#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির
২৪.
ডিপার্টমেন্টের হেড উজ্জ্বল আহসানের সামনে বসে আছে মাহিন, শান্ত। পাশে দাঁড়িয়ে আছে অর্ধবয়স্ক ইন্সপেক্টর আমজাত। হাতে থাকা ফাইল তাদের সামনে রেখে বলে, ‘মিঃ হোসাইন কবির। বিআইবি কোম্পানির মালিক। ক্যাসটা উনার বৃদ্ধ মা করে কারন উনার মতে তার ছেলেকে কেউ মার্ডার করেছে। আর উনার থেকে জানতে পারি মিঃ হোসাইন আর তার ওয়াইফের কিছুদিন যাবত পারিবারিক ভাবে ঝামেলা হয় কারণ টা কেউ বলে নি। আমি মিসেস হোসাইন এর কাছ থেকে জানতে পারি মিঃ হোসাইন অফিস থেকে ফিরে রাত নয়টায়। তখন অনেক ক্লান্ত ছিলো আর স্বাভাবিকের চেয়ে নাকি অতিরিক্ত ঘেমে ছিলো। মিসেস হোসাইন আরো বলেন মারা যাবার আগে শ্বাসকষ্ট হয় উনার। আর বাসায় ফেরার দুই ঘন্টা পর মৃত্যু হয় তার। পোস্টমর্টেমের রিপোর্টে আসে হার্ট এটাকে মারা যায় উনি। কিন্তু স্যার আমি দেখেছি লাশটার ঘাড়ের বা পাশের অল্প একটু জায়গা কেমন কালচে লাল হয়ে ছিলো। আমারও কেনো জানি মনে হচ্ছে মিঃ হোসাইনের মৃত্যু টা স্বাভাবিক নয়।’ বলে মিঃ হোসাইনের ঘাড়ের সেই কালচে দাগের কয়েকটা ছবি দেখায় তাদের।
পিনপিন নিরবতা পালন করছে মাহিন শান্ত। তাদের দিকে তাকিয়ে আছে উজ্জ্বল আহসান। আসলে নিরবতা নয় মনে মনে ছক কষছে দুজন।
শান্ত লম্বা একটা শ্বাস ফেলে বলে, ‘কোন হস্পিটালে ডে:ডবডি পোস্ট:মর্টেম করা হয়েছিলো?’ আমজাত তড়িঘড়ি করে হস্পিটালের রিপোর্টের ফাইল বের করে শান্তর দিকে এগিয়ে দেয়। লোকটি কাজের ব্যাপারে খুব সাবধান আর সতর্ক বুঝায় যাচ্ছে। শান্ত ফাইল কিছুক্ষণ ঘেটে চেয়ারে হেলান দিয়ে বলে, ‘টাকা দিয়ে সব করা যায় আমজাত কাকা। জানেন তো?’
বিস্মিত হয়ে তাকায় ইন্সপেক্টর আমজাত। এমন একটা মুহূর্তে এই কথাটা ঠিক তার বোধগম্য হচ্ছে না তার। মৃদু আওয়াজে হেসে ফেলে মাহিন। শান্ত বলে, ‘টাকা ঢেঁলে ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করে আসল সত্ত্য ঢাকার চেষ্টা করছে খু:নি। যারা উনার পোস্টমর্টেম করেছে তাদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকেন। লা:শটা অন্য এক হস্পিটালে নিয়ে আবার পোস্টমর্টেম করুন। রিপোর্ট গুলো আমাদের ল্যাবে নিয়ে আসবেন। উনার শরিলে বিষাক্ত জাতীয় কিছু পুশ করা হয়েছে।’
মাহিন এবার সোজা হয়ে বসে বলে, ‘একটা ব্যাপার অনেক রহস্য ঠেকছে। আপনার ভাষ্য মতে মিঃ হোসাইন বাসায় যাবার দুই ঘন্টা পর মা:রা যায়। বায়ায় যাবার পর থেকেই উনার শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় অথচ কেউ ডক্টর কে ডাকলো না? কি মনে হয় আপনাদের? মার্ডার করা হয়েছে আর সেটা তার পরিবারের লোকরাই করেছে। উনার পরিবারের সবার সাথে কথা বলতে চাই। বিশেষ করে উনার স্ত্রী।’
ইন্সপেক্টর আমজাত সম্মতি জানায়। আরো কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে বেরিয়ে যায় মাহিন শান্ত।
___________
রাত ১০:২২! রাস্তা ঘাট যেনো নিস্থব্ধতায় একাকার। রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল কমে গেছে। জেগে আছে শুধু দারোয়ান চাচা। মিহিরের বাড়ির সামনে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে শুভ, আদিল, সামির আর রাহুল। রাহুল আশেপাশে তাকিয়ে একবার প্রখর করে বলে, ‘ভাই নিজেরে কেমন চুর চুর লাগতাছে।’
সামির বলে, ‘শুভ তুই মিহুকে একবার কল করে বল বাহিরে দেখা করে যেতে তাহলেই তো সমস্যা শেষ। আমাদের চুরের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না!’
কিঞ্চিৎ বিরক্ত নিয়ে বলে শুভ, ‘তোদের কি মনে হয় মিহি আমার কল ধরবে?’
‘ধরতেও পারে ট্রাই করে দেখ না!’ আদিলের কথায় মিহিকে কয়েকবার কল দেয় শুভ। কিন্তু মিহি কল রিসিভ করে নি। তারপর মিহিরের নাম্বারে কয়েকটা ম্যাসেজ পাঠায় শুভ। ভালো লাগছে না তার। কবে শেষ হবে এই দূরত্ব? কবে মিহিকে আপন করে পাবে?
________________
অন্ধকারের ডেকে গেছে চারপাশ। কুকুরের আর্তনাদ শুনা যাচ্ছে। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় দেখা যাচ্ছে দুজন যুবকের অবয়। নিরবতা বজায় রেখে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। হঠাৎ ফোনের কর্কশ আওয়াজে ধ্যান ভাঙে দুজনের। মাহিন পকেট থেকে মোবাইল বের করে মৃদু হাসে তা দেখে শান্তও মনে মনে হেসে বড় বড় কদম ফেলে সামনে এগিয়ে যায়।
‘এখনো ঘুমাও নি তুমি?’ মাহিন শান্ত গলায় বললেও অপর পাশ থেকে কাটকাট গলা ভেসে আসে, ‘কেনো আমার কি ঘুমিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো?’ হেসে ফেলে মাহিন। যা সুহার কর্ণগোচর হয়। অভিমানের পাল্লা ভাড়ি হয় আরো। মাহিন এতোই ব্যস্ত থাকে যে তাকে একটা কলও দেয় না? সুহা কে চুপ থাকতে দেখে বলে মাহিন, ‘আমার সুহারানী রাতে খাবার খেয়েছে তো?’ সুহা উত্তর না দিয়ে অভিমানী গলায় বলে, ‘আপনি অনেক খারাপ। সেই দুপুরে একটু কথা বলেছেন তারপর একটা কলও দেন নি। দেখাও করেন না দুই দিন ধরে। আমার বান্ধুবিরা দিব্যি তাদের বয়ফ্রেন্ড কে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় আর আপনি কলও দেন না। আসলে আপনি আমাকে ভালোবাসেন না তাই তো বলেনও না। কথা বলবেন না আমার সাথে।’
মৃদু আওয়াজে হাসে মাহিন। তার রাজ্যের রানী অভিমান করেছে। কতশত অভিমান নিয়ে বসে আছে পিচ্চি এই মেয়ে। নিজের অজান্তেই যে মেয়েটা তাকে কতটা ভালোবেসে ফেলেছে সেটা সে নিজেও জানে না। নরম কন্ঠে বলে, ‘ভালোবাসলেই বলতে হবে সুহা? অনুভূতি গুলো ঠিক প্রকাশ করে পারি না। আমি যে বড্ড চাপা স্বভাবের। বুঝে নিতে পারবে না আমাকে?’ চুপচাপ শ্রবণ করছে সুহা। মাহিনের স্বভাব এতো দিনে সে বেশ বুঝতে পেরেছে। লোকটা ব্যাথা পেলেও মুখ ফুটে টু শব্দ করবে না। বলতে গেলে একদম ইন্ট্রোভাট টাইপ লোক। মাহিন যে সুহা কে ভালোনাসে সেটা সে জানে।
‘জানো সুহা? অভিমান করলে না তোমার গাল দুটো ফুলে থাকে তখন ইচ্ছে করে ছুঁয়ে দিতে। ট্রাস্ট মি সুহা তোমার পাশে থাকলে টুস করে কামড় দিতাম তোমার লাল টমেটো টাইপ গালে। গভীর ভাবে ছুঁয়ে দিতাম তোমাকে।’
মাহিনের এমন লাগাম ছাড়া কথা শুনে সুহার অভিমান পালিয়ে একদফা লজ্জার রেশ হানা দিয়েছে। কে বলবে এই লোকটা গম্ভীর পকৃতির? আর কেউ না জানুক সুহা ভালো করেই জানে লোকটার মধ্যে লজ্জার ‘ল’ টাও নেই।
‘সুহা তুমি নিশ্চয় এখন লজ্জা পাচ্ছো? তোমার এই লজ্জাভরা মুখটা দেখতে ইচ্ছে করছে। কবে বিয়ে হবে বলো তো আমাদের?’
‘আপনি খুব বাজে! অসভ্য একটা লোক!’
‘অসভ্যের মতো তো কিছুই করলাম না আমি। তবে হ্যা একবার বিয়ে টা হতে দাও তার পর দেখাবো অসভ্য কাকে বলে। সুহারানী আমার প্রস্তুত থেকো!’ বলেই হেসে দিলো মাহিন। সুহাও সাথে হেসে ফেললো। যাক অভিমান ভেঙেছে মহারানীর। এভাবে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে কল কেটে দেয় মাহিন। এগিয়ে যায় শান্তর দিকে।
চলবে..!!