রহস্যময় সারপ্রাইজ পর্ব-৯

0
729

#রহস্যময়_সারপ্রাইজ
আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা
#পর্ব-৯

” এটা আত্মহত্যা নয়, এটা বাকি সব গুলোর মতোই হত্যা।”
প্রভাত মির্জার লাশ নামিয়ে খুতিয়ে দেখতে গিয়ে বলল নিতিন। নিতিনের কথায় চমকে উঠল অধরা। ভ্রু কুঁচকে বলল,
“কিভাবে বুঝলেন! লাশ আর সুইসাইড নোট দেখে তো সুইসাইডই মনে হচ্ছে। ”

অধরার কথায় নিতিন হাসল। হাসিটা ঠোঁটের কোণে বজায় রেখেই বললো,
“মিস অধরা, আপনি কি আবারও খুনীর দেখানো পথ ধরেই এগুনোর কথা ভাবছেন?”

সেকেন্ড দশেক লাগল নিতিনের কথাটা অধরার বুঝে আসতে। নিতিনের কথার ভাবার্থ বুঝতে পেরে এবারও বোকা বনে গেল অধরা। তার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল। আবারও একি ভুল করতে যাচ্ছে সে! সে কিভাবে ভুলতে পারে খুনির চতুরতার কথা, নিতিনের চিরকুট ব্যাখ্যার কথা! কিভাবে! ভাবতেই নিজের উপর কপট রাগ হলো অধরার। খুনী তো তাদের মনোযোগ ঘুরানোর জন্য চিরকুট পাঠায়। এটাও তেমনি চিরকুট হতে পারে। বরাবরের মতো এবারও অধরার ফ্যাকাসে মুখ দেখে হাসল নিতিন। বলল,
“একি ভুল বারবার করবেন না। বরাবরের মতোই এবারও খুনী নিজ হাতে চিরকুট লিখেছে। প্রভাত মির্জার হাতের লেখা নকল করেছে।”

শান্ত কন্ঠে অধরা বলল,
“হ্যাঁ বুঝলাম। আশা করছি, এটা মাথায় থাকবে। তবে এটা যে আত্মহত্যা নয় তা কিভাবে বুঝলেন?”

“আপনি প্রভাত মির্জার কাটা জিহ্বার উপর নজর দিন ব্যাপারটা আপনার কাছেও স্পষ্ট হয়ে যাবে। ”
প্রভাত মির্জার ঝুলে থাকা জিহ্বার দিকে ইশারা করে বলল নিতিন।

নিতিনের ইশারা অনুসরণ করে প্রভাত মির্জার জিহ্বার দিকে সুক্ষ্মদৃষ্টিতে তাকাল অধরা। সাথে সাথে তার চোখে মুখে বিস্ময় দেখা গেল। তার বিস্ময়ের কারণ হলো প্রভাত মির্জার জিহ্বার কাটা দাগ। ঝুলন্ত অবস্থা দূর থেকে দেখতে দাঁতের চাপ পড়ে কেটে গেছে এমনটা মনে হলেও কাছে গিয়ে অতিব সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে পরখ করলে বুঝা যাবে দাঁতের চাপে নয় এটা ধারালো ছুরি দিয়ে আকাঁ সরু রেখা। এটাই হত্যা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট। কারণ কেউ আত্মহত্যা করতে গিয়ে গলায় ফাঁস লেগে যখন জিহ্বা বের হবে তখন সে নিজের জিহ্বায় ছুরি চালানোর মতো অবস্থায় থাকে না। ছুরি চালানো তখনি যায় যখন কেউ তাকে খুন করে। হঠাৎ কিছু একটা ভেবে অধরা বেডের এক কোণে পড়ে থাকা মোড়ার দিকে তাকাল। সে ভাবছে এটা মার্ডার হলে এই মোড়ার কী কাজ!

অধরার চাহনি বুঝতে পেরে নিতিন বলল,
“মোড়াটা খুনী নিজের জন্য ব্যবহার করেছে। প্রভাত মির্জাকে এই রুমে মারেনি। ড্রয়িং কিংবা ডাইনিং রুমে মেরেছে। ড্রয়িং ডাইনিংয়ের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অন্তত তা বলে। তারপর এখানে এনে ঝুলিয়ে দিয়েছে। ঝুলিয়ে দেয়ার পর মোড়ার উপর দাঁড়িয়ে প্রভাত মির্জার জিহ্বা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। এমনটাই আমার ধারণা। তবে একটা মজার ব্যাপার হলো এতদিন খুনী আমাদের চমকেছে আর আজ আমরা আকস্মিক তুরাগের ফ্ল্যাটে এসে খুনীকে চমকে দিলাম। এবং তাদের প্ল্যানের পানি পেলে দিলাম। ভাবতেই ভালো লাগছে। আহহারে বেচারার এবং বেচারার গ্যাং! ”
চোখে মুখে খুশির আভা ফুটিয়ে বললো নিতিন।

অধরা কৌতুহলী হয়ে বলল,
“আপনি বলতে চাচ্ছেন খুনী জানতো না আমরা এখানে আসব আর লাশ দেখেব, তাই তো?”

“একজেক্টলি। খুনীরা কল্পনা ও করতে পারেনি যে আজ আমরা এখানে আসব এবং প্রভাত মির্জাকে দেখে ফেলব। আমার ধারণা, খুনীরা আজ রাতে প্রভাত মির্জাকে প্রতিভার মতো প্যাকিং করে তিহানা জাহানের কাছে মানে মির্জা হাউজে পাঠাতো। আর কাল সকালে সবাই দেখতো। কিন্তু তার আগেই আমরা এসে প্রভাত মির্জার লাশ দেখে ফেললাম। বেচারাদের প্রভাত মির্জার লাশ ট্রাভেল ব্যাগে ভরে র‍্যাপিং পেপার মোড়ানো হলো না। এবার কী হবে খুনী গ্যাংয়ের!”
তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল নিতিন। অধরা ভ্রু কুঁচকে বলল,
“প্রভাত মির্জার লাশ যে প্রতিভার মতো প্যাক করবে আপনি কিভাবে বুঝলেন!”

অধরার প্রশ্নের জবাবে নিতিন মুচকি হেসে রুমের এক কোণে থাকা কাঠের সোফার দিকে ইশারা করল। বলল,
“সোফার নিচের দিকে তাকান। সেখানে একটা লাল রঙা ট্রাভেল ব্যাগ আছে। আমার ধারণা ট্রাভেল ব্যাগের ভিতর র‍্যাপিং পেপার, কাঁচি আর স্কেচ টেপ সব আছে। সব কিছু গুছিয়ে রেখেছে রাতে প্যাকিং করবে বলে। ”

অধরা সোফার নিচে তাকিয়ে অবাক হলো। সত্যিই সোফার নিচে একটা লাল রঙা ট্রাভেল ব্যাগ রাখা। অধরা অবাক হয়ে সোফার কাছে গেলো। হাটু ভেঙে বসে সোফার নিচ থেকে ট্যাভেল ব্যাগটা বের করলো। বিশাল আকারের ট্রাভেল ব্যাগ। একবারে নতুন চকচকে। অধরা নিতিনের কথা মিলে কিনা দেখার জন্য একরাশ কৌতুহল নিয়ে ব্যাগের চেইন খুলল। ব্যাগের চেইন খুলে ভিতরটা প্রকাশ করতেই অধরা বিস্ময়ী ভাবটা আরো বেড়ে গেল। সত্যিই ভিতরে লাল রঙা হাতলের একটা কাচি, লাল রঙের র‍্যাপিং পেপার ভাজ করা, আর সাদা রঙের স্কেচ টেপ। একটা সাদা রঙের ট্যাগ কার্ড ও আছে। তারমানে সত্যিই খুনিরা প্রতিভার লাশের মতো প্রভাত মির্জার লাশ ও প্যাকিং করার পরিকল্পনা করেছিলো কিন্তু নিতিনের হঠাৎ এখানে আসার পরিকল্পনায় তা ভেস্তে গেলো। নিতিনের বিচক্ষণতা মুগ্ধ করল অধরাকে। অধরা মুচকি হেসে বললো,
“মি.নিতিন আপনার বুদ্ধিমত্তা প্রখর।”

জবাবে নিতিন হাসল। হেসে বলল,
“হয়তোবা। তবে একটা কথা না বললেই নয়, আমরা এখানে এসে খুনী গ্যাং কে প্রচুর চমক উপহার দিয়েছি। খুনীরা তাদের সারপ্রাইজের মাধ্যমে পুরো দেশ হেলিয়ে দিয়েছে। আমরা এবার সেই খুনীদেরকে সারপ্রাইজ দিতে দিতে তাদের জীবন ফাঁস করব। ইশ! আজ যদি তাদের মুখখানা দেখতে পেতাম! নিচে এসে সিকিউরিটি চেক করার নামে সময় নষ্ট না করলে আজ হাতে নাতে ধরতে পারতাম। চান্স মিস করলাম।”
শেষের কথা গুলো বলার সময় একরাশ আফসোস স্পর্শ করল নিতিনের গলায়। অধরা ভ্রু কুঁচকে বললো,
” নিচে কড়া সিকিউরিটি, ফ্ল্যাটের চাবি পুলিশের কাছে। এতসব ডিঙিয়ে খুনিরা এখানে আসলো কিভাবে? আর প্রভাত মির্জাকে ও আনলো কিভাবে?”

অধরার কথার প্রতুত্তরে নিতিন বলল,
“ভুঁইয়া ভিলার পিছন ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে ফরিদ ভিলা। দুই বিল্ডিংয়ের দূরত্ব একবারে নেই বললেই চলে। ফরিদ ভিলার সিড়ি বেয়ে ছাদে উঠে লাফিয়ে এক ছাদে আসাটা অসম্ভব নয়। তারা এভাবেই এসেছে বলে আমার ধারণা। আর প্রভাত মির্জাকে ব্ল্যাকমেইল করে আনাটাও খুব কঠিন নয় তাদের কাছে। আর রইলো কড়া সিকিউরিটির কথা, সিকিউরিটির ব্যাপারটা তাদের স্পর্শই করতে পারেনি। তারা রাতের আধারে এসেছে। তাছাড়া ফরিদ ভিলা ভুঁইয়া ভিলার পিছনে হওয়ায় ভুঁইয়া ভিলার সামনে থাকা পুলিশের নজরে একদমি পড়ার কথা নয়। আর আমি যতটুকু জানি ফরিদ ভিলায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা নেই। এই ব্যাপারটা তাদের আরো কাজকে সহজ করে দিয়েছে হয়তো। ”

“কিন্তু চাবি? তুরাগের ফ্ল্যাটের চাবি তো পুলিশের কাছে আছে। আর ভুঁইয়া ভিলার ছাদের দরজাও তালা মারা থাকে। চাবিটা ও নিচে অবস্থানরত পুলিশের কাছে। পুলিশের সাহায্য ছাড়া তাদের এই ফ্ল্যাটে আসা সম্ভব না। তবে কি এসবে পুলিশ ও জড়িত ছিলো?”

ভাবুক কন্ঠে বলল অধরা। নিতিন মুচকি হেসে বললো,
” মিস.অধরা, আপনি অতি গভীরে চলে যাচ্ছেন। সহজ ভাবে ভাবুন। প্রযুক্তির যুগ এখন। এখন সাবানে চাবি বসিয়ে চাপ নিয়ে সেই ছাপ অনুসরণ করে চাবি বানানো যায়। আর এটা তো সামান্য তালা! এখন তালাগুলোর ছবি তুলে নিয়ে কি মেকানিককে দেখালে সে বলতে পারবে কোন তালার কোন চাবি। সে অনায়েসে বানিয়ে দিতে পারবে। খুনীরা অতি সচেতন। পুলিশের সাহায্য নিয়ে ঝুঁকি কাধে নিবে না। তাই এই উপায় অনুসরণ করেছে যথাসম্ভব। ”

“এত ঠান্ডা মাথায় সব কিছু কিভাবে সামলায় তারা! সব কিছু একদম পারফেক্ট! কোন সুত্র রাখে না। ”

“আপনার কথার ধরণ দেখে মনে হচ্ছে আপনি খুনীর উপর ইম্প্রেশড?”
মজা করে বললো নিতিন। অধরা ভ্রু কুঁচকে নিতিনের দিকে তাকাল। নিতিন হেসে বলল,
“না মানে, আপনার কথার ধরণ দেখে তাই মনে হলো।”
অধরা গম্ভীর সুরে বলল,
“মি.নিতিন আমরা এখানে একটা কাজের জন্য এসেছি। আমার মনে হয়, সময় নষ্ট না করে কাজে মন দেয়া উচিত।”

” আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। আপনি লাশের কাছে থাকুন। আমি তুরাগ প্রতিভার বেডরুমটা পর্যবেক্ষন করে আসি। ওই রুমের তল্লাশি করতে গিয়ে মাঝপথে তল্লাশি থামিয়ে এখানে এসে পড়েছিলাম।”
হেসে বলল নিতিন। অধরা যে তাকে অপমান করেছে তার রেশমাত্র নেই নিতিনের চেহারায়। সে দুই হাত প্যান্টের পকেটে হাত রেখে হেলে দুলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। অধরা ব্যস্ত হয়ে গেলো লাশ দেখতে।

**
তুরাগ-প্রতিভার বেড রুমের দেয়ালে টাঙানো একটা ফটোফ্রেমের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিতিন। ফটোফ্রেমটায় ভেসে উঠেছে একটা হাস্যজ্বল সুদর্শন মানবের মুখ। যাকে ক’দিন আগেও সবাই তুরাগ বলে চিনতো। এখন তার নামের সাথে আরো একটা শব্দ যুক্ত হয়েছে তা হলো মৃত । মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছে যে সেই তো মৃত। তুরাগ তো কারো প্রতিহিংসার শিকার হয়ে ভয়ংকররূপে ধেয়ে আসা মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছে। নিতে বাধ্য হয়েছে।

চতুর্ভুজাকৃতি রঙিন ছবিটার স্থান দেখে আন্দাজ করা যায় এটা ইন্দোনেশিয়ার বালিতে তোলা। ফটোফ্রেমের সাথে ট্যাগ কার্ড ঝুলানো। তাতে লেখা ‘ তুরাগের প্রথম ফরেন ট্রিপ ।’ লেখাটা চিনতে অসুবিধা হলো না নিতিনের। রুমের এক কোণে বোর্ডে আটকানো প্রতিভা শিরোনামের নিচে থাকা চিরকুটগুলোর লেখার সাথে এই লেখাটা মিলে যায় হুবহু। এটা প্রতিভার লেখা। নিতিন ট্যাগ কার্ডের লেখার দিকে খানিকক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তারপর ছবির দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবল। ভাবনা শেষে পুরো রুমের প্রতিটা জিনিস খুতিয়ে দেখল। তেমন কিছুই চোখে পড়লো না আর। তল্লাশি শেষে বেডরুম থেকে বের হলো সে। ড্রয়িং ডাইনিং তল্লাশি করল কিছুক্ষণ। তারপর আবার গেস্টরুমে ফিরে গেল। প্রভাত মির্জার লাশ মেঝেতে শোয়ানো। অধরা লাশের দিকে তাকিয়ে লাশের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। নিতিন গিয়ে অধরার পাশ ঘেঁষে দাঁড়াল। তারপর লাশের দিকে তাকিয়ে একেবারে নিচু গলায় বলল,
“আপনি যেভাবে আছেন সেভাবেই থাকুন। আমার কথা শুনার সময় কিংবা আগে পরে আমার দিকে তাকাবেন না। যা বলছি মনোযোগ দিয়ে শুনুন।”
নিতিতের কথায় অধরা অবাক হলেও প্রকাশ করল না। লাশের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলল,
“জ্বি, বলুন।”

নিতিন এবার সোফার সামনে থাকা সেন্টার টেবিলের কাছে গেল। সেন্টার টেবিলের উপর থাকা পত্রিকাটা হাতে নিলো। পত্রিকায় চোখ বুলানোর ভান করে আবারো অধরার পাশে এসে দাঁড়ালো। অধরা নিতিনের গতিবিধি লক্ষ্য করছে আর অবাক হচ্ছে। সে বুঝতে পারছেনা নিতিন কী করতে চাইছে। তবে এইটুকু বুঝতে পারছে যে নিতিন কোন একটা উদ্দেশ্য নিয়েই এসব করছে। কিন্তু কি করতে চাইছে!
এমন ভাবনা যখন মনে আওড়াচ্ছে তখন পাশ থেকে নিতিন পত্রিকা চোখ রেখে মিনমিনে গলায় বলে উঠলো,
“মিনিট তিনেক পরে আপনার ফোনে একটা ম্যাসেজ আসবে। ম্যাসেজ আসার পর আপনি ফ্ল্যাট তল্লাশি করার ভান করে ব্যালকনিতে যাবেন। তারপর ফোন বের করবেন। সেখানে গিয়ে এমন ভান করবেন যেন আপনি তল্লাশি করছেন, আর মাঝে সময় দেখার প্রয়োজন বোধ করছেন। তাই ফোন বের করে টাইম দেখছেন। ফোন বের করে অবশ্যই প্রথমে ফোনের ব্রাইটনেস কমিয়ে দিবেন। এবং টাইম দেখার ভান করে ম্যাসেজটা দেখে নিবেন। ”
বলে নিতিন হেসে দিল। নিতিনের ভাব দেখে মনে হচ্ছে সে পত্রিকা পড়ে হাসছে। নিতিনের কথায় অধরা অবাক হলেও তা প্রকাশ করলো না। লাশের দিকে তাকিয়ে রইল। নিতিন তখনো পত্রিকা পড়ছে খুব মনোযোগ দিয়ে। খানিক পরে নিতিনের ফোন বেজে উঠলো। ফোনের রিংটোন কানে যেতেই নিতিন পত্রিকা বন্ধ করে এক হাতে নিয়ে আরেক হাত দিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে রিসিভ করে কানে দিলো। কথা বলতে বলতে পত্রিকাটা যথাস্থানে রেখে গেস্টরুম হয়ে তুরাগের ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে গেলো। নিতিন সব কিছু এমন ভাবে করল যে সন্দেহ করার কোন পথই রাখলো না।

মিনিট তিনেক পর অধরার ফোনে টুং করে আওয়াজ হলো। অধরা বুঝলো যে নিতিনের বলা সেই ম্যাসেজ এসে গেছে। অধরা তল্লাশি করার ভান করে ব্যালকনিতে গেল। ফোনের ব্রাইটনেস কমিয়ে খানিক আগে আসা ম্যাসেজটা ওপেন করল।

“আমি নিতিন। আমাকে এখান থেকে চলে যেতে যাচ্ছে অন্য একটা কাজে। এদিকে আজ আর ফিরব না। এদিকটা আপনি সামলে নিন। লাশ ফরেনসিক ল্যাবে পাঠিয়ে দিন। তারপর পুরো ফ্ল্যাট আরেকবার তল্লাশি করুন। ফিঙ্গার প্রিন্ট ব্যুরোকে দিয়ে ফ্ল্যাটে প্রতিটা জিনিস চেক করাবেন। আমার ধারনা আমরা আসার আগ অবধি খুনিরা এখানেই ছিল। আমাদের আসার খবর পেয়ে পালিয়েছে। সুতরাং, তাদের ফিংঙ্গার প্রিন্ট থাকার কথা। কিচেন আর ডাইনিং স্পেচটা ভালো করে চেক করবেন। আর সেটা অবশ্যই আপনার উপস্থিতিতে। সব কিছু আপনি নিজে পরখ করবেন।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে, আমার ধারণা, ফ্ল্যাটে সিসি ক্যামেরা বসানো আছে। এবং এই মুহুর্তে খুনীরা ফ্ল্যাটে কী হচ্ছে না হচ্ছে তা দেখছে। তাই আপনাকে ব্যালকনিতে যেতে বলা। ব্যালকনিতে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকার সম্ভাবনা নেই। আমি কোনভাবেই চাই না খুনীরা জানুক আমি কোথায় যাচ্ছি। আমি খুনীদের চমকে দিতে চাই। তারা আমার গন্তব্য জানলে হুশিয়ার হয়ে যাবে, যা আমি চাচ্ছি না। তাই আপনাকে সরাসরি না বলে ম্যাসেজের মাধ্যমে বলছি। শুনুন, ফ্ল্যাটের প্রতিটা রুমে সি সি ক্যামেরা আছে বলে আমার ধারণা। তারা অতি সুক্ষ্ম জায়গায় রেখেছে সম্ভবত। যা অতি সুক্ষ্মভাবে না দেখলে চোখে পড়বে না। সিসি ক্যামেরা খুঁজে পেলে সাথে সাথে জব্দ করুন। তবে অফ করবেন না। শুধু কালো কাপড় বা টিস্যু দিয়ে মুড়ে নিবেন। লাশ ফরেনসিক ল্যাবে পাঠিয়ে তিহানা জাহানকে খবর দিতে ভুলবেন না। তিহানা জাহানকে খবর দেয়ার পর স্বরূপার বয়ফ্রেন্ড মৃদুল এবং প্রতিভার কাজিন ডাঃ কৌশিককে পুলিশ পাঠিয়ে থানায় নিয়ে যান। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করুন। কোন সূত্র পেলেও পেতে পারেন।আপনার সাথে আমার কাল সকালে দেখা হবে। আমার সাথে থাকবে শকিং নিউজ। ততক্ষণ অবধি ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ”

একদমে ম্যাসেজ পড়ে শেষ করল অধরা। ম্যাসেজ পড়ে বুঝতে পারলো নিতিনের উদ্ভট আচরণের কারণ। বুঝে একটা চাওয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিড়বিড় করে বললো, “পুলিশ আসামীদের উপর নজর রাখে, আর আমার বেলায় আসামী পুলিশের উপর নজর রাখছে। কী দিনকাল আসলো রে!”

অধরা তেমনটাই করল যেমনটা নিতিন তাকে করতে বলেছিল। প্রভাত মির্জার লাশ ফরেনসিক ল্যাবে পাঠিয়ে দিয়ে তুরাগের ফ্ল্যাট তল্লাশি করল। ফিঙ্গার প্রিন্ট ব্যুরোকে দিয়ে সবকিছু চেক করাল। তারা সব কিছু চেক করে সন্দেহ জনক কিছু জিনিস পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য ল্যাবে নিয়ে গেছে। তুরাগের ফ্ল্যাটের কাজ শেষে অধরা পুলিশ পাঠালো ডাঃকৌশিক এবং মৃদুল থানায় নিতে। এরপর সে নিজে ফোন করলো তিহানা জাহানের কাছে। উদ্দেশ্য প্রভাত মির্জার মৃত্যুর খবর তাকে দেয়া। কয়েকবার ফোন করেও তিহানা জাহানকে পাওয়া গেলো না। শেষে মির্জা হাউজের ল্যান্ড লাইনের ফোন করলো। দু’বার বাজার পর এক কেয়ারটেকার ফোন রিসিভ করে জানালো যে, প্রভাত মির্জার মৃত্যুর খবরটা লিক হওয়ার পর যখন টিভিতে ব্রেকিং নিউজ দেখাচ্ছিলো তখন তিহানা জাহানের চোখে তা পড়ে। স্বামীর করুণ মৃত্যুর কথা শুনে এবং দেখে সইতে না পেরে সাথে সাথে হার্ট অ্যাটাক করেন। কয়েকজন সার্ভেন্ট তাকে নিয়ে হাসপাতালে গেছে। বর্তমানে তিনি হাসপালাইড। শুনে এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল অধরা। ফোন রাখতেই জিহাদ কল করল। কল রিসিভ করতেই অপাশ থেকে জিহাদ বললো,
” ম্যাডাম আমরা মৃদুলকে ধরতে তার বাসায় এসে জানতে পেরেছি স্বরূপার এমন করুণ মৃত্যু মেনে নিতে না পেরে মানষিক ভারসাম্য হারিয়েছে মৃদুল। সে এখন মানষিক হাসপাতালে ভর্তি আছে। আর ডাঃ কৌশিককে তুরাগরা নিখোঁজ হওয়ার দিন রাতে হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে কে বা কারা কুপিয়ে জখম করেছে। সেও এখন হাসপাতালে আছে। আমরা হাসপাতালে গিয়েছিলাম তারা কেউই এখনো জবানবন্দি দেয়ার অবস্থায় আসে নি।”

“আচ্ছা আপনারা ফিরে আসুন।”
গম্ভীর কন্ঠে বলল অধরা। ফোন রেখে বলল,
“ডাঃকৌশিককের উপর হামলাও খুনীদের কাজ। এই খুনী গ্যাংকে একবার নাগালে পাই, তারপর হাজারটা মামলা দিব।”

***

পরদিন সকালে থানায় গিয়ে ফরেনসিক রিপোর্ট নিয়ে বসল অধরা। ফরেনসিক রিপোর্ট বলছে এটা আত্মহত্যা। বডিতে প্রভাত মির্জা ছাড়া কারো কোন আঙুলের ছাপ নেই। প্রভাত মির্জার মৃত্যুটা গলায় ফাঁস দেয়ার কারণেই হয়েছে। এবং জিহ্বার কাটা দাগও দাঁতের আঘাতে হয়েছে। মৃত্যুর আগে তিনি কোন কিছু চরম হতাশায় ভুগছিলেন। যা তার ব্রেইনে ইফেক্ট করেছে। তিনি ডিপ্রেশনের ভারী মেডিসিন ও নিচ্ছিলেন। ফরেনসিক রিপোর্ট পড়ে সবটা মেনে নিতে পারলেও জিহ্বার কাটা দাগের কথা মানতে পারল না অধরা। সে প্রভাত মির্জার জিহ্বা দেখে বেশ বুঝেছে এটা ছুরির রেখা। তবে রিপোর্ট এমন বলছে কেনো! আচ্ছা ফরেনসিক রিপোর্ট ভুল আসল না তো? এমন নয় তো যে কেউ রিপোর্ট পালটিয়ে দিয়েছে! কিন্তু ফরেনসিক তো সি আই ডি এর অধীনে। আর তারা সবাই বেশ কঠোর। কেউ এমন কাজ করবে বলে মনে হয়না। এমন না তো যে খুনী গ্যাংয়ের কেউ একজন ফরেনসিক বিভাগে আছে। সেই রিপোর্ট পাল্টে দিয়েছে! হতেই পারে। খুনীরা যা চতুর, এমনটা হওয়া অসম্ভব না।

” আসতে পারি?”
অধরার ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে বললো রুমের বাইরে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে নক করা ব্যক্তিটি। ভাবনার সুতো ছিড়ে বের হয়ে এসে অধরা বললো,
“আসুন।”

প্রায় সাথে সাথে ফাইল হাতে কেবিনের ভিতরে প্রবেশ করল নিতিন । ডেস্কের বিপরীতমুখী চেয়ারে বসে বলল,
“মিস অধরা, ফরেনসিক রিপোর্ট এসেছে কি?”

“হ্যাঁ, এসেছে। তবে আমার মনে হচ্ছে ফরেনসিক রিপোর্টে ঘাপলা আছে। রিপোর্ট পাল্টানো হয়েছে। আপনি একবার দেখুন তো!”
বলে অধরার হাতে থাকা রিপোর্টটা নিতিনের দিকে বাড়িয়ে দিল। নিতিন অধরার বাড়িয়ে দেয়া রিপোর্ট হাতে নিল। চোখ বুলিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,
“পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ কাজ হলো মানুষকে বোকা বানানো। খুনীরা এই কথাটাকে বারবার প্রমাণ করেছে। বারবার আমাদের বোকা বানিয়েছে। এখনো বানাচ্ছে।”
“কিভাবে!”
ভ্রু কুঁচকে বলল অধরা। নিতিন তার হাতের ফাইল অধরার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“এই ফাইলের সর্বপ্রথম পেপারটা দেখে নিন। বুঝবেন মানুষকে বোকা বানানো কত সহজ আর খুনীরা আমাদের বোকা বানিয়েছে কিভাবে।”

ভ্রু জোড়া কুঁচকে রেখেই অধরা নিতিনের বাড়িয়ে দেয়া ফাইল হাতে নিলো এবং তাতে চোখ বুলাল। চোখ বুলিয়ে অধরা বিস্ময়ের সপ্তম আকাশে উঠল যেন। এই মুহুর্তে তার সামনে একটা ফরেনসিক রিপোর্ট রাখা। রিপোর্টটা প্রভাত মির্জার। তাতে বলা হয়েছে যে, প্রভাত মির্জাকে মৃত্যুর আগে এলকোহল জাতীয় কোন পানীয় সেবন করানো হয়েছে অতিমাত্রায়। তবে তার মৃত্যু হয়েছে শ্বাসরোধের কারণে। মৃত্যুর পূর্বে তার জিহ্বায় ছুরির আঘাত করা হয়েছে। তার শরীরে অসংখ্য আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে। তার শরীরে পাওয়া আঙুলের ছাপের সাথে অভিলাষের আঙুলের ছাপ ম্যাচ করেছে।

“এটা ফরেনসিক রিপোর্ট হলে ওটা কী!”
ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে অবাক হয়ে বলল অধরা। নিতিন বাঁকা হেসে বলল,
“ওটা বোকা বানানোর ট্রিকস। এ অবধি যত ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে পেয়েছেন সব ভুল। কোনটার ভিত্তি নেই। খুনীরা তাদের মনগড়া রিপোর্ট বানিয়ে আপনাদের দিয়েছে। এতে সাহায্য করেছে ফরেনসিক ল্যাবের কয়েকজন সদস্য।”

“আমি সন্দেহ করেছিলাম। তবে আপনি আসলটা পেলেন কোথায়? ওরা তো পালটিয়ে দিয়েছে। ”

” কেসের ভার হাতে পাওয়ায় পর পুরো কেসের ফাইল দেখেই আমার মনে হয়েছিলো যা দেখছি এসব সত্য নয়। এসব আমাদের দেখানো হচ্ছে বলেই আমরা দেখছি। আড়ালে অনেক বড় সত্য লুকিয়ে আছে। তাদের দেখানো সব কিছুতেই আমার সন্দেহ হচ্ছিল। ফরেনসিক রিপোর্ট ও এর বাইরে নয়। সন্দেহের সত্য মিথ্যা যাচাই করার পরিকল্পনা মাথায় এলো প্রভাত মির্জার লাশ দেখার পর পরই। ফরেনসিক রিপোর্ট যদি কেউ পাল্টিয়ে থাকে তবে আজ নজরদারি করলে ধরা পড়বে। তাই আমি তুরাগের ফ্ল্যাট থেকে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে মালিবাগে গেলাম। সেখানে সি আইডির প্রধান কর্যালয়। সালাহ উদ্দিন স্যারের সহযোগিতায় ফরেনসিক ল্যাবের ভিতরে অতি সুক্ষ্ম জায়গায় কয়েকটা সিসিটিভি ক্যামেরা বসালাম। যা ল্যাবের কেউ জানে না। ক্যামেরা বসানোর পর আমি কন্ট্রোল রুমে বসে ফুটেজ দেখতে লাগলাম। তারপর লাশ ল্যাবে পাঠানো হলো। দায়িত্বরত ডাক্তার তার কাজ শুরু করলেন। কাজ শেষে খুনীদের ঠিক করা লোক, ডাঃলিপিকা, ডাঃ সাজিদ, ডাঃ জাহাঙ্গীর, রিপোর্ট মেকার ফিরোজ, নিজাজ ল্যাবের মাঝে এক হলো৷ খানিক কানাকানি করলো তারপর রিপোর্ট তৈরি কাজে লেগে পড়ল। ফিরোজের পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে সেটা দেখে দেখে টাইপ করতে লাগল। বুঝলাম খুনীরা চিঠি পাঠিয়ে ডিরেকশন দিয়েছে আর ফিরোজ সে অনুযায়ী রিপোর্ট বানাচ্ছে। রিপোর্ট বানিয়ে মিথ্যা রিপোর্ট থানায় পাঠাল। সিসিটিভি ফুটেজ, মিথ্যা রিপোর্ট সব এক করে আমি সালাহ উদ্দিন স্যারকে দেখালাম। সাথে সাথে স্যার পদক্ষেপ নিলেন। তাদের গ্রেফতার এবং জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো। চাপের মুখে সব শিকার করলো তারা।”

“কী স্বীকার করল?”
কথার মাঝে ফোঁড়ন কেটে বলল অধরা। নিতিন বলা শুরু করল,
” প্রতিভা খুন হওয়ার দিন পাঁচেক আগে এই পাঁচজনের কাছে একটা করে বেনামি চিঠি আসে। যাতে লেখা ছিলো, ফরেনসিক রিপোর্ট পাল্টানো এবং মিথ্যা জবানবন্দি দিলে তাদের মোটা অংকের টাকা দেয়া হবে। একটা ফরেনসিক রিপোর্ট পালটানো, এবং মিথ্যা জবানবন্দির বিনিময়ে তারা পাবে জনপ্রতি এক লক্ষ টাকা। ছ’টা রিপোর্ট বদলাতে হবে। বিনিময়ে একজন পাবে ৬লাখ টাকা করে। পঞ্চাশ হাজার কাজ করার আগে ও পঞ্চাশ হাজার কাজ শেষে। ফরেনসিক ল্যাবের দায়িত্বরত ব্যক্তিবর্গের মাঝে এরা ছিলো সবচেয়ে লোভী শ্রেনীর । তাই হয়তো খুনী তাদেরই টার্গেট করেছে। সামান্য কাজের বিনিময়ে ৬ লাখ টাকা আয়ের লোভ সামলাতে পারল না কেউই। দিক বেদিক বিচার না করে সুযোগ লুফে নিল। চিঠিতে লেখা ছিলো, রাজি থাকলে পরদিন সকাল বেলা ধানমন্ডি লেকের পাড়ে যেতে। অগ্রিম টাকাটা সেখানেই একটা ছোট বাচ্চাকে দিয়ে দেয়া হবে। পরদিন তারা সেখানে গেলো। চিঠি মোতাবেক একটা বাচ্চাকে দিয়ে টাকা পাঠানো হয়। টাকা পেয়ে খুশিতে গদগদ হয়ে তারা তাদের কাজ শুরু করে। খুনীর কথা মতো মিথ্যা রিপোর্ট বানানো, সেই অনুযায়ী জবানবন্দি সব করে তারা। সব ঠিকঠাক ছিলো তারা তাদের প্রাপ্য ও পেয়েছে। কিন্তু শেষ সময় এসে ধরা খেয়ে গেলো। এমনটাই স্বীকার করেছে তারা। ”

নিতিনের কথা শুনে অধরা আফসোসের সাথে বলল,
” ডাঃ লিপিকাকে আমি কত ভালো ভেবেছিলাম। কত বিশ্বাস করতাম! আর সেই কিনা এসব করলো!”
” কাউকেই সহজে বিশ্বাস করা উচিত নয়। কাউকেই না। যা সহজ মনে কাউকে বিশ্বাস করে তারাই ঠকে। আর আমাদের প্রফেশনে তো বিশ্বাস শব্দের চেয়ে সন্দেহ শব্দের প্রয়োগ বেশি থাকে। এগুলো মাথায় রাখবেন। সারাদিন আসামীদের সন্দেহ করতে করতে আমার তো আমার বউয়ের প্রতি সন্দেহ জাগে। যদিও তা সেই সন্দেহে সায় জানানো হয়ে উঠেনা।”

মামলার কথার মাঝে পরিবারের কথা বলাটা অপ্রাসঙ্গিক। অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা কোন কালেই পছন্দ নয় অধরার। তাই সে এসব বিষয় এড়িয়ে চলে। সে মানে কাজের সময় শুধুই কাজ। পরিবার তখন কেউ না। আজ অবধি থানার কেউ শুনেনি অধরার মুখে তার মা কিংবা স্বামীর গল্প। নিতিনের এই খাতছাড়া কথায় অধরা ভ্রু কুঁচকাল। নিতিন জিহ্বা কামড়ে বলল,
“স্যরি, অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে ফেললাম।”

কথা ঘুরিয়ে অধরা বলল,
“ওই পাঁচজনের ভাষ্যমতে তারা খুনীদের দেখেনি, তাই তো? ”
নিজেকে স্বাভাবিক করে নিতিন জবাব দিল,
“হ্যাঁ। অবশ্য, তারা না দেখলেও খুনী বের করা এবার আমাদের জন্য অতি সহজ হয়ে গেছে। একজনকে তো পেয়েই গেছি এবার বাকিদের ধরবো। আমি নিশ্চিত প্রভাত মির্জাকে খুন অভিলাষই করেছে।”

“কিন্তু অভিলাষ কিভাবে খুন করবে? সে তো মারাই গেছে।”
“ফাইলের দ্বিতীয় পেপারটা দেখুন। তাতে লেখা আছে, অভিলাষ মনে করা পোড়া লাশের সাথে অভিলাষের ডি এন এ ম্যাচ করে নি। আমার ধারণা মর্গে থেকে বেওয়ারিশ লাশ পুড়িয়ে অভিলাষের নাম দিয়ে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। তারপর ফরেনসিক রিপোর্ট পালটিয়ে ঘটনা নিখুঁত করা হয়েছে। অভিলাষ বেঁচে আছে আর এসব করেছে অভিলাষ নিজেই। ”

নিতিনের কন্ঠে স্পষ্টতর দৃঢ়তর। অধরার চেহারায় বিস্ময়, সন্দেহ।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here