পূর্ণময়ীর বিসর্জন পর্ব-১৩

0
1722

#পূর্ণময়ীর_বিসর্জন
#পর্বঃ১৩
#মৌমি_দত্ত

এদিকে এই অবস্থা অন্যদিকে লন্ডনে,
পূর্ণর বাসার কলিং বেল বাজালো রায়ান। পেছনেই দাঁড়িয়ে আছে হেনরি। হেনরির বাসাতেই থাকছে রায়ান। হেনরি কোথাও তাকে থাকতেই দেয়নি। এসে মাত্র কাজে লেগে পড়েছে রায়ান। এক গ্লাস জলও খায়নি, একমুঠো সময়ও ব্যয় করেনি। দরজা খুললো মিসেস নিয়াশা, পূর্ণর মা।

– জ্বী! কাকে চায়?

রায়ান মৃদু হেসে বললো,

– মিস্টার আবির বাসায় আছেন?

মিসেস নিয়াশা হাসি মুখে মাথা নাড়িয়ে ভেতরে আসতে অনুরোধ করলেন রায়ানকে। রায়ানের পিছু পিছু হেনরিকে ঢুকতে দেখে অবাক হলেও সৌজন্যমূলক হাসলো নিয়াশা।

– হ্যালো হেনরি! কেমন আছো?

হেনরি তাচ্ছিল্য ভরে হাসলো। তা দেখে নিয়াশার ভ্রু কুঁচকে এলো। বাদল আর হিয়াও নিজেদের রুম থেকে বের হয়ে এলো। নিয়াশা গলার স্বর চড়িয়ে ডাকলো আবিরকে।

– আবির! কেও একজন এসেছে তোমার খোঁজে।

আবির টিশার্টের হাতা গুঁজতে গুঁজতে নেমে এলো ডুপ্লেক্স বাড়িটার সিড়ি বেয়ে। নিচে এসে হেনরির সাথে অজানা মানুষ দেখে ভ্রু কুঁচকে এলো তার। নিজেও সৌজন্যের খাতিরে বললো,

– হ্যালো হেনরি? কেমন আছো? অনেকদিন হয় আসো না বাসায়।

হেনরি তাচ্ছিল্য হেসে বললো,

– পূর্ণ ছিলো তাই আসতাম। পূর্ণ নেই তাই আসিনা।

পূর্ণর কথা উঠতেই বাদল আর হিয়ার ভ্রু কুঁচকে এলো। নিয়াশার মুখে অসহায়ত্ব ফুঁটে উঠলো। হেনরির থেকে একটু দূরেই দাঁড়িয়ে থাকা আবির একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। তখনই রায়ান এগিয়ে এলো আবিরের কাছে।

– আপনার সব সহায় সম্পত্তি মোট কতো অংকের ডলারের হবে?

আবির সহ উপস্থিত সকলে চমকালো, হেনরি ছাড়া। আবির বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে বললো,

– আপনি কে ইয়াং ম্যান? আপনাকে চিনলাম না।

বাদলও শানাইয়ের পোঁ সেজে এগিয়ে এসে বললো,

– আমার দাদাবাবুর কতো মূল্যের সম্পত্তি তা তোমার জেনে কি হবে?

রায়ান দ্রুত গতিতে চড় বসালো বাদলের গালে। বাদল তাল সামলাতে না পেরে কয়েক কদম পিছিয়ে পড়ে যেতে গেলো হিয়া ধরে নিলো স্বামীকে। চিৎকার করে বললো,

– বাস্টার্ড! সাহস কেমনে হয় আমার স্বামীকে চড় মারার?

রায়ান দ্বিগুন জোড়ে চেঁচিয়ে বললো,

– আপনার সাহস কিভাবে হয় সামান্য কিছু সম্পত্তির লোভে পূর্ণর নামে তার বাবা মায়ের মন বিষিয়ে দেওয়ার?

আবির আর নিয়াশা চমকে তাকালো রায়ানের দিকে। হিয়ার চোখে মুখে ভয় এসে জড়ো হলো। রায়ান আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো,

– আল্লাহ বেস্ট। তাই সে জানে কার জন্য কি ভালো।

এরপর নিয়াশার দিকে তাকিয়ে রায়ান দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

– ভাগ্যিস আল্লাহ আপনাদের সন্তানসুখ দেননি। পূর্ণকে এডপ্ট তো করেছিলেন। ভালো রাখতে পেরেছেন?

নিয়াশার গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো নোনাজল। ধুপ করে পিছনে থাকা সোফাতে বসে পড়লো জড়োমানবীর মতো। আবির জোড় গলায় বললো,

– কে আপনি?

রায়ান নিজের কলার ঠিক করতে করতে বললো,

– পূর্ণর হাজবেন্ড। আর বিলিভ মি আপনাদের মতো নোংরা না আমি। পূর্ণকে ভালো রাখবো।

আবির অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে নিলো। রায়ান এগিয়ে গেলো বাদলের দিকে। হিয়া আর বাদল পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। রায়ান তখনই বললো,

– মিস্টারের আবিরের সম্পত্তি পাওয়ার লোভে পূর্ণর নামে প্রতিদিন বিষিয়ে তুলেছিলেন তাদের। রাইট? এখন কি হবে? আমার সম্পত্তির মূল্য আর পরিমাণ মিস্টার আবিরের থেকে কমপক্ষে ৮/১০ গুন বেশি। ওগুলো সব পূর্ণ পাবে। ভালো না মিস্টার বাদল?

মিস্টার বাদল শকটা হজম করতে না পেরে মিউট অপশন মেনে নিলেও হিয়া যেন শক সহ্য করতে পারলো না। চিৎকার করে বলে উঠলো,

– নায়ায়ায়ায়ায়া! এটা হতে পারে না।

রায়ান আর হেনরি তাচ্ছিল্য ভরে হেসে উঠলো নিজ নিজ জায়গায় দাঁড়িয়ে। আবির আর নিয়াশা অবাক হয়ে তাকালো হিয়ার দিকে। তার মানে সত্যিই কি তারা চরম রকমের পাপ করে ফেলেছে বাদল আর হিয়ার দেওয়া কুমন্ত্রণায়? রায়ান আবিরের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,

– আরো অপমান করার ইচ্ছে নিয়ে আসলেও আপনাদের দেখেই ঘৃণায় গা জ্বলছে আমার। পূর্ণর যাবতীয় ডকুমেন্টস, মেডিকেল সার্টিফিকেটস আর যতো প্রয়োজনীয় জিনিস আছে। সব চাই আমি। সব এক্ষুনি চাই।

হিয়া কাঁদো কাঁদো মুখ করে একরাশ রাগ নিয়ে ধুপধাপ পা ফেলে ছুটলো পূর্ণর ঘরে সব প্যাক করতে। বাদলের এতোক্ষনে হুশ ফিরলো। নাটক করে বললো,

– আমাদের পূর্ণ মা কোথায়? ওকে নিশ্চয় আপনি আটকে রেখেছেন। ফিরিয়ে দিন ওকে।
রায়ান তাচ্ছিল্য ভরে হেসে এগিয়ে গেলো বাদলের কাছে। হাতের যথাযোগ্য ব্যবহার করে আবারও আরেকটা চড় বসালো বাদলের অন্য গালে। হেনরি হেসে উঠলেন। বাদল ধুপ করে মেঝেতেই পড়ে গেলো টাল সামাল দিতে না পেরে। হিয়া এসে একটা বিশাল লাগেজ ধরিয়ে দিলো রায়ানের হাতে। এরপর নিজের স্বামীর কাছে ছুটে গিয়ে বললো,

– বেরিয়ে যান এক্ষুনি আমাদের বাসা থেকে।

রায়ান লাগেজ নিয়ে হেনরির সাথে বের হয়েই যাচ্ছিলো। তখনই আবির বলে উঠলো,

– আমার মেয়েটা ভালো আছে তো?

রায়ান থেমে গেলেও পিছু ফিরে তাকালো না। একরাশ বিরক্তি নিয়ে বললো,

– ভুলে যান ও আপনাদের মেয়ে ছিলো। আপনারা ওর কাছে মৃত আজ থেকে।
রায়ান বের হয়ে এলো সেখান থেকে হেনরিকে নিয়ে। আসার আগে কানে ভেসে এলো নিয়াশার কান্নার আওয়াজ। কিন্তু তাদের পাপ তো এতোটাই তুচ্ছ না যে সামান্য কান্নায় সব ঠিক হয়ে যাবে।

হেনরি আর রায়ান হাঁটতে হাঁটতে চলে এলো হেনরির ডুপ্লেক্স বাড়িটিতে। লিভিং রুমে বসে রইলো দু’জন হাতে ওয়াইনের গ্লাস হাতে। লন্ডন শহরে এখন মধ্যরাত সবে। বাংলাদেশে সকাল ৮ টা । বাংলাদেশ থেকে লন্ডনে আসতে ২২ ঘন্টা পার হয়ে গেছে। নিঃসন্দেহে পৃথিবীর ওপারে বাংলাদেশে নতুন একটা সকাল হয়ে গেছে। হেনরি হাসি মুখে বললো,

– অসাধারণ কাজ করেছো রায়ান। তবে তুমি নিশ্চয় ক্লান্ত। রেস্ট নাও। কয়েকটা দিন ভালো সময় কাটবে।

রায়ান এতোক্ষন ওয়াইনের গ্লাসের দিকে তাকিয়ে চিন্তামগ্ন হয়ে ছিলো পূর্ণকে নিয়ে। হেনরির কথায় মৃদু হেসে গ্লাসে বাকি থাকা ওয়াইন গলায় ঢেলে বললো,

– সকালেই একটা ফ্লাইট আছে। তাতে করেই ফিরে যাবো হেনরি।

হেনরি অবাক হলো। বিষ্ময় নিয়ে বললো,

– তুমি কি যথেষ্ট সময় নিয়ে আসোনি?

রায়ান মৃদু হাসলো আর বললো,

– একটা নিষ্পাপ মেয়ে নিঃসন্দেহে আমাকে নিয়ে কান্না করছে। পূর্ণ আমাকে ছাড়া থাকতে পারেনা। যদিও বাসায় বলে এসছি ৭ দিন থাকবো। কিন্তু দ্রুত ফিরে গিয়ে ওকে চমকে দিতে চাই।

হেনরি মিষ্টি করে হেসে বললেন,

– তাহলে রেস্ট নাও।খেয়েছো কিছু?

রায়ান সম্মতিসূচক মাথা নাড়ালো। হেনরি তাকে রুম দেখিয়ে দিলো। পূর্ণর আর নিজের লাগেজ নিয়ে রায়ান সেই রুমে ঢুকলো। মোবাইল হাতে নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ এ মেসেজ করলো পূর্ণর নাম্বারে। কিন্তু পূর্ণকে অনলাইন দেখাচ্ছে না। রায়ান ভেবে নিলো পূর্ণ ঘুম। তাই মুচকি হেসে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here