নেশাক্ত প্রণয়োণী পর্ব_২৮

0
1150

#নেশাক্ত_প্রণয়োণী
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_২৬(সামথিংক স্পেশাল)

দুঘণ্টা পেড়িয়ে গেল আরভীক এর যাওয়ায়। অথচ এর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আনজুমার হৃদয়ে। অভিমানে বলেছে বলে ছেড়ে যাবে আবারো! একটু কি পারতো না তাকে মানাতে! চোখ দিয়ে অশ্রুজল নির্গত হলো আনজুমার। মনপ্রাণ ছড়িয়ে সে নামাজরত অবস্থায় বসে আছে। আল্লাহর কাছে সুখের সন্ধান চাইছে! মনের প্রশান্তি চাইছে, তবুও মিলছে না। আজ আশফিও পাশে নেই, সে তার দাদুভাইয়ের সঙ্গে থাকার বায়না ধরায় সেও নাকচ করেনি। তার শ্বশুরও গম্ভীরমুখো হয়ে আছে। কেনোই বা হবে না সে ক্ষত হৃদয়ের তিক্ত কথা শুনিয়ে তার ছেলেকে বিদায় যে করিয়েছে!
টক টক করে দরজায় কড়াঘাত হওয়ায় ধ্যান ফিরে তার। চোখ মুছে ক্লান্ত সুরে আসার অনুমতি দেয়। নাইফা হিজাব পরিহিত অবস্থায় দরজা ভিড়িয়ে এলো। মুচকি হেসে ভেতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়। তার ডান হাতে শাড়ি,নেকলেস সাজসরঞ্জামের সামগ্রী দেখে অবাক হলো! নাইফা মুখ খুলার পূর্বেই আনজুমা বিনতির সুরে বলে,

‘মোনাজাত শেষ করে কথা বলছি অপেক্ষা করো।’

‘ঠিক আছে ভাবী।’

নাইফা বিনতি গ্রাহ্য করে চুপটি করে বিছানার উপর বসে। পুরু রুমে চোখ বুলিয়ে মুচকি হাসে। স্বামী-স্ত্রীর প্রশান্তির স্থান তাদের নিজস্ব সংসার! হিজাব খুলে গায়ে উড়না দিয়ে নাইফার সাথে বসল আনজুমা। নাইফা মিটমিটিয়ে হেসে অনুরোধময়কণ্ঠে শুধায়।

‘ভাবী একঘণ্টার মধ্যে এই শাড়ি,জুয়েলারি পরে তৈরি হয়ে নাও।’

ভ্রু কুঁচকে তাকায় আনজুমা। আকস্মিক সাজার বিষয় মস্তিষ্কে এলো কেনো নাইফার! প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকার দরুণ নাইফা উদগ্রীবভরা নয়নে হৃদয়জুড়ানো কণ্ঠে বলে,

‘ভাবী তুমি সেজে নিলে আমাকে বলবে আজকে তোমার সুন্দর মুহুর্ত উপভোগ করা দরকার। ভাইয়া ছেড়ে গেল তাতে কি! নীড় ছেড়ে কেউ কি বেশিদূর যেতে পারে ! অবশ্যই চলে আসবে। আপাত আমার সঙ্গে তোমাকে স্কোয়ারল্যান্ড সোয়ান পার্কে যেতে হবে।’

সোয়ান পার্কের কথা শুনে হা হয়ে যায় আনজুমা। মিনমিন কণ্ঠে বলে,

‘ওইটা কাপল’স রিসোর্ট প্লেস!’

থতমত খেল নাইফা। হেহে করে চোরা হাসি দিয়ে ভাবীর মনভুলাতে বলে উঠে!

‘তাই তো যাবো! আদাফাতও অফিসে আসতে প্রায় রাতের বারোটা বাজাবে। আমরা রিসোর্টের পূর্বদশার দিকে যাবো। সেখানে নদীর কিনারা থাকায় আনন্দ করতে পারব।’

বিনিময়ে আনজুমা শুনে শাড়িটি ধরে দেখে একদম পাতলা, সুতির শাড়ি পরলে নিশ্চিত শরীরের প্রতিটা অঙ্গ দৃশ্যমান হবে! সে ভেবে পাচ্ছে না নাইফার কি মাথা খারাপ হলো নাকি! কথার মোড় ঘুরাতে চেয়েও পারল না নাইফা জোরাজুরি করে পরতে বলে রুম থেকে চলে গেল। আনজুমা পড়ল বিপাকে! একে তো আরভীক এর চলে যাওয়ার শোক, অন্যত্রে নাইফার বেহুদা আবদার! মেহমানের মুখ থেকে যেহেতু আবদার বেড়িয়েছে সেহেতু না করার কোনো পন্থা নেই। বিধেয় বিরক্তির শ্বাস নিয়ে শাড়ি পরতে ব্যস্ত হলো।

নাইফা রুমে এসে হাঁপিয়ে উঠে। একটুর জন্য যেনো চোর-পুলিশের মত ধরা খেতো। তার হাঁপানো থেমে যায়নি। তার চিরপরিচিত পুরুষ এসে ঝাপ্টে নেয়। মুচকি হেসে নাইফা মিছামিছি রেগে বলে,

‘ফাজিল অফিসের নাম করে বাসায় কি হে!’

‘কি করব বউ! তুমি যে অফিসে নেই। তাই মনটাও সেখানে বসছে না।’

‘তাহলে জনাবের মন কি করতে চাইছে হুম!’

আদাফাত দুষ্টুমি হেসে তৎক্ষণাৎ দরজা লাগিয়ে ওষ্ঠদ্বয় মিলিয়ে নেয়। স্বামীর পরম আদুরীয় স্পর্শে তাদের দিনও মধুরীমায় পূর্ণ হলো।

৪৮.
আনজুমা রেডি হয়ে কানের দুল পরতে পরতে নিচে এলো। কাউকে সোফার রুমে না দেখে ঠোঁট কামড়ে চৌপাশ্ব চোখ বুলিয়ে নেয়। কেউই বাসায় নেই নির্জীব দশা যেন সৃষ্টি হয়েছে বাসার মধ্যে। হঠাৎ ‘পিপ পিপ’ শব্দ শুনে সে দ্রুত পা পেলে গেইট অব্দি এগিয়ে এলো। গাড়ির মধ্যে টুপি পরিহিত ড্রাইভার কাকা বসে আছে। তবে তার চেহারা সুস্পষ্ট নয়। তিনি কফযুক্ত কণ্ঠে বলে উঠে!

‘আপনাকে নিতে পাঠিয়েছেন নাইফা ম্যাডাম!’

‘সে কোথায়!’

‘নাইফা ম্যাডামের কল এসেছিল সোয়ান পার্ক থেকে। তাই তিনি আগেই চলে গেছেন। আপনার জন্য আমাকে থাকতে বলেছে। আপনি আসলে যেন সুষ্ঠুভাবে পৌঁছে দেয়।’

দ্বিরুক্তি করেনি আনজুমা শাড়ির পাড় ধরে ধীরস্থির পায়ে হেঁটে গাড়ির ভেতর বসে। জানালা মৃদু খুলে স্বল্প বাতাসের হাওয়া হজম করে। এমনি এক দমকা হাওয়ার বেগে সে আরভীককে চাই! যদিও বা অভিমানে পুরুষটি দূরে চলে গেল। তবে বিশ্বাস সে আসবে তার নীড়পূর্ণ সংসারে!
আনজুমা চোখ বুজে আরভীক দূরে যাওয়ার দৃশ্য ভাবতে লাগল।

যাওয়ার সময়….

আরভীক আদাফাতের গলা জড়িয়ে কি যেন বলে যায়! যাওয়ার প্রতিটা ক্ষণে চোখ ও ভাবভঙ্গি দ্বারা উপেক্ষণীয় আভাস দেয় আনজুমাকে। যার ফলে তার হৃদয় দ্বিখন্ডিত হতে থাকে। আনজুমা সকলের সামনে কথা বলতে ইতস্ততঃ বোধ করছে বিধেয় গেইট অব্দি যাওয়ার অপেক্ষা করে। ঠিক পনেরো মিনিট পর আরভীক লাগেজ নিয়ে গেইট অব্দি গেল। অন্যরা ঘরের ভেতর যার যার রুমে চলে যায়। আনজুমা সময় বিলম্ব না করে তৎক্ষণাৎ গেইট অব্দি এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আরভীককে। ফুঁপিয়ে কেঁদে দেয়। গম্ভীর বিপত্তি বাঁধা সৃষ্টির ন্যায় মুখ ঝামটা মেরে বউকে দূরে সরানোর চেষ্টা করে আরভীক। মেয়েটার করুণ কণ্ঠ তাকে দূর্বল করে দেয়। ঢোক গিলে বউয়ের অভিমানের উপর মুখ ঝামটা মেরে বলে,

‘তোমাকে স্পেস দিতেই দূরে যাচ্ছি! আমার স্বভাব তোমার কাছে বড্ড খারাপ মনে হয়। আমিও ব্যর্থ এতদিনে স্বামীর আদর সোহাগ দিয়েও তোমার মন জয় করতে পারলাম না। ক্ষমা চেয়েছি বহুবার। তবুও মুখ ফুটিয়ে একবারো বলোনি যে ক্ষমা করেছো কিনা! আমিও দূরে ছিলাম প্রণয়োণী। তুমি জীবনসংগ্রামে লিপ্ত যেমন ছিলে, তেমন আমিও মরণপ্রায় দুয়ারে ছিলাম। তোমার সঙ্গে এক আল্লাহ্ ছিলেন উনি রক্ষা করেছেন, আল্লাহ ভরসা রাখি বলে তোমাকে ফিরে চোখে দেখেছি, পুনরায় ভালোবাসার অনুভব করেছি, স্মৃতি তো হারায়ে মূর্তির ভাব ছিল আচরণে, অথচ তোমাকে দেখার পর মূর্তি থেকে হয়ে গেলাম একজন নেশাক্ত প্রণয়রাজ! মনে পড়ে জুমা তুমি বাসর রাতে আমাকে বলে ছিলে, প্রতিটা ক্ষণে আমি যেনো থাকি, আমি রাজি থাকায় তুমি সেদিনই প্রথম প্রণয়রাজ বলে ডেকেছিলে। কি অদ্ভুত অনুভূতি ! তোমার তিক্ত কথায় সত্যি কিছু মনে করিনী। তোমাকে স্পেস দিলে বুঝবে। ভালো থেকো, আশফির আর নিজের খেয়াল রেখো আল্লাহ্ হাফেজ।’

নিজের মন মত কথা সম্পূর্ণ করে আরভীক মিনমিনিয়ে নিজ থেকে আনজুমাকে সরিয়ে দেয়। ধাক্কা খাওয়ার মত তার বুক লাফিয়ে উঠে। আরভীক এর বাহু ধরে জড়িয়ে ‘প্লিজ প্লিজ’ বলে আকুতিভরা গলায় আগলে রাখে। চোখ থেকে তার অজড় ধারায় অশ্রু বয়ে যাচ্ছে। ঠিক নেই সে, একরাত্রির মাঝাড়ে অনুভব করেছে অবহেলা,স্বামী থেকেও স্বামীর সোহাগ থেকে বিলম্ব! আরভীক বিনা বাক্য ব্যয় ‘গাড়ি আসছে’ বলে হাত জোর করে ছাড়িয়ে প্রস্থান করে। তার যাওয়ার কদমের সঙ্গেই আনজুমার চোখের অশ্রুও নির্গত হলো বেগতিক হারে! তার প্রস্থানের পর থেকে না খাওয়া,না কথাবলা, না হাসা ! প্রাণহীন প্রাণীর মত একরুমে নিজেকে বদ্ধ করে নেয়।

‘প্রণয়োণী নিচে নামেন আমাদের নীড়ের শুভরাত্রি চলে এসেছে!’

হৃদয়ে ঝড় তুলার ন্যায় কণ্ঠটি শুনে ধড়ফড়িয়ে চোখ খুলে আনজুমা। গাড়ির মধ্যে ড্রাইভারকে না দেখে বুক কেঁপে উঠল অজানা আতঙ্কে! জানালার বাহির থেকে স্বচ্ছ নদীর পানিতে চাঁদের ঝিকিমিকি আলোর রুপ ভেসে উঠেছে, মোহময় পরিবেশে আচ্ছন্ন তিমিররাত্রি! পরিবেশের মুগ্ধতায় ঘোরে চলে যায় আনজুমা। গাড়ির দরজা খুলে তার কদম ফেলে এগিয়ে যায়। তার হৃদয় কাঁপছে অজানা অনুভূতির মায়ায়, পরিবেশও নেশাক্ত,আফিমে ছড়িয়ে আছে। ঢোক গিলে চৌপাশ নজর বুলিয়ে যাচ্ছে কিন্তু কোনো মানুষের ছিঁটেফুটাও নেই। হাতজোড়া কচলাতে থেকে রিনরিনে কণ্ঠে ‘কেউ আছেন’ জিজ্ঞেস করে উঠে। কোনো সাড়া না পেয়ে ‘নাইফা আছো তুমি’ বলেও লাভ হলো না! পূর্বের ন্যায় নির্জীব পরিবেশ। আকস্মিক কারো গানের কণ্ঠ পেয়ে চমকে উঠে আনজুমা। পিছু মোড়ে দেখে নদীর পাশে বালি ঘেষেঁ কে যেনো সুর তুলছে! গলাটার সুর মন্দ নয়।

‘তুমি আমি কাছাকাছি আছি বলেই
এ জীবন হয়েছে মধুময়।
যদি তুমি দূরে কভু যাও চলে,
শুধু মরণ হবে আর কিছু নয়।
তোমায় ছেড়ে বহু দূরে যাবো কোথায়,
এক জীবনে এত প্রেম পাবো কোথায়…..।

গানের তালে বালির উপর থেকে উঠে হাত বাড়িয়ে দেয় পুরুষটি। আনজুমার খুশিতে চোখজোড়া হতে খুশির অশ্রু ঝরছে। আরভীক মুচকি হেসে আনজুমার হাতজোড়া আগলে ঘনিষ্ঠরুপে কাছাকাছি হলো। গানের সুর পুনরায় ধরে ঠোঁটের কোণায়।

তোমারই পরশে ভালোবাসা
আসে নেরই আঙ্গিনায়,
নয়ন ভরে দেখি তোমায়,
তবুও বুঝি দেখার শেষ নেই!

তোমায় ছেড়ে বহুদূরে যাবো কোথায়,
একজীবনে এত প্রেম পাবো কোথায় উম উম উম….।

গান থামিয়ে আনজুমার চোখ ও নাকে ওষ্ঠের ছোঁয়া বুলিয়ে দেয় আরভীক। পরম আবেশে চোখজোড়া বন্ধ হয়ে গেল আনজুমার। কতবছর পর যেন স্বামীর অস্তিত্ব, ছোঁয়া পুনরায় মনের কোণায় জোয়ার তুলেছে, অনুভূতির প্রজাপতিরা ডানা ঝাপ্টে উড়াল দিয়েছে বহু পূর্বেই।
বউয়ের ললাটে ওষ্ঠ চেপে রেখে আরভীক ফিসফিসিয়ে শেষাক্ত লাইনগুলি আওড়ায়।

সুখেরই সাগরে ঢেউয়ে ঢেউয়ে
দুজনেই একসাথে ভেসে যাই,
ভেসে ভেসে ভালোভেসে
সারা জীবন বাঁচতে চাই।

তোমায় ছেড়ে বহু দূরে যাবো কোথায়,
একজীবনে এত প্রেম পাবো কোথায় হুম..।

‘প্রণয়োণী চোখ খুলো আমি চাই আমাদের মধুররাত্রি চোখে চোখে মিলনের মাধ্যমে হোক!’

কেঁপে উঠে পুরু শরীর আনজুমার। আরভীক এর কাঁধ মুঠো করে চেপে ধরে। শুকনো এক ঢোক গিলে পিটপিটিয়ে চোখজোড়া খুলে আরভীক এর মুখশ্রীর দিকে তাকায়। তার চোখে আজ নেশা,বউয়ের নেশা লেগেছে! যা থেকে আজ আনজুমা কোনোমতেও রেহাই পেতে চাই না। আজ সেও মন থেকে চাই এই রাত্রি সাক্ষী থাকবে তাদের পরশের,স্পর্শের,ছোঁয়ার।
কাঁপান্বিত, আকুল গলায় শুধায়।

‘এমন আবদার করবেন না, না হলে আমি ম…!’

অসম্পূর্ণ কথাকে আঁটকে দেয় আরভীক ওষ্ঠের জোয়ার তুলে। তাদের কথন এখন শুধু ওষ্ঠের অন্দ্রে অন্দ্রে লিপ্ত হবে, ছোঁয়া গাড় হলো কোমরে ছাড়িয়ে পিঠে বিচরণ করছে আরভীক এর হাতজোড়া। আরভীকও আজ নিজের অনুভূতিকে আঁটকে রাখল না। একাকার হয়ে যাবে দুটো নর-নারীর শরীর! পরিপূর্ণতায় নুয়ে পড়বে চাদরের আবৃতে। আনজুমার দম বদ্ধ করে দিচ্ছে আরভীক। দমবদ্ধ করা চু’মু খেয়ে যাচ্ছে। পরক্ষণে শরীরের উত্তেজনা মাত্রা ছাড়িয়ে গেল! দুজনের রেহাই নেই চলা এমুহুর্তে। আরভীক দিগিদ্বিক না ভেবে আনজুমাকে কোলে উঠিয়ে নেয়। পা ফেলে নিকটস্থ কুড়েঘরের ভেতর নিয়ে যায়। কুড়েঘরটি খুব সুন্দরভাবে সাজিয়েছে আরভীক। ভেতরে প্রবেশ করেছে তবুও ওষ্ঠজোড়া ছন্নছাড়া করেনি তারা, ঠিক তার নির্দিষ্ট বন্ধনে আবদ্ধ ওষ্ঠজোড়া। কোমরের নিচে স্বচ্ছ,কোমল নরম জায়গার স্পর্শ পেয়ে বুঝতে পারল সে বিছানায় এমুর্হুতে। চাদর খামচি ধরে চোখজোড়া বন্ধ রেখেই তীব্রবেগে গরম শ্বাস নিচ্ছে আনজুমা। আরভীক আফিমের ন্যায় মুগ্ধ হচ্ছে! তার পক্ষে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা আর সম্ভব নয়! পুনরায় ওষ্ঠজোড়া মিলিয়ে আনজুমার কালো শাড়িতে আবৃত আঁচলটি সরিয়ে দেয়! কেঁপে উঠে আনজুমা। আরভীক এর পরণে পরিহিত শার্ট সে স্বেচ্ছায় খুলে দেয়। উত্তেজিত মনে আরভীক শার্টটি বিছানার অপর পাশ্বে ছুড়ে দেয়। নুয়ে লেপ্টে যায় আনজুমার শরীরের সঙ্গে। ওষ্ঠজোড়া গাড় হলো,ঘনিষ্ঠতা বেড়ে গেল, ফাঁকা নেই দুজনের মাঝে! নতুন অধ্যায় এইতো শুরু।
আর কোনো সন্দেহ,বিচ্ছেদের নাম নেই মনে। হারিয়ে,চাদরের মোড়ে লুকিয়ে যায় দুজনার মানব শরীর। নিশিরাত্রির চাঁদও লুকিয়ে গেল নিভু আগুন্তকে আসা মেঘের আড়ালে। তারাও সাক্ষীস্বরুপ বহমান যে, দু’নরনারীর মনের বিচ্ছেদ ভেঙ্গেছে, একাকার হচ্ছে তারা। সায় দিল প্রকৃতির হাওয়া।

৪৯.
পাখির কিচিরমিচির শব্দে চোখজোড়া পিটপিটিয়ে খুলে আনজুমার। বুকের উপর নিচে ভারী পুরুষের আভাস পেয়ে লাজুকতায় ছেয়ে গেল তার মনদিল দরিয়া!
পরণে বস্ত্রের ছিঁটেফুটোও নেই। পাতলা চাদরটি নিজের শরীরে মোড়ে উঠতে নিলেই শক্তপোক্ত এক হাত থামিয়ে দেয় তার কোমর চেপে ধরে। ঘুমন্ত কণ্ঠে আরভীক বলে উঠে।

‘না ঘুমিয়ে প্রণয়োণী কই পালিয়ে যাও হুম!’

‘আ আপনি ভুলে গেলেন আশফি বাসায়। আমাদের ছাড়া সে থাকবে না।’

‘ফটর ফটর কথা বলে মন ভুলিয়ে লাভ নেই গো প্রণয়ণী। আসো আবারো করব, কাছে আসো। এখনো স্বাদ মিটেনি গো প্রণয়োণী আসো, আসো।’

জোরকৃত আনজুমাকে টেনে শুয়ে দেয় আরভীক। কোনো রুপ কথ্যহীন ওষ্ঠ মিলিয়ে দেয়। হাতজোড়া বালিশের পাশে চেপে ধরে শরীরের ভার ছেড়ে দেয় আনজুমার শরীরের উপর। সে পা মোচড়াতে থেকে অনুরোধ করে। অথচ তার অনুরোধটাও হলো মিছামিছি। বরং সেও রাজি পুনরায় মিলনে আবদ্ধ হতে। আরভীক অনুরোধভরা কণ্ঠ শুনেও কানে নিল না। উত্তেজনার তাগিদে লিপ্ত হলো বৈধ মিলনে।

________

‘এসি জাফরের খবরে নতুন খবর ফাঁস, ইনসার্চ ম্যান অথাৎ পুলিশ ডিপার্টমেন্টের বেস্ট ইনসার্চম্যানকে খু’ন করে ছিল জাফর ও তার সাথী লিয়াকত। দুজনের খু’নের কথা পূর্বেও বলা হয়ে ছিল। তারা আপনাদের কাছে অপরিচিত নয়। সাধুবেশে বাস করা দুজন নরপশুর অস্তিত্ব পৃথিবীর মাঝে নেই বলে আমরা গর্ব করি। মহান আল্লাহর করুণ ক্রিপায় আজ সকল মেয়েরা এলাকার মধ্যে নিরাপদ।’

টিভির নিউজে সায়াজের রিপোর্টিং শুনে আশ্চর্য হলেও খুশি হলো আরাজ সাহেব। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
তিনি কখনো ভাবেনি জাফর সাহেব খারাপ হতে পারে। যদি না তার ছেলে এ নিয়ে তাকে অবগত করতো। তবে তিনি অন্ধচোখে জাফরকে বিশ্বাস করে ফেলতো। এখনো মনে পড়ে তার পেছনের কারণ।

একমাস পূর্বের কথা…

আরভীক এর মনে পড়ার পর সে একদন্ড অপেক্ষা না করে সবকিছু খুলে বলে আরাজ সাহেবকে। তিনি শুনে আশ্বাস দেয় যে,

‘বাবা তুই চিন্তা করিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে তুই পারবি আমি জানি। যেমনি তুই আমার ছেলে আজীবের জন্য করলি, আনজুমার রক্ষার্থে জীবন বাজি দিতেও দ্বিধা করিসনি। ইন শা আল্লাহ্ তুই জয়ী হবি। তবে রাজিব ছেলেটাকে প্রথমে মন্দ ভাবছিলাম তোর কথা শুনে। এখন বিশ্বাস হলো সে একজন এজেন্টরুপে কাজ করছে।’

মুচকি হেসে আরভীক বলে,

‘ড্যাড তুমি আমার ড্যাডই থাকবে। আমি বাবা-মার ভালোবাসা পাইনি কিন্তু ড্যাডের ভালোবাসা অবশ্যই পেয়েছি।’

তিনি প্রশান্তির হেসে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে। পূর্বের কথা ভেবে আনমনে হেসে দেয়। আশফি আদু কণ্ঠে দাদুর কোমরে গুতাগুতি করে বলে,

‘বাবাইয়ি,মাম্মা কই দাদুভাই!’

‘তোমার জন্য গিফ্ট নিতে গেছে!’

‘কখন আসবে!’

‘তা তো জানিনা দাদুভাই।’

ঠোঁট ফুলিয়ে সোফায় গা ঠেসে টিভির দিকে তাকিয়ে বলে,

‘দাদুভাই টম এন্ড জেরি কার্টুন দেখব!’

তিনিও নিশব্দে তার দাদুভাইয়ের জন্য চ্যানেল পরিবর্তন করে দেয়। আহিফাও ইতিমধ্যে এসে গা ঠেসে বসেছে আশফির সঙ্গে। বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে এলো আশফির। ‘ছুঁ ছুঁ’ বলে আহিফাকে দূরে ঠেলে দেয়। কিন্তু নাছোড়বান্দা আহিফা উল্টো আশফির কোলের উপর ধপাস করে বসে টিভির দিকে তাকায়। আশফি হা হয়ে যায়। চোখ-মুখ ফুলিয়ে বিক্ষোভে আহিফাকে তার পাশে বসিয়ে দেয়। সেও মহানান্দে কার্টুনের দিকে তাকায়। আরাজ সাহেব কার্টুনের প্রতিচ্ছবি এনে পত্রিকা নিয়ে বসে। মনে মনে ভাবে,
এবার নিশ্চিত দুজনের মনের বিচ্ছেদ কেটেই আসবে।
যেই ভাবনা সেই সঠিক হলো। বাসার গেইট থেকে আনজুমাকে কোলে নিয়ে প্রবেশ করছে আরভীক। লজ্জায় তার গালের আভা লালবর্ণে নিপীড়িত হয়েছে!
আরাজ সাহেব দেখেও অদেখা করে দেয়। আনজুমা ফিসফিসিয়ে বলে,

‘কি করছেন কি! দেখছেন আব্বু এখানে তাও!’

‘ড্যাড কিছু বলবে না সুইটহার্ট! গোসলের সময় আরেক রাউন্ড দেব ভাবছি।’

চোখ রাঙিয়ে আরভীক এর বাহুতে চিমটি কাটে আনজুমা। কোলে ভারহীন মেয়েকে নিয়ে সঙ্গে চিমটি খেয়ে তৎপর গলায় শুধায়।

‘উফ তোমার আর তর সইছে না বললেই পারতে বউ, এরুপ চিমটি কেটে উত্তেজনাপ্রবণ করতে কে বলল হুম! এবার তোমায় বাঁচাবে কে!’

ভেবাচ্যাকা খেয়ে যায় আনজুমা। রুম অব্দি এসে পা দিয়ে দরজা আঁটকে দেয় আরভীক। আনজুমা হাত-পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছাড়া পাওয়ার জন্য নড়চড় করছে। মেকি রাগান্বিত গলায় শুধায়।

‘বদ’মায়েশী ছাড়েন, একবাচ্চার বাপ হয়েও শরীরে রগরগে তেজ মিটিয়েও শখ মিটেনা বুঝি আপনার!’

‘না গো প্রণয়োণী! তুমি আমি মিলে একাকার হবো বউ।’

দুষ্টুমি হেসে কোনো কথা ছাড়াই ওয়াশরুমে বউকে কোলে নিয়ে ঢুকে পড়ে। আনজুমার কণ্ঠ শুনা যাচ্ছে না, নিস্তদ্ধ হয়ে গেল রুম। শুধু ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ ভেসে আসছে।
ফ্রেশ হয়ে দুজন মিলে চলে এলো নাস্তার টেবিলে। নাইফা ও আদাফাত মুচকি মুচকি হাসছে। লজ্জায় আনজুমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা। আদাফাতকে দেখে গলা আকঁড়ে ঝাপি দিয়ে চেয়ার টেনে বসে। নাইফা আনজুমার কাছে এসে বাহু দিয়ে ধাক্কিয়ে চোরা গলায় জিজ্ঞেস করে।

‘ভাবী রাত কেমন ছিল হুম!’

চোখ রাঙিয়ে তাকায় আনজুমা। নাইফা খিলখিলে হেসে দেয়। আদাফাত সেই হাসির অনুসরণ করে চোখ টিপ দেয়। ব্যস নাইফার হাসি হয়ে গেল কাশিতে রুপান্তর। কাশতে থাকার দরুণ আদাফাত পানি মুখে দেয় পিঠের মালিশ করে দেয় নাইফার। আরভীক আফসোসের সুরে বলে,

‘বউ একখানা পাইছি চোখ মারলেও কোনো রিয়েকশন পায় না। মনে হয় সে যেন চোখ মারার টিপস দেখে অভ্যস্ত।’

বেকুবের মত চেহারা করে আনজুমার চোয়াল শক্ত করে ফেলে। ছু’ড়ি দিয়ে শক্ত,গাড় ভাবে পাউরুটি পিচ পিচ করে কাটতে লাগে। আরভীক আনজুমার পাউরুটি পিচ করার ধরণ দেখে ঢোক গিলল। হেহে করে হেসে নিজের খাওয়ায় মন দেয়। কারণ এখন বেশি প্যাচাল মারবে তো মরণ নিশ্চিত! যা আনজুমার কাটার ধরণ দেখেই বুঝল সে।
দুপুরে নামাজের পর রুমের মধ্যে এসে আনজুমাকে ভাবান্তর পায় আরভীক। নিশব্দে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে সে। চিরচেনা পরিচিত স্পর্শের ছোঁয়া কেঁপে উঠে আনজুমা।
গভীর আফিম মেশানো কণ্ঠে শুধায়।

‘প্রণয়োণী আর ইউ আপসেট!’

‘না ভাবছি লিয়াকতের বলা কথাগুলো। আপনি তো সব দেখছেন সিসিক্যামেরার মাধ্যমে। তার বলা এক কথা শুনছিলেন! যে তারা তিন ভাই ছিল। ইয়াসির আঙ্কেল যিনি মৃত, দ্বিতীয় তিনি আর তৃতীয় জন সে নাকি আমাদের খুব কাছের কেউ। আপনার কি মনে হয়!’

কথাটি আরভীক এর মস্তিষ্ক থেকে প্রায় ভুলে বসে ছিল। আনজুমার মুখ থেকে শুনে সেও কিছু একটা ভাবনায় মগ্ন হলো।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here