রহস্যময় সারপ্রাইজ পর্ব-৮

0
777

#রহস্যময়_সারপ্রাইজ
আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা
#পর্ব-৮

নিকষ কালো চিরকুটের মাঝে থাকা লেখাটার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে নিতিন। সে বুঝার চেষ্টা করছে এই সংখ্যাটার মাধ্যমে খুনী কী বার্তা পাঠিয়েছে তাদের কাছে । তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অধরা রীতিমতো খাতা কলম নিয়ে হিসেবে কষতে লেগে গেছে। আগের নিয়মে অংক কষছে কিন্তু কোন ফলাফল পাচ্ছে না। বারবার কাটা ছেঁড়া করছে। নিতিন ও একধ্যানে ভেবে যাচ্ছে। এই মুহুর্তে তারা আছে মিরপুর থানায়, অধরার কেবিনে। লাশ ফরেনসিক ল্যাবে পাঠিয়ে দিয়ে থানায় ফিরে এসেছে বেশ কিছু সময় আগে । এসেই দুজনে ভাবনায় লেগে গেছে।

প্রভাত মির্জা,তিহানা জাহানের নামকে অংকের ভাষায় লিখেছে তাও অধরার অংক কিছুতেই মিলছে না। এরপর তুরাগ,স্বরূপা,শিলা,অভিলাষ, প্রতিভা সবার নাম দিয়ে চেষ্টা করলো। কিন্তু এবারো উত্তরটা মিললো না। খুন,গুম,অপহরণ এই তিনটা শব্দ হুট করে মাথায় আসতেই অধরার মাথায় রক্সির নামটা খেলে গেলো। রক্সি ও তো নিখোঁজ হয়েছে। রক্সির ডেডবডি পাওয়া গেলো না কেনো! রক্সি প্রতিভার প্রিয় বিড়াল ছিলো। খুনির সাথে প্রতিভার শত্রুতা আছে সে হিসেবে প্রতিভার প্রিয় জিনিসকে মারতে পারে। কোথাও নেক্সট টার্গেট রক্সি নয় তো!
এমন ভাবনা মনে আসতেই অধরা খাতায় বড় বড় অক্ষরে লিখল,
” R O C K S Y”
লেখার পর ইংরেজি বর্ণগুলোকে গণিতে কনভার্ট করতে লাগলো। কনভার্ট করে একবার চোখ বুলাল,
“R O C K S Y
১৮ ১৫ ৩ ১১ ১৯ ২৫ ”
অধরার কাছে সংখ্যাটা কেমন চেনা চেনা লাগল। এমন একটা সংখ্যা সে চিরকুটে দেখেছে বলে মনে হলো তার। পুরোপুরো নিশ্চিত হতে চিরকুটটা নিয়ে একবার মিলিয়ে নেবার প্রয়োজন বোধ করল। কাঙ্ক্ষিত চিরকুট তখনো নিতিনের হাতে ধরা। তা দেখে অধরা বলল,
“মি.নিতিন সেকেন্ড দশেকের জন্য চিরকুটটা দেয়া যাবে? ”
অধরার কথায় নিতিনের ঘোর কাটল। সে চিরকুটটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
“ইয়াহ,সিওর। ”

চিরকুট হাতে নিয়ে তাতে আরেকবার চোখ বুলাতেই অধরার চোখে মুখে খুশির আভা দেখা গেল। তার কষা অংকের ফলাফল আর চিরকুটের সংখ্যাটা মিলে গেছে হুবহু। তারমানে চিরকুটের থাকা ‘১৮১৫৩১১১৯২৫’ সংখ্যাটার মানে হচ্ছে রক্সি। তার সন্দেহই ঠিক। পরবর্তী শিকার রক্সি! অধরা আনমনে বলল,
” নেক্সট টার্গেট রক্সি।”

অধরার কথাটা কানে যেতে নিতিন ভ্রু কুঁচকে বলল,
“কিভাবে বুঝলেন?”

অধরা তার হাতে থাকা খাতা আর চিরকুটটা নিতিনের দিকে বাড়িয়ে দিল। নিতিন খাতা এবং চিরকুট হাতে নিয়ে তাতে একবার চোখ বুলাল। তারপর স্বভাবিক ভঙ্গিতে খাতা এবং চিরকুট টেবিলের উপর রেখে দিল। চোখে মুখে হাসির রেখা টেনে বলল,
“আপনার বুদ্ধিমত্তা চমৎকার, মিস অধরা। ইমপ্রেসিভ!”

নিতিনের কথা অধরা শুনল কি শুনল না বুঝা গেলো না। কারণ নিতিনের কথায় তার ভাবভঙ্গীর বিন্দু মাত্র পরিবর্তন হয়নি। সে এখনো কিছু একটা নিয়ে গভীর ভাবনায় আছে। নিতিন অধরার চিন্তিত চেহারা দেখে বেশ শব্দ করেই হাসল। নিতিনের হাসির শব্দে অধরা ভাবভঙ্গির পরিবর্তন হল। সে নিতিনের দিকে তাকিয়ে দেখল হাসির শব্দটা নিতিনের গলা থেকেই আসছে। অধরা সেকেন্ড দশেক সময় নিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো এখানে আদৌ হাসার মতো কিছু হয়েছে কি! সে কি হাস্যকর কিছু করেছে? ভাবনা শেষে নেতিবাচক উত্তর আসল। অধরা ভ্রু কুঁচকে বলল,
“আপনি হাসছেন কেনো! এখানে হাসার মতো কিছু হয়েছে কি!”

নিতিন আবারো হাসল। এবার আর তার হাসির শব্দ হলো না। যাকে বলে মুচকি হাসি কিংবা শব্দহীন হাসি। নিতিন মন মতানো হাসি থামিয়ে বলল,
” এখানে হাসার মতো কিছু না হলেও আমি হাসার মতো কাজ পেয়েছি বলেই হাসছি। ”
“তা আপনার হাসির কারণ জানতে পারি? কী কাজ পেয়েছেন যে হাসছেন?”

প্রশ্নবিদ্ধ চাহনি দিয়ে প্রশ্ন করলো অধর। নিতিন বলল,
“প্রথমত, খুনীর কান্ড দেখে হাসছি। খুনী একটা উদ্দেশ্য নিয়ে লাশের সাথে চিরকুট পাঠিয়েছে। তার উদ্দেশ্য বুঝে যাওয়ায় আমার মজা লাগছে তাই হাসছি। দ্বিতীয়ত, খুনী যে উদ্দেশ্যে চিরকুট পাঠিয়েছে সেই উদ্দেশ্য আপনি পূরণ করতে শুরু করেছেন দেখে আমার আরো মজা লাগছে। ফলে হাসির মাত্রাটাও দিগুন হয়েছে।”

বলে আবারো হাসল নিতিন। অধরা ভ্রু কুঁচকে বলল,
” আপনি কী বলছেন আমি বুঝতে পারছিনা। বুঝিয়ে বলবেন কি?”

নিতিন হাসি থামিয়ে বলল,
” অভিলাষের লাশের সাথে যে চিরকুট পাওয়া গেছে তা দ্বারা খুনী বুঝাতে চেয়েছে যে পরবর্তীতে তারা তুরাগকে খুন করবে। শুধু তুরাগের কথা বলায় আপনারা ভেবে নিয়েছেন সত্যিই পরবর্তীতে তুরাগ খুন হবে। তাই তুরাগের নিরপত্তার ব্যবস্থা করতে লেগে গেলেন। যদিও তা সফল হয়নি। খুনী তার আগেই তুরাগকে কিডন্যাপ করে তুরাগের চ্যাপ্টার ক্লোজড করে ফেলেছে। কিডন্যাপ শুধু তুরাগকে নয় তার সাথে তিনজনকেও করেছে। অথচ খুনী চিরকুট শুধু তুরাগকে টার্গেট করার কথা বলেছে। এর মানে খুনী যা আমাদের বার্তা দেয় তা তো করেই এবং তার সাথেও বাড়তি কিছু ও করে। তাছাড়া আমি নিশ্চিত, খুনী আমাদের মনোযোগ অন্যদিকে নেয়ার জন্যই এই চিরকুট গুলো দেয়। যাতে আমরা এসব নিয়ে পড়ে থাকি খুনী তার কাজ নিশ্চিন্তে করতে পারে। খুনী চিরকুটগুলো ইচ্ছে করেই দেয়। সে জানে চিরকুট পেয়ে ও আমরা তাদের খোঁজ করতে পারব না। এ অবধি যতগুলো চিরকুট পেয়েছেন সব গুলোই খুনীর হাতের লেখা। আমি আন্দাজ করতে পারি খুনী অন্যের লেখা নকল করতে পারে। সে যে কারো লেখা হুবুহু তার মতো করে লিখতে পারে। আপনি প্রতিভার লাশের সাথে পাওয়া চিরকুটই দেখুন। চিরকুটের লেখা গুলো হুবহু প্রতিভার হাতের লেখার মতো। তা দেখে আপনারা ধরে নিলেন চিরকুটটা প্রতিভার হাতের লেখা। তারপর ভাবনায় লেগে গেলেন একটা মৃত মানুষ কিভাবে চিরকুট লিখতে পারে! তা নিয়ে চিন্তা গবেষনায় অনেক সময় ব্যয় করলেন। ঠিক এই এটাই চাচ্ছিলো খুনী। খুনী লাশের সাথে চিরকুট, নেম কার্ডগুলো দিয়ে আপনাদের মনোযোগ অন্যদিকে নেয়ার চেষ্টা করেছিলো, এমনকি সে সফল ও হয়েছে। ”

“কিন্তু চিরকুটে তো অধরার ফিংগার প্রিন্ট পাওয়া গেছে। তা দেখেই তো আমরা এমনটা আন্দাজ করেছিলাম। প্রতিভা যদি চিরকুট না লিখে তবে চিরকুটে প্রতিভার আঙুলের ছাপ কিভাবে আসলো?”
অবাক হয়ে একরাশ কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন করলো অধরা। নিতিন উত্তর দিল,
” প্রতিভাকে কিডন্যাপ করার পর আগে থেকে লিখে রাখা চিরকুটে প্রতিভার হাতের চাপ বসিয়ে দেয়া অসম্ভব কি?”
“তারমানে চিরকুট প্রতিভা নয় খুনী লিখে প্রতিভার হাতের ছাপ নিয়েছে তাই তো?”

“হ্যাঁ আমি আন্দাজ করছি তেমনি হয়েছে। তো যা বলছিলাম, খুনী চেয়েছিলো অভিলাষকে আপনারা খুনী ভাবুন। তাই সব কিছু এমনভাবেই সাজিয়েছে যেন প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে অভিলাষকে খুনী ভাবেন। অভিলাষের রুম তল্লাশি করে আপনারা যত ক্লু পেয়েছেন সব খুনী ইচ্ছে করে আপনাদের জন্য রেখে গিয়েছে । আপনাদের পাওয়া ক্লু গুলো সব পরিকল্পিত। সেগুলোর সত্য মিথ্যার ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে। অন্যগুলো বাদ, শুধু অভিলাষের রুমে পাওয়া রিসিটের কথা বলি। রিসিটে লেখা দোকানে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে আপনারা দেখলেন, এই ড্রেস নেকলেস এসব অভিলাষ কিনেনি। মাস্ক,আর টুপি পরা কেউ একজন কিনে নিয়েছে। যার চেহারা সিসিটিভি ক্যামেরা এবং দোকানদার কেউই দেখিনি। এটাও খুনী চেয়েছিলো। সে জানতো পরবর্তীতে আপনারা ওই দোকানের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করবেন তাই সে মাস্ক এবং টুপি পড়ে দোকানে গিয়েছে। সে চেয়েছিলো প্রথমে অভিলাষ দোষী সাব্যস্ত হোক। আপনারা যখন অভিলাষকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন তখন খুনী তাদের পরবর্তী ধাপের প্রস্তুতি নিবে। এবং তাদের হাতে বেশ কিছু সময় থাকবে। যার ফলে তারা নিশ্চিন্তভাবে তাদের মতো করে এগুতে পারবে। হলো ও তাই। আপনারা খুনীর দেখানো পথ অনুযায়ী চললেন। অভিলাষকে খুনী ভেবে সব মনোযোগ দিলেন অভিলাষের উপর। এই ফাঁকে খুনী তাদের পরবর্তী প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। তারপরই আপনারা বুঝতে পারলেন অভিলাষ নির্দোষ। খুনী পরিকল্পনা ছিলো অভিলাষকে প্রথমে দোষী ও পরবর্তীতে নিদোর্ষ সাব্যস্ত করা। অভিলাষের যখন খানিকটা নির্দোষ প্রমাণ হবে তখন তাকে মেরে দিবে। খুনী তার পরিকল্পনা অনুয়ায়ী সঠিক সময়ে অভিলাষকে মেরে দিলো।”

“অভিলাষকে মেরে দিলো যাতে আমরা অভিলাষকে নিয়ে পড়ে থাকি, এই ফাঁকে খুনী তুরাগদের খুন করতে পারে, তাই তো?”
নিতিনের কথার মাঝে ফোঁড়ন কেটে বলল অধরা। নিতিন হেসে বলল,
“হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন। এটাই টার্গেট ছিল খুনীর। খুনী চিরকুটটা ইচ্ছে করেই দিয়েছে। তার বিশ্বাস ছিলো আপনারা খুব সহজে চিরকুটের সংখ্যাটার মর্মার্থ বের করতে পারবেন না। যদিও পারেন তবে ততক্ষণে খুনী তার কাজ সেরে ফেলবে। এখানেও খুনীর পরিকল্পনা মাফিক সব হলো। আপনি যতক্ষণে চিরকুটের সংখ্যার মানে বুঝতে পারলেন এবং পদক্ষেপ নিলেন ততক্ষনে খুনী তুরাগদের কিডন্যাপ করে ফেলেছে। আপনি যখন তুরাগদের নিখোঁজ নিয়ে বিশ্লেষণ করছিলেন তখন খুনী তুরাগদের খুন করে আগের জায়গায় রেখে গেলো। এরপর সে আবারো সেই কাজ করলো যা ইতিপূর্ব থেকে করে আসছে। তা হলো, আমাদের মাইন্ড ডাইভার্টের চেষ্টা। তাই সে চিরকুট পাঠাল। চিরকুট সংখ্যাপদ্ধিতে খুনী এই জন্যই লেখে যাতে এর অর্থ সহজে বুঝতে না পারা যায়। এর পিছনে অনেক সময় দেয়া লাগে। পুরো ধ্যান চিরকুটের উপর দেয়া লাগে। এখন চিরকুট পেয়ে আপনি আপনার প্রধান কাজ হিসেবে চিরকুটে লিখা সংখ্যার ব্যাখা বের করাকেই ধরে নিলেন। এবং চিরকুট নিয়ে বিশ্লেষণ করতে বসে গেলেন। ব্যাখা বের করার পর আপনি বুঝতে পারলেন নেক্সট টার্গেট রক্সি। আপনি এবার রক্সিকে খুঁজতে এবং তার হিস্টোরি বের করতে লেগে যাবেন। এই ফাঁকে খুনীরা তাদের পরিবর্তী শিকারকে শিকার করে ফেলবে। আপনি তাই বারবার করছেন যা খুনী চাইছে । মূলত, আপনি খুনীকে নয়, খুনী আপনাকে ঘুরাচ্ছে। এই কথা ভেবেই আমার হাসি পেয়েছে। আমার হাসির কারণ এবং যুক্তি এটাই।?”

নিতিনের কথায় অধরা যেন বোকা বলে গেল। তার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল। সে কী করতে চেয়েছে আর কী করেছে! সে চেয়েছিলো খুনী ধরতে অথচ কী করেছে? খুনীকে খুন করার সুযোগ করে দিলো! নিজের প্রতি নিজেরই রাগ হচ্ছে, পুরো বিষয়টা এমনভাবে খুতিয়ে দেখল না কেন? সে এতদিনে যা খেয়াল করেনি নিতিন এসে ফাইল পড়ে আর ক্লু দেখে খানিকের মাঝে সব বের করে আনল! অধরা কেনো পারল না? পরক্ষনেই অধরার মনে হলো, এই গোলাটে কাহিনীর চাপে তার মাথা নষ্ট হবার উপক্রম হয়েছে। এখনো যে পাগল হয়নি এটাই অনেক। রহস্যের গোলকধাঁধায় সে চাপা পড়ে যাচ্ছে।
অধরার ফ্যাকাশে মুখ দেখে নিতিন মুচকি হেসে বলল,
” আমরা খুনীপক্ষের জালে পা না দিয়ে জাল বিছিয়ে খুনীদের জন্য ফাঁদ পেতে কিন্তু রহস্যের সমাধান করতে পারি। একটা কথা মাথায় রাখবেন, সব ধ্যান একদিকে না দিয়ে চারদিকে দেয়া উচিত। তবে চারদিক থেকে আসা সমস্যা মোকাবিলা করা যাবে। অন্যথায়, একদিক নিয়ে পড়ে থাকলে তিনদিক থেকে ধেয়ে আসা সমস্যার চাপে পড়ে অস্তিত্ব হারাতে হবে । আর হতাশ হবেন না, আমরা ন্যায়ের পথে আছি,অন্যায়ে হার মানবো না। সত্যকে সবার সামনে আনবোই। সুতরাং, নিশ্চিন্ত থাকুন এবং দেখুন আগে আগে কী হয়! ”

অধরা চোখে মুখে বিরক্তি মাখিয়ে বলল,
“এমন মামলা, এমন চালাক খুনী আমি বাপের জন্মেও দেখিনি। আমার মাথা আওলাযাওলা হয়ে যাচ্ছে। ”

অধরার কথায় নিতিন হেসে দিল। যেই সেই হাসি নয় একেবারে অট্টহাসি। যেই হাসির ধ্বনিতে চারদিকটা মুখরিত হয়। নিতিনের ভাবখানা দেখে মনে হচ্ছে সে প্রচন্ড হাস্যকর কথা শুনেছে। যা শুনে তার হাসি আওতাহীন হয়ে গেছে। খুবই মজা পেয়েছে সে। নিতিন মানুষটা খুবই হাইস্যরসী৷ তার পেশা গম্ভীর্য স্বভাবের হলেও সে খুব কমই গম্ভীর থাকে।মামলা যত কঠিন হোক, যত কঠিন পরিস্থিতি হোক সে হেসেই মোকাবিলা করবে। হেসে হেসেই অন্যকে ফাঁস করবে এমন মনোভাব তার। এই জন্যই সে তার ডিপার্টমেন্টে খুবই জনপ্রিয় একজন মানুষ। সিনিয়রদের কাছে ও প্রিয় একজন নিতিন।
হাসতে হাসতে নিতিন বলল,
” আপনার কৌতুক ভালো ছিল। ”
“আপনার কাছে এটা জোক মনে হচ্ছে! আমার অবস্থাটা বুঝার চেষ্টা করুন।”
অসহায় কন্ঠে বলল অধরা। নিতিন হেসেই জবাব দিলো,
” সাব ইন্সপেক্টর অধরা আনান, যে কিনা তার দুরদান্ত আর আর দুঃসাহসিক কাজের জন্য দুই দুই বার স্বর্নপদক পেয়েছে। যে নিশ্চিত হারকেও জয়ে পরিণত কিরে সে কি না এত তাড়াতাড়ি হার মেনে নিচ্ছে তাও একটা খুনীর কাছে! এটা আমার কাছে নিতান্তই হাইস্যকর মনে হচ্ছে।”

“আমার মনে হয় আমাদের কাজের কথায় ফিরে যাওয়া উচিত।” কথা ঘুরাতে বললো গম্ভীর কন্ঠে বললো অধরা। এই মুহুর্তে নিতিনের হাসির খোরাক হওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই তার। অধরার কথায় নিতিন এবারো মুচকি হাসি উপহার দিল । হেসেই বলল,
“আপনি প্রতিভার লাশ দেখেছেন, মিস অধরা?”
” হ্যাঁ। ”
“প্রতিভাকে গলাটা খেয়াল করেছেন?”
“হ্যাঁ। ”
“প্রতিভাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মেরে ফেলার পর প্রসাধনীর সাহায্যে দড়ির দাগটা ঢেকে ফেলা হয়েছে। যাতে সহজে ধরা না যায় কিন্তু সেই দাগ কিন্তু পরে ঠিকই সামনে এসেছিলো। সাময়িকের জন্য অদৃশ্য ছিলো। এই মামলাটাও প্রতিভার গলার ওই দাগের মতো। যার প্রসাধনীর আড়ালে ভয়ংকর একটা দাগ আছে। আমরা এখনো প্রসাধনী দিয়ে ঢেকে রাখা গলাটাকেই দেখছি। ভিতরকার ভয়ংকর দাগটা দেখছিনা। আমার যা দেখছি সত্যটা কিন্তু তা নয়, সত্যটা প্রসাধনীর মতো আড়ালে লুকিয়ে আছে। সেই সত্যটাকেই প্রসাধনীর মতো আবরণ থেকে সরিয়ে উন্মুক্ত করতে হবে। তবে দাগ দেখাটা আমাদের জন্য কঠিন এবং অসম্ভব কিছু নয়। চিন্তা গবেষনার পরই আমরা দাগটা দেখতে পাব। তাই বলি কী? হতাশ হবেন না একবারে। পরিশ্রম নয় বুদ্ধি দিয়ে কাজ করবেন তবে সহজেই সফল হবেন। ইংরেজিতে একটা কথা বলা হয়, legends always work smartly, not hardly. আমাদের বুঝে শুনে ফেলা একটা স্টেপ তাদের শত পদক্ষেপের উপর ভারি পড়বে। ”

অধরা সায় জানিয়ে কিছু বলবে তার আগেই দরজায় করাঘাত করল কেউ। অধরা নিতিনকে উত্তর দেয়ার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দরজায় আসা মানুষটার দিকে নজর দিলো। স্বাভাবিক গলায় বলল,
“আসুন।”
কাঠের দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করলো জিহাদ। তার হাতে একটা ফাইল। অধরা ফাইল দেখে বলল,
“ফরেনসিক রিপোর্ট এসে গেছে? ”
“জ্বি ম্যাডাম। ” বিনয়ের সাথে জবাব দিলো জিহাদ। অধরা হাত বাড়িয়ে বলল,
“দাও, দেখি।”
জিহাদ অধরার দিকে ফাইলটা বাড়িয়ে দিল। অধরা ফাইল হাতে নিয়ে টেবিলে রাখল। তারপর টেবিলের উপর থাকা চিরকুটটা জিহাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
“এটা ফিঙ্গার প্রিন্ট ব্যুরোতে পাঠিয়ে দাও।”
“জ্বি ম্যাডাম।”বলে যাবার জন্য পা বাড়ায় জিহাদ।

নিতিন তখনো অধরার ডেস্কের অধরার বিপরীত পাশের চেয়ারটায় বসে কোলের উপর প্রতিভা কেসের ফাইলটা রেখে তাতে চোখ নিবদ্ধ করে খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা দেখছে। ফাইল থেকে চোখ না উঠিয়েই বললো,
“জিহাদ, কড়া লিকারের এক কাপ চা পাওয়া যাবে?”
জিহাদ পিছন ফিরে একবার নিতিনের দিকে তাকাল। তাকিয়ে থেকেই বলল,
“জ্বি স্যার, যাবে। ”
“তবে কাউকে দিয়ে এক কাপ চা পাঠিয়ে দাও। ”
“আচ্ছা পাঠিয়ে দিচ্ছি। ম্যাডাম আপনার জন্য চা পাঠাবো?”
অধরার দিকে তাকিয়ে বলল জিহাদ। অধরা বললো,
“চা পেলে মন্দ হয় না। মাথাটা ধরে আছে। পাঠিয়ে দাও।”
ফাইল দিতে গিয়ে চায়ের অর্ডার নিয়ে ফিরে এল জিহাদ। নিতিনের মনোযোগ তখনো ফাইলের মাঝে। অধরা জিহাদের সদ্য আনা ফরেনসিক রিপোর্ট থাকা ফাইলটা দেখায় মনোযোগী হলো।

ফরেনসিক রিপোর্ট এ চোখ বুলিয়ে অধরা অবাক হলো। কারণ ফরেনসিক রিপোর্ট তেমনটাই বলছে যেমনটা নিতিন বলেছিলো। তিনজনকেই প্রথমে গলায় দড়ি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। তারপর গায়ে এসিড দিয়ে পুরো শরীর ঝলসে দিয়েছে। স্বরূপা এবং শিলার সাথে কোন সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট হয়নি। তিনজনের মৃত্যু হয়েছে আনুমানিক দু’দিন আগে।এই দুদিন লাশকে ফ্রিজ এবং মেডিসিনের সাহায্যে সচল রেখেছে। মৃত্যুর দু’দিন হলেও এসিড ঢালার বেশি সময় হয় নি। লাশ ফেলে যাওয়ার আগেই লাশের গায়ে এসিড দিয়ে পুরো শরীর ঝলসে দেয়া হয়েছে। ”

অধরা ভাবনায় পড়ল,
মৃত্যু যদি দু’দিন আগে হয় তবে তাদের মৃত্যু হয়েছে নিখোঁজ হওয়ার দিনই। খুনী তাদের কিডন্যাপ করে কোথাও নিয়ে গিয়ে খুন করেছে। খুন করে ফ্রিজ এবং মেডিসিন ব্যবহার করেছে লাশ সচল রাখার জন্য। প্রশ্ন হলো, এদের মৃত্যু দু’দিন আগে হলে খুনী দু’দিন আগে এদের রেখে গেলো না কেনো! দুইদিন অপেক্ষা করার কারণ কী! কোথায় রেখেছে এদের? আর খুনী কে? খুনী কি প্রভাত মির্জার শত্রু! প্রভাত মির্জা মত বড় শিল্পপতি তার হাজারো শত্রু থাকতে পারে। কোথাও তারা এই কাজটা করেনি তো! নাকি খুনীই প্রভাত মির্জা। এমন না যে এই খুন তিনিই করাচ্ছেন অন্য কাউকে দিয়ে! নাকি তিহানা জাহান খুনী। খুনী যদি প্রভাত মির্জা না হয় তবে তিহানা জাহান হতে পারে। কিন্তু তিনি নিজের স্বামী সন্তান জামাতাকে কেনো খুন করবেন? এমন না যে তিনি প্রতিভার সৎমা,সম্পত্তির জন্য এমন করবেন। তিনি তো প্রতিভার গর্ভধারিণী মা,আর বাবার একমাত্র সন্তান হওয়ায় নিজের নামে অনেক সম্পত্তি আছে তিহানা জাহানের। সে হিসেবে তার এসবে লোভ থাকার কথা নয়। তিনি যদি মেরে থাকেন তবে তিনি কেনো মারলেন?
মূল খুনী কে? কী চায় সে? এই খুনগুলো কি সম্পত্তির জন্য না কি পূর্বশত্রুতার জের ধরে হচ্ছে? আবারো এক ঝাক প্রশ্ন এসে মাথায় ঝেকে বসলো অধরার। নিতিন ফাইল থেকে চোখ তুলে এক পলক অধরার দিকে তাকাল। তারপর সেকেন্ড দশেক আগে জিহাদের রেখে যাওয়া দুটো চায়ের কাপের একটা হাতে নিলো। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল,
“মিস অধরা, আমার কথা কি মিলেছে?”
“হ্যাঁ। ”
ভাবনা ছেড়ে ছোট করে উত্তর দিল অধরা। নিতিন বলল,
“তাহলে তো হলোই। আগে ভেবেছিলাম ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর খুন সম্পর্কে আন্দাজ করবো। এখন তো দেখি আগেই আন্দাজ করতে পারছি। যাক গে, তাড়াতাড়ি চা শেষ করুন আমাদের এক জায়গায় যেতে হবে।”
“কোথায় যাবো?”ফাইল থেকে চোখ তুলে কপাল কুঁচকে বলল অধরা।

” আমি তুরাগের ফ্ল্যাটটা ঘুরে দেখতে চাই। আমার মনে হচ্ছে আমি ওখানে কোন ক্লু পাবো। আপনি কি যাবেন আমার সাথে?”
প্রশ্নবোধক চাহনি দিয়ে বলল নিতিন। অধরা মুচকি হেসে বলল,
“কেনো নয়? চলুন। এই কেস যত তাড়াতাড়ি সমাধান করতে পারি বাঁচি আমি। ”

***
তুরাগের ফ্ল্যাটে পুলিশ সিলগালা মেরে দিয়েছিল। প্রতিভার মৃত্যুর পর তুরাগ ও শ্বশুরবাড়ি ধানমন্ডিতে চলে গিয়েছিলো, যার ফলে তুরাগের ফ্ল্যাটটা এখনো তালা দেয়াই আছে। আর কেউ যায় নি। চাবি পুলিশের কাছে। ভুঁইয়া ভিলার সিকিউরিটি বাড়ানো হয়েছে। সেই ঝোপের আশপাশে পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে যাতে রক্সির ডেডবডি দিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ খুনীকে হাতে নাতে পাকড়াও করতে পারে।

ভুঁইয়া ভিলায় পৌঁছে আরো একবার সিকিউরিটি চেক করল নিতিন। দেখল সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করছে কি না! নাহ, সবাই ঠিকঠাক ভাবেই কাজ করছে। সিকিউরিটি চেক করে পকেট থেকে গ্লাভস বের করল। হাতে গ্লাভস পরতে পরতে সিড়ি ভেঙে তুরাগের ফ্ল্যাটের দিকে এগুলো। ফ্ল্যাটের দরজায় গিয়ে চারদিক পরখ করতে লাগল। দরজায় আটকানো নেমপ্লেটটার দিকে খানিক তাকিয়ে এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। মনে মনে আওড়ালো,’ মানুষ মরে যায় রেখে যায় স্মৃতি। তুরাগ প্রতিভা দুজনেই মারা গেছে কিন্তু তাদের সাজানো সংসার আর হাজারো স্মৃতি দাঁড়িয়ে আছো আজো অমলিন।’ খট করে দরজা খোলার আওয়াজ কান অব্দি পৌঁছাতেই নিতিনের ধ্যান ভাঙল। বাস্তবে ফিরে দেখল আদাবর দরজা খুলে তাকে ভিতরে যাবার আহ্বান জানাচ্ছে। নিতিন ধীর পায়ে ফ্ল্যাটে ডুকল। তার পিছন পিছন অধরা ও ঢুকল। অধরা এর আগে বেশ কয়েকবার এলেও নিতিন এই প্রথমই আসছে তুরাগের ফ্ল্যাটে। তাই সে তার সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে সব কিছু পরখ করার কাজে লেগে গেল। ড্রয়িং, ডাইনিং রুমের প্রতিটা জিনিস নড়েচড়ে দেখল। নিতিনের মনে হচ্ছে এই ফ্ল্যাটে কেউ থাকে। সব কিছু কেমন পরিস্কার! একটা ধূলোময়লা ও নেই। প্রতিভার মৃত্যুর আজ প্রায় দশদিন হতে চলল। প্রতিভার মৃত্যুর পর ফ্ল্যাটটা বন্ধ থাকলে ধুলোবালি জমে যাওয়ার কথা। কিন্তু এটা পরিস্কার কেনো! তাছাড়া কিচেন টাও কেমন অগুছালো, যেন কেউ রান্না করেছে। তবে কি সত্যিই এখানে কেউ থাকে? থাকলেও কিভাবে! বাইরে কড়া নিরপত্তা, বিল্ডিংয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়া বাইরের কাউকে ভিতরে এলাউ করছে না পুলিশ। ফ্ল্যাটের চাবি পুলিশের কাছে কেউ, এখানে আসবে কিভাবে? আর ফ্ল্যাটে ঢুকবে কিভাবে!
মনে খটকা নিয়ে নিতিন প্রতিভার বেডরুমে গেল। বেডরুমের সব কিছু যখন খুতিয়ে দেখছিলো তখন গেস্ট রুম থেকে অধরার ডাক এলো। অধরা খানিক চেঁচিয়েই বলল,
“মি.নিতিন এদিকে আসুন।”

ক্লু পেয়েছে ভেবে এক প্রকার দৌড়ে ডাইনিং স্পেচের পাশে অবস্থিত গেস্টরুম এ গেলো। বেডরুমের দরজায় গিয়ে ভিতরে চোখ বুলাতেই নিতিন বিস্ময়ের সপ্তম আকাশে পৌঁছে গেলো। তার সামনে রুমের মাঝখানে বেডের উপর সিলিং ফ্যানের সাথে দড়ি বেধে সেই দড়িতে গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় ঝুলে আছে প্রভাত মির্জা। তা পা দুটো বেডের আড়াই ফুট উপরে ঝুলানো । বেডের এক কোণে কাত হয়ে পড়ে আছে দুই ফুট লম্বা বাদামী রঙের একটা বেতের মোড়া। এই মোড়ার উপর উঠেই হয়তো গলায় ফাঁস লাগিয়েছেন প্রভাত মির্জা। ফাঁস লাগানোর পরে মোড়া পা দিয়ে ফেলে দিয়েছেন তাই কাত হয়ে অন্য দিকে পড়ে আছে।

প্রভাত মির্জার গায়ে ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি আর সাদা পায়জামা। মাথা ডান দিকে কাত করা। জিহ্বাটা ছয় কি সাত ইঞ্চি বের হয়ে ঠোঁটের ডান কোণে বাঁকা হয়ে ঝুলে আছে। জিহ্বায় কামড় দেয়া, জোরে কামড় দেয়ার কারণে জিহ্বা কেটে গিয়েছে বেশ কিছুটা। কাটা জায়গাটা থেকে রক্ত জিহ্বা গড়িয়ে বুকের উপর পড়ছে। বুকের ডান পাশে কয়েক ফোঁটা রক্ত দেখা যাচ্ছে সেগুলো শুকিয়ে গেছে। ফর্সা মুখটা কালো বর্ণ ধারণ করেছে। অতি কষ্টে মরেছে কি না! নিতিন দরজায় দাঁড়িয়ে মিনিট দুয়েক সময় নিয়ে প্রভাত মির্জাকে পরখ করলো। তারপর বেডের দিকে এগুলো। তার চোখ গেল বেডের সাইড টেবিলে ল্যাম্পের পাশে রাখা খাতাটায়। নিতিন খাটের পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে খাতাটা হাতে নিল। খুলে রাখা খাতার উপর পেজে লেখা,
“আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। আমি সেচ্ছায় স্বজ্ঞানে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিয়েছি।”

সুইসাইড নোটে লেখা পড়ে হাসল নিতিন। তার থেকে খানিক দূরে দাঁড়িয়ে থাকা অধরার তখনো লাশের দিকে তাকিয়ে ভাবনার জগতে বিচরণ করছে। প্রভাত মির্জার সুইসাইড নোটের লেখাটা আগেই নজরে এসেছে তার। সে ভাবছে, সুইসাইড নোট দেখে বুঝা যায় প্রভাত মির্জা সুইসাইড করেছে। কিন্তু তিনি সুইসাইড করলেন টা কেনো! যদি সুইসাইড করেন তবে এইখানে এসেই কেনো করলেন? আর এত কড়া নিরপত্তার পর ও প্রভাত মির্জা এখানে এলেন কিভাবে! যদি মার্ডার হয় তবে খুনী প্রভাত মির্জাকে নিয়ে এখানেই কেনো এলো? সে চাইলে অন্যকোথাও ত মারতে পারতো। এখানেই কেনো!

চলবে….

নেক্সট শব্দটা বাদ দিয়ে গঠনমূলক মন্তব্য করুন। গল্পটা দেয়া যেহেতু শুরু করেছি শেষ ও করবো ইনশা আল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here