#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির
২৩.
ভার্সিটিতে বসে নোট লিখছে মিহির। পাশে মিতু বসে আছে। হঠাৎ মিতু বলে, ‘জানিস আয়নার সাথে কথা হয়েছে আমার।’ মিহির চোখ তুলে মিতুর দিকে তাকিয়ে বলে, ‘কেমন আছে? কি কথা হয়েছে?’ মিতু এক্সাইটেড হয়ে বলে, ‘আয়নার বিয়ে ঠিক হয়েছে। নেক্সট মান্থে ৬ তারিখ। যাবি?’
‘আরে না কিভাবে পসিবল? আয়না বরিশাল থাকে ওখানে যাওয়া এখন সম্ভব না। তাছাড়া ভাইয়া বলেছে সামনের মাসে কুমিল্লা যাবে। আমিও ভাবছি ভাইয়ার সাথে যাবো।’ চেয়ারে হেলান দিয়ে বলে মিহির। মিতু মিহিরের এক হাত ধরে বলে, ‘কত দিন থাকবি?’ মিহির কিছু একটা ভেবে বলে, ‘থাকা হবে বেশি দিন মনে হয়!’
‘শুভর কথা ভাইয়াকে বলেছিস?’ ছোট করে বলে মিতু। মিহির হাই তুলে বলে, ‘আমাকে বলতে হয়নি ভাইয়া নিজেই জানে।’ মিহিরের কথায় হা করে তাকিয়ে থাকে মিতু। এমন সময় মিহিরের নাম্বারে শুভ কল দেয়। মিহির কল ধরতে চাইনি মিতুর কথা কল রিসিভ করে।
‘আমি বাহিরে অপেক্ষা করছি তাড়াতাড়ি আসো!’ কল রিসিভ করার পর কথা বলেই কেটে দেয় শুভ। মিহিরের রাগ ৩৬০ ডিগ্রি বেঁড়ে যায়। শুভকে কয়েকটা কড়া কথা শুনাবে ভেবে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে আসে মিহির। রাস্তার অপর পাশে শুভকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে যায় সে। শুভর সামনে দাঁড়িয়ে ঝাঁঝালো গলায় বলে মিহির, ‘সমস্যা কি আপনার? বলেছি না আমি আপনার কাছে ফিরে যাবো না তাও কেনো আমাকে বিরক্ত করছেন?’
শুভ আশেপাশে তাকিয়ে বলে, ‘আস্তে কথা বলো আমাকে কি গণধোলাই খাওয়াতে চাইছো নাকি?’ মিহির বিরক্ত হয়ে বলে, ‘কি জন্য এসেছেন সেটা বলে যান এখান থেকে!’
শুভ চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে অবাক স্বরে বলে, ‘এটা তোমার একার ভার্সিটি নাকি যে আর কেউ আসতে পারবে না। আমি আমার কাজে এসেছি। আর রাস্তায় এভাবে জান ডেকো না আশেপাশের মানুষ কি ভাববে বলো তো? দুষ্টু মেয়ে!’ শেষের কথাটা বলে চোখ টিপ দেয় শুভ। মিহির হা হয়ে তাকিয়ে থেকে বলে, ‘আমি কখন আপনাকে জান বললাম?’
‘যা এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে? ফিকার নট, আমি মনে রেখেছি। তোমার হবুবরের সৃতিশক্তি আবার অনেক ভালো!’ বলে ভাব নিয়ে শার্টের কলার ঠিক করে শুভ।
মিহির তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলে, ‘ফালতু পাবলিক তো আপনি। আপনাকে জেলের ভাত খাওয়ানো উচিত।’
দূর থেকে কেউ একজন মিহির আর শুভর দিকে চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে আছে। মিহিরের দিকে এগিয়ে এসে শক্ত গলায় বলে, ‘মিহু!’
পিছনে ফিরে তাকায় শুভ মিহির। শান্তকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মিহির শুকনো ঢুক গিলে। ভাবতে পারেনি এক্স এর সাথে বড় ভাইয়ের সামনে পরতে হবে। মাহিনের থেকে শান্তকে একটু ভয় পায় মিহির কারন শান্তর রাগ সবসময় আকাশের উপর থাকে যেকোনো মুহূর্তে নিচে টপকে পরে যাবে।
শান্ত ঢাকা এসেছিলো ১০ টায়, বাসায় মাহিনকে পায়নি বলে মাহিনের উদ্দেশ্যে বেড়িয়েছিলো সে। রাস্তায় মিহিরকে দেখে গাড়ি থামিয়ে মিহিরের কাছে আসে। শান্ত শুভর দিকে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে কড়া গলায় বলে, ‘ক্লাস না করে এখানে কি করিস?’ মিহির আমতা আমতা করে বলে, ‘আসলে আমি…’
‘বাসায় যাবি চল!’ বলেই একপলক কড়া চোখে শুভর দিকে তাকিয়ে মিহিরের হাত ধরে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায় শান্ত। মিহির ভয়ে জান যায় যায় অবস্থা। কারন শান্ত মাহিন দুজনেরই শুভর উপর রেগে আছে প্রচুর। তার উপর আজকে শুভর সাথে দেখেছে শান্ত। মিহির মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে। কেনো যে প্রেম করতে গেলো। এমন লজ্জায় পরতে হবে জানলে জিবনেও প্রেম করতাম না।
গাড়ি ড্রাইভ করছে শান্ত। মিহির চুপচাপ বসে আছে।কিভাবে কি বলবে বুঝতে পারছে। নিরবতা ভেঙে শান্ত বলে, ‘শুভর সাথে তোর কথা হয়?’
ছোট করে উত্তর দেয় মিহির, ‘নাহ!’
‘রিজাইন দিচ্ছিস না কেনো?’ চট করে চোখ তুলে শান্তর দিকে তাকায় মিহির। দুজনেই তাহলে জানে শুভ তার অফিসের বস। মাথা নিচু করে উত্তর দেয় সে, ‘দিয়ে দিবো।’
‘শুভর সাথে যেনো ভুলেও না দেখি।’ স্বাভাবিক ভাবে বললেও কথাটার মাধ্যমে যেনো স্পষ্ট শুভর প্রতি রাগ দেখতে পাচ্ছে মিহির। কিছু না বলে বাহিরে তাকায় সে। বুঝতেই পারছে দুই ভাই এই জীবনে শুভকে মেনে নিবে না।
_________________
চোয়াল শক্ত করে বসে আছে শুভ। আদিল সামির আর রাহুল একে অপের দিকে চাওয়াচাওয়ি করছে।
সামির বলে, ‘ একটা ছেলে প্রচন্ড অধিকারবোধ নিয়েই একটা মেয়ের হাত ধরতে পারে!’ চোখ তুলে তাকিয়ে বলে শুভ, ‘কি বলতে চাইছিস তুই?’
‘দেখ, ছেলেটা কে যখন মিহু তার হাত ধরতে দিয়েছে তার মানে ছেলেটা মিহুর খুব কাছের কেউ। লাইক বয়ফ্রেন্ড, ফিয়ন্সে।’ এতো টুকু বলে শুভর দিকে তাকাতেই শুকনো ঢুক গিলে বলে, ‘কিংবা ভাইও হতে পারে। তুই করে যেহেতু বললো।’ শুভর চোখ লাল হয়ে আছে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে কিন্তু পারছে না। কষ্ট হচ্ছে তার প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। মিহি কেনো বুঝে না তাকে? কেনো এতো কষ্ট দিচ্ছে? আদিল শুভর কাধে হাত রেখে শান্ত স্বরে বলে, ‘যা হবার হয়েছে ভাই। মিহু মনে হয় না আর তোর কাছে ফিরবে। ভুলে যা সব!’
রেগে যায় শুভ। এক ঝাটকা দিয়ে আলিদের হাত সরিয়ে ফেলে সে। চেঁচিয়ে বলে, ‘ভুলে যাবো? এতো সহজে বলে ফেললি ভুলে যাবো? ভালোবাসি মিহি কে। ভুলে যাবার কথা আমি কল্পনাতেও ভাবতে পারি না। আই জাস্ট নিড হার।’ শেষের কথাটা বলেই কান্নায় ভেঙে পরে শুভ।
বাচ্চাদের প্রিয় খেলনা নিলে যেমন তারা হাউমাউ করে কান্না করে ঠিক তেমনি ভাবে কান্না করছে শুভ। দুই হাত দিয়ে মাথার চুল মুঠ করে ধরে নিচে দৃষ্টি রেখে কাঁদছে সে। বন্ধুর কান্না সয্য করতে পারছে না কেউ। কিভাবে শান্তনা দিবে বুঝতে পারছে না তারা। সামির শুভর কাধে হাত রাখতেই শুভ কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলে, ‘দোস্ত, মিহিকে এনে দে প্লিজ। প্রমিস করছি কখনো কষ্ট দিবো না, রেগে কথা বলবো না ওর সাথে। অনেক অনেক ভালোবাসবো ওকে। প্লিজ ইয়ার তোরা আমার মিহিকে আমার কাছে এনে দে। মিহিকে ছাড়া আমি জীবন্ত লাশ হয়ে যাবো। আদিল? আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। মিহিরের উপেক্ষা আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। আমি আর নিতে পারছি না। অনেক অসহায় লাগছে নিজেকে।’
মুখের কথা যেনো হারিয়ে ফেলেছে সবাই। চেষ্টা করছে বন্ধুকে তাকে শান্ত করার।
চলবে..!!
[শুভ আর মিহিরের সম্পর্কে মাহিন আর শান্ত ভিলেন?. সুন্দর না ব্যাপার টা? 😂]