#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির
২৬.
‘ব্রেকিং নিউজ……
বাংলাদেশের বড় বিজনেসম্যান বিআইবি কোম্পানির মালিক মিঃ হোসাইন কবির হার্ট এট্যাকে মা:রা যায় নি। উনার স্ত্রী মিসেস হোসাইন সম্পত্তির লোভে উনার শরিলে বিষাক্ত পদার্থ পুঁশ করে মা:র্ডার করে। এই মামলার তদন্ত করে রহস্যভেদ করেন উজ্জ্বল আহসান।’
‘মিঃ উজ্জ্বল আহসান এই মামলার ব্যাপারে যদি আপনি কিছু বলতেন!’ রিপোর্টার।
ক্যামেরা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রিপোর্টার দের সামনে হাসিখুশি মুখে উত্তর দেয় উজ্জ্বল আহসান, ‘ব্যাপার টা প্রথমে এমন ছিলো যে মিঃ হোসাইন কবির হার্ট এট্যাকে মা:রা যান। কিন্তু আমরা তদন্ত করতে জানতে পারি ডে:ডবডির পোস্ট:মর্টেমে ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া হয় এবং আসল কালপ্রিট হলেন উনার স্ত্রী মিসেস হোসাইন। এই তদন্তে আমাকে সাহায্য করেছিলো ডিপার্টমেন্টের সদস্য এমআর হাসান এবং এসআর আরাফ। সমস্ত ক্রেডিট অবশ্য তাদের। ক্যাসের ইনভেস্টিগেশন করতে তারা দুই জন আমাকে পরোক্ষ ভাবে সাহায্য করেছিলো।’
‘স্যার এই এমআর হাসান এবং এসআর আরাফের আসল পরিচয় কি? তারা সবার সামনে আসে না কেনো? তবে কি আমরা ধরে নিবো তারা দুইজন মানুষ রুপে দেবদূত মতো আমাদের সাহায্য করতে এসেছে? আপনার অভিমত কি জানাবেন!’ রিপোর্টার।
‘তারা দুই জন সিক্রেট এজেন্ট হিসেবে আমাদের সাথে কাজ করছে। সময় হলে তারা দুইজন ক্যামেরার সামনে এসে নিজেদের পরিচয় দিয়ে আমাদের সকল প্রশ্নের জবাব দিবে। সময় হোক সব জানতে পারবেন। আশা করি আপনাদের সবার প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন।’
……………
দুপুরে লাইব্রেরী থেকে ফিরে টিভির সামনে বসে নিউজ দেখছিলো মিহির। আনন্দে আত্মহারা সে। এরা আর কেউ না তার দুই ভাই ভেবেই গর্বে মন ভরে যাচ্ছে। পাশে বসে পেয়াজ ছিলছে রাশেদা বেগম। মুখের পপকর্ন শেষ করে এক চুমুকে পানি খেয়ে রাশেদার উদ্দেশ্যে বলে, ‘আম্মু নিউজ টা দেখেছো?’
রাশেদা দির্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ‘দেখেছি। সার্থ্যের জন্য মানুষ কতটা নিচে নামতে পারে।’
‘হুম! তবে যারা কেসটার ইনভেস্টিগেশন করেছে তারা বুদ্ধিমান বটে। কি বলো?’
‘হ্যা! এই দুইজনের সম্পর্কে আমি আরো নিউজ দেখেছি। বেশ বুদ্ধিমান! ওদের আল্লাহ সুস্থ রাখুক দো’য়া করি।’
রাশেদার কথা উল্লাসিত হয়ে বলে মিহির, ‘আচ্ছা আম্মু ভাইয়া যদি সিক্রেট এজেন্ট হয় তাহলে কেমন হবে বলো তো?’ আড় চোখে বলে মিহির।
বিব্রত হয়ে বলে রাশেদা, ‘কখনো না। এদের জীবন অনেক রিক্স। আমি আমার ছেলের কোনো ক্ষতি হোক চাইবো না। মাহিনকে এইসব পুলিশের কাজের ধারে কাছেও যেতে দিবো না।’
‘কেনো আম্মু পুলিশ রা তো আমাদের প্রোটেক্ট করার জন্যই কাজ করে। এই দেখো ওরা যদি এমন রিক্স না নেয় তো সত্তিটা আমরা কিভাবে জানবো বলো তো?’
রাশেদা তার কথায় অনড়। নিজ সিদ্ধান্তে অটুট থেকে বলে, ‘যারা রিক্স নিয়ে কাজ করে তাদের জন্য দো’য়া করি। কিন্তু মাহিনকে আমি এসবের সাথে জড়াতে দিবো না।’
‘কিন্তু আম্মু?’
‘কোনো কিন্তু নয়। বেশি কথা আমর পছন্দ না তুই জানিস মিহু!’ শক্ত গলায় বলে পেঁয়াজের প্লেট হাতে নিয়ে চলে যায় রাশেদা। মায়ের দিয়ে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মিহির।
ঠোঁট কামড়ে মনে মনে আফসোস করে মিহির। যেখানে তার ভাই অলরেডি সিক্রেট এজেন্ট সেখানে তার মা এসবের ধারের কাছেও যেতে দিবে না। যেদিন সত্তিটা জানতে পারবে সেদিন যে কি হবে ভেবেই ধীর্ঘশ্বাস ফেলে মিহির।
___________
অন্যদিকে ইউকে অবস্থিত এক যুবক নিউজটি দেখার পর কাঁচের টি টেবিলের উপর থাকা ফ্লাওয়ার বেজ স্বজোরে ভেঙে ফেলে। রাগে তার শরির মৃদু কাঁপছে। কপালের রগ ফুলে নীল হয়ে আছে। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ গায়ের রঙ তার। কপালে পরে থাকা কালো সিল্কি চুল গুলো হাত দিয়ে পিছে ঠেলে হুংকার দিকে ডাক দেয় গার্ডদের। গার্ডরা ভয়ে ভয়ে তার সামনে দাঁড়ায়।
যুবক রক্তচক্ষু নিয়ে শক্ত গলায় বলে, ‘এমআর হাসান আর এসআর আরাফের সম্পর্কে সম্পূর্ণ বায়োডাটা চাই আমার। যতদ্রুত সম্ভব সব ডিটেইলস চাই আমার। খুব শীঘ্রই বাংলাদেশে ব্যাক করবো আমি। হারি আপ!’
গার্ডরা সম্মতি দিয়ে কাজের জন্য বেড়িয়ে যায়। দেড়ি হলে তাদের কেউ আস্তো থাকবে না। গার্ডরা চলে গেলেও রাগ কমেনি তার। রাগে মাথায় রক্ত টকবক করছে। এতো রাগ কখনো উঠেনি তার।
প্যান্টের পকেটে দুই হাত গুঁজে থাইগ্লাসের সামনে দাঁড়ায় জিহান। ফোনের রিংটোন বাজতে রিসিভ করে কানে দেয় সে। অপর পাশের ব্যক্তি কিছু বলতেই বলে, ‘ডোন্ট ওরি, যতদ্রুত সম্ভব আমি বাংলাদেশে ব্যাক করবো। যারা আমার মম কে জেলে নিয়েছে তাদের কাউকে আমি ছাড়বো না।’ বলেই কল কেটে দেয় সে। মনে মনে কিছু একটা ভেবে বাঁকা হাসে সে। শেষ করে দিবে সবাইকে।
_______________
পাশাপাশি ক্যাফে বসে আছে মাহিন সুহা। মাহিনের ঠিক সামনের সিটে সুহা। গালে হাত দিয়ে থেমে থেমে কোল্ড কফিতে চুমু দিচ্ছে। প্রেমিক পুরুষের সাথে ঘুরতে এসেও যদি দেখে প্রেমিক কাজে ব্যস্ত হয়ে ফাইল ঘাটে তাহলে কার ভালো লাগে! সুহা দুই গালে হাত রেখেই বলে, ‘আপনি বরং এক কাজ করুন। আপনার এই প্রফেশন কেই বিয়ে করে ফেলুন। মাঝখান থেকে আমি আপনাদের কাবাব মে হাড্ডি না হয়।’
হাতে থাকা ফাইলের দিকে তাকিয়েই মৃদু আওয়াজে হাসে মাহিন। সুহার দিকে তাকিয়ে দেখে গালে হাত রাখার কারনে ঠোঁট গুলো ফুলে আছে। একদম কিউটের ডিব্বা লাগছে। মুচকি হেসে চেয়ারে গা এলিয়ে বলে, ‘এদের বিয়ে করে তো আর লাভ নেই আদর করা যাবে না, রাতে কোলবালিশও বানানো যাবে না। বউ তো তোমার মতো হওয়া উচিত যার টসটসে টমেটো সাইজ গাল গুলোতে টুস করে চুমু দেওয়া যায়।’ সুহা কফি মুখে দিচ্ছিলো মাহিনের এমন লাগামহীন কথায় বিষম খায়। অস্ফুটিত গলায় বলে, ‘আপনি দিন দিন অসভ্য হচ্ছেন। মুখে কিছুই আটকায় না। একদম লাগামছাড়া লোক।’
আওয়াজ করে হেসে ফেলে মাহিন। মুখে হাসি রেখেই বলে, ‘তোমার এই লজ্জা মিশ্রিত মুখখানা দেখার জন্য যদি আমাকে লাগামছাড়া হতে হয় তো আমি তা সাধরে গ্রহণ করবো!’ সুহা ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বসে আছে। লজ্জায় যেনো লাল নীল বেগুনী হওয়ার উপক্রম। মাহিন টেবিলে দুই হাত রেখে বিস্ফোরিত কন্ঠে বলে, ‘সারাদিন বকবক করা মেয়েটা এমন সামান্য কথায় লজ্জাবতী গাছের মতো লুকিয়ে যায়! ভাবা যায় এগুলা??’
সুহা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলে, ‘কি বললেন? আমি সারাদিন বকবক করি?’ মাহিনের টনক নড়লো বোধহয়। এইকথা টা বলা উচিত হয়নি। ভাগিনী এবার ক্ষেঁপে যাবে। ঠোঁট টেনে হাসার চেষ্টা করে বলে, ‘না না একদম না। তুমি সারাদিন বকবক কেনো করবে? !’
‘আমি বেশি কথা বলি তাই না? আমার কথা গুলো আপনার বকবক লাগে? ওকে ফাইন এখন থেকে আপনার সাথে কোনো কথা নেই আমার। সাময়িক ব্রেক’আপ!’ বলেই ব্যাগ হাতে নিয়ে গটগট করে বেরিয়ে যায় সুহা। মাহিম অসহায় হয়ে বিল পে করে ফাইল হাতে সুহার পিছে পিছে যাচ্ছে।
মুখ কালো করে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে সুহা। তার পাশেই মাহিন। এক হাতে মাথার পিছের চুল গুলো খানিক্ষন চুলকে বলে, ‘সুহারানী! রাগ করো কেনো? কথা বলো আমার সাথে। তুমি কথা না বললে ভালো লাগে না তো।’ সুহা মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকায়। আজ সে কথা বলবে না বলেই পণ করেছে। মাহিন রাস্তার ওপর পাশে হাওয়াই মিঠাই দেখে সেখানে গিয়ে পাঁচটি হাওয়াই মিঠাই আনে। সব গুলো সুহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, ‘হাওয়াই মিঠাই’য়ের মতো ব্যানিশ হয়ে যাক আমার সুহারানীর রাগ। তুমি না আমার না হওয়া বাবুর আম্মু? রাগ করো না প্লিজ.!!!’
মাহিনের এমন বাচ্ছামি তে ফিক করে হেসে ফেলে সুহা। সত্যি হাওয়াই মিঠাই’য়ের মতোই ব্যানিশ হয়ে গেছে সব রাগ!
চলবে..!!