শরতের বৃষ্টি পর্ব-৬

0
2815

#শরতের_বৃষ্টি
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৬

সাজ্জাদ ড্রইংরুমের সোফায় বসে নিজ ধ্যানে ফোন টিপছে। আশরাফ খান একটু পর এসে ওর সামনের দিকের সোফায় বসে পরলো। সাজ্জাদের তাতে কোনো হেলদোল হলোনা। ও মাথা নিচু করে একমনে ফোন টিপছে। মিসেস শাহনাজ আর সাদিয়া পাশে ভায়ে ভয়ে দাড়িয়ে আছে। সাজ্জাদের কাজ দেখে মিসেস শাহনাজ হালকা ঢোক গিলে নিজের স্বামীর দিকে তাকালেন। আশরাফ খান চোখ গরম করে সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তিনি বরাবরেই রাগি মানুষ। কিন্তু এত রাগারাগি করেও নিজের ছেলেটাকে ঠিক করতে পারলেন না। কিছুক্ষণ পর আশরাফ খান জোরে ধমক দিয়ে বললেন।

“এত বড় হয়েছো এখনও বাবাকে সম্মান করতে শিখোনি? এতকাল কি শিখেছো স্কুল কলেজে?”

সাজ্জাদ ওর বাবার কথা শুনো ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ফোনটা রেখে দিলো। সোফায় আরাম করে বসে বললো।

“এত বছর ধরে যা পড়ছি তা বলতেও তো দুই তিন মাস সময় লেগে যাবে। এত সময় তোমার হবে?”

“সাট আপ!”

সাজ্জাদের কথা শুনে ওর বাবা ধমক দিয়ে কথাটা বললেন। ধমক শুনে মিসেস শাহনাজ আর সাদিয়া কেঁপে উঠলো। সাজ্জাদ কিছুই বললোনা চুপ করে বসে রইলো। আশরাফ খান সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে বললেন।

“আঁখির সাথে আবার ঝামেলা করেছো কেনো? ওই মেয়েটার পিছনে সারাদিন লেগে থাকো কেনো? কি সমস্যা তোমার? আসার সময় দোকান থেকেও লোকের মুখে তোমাদের কাহিনী শুনে এলাম। এখনও কি তুমি ছোট! তোমার মারামারি করার বয়স আছে? এখন তোমার জব নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা। কিন্তু তুমি তা না করে কি করছো? একটা ছোট মেয়েকে কি করে জ্বালাবে সেই ধান্দায় থাকছো। কবে তোমার এই স্বভাব যাবে বলো?”

আশরাফ খানের রেগে কথাগুলো সাজ্জাদের কান পর্যন্ত পৌছালো কিনা বলা বাহুল্য। সাজ্জাদ আগের ভঙ্গিতেই বসে নিরব ভাবে উওর দিলো।

“আমি কখনই ওই মেয়ের পিছনে লাগিনা। এই মেয়ে আমায় আগে বিরক্ত করে।”

“এই বিল্ডিংয়ে তুমি ছাড়া কি কোনো মানুষ নাই? আমাদের জ্বালাতে পারেনা? ওই যে সাদিয়া আছে অনেকটাই আঁখির বয়সী। কই ওর সাথে তো কখনও ঝগড়া হয়েছে বলে শুনিনি। কি সাদিয়া তোমার সাথে কখনও ঝগড়া হয়েছে?”

সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে শেষের কথাটা বললো আশরাফ খান। সাদিয়া ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বললো।

“না বাবা! আমার সাথে তো কখনও ঝগড়া হয়নি আঁখি আপুর৷ ঝগড়া হওয়া তো দূরে রেগেও কথা বলেনি। আজ বিকেলও দেখা হলো। আঁখি আপু তো অনেক ভালো মেয়ে।”

সাজ্জাদ রেগে সাদিয়ার দিকে তাকালো। রেগে বিড়বিড় করে বললো। ” কি শয়তান মেয়ে। আমার বোনটাকে বস করে নিয়েছে। সামনে পেলে ওকে তো মেরেই ফেলবো।”

“কি বিড়বিড় করছো?”

আশরাফ খানের কথা শুনে সাজ্জাদ চুপ হয়ে গেলো। তিনি আবার বললেন।

“শুনছো ও কি বলেছে? এবার কি বলবে?”

“বাবা ও আমার সাথে খুব বাজে আচারন করে। সত্যি!”

“একটাও কথা বলবেনা। তুমি ওমন আচারনের যোগ্য বলেই তোমার সাথে ওমন আচারন করে। আর কোনোদিন যেনো ওর সাথে ঝামেলায় জড়াতে না শুনি।”

কথাটা বলে হালকা থামলেন আশরাফ খান। সাজ্জাদ চুপ করে আছে। ভিতরে ভিতরে রাগে ফেটে যাচ্ছে ও। আশরাফ খান আবার রেগে বললেন।

“কান খুলে শুনে রাখো! আগামী এক মাসের ভিতরেই জব খুঁজে বের করো। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোমার বিয়ে দিবো। তোমায় খাওয়াই তার মানে এটা না তোমার বউকেও বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবো। মনে থাকে যেনো!”

বিয়ের কথা শুনেই সাজ্জাদ চমকে অবাক চোখে তাকালো। মিসেস শাহনাজ আর সাদিয়াও ভীষণ অবাক হলো। সাজ্জাদ রেগে ওর বাবাকে বললো।

“বাবা আমি বিয়ে করবো না।”

আশরাফ খান বললেন।

“বিয়ে করবেনা তো কি করবে? সারাদিন আড্ডাবাজী করে বেড়াবে? শীর্ঘই বিয়ে করবে এটাই আমার শেষ কথা। ভালো ভাবে কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নেও!”

কথাটা বলেই আশরাফ খান চোখ গরম করে প্রস্থান করলেন। মিসেস শাহনাজ আর সাদিয়া এখনও শকে আছে। সাজ্জাদ রেগে সোফার কুশন ধরে ফেলে দিলো। মোবাইটা হাতে নিয়ে পা দিয়ে ফ্লোরে জোরে জোরে শব্দ করে চলে গেলো। সাজ্জাদ কে যেতে দেখে মিসেস শাহনাজ ও সাদিয়া একে অপরের দিকে তাকিয়ে সোফায় বসে পড়লো।

সাজ্জাদ রেগে দরজা খুলে তিনতলায় উঠলো। আঁখিদের বাসার সামনে গিয়ে কলিংবেল দিলো। কলিংবেল বাজতেই মিসেস রোকেয়া রহমান আতিককে উদ্দেশ্য বললো।

“কিরে আতিক? দরজা খুলছিস না কেনো? তাড়াতাড়ি দরজা খোল! দেখতো অসময়ে কে এলো?”

আতিক বসে বসে গেমস খেলছিলো। ওর মায়ের ডাকে বিরক্তি নিয়ে এসে দরজা খুললো। দরজা খুলে সাজ্জাদ কে দেখে হাসি মুখে বললো।

“আরে ভাইয়া আপনি? আসুন আসুন ভিতরে আসুন।”

সাজ্জাদ নিজের রাগকে চাপিয়ে শান্ত হয়ে ভিতরে গেলো। মিসেস রোকেয়া রহমান নিজের রুম থেকে বললেন।

“কিরে আতিক? কে এসেছে?”

“আম্মু সাজ্জাদ ভাইয়া এসেছে।”

সাজ্জাদের কথা আঁখি রুম থেকে শুনেই ভয় পেলো তাড়াতাড়ি টেবিল ছেড়ে উঠে দরজার কাছে গিয়ে পর্দার ফাঁক দিয়ে লুকিয়ে দেখলো সাজ্জাদ কি করছে। আবার ওর নামে বিচার দিতে আসেনি তো? এসব ভেবেই দরজা বন্ধ করে কান পেতে রইলো। সাজ্জাদের কথা শুনে মিসেস রোকেয়া রহমান ড্রইংরুমে আসলেন। সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বললেন।

“দাঁড়িয়ে কেনো বাবা! বসো বসো।”

সাজ্জাদ রেগে এসেছে ঠিকই এখন কি বলবে সেটাই ভেবে পাচ্ছেনা। বড় মানুষ হয়ে ছোট একটা মেয়ের সাথে ঝগড়া করছে সেই বিচার কি করে দিবে? এটা তো ওর নিজেরেই মান সম্মানে লাগবে। সাজ্জাদ আমতা আমতা করে বসে পড়লো। মিসেস রোকেয়া রহমানের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বললো।

“আন্টি! আংকেল বাসায় আসেনি?”

দরজার আড়াল থেকে কথাটা শুনেই আঁখি ভয় পেলো। পরপর চোখের পলক ফেলে ভাবলো। ওর বাবাকে খুঁজছে কেনো? ওর বাবার কাছে বিচার দিবে নাকি? কথাটা ভেবেই আঁখি বড়সড় ঢোক গিললো। দরজার কাছে কান পেতে দাত দিয়ে নখ কাটতে লাগলো। মিসেস রোকেয়া রহমান সাজ্জাদকে কফি দিতে দিতে বললো।

“কলেজ থেকে বিকেলেই ফিরেছেন। তিনি তো এইমাত্র বাইরে গেলেন। বাসার কিছু দরকারী কাজে। কেনো বাবা? হঠাৎ কি মনে এলে?”

আঁখি এবার আরও ভয় পেলো। ওর মাকে বললে তো আরও শেষ। কিছু শুনলেই ওকে আরও বেশি বানিয়ে কথা শুনাবে। সারাদিন বকাবকি করবে। এবার কি করবে? আঁখি ভাবতে ভাবতে দরজা থেকে সরে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো। সাজ্জাদ কফির মগ হাতে নিতে নিতে বললো।

“এমনি আন্টি। অনেকদিন হলো আসিনা তাই আসলাম।”

“ওহ!”

কথাটা বলে সামনের সোফায় বসলেন মিসেস রোকেয়া রহমান। আতিক এসেই নিজের গেমস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেছে। সাজ্জাদ বলবে কি বলবে না বিষয়টা ভেবে আমতা আমতা করতে লাগলো। অবশেষে ভাবলো এসেছে যখন কিছু বলেই যাই। সাজ্জাদ কফি খেতে খেতে বললো।

“আন্টি! চক্ষু….”

কথাটা বলেই থেমে গেলো সাজ্জাদ। সব জায়গায় বলতে বলতে মুখে চলে এসেছে। মিসেস রোকেয়া রহমান ব্যাপারটা বুঝতে পারেন নি। তাই ভ্রু কুচকে সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে রইলো। সাজ্জাদ জোর পূর্বক মুচকি হেঁসে বললো।

“I mean আঁখি! বলতে চাচ্ছি আঁখি বোধহয় প্রতিদিন ভোরে লাফায়.. মানে নাচে। এতে আমার ঘুমের ডিষ্টার্ব হয়। প্লিজ ওকে বলবেন একটু আস্তে নাচ প্রাক্টিজ করতে।”

কথাটা শুনে রোকেয়া রহমান জোর পূর্বক হেসে বললেন।

“আসলে এটা ওর অনেক শখের। ওর বাবাও বাঁধা দেয়না। সারাদিনে ওই একবারেই নাচে। আচ্ছা তোমার যেহেতু সমস্যা হয় আমি ওকে বুঝিয়ে বলবো।”

সাজ্জাদ কিছুক্ষণ বসে মিসেস রোকেয়ার সাথে গল্প করলো। তারপর চলে গেলো।

—————————

সকাল বেলা। প্রতিদিনের মতো আজও সাজ্জাদ ঘুমাতে পারছেনা। ওর মনে হচ্ছে বিল্ডিং কাঁপছে। তবুও সাজ্জাদ কিছুক্ষণ শুয়ে রইলো। আঁখি আজও নাচছে। তবে ও অতটা জোরে নাচছে না। সাজ্জাদের মনে হচ্ছে অনেক জোরে নাচছে। আখি নাচ প্রাক্টিজ করছে এমন সময় মিসেস রোকেয়া রহমান আঁখির রুমে এলেন। আঁখি ওর মাকে দেখে গান বন্ধ করে দাড়ালো। মিসে রোকেয়া রহমান বললেন।

“শোন একটু আস্তে নাচ প্রাক্টিজ করিছ!”

আঁখি ব্যাপারটা বুঝতে পারলো না। ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললো।

“আম্মু! আস্তে নাচবো কিভাবে? যেভাবে নাচ সেভাবেই নাচবো। নাচ আস্তে হলে আমি জোরে লাফাবো কেনো?”

“তোর নাচে সাজ্জাদের সমস্যা হয় কাল বললো ও।”

আঁখি হালকা ঢোক গিলে বললো।

“শুধু এটাই বলেছে?”

“হুম কেনো?”

আঁখি এবার স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। মনে মনে বললো। “যাক বাঁচা গেলো। সাজগাজ আর কিছুই বলেনি। চোর হলেও ইমানদার আছে।” আখি এবার ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো।

“কিছুনা আম্মু। তুমি যাও! আমার প্রাক্টিজ বাকি আছে।”

মিসেস রোকেয়া রহমান কিছু না বলেই চলে গেলো। আঁখি এবার রেগে বক্সের সাউন্ড বাড়িয়ে দিলো। বাড়িয়ে দিয়ে জোরে জোরে লাফিয়ে রেগে নিজে নিজেই বললো।

“শালা সাজগাজ! আমার নামে বিচার? এবার ইচ্ছে করে লাফাবো। দেখি কি করতে পারিস তুই। হুহ”

কথাটা বলেই আঁখি জোরে জোরে লাফাতে লাগলো। সাজ্জাদ কান চেঁপে অনেকক্ষন শুয়ে থাকলো। কিছুক্ষণ পর আর শুয়ে থাকতে পারলো না। রেগে উঠে নিচে চলে গেলো। কালকের মতো আঁখি দের বাসায় গিয়ে আর বেইজ্জতি হয়ে চায়না। তাই রেগে নিচে বাগানে চলে গেলো। বাগানে যেতেই সাজ্জাদ অবাক হয়ে গেলো। ওর সাধের গোলাপ গাছ কাঁদায় মাখামাখি। সাজ্জাদ তাড়াতাড়ি গিয়ে ওগুলো ধুইতে লাগলো। সাজ্জাদ রেগে অস্থির হয়ে আছে। ওট বুঝতে বাকি রইলো না এটা কে করেছে?

ইনশাআল্লাহ চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here