নেশাক্ত প্রণয়োণী পর্ব_০২

0
1868

#নেশাক্ত_প্রণয়োণী
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_০২

‘এ অকর্ম্য মেয়ে কাজ করছেন না কেনো, জলদি জলদি হাত চালান। কাস্টমার্সের কাছ থেকে যেন নালিশ না শুনি।’

আনজুমা ওয়েট্রেসের ড্রেস পরিহিতা অবস্থায় মুখে মাস্ক লাগিয়ে ক্লাবে জিনিসপত্র গুছাচ্ছে। সেখানে ম্যানেজার তার ভাবনার অগোচরে এসে কুটিল কথা শুনাতে প্রস্তুত থাকে। তার সঙ্গী দুজন ক্লাইন্টের বেডপার্টনার হয়ে ভীষণ ক্লান্ত। সেও একসময় বহু ক্লাইন্টের বেডপার্টনার হওয়ার প্রস্তাব পেয়েছে। যেমনটা গতরাতের অচেনা যুবকের কটাক্ষপূর্ণ বাক্যে সাক্ষী বটে। সে নিজ শরীর বিলিয়ে দেওয়ার মত মেয়ে নয়। ফলে আপ্রাণ চেষ্টায় চোরেচুপে পালিয়েছে। কিন্তু তার দুজন সঙ্গী অভ্যস্ত শরীর দুলিয়ে বিছানায় যেতে। বিধেয় নাইট আউট করে ক্লাবরুমে দুজনে গভীর ঘুমে মগ্ন।
ছেলে দু-সঙ্গী ভার্সিটি গিয়েছে। অতএব, পুরু রেষ্টুরেন্টের কাজ এসে ঠেকল আনজুমার কাঁধে। না পারছে ফেলতে, না পারছে দুহাতে সামাল দিতে। ম্যানেজার দুপুরের সময় কল দেয়। উক্ত সময় ছিল যোহরের ওয়াক্ত। আযান দিয়ে ছিল। ম্যানেজার হিন্দু ধর্মালম্বী হওয়ায় আযানের সময় নিয়ে ওত তোয়াক্কা করে না। তিনি একবাণী জানিয়ে দেয়।

‘আনজুমা গতরাতে আপনি চলে গিয়ে ছিলেন। দুপুরের লান্স শেষেই যেন কাজে দেখি।’

কথার বিপরীতে আনজুমা মুখ খুলার পূর্বেই কল কাট করে দেয় তিনি। অসহায় নয়নে কলের দিকে তাকিয়ে ভাবে।

‘আশফিকে বলে ছিলাম পার্কে নিয়ে যাব। নাইট ডিউটি করার কারণে ডে টাইম ফ্রি থাকি। গতকালের ন্যাকামির জন্য তাও মিস গেল।’

‘আম্মু আমলা কয়টায় বের হবো!’

ছেলের কথা শুনে বুকের মধ্যে ক্লান্তিকর ছেদ সৃষ্টি হয়। নিরব দৃষ্টিতে ছেলেকে কোলে নিয়ে সোফায় বসে। আশফির গালে গাল লাগিয়ে আদুরীয় গলায় বুঝায়।

‘তোমার আম্মু কাজে গিয়ে প্রচুর টাকা নিয়ে আসবে। তুমি এতক্ষণ ভদ্র,ভাল ছেলের মত খেলবে, বিউটিখালা এলে মুটেও দুষ্টামি করবে না ওকে!’

আশফি মাথা দুলিয়ে হে বুঝায়। ছেলেকে বুঝ দিয়ে বিউটি খালাকে কল দেয়। তিনি হলো আশফির নামেমাত্র খালা। অথাৎ নামডাকে খালা হয়। সবাই ছেড়ে দিলেও এক বিউটি খালাই তাকে আগলে রেখেছে। সংসার-সামলে এ অসহায় মেয়ের সাহায্যে এগিয়ে আসে। কখনো উফ,না বলে অস্বীকার করেনি তিনি। ফোন রিসিভ হতেই সালাম বিনিময় করে বলে,

‘তুমি আজ আসতে পারবে! ছেলেটা একা বাসায়।’

‘চিন্তা করো না মা আমি আসছি।’

মনির এককথায় দুশ্চিন্তামুক্ত হলো আনজুমা। ছেলেটা মলিন মুখ করে চেয়ে আছে। অবুঝ হলেও ওতটা নয় যে মায়ের করুণ দশা বুঝার ক্ষমতা হবে না। মাকে থামাচ্ছেও না বরং হাসিমুখে বিদায় দিতে বুকে প্রিয় খেলনার গাড়ি চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। দরজায় বেল পরায় খুলে দেখে বিউটিখালা এসে পড়েছে। তিনি প্রবেশ করলে বিপরীতে বিদায় নেই আনজুমা। দৃঢ় শ্বাস নেই পূর্বকথিত ঘটনার কথা ভেবে।

‘হেই গার্ল ইউ লুক সো টায়ার্ড, ইউ এগ্রি দেন কাম উইড মি।’

কারো চাপা,সূক্ষ্ণ কণ্ঠ শুনে আনজুমা চোখ তুলে থাকায়। দিনবিকেলে কেউ ক্লাবে আসে না। তাহলে এ ব্যক্তিই বা কে! ঢোক গিলে হাসার প্রচেষ্টা করে বলে,

‘সরি স্যার আইম ডাজেন্ট লাইক এনোদার গার্ল।’

‘ওহ ডোন্ট বি সিলি গার্ল….।’

বলতেই যুবকটি অপ্রতিভভাবে আনজুমার পিঠের নিচ বরারব স্পর্শ করে। শরীর রাগে রিরি করে উঠে। বিধেয় হাত সরিয়ে ঠাস করে চড় লাগায় উক্ত যুবকের গাল বরাবর। চড় খেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে আনজুমার দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ইউ ব্লা*ডি চি*প গার্ল। হাউ ডেয়ার ইউ টু স্লাপ মি।’

কোনো রুপ কথা না বলে আমেরিকান যুবকটিকে তীব্রজোরে ধাক্কা দেয়। উল্টো পায়ে তড়িৎবেগে হলরুমে ডুকে দরজা আঁটকে দেয়। তবুও কাজ হলো না। বাহির থেকে কড়াঘাত,চেঁচানোর শব্দ ভেসে আসছে।
দেখতে আমেরিকান যুবক, চামড়া অত্যধিক সাদা,ঠোঁট গোলাপি। এমন বর্ণধারী মানুষ কমবেশি ট্যুরিস্টদের মাঝে দেখা যায়। দেশের মানুষ আর বিদেশী মানুষের মাঝে বর্ণরুপে শতখানেক তফাৎ রয়েছে। ধুড়ুধুড়ু বুকে দরজার দিকে চেয়ে আনজুমা। কড়াঘাত করে যুবকটি অশ্লীল কথ্য বয়ান করে চলেছে।

‘প্লিজ লিভ মি স্যার।’

আনজুমার করুণ কণ্ঠ যুবক শুনেও যেন শুনল না। তার মাথায় ভূত চেপেছে। মেয়েটি কিনা তারই বন্ধুযুগলের সামনে চড় মেরেছে। বিশেষত্ব তার ইগো হার্ট হয়েছে। তার জ্ঞানমতে ইগো হার্টের শাস্তি হলো বিছানায় মজা বুঝানো। আজ মেয়েটিকে বের না করে শান্তি পাবে না সে। তার কড়াঘাতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তার বন্ধুযুগল কড়া শাসনের সুরে বলছে।

‘ইয়ার হার্ডলি পানিশ’ড দ্যাট গার্ল। উই অল আর ইঞ্জয় দ্যা ডে।’

তিক্ষ্ণতা বেড়ে গেল,নিরেট দন্ডের মত লাগাতার হলরুমের দরজায় ঘাত-কড়াঘাত তীব্র হতে তীব্রতর হচ্ছে। কখন না কখন দরজাটাই ভেঙ্গে হুমড়ি খেয়ে পড়ে তারা। যুবকের সঙ্গে যে তার লাপাঙ্গা বন্ধুযুগলও তাল মিলিয়ে আঘাত করছে। কি করবে দিগিদিক হারিয়ে মরণপথ খুঁজতে আরম্ভ করে সে। প্রার্থনাপত্র পাঠিয়ে চলেছে আল্লাহর কাছে।

‘লিসেন মা*ফা*ক* ওপেন দ্যা ডোর। আদারওয়াইস ইউর পানিশমেন্ট উইল বি ডাবাল।’

কানচেপে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে দেয় আনজুমা। কেউ নেই যে এখন সহায় হয়ে প্রতিবাদ করবে। ইতিমধ্যে শব্দ নুয়ে গেল। মনে হচ্ছে সবাই দরজার সামনে থেকে সরে পড়েছে। কাঁপা কাঁপা হাতে দরজার ছিটকিনিতে হাত দেওয়ার পূর্বেই কেউ যেন হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে। ধড়াস করে হৃদস্পন্দন থেমে গেল তার। শক্ত পুরুষালী হাতের চাপ তার হাতের গোড়ালিতে। দেখে গলায় শব্দ বদ্ধ হয়ে গেল। ক্রন্দনের তীব্রতায় ফোলা চোখে হাতের মালিকের দিকে তাকায়। জোরসরো ধাক্কা খায় মস্তিষ্কে। হাতের মালিক অন্য কেউ নয় গতরাতের সেই বদ*খোঁ*ড় যুবক। সে এখানে হলরুমে কি করছে ! অবুঝের মত ভেবে চোখজোড়া দিয়ে ক্ষণিক দূরে নজর ঠেকায়। দেখতে পেল শুধু তারা নয় বরং অন্যান্য টেবিলে আরো দর্শকশ্রোতা রয়েছে। যারা আহাম্মকের মত তার কান্নার দৃশ্য দেখছে। অস্বস্তিকর পরিস্থিতির অঙ্কুর পর্ব হয়ে উঠেছে আনজুমা। মাথানত করে তার হাত যুবকের হাত থেকে সরানোর প্রয়াস করে। আরভীক এর চোখে ক্ষোভ হলেও একরাশ কুবুদ্ধি মস্তিষ্কে ভীড় জমিয়েছে। যা ব্যক্ত করে সে।

‘হাত সরানোর ব্যর্থ চেষ্টা মেয়ে। নাম বললে কাম সারবে ভেবে নাও কোনটা করবে!’

ফাটাফাটা দৃষ্টিকোণে হা করে তাকায় যুবকের দিকে। একডজন গালি দিতে মন চাইছে আনজুমার। সঠিক পথ না পেয়ে ভুল করে হলরুমেই কেন যে ঢুকতে গেল। এখন পস্তানো ছাড়া উপায় নেই। আরভীক হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে,

‘গিভিং ইউ থ্রিমিনিট। সেয়ে অর গিভ ইউর বডি টু দেম।’

‘আনজুমা আবান।’

সশব্দে বলে দেয়। কোনোরুপ করুণাহীন, অসহায়ত্ব প্রকাশবিহীন বলায় আরভীক মনে মনে মুচকি হাসে। হাত না ছাড়িয়ে হিতে বিপরীত প্রতিক্রিয়া করে। থতমত খেল সায়াজ ও ফাহাদ। তারা রাত হতে সকাল অব্দি ক্লাবে ছিল। কোথাও পা নাড়িয়ে যায়নি। আরভীক চেয়ে ছিল তার কারর্স ফ্যাশনেট মিটিং ক্লাবেই না হয় স্টার্ট দিবে সন্ধ্যা সাতটায়। তখনো বিকেল তিনটা চলছিল। বিধেয় হলরুমের সোফার কোণে এসির নিচে বসে তিনজনে আলাপচারিতায় ব্যস্ত ছিল। বারতি জনগণ ক্লাবে বসে আড্ডা দিচ্ছে। এতে ভ্রুক্ষেপ নেই তাদের। ফাহাদ মজার ছলে আরভীককে দেওয়া মেয়েদের লাভলেটার্স পড়ে শুনাচ্ছে। সায়াজ বেচারার মত মুখ করে পুরাতন ডায়লগ বলে যাচ্ছে।

‘এ জীবন রেখে লাভ কি! সুন্দরী মাইয়াহোক্কল খালি আরভীকরে চিঠি দেয়। আমাগোর মত গরিব স্টাইলিশ ইয়াংম্যা পাত্তা পায় না। ঘোর অপরাধ করছিস তুই আরভীক, ঘোর অপরাধ বলে দিলাম।’

‘ওরা আমায় দেয়,তাতে তোর জ্বললে লেবুর মদ খেয়ে বসে থাক।’

আরভীক এর জবাবে হাসিঠাট্টা বেশ চলছিল। ইতিমধ্যে কাউকে হলরুমের দরজা স্বশব্দে আঁটকাতে দেখে নিশ্চুপ হয়ে যায় পুরু হলের সদস্যগণ। আরভীক আড়চোখে মেয়েটাকে খেয়াল করেই চোখজোড়ায় উৎল্লাস পেয়ে যায়। হাত নাড়িয়ে ইশারা করে নীরব, কোলাহলশূন্য ভাব ফুটিয়ে তুলতে। তার ইশারায় বিবাত-দশায় মুখে লুলুপ এঁটে নিল সদস্যগণ। তার কথার বিরোধ যাওয়ার মত বোকা কেউ নয়। ফাহাদ,সায়াজ উৎসুক দৃষ্টিতে ওয়েট্রের্সকে দেখে। আরভীক বসা থেকে সন্তঃপর্ণে এগিয়ে যায় মেয়েটির দিকে। ওয়েট্রের্সের ড্রেসে বড্ড আকর্ষণীয় মনে হয় রমণীকে। পায়ের টাখনু অব্দি টাইড স্কার্টে আবৃত, কোমর অব্দি গোরা পাতলা টিশার্ট, বুকের উপরে গলাও আবৃত। মেয়েটির মাঝে যে শালীন গুণ বিদ্যমান। তা নিসন্দেহে বিশ্বাস করে আরভীক। কেননা ক্লাবে ওয়েট্রের্স হাটুর উপর অব্দি টাইড স্কার্ট, কোমর উম্মুক্ত করা, বুকের মাঝ বরাবর বুঝা যায় সেসব টিশার্ট পরে ছেলের মেজাজ ঘুরিয়ে রুম পার্টনার হওয়ার তাগিদ দেয়। ওয়েট্রেস মেয়েটি থেকে দশ ইঞ্চি দূরে দাঁড়িয়ে যায় সে। তাকে পেতে বাহির হতে আসা ট্যুরিস্ট যুবকের অশ্লীল বাণী মনযোগ দিয়ে শুনে আরভীক। দরজায় ঘাতের শব্দ বন্ধ হয়ে যায়। বুঝা গেল ওতপ্রোত ভাবে দাঁড়িয়ে আছে তারা। দরজা খুললেই হামলে পড়বে। যা অবুঝ আনজুমার মাথায় এলো না। কান্নার কারণে, আকস্মিক বাজে স্পর্শের মুখোমুখি হওয়ায় ষষ্ঠইন্দ্রিয়ের কথা শুনতে পারেনি। পরিস্থিতি যেমন হয়েছে তেমনি হতে প্রত্যাহার পাওয়ার লোভে দরজা খুলতে যায়। যা আরভীক এর কাছে ভালো ঠেকেনি। বিধেয় সেও থামিয়ে দেয়।
ফাহাদ,সায়াজ ঘটনার সূচনা জানলেও ফলাফল জানার ক্ষেত্রে অনাচারী হয়ে দৃষ্টি বজায় রাখে। আরভীক ইচ্ছেকৃত আনজুমার হাত তার হাতের মধ্যে আগলে পিঠ বরাবর দাঁড় করিয়ে দরজার ছিটকিনি খুলে দেয়। তৎক্ষণাৎ যুবকদল ভেতরে হামলে পড়ে। যার দরুণ মৃদু চিৎকার দেয় আনজুমা। যুবক আনজুমার দিকে শয়তানি নজরে তাকিয়ে হাত বাড়াতে নিলে স্বপক্ষে সামনে দাঁড়িয়ে যায় আরভীক। যুবক ভ্রু নাড়িয়ে আরভীক এর আপাদমস্তক দৃষ্টি বুলিয়ে ভাবান্তর হয়। তার কাছে মনে হলো যুবককে কোথাও দেখেছে। তবে আঁচ করতে পারছে না। আরভীক বাকাঁ হেসে আনজুমার হাতধরা সামনে এনে দৃশ্যমান করে। যুবকের কান বরাবর গিয়ে ফিসফিসানো কণ্ঠে শুধায়।

‘আরভীক ফাওয়াজ কান্ট শেয়ার হিজ পার্সোনাল গার্ল টু এনিওয়ান।’

যুবকের মস্তিষ্কে কড়া নেড়ে উঠে। ভর্য়াতচুক্ষে একপলক আরভীককে দেখে,মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলে,

‘সরি গার্ল ! উই আর এক্সট্রেমলি সরি।’

কি হলো তারাই বা ক্ষমা চাইল কেন কিছুই আনজুমার মাথায় ঢুকল না। অবুঝের মত পিটপিটিয়ে তাকিয়ে রইল। যুবকদল চলে গেলে আরভীক হাত ছেড়ে দেয়। এতে আনজুমা মুখ ফুলিয়ে খিটখিটে নজরে যুবকের দিকে তাকিয়ে হাত কচলাতে থাকে। কেননা শক্ত করে চেপে ধরায় হাতে লাল দাগের ছাপ ভেসে উঠেছে। মনে হচ্ছে যেন যুবক কোনো মানুষ নয় রক্তপিশাচী! যেভাবে ধরল মনে হলো তার রক্ত প্রায় চুষেই নিল।

‘হাতে খিঁচুনি ধরে নাই যে, হারে হারে হাত কচলে যাচ্ছেন।’

প্রত্যত্তুর করেনি আনজুমা। মুখ ফিরিয়ে উল্টো পায়ে হাঁটা ধরলে আরভীক এর উৎক্তমার্কা কথায় থেমে যায়।

‘টু নাইট আইম ফ্রি প্রিটিগার্ল।’

গা জ্বালাপাড়া হয়ে উঠে তার। তীব্র অসংকোচে পিছু না ঘুরে বলে,

‘থ্যাংকস ফর হেল্পিং। আইম নট লাইক দ্যা আদার্স গার্ল।’

আবৃত করার ন্যায় সন্তঃপর্ণে হলরুম থেকে বেরিয়ে যায় সে। থাকার কোনো রুচি নেই তার। যেখানে উ*ল*ঙ্গ মনের বসবাস সেখানে তার উপস্থিতি শূন্য। আরভীক দুহাত পকেটে গুঁজে আনজুমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাকাঁ হাসি বহমান করে ঠোঁটের কোণায়। তার বিপরীত পাশে শ্রেয়া নামের রমণী প্রতিটা বিষয় লক্ষ করেছে। তার উপর আরভীক এর শেষাক্ত বাক্য যেন তার কানে মধুর মত ঠেকছে। ভোগ করার উপযুক্ত সময় যেন তার হাতের নাগাল। আরভীক এর মত ধনী ছেলেকে পটিয়ে বিয়ে করতে পারলে, সে ভিক্টোরিয়ার মত রাজত্ব করবে। আরভীক ফাওয়াজ কি জিনিস ! তা ঐ ছোটলোকের মেয়ে বুঝেনি। এতে কি হলো সে বুঝেছে। বিধেয় ওয়াশরুমে গেল নিজেকে পরিপূর্ণ আবেদনময়ী করার কৌশলে। ফাহাদ, সায়াজ এগিয়ে গেল তার বন্ধুর দিকে। আরভীক তখনো কৌতুকপ্রদ দৃষ্টিতে আনজুমার চলে যাওয়া দেখছে। সায়াজ গলা ঝাড়ি দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে। তবে আরভীক উৎপাতময়ী কণ্ঠে আওড়ায়।

‘অঞ্জয়কে আমি ছাড়ব না। কাজ না করে এঞ্জয় করা তার মাথা থেকে বের করব।’

‘কিসের কাজ আর ঐ মেয়েটাকে নিয়ে কেন ঘাঁটতে যাচ্ছিস। ফরগেটেড ইয়ার।’

‘নো গায়েস সি ইজ নট লাইক আদার্স গার্ল। দ্যাটস ওয়াই আই ওয়ান্ট টু টেস্ট হার।’

ফাহাদ ও সায়াজ ফটফটা আবুলের মত মুখ করে ফেলে। তারা যেন কানে ভুল শুনেছে এমন ভাব। আরভীক চওড়া হাসি দিয়ে ঠোঁট কামড়ে মাথা নেড়ে বলে,

‘টেস্ট ইউ ভেরি সুন মিস আনজুমা।’

‘ইয়ার কি বলিস তুই মাথা ঠিক আছে।’

‘ফিল্ম আভি শুরু হুয়া হে মেরে দোস্ত। আগে আগে দেখ হতা হে কেয়া।’

৪.
বেসিনের সামনে সাবান দিয়ে কাচকাচ,কাচকাচ শব্দ করে হাত ঘষামাজা করছে আনজুমা। হাতের কনুই পর্যন্ত লাল দাগের ছাপ পড়ে গিয়েছে। ঐ যুবকের হাতের ছাপ স্বল্প হলেও স্পর্শ দূরীকরণে আনজুমা ব্যর্থ ঘষাঘষি করছে। হিতে বিপরীত হলো। নখ ধেবে রক্তাক্ত হওয়ার উপক্রম। তবুও কচলে চলেছে। সময় ঘনিয়ে চলেছে ফলে দিগদিগন্ত না ভেবে পানির উপর হাত ছড়িয়ে দেয়। পানির সঙ্গে সাবানের ফেনাসহ লালরক্ত ভেসে যায়। না পারছে এই জব ছাড়তে, না পারছে লোকগণের দ্ব্যর্থ কথাবার্তা হজম করতে। ছোটলোক বলে হেয়োর অঙ্কুনমাল হয়ে উঠেছে। অপমান করলেই বুঝি রে*প* করতে হবে। সামান্য অপমান তাদের ইগো হার্ট করে। যে ইগোর দামে তারা চলে, সেই ইগোর কোনো অস্তিত্ব নেই পৃথিবীতে। মানুষ তাদের মনগড়া অপমানকে ইগো হার্ট হওয়ার সমতুল্য করেছে। বয়োজষ্ঠ্য লোকে অপমান করলে মারপিটে নেমে পড়ে, মেয়েরা অপমান করলে রে*প করবে, বাবা-মা অপমান করলে ক্রোধে কথা না বলা। অথচ নিজে অন্যদের অপমান করলে সেটা হবে হান্ড্রেস পার্সেন্ট কারেক্ট। ফলস্বরুপ উৎপাত করা ছেলেদের ঘৃণ্য নজরে দেখে আনজুমা। তাদের স্পর্শমার্কা হাত জঘন্য মনে হয় তার কাছে।
হঠাৎ হাতে ঠান্ডা কিছুর অনুভূতি পেয়ে চোখজোড়ার সেদিকে করে। দেখে হলরুমে থাকা যুবকটি তার হাতে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে। হাতে তার অয়নমেন্ট ক্রীম। হাত সরাতে নিলেই ঠাস করে শব্দ হয়। গালে হাত দিয়ে কিংবদন্তী রুপে দাঁড়িয়ে থাকে আনজুমা। গাল জ্বলছে বিধেয় গালে হাত দিয়ে ছলছল দৃষ্টিকোণ ফেলে। আরভীক নির্বিকার চিত্তে মলম লাগিয়ে হাত ধরে বেসিনের কাছ থেকে প্রস্থান করে। গাড়ির কাছে এনে জানালার সঙ্গে চেপে ধরে। গায়ে কোনোরুপ জোড় পেল না আনজুমা। কিঞ্চিৎ পূর্বে চড় খেয়ে দাঁত মনে হয় ব্যথায় নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে। এমুর্হুতে যুবকটি কি করবে সেই ভাবনায় ভীতিগ্রস্থ হলো। আমতা আমতা করে বলে,

‘ছা ছাড়ুন।’

‘ছাড়ার জন্যে ধরিনী সুন্দরী সেটা বুঝতেই পেরেছো।’

ঘাবড়ে গেল আনজুমা। অনিশ্চিত কিছু অপেক্ষা করছে কি! তা ভেবে আগ্রহদীপ্ত নজরে যুবকের দিকে তাকায়। আরভীক বাঁ-হাত দিয়ে আনজুমার দুহাতের কনুই চেপে ধরে রেখেছে। ফলে ডান হাত দিয়ে তার মাস্কে হাত দেয়। মাস্কে হাত পড়ায় থরথর করে কেঁপে উঠে আনজুমা। মুখ ডান-বাম নাড়িয়ে মাস্ক সরাতে নিষেধ করে। তবে নাছোড়বান্দা আরভীক। চেহারা দেখেই ছাড়বে যেনো। নড়াচড়া করে ঠেলতে থাকে যুবককে। যার ফলে ভীষণ বিরক্তবোধ করে। কনুইজোড়া আলগা করে আনজুমার কপালে কপাল ঠেকায় সে। অনুভূতিহীন আনজুমার অন্তরে স্বামীর ঘনিষ্ঠতা অনুভব হলো। যে সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে অন্য কেউ। অথচ চোখের ভাষ্যমতে স্বামীকে দেখছে। যে কিনা কবরে শায়িত আছে। অনুভূতিরা প্রজাপতি হয়ে উড়তে চাইছে। যা সম্ভব নয়। সরিয়ে দেওয়ার অন্য পন্থা না পেয়ে জোরালো ভাবে ধাক্কা দেয় আনজুমা। যার ফলে কিঞ্চিৎ দূরত্বে সরে পড়ে আরভীক। বাকাঁ হাসি দিয়ে তার নিজ ঠোঁটের উপর হাত রাখে। কুবুদ্ধিপূর্ণ নজরে আনজুমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,

‘মিস আবান রুমপার্টনার নাই বলা হলেন লাইফ পার্টনারই করে ফেলুন। আই ওন্ট মাইন্ড।’

ক্রোধানল গ্রাস করে আনজুমার মস্তিষ্কে। মাস্ক টান করে অকৃত ভাঁজকে কৃত করতে গিয়ে উল্টো ছিড়ে ফেলল। যার ফলশ্রুতিতে দৃষ্টিগোচর হলো তার মুখশ্রী। যে মুখশ্রীর পানে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইল আরভীক। আনজুমা কপাল চাপড়ে ভ্রু বাকিঁয়ে যুবকের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ওয়াট চোখ দিয়ে গিলছেন কেন যতসব !’

‘ইটস নান অফ ইউর বিজনেস প্রিটি আব নো নো সে*ক্সি* গার্ল।’

‘চুপ করুন। মুখ দেখছে কি উৎক্ত করা শুরু করছেন ব*খাটে কোথাকার।’

‘সুন্দরী ললনাদের জন্যে ব*খা*টে হলেও সওয়াব কেনো জানেন!
ব*খা*টে ছেলেরা সুন্দরী ললনাদের পটিয়ে বিয়ে করে, বাচ্চা পয়দা করে, বাচ্চারেও বিয়ে করিয়ে দাদা/নানা হয়। এক এক ধাপে সওয়াবি কাম কারবার সারে। এমন সুন্নতী কাম কেউ হাতছাড়া করে না মিস আবান।’

যুবকের আগাগোড়া কথার অর্থ বুঝেও বুঝেনি আনজুমা। হা করে চেয়ে গেছে মাত্র। আরভীক দৃরত্ব মিটিয়ে মুখ বরাবর এলো আনজুমার। এসেই শার্টের বোতাম দুটা খুলতে আরম্ভ করে। যা দেখে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে মৃদু চিৎকার দিয়ে বলে,

‘কি করছেন কি ছিহ্ বে*শ*রম ছেলে একটা!’

‘আজিব গরম লাগছে শার্টের বোতাম খুললাম। এতে শ*র*ম-বে*শ*রম কোথার থেকে আসলো।’

থতমত খেলো আনজুমা। এমন উগ্রজাতের লোকের সঙ্গে কথার বলার রুচি নেই তার। বিনা বাক্য ব্যয় করে কেটে পড়তে নিলে আরভীক এর ডাকে থেমে যায়। মনমেজাজে যুবককে অশ্লীলমার্কা গা*লি দেয় আনজুমা। তার মনমতে এক ব্যাপারে সে নিশ্চিত হলো, যুবক প্রতিবার তাকে পিছু ডাকবেই। যেকোনো মুসিবতই আসুক না কেন, পিছু ডেকে হতবাক করার বদঅভ্যাস আছে তার এ বিষয়ে পরিপূর্ণ নিশ্চিত!

‘নো ইউ আর রং গার্ল।’

মনের কথা শুনে ফেলেছে কি! তা ভেবে বিস্ফোরিত চোখে যুবকের দিকে তাকায়। সে এসে আনজুমার দিকে আপাদমস্তক নজর বুলিয়ে বলে,

‘এই গোবরভরা মাথায় কেমনে কি জানছি তা কেন ভাবতে হচ্ছে আপনার! আপনি আমার উপর এক উপকার করুন। দেখবেন সওয়াবে জীবন পরিপূর্ণ হবে।’

ভ্রু কুঁচকে তাকায় আনজুমা। মস্তিষ্কে একটাই প্রশ্ন, এখনি এমন উপকারের কথা বলবে যা শুনে তার জন্যে অপকার হবে বটে। যুবকের উৎসুক ভরা দৃষ্ট দেখে ব্যর্থ শ্বাস ফেলে বলে,

‘কাস্টমার আপনি। বলেন কি সাহায্য করতে পারি!’

‘বেশি কিছু না আপনার এড্রেস দেন। রাতদিন গিয়ে গল্পগুজব করব। ভাববেন না কোনো কাজকর্ম করব না। অবশ্যই করব ঘরের জন্য রেডিমেড মেইড নিয়ে আসব। এই আরভীক ফাওয়াজ কারো থ্যাংকিউর ফায়দা উঠায় না।’

দাঁত কেলিয়ে হাসি দেয়। দুহাত বুকের উপর গুজে আনজুমার দিকে তাকায়। সে হতছাড়া আরভীককে মেরে ফেলার উদ্দেশ্য যেই না মুখ থেকে শব্দ বের করবে। তার পূর্বেই কোথার থেকে যেন ডজনখানিক মেয়ে আরভীককে ঘিরে ধরে। এতে অবশ্যই আনজুমার উপকার হয়েছে। নিশব্দে ভীড়ের মাঝ থেকে বেরিয়ে যায়। আরভীক কটাক্ষময়ী নজরে শুধু আনজুমার যাওয়া দেখে। অন্যান্য মেয়েরা যে তার শরীর ঘেষে স্থান পাওয়ার জন্যে উৎপেতে নেমেছে। সেদিক খেয়াল নেই। আনজুমার ছায়া অদৃশ্য হতেই সে মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে ‘স্টপ’ বলে গর্জন দেয়। মেয়েগুলোর
কৌতূহল পন্থা থেমে যায়। আরভীক তাদের দিকে অগ্নিকোণে তাকায়। যা দেখে মেয়েগুলো কিঞ্চিৎ দূরে সরে পড়ে। বাক্যহীন ফোনের মধ্যে কল প্রেস করে এক নাম্বারে। সেই নাম্বারে রিং হলেই বন্ধ করে দেয়। তম্মধ্যেই হাজির হলো তিন-চারেক গার্ড। যারা ক্লাবের বাহিরে পাহাড়া দিচ্ছিল। আরভীকের সামনে এসে মেয়েদের দিকে গান পয়েন্ট করে। আরভীক বাকাঁ হেসে মেয়েদের উদ্দেশ্য বলে,

‘আরভীক ফাওয়াজ সস্তা দ্রব নয় যে বেঁকে যাবে। গার্ডস টাইড দেম অল।’

কথার ইতি টেনে ক্লাবে প্রবেশ করে। হলরুম এর দিকে একঝলক তাকিয়ে পুরু ক্লাবে নজর বুলায়। না, নেই সে উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের রমণী, মুখমন্ডল জুড়ে যার অমায়িক ফর্সা ভাব, দাঁতে দাতঁ চেপে ধরার দৃশ্যটি তার কাছে আকৃষ্টময় ঠেকে। কেননা আনজুমা দাঁতে দাঁত চাপলে ঠোঁটজোড়া নড়বড়ে উঠে। তখন তার ইচ্ছে হয় ঠোঁটযুগলে তার নিজের ঠোঁটযুগল পুড়ে দিতে। ভাবনার অপরুপ বার্তা জাগ্রত হওয়ায় আনমনে তৃপ্তির হাসি দেয়। আনজুমা পুনরায় পালিয়েছে তার কাছ থেকে। তবে কতদিন আজ না হয় কাল ধরা দিতেই হবে! সেই সঙ্গে অপমানের শাস্তিও দিতে হবে।
ভেবেই সে ফোন বের করে ভোরবেলার মেসেজটা পড়ে। আরভীক কে অপমান করার শাস্তি হবে অত্যাধুনিক। যা কেউ না শুনেছে, না ভেবেছে।

‘দোস্ত কই গেছিলি তুই! মিটিং শেষ।’

‘নার্থিং। কিন্তু পছন্দ হয়েছে প্রজেক্টস। কেমন কারর্স!’

‘ইয়ার নট ইন্টারেস্টিং। জাস্ট আই টোল্ড ওল্ডো ফ্যাশন কারর্স।’

কথাটি শুনে আরভীক এর বুঝতে বাকি রইল না। ক্লাইন্টগুলো পুরাতন আমলের গাড়ির ছবি দেখিয়েছে। এ নিয়ে নিরক্ষীয় পন্থা অবলম্বন করতে হবে। সায়াজ কে না দেখে বলে,

‘সায়াজ কই!’

‘এরে না তুই খোঁজ লাগাতে বললি ঐ ওয়েট্রেসের।’

‘ওহ আই ফরগেট।’

ফাহাদ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কিঞ্চিৎ সময় তাকিয়ে থাকে তার বন্ধুর দিকে। যা খেয়াল করেছে আরভীক। ফোন বের করে ঘাটাঘাটি করার ভান করে থাকে। ফাহাদ দ্বিক্ষণ প্রশ্ন দমিয়ে রাখতে পারল না। জটপট করে জিজ্ঞেস করে উঠে।

‘মেয়ের চক্কর চলছে কেন দোস্ত!’

‘এখনো চলেনি ভাবছি চালাবো। বহুদিন হলো বিয়েশাদি করিনা। তোরাও বিয়ের পোলাও,বিরিয়ানি খেতে পারছিস না। সেজন্য একটা না একটা ব্যবস্থা করতেই হয়।’

দোস্তের ঠেসমার্কা কথা শুনে ব্রেনে সঞ্চিত প্রশ্ন বের করার সাহস পেল না ফাহাদ। পুনরায় জিজ্ঞেস করলে তারই পরোক্ষভাবে অপমানিত হতে হবে। ঠেস মারামারি করা কেউ আরভীক থেকে শিখুক।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here