#১৬_পৃষ্ঠায়
পর্ব – ১৩ #ধূসর_রঙের_শার্ট (প্রথম অংশ)
লেখিকা - Zaira Insaan
নিরবতা ছেয়ে গেল নিনি তাকে দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে আজ বেশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে সে এনোন কে। হঠাৎ-ই এনোন কোমড়ের স্পর্শ গাঢ় করে তাকে নিজের মধ্যে মিশিয়ে নিল তারপর হাঁসফাঁস কন্ঠে বলল,, মাফ করে দিও আমাকে!”
নিনি চমকে উঠলো। অস্থিরতা ঘিরে ধরলো এনোন কে। হাঁসফাঁস করতে লাগল সে।
নিনি ছোট করে জবাব দিল ‘হু’।
আরো ভালোভাবে চেপে ধরল সে বলল,, তোমার সাথে সবসময় খারাপ ব্যবহার করেছিলাম I’m sorry!”
নিনি মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে,, আচ্ছা।”
ভ্রু কুটি করল এনোন তাকে আলতো ভাবে ছেড়ে দিয়ে তাকিয়ে বলল,, হু আচ্ছা এসব কি? মাফ করছো? নাকি…?” বলে থামলো এনোন।
নিনি মাথা নুয়ে রেখে আস্তে করে বলল,, করেছি।” এনোন কপাল কুঁচকালো।
নিনি বলল,, এসব বাদ দেন তো অতীত ভালো লাগে না আমার শুধু শুধু কোন দরকার আছে পুরোনো কথা মনে করার।”
এনোন শান্ত চোখে তাকালো নিনি চোখ সরিয়ে নিল। বেশিক্ষণ তাকাতে পারছে না সেই চোখে। এনোন তার গালে হাত রাখল নিনি চমকে উঠলো। বলল,, তোমার প্রতি আমার এক ভালোলাগা অনুভূতি কাজ করে।”
অবাক হলো নিনি। বিশ্বাস হচ্ছে না তার মনে মনে ভাবলো,, এতো পরিবর্তন?”
এনোন মুচকি হেসে কিছু বললে তার আগে নিনি বলল,, মদ খায়ছেন?” হালকা শব্দ তুলে হেঁসে দিল এনোন। নিনি দেখল হাসলে তাকে অপরুপ সুন্দর লাগে। বাম গালে হালকা টোল পড়ে যা চাপ দাঁড়ির জন্য বেশ সুন্দর করে ফুটে উঠেছে। তাকে হাসতে দেখে নিনিও মুখের হাসি চলে আসলো।
হাসি থামিয়ে এনোন বলল,, তুমি থাকতে মদের প্রয়োজন নেই আমার।”
এর মানে বুঝলো না নিনি ভ্রু কুটি করে বলল,, মানে?”
কোমড় আকড়ে ধরে কাছে টেনে আনলো তাকে। নিনি চমকে তার বুকে হাত রাখলো।
কাছে এনে এনোন আস্তে করে বলল,, চোখ বন্ধ করো।”
কপাল কুঁচকালো নিনি এনোন আবারো বলল,, করো!” ঢোক গিলে চোখ জোড়া বুঁজে নিল নিনি। দু এক সেকেন্ড অপেক্ষা করে নিজের মুখে নিঃশ্বাসের আবাশ অনুভব করলো এক চোখ হালকা করে খুলল। এনোন তার ঠোঁট জোড়ায় অনেক কাছে আসলো তাদের মধ্যে কিঞ্চিত দূরত্ব। নিনি হচকচিয়ে ভয়ে ধাক্কা দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। ভড়কে উঠলো এনোন।
নিনি রেগে ফুলে বলল,, খারাপ আপনি, অভদ্র!” বলে সে কাঁদো কাঁদো মুখ করে রেগে চলে গেল। নিজেকে অপরাধী মনে হতে লাগল তার হয়ত একটু বেশি করে ফেলেছে নিনির রিয়েকশন দেখে সে নিজেও চমকে উঠলো।
____________
নিচে নেমে এসে এনোন গম্ভীর হয়ে বলে,, আমি বাহিরে যাচ্ছি।”
সর্ণালি বলল,, নাস্তা খেয়ে যা এনোন।” এনোন ‘না’ বলে নিনির দিকে আড়চোখে তাকালো সে এখনো রেগে আছে তাকাচ্ছেও না সে এনোনের দিকে। এনোন গোপনে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে আর কাউকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে গেল। সবাই নিনির দিকে তাকালো তার ব্যবহার ও অদ্ভুত দেখাচ্ছে।
সন্ধ্যা পেরিয়ে গেল। এনোন এখনো ঘরে ফিরেনি। সর্ণালি চিন্তা করতে লাগলো। ফোনের পর ফোন দিতে লাগল সিনান। কল ঢুকছে না। সবার চিন্তা দেখে এবার নিনিরও চিন্তা হতে লাগল। দুশ্চিন্তা!
সকালে এনোনের সাথে করা ব্যবহার নিয়ে খারাপ অনুভব হতে লাগল তার। হয়ত ভুল হয়েছে। রুমে গিয়ে পায়চারি শুরু করে দিল সে। নখ দিয়ে আঙুল খামচাতে লাগল। খামচাতে খামচাতে এক পর্যায়ে মোটা চামড়া তুলে ফেলল তাও এতে ভূক্ষেপ হলো না তার। মোবাইল নিয়ে কল করলো সে। বন্ধ! এবার তার রাগ হতে লাগলো। রাগে কান্না চলে আসলো তার। আনমনে বলে বসল,, আসছেন না কেন আপনি!”
সময় পেরুতে লাগল। শহর নিস্তব্ধ হয়ে আসলো। রাত গভীরে ডুব দিল। উজ্জল সাহেব সেই কখন বেরিয়ে পড়ছেন এনোনের তালাশে। ঘরে হয়রানি হয়ে ফিরলেন তিনি নিনি রুম থেকে বের হলো। সবার দৃষ্টি কেড়ে নিল সে,
সর্ণালি গলা ভাঙা আওয়াজে প্রশ্ন ছুড়লেন,, এনোনের সাথে ঝগড়া হয়েছে তোমার?”
নিনি কিছু বলল না শুধু মাথা নিচু করে রাখল।
রাত পৌনে এক টায় ঘরে ঢুকলো এনোন। সবাই তার দিকে চমকে তাকালো সেও চমকালো সবাইকে জেগে থাকতে দেখে।
উজ্জল সাহেব রেগে বলেন,, কই ছিলি তুই?”
এনোন স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল,, বাহিরে ছিলাম।”
উজ্জল সাহেব জিজ্ঞেস করেন,, বাহিরে কোথায় ছিলি?”
এনোন এবার বিরক্ত হলো বলল,, দূরে কোথাও গিয়েছিলাম কেন কি হয়েছে?”
উজ্জল সাহেব এবার রেগে গেলেন বললেন,, ফোন করে দিলে কি হতো যে আসতে দেরি হবে তোর… সকালে এক তো নাস্তা না করে বেরিয়েছিস তার উপর আসার নাম ও নিচ্ছোস না, তোর মা বউ টেনশন করতেছে সেদিকে খেয়াল আছে!?”
এনোন তাকালো সর্ণালি ও নিনির দিকে। নিনি ভেজা চোখে দেয়াল ধরে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে এনোন দৃষ্টি সরালো।
সর্ণালি জিজ্ঞেস করেন,, খেয়েছিস কিছু?” এনোন ‘হুম’ শব্দ করে চুপ করে রইল।
উজ্জল সাহেব উপরে উঠতে যাবে তখন এনোন গম্ভীর স্বরে বলল,, কালকে আমি শহরে বাইরে যাব কাজে।”
উজ্জল সাহেব পেছনে ফিরলেন কপাল কুঁচকে বলেন,, কত দিনের জন্য বলে যা।”
এনোন বলল,, জানি না কাজ শেষ হলে তবেই ফিরবো।” বলে নিনির দিকে আড়চোখে তাকালো নিনি হা করে আছে।
সর্ণালি বলেন,, কিছু খেয়ে নে আয়।”
এনোন বলল,, না আমি খাব না।” বলে সোজা রুমের দিকে চলে গেল নিনির পাশ কেটে।
নিনি রুমে আসতেই দেখে এনোন শার্ট খুলছে। নিনি চোখ নামালো এনোন ভ্রু কুঁচকে আড়চোখে তাকালো একবার তারপর তোয়াল নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল। নিনি বাথরুমের দরজার দিকে বিড়বিড় করে বলল,, আমাকে ইগনোর করছে!?”
কিছুক্ষণ পরেই এনোন চুল মুছতে মুছতে ভেজা গায়ে বেরিয়ে আসলো। নিনি তার সামনে এসে দাড়ালো তারপর মাথা হালকা নিচু করে মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বলল,, আমিও যাব আপনার সাথে।”
“পারবো না” কথার পিঠে ফট করে বলল এনোন। যেন সে আগের থেকেই জানতো নিনি এটাই বলবে।
নিনি প্রশ্নাত্তুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,, কেন পারবেন না?”
এনোন উত্তর দিল না আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল একবার এলোমেলো করছে আবার ঠিক করছে। নিনি রেগে নিঃশ্বাস ফেলল তারপর গিয়ে এনোন ও আয়নার মধ্যে যতটুকু ফাঁকা সেখানে মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ালো বরাবর এনোনের সামনে। এনোন তাকে না দেখার ভান করেই নিজের মত আয়না দেখে যাচ্ছে।
নিনি কোমড়ে দুহাত রেখে অভিমান সুরে বলল,, আপনি আমাকে ইগনোর করছেন?”
এনোন তাকে না দেখেই বলল,, জানো যেহেতু তো এটেনশন নিচ্ছো কেন!”
ফসে উঠলো নিনি কোমড় থেকে হাত সরিয়ে পায়ের আঙুলে ভর করে তার মুখোমুখি হওয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু ব্যর্থ হলো সে শুধু এনোনের গলা পর্যন্তই হতে পারলো।
আগের মত দাঁড়িয়ে বলে মাথা নুয়ে দোষী গলায় বলল,, সকালের কান্ডে এমন করছেন আমার সাথে?”
এনোন তুচ্ছ ভাবে বলল,, লজ্জা করে না অভদ্র লোকের সাথে কথা বলতে?”
নিনি অবাক হয়ে তাকালো। এনোন আলমারি খুলে কালো গেঞ্জি নিয়ে সেখান থেকে সরে পড়ে নিল। নিনি সেখানে ঠাই হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এনোন আর কিছু না বলে বেডের মাঝখানে বালিশ দিয়ে অপর পাশে শুয়ে পড়লো।
(চলবে…)
[ কালকে বাকি অংশ দেওয়া হবে। রি-চেক দেওয়া হয়নি ভুল হলে জানাবেন আর গল্প মন্তব্য করবেন। ]