অনুভবী হিয়া পর্ব-৩৮

0
1560

#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির

৩৮.

ক্লান্ত শরির নিয়ে বিকেলে বাড়ি ফিরে মাহিন। কলিং বেল বাজাতেই মিহির দরজা খুলে দেয়। অবাক হয়ে যায় মাহিন। মিহির ‘ভাই’ বলেই জড়িয়ে ধরে মাহিন কে। মাহিনও আদরে বোনকে আগলে নেয়। ড্রয়িংরুমে এসে দেখে শুভ, সুহা আর রাশেদা বসে কথা বলছে। মাহিন শুভর সাথে হাত মিলিয়ে রুমে যায় ফ্রেশ হতে।

মিহিদের এখানে আসার মূল কারণ হলো কিছু দিনের জন্য রাশেদা আর মাহিন কে তাদের বাড়ি যেতে হবে। রাশেদা প্রথমে কিছু বলেনি কারন তার জানা আছে মাহিনকে না জানিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে রেগে যাবে। মিহিরও জানে একথা তাই ভাই আসার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করছিলো।

ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িংরুমে এসে সিঙ্গেল সোফায় বসে মাহিন। মিহির উঠে রান্না ঘর থেকে কফি এনে দেয় মাহিনকে। কফি খেতে খেতে সবাই বেশ ভালোই আড্ডায় মশগুল হয়। কথার এক পর্যায়ে মাহিন জানায় সে একটা এপার্টমেন্ট কিনছে আর সেটা রাশেদার নামে নিবে। রাশেদা ছেলের এমন কথায় বেশ অবাক হয়ে যায়। খুশিতে চোখ ভিজে আসে তার। ছেলের এক গালে হাত রেখে মন ভরে দো’য়া করে রাশেদা। তারপর বলে, ‘আমার নামে কেনো মাহিন? আর কত দিন বাঁচি আল্লাহ ভালো জানে। তোর নামেই নে এতেই আমি খুশী।’

মাহিন প্রথমে রাজি হয়নি তার নামে নিতে। তারপর মিহিরের কথা বললে মিহিরও রাশেদার মতো সেম কথা বলে। অজ্ঞাতো মাহিন রাজি হয় তার নামে এপার্টমেন্ট নিতে। মাহিন এপার্টমেন্টের কিছু ছবি মিহিরকে দেখায়। বেশ ভালো পছন্দ হয় মিহিরের। খুশীও হয় সে।

তারপর বহু কষ্টে মাহিন কে রাজি করিয়ে মিহির তাদের সাথে নিয়ে যায়। সন্ধ্যার পর বের হয় তারা।
_____________

পরদিন বিকেল.
মাহিন সুহা শপিংমলের সামনে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। মাহিন দাঁড়িয়ে মোবাইল টিপছে আর সুহা চুপচাপ তারপাশে দাঁড়িয়ে। শুভ আর মিহিরের জন্য অপেক্ষা করছে দুজন। তখন হঠাৎ করে একটা মেয়ে এসে মাহিনের সামনে দাঁড়ায়। মাহিন ভ্রুঁ কুঁচকে একপলক তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে মোবাইলে রাখে। মেয়েটি শার্ট প্যান্ট পরে আছে। ভালোই স্টাইলিশ দেখে বুঝা যাচ্ছে। হাসি মুখে এক হাত মাহিনের দিকে বাড়িয়ে বলে মেয়েটি, ‘হাই, আই’ম শশী। ইউ?’

মাহিন হাত না মিলিয়ে স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দেয়, ‘মাহিন!’

সুহা চোখ বড় বড় করে তাকায় মাহিনের দিকে। তাকে এই নাম টা বলতে কি কাহিনী টাই না করলো আর এই মেয়ে নাম জিজ্ঞেস করতেই গরগর করে বলে দিলো? সুহা দুই হাত বুকে গুঁজে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে দেখছে। তখন শশী আবার বলে, ‘ওহু নাইস নেইম। ইউ নো হুয়াট? ইউ আর লুকিং সো হ্যান্ডসাম।’

মাহিন এমন কথায় বেশ অপ্রস্তুত হয়ে যায়। আড় চোখে একবার সুহা কে প্রখর করে সে। সুহা রেগে বোম হয়ে আছে ভেবেই শুকনো ঢুক গিলে। শশী আবার বলতে লাগলো, ‘লাভ এট ফাস্ট সাইড। তোমাকে প্রথম দেখেই ক্রাশ হয়েছি। আই লাইক ইউ বেবস। উইল ইউ বি মাই বয়ফ্রেন্ড?’

সুহা তাৎক্ষনাৎ মাহিনের এক বাহু ধরে শক্ত গলায় উত্তর দেয়, ‘নো, হি ইজ মাই বয়ফ্রেন্ড এন্ড ফিয়ন্সে অলসো। কিছু দিন পর আমাদের বিয়েও হবে। সো এসব ন্যা’কা’মি করে লাভ নেই।’

শশী ভ্রু কুঁচকে হেসে উত্তর দেয়, ‘সো হুয়াট? বিয়ে তো হয় নি। মাহিন বেবি ওর সাথে ব্রেক’আপ করে নাও। আই রিয়েলি লাইক ইউ, প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড।’

সুহা রেগে বলে উঠে, ‘রাস্তা ঘাটে ছ্যাঁচড়ামি যায় না মেয়ে? মাহিন আমার বয়ফ্রেন্ড, আমার জামাই হবে। দূরে থাক ওর থেকে। নয় তো তোর চুল ছি:ড়ে ন্যাড়া বানিয়ে ফেলবো হ্যা।’

দুই মেয়ের ঝগড়ায় মাহিন আহাম্মক হয়ে যায়। সুহার এক হাত ধরে দূরে নিতে চাইলে সুহা উল্টো মাহিনকে ধমকে উঠে। মানে হচ্ছে একজন কে নিয়ে দুই মেয়ের ঝগড়া। তখন শুভ আর মিহির বেরিয়ে এসে এমন কান্ড দেখে একদম হতবাক। শুভ এগিয়ে সুহাকে টেনে গাড়িতে নিয়ে বসায়। মিহিরের অবস্থা হাসতে হাসতে শেষ প্রায়। মাহিন বেচারা সুহার এমন রাগে নিজেই ভয়ে যায় যায় অবস্থা। পুরো রাস্তা সুহা রাগে ফুশ করতে করতে এসেছে। বাড়িতে ঢুকেই ডিরেক্ট নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয় সে। মিথিলা আর রাশেদা অবাক হলে মিহির সব খুলে বলে তাদের। সুহার এহেন কান্ডে হেসে ফেলে সবাই।
_________________

ডাইনিং টেবিলে বসে আছে সবাই। মিহির সুহাকে একবার ডেকে এসেছে কিন্তু সুহা সকালে যে রুমে ঢুকেছে এখনো বের হয়। পরিবারের বড়রা উপস্থিত তাই মাহিন সুহা কে আলাদা ভাবে ডাকতে যায় নি। সেটা ইচ্ছে করেই যায় নি কারণ আজ মহারানী সেই ক্ষেপেছে, আর সব রাগ মাহিনের উপর ঝাড়বে ভেবেই মাহিন আফসোস করে কেনো রিলেশনে গেলো? খাওয়া শুরু করার আগে আয়াজ মিহিরের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে, ‘সুহা এখনো আসে নি কেনো?’

মিহির প্লেটে খাবার দিতে দিতে বলে, ‘বাবা আমি ডেকেছি একবার বললো আসছে। আমি যাচ্ছি আবার।’

‘এসেছি আমি!’ শুভর চেয়ারে পাশে দাঁড়িয়ে বলে সুহা। মিথিলা বলে, ‘কত বার ডাকতে হয় সুহা? মিহু যখন ডাক দিয়েছে সাথে সাথে আসো নি কেনো?’

মিথিলার কথার গুরুত্ব না দিয়ে আয়াজের উদ্দেশ্যে বসে সুহা, ‘আব্বু, একটা ইম্পরট্যান্ট কথা আছে তোমার সাথে।’

আয়াজ খেতে খেতে উত্তর দেয়, ‘পরে কথা হবে আগে খাবার খাও।’

সুহা জেদী ভাবে বলে, ‘না এক্ষুনি।’ আয়াজ সুহার দিকে একপলক তাকিয়ে বলে, ‘বলো!’

সুহা হাল্কা শক্ত গলায় বলে, ‘কালকে বিয়ে করবো আমি।’

মাহিন তখন পানি খাচ্ছিলো, এমন কথায় সে বিষম খায়। কাশতে থাকে সে। মিহির ঠোঁট চেপে হেসে মাহিনের মাথায় হাত বুলাতে থাকে। শুভ মুখে খাবার দিতে গিয়ে থেমে যায় বোনের এহেন কথায়। মিথিলা মুখ হা করে তাকিয়ে আছে সুহার দিকে। সুহা বিব্রত হয়ে পরে। ইতস্ততবোধ করে বলে, ‘এভাবে দেখছো কেনো তোমরা?’

আয়াজ রায়হান ভ্রুঁ কুঁচকে বলে, ‘কাকে বিয়ে করবে তুমি?’

সুহার সহজ শিকারুক্ততি, ‘মাহিনকে।’

মাহিন বিস্মিত কন্ঠে বলে, ‘এই মেয়ে, পাগল হয়েছো নাকি তুমি?’

মাহিনের দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বলে সুহা, ‘কেনো বিয়ে করবেন না? নাকি রাস্তার ওই মেয়েকে পছন্দ হয়েছে? জানতাম এমনি হবে। একবার বিয়ে হোক তারপর দেখবো কে আপনাকে আমার থেকে কেড়ে নেয়।’ মাহিন মাথা হাল্কা নিচু করে এক হাতে কপাল কুঁচকায়।

শুভ ত্যাছড়া ভাবে বলে, ‘বাহ্ মেয়ে তো দেখছি বিয়ের জন্য রীতিমতো পাগল হয়ে যাচ্ছে। আব্বু পাবনায় কেবিন বুক করো। না জানি কবে কাজে লাগে।’

সুহা ভাইয়ের দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে বলে, ‘কি করবো? দেখো নাই আমি পাশে থাকতেও একজন রাস্তার এক মেয়ের সাথে কিভাবে হেলে দুলে কথা বলেছে। আমি না থাকলে যে কি করবে আল্লাহ জানে।’

মাহিন ভ্রুঁ কুঁচকে প্রশ্ন করে, ‘কে হেলে দুলে কথা বলেছে?’

‘চুপ করেন আপনার সাথে কথা বলছি না। আব্বু, কালকে আমাদের বিয়ে দিবে। অনুষ্ঠান লাগবে না। ঘরোয়া ভাবেই বিয়ে দাও শুধু।’

আয়াজ রায়হান মেয়ের এহেন কান্ডে কিছুটা লজ্জাবোধ করলেন। কি যুগ এলো মেয়েরা নিজেদের বিয়ের কথা নিজের বাবার কাছেই বলে।

‘কি আব্বু? কথা বলছো না কেনো? কালকে বিয়ে না দিলে আমি, আমি অনেক খারাপ কিছু করে ফেলবো।’ সুহা শক্ত কন্ঠে বলে উঠে। আয়াজ ‘ঠিক আছে!’ বলে খাওয়া শুরু করে। সুহা বাঁকা হেসে মাহিনের দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে খেতে বসে। মাহিনের এখনো বিস্ময়ের রেশ কাটেনি। খাওয়ার মাঝে শুভ সুহা কে নানা ভাবে ক্ষেপাচ্ছে আর সুহাও ক্ষেপে ঝগড়া করছে। পাশ থেকে মিহির সহ বাকিরা ঠোঁট টিপে হাসছে শুধু।

চলবে??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here