#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির
৩৯.
সন্ধ্যা ৭:০০.
লাল সুতি শাড়ি পরে বিছানায় বসে আছে সুহা। তাকে সাজিয়ে দিচ্ছে মিহির। বেশি ভারী মেক’আপ করাচ্ছে না। শুধু শাড়ির সাথে ম্যাচ করে হাল্কা প্রসাধনী। মিথিলা মিহিরের কাছে কিছু গয়নাগাটি দিয়ে যায়। মিহিরও আনন্দের সাথে সুহাকে সব পরিয়ে দিচ্ছে। এক পর্যায়ে সুহা বলে উঠে, ‘মিহু ভাবি?’
মিহির সাজাতে সাজাতে বলে, ‘হুম!’
‘আজকে থেকে আমিও তোমার ভাবি হবো।’ বলেই এক গাল হাসে সুহা। মিহিরও হেসে উত্তর দেয়, ‘আর আমি তোমার ননদ।’
‘হুম! আমাদের সম্পর্ক টা দেখেছো? এদিক দিয়ে তুমি আমার ভাবি আমি তোমার ননদ। আরেক দিক দিয়ে আমি তোমার ভাবি, তুমি আমার আমার ননদ। ননদ ভাবি দুজন।’
তখন শুভ দরজায় হেলান দিয়ে বলে, ‘মিহি? বিয়ে পাগলী মেয়েটাকে দেখছো? আমি সারা বাড়ি খুঁজেও পাচ্ছি না।’
সুহা বিরক্ত হয়ে বলে, ‘ভাইইই?’
হেসে ফেলে শুভ। এগিয়ে এসে সুহার গলায় ডায়ামন্টের লকেট পরিয়ে বলে, ‘কিছু দিনের জন্য ধার দিছি।’ সুহা আয়নায় দেখতে দেখতে বলে, ‘আর ফেরত পেলে তো।’
মিথিলা রুমে আসে তখন। মেয়ে কে বউ সাজে দেখে বিস্মিত চোখে তাকায়। ছলছল চোখে মেয়ের গালে হাত দিয়ে বলে, ‘মাশা’আল্লাহ!’
পাশ থেকে রাশেদা বলে উঠে, ‘ভাবি, চিন্তা করবেন না। সুহা আমার নিজের মেয়ের মতো থাকবে। আর আমার মেয়ে তো আপনাদের কাছেই।’
আরো কিছুক্ষণ কথা হলো তাদের মাঝে। আয়াজ রায়হানের ডাকে সুহা কে নিচে নেওয়া হলো। ড্রয়িংরুমে সকলে উপস্থিত। আদিল রাহুল সামির আর শান্ত। ওদের দেখে সুহা লজ্জায় লাল হয়ে যায়। ভাবা যায় কত বড় বেহায়াপনা করলো সে বিয়ের জন্য? না করেও বা কি করবে? মাহিন শুধু তার। কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।
সোফার মাঝামাঝি জায়গায় শুভ্র রঙ্গের পাঞ্জাবি পরে বসে আছে মাহিন। সুহা কে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখে চোখ আটকে যায় তার। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার সুহারানীর দিকে। আজ তার জন্য লাল শাড়ী পরে বউ সেজেছে সুহা। আনমনে মৃদু হেসে ফেলে মাহিন। পাশ থেকে শান্ত মাহিনের হাতে কুনই দিয়ে গুতা দিয়ে বলে, ‘ওয়াহ্ ব্রো, আমাদের কথাওও তো চিন্তা করতে পারতি? এভাবে একা রেখে মিঙ্গেলের দলে যোগ দিচ্ছিস। ভালো করলি কাজ টা?’
মাহিনও ফিশফিশ করে উত্তর দেয়, ‘তুই চাইলে সোজিতার কথা ফুপিকে বলতে পারি!’
মাহিনের কথায় খুক খুক করে কাশে শান্ত। পরোক্ষনে নিজেকে সামলে বলে, ‘ওই মেয়ে এখানে আসছে কেনো? আজীবন সিঙ্গেল থেকে মরবো তাও ওই লঙ্কা কে বিয়ে করবো না।’
মাহিন শান্তর কাধে চাপড় দিয়ে বলে, ‘সময় বলে দিবে।’ বিরক্তির শ্বাস ফেলে শান্ত। সোজিতা হলো শান্তর চাচাতো বোন। সোজিতা প্রচন্ড ঝগড়াটে তাই শান্ত ওকে দেখতে পারে না। বলতে গেলে অপছন্দ কিন্তু তাদের পারিবারিক ভাবে বিয়ের আলাপ হয়েছে। শান্ত বেচারা এই ব্যাপার থেকে যথা সম্ভব নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে। যেচে পরে তো আর এমন ঝগড়াটে মেয়ে জীবনে আনবে না। যদিও সোজিতা শান্ত কে পছন্দ করে।
সুহাকে মাহিনের পাশে বসানো হয়। সুহা আসতেই কাজি বিয়ে পরানো শুরু করে। মাহিন সুহার কানের কাছে ফিশ ফিশ করে বলে, ‘সুহারানী, আজকে তোমাকে অতিরিক্ত সুন্দর লাগছে।’ সুহা লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলে। গাল টুকটুকে লাল হয়ে গেছে।
বিয়ে পরানো শেষে সবাই এক সাথে দো’য়া করে একে অপরকে মিষ্টি খাওয়াই। কাজিকে যথাযথ আপ্যায়ন করে বিদায় দেয় সবাই। রাতের খাবার শেষে একে একে শুভর ফ্রেন্ডরা চলে যায়।
মিহির সুহা কে তার রুমে বসিয়ে কিছুক্ষণ গল্পগুজব করে চলে যায়। সুহার বুক ঢিপঢিপ করছে। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর মাহিন রুমে আসে। মাহিন চুপচাপ কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে যায়। মাহিন যেতেই সুহা লম্বা দম ফেলে। তার উপস্থিতি এতোক্ষণ সুহা কে বেশ অস্বস্তিতে ফেলেছিলো। সুহা উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পরনের ভাড়ি গয়না গুলো খুলে ফেলে। তখন মাহিন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বলে, ‘সুহা ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় এসো।’ বলেই বারান্দার দিকে চলে যায় মাহিন। সুহা বাধ্য মেয়ের মতো ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় গিয়ে মাহিনের পাশে বেতের সোফায় বসে।
আকাশে পূর্ন চাঁদ তার পুলকিত আলোর রেশ চারপাশে ছড়িয়ে দিয়েছে। সেই চাঁদের জ্যোৎস্না গায়ে মাখছে সদ্য বিবাহিত দুজন। দীর্ঘ নিরবতার পর সুহা বলে, ‘আপনি কি খুশী নন?’
ফুশ করে নিশ্বাস ফেলে মাহিন। তারপর আহত গলায় বলে, ‘জানো সুহা? আব্বুর ইচ্ছে ছিলো তার পছন্দের মেয়ের সাথে আমাকে বিয়ে দিবে। আমার বিয়ে তে নিজ দায়িত্বে সব পালন করবে। ঘরে নতুন বউ এনে তার হাতে বানানো চা রোজ সকালে খাবে। আজ আব্বু নেই, কিন্তু আমি আছি। আব্বুকে অনেক মিস করছি সুহা। এখন আব্বু থাকলে কত খুশী হতো জানো?’
সুহা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাহিনের দিকে। এতো দিনের সম্পর্কে মাহিনকে কখনো এতো টা ভেঙ্গে পরতে দেখেনি সুহা। মাহিন হাল্কা ভাঙ্গা গলায় বলে, ‘জানো আব্বু চলে যাবার পর অনেক বড় দায়িত্ব আমার কাধে দিয়ে গেছে। খুব কষ্টে আম্মু আর মিহিরকে সামলেছি আমি। খুব চিন্তায় ছিলাম মিহিরের ফিউচার নিয়ে। আমি জানি শুভর কাছে মিহু অনেক ভালো থাকবে।’
মাহিনের কথার মাঝে সুহা তার এক হাতে হাত রেখে আশ্বাস দিয়ে বলে, ‘চিন্তা করবেন না ভাইয়া মিহু আপুইকে অনেক ভালোবাসে।’
শান্ত হয় মাহিন। নিশ্বাস ফেলে নিজেকে স্বাভাবিক করে সে। তারপর শান্ত গলায় বলে, ‘আই নো!’
সুহা চুপচাপ মাহিনের কাধে মাথা রাখে। নিরবতা নেমে আসে দুজনের মাঝে। কিছুসময় পর মাহিন বলে উঠে, ‘সুহা?’
সুহা কাধে মাথা রাখা অবস্থাতেই ছোট করে উত্তর দেয়, ‘হুম!’
মায়াবী কন্ঠে বলে মাহিন, ‘ভালোবাসো?’
সুহা লজ্জা পায় কিছুটা। কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ থাকে। মাহিন নিশব্দে হেসে ফেলে। তখন সুহা মাথা তুলে বলে উঠে, ‘আজকে একটা গান শুনাবেন?’
মাহিন নির্বিকার ভাবে বলে, ‘আমি গান পারি না।’
সুহা চপাট রাগ দেখিয়ে বলে, ‘মিথ্যে বলেন কেনো? আমি জানি আপনার গানের গলা অনেক সুন্দর। আমাকে একবারো গান শুনাননি। আজ শুনাতেই হবে।’
অবাক চোখে সুহার দিকে তাকিয়ে বলে মাহিন, ‘তুমি কি করে জানো?’ সুহা বলে, ‘মিহু ভাবি বলেছে। শুনাবেন?’
মাহিন হেসে বলে, ‘আচ্ছা!’ সুহা উঠে রুম থেকে গিটার নিয়ে আসে। মাহিন গিটার হাতে নিয়ে মৃদু সুর তুলতে থাকে। সুহার দিকে তাকিয়ে গাইতে শুরু করে…
#অনুভবী_হিয়া তোমারেই শিহরণ
জোনাকী সন্ধিয়ার সেমেকা এই মন
উজাগরি নিশাত তোমারে আগমন
জোনাকী আকাশত উমলে এই মন
অনুভবী হিয়াত তোমারেই শিহরণ
জোনাকী সন্ধিয়ার সেমেকা এই মন
উজাগৰি নিশাত তোমারে আগমন
জোনাকী আকাশত উমলে এই মন
শরতর প্ৰতিটো সন্ধিয়াত
তোমারেই নাচোন
তোমাৰ হাঁহিতেই জীপাল
এহেজার সপোন
তুমি শরতর অচিনাকী সুর
বিয়পি যাই বহু দূর সুদূর
তোমারেই নাচোন
এহেজার সপোন
তোমারেই নাচোন
এহেজার সপোন
দশোদিশে বিয়পি উভতিবা
হিয়াতে থিতাপি ল’বলৈ
শুনাচোন রোবা কিছু সময়
আছে বহু কথা ক’বলৈ
কিছু কথা প্ৰেমর ভাষার
সাঁচি থোৱা বহু আগরেই পরা
অনুমতি হ’লে তোমার
উতি যাবো মোৰ মনরে পরা! ❤️
পুরো গান শেষ করে চমৎকার হাসে মাহিন। সুহাও প্রতিউত্তরে মুচকি হাসে। তারপর মাহিনের উদ্দেশ্যে ফিচেল গলায় বলে, ‘আপনার কন্ঠ অনেক সুন্দর কিন্তু..’
মাহিন ভ্রুঁ কুঁচকে বলে, ‘কিন্তু কি?’
সুহা বিব্রত হয়ে বলে, ‘গানের আগা মাথা কিছুই বুঝলাম না।’ বিস্মিত হয়ে তাকায় মাহিন। তারপর বলে, ‘মানে কি? এতোক্ষণ তাহলে কাকে ডেডিকেটেড করে গাইলাম আমি?’
সুহা অসহায় চোখে তাকিয়ে বোকা হাসি দেয়। মাহিন মুখ দিয়ে ‘চ’ উচ্চারণ করে বলে, ‘ঘুমিয়ে যাও। অনেক রাত হয়েছে।’
ভ্রুঁ উচিয়ে সুহা বলে উঠে, ‘মানে আজকে রাতেও ঘুমাতে বলছেন? কই একটু আড্ডা দিবো তা না।’
মাহিন সুহার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে, ‘তাহলে??’ মাহিনের চাহনীতে সুহা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। তড়িঘড়ি করে দাঁড়িয়ে বলে উঠে, ‘আমি আসলেই ঘুমাতে যাই। গুড নাইট!’
সুহা রুমে এসে কাভার্ড থেকে থ্রি-পিস বের করে ওয়াশরুমে যাবে এমন সময় মাহিন সুহাকে কোলে তুলে নেয়। তারপর আর জানি না। 🥴
চলবে??