় টাল সামলাতে পারলো না দীপ্ত, ধপ করে মাটিতে বসে পড়লো। হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অনলের দিকে। তার কপালের শিরা ফুলে উঠেছে। চোখ অগ্নিদৃষ্টি বর্ষণ করছে। ঘটনায় ধাতস্থ হবার আগেই অনল একটু ঝুঁকে তার কলার চেপে ধরলো। তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললো,
“এর পর থেকে এই ঘু’ষি’টার কথা স্মরণে রাখবেন। লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি, আমার ভদ্রতার সুযোগ নিবেন না। আমি মানুষটা দুধে ধোওয়া তুলসি পাতা না”

বলেই ছেড়ে দিলো দীপ্তকে। দীপ্তের শুষ্ক ঠোঁটে ফে’টে তরল রক্ত গলগল করে পরছে। সে এখন অনলের কঠিন মুখখানার দিকে তাকিয়ে আছে। এভাবে আহত হবে অকল্পনীয় ছিলো। অনল ভেতরে চলে গেলেও দীপ্ত এখনো সেখানেই বসে রইলো। তার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো। হাত দিয়ে র’ক্তটুকু মুছতে মুছতে বললো,
“ইন্টারেস্টিং, এবার খেলা জমবে”

********

বই খুলে হা করে শুন্যের দিকে তাকিয়ে রয়েছে ধারা। পড়াতে মন বসছে না। তার সম্পূর্ণ ধ্যান ঘুরপাক খাচ্ছে অনল এবং দীপ্তের কথোপকথনের উপর। তাদের মাঝে কি কথোপকথন হচ্ছে ব্যাপারখানা ভেবেই কিঞ্চিত বুক কাঁপছে তার। প্রিন্স উইলিয়ামের রাগ তার জানা। তখন যেভাবে তাকিয়ে ছিলো ধারার মনে হচ্ছিলো যেনো অনলের চোখ থেকে আগুন ঝরছে। ধারার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিলো। তার বারণের স্বত্তেও ধারা শুধু দীপ্তের সাথে কথাই বলে নি তার সাথে বিকেলের সময়টুকু কাটিয়েছে। কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও ব্যাপারটাকে এড়াতে পারে নি। কারণ এই দীপ্ত নামক ব্যাক্তিটি তাকে ভীষণ বাজে ভাবে ফাঁসিয়েছে। যথারীতি তাকে ব্লা’ক’মে’ই’ল করেছে। অনলকে জানাবার সুযোগটিও হয় নি তার। অনল কি তাকে ভুল বুঝবে! রাগ করবে তার উপর! অবশ্য রাগ করাটা অস্বাভাবিক হবে না। ব্যাপারটা ভাবতেই হতাশ ধারা মাথা নোয়ালো। বই এর উপর দু এক বার মাথা ঠোকালো। উদ্বিগ্নতা তাকে ঘিরে রেখেছে। মাথাটা চিন্তার ঘোরে ফেটে যাবার জোগাড়। ঠিক সেই সময় সজোরে দরজায় আঘাত করে অনল। হনহন করে ভেতরে প্রবেশ করে সে। তার কঠিন, রক্তিম মুখখানার দিকে তাকাতেই শুকনো ঢোক গিলে ধারা। অনল ধপ করে বসলো বিছানায়। জোরে জোরে বার কয়েক নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো সে। কিন্তু ব্যর্থ হলো। ফলে হনহন করে হেটে ওয়াশরুমে চলে গেলো সে। ধারা তাকে কিছু প্রশ্ন করার সুযোগ পেলো না। নির্বাক দর্শকের মতো শুধু চেয়ে রইলো।

আধ ঘন্টা পর অনল বেরিয়ে এলো ওয়াশরুম থেকে চুল মুছতে মুছতে। তার চুল বেয়ে জলকনা গড়িয়ে পড়ছে মুখশ্রীতে। কঠিন মুখশ্রী এখনো নির্বিকার। বোঝা যাচ্ছে সে গোসল সেরে এসেছে। শ্যাওলা রঙ্গের টি শার্টটি বুকের কাছে ভেজা। বলিষ্ট বাহুজোড়ার লোমও ভিজে লেপ্টে আছে বাহুর সাথে। ধারা কিছু সময় অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অনলের দিকে। নির্লজ্জ চোখ জোড়া যেনো কিছুতেই দৃষ্টি সরাতে পারছে না। মাঝে মাঝে ধারার অবিশ্বাস্য লাগে, প্রিন্স উইলিয়ামটি তার বর! প্রতিদিন নতুন করে লোকটির প্রতি বিমোহিত হয় সে, প্রতিদিন নতুন করে তার মনকাননে প্রণয়ের সিন্ধুপুষ্প ফুটে। প্রতিদিন নতুন করে লোকটিকে ভালোবাসে। আয়নায় ধারা মুখ খোলা বিমোহিত চেহারাটি দৃষ্টি এড়ায় না অনলের। তখনের ক্রোধ ঠান্ডা পানির প্রভাবে একটু হলেও শান্ত হয়েছে। আয়নার তাকিয়ে নির্লিপ্ত কন্ঠে বলে,
“মুখ বন্ধ কর, মাছি ঢুকে যাবে”

অনলের উক্তি কানে আসতেই স্বম্বিত ফিরে ধারা। সাথে সাথে মুখ বন্ধ করে ফেলে সে। একটু সাহস করে রয়ে সরে বলে,
“তুমি কি রেগে আছো?”

প্রশ্নটি শুনতেই পেছনে তাকায় অনল। উত্তর দেবার পূর্বেই সজোরে চিৎকার শুনতে পায় সে। ধারা ধরফরিয়ে উঠে। অনল টাওয়াল বিছানায় ছুড়েই ছুটে বেড়িয়ে যায় ঘর থেকে। ধারাও বসে থাকে না। সেও পিছু নেয়। ঘর থেকে বের হতেই সুভাসিনীর দেখা পায়। তাকে চিন্তিত দেখায়। উদ্বিগ্ন কন্ঠে শুধায়,
“চিৎকার শুনেছিস?”
“হ্যা, কিন্তু চেঁচালো কে!”
“দীপ্তের ঘর থেকে এলো না!”

হ্যা চিৎকারটি দীপ্তের ঘর থেকেই এসেছে। ইতোমধ্যে বাড়ির বাকিরাও এসে জড়ো হলো। ইলিয়াসের মেজাজ খারাপ। সে খিটখিটে গলায় বলে উঠলো,
“এই বিদেশী তো শান্তি দিচ্ছে না, রাত দুপুরে এভাবে চেঁচাচ্ছে কেনো?”
“পড়ে টরে গেছে কি না, ওর ঘর থেকে বিকট শব্দ এসেছে”

রুবির কথা শুনতেই আর দেরি করলো না অনল। ছুটে গেলো দীপ্তের ঘরে। ঘরের দরজাটি ভেজানো ছিলো। দরজা ঠেলতে তা খুলে গেলো। দরজা খোলার পর যে দৃশ্যের মুখোমুখি হলো তা কল্পনীয়। রীতিমতো বিস্মিত নজরে তাকিয়ে রইলো বাড়ির লোকেরা। দীপ্তের খাটটি বিধ্যস্তভাবে ভাঙ্গা ঠিক মাঝবরাবর। দীপ্তের মাজা আটকে আছে সেই কাঠের ফ্রেমে। চাইলেও মুক্ত হতে পারছে না। উপরন্তু সে পাগলের মতো নিজের গা চুলকোচ্ছে। তার শুভ্র শরীর চুলকাতে চুলকাতে লাল হয়ে গিয়েছে৷ তবুও তার চুলকোনো থামছে না। তাকে পাগলের মতো লাগছে। মাজার ব্যাথা এবং গায়ের অসহনীয় পরিস্থিতি তাকে পাগল প্রায় করে তুলেছে। এই অসহনীয় পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হতেই সে আর্তনাদ করে যাচ্ছে। দীপ্তের পরিস্থিতি সেই ফাঁদে পড়া ঘুঘুটির মতো। যে আত্নচিৎকার করে নিজেকে মুক্ত করার অভিপ্রায় রাখে। এতো গুরুতর মূহুর্তেও অনলের কঠিন মুখে হাসি ফুটে উঠলো। অঘোষিত শত্রুর মন্দ দেখতে হয়তো কারোর ই খারাপ লাগে না। ধারা খেয়াল করলো অনল মিটিমিটি হাসছে। কিন্তু সুভাসিনী কন্ঠ শুনতেই হাসি থেমে গেলো। তিনি বলে উঠলেন,
“ওকে ওঠা, মাজা টাজা ভাঙ্গলো কি না দেখ”

অনল অপেক্ষা করলো না। টেনে তুললো দীপ্তকে। দীপ্ত পাগলের মতো নিজেকে চুলকে যাচ্ছে। তাকে জিজ্ঞেস করতেই সে অসহায় কন্ঠে বললো,
“আমি এসে ফ্যান ছেড়ে বসতেই খাট ভেঙ্গে গেলো। আর আমি আটকে গেলাম। মিনিট দশেক বাদেই এই এলার্জি। গা চুলকে লাল হয়ে যাচ্ছে। দিস ইজ ইনটলারেবল। এতো কেনো চুলকাচ্ছে শরীর? আমি তো এলার্জির কিছু খাই নি”

তার স্বীকারোক্তি শেষ হতেই অনল বললো,
“ডাস্ট এলার্জি হতে পারে। আসলে সারাদিন বাহিরে ঘুরেছেন তো। এক কাজ করুন গোসল করে ফ্রেশ হন। আই থিংক সেরে যাবে। না সারলে চুলকানির মলম দিচ্ছি”

দীপ্ত মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। মাজা না ভাঙ্গলেও বেশ ব্যাথা পেয়েছে সে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কোনো মতে ওয়াশরুম অবধি গেলো সে। দীপ্ত যেতেই অনল এবং ইলিয়াস সজোরে হেসে উঠলো৷ এতো সময় হাসি থামিয়ে রেখে পেট ফুলে গেছিলো তাদের। বিদেশী মানুষের এমন নাজেহাল অবস্থা তাদের বিনোদন ই দিলো। ইলিয়াস হাসতে হাসতে বললো,
“কিভাবে চুলকাচ্ছিলো, যেনো কেউ বিচুটি পাতা ডলে দিয়েছে। ওর অবস্থাটা দেখার মতো ছিলো। একেবারে বিদেশি পাগল”

কথাটি শুনতেই অনলের বুঝতে বাকি রইলো না এই কান্ডটি ঠিক কাদের। দীপ্ত যে খাটটিতে ঘুমায় তার অবস্থা হলেও একেবারে খারাপ হয়। তাই সেটা হুট করে ভেঙ্গে পড়াটা সন্দেহজনক। উপরন্তু কারোর এতোটা ডাস্ট এলার্জি হবে না যে নিজেকে চুলকে র’ক্ত বের করে ফেলার মত অবস্থা হবে। যেখানে দীপ্ত নিজেই বিস্মিত। তাই এটা যে তার প্রখ্যাত বোনেদের বোনদের কাজ অনল নিশ্চিত। তার আন্দাজটি একেবারে ঠিক। এই নিপুন কাজটি জমজের। দীপ্তকে বের হতে দেখেই তারা ফন্দি আটলো আজকের দিনটা কি করে দীপ্তের জন্য বিভীষিকাময় করে তোলা যায়। তারা পুরোনো খাটের ফ্রেমের ঠিক মাঝবরাবর যে কাঠটি থাকে সেটাকে হাতুড়ি দিয়ে অর্ধেক ভাঙ্গা অবস্থায় রেখে রেখে দিলো। ফলে দীপ্তের ভর পড়তেই কাঠটি ভেঙ্গে গেলো। যার ফল খাটের বিধ্যস্ত অবস্থা। উপরন্তু সারা চাঁদরে ছিটিয়ে দিলো ফর্মুলা নাম্বার ৪২০। অতি বুদ্ধিমত্তার সাথে কাজটি করলো তারা। যেনো কেউ টের ও না পায়। দীপ্তের বিদেশী সিলমোহরের জন্য এবারটিতে ছাড় পেয়ে গেলো। অনল আড়চোখের তাকালো দরজার কাছে শিটিয়ে থাকা অসহায় মুখে দাঁড়িয়ে থাকা কিশোরীদ্বয়ের দিকে। মুখটাকে অসহায়ের মতো করে রাখলেও তাদের চোখের উৎফুল্লতা এবং ঠোঁটের কোনে চেপে রাখা বিজয়ী হাসি নজর এড়ালো না অনলের। মনে মনে দীপ্তের ভবিষ্যতের জন্য সন্দেহ ই হলো। অপর দিকে নিজেদের বিশাল সফলতায় একে অপরের সাথে হ্যান্ডশেক করলো৷ আশা ফিসফিসিয়ে বলল,
“চেরাগআলীর জন্য কষ্টই হচ্ছে। এসেছিলো দেশ ভ্রমণে। এখন হাসপাতাল ভ্রমণ করতে হবে”
“বেঁচারা, সে তো জানতো না তার সাক্ষাত কাদের সাথে হবে। এসেছিলো মানুষ হয়ে, ফিরবে কি হয়ে সেটা আল্লাহ ই জানে”

বলেই দুজন হাসতে লাগলো। এশা আশার খপ্পরে পড়ে বেঁচারা সত্যি নাজেহাল। ওয়াশরুম থেকে গোসল করে এসে চুলকানি থামলো কিছু ব্যাথা না। সারা শরীর লাল হয়ে আছে তার। চুলকে চুলকে মুখটা ফুলে গিয়েছে। উপরন্তু খাটটাও ভাঙ্গা। অনল এবং ইলিয়াস মিলে খাট সরিয়ে যাজিম বিছিয়ে দিলো। বেচারাকে রাতটা মাটিতেই কাটাতে হবে। কিছুই করার নেই। মাজা ব্যাথা নিয়ে মাটিতে থাকলেও এ বাড়ি ছাড়বে না সে।

দীপ্তের ব্যবস্থা করে ঘরে ফিরলো অনল। ধারাও ফিরলো তার পিছু পিছু। মনে হাজারো প্রশ্ন দলা পেকে আছে তার। অনলের কাছে উত্তর পাওয়া বাকি। তাই দেরি না করেই বলে উঠলো,
“আমি ইচ্ছে করে যাই নি লোকটির সাথে। সে আমাকে ব্লা’ক’মে’ই’ল করেছিলো। আসলে বন্ধুদের সামনে আমার বিয়ের কথাটা এমন ভাবে তুললো আমি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। উপরন্তু তোমার নাম জানাজানি হলে ব্যাপারটা জলঘোলা হবে। তাই আমি উনার শর্তে রাজি হয়েছি। প্লিজ আমার উপর রাগ করো না”

এক নিঃশ্বাসে কথাটা বলে নতমস্তক দাঁড়িয়ে রইলো ধারা। অনলের রাগ উগরানোর অপেক্ষা করতে লাগলো সে। কিন্তু তেমন কিছুই ঘটলো না। বরং অনল তার হাত টেনে বক্ষস্থলে মিশিয়ে নিলো। শক্ত বেষ্টনীতে নিবিড়ভাবে আবদ্ধ করে রাখলো। ললাটে উষ্ণ পরশ দিয়ে বললো,
“তোর কেনো মনে হলো আমি তোর উপর রাগ করবো যেখানে আমি সবটা জানি!”…………

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here