অনুভবী হিয়া’ পর্ব-৩

0
3624

#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির

৩.

ভোরে সূর্যের সেই মিষ্টি আলো চারদিকে ছড়িয়ে পরেছে। পাখিরা ডানা মেলে মিষ্টি সুরে গান গাইছে। ইতিমধ্যে মানুষ বাড়িতে থেকে বের হয়ে গেছে যে যার কাজে। ঘুম থেকে উঠে লম্বা শাওয়াল নিয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নিলো শুভ। পরনে অফ-হোয়াইট কালার টি- শার্টের উপর ব্লু কালার ব্লেজার, ব্ল্যাক জিন্স। চুল গুলো জেল দিয়ে সেট করা। হাতে ব্রেন্ডের ঘড়ি। লম্বা পাঁচ ফুট নয়, ফর্শা গায়ের রঙ, চোখের মনি গাঢ় নীল। খুব একটা বুঝা যায় না, গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখলে চোখে পরবে মনির আসল রঙ।

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ভালো করে দেখে নিলো শুভ। টেবিলের ড্রয়ার থেকে মানিব্যাগ হাতে নিলো। তার থেকে বের করলো ছোট একটা পাসপোর্ট সাইজের ছবি। ছবিতে ভেসে উঠেছে হাস্যউজ্জল একটা মেয়ে। কালো হিজাব পরে মাঠে এক পাশে ফ্রেন্ডদের কথা বলে হাসছিলো মেয়েটি। হাস্যউজ্জল চেহারায় তাকে আবেদময়ী লাগছিলো। কাজল টানা চোখে যেনো মায়াবিনী। ঠিক সেই মুহূর্তে তাকে ক্যামেরা বন্দি করে এক প্রেমিক পুরুষ। সেই থেকেই ছবিটি তার ওয়ালেটে জায়গা করে নিয়েছে। আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগের ছবি। মুচকি হেসে ছবিটা আগের মতো ওয়ালেটে রেখে দেয়। প্রয়োজনীয় জিনিষ নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসলো শুভ।

‘বাব্বাহ্! অফিসেই তো যাচ্ছো ভাইয়া মেয়ে দেখতে নয়। এতো সাজার কি আছে? আমি মেয়ে হয়েও তো এতো সাজি না।’ সুহার কথা শুনে ভ্রুঁ কিঞ্চিত বাঁকা করে তাকালো শুভ।

‘তুই এমনিতেই পেত্নি তার উপর আবার সাজলে আরো কালো পেত্নির মতো লাগে তাই না সেজে হাবলার মতো থাকিস। আমি যেহেতু সুন্দর তাই সাজতেই পারি। ইট’স নরমাল।’ ভাব নিয়ে বললো শুভ।

‘এ্যা, যেই না চেহারা নাম রাখছে পেয়ারা।’ ভেংচি দিয়ে বললো সুহা। ভাই বোনের এমন ঝগড়া বেশ উপভোগ করছে মিথিলা। কত দিন পর ছেলেটা ফিরে এসেছে, ঠিক আগের মতোই ব্যবহার করছে। ভাবতেই দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলেন তিনি।

‘শুভ, আমি অফিসের সবাইকে বলেছি তোমার কথা। রায়হান আছে সে তোমাকে সব বুঝিয়ে দিবে আর সাথে তোমার এসিস্টেন্ট তো আছেই। আশা করি তুমি সব সামলে নিবে।’ খাওয়া থামিয়ে শুভর দিকে তাকিয়ে বললো আয়াজ।

শুভ বাবার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে আশ্বাস দিয়ে বললো, ‘তুমি চিন্তা করো না আব্বু। আমি সব সামলে নিবো। ভরসা রাখতে পারো।’

‘তোমার উপর আমার ভরসা আছে। কানাডা গিয়ে তুমি যেভাবে আমার ওই ব্যবসা টা সামলালে আই’ম জাস্ট ইম্প্রেসড।’

প্রতি উত্তরে শুভ কিছু বললো না শুধু মৃদু হাসলো। খাওয়া দাওয়া শেষে গ্যারেজ থেকে গাড়ি নিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো শুভ। উদ্দেশ্য অফিস!
__________

‘এই মাইয়া উঠ। দেখ ৮:৪০ বাজে। কিরে উঠবি নাকি এক বালতি পানি ঢালবো মাথায়?’ মিহির কে ঘুম থেকে তোলার জন্য জুরে জুরে ডাকতে লাগলো মাহিন। মিহির সাধারনত দেড়ি করে উঠে না।

‘আল্লাহ একটা মাইয়া এতো কেমনে ঘুমাই তোরে না দেখলেই জানতেই পারতাম না। দুনিয়া এক দিকে ভাই তো ওনার ঘুমা আরেক দিকে। এই মাইয়া উঠ নাহ ভাই।’ বিরক্ত নিয়ে ডাকছে মাহিন।

‘উফফ, ভাইয়া ভালো লাগছে না তো ঘুমাতে দাও।’ ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বলে ওপাশ ফিরে আবার শুয়ে পরে মিহির।

‘হুহ, একটু পর ৯ টা বাজবে তুই এখনো ঘুমা।’

মাহিনের কথা কানে যেতেই লাফ দিয়ে উঠে মিহির।

‘কি???? নয়টা বাজে। আমাকে আরো আগে ডাকো নি কেনো।’

‘এই তোরে এক ঘন্টা যাবত ডাকতে ডাকতে গলা ব্যাথ্যা ধরে গেছে আর এখানে আসছো বলতে ডাক দেই নাই কেনো। তুই যে কানে কালা শুনবি কেমনে। যা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে আয়। তোর জন্য বসে আছি আমি।’ বিরক্ত নিয়ে বিছানার এক পাশে বসে বললো মাহিন।

‘ইশ, আজই অফিসে নতুন স্যার আসবে আর আমার আজই লেট হতে হলো। ভাল্লাগে না। তুমি খেয়ে নিতে আমার জন্য কেনো শুধু শুধু অপেক্ষা করতে গেলে। একটু দাঁড়াও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।’ বিছানা থেকে নেমে কাভার্ড থেকে ড্রেস নিতে নিতে বললো মিহির। ড্রেস নিয়ে দেড়ি না করে ওয়াসরুমে গিয়ে চটজলদি তৈরি হয়ে ব্যাগ নিয়ে বের হলো। এক সাথে নাস্তা করেই বের হলো দুজন। মিহির অফিস আর মাহিন কলেজের উদ্দেশ্যে বের হলো।
_________

‘RS Company’ গেইট দিয়ে শুভর গাড়ি ঢুকলো। গাড়ি থেকে নেমে একবার উপরে তাকিয়ে বড়বড় ক্যাপিটাল ওয়ার্ড দিয়ে লিখা ‘RS Company’ নাম টা দেখে নিলো শুভ। অফিসে ভিতরে ঢুকার পরই রায়হান ফুল দিয়ে ওয়েলকাম জানালো শুভকে। এক এক করে সবাই ওয়েলকাম জানালো তাকে। সবাই তাকে আরএস বলেই সম্মোধন করছে। অফিসের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে নিদিষ্ট কেবিনে নিয়ে গেলো রায়হান। কেবিনে বসে কিছু ফাইল ঘাটাঘাটি করছে রায়হান কে বিভিন্ন প্রশ্ন করছে শুভ। সামনেই রায়হান দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ রায়হানের উদ্দেশ্যে শুভ প্রশ্ন করলো,

‘সবার সাথেই কথা হলো। কিন্তু এখনো এসিস্টেন্ট কে দেখলাম না। কোথায় সে?’

‘স্যার, এখনো আসে নি।’ কিছুটা আমতা আমতা করে বললো রায়হান।

‘অফিস শুরু হয় ৯:০০ টায়। এখন বাজে ৯:২০! এতো লেইট কেনো? এটা কি অফিসের রুলসে পরে? অফিসের রুলস সম্পর্কে কি কেউ অবগত নয়?’ রেগে গম্ভীর কন্ঠে বললো শুভ। ফের গম্ভীর কন্ঠে বললো, ‘ওনি আসলে কেবিনে পাঠিয়ে দিবেন। আপনি এখন আসতে পারেন।’

কথা না বারিয়ে চুপচাপ কেবিন থেকে বের হয়ে যায়। রায়হানের বুঝতে বাকি নেই স্যার অনেক গম্ভীর আর রাগী। সাবধানে কাজ করতে হবে ভেবে আগেই সতর্ক হয়ে গেলো সে।
_________

মিহির অফিসে তড়িঘড়ি করে ঢুকে নিজের কেবিনের চেয়ারে বসে টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে জুড়ে জুড়ে শ্বাস নিচ্ছে। গাড়ি থেকে নেমেই একপ্রকার দৌড়ে এসেছে সে। পানির বোতল হাতে নিয়ে ঢক ঢক করে অর্ধেক বোতল শেষ করে ফেললো। তখুনি রায়হান কেবিনে ঢুকে জানালো স্যারের কেবিনে গিয়ে দেখা করে আসতে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৯:৪৫! মিহির আর বিলম্ব না করে স্যারের কেবিনের উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করলো।

কেবিনে গিয়ে দরজা হাত দিয়ে নক দেয় মিহির। শুভ ভিতরে ফাইলে চেক করছিলো। আওয়াজ শুনে গম্ভীরভাবে বলে, ‘ কাম ইন।’

অনুমতি পেয়ে কাঁচের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,

‘গুড মর্নিং স্যার। ওয়েলকাম টু আওয়ার অফি..’ সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি টিকে দেখেই স্তব্ধ হয়ে যায় মিহির। কথা বের হচ্ছে না মুখ দিয়ে। এই মুহূর্তে প্রতিক্রিয়াহীন হয়ে পরেছে সে। যেই মানুষটিকে সে নিজের সব টা দিয়ে ভালোবেসেছে, যাকে একবার দেখার জন্য মন পাগলপ্রায় এখন সেই মানুষ টি তার সামনে দাঁড়িয়ে। কিভাবে সম্ভব এটা? এতো দিন পরেও কেনো আমার এমন অনুভূতি হচ্ছে। তবে কি আজও তাকে আমি??? আচ্ছা সে কি আমাকে ভুলে গেছে? নতুন করে তার যোগ্য কাউকে ভালোবাসে? এতো কষ্ট হচ্ছে কেনো আমার? এখন কি বলা উচিত তাকে? কি করবো আমি?

চলবে..!!

[আপনাদের ঘটনমূলক মন্তব্যের আশায় থাকবো। হ্যাপি রিডিং♥]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here