#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির
৪৩. [অন্তিম পর্ব]
মানুষের জীবন চলমানতাবিহীন রেলগাড়ির মতো খুব দ্রুত অতিবাহিত হয়। থেমে থাকে না কিছু। যত সব গ্লানিদায়ক পীড়া পিছনে ফেলে, রঙিন আলোতে সুখ খুজতে সামনে আগাতে হয়। কেটে যায় আরো একটি মাস। সাইম মিটমিট পায়ে হাটা শিখছে বৈকি। সুহা কোমায় যাবার পর থেকে আয়াজ আর মিথিলা অনেক ভেঙ্গে পরে। দুজনই অসুস্থতায় ভোগাছে। মিহির একা একদম সাংসারিক মেয়ের মতো পুরো সংসার সামলাচ্ছে। পাশাপাশি তার ভাই মাহিনের খেয়াল রাখছে। মাহিন সেই ছন্নছাড়া জীবন কাটাচ্ছে তার প্রেয়সী কে ছাড়া।
সন্ধ্যায় বসার রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো আয়াজ, মিথিলা, শুভ। সাইমকে নিয়ে খেলছে দাদা দাদি। এসব দেখে শুভ পরিতৃপ্তির হাসি হাসে। তবুও বোনের শূন্যতা বড্ড কষ্ট দেয় শুভকে। সুহা থাকলে পুরো বাড়ি মাথায় উঠিয়ে রাখতো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুভ।
মিহির সিঙ্গারা, চা’য়ের কাপ হাতে নিয়ে আসে রান্না ঘর থেকে। টি-টেবিলের উপর সব রেখে এক কাপ চা হাতে নিয়ে বাড়িয়ে বলে, ‘বাবা চা নেন।’
আয়াজ হাসতে হাসতে চা কাপ হাতে নিয়ে বলে, ‘বুঝেছ মিহির, সাইম কিন্তু অনেক জেদী হয়েছে।’ মিহির শুভর দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বলে, ‘বাপ যেমন তেমনি তো হবে তাই না”
আয়াজ রায়হান শুভকে তাচ্ছিল্য করে বলে, ‘ঠিক বলছো মিহু, ত্যাড়া বাপের জেদী পোলা হাহা!’
শুভ ত্যাছড়া ভাবে বলে উঠে, ‘আমিও আমার বাপের মতো হইছি। কি আম্মু?’ শেষের কথাটা মিথিলার উদ্দেশ্যে বলে শুভ। মিথিলা ঠোট বাকিয়ে বলে, ‘তা আর বলতে।’
মিহির মিথিলার পাশে বসে উচ্চস্বরে হেসে ফেলে। আয়াজ রায়হান আফসোস করে, ‘হায়,,, দাদুভাই আমি অনেক ভালো। বুঝেছো?’
শুভ কিছু বলতে যাবে তার আগেই মোবাইলে রিংটোন বেজে উঠে। টেবিলের কর্নার থেকে মোবাইল নিয়ে দেখে হস্পিটাল থেকে কল আসছে। ধক করে উঠে শুভর কলিজা। তাৎক্ষনাৎ মাথায় আসে সুহা ঠিক আছে তো? সাতপাঁচ না ভেবে তড়িঘড়ি করে কল রিসিভ করে বলে উঠে, ‘হ্যালো? হ্যালো রিয়াজ সুহা ঠিক আছে তো?’
শুভর অস্থির কন্ঠে অবাক হয়ে তাকায় সবাই। একরাশ ভয় এসে হানা দেয় তাদের সবার মনে। রিয়াজ শুভর ভার্সিটির ফ্রেন্ড। আপাতত সুহার চিকিৎসা রিয়াজই কন্টিনিউ করছে। মোবাইলের অপর পাশ থেকে রিয়াজ গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে, ‘এজ আর্লি এজ পসিবল, হস্পিটালে আয় সবাই।’
শুভ আর ভেবে পায় না। ভরাট কন্ঠে বলে উঠে, ‘সুহা ঠিক আছে রিয়াজ?’
রিয়াজ গম্ভীর কন্ঠে বলে, ‘তোরা হাসপালে আয় তাড়াতাড়ি।’ বলেই কল কেটে দেয়। উঠে দাঁড়ায় শুভ। মিহিরও বসা থেকে উঠে লাল লাল চোখে কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলে, ‘শুভ সুহা ঠিক আছে??’
শুকনো ঢুক গিলে বলে শুভ, ‘রিয়াজ হাসপাতালে যেতে বলছে তাড়াতাড়ি।’
আর এক মুহূর্তও দেড়ি করে না কেউ। বেরিয়ে পরে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।
হাসপাতালে যাবার রাস্তায় মিহির মাহিনকে কল দিয়ে জানিয়ে দেয়। মাহিন তার ডিপার্টমেন্টে ছিলো, সেখানে এক মুহূর্তও দেড়ি না করে বেরিয়ে যায় হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। ভয়ে তার হাত পা কাপছে। হার্টবিট দ্রুত গতিতে চলছে।
হাসপালে আসার পর সবাই তাড়াতাড়ি ডক্টরের কাছে যায়। শুভ এগিয়ে রিয়াজকে জিজ্ঞেস করে, ‘সুহার কি অবস্থা রিয়াজ?’
মিহির কান্না ভাঙ্গা গলায় বলে, ‘সুহা ঠিক আছে তো ভাইয়া?’ মিথিলা মুখে শাড়ির আচল দিয়ে কেদে ফেলে। আয়াজ ভয়ার্ত গলায় বলে, ‘বলো সুহা কোথায়?’
রিয়াজ কিছুক্ষণ গম্ভীর চেহারায় তাকিয়ে থাকে সবার দিকে। কিন্তু বেশিক্ষণ গম্ভীর ভাব টা রাখতে পারে নি। ফিক করে হেসে ফেলে। এমন একটা পরিস্থিতিতে রিয়াজ হাসায় সবাই অবাক হয়। শুভ হাল্কা রাগি গলায় বলে, ‘কিরে হাসছিস কেন?’
রিয়াজ হাসি থামিয়ে বলে, ‘ভাই, কেবিনে যা, সুহা কখন থেকে তোদের অপেক্ষায় আছে।’
শুভ অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে রিয়াজের দিকে কারণ বুঝতে কিছুটা বেগ পাচ্ছে তার।
‘অপেক্ষা করছে মানে?’ বুঝতে না পেরে বলে মিথিলা। রিয়াজ পরিতৃপ্তির হাসি দিয়ে বলে, ‘আন্টি সুহার জ্ঞান ফিরেছে কিছুক্ষণ আগে। তাই আপনাদের এখানে আসতে বলা। মাফ করবেন এভাবে ডাকার জন্য। আসলে একটু সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম।’ শেষের কথা টা আহত গলায় বলে রিয়াজ। মিহির রিয়াজের কথা শুনার পরেই দেড়ি না করে কেবিনের দিকে দৌড়ে চলে যায়। মিহিরের পিছনে বাকি সবাই এগিয়ে যায় কেবিনে।
হাল্কা আওয়াজে ধাক্কা দিয়ে কেবিনের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে মিহির। তারপর শুভ, মিথিলা আর আয়াজ। দরজা খুলার আওয়াজে ঘাড় হাল্কা কাত করে তাকায় সুহা। সবাই কে দেখে ঠোট টেনে মলিন একটা হাসি দেয়। নার্স সুহার পিছনে বালিশ দিয়ে উঠায়। তারপর সবাই কে উত্তেজিত না হতে বলে বেরিয়ে যায়। মিহির মিথিলা কেঁদে ফেলে। এগিয়ে এসে সুহার পাশে বসে।
সবার সাথেই সুহার কুষলবিনীময় হয়। কিন্তু চোখ তার অন্য একজন কে খুঁজছে। সবাই কে যতটা না খুশি হয় তার থেকে দিগুণ অবাক হয় সাইম কে দেখে। ভাবতেই অবাক হচ্ছে তার কারন এতো দিন সে কোমায় ছিলো? সাইমকে দেখে মন ভালো হয়ে যায়। অসুস্থ থাকায় সাইমকে কোলে নিতে পারেনি। শুভ সাইমকে এগিয়ে দিলে সুহা সাইমের কপালে চুমু খায়। তখন কেবিনে তড়িঘড়ি করে ঢুকে মাহিন। সবার চোখ এক সাথে দরজায় চলে যায়।
চুল এলোমেলো, উষ্কখুষ্ক চেহারা, মলিন চোখজোড়া, গলার টাই ঢিলে করে রাখা মাহিনকে দেখে সুহার বুকটা ধক করে উঠে। সেই পরিপাটি মাহিনের আজ এই অবস্থা। মাহিন এক দৃষ্টিতে সুহার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর সবাই তাদের দুজনকে স্পেস দিয়ে বেরিয়ে যায়। মাহিন ঠায় আগের জায়গাই দাঁড়িয়ে। বুঝতে পেরে সুহা এক হাতের ইশারায় তাকে কাছে ডাকে। মাহিন এগিয়ে এসে সুহার পাশে বসে। সুহা এক হাত বাড়িয়ে দিতেই মাহিন এগিয়ে সুহাকে ঝাপটে ধরে কেদে ফেলে। সুহা এক হাতে মাহিনকে আগলে নেয়। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে সুনার তারপরেও সে বলে, ‘মিঃ হাল্লুক?’
মাহিন চোখ তুলে সুহার দিকে তাকায়। তার চোখ লাল হয়ে আছে। আহর্নিশে জলের রেশ চিকচিক করছে। সুহা এক হাতে মাহিনের চোখের পানি মুছে বলে, ‘আমি এখন সুস্থ আছি, আপনাকে জ্বালাতে আবার আসছি মিঃ হাল্লুক ভাল্লুক।’
সুহার এমন কথায় হেসে ফেলে মাহিন। গভীর ভাবে সুহার উষ্ঠধয়ে চুমু খায় একটা।
_______________
তিন বছর পর.
বিকেল টাইমে সুহা চেয়ারে হেলান দিয়ে লবন মরিচ দিয়ে কাচা আম খাচ্ছে। তার পাশে চেয়ারে বসে মিহির ছুড়ি দিয়ে কাচা আম টুকরো করেছে আর নিজেও খাচ্ছে। সুয়িমিং পুলে সাইমকে সাঁতার শিখাচ্ছে মাহিন শুভ। তিন জন বেশ প্রফুল্লিত মনে খেলছে পানি তে। তাদের দিকে তাকিয়ে সুহা বলে উঠে, ‘কে বলবে এখানে শুধু সাইম একা বাচ্চা ছেলে।’
মিহির হেসে উত্তর দেয়, ‘দুইজনই দিন দিন বাচ্চা হয়ে যাচ্ছে। কিছু দিন পর তো আরো এক জন আসবে তখন যে এরা কি করে আল্লাহ’ই ভালো জানে।’
সুহা কিছুটা লজ্জা পায়। ঠোটে ঠোট চেপে অন্য দিকে তাকায়। মিহির আড় চোখে খেয়াল করে তা। সুহার প্রেগন্যান্সির আজ সাত মাস প্রায়। এখন আগে থেকে বেশ গুলুমুলু হয়ে গেছে সুহা। প্রেগন্যান্সির খবর পাওয়ার পর থেকেই সুহার লজ্জা পাওয়া বেড়ে গেছে। মিহির তো ইচ্ছে করে মাঝে মাঝে সুহা কে লজ্জায় ফেলতো। ভেবেই সে নিজে হেসে ফেলে সুহার লজ্জা মাখা মুখশ্রী দেখে। অতঃপর একটা আমাকে কুচি সুহার দিকে দিয়ে বলে, ‘লজ্জা পেতে হবে না গো লজ্জাবতী। এই নাও খাও।’ হেসে ফেলে সুহা।
তখন দুজনের উপর পানির ছিটা এসে পরে। হঠাৎ এমন হওয়ায় মিহির চেঁচিয়ে উঠায় শুভ হেসে ফেলে। সুহা দাত কিড়মিড় করে বলে, ‘সমস্যা কি হ্যা? নিজেরা খেলছো ত আমাদের ভিজাচ্ছো কেন?’
‘আমরা কিছু করি নাই। উপর থেকে পরছে।’
সুহা ভেংচি দিয়ে বলে, ‘হ্যা হাওয়ার উপর আসছে।’ মিহির এবার হাল্কা রাগি গলায় বলে, ‘সাইমের ঠান্ডা লাগবে, উঠে এসো তোমরা।’
মাহিন সাইমকে পুলের উপরে তুলে বলে, ‘মামাহ্ আজ খেলা শেষ।’ সাইমকে ছোট ছোট দুধের দাত বের করে হেসে বলে, ‘পরে আবার খেলবো মামা।’
তখন হঠাৎ সুহা পেটে হাত দিয়ে হাল্কা আওয়াজে আর্তনাদ করে উঠে। মাহিন শুভ দ্রুত পানি থেকে উঠে সুহার কাছে এসে বলে, ‘কি হয়েছে?’
মিহির হেসে চেয়ারে হেলান দিয়ে বলে,
‘বেবি কিক দিয়েছে!’
~সমাপ্ত~
[জানি শেষ টা জগাখিচুড়ি হয়ে গেছে 😪
এটা আমার লিখা প্রথম গল্প ছিলো তাই সব টাই অগোছালো হয়েছে। পরবর্তীতে ভালো কিছু আনার চেষ্টা করবো। কেমন হয়েছে তা জানাবেন ছোট্ট একটা রিভিউ দিয়ে! 😶❤️]