#শরতের_বৃষ্টি
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–১২
মরুভুমির তপ্ত বালির ন্যায় গরম মস্তিষ্ক মূহুর্তেই ঠান্ডা হয়ে গেল। অনেক সময় মানুষ এমন কাজ করে বসে যা তার মস্তিষ্ক উপলব্ধি করতে পারেনা। তাদের একেবারেই ধারনা থাকেনা তারা কি করতে যাচ্ছে। রাগ এমন একটা জিনিস যা মানুষের মস্তিষ্ককে মূহুর্তেই বিকলাঙ্গ করে দিতে পারে। রাগের বসে সাজ্জাদ আখির এতটা কাছে চলে গেছে বুঝতে পারেনি। এখন ওর কেমন যেনো লাগছে। সাজ্জাদের একটু অনুশোচনা হচ্ছে। তা আঁখি সাথে খাবাপ ব্যবহার করার জন্য না। ওকে স্পর্শ করেছে বলে। আঁখি নিশ্চয়ই ওকে খারাপ ভাবছে। ওকে খারাপ চরিত্রের লোক ভাবছে। পরক্ষনেই সাজ্জাদ ভাবলো আঁখি ওকে খারাপ ভাবুক বা ভালো ভাবুক তাতে ওর কি? আঁখি কে নিয়ে ও এত ভাবছে কেনো? আঁখি আজ ওর বেলকনি নষ্ট করে দিয়েছে ওকে কিছুতেই ছাড় দেওয়া যাবেনা। অগত্যা সাজ্জাদের মনে হলো আঁখিকে ওর বেলকনি পরিষ্কার করতে পাঠিয়েছে। ওকে তো একা ছাড়া ঠিক হয়নি। ওকে দিয়ে একেবারেই বিশ্বাস নেই পালিয়ে যেতে পারে। কথাটা ভেবেই সাজ্জাদ তাড়াতাড়ি ছাদ থেকে নামতে লাগলো।
সিঁড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে নামছে আঁখি। সাজ্জাদের ওমন ব্যবহার দেখে ও একেবারেই চুপসে গেছে। ও ভয়ে চুপচাপ যাচ্ছে। একটু যেতেই পিছনে ফিরে তাকালো। পিছনে সাজ্জাদ কে দেখতে পেলো না। আখি এবার সুযোগ পেয়ে গেলো। মনে মনে ভাবলো এই সুযোগ? এই সুযোগে পালাতে পারলেই হলো। তাহলে আর ওকে শাস্তি পেতে হবেনা। এটা ভেবেই আঁখি চারতলায় আনিকাদের ফ্লাটে কলিংবেল দিলো। কলিংবেল পেয়ে আনিকার মা দরজা খুললেন। দরজা খুলতেই আখি তাড়াতড়ি ভিতরে ঢুকে দরজা আটকে দিলো। ওর কাজে আনিকার মা মোর্শেদা বেগম অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। আঁখি ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো।
“কেমন আছেন আন্টি?”
আঁখির কথা শুনে মোর্শেদা বেগমের ধ্যান ভাঙলো। তিনি থতমত খেয়ে গেলেন। অগত্যা মুচকি হেসে বললেন।
“আলহামদুল্লিলাহ ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?”
“আমিও ভালো আছি আন্টি!”
মুচকি হেসে কথাটা বললো আঁখি। মোর্শেদা বেগম ওর দিকে তাকিয়ে বললেন।
“দাঁড়িয়ে আছো কেনো? বসো বসো!”
“না আন্টি বসবো না। আনিকা কোথায়? ওর সাতে দরকারি কথা আছে।”
সামনে আগাতে আগাতে কথাটা বললো আঁখি। মোর্শেদা বেগম আনিকার রুমের দিকে ইশারা করে বললেন।
“ওর রুমেই আছে বোধহয়। আর রুমে না থাকলে ওর বেলকনিতে আছে। গিয়ে দেখো!”
কথাটা শুনে আঁখি মুচকি হেসে আনিকার রুমের দিকে চললো। মোর্শেদা বেগম রান্না ঘরের দিকে গেলেন। আনিকা ওর বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে। ওর বাবা একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। ওর মা গৃহিনী। আঁখি মনের সুখে আনিকার রুমে যাচ্ছে। সাজ্জাদকে বোকা বানাতে পেরে ওর অনেক ভালো লাগছে। আঁখি আনিকার রুমের কাছে যেতেই দেখলো আনিকা পড়ার টেবিলে বসে মন দিয়ে পড়ছে। ওকে পড়তে দেখেই কোমড়ে হাত দিয়ে মনে মনে বললো। “ছেমরি আস্ত শয়তান! আমাকে বলে পড়ালেখা করিনা। আর বাড়িতে এসে দেখো ও বই নিয়ে পড়ে আছে। দাড়া! আজ তোর একদিন আর আমার যেই কদিন লাগে। হুহ!” এগুলো বলেই আঁখি আস্তে আস্তে করে আনিকার পড়ার টেবিলের কাছে গেলো। পিছন থেকে ওর কানের কাছে গিয়ে জোরে “হালুম” করে উঠলো। হঠাৎ করে এমন হওয়াতে আনিকা খুব ভয় পেয়ে গেছে। ওর মন পড়ার মাঝে ছিলো হঠাৎ হওয়াতে ও লাফিয়ে ফ্লোরে পড়ে গেলো। ওকে পড়তে দেখে আঁখি উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো। আনিকা পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছে। অনেক কষ্টে উঠে কোমড়ে হাত দিয়ে আঁখির দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে রইলো। আঁখি ওকে রাগি চোখে তাকাতে দেখে কোনো মতে হাসি আটকালো। মুখে হাত দিয়ে বললো।
“একে বারে ঠিক হইছে। কোমড়টা ভেঙে গেলে আরও ভালো হতো। ছেরি মিথ্যাবাদী! সারাদিন বলে বেড়াছ, ‘দোস্ত আমি একটুও পড়িনা। বইয়েই ধরিনা!’ আর আজ বাড়িতে এসে দেখি বই নিয়ে বসে আছোছ্!”
আনিকা আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।
“দোস্ত সত্যি আমি পড়িনা। আজ আম্মুর বকাবকিতে পড়তে বসেছি। তা তুই হঠাৎ আমাদের বাড়িত?”
আনিকার কথা শুনে আঁখি একবার ভাবলো সাজ্জাদের কথা বলবে। আবার পরক্ষনেই ভাবলো ওকে একটা বললে আরেকটা বুঝবে। আবার এটাও বলতে পারে সাজ্জাদ ভাইয়ার সাথে এত রাতে ছাদে কেনো ছিলাম? তাই কথা ঘুরিয়ে বললো।
“২১ ফেব্রুয়ারিতে কি ড্রেস পড়বি সেটাই জিজ্ঞাসা করতে এসেছি।”
আঁখির কথা শুনে আনিকা অবাক হলো। যাকে বলে চরম মাত্রার অবাক। ২১ ফেব্রুয়ারি আসতে এখনও অনেক দিন বাকি। আর ও রাতে এটা জিজ্ঞাসা করতে এসেছে? আনিকা আঁখির দিকে তাকিয়ে রেগে বললো।
“২১ ফেব্রুয়ারি আসতে এখনও অনেকদিন বাকি। তুই কাল সকালেও তো জিজ্ঞাসা করতে পারতি। এই রাতে কষ্ট করে আসতে গেলি কেনো বলতো?”
আঁখি জোরে আনিকার পিঠে একটা কিল বসিয়ে দিলো। আনিকা ওর রাগের কারন বুঝতে পারলোনা। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আঁখি দিতে তাকিয়ে আছে। আঁখি রাগি চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বললো।
“এত ঢং না করে বলতে পারতি তোদের বাড়ি আসলে সমস্যা। আমার কষ্টের কথা কেনো বললি? আমার তো কেনো কষ্ট হয়নি।”
আনিকা অসহায় চোখে আঁখির দিকে তাকালো। ও এখন বুঝতে পেরেছে ও কতো বড় ভুল কথা বলে ফেলেছে। এখন আঁখি আবার রাগ করবে। ও রাগ করলে রাগ ভাঙাতে অনেক কষ্ট। আঁখি ওর সাথে কথা না বললে ওর একটুও ভালো লাগেনা। এসব ভেবেই আনিকা মুখটা ফেকাসে করে আঁখির দিকে তাকিয়ে রইলো। আঁখি চোখ দুটো বড় বড় করে আনিকার দিকে তাকিয়ে বললো।
“এই ছেরি! এভাবে তাকিয়ে আছোছ কেনো? মনে হয় তোর ১৪ নাম্বার জামাই মারা গেছে।”
ওর কথা শুনে আনিকা মুখটা কালো করে বললো।
“আমার একটাও বিয়ে হয়নি দোস্ত। ১৪ নাম্বার জামাই কোথা থেকে আসবে? সত্যি দোস্ত আমি ওবাবে বলতে চাইনি। তুই আসলে তো আমি আরও খুশি হই!”
আঁখি ওর কথা শুনে মুখটা বাকিয়ে বললো।
“এই তোর বকবক চুপ কর! কি পড়ে যাবি সেটাই বল!”
আনিকা চুপ করে কিছুক্ষন একটু ভাবলো। তারপর হাসি মুখে বললো।
“সবুজ পাড়ের লাল শাড়ি পড়লে কেমন হয়? সাথে চুলগুলো খোঁপা করে সেখানে দুটো গোলাপ গুঁজে রাখবো।”
আনিকার কথা শুনে আঁখি রেগে ওর দিকে তাকালো। আঁখি ভয়ে ভয়ে বললো।
“আমি কি বলবো দোস্ত! তোর যা ভালো লাগে পড়িছ।”
আঁখি আনিকার গালে হালকা একটা থাপ্পড় দিলো। আনিকা আবারও হতাশ চোখে তাকালো। আঁখি মুচকি হেসে বললো।
“আরে ভালো কথা বলেছিস্ ড্রেসটা সুন্দর হবে। কাল বিকালে শপিংমলে যাবো।”
আনিকা গালে হাত দিয়ে গাল ফুলিয়ে বললো।
“ড্রেসটা পছন্দ হয়েছে বলেও থাপ্পড় দিবি?”
আঁখি ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো। এর মাঝেই মোর্শেদা বেগম ট্রে হাতে রুমের ভিতরে প্রবেশ করলেন। ট্রেটা টেবিলে রাখতে রাখতে বললেন।
“নেও এবার একটু খেয়ে নেও! কেয়ে বলো কেমন হয়েছে।”
আঁখি মুচকি হেসে ট্রের দিকে তাকালো। ট্রে তে তিন প্রিচ নুডলস। আনিকা একটা নিলো। আরেকটা আঁখির হাতে তুলে দিলো। মোর্শেদা বেগম এক প্রিচ হাতে নিয়ে খেতে খেতে আঁখিকে বললো।
“খেয়ে বলো কেমন হয়েছে?”
আঁখি নুডলস হাতে নিয়ে ভাবলো ভালোই হয়েছে। নুডলস এর পিকনিক ছিলো ওটা হয়নি তাতে কি নুডলস খেয়েছে তো! এটাই পিকনিক মনে করবে। আঁখি চুপচাপ খেতে লাগলো। খেতে খেতে মোর্শেদা বেগম কে মুচকি হেসে বললো।
“নুডলস অনেক মজা হয়েছে আন্টি!”
মোর্শেদা বেগম মুচকি হাসলেন। আনিকা মাথা নাড়িয়ে খেতে খেতে বললো।
“আম্মু অনেক মজা করেই রান্না করে।”
আঁখি নুডলস খেয়ে ওদের সাথে একটু গল্প করে ওর বাসায় চলে আসলো। বাসায় আসতেই আতিক ওর সামনে এসে বললো।
“এই তুই এমন কেনো? আমি তোর একমাত্র ভাই হিসেবে তো একটু নুডলস পাই। তা না করে নিজেই একা খেয়ে এলি? একটু তো নিয়ে আসতে পারতি।”
আঁখি রেগে ওর দিকে তাকালো। আমিনুর রহমান ও রোকেয়া রহমান সোফায় বসে হাসছেন। আঁখি রেগে আতিককে বললো।
“আমি পিকনিক খেতে গিয়েছি তোর জন্য আনতে যাইনি। এত ছোছা কেনো তুই। সারাদিন এত খাছ তবুও মন ভারে না? খাদক একটা!”
আতিক নাক ফুলিয়ে বললো।
“ভালোবাসা থাকলে ঠিকই আনতে পারতি।”
“এস আসছে আমার ভালোবাসা! তোর জন্য ভালোবাসা থাকবে কেনো? তুই শুধু আমারটা নিয়ে খেয়ে ফেলোছ। আমারকে দেছ না। তখন তো আমার জন্য দরদ দেখাছ না! আমি কেনো দেখাবো?”
কথাটা বলে আঁখি মুখ বাঁকিয়ে ওর রুমে চলে গেলো। আতিক ওর মা বাবার দিকে তাকিয়ে বললো।
“দেখছো এ নাকি বড় বোন! একটুও ভালোবাসা নাই!”
ইনশাআল্লাহ চলবে……