#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির
১৭.
রাতে পড়ার টেবিলে বসে মিহির কলম কামড়াচ্ছে আর ম্যাথ আবিষ্কারক কে গালি শুনাচ্ছে। ম্যাথ কিছুতেই মিলাতে পারছে না। কি একটা জ্বালা। কে বলেছিলো ম্যাথ জিনিস টা আবিষ্কার করতে? আজাইরা থাইকা যখন পাগলা কুত্তার কামড় খায়।
বিরক্তির মাঝে যখন বিরক্তকর মোবাইলের আওয়াজ কানে আসে তখন রাগ আরো তুঙ্গে উঠে। নিশ্চয় মিতুর কাজ। মেয়েটা রাতের বেলায় কল দেয় খালি। মিহির মোবাইলের দিকে না তাকিয়েই কল রিসিভ করে বলে,
‘মিতুনির বাচ্ছা। এতো রাতে কথা বলতে ইচ্ছে করলে আদিল ভাই কে কল দে না। আমাকে ডিস্টার্ব করিস না। এমনিতেই বিকালে আম্মুর চিল্লানী, এখন আবার ম্যাথের প্যারা। ভাইটাও কাছে নাই বা’ল। পরে ভার্সিটিতে কথা বলবো বাই।’
‘মিহি ওয়েট! আমাকে কথা বলার সুযোগ তো দিবে!’ ব্যস্ত হয়ে বলে শুভ। মিহির চোখ বড় বড় করে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আবার কানে মোবাইল রেখে বিস্মিত হয়ে বলে, ‘আপনি? এতো রাতে কল দিলেন কেনো?’
‘কেনো আমি কল দিতে পারি না। এতো রাত কোথায় মাত্র ১১ টা বাজে। দুই দিন অফিসে আসো নি কেনো?’
‘এমনি! আমার ইচ্ছে হলে যাবো না হলে না। আপনাকে কেনো বলতে যাবো?’ রুক্ষ কন্ঠে বলে মিহির।
শুভ অবাক হওয়ার ভান ধরে বলে, ‘ বাহ্! আমার অফিসে আসবে যাবে আর আমি জানতে চাইবো না? আসো নি কেনো?’
‘বলতে বাধ্য নই!’
‘আগামীকাল আসবে নাহলে তোমার বাসা থেকে তুলে নিয়ে আসবো। গট ইট!’ শেষের কথাটা আদেশ স্বরে বলে শুভ।
‘আসেন দেখি কত বড় সাহস আপনার। এমন আবার না হয় যে আমার বাসায় এসে আপনার মাথার থুলি টাই উড়ে যায়।’ বলেই খিলখিল করে হাসতে লাগলো মিহির।
মিহিরের হাসি আওয়াজে শুভও মৃদু হাসে। আনমনে বলে উঠে, ‘আমাকে পুড়াতে ভালো লাগে তোমার? তোমাকে এক পলক দেখার তৃষ্ণনায় কাতরাচ্ছি মিহি। আমার এই উষ্ণ অলিঙ্গন বাহু শুধু তোমাকে জড়িয়ে ধরতে চাই। একটু গভীর ভাবে ছুঁয়ে দিতে চাই। শুভর ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে চাই তোমাকে মিহি। সেই সুযোগ টা কি আমার হবে না মিহি? দিবে না আমাকে এই অধিকার?’
মিহির নিরবতা পালন করছে। এই মুহূর্তে তার কি বলা উচিত বুঝতে পারছে না। মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে আছে। শুভকে ঘীরে থাকা সকল অনুভূতি অনেক আগেই মুছে দিতে চেয়েছিলো। সেই অনুভূতি জাগরণে আর দ্বিতীয় বার সুযোগ দিবে না মিহির। সে তার ভাইয়ের মতের বিরুদ্ধে এবার যাবে না। কিছুতেই না।
‘আমাকে আর একটা সুযোগ দেওয়া যায় না মিহির?’ শান্ত স্বরে বলে শুভ। মিহির কিছু বলতে যাবে তার আগে দরজার পাশ দাঁড়িয়ে মাহিন বলে,
‘কিরে আসবো?’
মাহিনের কথা শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে মিহির বলে উঠে, ‘পারমিশন নেওয়ার কি আছে আসো!’
মাহিন মৃদু হেসে বলে, ‘তা ভাবুক কুমারী কি করছে?’
‘কিছু নাহ! তুমি সবসময় পারফেক্ট টাইমে আসো। এই মুহূর্তে তোমাকে ভিষণ দরকার ছিলো আমার!’
মিহির কান থেকে মোবাইল নামিয়ে কল কেটে দেয়। মাহিন এগিয়ে এসে বোনের পাশের চেয়ারে বসে।
অন্যদিকে মিহির কল কেটে দেওয়ায় মোবাইল স্বজোড়ে ফ্লোরে আছাড় দেয় শুভ। রাগে চোখমুখ লাল হয়ে আছে। কে এই ছেলে? তাকে এতো রাতে কি দরকার মিহিরের? ভাবুক কুমারী বলার সাহস হয় কি করে ওর? মে:রে ফেলবো তাকে। জ্যা:ন্ত পু:তে ফেলবো! [শুভ বেচারার জন্য এক বালতি সমবেদনা 🥱]
_________
‘কি হয়েছে তোর?’ মিহিরের কাছ থেকে খাতা নিয়ে দেখতে দেখতে বলে মাহিন। মিহির আমতা আমতা করতে থাকে।
‘আমতা আমতা না করে বলে ফেল!’ বইয়ের দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বলে মাহিন। মিহির ইতস্ততবোধ করে বলে, ‘ভাইয়া! ওই শুভ…” আর বলতে পারে না মিহির। মাথা নিচু করে ফেলে সে।
‘কিছু বলেছে তোকে? সত্যি করে বল? জানে মে:রে ফেলবো ব্লাস্টার টাকে।’ তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে মুখ শক্ত করে বলে মাহিন।
‘না ভাইয়া আমাকে কিছু বলে নি। সরি বলছে আমাকে। মানে আরেকটা সুযোগ দিতে বলছে শুভ!’ মিন মিন গলায় বলে মিহির। ঘার কাত করে মিহিরের দিকে তাকায় মাহিন। মিহিরকে বুঝার চেষ্টা করছে সে। শান্ত স্বরে বলে মাহিন, ‘ভালোবাসিস?’
মিহির চোখ তুলে তাকিয়ে শুকনো ঢুক গিলে বলে, ‘নাহ!’
‘তো বাদ দে! এর চ্যাপ্টার ক্লোজ কর!’ স্বাভাবিক ভাবে বলে মাহিন।
‘একটু একটু খারাপ লাগে!’ ছোট গলায় মাথা নিচু করে বলে মিহির। মুখ শক্ত করে বলে মাহিন,’মায়া করে লাভ নেই মিহু। ওই ব্লাস্টার কে কখনোই মেনে নেবো না। আর জলদি রিজাইন কর।’
‘রিজাইন কেনো করবো?’ অবাক হয়ে বলে মিহির। বাঁকা হেসে মাহিন বলে, ‘তুই কি ভেবেছিস আমি কিছু জানি না? তোর থেকে অনেক বেশি জানি আমি।’ অবাক হয়ে তাকায় মিহির। তার পর চোখ ছোট ছোট করে বলে মিহির, ‘গোয়েন্দাগিরি কি এবার বোনের সাথেও শুরু করে দিয়েছো নাকি?’
আওয়াজ করে হেসে ফেলে মাহিন। এক হাতে মিহিরের চুল এলোমেলো করে বলে, ‘যেদিন তোরা ঢাকা এসেছিলি সে দিন থেকেই তোর উপর আমার নজর ছিলো!’
চোখ ছানাবড়া করে ফেলে মিহির। অবাক স্বরে বলে, ‘তার মানে আমি যা যা করতাম তুমি সব জানতে?’
‘উহুম সব না। গুরুত্বপূর্ণ জিনিস গুলা জানতাম!’
‘ওহ!’
‘আমার কুমিল্লা যেতে হবে ওখানে কাজ আছে।’
‘তোমার কি কুমিল্লার কাজ এ জীবনে শেষ হবে না?’ ভ্রুঁ কুঁচকে বলে মিহির। মাহিন চেয়ার হেলান দিয়ে আপন মনে বলে,
‘জন্মস্থানের প্রতি আলাদা এক টান থাকে মিহু! ওখানের মাটির ঘ্রান খুব করে কাছে টানে। এক অদ্ভুত রকমের ভালোলাগা আছে সেখানে। আমার শেষ নিশ্বাস যেনো সেখানেই ফেলি!’
চলবে..!!