অনুভবী হিয়া’ পর্ব-১৯

0
1726

#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির

১৯.

কলেজে সামনে মাঠে মানু্ষের ভীর দেখে অবাক হয় মিহির মিতু আয়না। কি হয়েছে দেখার জন্য ভীড় ঠেলে সামনে এগিয়ে যায় তারা। সামনে গিয়েই চোখ চাতক পাখির মতো বড় হয়ে যায় তিন জনের। কারণ দুইটা ছেলেকে মাঠের মাঝে ফেলে ইচ্ছে মতো হকিস্টিক হাতে নিয়ে পি:ঠাচ্ছে কয়েকজন। মিতু একজন কে জিজ্ঞেস করে, ‘কি হয়েছে এখানে?’

‘এই দুটো ছেলে কলেজের সামনে দুটো মেয়েকে বিরক্ত করছিলো তাই এদের মা:রছে ক্যাপ্টেন।’

ভ্রুঁ কুঁচকে ফেলে মিহির। অস্পষ্ট স্বরে বলে, ‘ক্যাপ্টেন?’

‘হ্যা! ওই দেখো সবুজ শার্ট পরা ছেলেটা। নাম রাফিদ রায়হান শুভ। ভার্সিটির সিনিয়র। সবাই তাকে ক্যাপ্টেন বলে ডাকে।’

ছেলেটির কথা অনুসরন করে সামনে তাকায় মিহির মিতু। পিছ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক যুবক। মুখ দেখতে পাচ্ছে না তারা। হঠাৎ মিতু মিহিরের হাত শক্ত করে ধরে ফেলে।

‘কি হয়েছে? আস্তে ধর না ব্যাথ্যা পাচ্ছি!’ বিরক্ত নিয়ে বলে মিহির। আমতা আমতা করে বলে মিতু, ‘দোস্ত, ছেলে দুইটা কে দেখ। কালকে আমাদের যারা ডিস্টার্ব করেছিলো তারা।’

মিতুর কথা শুনে মিহির তাকিয়ে দেখে সেই ছেলে গুলো যারা কলেজ থেকে যাওয়ার সময় মিতু মিহিরকে বিশ্রী কথা বলেছিলো। মিহির এবার অবাকের চুড়ান্ত পর্যায়ে।

সবুজ শার্ট পরা ছেলেটি ‘স্টপ!’ বলতেই মা:র থামিয়ে দেয় বাকি ছেলে গুলো। মাটিতে পরে থাকা ছেলে দুটোর দিকে এগিয়ে গিয়ে হাটু তে ভর দিয়ে এক হাত হাটুতে রেখে বসে শুভ। চোখ মুখ শক্ত করে বলে, ‘হাউ ডেয়ার ইউ ডিস্টার্ব মাই গার্ল!’ ছেলে দুটি আতঙ্কে উঠে বলে, ‘ভাই মাফ করে দেন, আমরা জানতাম না ম্যাডামের কথা। মাফ চাই ভাই ছাইড়া দেন।’

বাঁকা হাসে শুভ। ঘাড় ঘুরিয়ে মিহিরের দিকে তাকায় সে। শুভ কে দেখে অবাক হয়ে যায় মিহির। আয়না বলে, ‘দোস্ত সেই ছেলেটা না যাকে তুই ধমক দিছিলি? এবার না তোরে মা:রে।’ মিহির ভয়ার্ত চোখে মিতুর দিকে তাকায়। শুভ হাতের ইশারায় মিহিকে কাছে ডাকে। মিহির কিছুটা ইতস্ততবোধ করে এগিয়ে শুভর সামনে দাঁড়ায়। শুভ মিহিরকে এক পলক প্রহর করে তাকায়। কলেজ ড্রেসের সাথে সাদা হিজাব পরে আছে মিহির। একদম শুভ্র পরী লাগছে তাকে।

কড়া চোখে ছেলে গুলোর দিকে তাকিয়ে বলে শুভ, ‘Apology to her!’

ছেলে দুটি হুড়মুড় খেয়ে মিহিরের পায়ে ধরে বলে, ‘ম্যাডাম মাফ কইরা দেন। আমরা জানতাম না আপনি শুভ ভাইয়ের কেউ হোন। মাফ কইরা দেন।’

চোখ বড় বড় করে অস্থির হয়ে বলে মিহির, ‘আরে কি করছেন আমার পা ছাড়ুন।’

শুভ ছেলে দুটির কলারে ধরে উঠিয়ে থাপ্পড় দিতে দিতে বলে, ‘তোদের ছুতে বলেছি আমি? কোন সাহসে ওর পা ধরেছিস? আজ তোদের মে:রেই ফেলবো আমি।’ বলেই হকিস্টিক হাতে নিয়ে বেধম পেটাতে থাকে শুভ।

শুভর এমন আচরনে ভয় পেয়ে যায় মিহির। শরির কাপছে তার। মিতু আয়না পাশে এসে তাকে শক্ত করে ধরে দাঁড়ায়। একটা ছেলে মা:র নিতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে পরেছে। আরেকটা ছেলের তো যায় যায় অবস্থা। তখনি সামির আদিল শুভকে আটকে বলে, ‘ভাই ম:রে যাবে। আর মা:রিস না।’

‘মে:রেই ফেলবো। ওদের সাহস কি করে হয় আমার মিহি কে টাচ করার।’ রাগে চোয়াল শক্ত করে বলে শুভ। আদিল চোখের ইশারায় মিহির আয়না আর মিতু কে যেতে বলে। ইশারা পেতেই একপ্রকার দৌড়ে চলে যায় তারা তিন জন।

কলেজ গেটের বাইরে এসেই বুকে হাত দিয়ে লম্বা লম্বা শ্বাস নেয় তিন জন। আয়না ভয়ার্ত দৃষ্টিতে বলে, ‘দোস্ত লোকটা কত্ত ডেঞ্জারাস ভাইরে ভাই।’

‘আয়না একটা জিনিস খেয়াল করছিস?’ চিন্তায় মগ্ন হয়ে বলে মিতু। মিহির আয়না মিতুর দিকে ইচ্ছুক দৃষ্টিতে তাকায়।

‘ওই লোকটা মেবি মিহিরের প্রতি ডেস্পারেট।’

মিহির বিস্মিত নয়নে তাকায় মিতুর দিকে। আয়নার মধ্যে যেনো কোনো ভাবান্তর নেই। আয়নাও সাঁই দিয়ে বলে, ‘এটা তো আমি প্রথমেই বুঝেছিলাম।’

‘মানে? কিভাবে?’ মিতু জিজ্ঞেস করলো।

‘প্রথম দিন যখন মিহির লোকটাকে কথা শুনাচ্ছিলো তখন কেমন মায়াভরা চোখে তাকিয়ে ছিলো মিহিরের দিকে। আমি ভাই চোখের ভাষা বুঝি। ফুচকা খাওয়ার দিন সরি বলতে আসাটা তো কেবল বাহানা ছিলো মাত্র। তাছাড়া ওনাকে মিহিরের দিকে তাকিয়ে থাকতে প্রায় দেখতাম। তখন অনুমান করেছিলাম বাট সিউর তো আজকে হলাম যখন উনি মাই গার্ল বলেছিলো। আর দেখেছিস? মিহিরের পা ছুঁয়েছে বলে ছেলে দুটিকে কিভাবে মে:রেছে। মা:রতে মা:রতে আবার বলেছিলো আমার মিহি! ওয়াহ ব্রো ওয়াহ!’ বলেই হাই তুললো আয়না।

মিহির মুখ হা করে তাকিয়ে আছে। কাদু কাদু স্বরে বলে, ‘কুত্তা আগে বলিস নি কেনো?’

‘বললাম তো অনুমান করেছিলাম আর আজ সিউর।’

‘ডেস্পারেট হলে হবে, আই ডোন্ট কেয়ার। এসব পাত্তা দেওয়ার টাইম আমার নাই। বাসায় যায় ভাল্লাগছে না এখানে।’

তিন বান্ধুবী তাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো।

_____________

ওই দিনের ঘটনার পর মিহিরের সাথে অনেকে কথা বলতে ভয় পায়। ছেলেরা তো তার দিকে তাকায়ই না। সবাই কেমন বড় ভাইয়ের বউ হিসেবে ট্রিট করে তাকে। সিনিয়র জুনিয়র সবাই ভাবি বলে সম্মোধন করে। মিহিরের এই সব বিরক্তি লাগে। তার উপর শুভর হুটহাট করা আজিব ব্যবহার যা মিহিরকে ভাবায়। এই যেমন লোক দিয়ে মিহিরকে ডেকে নিয়ে যায়, ক্যাম্পাসে তার পাশে বসিয়ে রাখে। আবার সবসময় কলেজ থেকে বাসায় যাবার সময় শুভ বাইক নিয়ে সামনে এসে বলে, ‘উঠো পৌছে দিচ্ছি।’

মিহির বিরক্তি নিয়ে গাড়ি থামানোর চেষ্টা করলে শুভ বারন করে দেয়। বলে, ‘মামা চলে যান। বউ আমার রাগ করছে।’ মিহির শেষে একপ্রকার বাধ্য হয়ে বাইকের পিছনে বসে। শুভ হেসে বলে, ‘ধরে বসো পরে গেলে ল্যাঙ্গড়া বউ কপালে জুটবে।’

‘আমি ঠিক আছি!’ ঝাঁঝালো গলায় বলে মিহির। শুভ ইচ্ছে করে জোরে বাইক স্টার্ট দেয় ফলে মিহির পরে যেতে নিলে শক্ত করে শুভর কাধ ধরে। আলতো হাসে শুভ। আবার কখনো বা ক্লাসে এসে সবার সামনে দিয়ে মিহিরকে নিয়ে যায়, রাস্তায় হাত ধরে হাটে, চুড়ি কানের দুল বিভিন্ন জিনিস কিনে দেয়। আবার মাঝ রাতে বাসার সামনে এসে মিহিরকে বারান্দায় আসতে বলে। শুভর এসব কাজ মিহিরকে ভাবায়, একসময় মিহিরের কাছেও শুভকে ভালোলাগা শুরু করে। শুভ মিহিরকে ‘মিহি’ বলে ডাকতো কারন সবাই মিহির মিহু ডাকে তাই সে মিহি ডাকে শুধু। এক সাথে সময় কাটাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে তারা। ভালোলাগা থেকে ভালোবাসার শুরু।

চলবে..!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here