প্রণয় প্রহেলিকা পর্ব-৩৬

0
629

#প্রণয়_প্রহেলিকা (কপি করা নিষিদ্ধ)
#৩৬তম_পর্ব

অনলের কথাটা শেষ হতেই হিনহিনে কন্ঠে অনন্যা বলে উঠলো,
“আমাকে সবসময় স্বার্থপর মনে হয় তোর! সবসময় আমাকেই দোষী করে এসেছিস। আচ্ছা তোর বউ স্বার্থপর নয়। তোকে বিপদে ঝুলিয়ে ঠিক ই তো গা ঢাকা দিয়ে আছে! কি করেছে তোর অপবাদ সরাতে?”

কথাটা কর্ণপাত হতেই চোখ মুখ খিঁচে উঠলো অনলের। তীর্যক, বরফ শীতল দৃষ্টিতে তাকালো সে অনন্যার দিকে। শান্ত কন্ঠে বললো,
“আমার বউ কি করেছে না করেছে সেই কৈফিয়ত আমি তোমাকে দিবো না অনন্যা। নিজের দায়রাতে থাকো। সীমা লঙ্ঘন করো না। আমি শান্ত আছি, শান্ত থাকতে দাও”

অনলের এমন আচারণে চমকালো অনন্যা। অনলের শীতল তীর্যক দৃষ্টি এবং মুখের কাঠিন্য নজরে আসতেই ঈষৎ ঘাবড়ে গেলো সে। তবুও কাঁপা স্বরে বললো,
“আমি সীমাতেই আছি অনল, তুই ই নিজের চোখে ভালোবাসার কাপড় বেঁধে অন্ধ হয়ে আছিস! আমি শুধু তোকে বাস্তবতা দেখাচ্ছি”
“আমি কোনো ছোট বাচ্চা নই যে বাস্তব আর কল্পনার পার্থক্য বুঝে না। কিন্তু আমার মনে হয় তুমি তোমার নিজস্ব জাগতিক দুনিয়া থেকে বের হতে পারছো না। তাই তো সবাইকে নিজের মতো মনে করছো। আমার ধারাটা বয়সে আমার থেকে অনেক ছোটো। ফলে আমি বা আমার পরিবার কখনোই ওর উপর আঁচ আসতে দেই নি। সাধ্য অনুযায়ী রাজকুমারীর মতো তাকে রাখা হয়েছে, ফলস্বরুপ এখনো পৃথিবীর রুক্ষ্ণ, নিষ্ঠুরতার সম্পর্ক তার ধারণা স্বল্প। এই জটিল ব্যাপারে জড়ালে তার ভবিষ্যতের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। তবুও মেয়েটি শুধু আমার চাকরি রক্ষার্থে দ্বিতীয়বার পরীক্ষার আর্জি দিতেও পিছ পা হয় নি। সে জানে যদি তার রেজাল্ট আগের থেকে একটু খারাপ হয় প্রশাসন তাকে বহিষ্কার করতে পারে। তবুও মেয়েটি ভয় করে নি। আমার জন্য এই বিপদে ঝাপিয়ে পড়েছে। সুতরাং তোমার চোখ দিয়ে আমার ধারার প্রয়োজনীয়তাবোধ করছি না আমি। নিজের সীমার মাঝে থাকো অনন্যা। আমার বন্ধু হবার অধিকার তুমি হারিয়েছো। সুতরাং আমাকে উত্যোক্ত করা বন্ধ করো”

অনলের শান্ত ভঙ্গিতে কথাগুলো অপমানের ধারালো ছুরির মতো বিঁধলো অনন্যার হৃদয়ের। চরম অপমান এবং ক্রোধে বিধ্বস্ত হয়ে পড়লো সে। শুভ্র মুখখানা হয়ে উঠলো নিমেষেই রক্তিম। নিজের আত্মসম্মানের খাতিরে আর দাঁড়ালো না সে। হনহন করে ছুটলো সে। অনল তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়লো। চরম বিরক্তি হচ্ছে তার। মেয়ে না হলে হয়তো মে’রে’ই বসতো। ধারার নামে অহেতুক কথা কখনোই সহ্য হয় না তার। দুপকেটে হাত দিয়ে ঝোপটির কাছে আসলো সে। তারপর গলা খাকারি দিয়ে বললো,
“লুকিয়ে কারোর কথা শোনাটা মোটেই ঠিক নয়। এটা একটা বদগুন”

কথাটি কর্ণপাত হতেই মাথা তুলে তাকালো ধারা এবং মাহি। চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়লো তারা। এর চেয়েও অবাককর বিষয় অনল টের পেলো কি করে! সে কি প্রথম থেকেই জানতো। সময় নষ্ট না করে উঠে দাঁড়ালো তারা দুজন। কোনো কথা না বলেই উল্টো দিকে হাটা দিলো তারা। ধারা কথা বলবে না অনলের সাথে। প্রচন্ড অভিমান হয়েছে তার। যদিও যখন অনন্যাকে মুখের উপর সঠিক জবাব দিচ্ছিলো তখন মনে এক অকল্পনীয় শান্তি লাগছিলো। হৃদয় পুলকিত হয়ে উঠছিলো এই ভেবে অনল তাকে ভুল বুঝে নি। কিন্তু সেই পুলক টিকসই হলো না। মূহুর্তেই সকালের কথাগুলো ভেবে তেতো হয়ে উঠলো হৃদয়। যদি এতোই ভালোবাসে তবে একটু বিশ্বাস রাখলে কি এমন ক্ষতি হতো! অনলও ধারাকে আটকালো না। ঠোঁটের কোনে এক অমলিন হাসি ফুটিয়ে চেয়ে রইলো ধারার যাবার পানে। মেয়েটি সত্যি ছেলেমানুষ।

ল্যাব স্যাশনাল শেষ হবার পরও বন্ধুমহল প্রস্থান করলো না। তারা দাঁড়িয়ে রইলো ডিপার্টমেন্টের বাহিরে। প্রতীক্ষা মাধবীর। মেয়েটির সাথে আজ মুখোমুখি বোঝাপড়া হবে। ধারার মুখ কঠিন হয়ে আছে। মাধবীর সাথে একটা এস্পার ওস্পার করেই ছাড়বে সে। মাহি তাকে ঠান্ডা করার জন্য বললো,
“মাথা গরম করবি না। শুধু জিজ্ঞাসাবাদ করবি। তাও শান্তভাবে, উগ্র হলেই আমাদের গুটি বের হয়ে যাবে। সেটা করা যাবে না”
“এক কথা এই নিয়ে গুনে গুনে ছ বার বলেছিস, এবার থাম”
“হ্যা, কারণ তুমি যে রণচন্ডীরুপ ধারণ করো আমার ভয় হয়, কখন না মাধবীর মাথা ফাটিয়ে দিস। তাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। একটা ভুল আর আমাদের পাঁচজনের লাইফ শেষ। আমরা সবাই সিড়ির ওখানে আছি। দিগন্ত তোদের কথোপকথন রেকর্ড ও করবে। ও তোকে উস্কালেও তুই শান্ত থাকবি”
“হ্যা, হ্যা, বুঝেছিস। এবার একটু থাম আম্মা”

মাহি আর কথা বাড়ালো না। তারা প্রমাণ জড়ো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মাধবীর এই কমপ্লেইনের পেছনের আসল উদ্দ্যেশ্যটা বের করাই তার উদ্দেশ্য। এই বুদ্ধিটা অবশ্য দিগন্তের মাথা থেকে বের হয়েছে। সে ল্যাবের মাঝে সকলকে জড়ো করে। তারপর নিজের বুদ্ধিটা বর্ণনা করে। ধারা মাধবীকে প্রশ্ন করবে, বারংবার তাকে উছকে দিবে। সিড়ির নিচে থাকবে বন্ধুমহল। মাধবী একটা পর্যায়ে তার কমপ্লেইনের কারণটা মুখ ফসকে বলবেই। সেটার ভিডিও করবে দিগন্ত। তারপর সেটা দিয়েই মাধবীকে তুর্কিনাচন নাচানো যাবে৷ দিগন্তের মাথা থেকে এমন একটা বুদ্ধি শুনেই তো অবাক বন্ধুমহল। নীরব অবাক কন্ঠে বললো,
“ভাই বলে দে, কোথা থেকে ছাপিয়েছিস! তোর মাথায় এই বুদ্ধি অসম্ভব”
“কেনো? আমি কি গা’ধা নাকি গ’রু? আমার মাথায় কি কি বুদ্ধি আছে তোরা কল্পনা করতে পারবি না। আমি হলাম এ যুগের শার্লক”

দিগন্তের কথায় সকলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি প্রয়োগ করে। যার অর্থ “ঢপ কম মার”। ফলে সে গাইগুই করে স্বীকার করলো,
“একটা মুভি থেকে ছাপানো”
“এবার লাইনে আসো”

নীরবের কথায় ধারাও হেসে দিলো। এই সবের মধ্যে তাদের বন্ধুত্বের শীতলতাও খানিকটা হলেও কমে গেলো। বন্ধুমহল তাদের আগের বেশে চলে এসেছে— “সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে মোরা পরের তরে”।

অপেক্ষার সময় বাড়ছে। অবশেষে মাধবী বের হলো তার কাজ শেষ করে। বন্ধুমহল মোবাইল নিয়ে প্রস্তুত। মাধবী ধারার মুখোমুখি হলো। ধারাকে দেখতেই খানিকটা চমকালো সে। ধারার কঠিন মুখ এবং রক্তিম চোখে যে কেউ ভয় পাবে। মাধবী পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই ধারা বাধ সাধলো। শান্ত গলায় বললো,
“মাধবী, আমার তোমার সাথে কথা আছে”
“আমার নেই, আমার কাজ কাছে। আমাকে যেতে দাও”
“প্রশ্নের উত্তর না পেলে তো যেতে দিবো না”
“আজব তো! এটা কি মামদোবাজি?”

খানিকটা ভীত কন্ঠেই মাধবী বললো। ধারা অবাক হলো। মাধবীর মতো মেয়ে এতোটা ভয় পাচ্ছে কেনো! ধারা তার গলা নরম করলো। খানিকটা ধরা গলায় বললো,
“তোমার সাথে তো শত্রুতা আমার মাধবী, অনলস্যারের সাথে এমনটা করলে কেন? আজ বিনা অপরাধে সে ভুগছে!”
“বিনা অপরাধ! তোমার মতো মেয়ে এতো ভালো নম্বর পায় আর আমি সারাদিন পড়েও সেই একই নম্বর পাই তাহলে বিনা অপরাধ কিভাবে? তুমি নিজেই চিন্তা করো তুমি কি এতো ভালো রেজাল্ট করার যোগ্য। কি জানো তুমি! কখনো পাঁচ ছ খানা টিউশনি করিয়েছো শুধু সেমিষ্টার ফি দেবার জন্য? তোমাদের মতো মেয়েরা বুঝবে না। কত কষ্ট করে আমরা আমাদের ভবিষ্যত গড়ি। এই বৃষ্টি রোদ উপেক্ষা করে টাকা কামাই করি। কারণ তোমাদের মতো কেউ মুখে তুলে দেবার মতো নেই। দেখো ধারা, আমি কি কেনো করেছি সেটার কৈফিয়ত তোমাকে দিবো না। আমার মনে হয়েছে পার্শিয়ালিটি হয়েছে আমি কমপ্লেইন করেছি। ব্যাস। যেতে দাও এবার”

বলেই হনহন করে হেটে চলে গেলো মাধবী। ধারা ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। ধারার মনে হলো মাধবী তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে। সে কিছু একটা লুকাচ্ছে। সে ধারার চোখে চোখ রাখতেই ভয় পাচ্ছিলো। বন্ধুমহল সিড়ির নিচ থেকে বেড়িয়ে এলো। হতাশ কন্ঠে দিগন্ত বললো,
“কি চালাক! কি সুন্দর করে সাজানো উত্তর দিলো। আমি ভেবেছিলাম ও ধারার প্রতি হিংসে প্রকাশ করবে। কিন্তু না! সে পাশ কাটিয়ে কথাটা বললো।”
“আমার মনে হয় ও কিছু একটা লুকাচ্ছে”

চিন্তিত ধারা কথাটা বললো। নীরব ও সায় দিলো। নীরব অবাক কন্ঠে বলল,
“এই এক বছর কখনো শুনলাম না মাধবীর টিউশন করা লাগে। ওর কোনো অর্থনৈতিক ঝামেলা আছে। ধারার সাথে কথা বললেই সে সর্বদা একটা দাম্ভিকতা প্রকাশ করতো। হিংসাত্মক তার পরিকল্পনা। আজ হুট করে এই টোনে কথা বললো কেনো? ও কি কোনো ঝামেলাতে আছে?”
“খোঁজ নিতে হবে”

বেশ বিজ্ঞভাব নিয়ে দিগন্ত কথাটা বললো। বন্ধুমহল ও সায় দিলো দিগন্তের কথায়। বের তো করতেই হবে মাধবীর এমন পরিবর্তিত আচারণের কারণ_______

বাসায় ফিরে নিজ ঘরে যেতেই কানে এলো এশা আশার কথা। ধারা দরজা ঠেলে উঁকি দিলো তাদের ঘরে। তারা বেশ সুন্দর করে সাজগোজ করছে। এশা নিজেকে আয়নার সামনে ঘুরে ঘুরে দেখছে। তারপর আশাকে জিজ্ঞেস করলো,
“কেমন লাগছে?”

আশা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“তুই কেনো জিজ্ঞেস করছিস সত্যি বুঝতে পারছি না। তুই যাই পড়িস তোকে শা’ক’চু’ন্নি’র মতোই লাগে”

সাথেই সাথেই তাদের চু’লো’চু’লি শুরু হয়ে গেলো। সুন্দর বাঁধা চুলগুলো হয়ে গেলো এলোমেলো। অবস্থা বেগতিক দেখে ধারা দুটোর কান ম’লে দিলো। তারপর দুটোকে আলাদা করলো। তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললো,
“এতো সাজের বাহার কেনো?”

নিজের কান ঢলতে ঢলতে এশা বললো,
“ঘুরতে যাচ্ছি”
“কোথায়?”
“পাশের বাড়ির ফাইজার জন্মদিন। আজ রাত ওখানেই থাকবো। তাই সাজগোজ করছি। সবার সামনে ভাবের ব্যাপার আছে তো”

ধারা কি উত্তর দিবে বুঝে পেলো৷ না। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
“এটাকেই বলে কারোর পৌষমাস, কারোর সর্বনাশ।”
“পৌষমাস না ধারাপু এটা শ্রাবণ মাস। তাও শেষের দিক। তুমি তো দেখি মাস ও জানো না। আবার বলো ভার্সিটিতে পড়ি”

আশার কথায় এশাও দাঁত বের করে হাসলো। ধারা আশার কান টে’নে বললো,
“এবার বল, কি বলছিলি! আমি কি জানি না”
“ছাড়ো ছাড়ো, তুমি জানো না এমন কোনো জিনিস আছে। তুমি তো সর্বজ্ঞানী, মহামহিলা”
“মহামহিলা কি!”
“মহাপুরুষের স্ত্রীবাচক শব্দ মহামহিলা। এভাবে তো জেন্ডার ডিসক্রিমিনিশন করা ঠিক না। মহিলারাও তো মহান হতে পারে। তাই আমরা এই শব্দটির আবিষ্কার করেছি”

ধারা হতাশ হয়ে উঠলো। শুধু শুধু কি এদের কেউ পড়াতে চায় না। এদের সাথে কথা বলা আর পিলারে মা’থা ঠোকানো এক। ধারা কিছু না বলেই বেড়িয়ে গেলো। আশা বললো,
“ধারাপু কি হতাশ?”
“হ্যা, আমাদের মতো জ্ঞানীদের সামনে দাঁড়াতে পারছে না। তাই হতাশ হয়ে গেছে।”

এশার কথায় সায় দিলো আশা। তারা নিজেদের গোছগাছেই ব্যাস্ত_______

নিজের ঘরের এককোনার সোফায় বসে আছেন সেলিম সাহেব। তার হাতে একটি ছবি, ছবিটিতে একটি নারীর কোলে একটি ছোট বাচ্চা। বাচ্চাটির বয়স তিন কি চার। দুটো ছোট ছোট ঝুটি মাথায়। চোখ বুঝে, সব দাঁত বের করে মেয়েটি হাসছে। তাকে দেখে নারীটিও হাসছে। সেলিম সাহেব বারবার ছুয়ে দেখছেন ছবিটি। এই ছবিটি সুরাইয়া এবং ধারার৷ অস্ট্রেলিয়ায় যাবার সময় এই ছবিটিই নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কে জানতো এটাই তার কাছে সুরাইয়ার শেষ ছবি হবে। মাঝে মাঝে আফসোসগুলো অনুতাপে পরিণত হয়। কাটার মতো বিধে হৃদয়ে। এমন সময় আগমন হয় দীপ্তের। দীপ্তকে দেখেই ছবিটা উলটে রাখেন সেলিম সাহেব। তার অগোচরে অশ্রু মুছে নিলেন। তারপর হাসি ফুটিয়ে বললেন,
“কি খবর?”
“অনলের ভার্সিটিতে ঝামেলা হয়েছে। মে বি ওকে সাসপেন্ড করা হবে”
“তাহলে আমাদের অফারটি দিয়ে দাও”
“জ্বী, আংকেল”

বলেই দীপ্ত কিছুসময় দাঁড়ালো। তার মুখে জিজ্ঞাসা স্পষ্ট। সেলিম সাহেব নিজের চশমা টগিক করে বললেন,
“কিছু বলবে?”
“আংকেল এগুলো করা কি ঠিক হচ্ছে। দে আর হ্যাপি, আর অনল ইজ এ গুড গায়। ও ধারাকে অনেক লাভ করে”
“আকাঙ্ক্ষা ভালো দীপ্ত, কিন্তু উচ্চাকাঙ্খা পতনের মূল। মানুষ উচ্চাকাঙ্খার জন্যই অনেক ভুল করে। আমি চাই না আমার জন্য সে পরিণতি সুরাইয়ার হয়েছে সেই পরিণতি আমার মেয়ের হোক। সে না মানলেও আমার তো দায়িত্ব আছে”
“সাপোজ অনল এক্সসেপ্ট করে নিলো আমাদের অফার তখন?”

একটু থেমে প্রশ্নটি করলো দীপ্ত। সেলিম সাহেব হাসলেন। তারপর বললেন,
“ফেল ঘোষণা করবো, আমিও দেখি ওর কাছে কোনটা জরুরী। ক্যারিয়ার না আমার মেয়ে”

দীপ্ত আর কথা বাড়ালো না। সে জানে এই লোকের মাথায় ঠিক চলছে তা বোঝা খুব ই দুষ্কর ব্যাপার। তাই সে বেড়িয়ে আসলো ঘর থেকে। তখন ই কারেন্ট চলে গেলো তাদের বাসার। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে ফোনের ফ্লাস লাইটটা জ্বালালো দীপ্ত। তারপর কোনো মতে নিজ ঘরে গেলো সে। নিজ ঘরে যেতেই অনুভূত হলো ঘরে সে একা নয়। কেউ তো আছে ঘরে। তখন ই দেখতে পেলো জানালার উপর একটি নিকষকালো ছায়া। দীপ্ত ফ্লাস লাইটটি তাক করতেই যেনো মিলিয়ে গেলো ছায়াটি। মনের ভুল ভেবে দীপ্ত গা এলিয়ে দিলো বিছানায়। সাথে সাথেই একটি ভয়ংকর হাসির শব্দ কানে এলো তার। ভয়ংকর চিকন কন্ঠে বললো,
“চলে যা, চলে যা। আমার ঘর থেকে চলে যা”

কন্ঠটি শুনতেই বুক কেঁপে উঠলো দীপ্তের। গতকাল ই শুনেছিলো এই বাড়িতে নাকি একটি মেয়ে আ’ত্ম’হ’ত্যা করেছিলো। তখন তার বিশ্বাস না হলেও এখন যেনো অজানা ভয় মস্তিষ্ককে কাবু করে তুলেছে। তড়িঘড়ি করে উঠতেই মনে হলো হাতে কোনো গরম তরল লেগে আছে। ফ্লাস লাইটটা হাতের কাছে মারতেই দেখলো টকটকে লাল তরল। অজানা ভয়টি ক্রমশ তীব্র হলো দীপ্তের। অমনেই চিৎকার করে জ্ঞান হারালো সে। এদিকে উপর তালার জানালায় কান লাগানো জমজেরা তার চিৎকার শুনেই হাই ফাইভ দিয়ে বলে উঠলো,
“চেরাগআলী এবার বাছা কই যাবা”…………

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here