আঁধারে ঢাকা ভোর পর্ব-১৩

0
1509

#আঁধারে_ঢাকা_ভোর
#অধ্যায়_তেরো
প্রজ্ঞা জামান দৃঢ়তা

তুষারের চুল ভেজা বৃষ্টির ফোঁটা নাক বেয়ে টপটপ করে ঠোঁটে পড়ছে। সে পানিটুকু ওষ্ঠ দ্বারা মুখের ভেতরে নিয়ে নিচ্ছে। আভা চমক লাগা দৃষ্টিতে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকে তার দিকে। হঠাৎ তার আগমন আশা করেনি বলে একটু থমকে যায়!

ফারহা বারান্দায় গিয়েছে তাই তুষার আভাকে তার ঘরে একা দেখে চমকে গেল। তুষার তাকে দেখে অবস্থা বুঝতে পেরে পরিবেশ স্বাভাবিক করার জন্য প্রসন্ন হেসে বলল, “আরে আপনি কেমন আছেন?”

“আভা মৃদু হেসে বলল, ” ভালো আছি। আপনি? ”

“এইতো ভালো।”

ফারহা তাদের কথার মাঝখানে এসে বলল, “এই ভাইয়া! তুমি সবসময় ওকে আপনি করে কেন বলো? তোমার জুনিয়র না ও? তুমি করেই তো বলতে পারো?”

তুষার বলল, ” তুই চুপ থাকবি?”

আভা বলল, “ওতো ঠিক বলেছে আপনি আমাকে তুমি করেই বলবেন, আপনি আমার অনেকটা সিনিয়র।”

তুষার চওড়া হেসে বলল, “মাই প্লেজার।”

আভা চলে গেল ফারহার ঘরে। তুষার যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল আরেকটুর জন্য সে ধরা পড়ে যাচ্ছিল। ছবিটার উপরের কাপড় টেনে দিয়ে বিছানায় বসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।

আভা চলে যাওয়ার জন্য পারভীন বেগম থেকে বিদায় নিতে গেল। তিনি আজকে তাকে ছাড়বেন না বলে জানিয়ে দেন। কিন্তু সে কিছুতেই থাকবে না। এদিকে ফারহা গাল ফুলিয়ে বসে আছে, যদি সে চলে যায় আর কথাই বলবে না বলে হুমকি দিল। তবুও সে চলে যেতে চাইল, কিন্তু এতটা জোরে বৃষ্টি হচ্ছে তাকে পারভীন বেগম যেতে দিলেনই না। অগত্যা তাকে থেকে যেতে হলো।

সন্ধ্যা নেমে এসেছে। তুষার বারান্দায় বসে নিকোটিনের ধোঁয়া উড়াচ্ছে। ফোনের স্ক্রিনে থাকা মানবীর দিকে তাকিয়ে চেপে রাখা যন্ত্রণাটা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠেছে। নিকোটিন জ্বালিয়ে নিজের ভেতরের পোড়ানোটাকে কমাতে চাচ্ছে। ভাবছে আর একটু হলে আভা কী বুঝে যেত এটা তারই ছবি সে একেঁছে।

কোনদিন যে নিজের অজান্তে এই মায়াবী আঁখিতে ডুব দিয়েছে, সে নিজেই জানে না। কিছু বিষয় কখনো আমাদের হাতে থাকে না। তারমধ্যে ভালবাসা অন্যতম। ভালবাসা বলে কয়ে তো হয় না! ব্যস হয়ে যায়!

তার জীবনেও ভালবাসা এসেছে অদ্ভুতভাবে। জীবনের ২৫টা বসন্ত পার হয়ে যাওয়ার পর সে বুঝতে পারল, কারো কাজল কালো চোখে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে পথ হারা পথিকের মতো। যেখান থেকে তার এ জীবনে আর ফেরা সম্ভব নয়।

ট্রেনে সেই প্রথম দেখা থেকেই এই মেয়েটিকে সে ভালোবেসে ফেলেছে। প্রথমে তো ভেবেছে এটা কোন মোহ কিংবা আবেগ! কিন্তু ধীরে ধীরে নিজের সাথে নিজে বোঝাপড়া করে বুঝেছে, না এটা কোনো ক্ষণকালের মোহ নয়। তারচেয়েও বেশি! এটা সর্ব প্লাবী প্রেম! যেখানে যুগ যুগ ধরে তারই মতো যুবকেরা প্লাবিত হয়েছে। দগ্ধ হয়েছে, কিন্তু উঠে আসা আর তাদের হয়নি।

অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে আভাকে দেখলে তার মতো স্ট্রং ছেলেও কেমন নার্ভাস হয়ে যায়। বুকের ভেতরটা কেমন ধুকপুক ধুকপুক করে। নিজে ধরা পড়ে যাবে এই ভয়টা তাকে সারাক্ষণ অস্বস্তিতে ফেলে রাখে। মনে হয় সে কোনোভাবে কথায় বা কাজে সে বুঝিয়ে ফেলবে নাতো সে আভাকে ভালবাসে।

ট্রেনে যেদিন প্রথম দেখা হয়েছে সেদিন সে জানতো না, এই মেয়েটি তার কাছে অসাধারণ হয়ে যাবে। যার নামটা পর্যন্ত সে জানত না। অনেক খুঁজেছে সে আভাকে। সেই ট্রেনে নিয়ম করে আসা যাওয়া করেছে শুধু একটাই আশায় যদি সেই অপরিচিতার দেখা মিলে! কিন্তু না সে দেখা পায়নি। যখন ভার্সিটিতে দেখা পেল তখন এই এক বছরে তাকে মনের কথা বলার ইচ্ছে থাকলেও সাহস সে পায়নি।

এখন ভাবছে তার ফাইনাল পরীক্ষা সামনে। এখন যদি না বলে পরে আর বলাই হবে না। সে ভয় পাচ্ছে এই জন্য যে, যদি আভা সবটা শুনে তাকে প্রত্যাখ্যান করে? তবে সে মানতে পারবে না৷ কারণ এই প্রথম কোনো নারী তাকে ভীষণভাবে টেনেছে। নয়তো কলেজ,ভার্সিটি জীবনে কত সুন্দরী এসেছে অনেকের নিমন্ত্রণও সে পেয়েছে। কই তখন তো তাদের জন্য মন এমন করেনি। তাদের দিকে ফিরে তাকানোর ইচ্ছেও হয়নি । যে ভালোবাসা তার জীবনে এসেছে তা যে অসামান্য সে তা গভীরভাবে বুঝতে পেরেছে। তাই সেই মেয়েটিকে তার জীবনে প্রয়োজন!

ফারহার ডাকে তার চেতনা ফিরে।

“কী ব্যাপার মজনু সাহেব লাইলির কথা ভাবছেন বুঝি?” ফারহা রসাত্মক গলায় বলল।

“ধ্যাৎ কী যে বলিস না তুই! আচ্ছা শোন আমার একটা সাহায্য লাগবে। করবি?”

“কী আজকে প্রপোজ করতে চাইছিস তো?” ফারহা জ্ঞানী ভঙ্গিতে তাকিয়ে বলল।

” হু! সাহায্য করবি? কীভাবে বলা যায়? আর তোর কী মনে হয় কেমন রিয়াক্ট করবে? তোর বান্ধবী তুই তো ভালো জানিস?”

“আমি এ বিষয়ে খুব বেশি জানি না ভাইয়া। কারণ ওর মুখে প্রেম ভালবাসা নিয়ে কখনো কোনো কথা শুনিনি। শুধু ওর পড়াশোনা ক্যারিয়ার নিয়ে স্বপ্নের কথা শুনেছি। তাই কীভাবে রিয়াক্ট করবে এই বিষয়ে আমি অবগত নই। রিয়াক্ট যাই করুক তোর উচিত আজকের সুযোগটা কাজে লাগানো। এমন সুযোগ নাও পেতে পারিস।”

তুষার কিছুক্ষণ ভেবে বলল, “তুই রাতে ওকে ছাদে নিয়ে আসবি। আমি আগে থেকেই সেখানে থাকব। তুই ফোনের কথা বলে নিচে চলে আসবি। তারপর আমি আমার কথাগুলো বলব। এভাবে করলে কেমন হয়?”

ফারহা হাত উঁচু করে চওড়া হেসে তুষারের সাথে হাই ফাইভ দিয়ে বলল, ” এই না হলে আমার ভাই! গুড আইডিয়া! প্রেমে পড়লে নাকি ছেলেদের বুদ্ধিশুদ্ধি সব লোপ পায়, তোমার বুদ্ধি তো দেখছি খুলে গেছে! অবশ্য সেটা আমার সাথে থাকতে থাকতেই হয়েছে।”
কথাটা বলে ফারহা জামার কলার টেনে দেখাল।

তুষার হেসে বোনের কান টেনে বলল, “অনেক পাকনামি করেছেন, এবার থামুন ম্যাডাম। যান সব ব্যবস্থা করেন।”

ফারহা টাটা বলে চলে গেল।

★★★

রাত বারোটা। আকাশে মেঘে ঢাকা আবছা চাঁদ। বৃষ্টি নেই এখন। দূরে একটা ছাদ থেকে কেউ ফানুস উড়াচ্ছে। হয়তো কেউ জন্মদিবস পালন করছে। পুরো শহর ঘুমিয়ে গেছে। জেগে আছে শুধু ল্যাম্পপোস্টের হলুদ বাতিগুলো। সোডিয়াম আলোয় দেখা যাচ্ছে রাস্তায় কোনো জনমানব নেই, শুধু কয়েকটি কুকুর এদিক-সেদিক দৌঁড়াদৌঁড়ি করছে। কিছুক্ষণ পরপর ঘেঁউ-ঘেঁউ শব্দে তাদের জেগে থাকার কারণ জানান দিচ্ছে।

তুষার ছাদের কার্নিশে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে তার আরাধ্য মানুষটির জন্য। ভেতরটা কেমন ছটফট করছে, তার মনের কথা শুনে আভা কী মেনে নিবে তাকে! স্বীকার করবে তার ভালবাসা? নানা প্রশ্নে ভেতরটায় অস্বস্তি তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। কিছু হারানোর ভয়, কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা দুটোর মিশ্রণে অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে তার! এই অনুভূতি নতুন! অচেনা!

সে অনুভূতি গুলো তাকে এক দন্ড শান্তি দিচ্ছে না। নানা ভাবনায় আচমকা ছাদের দরজায় কেউ আসার শব্দ পেয়ে ছট করে সামনে থেকে সরে সে আড়ালে চলে গেল।

আভা ও ফারহা এসেছে।

“ওয়াও! দোস্ত দেখছিস কারা যেন ফানুস উড়াচ্ছে!” আভা খুব উৎসাহের সাথে বলল।

ফারহাও সেদিকে তাকিয়ে বলল, “আসলেই তো অন্ধকারে দূর থেকে জোনাকির আলোর মতো মনে হচ্ছে! দাঁড়া জুম করে একটা ছবি তুলে নেই। কথাটা বলতেই হাতের দিকে তাকিয়ে বলল, ইশ! ফোনটা রুমে রেখে আসছি। তুই থাক আমি এখুনি আসছি।” ফারহা নিচে নেমে গেল।

ছাদে শীতল বাতাস বইছে, সেই বাতাসে মন প্রাণে অন্যরকম একটা ভালো লাগা দোলা দিয়ে যাচ্ছে।
তুষার ধীর পায়ে এগিয়ে আসলো আভার দিকে। আভা কার্নিশে হাত রেখে খুব মনোযোগ দিয়ে ফানুসগুলোর উড়ে যাওয়া দেখছে। তুষার তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে কখন সে টেরই পেল না।
চোখ মেলে ফারহা আসছে কিনা পেছনে ফিরতেই তুষারকে দেখে চমকে গেল, চোখ কচলে বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে রইল! এতটাই অবাক হয়েছে যে কিছুটা সময় কোনো কথাই মুখ দিয়ে বের হলো না!

তুষার তার সুকুমার মুখ তুলে মিটিমিটি হাসছে।
আভা স্পষ্টভাবে তার হাসিটা দেখতে পেল। সে হাসিতে কী ছিল সে জানে না। শুধু জানে এই মুহূর্তটা কেমন অদ্ভুত! একটু অন্যরকম! খুব কষ্টে ধীর গলায় টেনে টেনে বলল, “আ-আ-আপনি?”

তুষার তার ভুবন ভোলানো হাসি দিয়ে বলল, “আমার বাসার ছাদে কী আমি আসতে পারি না?”

“ওহ! সরি আসলে আপনাকে হঠাৎ দেখে চমকে গিয়েছিলাম তো তাই।” আভা স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে বলল।

“আসলে ঘুম আসছিল না, তাই ভাবলাম একটু ছাদে এসে মিহি বাতাসে মনকে চাঙ্গা করে যাই। আমার প্রকৃতি খুব ভালো লাগে। যখন প্রকৃতির কাছে আসি সব ক্লান্তি হতাশা উধাও হয়ে যায়, নিজেকে খুঁজে পাই।”

আভা এতক্ষণে সহজ হয়ে বলল, ” আমারও প্রকৃতি খুব প্রিয়। বাতাসে মাটিতে কেমন একটা মাতাল করা ঘ্রাণ পাই। সে ঘ্রাণে নিজেকে হারিয়ে ফেলি বারংবার, আবার ফিরেও পাই এই প্রকৃতিতেই।”

কথাগুলো বলার সময় তুষার খেয়াল করল তার চেহেরায় কেমন প্রফুল্লতা! চোখের পাতার অদ্ভুত অবনমনে যেন মুগ্ধতার ছাপ স্পষ্ট। এতটা বিমোহিত ভাব সে কখনো আভার চোখে দেখেনি।

তুষার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য আরও কিছুটা সময় এমন কথোপকথন চালিয়ে গেল।

“তোমার বুঝি প্রকৃতি খুব পছন্দ? ”

“হুম! খুব পছন্দ। আমার জীবনে ছোট বেলা থেকে আমার বন্ধু হচ্ছে প্রকৃতি।”

“কোথায় কোথায় বেড়াতে গেছো?”

” বাইরে কোথাও যাওয়া হয়নি। তবে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে। যখন আমি নিজে প্রতিষ্ঠিত হব তখন পুরো দেশ ঘুরে দেশের বাইরেও প্রকৃতির ঘ্রাণ নিতে যাব। আমাদের গ্রামের নাম স্বপ্নপুর। নামটা যেমন সুন্দর! গ্রামটাও স্বপ্নের মতোই সুন্দর! নদী, সবুজ মাঠ,ধান ক্ষেত, গোলা ভরা ধান সবকিছু অন্যরকম সুন্দর। বাবার সাথে যখন সন্ধ্যার পর নদীতে যেতাম খুব সুখী মনে হতো নিজেকে। মনে হতো আমি যেন কোন স্বর্গে আছি। আমার বাবা সেই স্বর্গের রাজা। আর আমি স্বর্গের রাজকুমারী।”

“তোমার স্বর্গে কোনো রাজকুমার নেই অরনী?” তুষার কেমন বিমোহিত গলায় প্রশ্নটা করল।

আভা প্রশ্নটা শুনে চমকে গেল। তুষারের গলার স্বর কেমন নতুন ঠেকল তার কাছে। এই কথাটায় এমন কিছু ছিল যা তার মস্তিষ্ককে সজাগ করে দিল। এমনিতেও তুষারের তার প্রতি যত্ন বা কলেজে সবসময় খবরাখবর নেয়াটা ভালো লাগে। মাঝে মাঝে দূর থেকে তুষার যে তাকে দেখে সেটাও তার নজর এড়ায়নি। কোনো ভাবনাকে যখন বেশি পাত্তা দেয়া হয়, তখন সেটা লাই পেয়ে ডালপালা গজাতে থাকে। তাই সে সবসময় এটাকে এড়িয়ে যেতে চেয়েছে। আজও সেটাই করতে চাইল।

কিন্তু তার কিছু বলার আগেই তুষার তার চোখে চোখ রেখে স্নিগ্ধ গলায় বলল, “আমি কী তোমার ভ্রমণের সাথী হতে পারি অরনী? তোমার সেই স্বর্গ রাজ্যে একটু জায়গা হবে আমার? আমি তোমার স্বর্গের রাজকুমার হতে চাই, আমাকে সে সুযোগ দিবে তুমি?”

আভা কেমন চমক লাগা চোখে তাকাল তার দিকে। একটা শীতল স্রোত তার শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেল। এমন একটা মুহূর্তের জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না! তুষারের প্রতিটি কথায় অবাক হয়েছে সে। ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইল, একটা শব্দও বের হলো না তার মুখ থেকে।

তার চুপ থাকা দেখে তুষার বলল, “আমি জানি তুমি অবাক হচ্ছো। আসলে আমি নিজেই জানি না আমি কখন তোমাকে পছন্দ করে ফেলেছি। ট্রেনে সেদিন অদ্ভুতভাবে আমাদের দেখা হয়েছিল। আমি তোমাকে বলেছিলাম আমাদের দেখা হবে। দেখো সত্যিই আমাদের দেখা হয়ে গেল।”

একটু থেমে তুষার আবার বলল, “জানো সেদিনের পর থেকে প্রতিদিন আমি তোমাকে কারণে অকারণে ভেবেছি। রাতের পর রাত জেগে কাটিয়েছি শুধু তোমার মায়াবী মুখখানা মনে করে। অনেক চেষ্টা করেছি তোমাকে খুঁজে বের করার জন্য কিন্তু পাইনি। প্রায় আমি সেই ট্রেনে ওঠে যেতাম, মনে হতো ট্রেনেই আবার তোমাকে ফিরে পাব। কিন্তু না পাইনি। তারপর যখন এর দুই মাস পর তোমাকে ভার্সিটিতে দেখলাম অবাক-খুশি দুটোই হয়েছিলাম।”

আভা চুপ করে শুনছে।

“প্রথমে তোমার সামনে গেলাম না। বুঝতে পারছিলাম না, তুমি আমাকে কীভাবে নেবে! তারপর ফারহার থেকে রোজ তোমার খবর নিতাম। সেদিন বই কিনতে গিয়ে দেখা হলো তোমার সাথে। কথা বলে দেখলাম আমাদের যে আগে দেখা হয়েছিল, সেটা তুমি স্বীকার করলে না। অপরিচিতের মতো ব্যবহার করলে আমার সাথে। তাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তোমার সাথে প্রতিদিন ক্যাম্পাসে টুকটাক কথা হলেও, তুমি সহজ হতে চাইলে না আমার সাথে। তখন ভেবেছি আমার মনের কথা জানিয়ে দেব তোমাকে, কিন্তু তোমার এড়িয়ে যাওয়া দেখে মনে হয়েছিল তোমাকে কিছুদিন সময় দেই। বছর খানেক যাক, ধীরে ধীরে সহজ হয়ে যাবে। তোমার আশেপাশে ছায়ার মতো ঘুরতে লাগলাম। আমি জানি না কেন তুমি আমাকে সবসময় এড়িয়ে যেতে চেয়েছ।”

একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সে আবার বলল, “এই এক বছর ধরে আমি নিজের সাথে লড়াই করেছি। নিজেকে বারবার জিজ্ঞেস করেছি। আমার অনুভূতিকে সুগভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। সবশেষে একটাই উত্তর পেয়েছি ‘আমি তোমাকে ভালবাসি অরনী।’ সেদিন থেকে যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছি। হয়তো সেদিন থেকে যেদিন আমি তোমার ভেতরে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখেছি। বলো না অরনী তুমি কী আমাকে তোমার স্বর্গ রাজ্যে ঠাঁই দিবে?”

আভা কিছুক্ষণ চুপ করে রইল,লম্বা শ্বাস নিয়ে ম্লান গলায় বলল, “আমার স্বর্গ রাজ্যে কোনো রাজকুমারের জায়গা নেই মেহেরাব তুষার। নেই অন্য কোনো পুরুষের ঠাঁই।” কথাটা শেষ করেই সে দৌঁড়ে চলে গেল।

তুষার ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইল। তার চোখ জোড়া আহত! মুখের আদলে স্পষ্ট নিশছিদ্র মলিনতা। চেয়েও যেন নড়তে পারল না। আকশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। পুরো শরীর জুড়ে অসাড়তা নেমেছে, অন্তর আত্মা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। এভাবে আভা তাকে ফিরিয়ে দিবে সে যেন ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি! একটা গূঢ় যন্ত্রণা বুকের ভেতরটায় খোঁচাতে লাগল। তার মনে বিশ্বাস ছিল তার ভালবাসাকে সে গ্রহণ করবে। তীব্র বিরহ যন্ত্রণা অন্তরের আনাচে-কানাচে বিষক্রিয়া ছড়িয়ে দিতে লাগল। যে বিষে পীড়া তো আছে, কিন্তু মৃত্যু নেই!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here