#প্রণয়_প্রহেলিকা (কপি করা নিষিদ্ধ)
#৪০তম_পর্ব
তখন ই নিস্তব্ধতা বেধ করে বেজে উঠলো মোবাইলটা। বিরক্ত হলো অনল। ধারাও নড়ে উঠলো। সাথে সাথেই ফোনের সাউন্ড কমিয়ে দিলো অনল। ধারা শান্ত হয়ে গেলো। ভাঁজটা মিলিয়ে গেলো কপালের। অনল নিঃশব্দে হাসলো। তারপর টিশার্ট এ গলা ঢুকিয়ে ফোনটা নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো। রিসিভ করে সালাম দিতেই অপরপাশ থেকে শুনলো,
“অনল, তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দিয়ে দিয়েছে”
“কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো?”
স্বাভাবিক কন্ঠে প্রশ্নটি করলো অনল। অপরপাশ থেকে তার কলিগ শিহাব বললো,
“ওরা কোনো প্রমাণ পায় নি। প্রতিটি খাতা পুনরায় চেক করা হয়েছে। বিশেষ করে ধারার খাতা। তোমার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ পায় নি। আজ স্যারদের মিটিং হয়েছিলো। আমার মনে হয় তারা ধারার পরীক্ষাটি আরেকবার নিবে। এই প্রস্তাব আনসারী স্যার ই দিলেন। যেহেতু প্রতিটা স্টুডেন্ট এখানে জড়িত নয় সুতরাং শুধু ধারার পরীক্ষাটি নেওয়াটাই উনি যুক্তিযুক্ত মনে করছেন। বাকি স্যাররাও মত দিয়েছেন। ধারাকে প্রস্তুত রাখো। প্রশ্ন আনসারী স্যার নিজে করবেন”
“আচ্ছা, আমি দেখছি”
“আর একটা কথা, যদি ধারা একই গ্রেড না পায় এই এক্সামে তবে হয়তো ধারাকে এক বছরের জন্য রাস্টিকেট করা হবে”
অনল কিছু সময় চুপ করে থাকলো। ঘাড় ফিরিয়ে ঘুমন্ত প্রণয়িনীকে এক নজর দেখলো নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে। মেয়েটি ঘুমিয়ে আছে। বাহিরের সোডিয়ামের লাইটের একাংশ প্রবেশ করছে আঁধারী নগরীতে। আবছা হলদে আলোতে কোমল মুখখানা দেখতেই এক শান্ত প্রশান্তি বয়ে গেলো মনে। এখন ভয় হচ্ছে না। যা হবে দেখা যাবে। মানুষ তো বাঁচেই একবার, এভাবে থমকে থমকে বাঁচার কি মানে! এতো কিসের ভয়! যখন যোদ্ধাই ভয় পাচ্ছে না, তাহলে সেনাপতির ভয় পাওয়া কি সাজে? সাজে না। নিঃশব্দে হাসলো অনল। তার চোখ ও যেনো হাসছে। শিহাবের কথার প্রত্যুত্তরে বললো,
“শিহাব ভাই, আমার বউটি মারাত্মক সাহসী। যে এসব পরীক্ষাতে ভয় পায় না। তাই যাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক না কেনো সে তৈরি। আর আমি তো আছি, আমার ছোট যোদ্ধাটিকে ঠিক ই পার করে দিবো”
অনলের উত্তর শুনে শিহাব হাসলো। তারপর বললো,
“তোমার থেকে এমন উত্তর ই আসা করছিলাম, থাকো রাখলাম”
ফোন কেটে দিলো শিহাব। অনল মাথা তুলে তাকালো মেঘাচ্ছন্ন কালো অম্বরের দিকে। বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বের হলো। তারপর একটা মেইল করলো অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানিতে, এখন সেখানের সময় সকাল ৯টা। তাই মেইলটা এখন ই পাঠানো প্রয়োজন। কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে অনল। মেইলটা করার পর ফিরে গেলো বিছানায়। ঘুমন্ত রমনীকে বুকে তুলে নিলো। প্রগাঢ়ভাবে লেপ্টে রাখলো নিজের সাথে, কৃষ্ণ চুলের মাঝে নাক ডুবিয়ে বললো,
“আমরা দুজনে ভাসিয়া এসেছি যুগলপ্রেমের স্রোতে
অনাদি কালের হৃদয়-উৎস হতে”
********
ভাদ্রের প্রথম সকাল, নীল অম্বরে তুলোর ন্যায় সাদা মেঘের ভেলা ছুটছে। ফকফকে নীর্মল রোদে প্রজ্বলিত শহর। শরতের আভা যেমন বাতাসেও। শিউলির মৃদু গন্ধ মিশে গেছে সমীরে। এই নির্মল সকালে কৃষ্ণাচূড়া গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে ধারা৷ অবশেষে পরীক্ষাখানা হচ্ছে। একটু পর তা শুরু হবে। কাঁধের ব্যাগটা শক্ত করে ধরে রেখেছে সে। একটু ভয় হচ্ছে, না অনেক ভয় হচ্ছে। এই ক দিন অনল তাকে সর্বোচ্চ দিয়ে প্রস্তুত করেছে। তবে ভয় তো থাকেই৷ ধারা ভেবেছিলো অনল ভাই হয়তো ভার্সিটিতে দিয়ে যাবে কিন্তু তার একটি জরুরি কাজ পড়ে যাবার দরুণ সে আসতে পারে নি। তবে ধারা ভয় পাবে না। তাকে এই যুদ্ধে জিততেই হবে। নিজের জন্য নয়, অনলের জন্য। উপরন্তু ওই মানুষটির মুখে ঝা’মা ঘ’ষে দেবার ইচ্ছে যে মনে অফুরন্ত। যখন ধারা এই পরীক্ষায় নিজেকে প্রমাণ করবে তখন সে ওই লোকটির সম্মুখে দাঁড়াবে। মুখ্যম জবাব দিবে সে। এর মাঝেই বন্ধুমহলের আগমণ ঘটে। বন্ধুমহলকে দেখেই মুখে হাসি ফুটে উঠে ধারা। নীরব এগিয়ে এসে শান্ত কন্ঠে বলে,
“ভয় পাবি না, যাই প্রশ্ন আসুক তুই পারবি ইনশাআল্লাহ”
ধারা কিছুই বলে না শুধু মাথা নাড়ায়। মাহি ধারাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“আমরা তোর জন্য অপেক্ষা করবো। অল দ্যা বেস্ট”
ধারা অমলিন হাসে। তারপর পা বাড়ায় পরীক্ষাহলের দিকে। বন্ধুমহল সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। অভীক খানিকটা থমথমে কন্ঠে বলে,
“পরীক্ষা ধারার, ভয় আমার হচ্ছে”
“আমার বিশ্বাস ও পারবেই, ওর জিদ তো জানি। ঠিক পারবে।”
বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়ে দিগন্ত কথাটি বলে। দিগন্তের কথায় শুনে মাহি বলে উঠে,
“আজকাল আমাদের বিবিসি বেশ বড় হয়ে গেছে দেখেছিস। আগের মতো আর বাচ্চামি করে না”
“ধারার গু’তা’নি খেয়ে ঠিক হয়ে গেছে”
নীরব হেসে কথাটা বলে উঠে। তখন নিঃশব্দে হাসে দিগন্ত। তারপর বেশ ভাব নিয়ে বলে উঠে,
“জীবনের নাম ই পরিবর্তন৷ মানুষ বদলায়, অনুভূতি বদলায়। আরোও কতকিছু বদলায়”
“তোর অনুভূতি বদলে গেছে?”
নীরবের প্রশ্ন আবারো হাসে দিগন্ত। দূর্বোধ্য সেই হাসি। উত্তর না দিয়েই পা বাড়ায় ক্লাসের দিকে।
ধারার পরীক্ষা শেষ হয় যথাসময়ে। পরীক্ষা হল থেকে বের হয় থমথমে মুখ নিয়ে। প্রশ্নটি বেশ কঠিন ছিলো বটে। তবে ধারা একটি মার্ক ও ছাড়ে নি। সব উত্তর দিয়ে এসেছে। তবুও একটা সূক্ষ্ণ ভয় হচ্ছেই। পরীক্ষা হল থেকে বের হতেই বন্ধুমহলের দেখা পেলো। তারা অপেক্ষা করছিলো তার জন্য। তবে যার অপেক্ষায় সে ছিলো সেই মানুষটি এখনো আসে নি। মাহি চিন্তিত কন্ঠে বললো,
“পরীক্ষা কেমন হয়েছে? সব লিখেছিস?”
“হয়েছে খারাপ না। স্যাররা বললেন রেজাল্ট নাকি বিকেলেই দিয়ে দিবেন”
“চিন্তা করিস না। ইনশাআল্লাহ কিচ্ছু খারাপ হবে না”
ধারা নিস্প্রভ হাসলো। চিন্তা না করতে চাইলেও অজস্র চিন্তারা মস্তিষ্কে বাসা বেঁধেছে। নিকষকালো বিশ্রী ভয় তার ভেতরটাকে বারবার দূর্বল করে দিচ্ছে। এর মাঝেই ধারার ফোনটা বেজে উঠলো। অচেনা নম্বরটি দেখতেই ভ্রু কুঞ্চিত হলো তার। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে ফোনটি রিসিভ করলো।
“হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম”
“ওয়ালাইকুম সালাম, আমি দীপ্ত বলছি”
দীপ্তের কন্ঠ শুনতেই অকল্পনীয় বিরজতি এসে ভর করলো তারা মুখশ্রীতে। সে বিনা বাক্যে ফোনটি কেটে দিতে উদ্ধত হলে দীপ্ত বলে উঠলো,
“ধারা, একমিনিট আমার কথাটা শুনো। ফোন কেটো না”
“কি শুনাবেন? আর কিছু শোনবার বাকি আছে?”
“হ্যা, অনেককিছু বাকি আছে। প্লিজ তুমি একটু তোমাদের ভার্সিটির শহীদ মিনারের এই দিকটা আসবে? আমি ওখানেই আছি। প্লিজ”
ধারা কিছু উত্তর দিলো না। সাথে সাথেই ফোনটা কেঁটে দিলো। ধারার পরিবর্তিত মুখভঙ্গি দেখে অভীক শুধালো,
“কি হয়েছে?”
ধারা উত্তর দিলো না। শুধু ভ্রু কুচকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মেঝের দিকে।
********
ভার্সিটির গেট থেকে পশ্চিমে শহীদ মিনারটি অবস্থিত। শহীদ মিনারের শেষ সিড়িতে নগ্ন পায়ে বসে রয়েছে দীপ্ত। সে প্রতিক্ষিত ধারার জন্য। আজ কারোর কথায় এখানে আসে নি দীপ্ত। নিজের ইচ্ছেতেই এসেছে। এই কদিন যাবৎ নিজের মধ্যেই বেশ এলোমেলো হয়ে আছে সে। অনুতাপ জিনিসটি ভীষণ খারাপ, এই অনুতাপের দরুন ই বাধ্য হয়ে এখানে আসা। কিছু কথা যে এখনো না বলাই থেকে গেলো। সেই কথাগুলো হয়তো বলে লাভ হবে না, কিন্তু বলাটা প্রয়োজন। এর মাঝেই একটি চিকন তীক্ষ্ণ কন্ঠ কানে আসে দীপ্তের,
“কি কথা বলবেন? আমি মাত্র দশ মিনিট সময় দিবো আপনাকে”
দীপ্ত মাথা তুলে তাকালো, ক্ষুদ্ধ নয়নে ধারা তার দিকে তাকিয়ে আছে। খানিকটা হাফ ছাড়লো সে, ভেবেছিলো ধারা হয়তো তার সাথে দেখা করবে না। দীপ্ত উঠে দাঁড়ালো। এগিয়ে আসলো ধারার দিকে। মৃদু হেসে বললো,
“কেমন আছো?”
“আমার খালি সময় নেই, যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন”
তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়লো দীপ্ত। তার কথাগুলো কিভাবে শুরু করবে বুঝে উঠতে পারলো না। এলোমেলো চিন্তা গুলো ধারা কতটুকু বুঝবে তাও বুঝে উঠতে পারছে না। শুধু পকেট থেকে কিছু কাগজ বের করলো। বেশ যত্নে ভাঁজ করে রাখা কাগজ। ধারার ভ্রু কুঞ্চিত হলো, কন্ঠে এক রাশ কৌতুহল নিয়ে শুধালো,
“এগুলো কি?”
“চিঠি”
“কার?”
“একজন অনুতপ্ত ব্যাক্তির”
হেয়ালীটা ধরতে পারলো ধারা, বিরক্তিভরা কন্ঠে বললো,
“এসব ঢং নিজের কাছে রাখুন”
“আমি জানি তুমি আংকেলের উপর ভীষণ ক্ষুদ্ধ, হওয়াটাই যৌক্তিক। আসলে আমার বাবা আমাকে প্রত্যাখ্যান করলে আমিও এমন রিয়েক্ট ই করতাম। কিন্তু কি জানো! আংকেল তোমাকে খুব ভালোবাসে”
“ভালোবাসার নমুনা আমি দেখেছি”
“মাধবীর সাথে ঘটিত ব্যাপারটার একাংশ ই জানো তুমি। বাকিটুকু একটু শুনবে? তুমি যেদিন আমার সাথে ঘোরাঘুরি করেছিলে সেদিন কথায় কথায় তুমি মাধবীর কথা বলেছিলে। সেখান থেকেই মাধবীর ব্যাপারটা আমার মাথায় গাঁথে। আংকেলের সাথে তোমার চ্যালেঞ্জের পর আংকেল প্লান করেন, যে অনলের চাকরির একটা প্রবলেম তৈরি করবেন এবং আমাদের কোম্পানির একটা সাব কোম্পানী থেকে খুব বড় একখানা অফার দিবেন। এখন যদি কোনো তার চাকরির সমস্যা না হয় এই কোম্পানির অফারটি নেবার কোনো কারণ নেই অনলের। এখন চাকরিতে কিভাবে প্রবলেম করা যায় সেই উপায় খুঁজতে খুঁজতে আমি মাধবীকে খুঁজে বের করি। মাধবীর সাথে আমি কথা বলে এটা বুঝতে পারি যে ওর তোমার প্রতি অসম্ভব রাগ বা ঈর্ষা। সে এমনেও তোমার আর অনলের সম্পর্কের ব্যাপারে ক্ষুদ্ধ ছিলো, উপরন্তু তোমার রেজাল্ট ও ভালো হয়। সে এমনেই কমপ্লেইনটা করতো। মাধবীর পরিবারে হুট করে অর্থনৈতিক ঝামেলা হবার কারণে মাধবী কাজের খোঁজও করছিলো। তাই আমরা ওর সাথে একটা ডিল করি, ও প্রথমে অনলের নামে কমপ্লেইন করবে। যদি অনলের কোনো সমস্যা হয় তবে আমরা ওকে কোম্পানির অফারটা দিবো। অনল এক্সসেপ্ট করুক বা না করুক মাধবী তার কমপ্লেইনটা ফেরত নিবে এবং ওর মোটিভ যে খারাপ সেটা সে অথোরিটিকে জানাবে। হয়তো ওর বিরুদ্ধে একশন নেওয়া হবে। ওকে রাস্টিকেট করা হবে। সেটা আমরা বুঝে নিবো। ওর জব বা টাকা পয়সার ঝামেলা হবে না। যেহেতু খুব বড় এমাউণ্ট তাই মাধবীও রাজি হয়ে যায়। আর কথা অনুযায়ী আগামী সপ্তাহেই মাধবী কাজটা করতো। কিন্তু এর মাঝেই তুমি দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিতে রাজি হয়ে গেছো। আমাদের প্লান সম্পর্কে জেনে গেছো। অনলকে অলরেডি অফারটা দেওয়াও হয়ে গেছে। ধারা আংকেলের পদ্ধতি খুব বিশ্রী, অসহনীয়। কিন্তু সে কখনোই তোমার সংসার ভাঙ্গতে চাননি। শুধু পরীক্ষা করতে চেয়েছেন অনলকে। কারণ সে চায় না তার মেয়ে সেটা ভুগুক যা সুরাইয়া আন্টি ভুগেছে। সে অনুতপ্ত ধারা। ঐ সময়ে করা ভুল তার প্রতি মূহুর্তটকে হেল এ পরিণত করেছে। রোকসানা আন্টিকে সে বিয়ে করেছিলো নিজের উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য। যার শাস্তি সে পাচ্ছে, হয়তো সারাজীবন পাবে। আর থাকলো তোমাকে প্রত্যাখ্যান করার কথা, সে তোমাকে প্রত্যাখ্যান করে নি। তোমার নানাবাড়ি ই কখনো তোমাকে নিতে দেয় নি। আর তুমি এখানে যতটা ভালো ছিলে সেলিম আংকেলের সাথে থাকতে না। তাই কখনো সেলিম আংকেল তোমাকে জোর করে নি। এখন তুমি জিজ্ঞেস করতেই পারো আমি কিভাবে এতো কিছু জানি, কারণ আমি সেই মানুষটির সাথে বিগত বারো বছর আছি। আমার বয়স তখন পনেরো, সেলিম আংকেলের একটি এক্সিডেন্ট হয়। উনি তো প্রাণে বেঁচে যায় কিন্তু ওই গাড়িতে বাকি যারা ছিলেন তারা মা’রা যান। ওখানে আমার প্যারেন্টস ছিলো। এককথায় ধরতে গেলে আমার অনাথ হবার কিছুটা দোষ তার। সেই অনুতাপে আমাকে সে এডোপ্ট করেন। সেই থেকে আমি উনার সাথে। উনাকে আমি বুঝি না, উনার মন আমি পড়তে পারি না। তবে প্রতিরাতে আঁকাশের নিচে তোমাদের ছবি হাতে ঠিক ই দেখি আমি। আমি বলবো না তাকে ক্ষমা করে দাও, শুধু বলবো এতোটা অভিমান পুষো না। অভিমানের অস্তিত্ব মানুষটি পর্যন্ত ই”
ধারা একটিও বাক্য বললো না। শুধু শান্ত ভাবে কথাগুলো শুনলো। তারপর সেই কাগজগুলো হাতে নিলো। মনের মাঝে ঝড় চলছে। গাঢ় অভিমানের প্রলেপের ভেতর মূর্ছাপ্রায় ছোট মেয়েটি বাবার স্নেহের কাঙ্গাল হৃদয়টা বারবার হাহাকার করছে। মস্তিষ্ক এলোমেলো হয়ে আছে। কিছু বলার আগেই অনলের কঠিন হাতজোড়া দীপ্তের কলার টেনে ধরল। হিনহিনে কন্ঠে বললো,
“কি চাই এখানে?”
দীপ্ত উত্তর দেবার আগেই মেয়েলি কন্ঠের তীব্র স্বর শোনা যায়,
“দীপ্ত স্কা’উ’ন’ড্রে’ল, রা’স’কে’ল”
মেয়েটির স্বর কর্ণপাত হতেই তিনজন বিস্মিত নজরে পেছনে তাকালো। তাদের কিছু বুঝার আগেই মেয়েটি ছুটে এলো দীপ্তের দিকে। সজোরে চ”ড় বসিয়ে দিলো দীপ্তের গালে। অনল পরিস্থিতি দেখে ছেড়ে দিলো দীপ্তের কলার। মেয়েটি সেই সুযোগে দীপ্তের কলার টেনে ধরলো। ক্ষুদ্ধ কন্ঠে বললো,
“তুমি কি ভেবেছো, বাংলাদেশে আসলে আমি তোমার কীর্তি জানবো না। তুমি আমাকে ছেড়ে এখানে অন্য মেয়ের সাথে আ’কা’ম করতেছো। এভাবে ঠ’কা’লে আমাকে?”
“তুমি ভুল ভাবছো তিশা”
“ও আমার চোখ কি অন্ধ, আমি বুঝি না। কে এই মেয়ে। বল কে এই মেয়ে, নয়তো আমি তোমার ছা’ল তুলে নিবো”
মেয়েটির ক্রোধ বাড়লো, সে কলার ছেড়ে দীপ্তের ঝাঁকরা চুল টে’নে ধরলো। এদিকে অনল এবং ধারা হা হয়ে তাকিয়ে আছে দীপ্ত এবং মেয়েটির দিকে। মেয়েটি ক্রমেই তার চুল টেনেই যাচ্ছে। দীপ্ত আর না পেরে বলেই উঠলো,
“আরে, ও ধারা। আমার ওর সাথে কিছু নাই। লিভ মি প্লিজ, ইটস হা’টিং তিশু”
এবার মেয়েটি থামলো। ভ্রু কুচকে কঠিন দৃষ্টি প্রয়োগ করলো সে ধারার দিকে। কাঠ কাঠ কন্ঠে বললো,
“তুমি ধারা?”
“হ্যা”
ভীত কন্ঠে উত্তর দিলো ধারা। অনল এখনো বিস্মিত। হচ্ছেটা কি বুঝতে পারছে না সে। দীপ্ত তার কাঁকের বাসা চুলগুলো কে ঠিক করে বললো,
“ও তিশা, আমার ফিয়ান্সে। একটূ এরকম”
দীপ্তের কথায় চোখ বিস্ফারিত হলো অনলের। সে ভেবেছিলো দীপ্ত হয়তো ধারাকে পছন্দ করে। অথবা তার খারাপ কোনো মনোবাঞ্ছা রয়েছে। এখন দেখছে তার বাগদত্তাও আছে। ফলে আরোও ক্রোধিত হলো অনল,
“তোমার মতো পুরুষ তো আমি দেখি নি, হবু বউ থাকা স্বত্তেও আমার বউ কে লাইন মারো”
“নো, নো, নো। আমি ধারাকে কখনোই লাইন মারি। তিশু ট্রাস্ট মি। আমি ধারাকে বোনের নজরে দেখি”
দীপ্তের কথা শুনে মেয়েটি একটু লজ্জিত হলো। দীপ্তের চুলে আলতো করে হাত বুলিয়ে বললো,
“সরি, আমি বুঝি নি ও ধারা। আসলে কিছুদিন যাবৎ কিছু আইডি থেকে আমাকে ম্যাসেজ করা হচ্ছিলো। ফার্স্টে ইগ্নোর করলেও তোমার আর ধারার ছবি দেখে আমি টেম্পার রাখতে পারি নি। আসলে ওর নাম শুনেছি শুধু। কখনো ছবি তো দেখি নি। তাই তো কালকের প্রথম ফ্লাইটেই চলে এলাম। সরি, লেগেছে?”
অনল এবং ধারার বুঝতে বাকি রইলো না কাজটি কাদের। কিন্তু বি’চ্ছু দুটো তিশাকে কিভাবে খুঁজে নিলো বিশাল বিস্ময়ের ব্যাপার। অনল আর অপেক্ষা করলো। দীপ্ত এবং তিশার কাছ থেকে বিদায় নিয়েই ধারাকে নিয়ে বাড়ি ফিরলো। ধারা সারা রাস্তা নিশ্চুপ ই ছিলো। নিজের সাথেই নিজের যুদ্ধ করতে হচ্ছে। বাসায় ফিরতেই সকলকে জড়ো করলো অনল। ধারাও বুঝে পেলো না কি হয়েছে। জামাল সাহেব, রাজ্জাক, ইলিয়াস রুবি, জমজদ্বয় বেশ অবাক। কৌতুহলের বশে সুভাসিনী বলে উঠলেন,
“কি হয়েছে?”
“আমার সবাইকে কিছু বলার আছে। আমি একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছি”……………
চলবে
মুশফিকা রহমান মৈথি