#শরতের_বৃষ্টি
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৫৪
অনুশোচনা সব সময় মানুষকে কুড়ে কুড়ে খায়। ভিতর থেকে বারবার ভেঙে দেয়। প্রতিদিন কাজের মাঝে আমরা কতই না ভুল করে থাকি। মানুষের পক্ষে তো আর সবসময় শতভাগ সঠিক থাকাও সম্ভব না। তবে কিছু সময় আমরা এমন কিছু ভুল করে বসি যার জন্য আমাদের স্বাভাবিক জীবনে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয় এবং এই ভুলের কোন সমাধানে না পৌঁছাতে পারলে হয়ত কিছু সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃতভাবে কাউকে না কাউকে আমাদের কাজ অথবা আচরণ দ্বারা আঘাত করে ফেলি। এর পরিণাম হতে পারে মারাত্মক। ক্ষমা চাওয়ার মানে হলো, আপনি আপনার ভুলের জন্য যথেষ্ট অনুতপ্ত। আপনি এমন ভুল ভবিষ্যতে আর করবেন না বলে অঙ্গীকারাবদ্ধ। আপনি একবার ক্ষমা চেয়ে যদি একই ভুল আবার করেন, তবে সেটা কিন্তু ক্ষমা চাওয়ার মধ্যে পরে না। আর ভুল উপলব্ধির মধ্য দিয়ে ক্ষমা চাওয়ার কাজটাও অতটা সহজ না। একটি ভুল করে ফেলার পর থেকেই আপনার মধ্যে অনুশোচনা কাজ করতে থাকে। ক্ষমা চাওয়ার আগে মাথায় এই চিন্তা কাজ করে যে, ‘ক্ষমা চাইতে গিয়ে আবার অপমানিত হয়ে আসব না তো?’ ভুল যেহেতু করেই ফেলেছেন, সেহেতু কিছুটা হলেও অপমানের শিকার হবেন সেটা ধরে নিয়েই ক্ষমা চাইতে হবে। তাছাড়া সবসময় যে অপমানিত হবেন এমন তো না। হতেই পারে আপনার ভালর জন্যই অপরপক্ষ আপনার ভুল আগে থেকেই ক্ষমা করে রেখেছে! তাই সব ভুলের অনুশোচনা থেকে ক্ষমা চাওয়ার আগে সব রকম বাধা ঝেড়ে ফেলুন। নিজের সামনে যত বেশি বাধা তৈরি করে রাখবেন, অনুশোচনার চাপ তত বেশি বাড়তে থাকবে।
সাদিয়া ওইদিনের পর থেকেই মন মরা হয়ে থাকে। পড়তেও একটু ভালো লাগেনা। একেতো নিরবের শোক তার উপর আঁখির সাথে করা ভুলের জন্য ও অনুতপ্ত। ওর ভিতরে খুব অনুশোচনা কাজ করছে। ক্ষমা চাইতে যেতেও দ্বিধা বোধ করছে। কিন্তু যতই চুপ আছে ততই আখির সামনে যেতে পারছে না ও। রুমে বসে কেঁদে কেঁদে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলছে। আঁখি ছাড়া কেয়েই ওর এমন আচারনের কারন জানেনা। সাদিয়া অনেক ভেবে আঁখির রুমে গেলো। দরজা আটকে ওকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো। আঁখি নিজেই হতভম্ব হয়ে গেছে। হঠাৎ কি হয়েছে বুঝতে পারছে না। সাদিয়াকে ছাড়াতে ছাড়াতে অবাক হয়ে বললো।
“কি হয়েছে সাদিয়া? কাঁদছো কেনো?”
সাদিয়া কেঁদেই চলেছে। আখির চোখের দিকেও তাকাচ্ছে না। ওর কান্না যেনো থামছে না৷ আঁখি ওকে ধরে খাটে বসালো। ওর হাতে হাত রেখে শান্ত স্বরে আবারও জিজ্ঞাসা করলো।
“কাঁদলে কি করে বুঝবো কি হয়েছে? কান্না বন্ধ করে আমাকে সব বলো? নিরব কিছু বলেছে?”
সাদিয়া মাথা নাড়ালো। মানে নাহ! ও কিচ্ছুই বলেনি। আঁখি কপাল কুচকে বললো।
“তাহলে?”
“আমাকে মাফ করে দেও ভাবি! আমি চাইনি তোমার সাথে এমন করতে কিন্তু নিরবের সাথে তোমায় দেখলে আমার ভালো লাগতো না। খুব কষ্ট হতো। আমার রাগ বেড়ে যেতো।আমার মনে হতো তোমার জন্যই নিরব আমাকে ভালোবাসে না। ওকে ভালোবাসতাম খুব! তাই এসব মানতে পারিনি ভুল করে ফেলেছি। আমি ভেবেছি তুমি ভাইয়াকেও ঠকাচ্ছ। তাই ভাইয়াকেও বলেছি। আমি তোমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করেছি। বিশ্বাস করো! আমি অতটাও খারাপ নই ভাবি!”
কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠা গলায় কথা গুলো বললো সাদিয়া৷ আঁখি বুঝতে পারলো ও অনুতপ্ত। মানুষ না বুঝেই ভুল করে৷ যখন সে অনুতপ্ত হয় তখন তাকে মাফ করা ছাড়া কিছুই বলার থাকে না। আঁখি এমনিতেও ওকে মাফ করে দিয়েছে। ও জানতো সাদিয়া মোটেও খারাপ মেয়ে নয়। আঁখি মুচকি হেসে বললো।
“ধুর পাগল মেয়ে। এসবের জন্য কেউ এভাবে কাঁদে? আমি তোমার কথায় কিছুই মনে করিনি। তুমি ছোট একটা মেয়ে। ভুল করবে আবার ভুল থেকেই শিখবে। ভুল তো মানুষের দ্বারাই হয়। আর পরিবারের মধ্যে এসব কোনো ব্যাপার না। ঝগড়া করবো আবার মিলও হবো। আমরা আমরাই তো! আমি কাউকে ভালোবাসলে হয়তো এমনেই করতাম। ভালোবাসা এমনেই হয়। তবে আসল কথা হলো তোমরা ভাই বোন দুজনেই একটু বেশি হিংসুটে।”
কথাটা বলে আঁখি শব্দ করে হেসে ফেললো। সাদিয়াও কান্নার মাঝে হালকা হাসলো। আঁখি ওর চোখটা মুছে মুচকি হেসে বললো।
“এসব নিয়ে আর কিছুই মনে করবে না। যা গেছে তা অতীত। তার কথা মনে করে কষ্ট পেয়ে লাভ নেই। আমাদের বর্তমান আর ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে হবে। তবেই জীবন সার্থক হবে। সব কিছু ভুলে মন দিয়ে লেখা পড়া করো। ধৌর্য ধরো! ধৌর্যের ফল সবসময় মিষ্টি হয়! যাও গিয়ে পড়তে বসো! দুদিন পর তোমার পরীক্ষা!”
সাদিয়া ওর কথায় জোরপূর্বক ঠোঁট প্রসারিত করলো। যদিও ভিতর থেকে পুরোপুরি হতাশা কাটিয়ে উঠতে পারেনি তবুও চেষ্টা করছে। সাদিয়ার কিছুক্ষণ কথা বলে পড়তে চলে গেলো। যদিও ওর মন পড়ায় বসবে না। তবুও পড়তে হবে, যে ওর ভালোবাসা বুঝে না তার জন্য বাবা মায়ের মান সম্মান নষ্ট করা বা নিজের ক্ষতি করা দুটোই বোকামি।
নিরব বাসা থেকে চলে যাচ্ছে। বাসা থেকে বের হয়ে গেইটের সামনে গিয়ে পিছনে ফিরে দোতলার দিকে তাকালো। প্রথমে আঁখির বেলকনির দিকে তাকালো। শেষ বারের জন্য হলেও ওকে দেখতে চাইলো কিন্তু আফসোস! ওর বেলকনি শূন্য। নিরব সাদিয়ার বেলকনির দিকে তাকালো। খুব অবাক হলো সাদিয়াকে দেখতে না পেয়ে। প্রতিদিন বের হলেই বেলকনিতে সাদিয়াকে দেখতে পেতো। ও না তাকালে উপর থেকে সাদিয়া এটা ওটা মারতো। ওর দিকে তাকিয়ে থাকতো মুক বাকাতো। আরও কত শত ছেলে মানুষী করতো কিন্তু আজকে নেই। এই দুদিন ওকে অনেক খুজেছে নিরব কিন্তু পায়নি। সাদিয়ার দুষ্টামি গুলো ও খুব মিস করছে। ও সাদিয়াকে কতটা কষ্ট দিয়েছে এখন কিছুটা হলেও উপলব্ধি করতে পেরেছে। যদিও ওকে ভালোবাসে না কিন্তু ওর মনের কোনে সাদিয়ার সাথে করা ব্যবহারের জন্য অনুশোচনা হচ্ছে। ওভাবে না বললেও পারতো। ও নিজেও তো ভালোবাসার কষ্ট বুঝে তবে কি করে পারলো এটা? কে জানে পাগল মেয়েটা কি করছে? পড়ছে কিনা? নাকি ওর জন্য সব ছেড়ে দিয়েছে? নিরব অনেক প্রশ্ন মনে নিয়ে পাড়ি জমালো নিজ গন্তব্যে। কে জানে কখন ফিরবে মায়ার টানে? হয় তো হারিয়ে যাবে ভুলে অনুশোচনায়!
নিরব সামনে যেতেই সাদিয়া পর্দার আড়াল থেকে বের হলো। নোনা জলে ভেজা চোখে নিরবের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। হাত বাড়িয়ে নিরবে খুব ডাকতে ইচ্ছে করছে ওর। খুব করে বলতে ইচ্ছে করছে যেওনা। ও কিন্তু নিরুপায়। যার কাছে বারবার অপমানিত হয়েছে তার কাছে অপমান ছাড়া হয় তো কিছুই পাবে না ও। কে জানে হয়তো আর কখনও দেখা হবে না এই মানুষটার সাথে। দেখা হলেও হয় তো সে থাকবে অন্য কারো। সাদিয়ার বুক ফেটে কান্না আসছে মুখ চেঁপে দেয়ালে পিঠ লাগিয়ে হাউমাউ করে কাঁদলো। কাঁদতে কাঁদতে বিড়বিড় করে বললো।
“কেনো বুঝলে না এ ভালোবাসা? আমার হৃদয় জুড়ে যে তোমার বসবাস সেখানে কি করে অন্য কাউকে স্থান দিবো? যদি একবার ফুরে আসতে তবেই বুঝতে পারতে আমার হৃদয়ে কতটা ক্ষত হয়েছে তোমায় না পাওয়ার যন্ত্রণায়। কেনো বুঝলে না? কি দোষ ছিলো আমার?”
সাদিয়া আর বলতে পারলো না। কান্নায় গলা আটকে আসছে। কেনো ওর সাথেই এমন হলো। ও কি ওর ভালোবাসার মানুষটাকে পেতে পারতো না? সাদিয়া কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পরলো। হাঁটুতে মুখ গুঁজে হাহাকার করে কাঁদছে। ওর নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছে। কি করে বেঁচে থাকবে ও? কি কডে এই যন্ত্রণা বহন করবে? ও যে আর পারছে না। বুকটা ভারী ভারী মনে হচ্ছে। ওর খুব চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু কি করে কাঁদবে? জোরে শব্দ হলে তো সবাই শুনবে। কিন্তু ওর ভিতরে যে গগনবিদারী চিৎকার, বেদনা হচ্ছে তা কি কেউ শুনতে পাচ্ছে? কেউ শুনতে পায় না বুকের হাহাকার! সাদিয়া মুখ চেঁপে নিরবের কষ্ট নিরবে সহ্য করতে লাগলো।
—————————
সাজ্জাদ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছে। বাইরের আবহাওয়া একটুও ভালো না। আষাঢ় মাস এসেছে। বৃষ্টি তো হবেই। সাজ্জাদ রুমে ঢুকতেই দেখলো আঁখি বিছানায় বসে পড়ছে। ও রুমে ঢুকার পরেও ওর দিকে তাকালো না। আঁখি ওইদিনের পর থেকে ওর সাথে কথা বলা তো দূর ওর দিকে তাকায়ও না ঠিক করে। সাজ্জাদের একটুও ভালো লাগছে না। আঁখির নিরবতা ওর মনটা ভেঙে দিচ্ছে। কত সরি বলচে তাও আঁখি রাগ করে আছে। কি করলে ওর রাগ কমবে সেটাই বুঝছে না। আঁখি কথা না বললে ওর কত কষ্ট লাগে সেটা কি আঁখি বুঝে না? সাজ্জাদ হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে আঁখির কাছে গেলো। আখি বইয়ে মুখ গুঁজে আছে। সাজ্জাদ ওর কাছে যেতেই আঁখি ভ্রু কুচকে বিরক্ত নিয়ে এক পলক ওর দিকে তাকালো। পরক্ষনেই বইয়ে গভীর মনোযোগ দিলো। সাজ্জাদ ওর পাশে বসে ওর সাথের শপিং ব্যাগটা এগিয়ে দিতেই আঁখি বিরক্ত নিয়ে উঠে গেলো। হনহন করে সামনে চললো। সাজ্জাদ মনে মনে খুবেই কষ্ট পেলো।
“পাখি!”
সাজ্জাদ পিছন থেকে অসহায় কন্ঠে কথাটা বলে উঠলো। আঁখি থমকে দাঁড়িয়ে গেলো। সাজ্জাদ কি বলছে ঠিক বুঝতে পারলো না। ওকে কি পাখি বললো? পরক্ষনেই ভাবলো হয় তো ভুল শুনছে। সাজ্জাদ আঁখি বলছে ও পাখি শুনছে। সাজ্জাদ আবারও ‘পাখি’ বলে ডেকে উঠলো।
আঁখি এবার বুঝতে পারলো সাজ্জাদ ওকে পাখি বলে ডেকেছে। ও একটু না, অনেকটাই অবাক হলো। সাজ্জাদ ওকে পাখি বলছে? তাও এমন উদাস হওয়া কন্ঠে? কেনো?আঁখি সাজ্জাদের দিকে ঘুরলো না। সামনে তাকিয়েই কারন খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পরলো। সাজ্জাদ পিছন থেকে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো।
“হ্যাঁ পাখি! তুমিই আমার পাখি। প্লিজ এভাবে মুখ ঘুরিয়ে রেখো না। আমি ভুল করেছি তার জন্য ক্ষমাও চেয়েছি। আমি অনুতপ্ত। এবার তো মাফ করে দেও! আমি তোমার পাশে নিরবকে মানতে পারিনি। আমার খুব কষ্ট হয়েছিলো। আমার তোমার সাথে ওমন করা ঠিক হয়নি আমি জানি কিন্তু কি করবো বলো? রাগ কন্ট্রোল করতে পারিনা আমি। তুমি তো জানো আমার রাগ একটু বেশি। সরি পাখি! কিভাবে ক্ষমা চাইলে মাফ পাবো বলোতো? ভুল তো মানুষেই করে, আমায় কি এবার মাফ করা যায়না? শাস্তি দেও তবুও কথা বলো। তোমার কথা না শুনলে আমি মরেই যাই প্রায়। প্লীজ একবার মাফ করো! আর কখনও এমন ভুল করবো না।”
একশ্বাসে কথা গুলো বলে থামলো সাজ্জাদ। আঁখি চোখ বন্ধ করে সব শুনলো। বাইরে হাওয়া খুব জোরে বইছে সাথে ওর মনেও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে স্নিগ্ধ আবেশের হাওয়া। আঁখির মুখে হাসি ফুটলো। ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো। এই কদিনে বুঝে গেছে সাজ্জাদ ওকে ভালোবাসে কিন্তু মুখে বলছে না বলেই আঁখি এমন করছে। সাজ্জাদের মুখ থেকে ও ভালোবাসার কথা শুনতে চায়। আঁখি কিছু না বলেই বেলকনিতে চলে গেলো। সাজ্জাদ খুব হতাশ হলো। শপিং ব্যাগটা রেগে বিছানায় ফেলে দিলো। কিছুক্ষন বসে থেকে আবারও বেলকনিতে চললো। আঁখির চুপ থাকা ওকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। ওর হৃদয়ে অন্তদহন হচ্ছে। সাজ্জাদ বেলকনিতে যেতেই দেখলো গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে আঁখি ওগুলো হাত দিয়ে ধরছে। সাজ্জাদ আঁখির দিকে তাকিয়ে জোরে শ্বাস ছেড়ে বলতে লাগলো।
“তোমার সাথে ঝগড়া করতে করতে ঝগড়াটা কখন ভালোবাসায় রূপ নিয়েছে বুঝতে পারিনি। আমি বুঝতে পারিনি কখন তুমি আমার হৃদয়ে আঁখি থেকে পাখি হয়ে গেছো। আমি ভালোবাসা কি বুঝি না। কখন কিভাবে ভালো বেসেছি তার কথাও বলতে পারবো না। কিন্তু অনুভব করতে পারি তোমায় কত ভালোবাসি। তোমার পাশে নিরবকে দেখে আমার কষ্ট হতো। আমি ছাড়া কাউকেই সহ্য হয়না তোমার পাশে। তুমি আমার ভালোবাসাটা বুঝতে পারোনি। আমার অনুভূতি বুঝতে পারোনি। তোমার সাথে ঝগড়া না করলে আমার ভালো লাগেনা। সকালে উঠে তোমার মিষ্টি ঝগড়া না শুনলে আমার দিন কাটে না। তোমার মুখ ফিরিয়ে নেওয়া খুব কষ্ট দেয় আমায়। তুমি যা বলবে তাই করবো আমি। কি করতে বলো আমায়? তোমার কথা সব শুনবো তবুও আগের মতো হয়ে যাও! মাফ করে ভালোবেসে একবার হাতটা ধরে দেখো! কথা দিচ্ছি কখনও ঠকবে না পাখি!”
আঁখি কিছু না বলেই রুমে চলে গেলো। সাজ্জাদের মনটাই ভেঙে গেলো। এবার যেনো খুব রেগে গেলো। এত কিছু করার পরেও রাগ কমছে না? ওকে এত অবহেলা করছে? ওর ভালোবাসাকেও অপমান করছে? নিজের ইগো কে ধরে রেখেছে? সাজ্জাদ রেগে বেলকনি থেকে চিল্লিয়ে বলে উঠলো।
“যাও যাও! আর কিচ্ছু বলবো না। মানুষ ক্ষমা চাইলে তো ক্ষমা করে। কিন্তু তোমার এত ইগো? আমায় কষ্ট দিয়ে ভালো থাকলে তাই থাকো। তোমায় কতটুকু কষ্ট দিয়েছি? তুমি তো দিনের পর দিন আমার হৃদয় কে পোড়াচ্ছো। থাকো তোমার ইগো নিয়ে। আজ মূল্য দিচ্ছো না। একদিন হন্য হয়ে খুঁজবে কিন্তু তখন খুঁজেও পাবে না।”
কথাটা বলেই সাজ্জাদ ভগ্ন হৃদয়ে ফ্লোর বসে পড়লো। ওর জীবনটাই শেষ হয়ে গেলো। কেনো যে ভুল করলো? থাক! আঁখি কে আর কিছুই বলবে না। ও নিজের মতো ভালো থাকুক! সাজ্জাদের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরলো। ও পানিটা মুছে বৃষ্টির ফোটার দিকে তাকিয়ে রইলো।
“একঘন্টা শ্বাস বন্ধ করে থাকুন!”
আঁখির কথা শুনে সাজ্জাদ অবাক হলো। আঁখির দিকে তাকাতেই থমকে গেলো। এ ও কাকে দেখছে? সাজ্জাদ হা করে বসা থেকে দাড়িয়ে গেলো। ওর সামনে কোনো নীল পরী দাঁড়িয়ে আছে। আঁখি নীল শাড়ি পড়ে হাসি মুখে দাড়িয়ে আছে। হাতে নীল কাঁচের চুড়ি। চেহারায় সাজের লেস মাত্র নেই কিন্তু এতেই আঁখিকে অপরূপ লাগছে। এত সুন্দর লাগবে সাজ্জাদ বুঝতে পারেনি। ও আজ এই শাড়িটাই কিনে এনেছিলো আঁখির জন্য। আঁখি শাড়ি পড়তে গিয়েছিলো? ভাবতেই ওর মুখে হাসি ফুটলো। আখি কোমরে হাত দিয়ে রাগি কন্ঠে বললো।
“কি হলো? শ্বাস বন্ধ করে একঘন্টা থাকুন!”
ওর কথায় সাজ্জাদের ধ্যান ভাংলো। আঁখির কথার কিছুই বুঝতে পারছে না। সাজ্জাদ অবাক হয়ে ভ্রু কুচকে বললো।
“মানে?”
“আপনি না বললেন আমি যা বলবো তাই করবেন? যা বলবো তাই শুনবে? এখন শ্বাস বন্ধ করতে বলছি করেন!”
আঁখি হাতের চুড়ি নাড়াতে নাড়াতে সহজভাবে কথাগুলো বললো। সাজ্জাদ হা হয়ে গেলো। ও যেনো অবাকের শেষ পর্যায়। কি বলছে এগুলো? এই মেয়ে তো ভীষণ ডেঞ্জারাস! সাজ্জাদ জোরপূর্বক হেসে আঁখির দিকে এগিয়ে বললো।
“পাখি! ওটা তো কথার কথা! এতক্ষণ শ্বাস না নিলে তো মরে যাবো। তখন কি হবে বলো?”
“যা পারবেন না তা বলছেন কেনো মি. সাজগাজ!”
কুখ বাকিয়ে কথাটা বলে আঁখি অন্য দিকে তাকালো। সাজ্জাদ মুচকি হাসলো। এইতো ও ওর আগের হাস্যোজ্জ্বল পাখিকে পেয়ে গেছে। ও হেসে আঁখিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। আঁখি গাল ফুলিয়ে ওকে ছাড়াতে লাগলো। সাজ্জাদ ওর হাতটা ধরে বৃষ্টির ফোঁটা গুলো মধ্যে ধরলো। বৃষ্টির ফোটা ওদের দুজনের হাতে পড়ছে। আঁখি অবাক হয়ে সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কি করছে এগুলো? সাজ্জাদ মুচকি হেসে আঁখির দিকে তাকিয়ে বললো।
“কখনও ছুঁয়ে দেখোছো বৃষ্টির ফোটা গুলি?
দেখেছো কি! স্পর্শেই তা ছড়িয়ে যায়।
কিছু বিশ্বাসও ঠিক তেমন,
সন্দেহের আলতো ছোঁয়ায়-
তাকে স্পর্শ করা অনুচিত!
ভুল শেষে, খুব আবেশে,
ভালোবেসে জড়িয়ে নেবো,
হাত ধরো পাশে থেকো,
এই বিশ্বাসে!
শরৎ এলো ভিজবো দুজনে,
শরতের বৃষ্টিতে!”
আঁখি চোখ বন্ধ করে ওর কবিতা শুনলো। আঁখির হৃদয়ে আজ ভালোবাসার পরশ লেগেছে। সত্যি আজ সব দুঃখ ভুলে গেছে ও। ঠোঁটে ফুটে উঠলো হাসি। মন বলছে এ অনেক প্রতিক্ষার ভালোবাসা। সাজ্জাদ নিজেও হাসলো। আজ ওর নিজের মাঝেও তৃপ্তি খুঁজে পেয়েছে। পেয়েছে জীবনের আসল সুখ। সাজ্জাদ পিছনে চেয়ারে বসে আঁখি কে টেনে ওর কোলে বসালো। আঁখি আজ চুপটি করে বসে আছে। এতদিনের প্রতিক্ষার পর পাওয়া ভালোবাসা নষ্ট করতে চাইছে না। চোখ বন্ধ করে প্রান ভরে উপভোগ করছে। সাজ্জাদ এক পলক ওর দিকে তাকিয়ে ওকে খুব আবেশে জড়িয়ে ধরে গাইতে লাগলো।
“একই সে অধরে ছোঁয়া পড়েছে
তাই তো এ মন মৃদু হেসেছে
একই সে চোখেতে ধরা পড়েছে
তাই তো এ ক্ষণ আজ মেতেছে
তোমায় হলো ফিরে পাওয়া
আপন করে চাওয়া
বৃষ্টি ছুঁয়ে, আরও প্রেম নিয়ে
দু’টি মন আজ একই সাথে ভিজছে
বৃষ্টি ছুঁয়ে, আরও প্রেম নিয়ে
দু’টি মন আজ একই সাথে ভিজছে
রিমঝিম বারিষে যায়নি জানা
কি করে ইচ্ছেরা মেললো ডানা
রিমঝিম বারিষে যায়নি জানা
কি করে ইচ্ছেরা মেললো ডানা
তোমায় হলো ফিরে পাওয়া
আপন করে চাওয়া
বৃষ্টি ছুঁয়ে, আরও প্রেম নিয়ে
দু’টি মন আজ একই সাথে ভিজছে
বৃষ্টি ছুঁয়ে, আরও প্রেম নিয়ে
দু’টি মন আজ একই সাথে ভিজছে
প্রেম সে কি কয় কথা রাত্রি-দুপুর
থেকে থেকে সুর তোলে আমার নূপুর
প্রেম সে কি কয় কথা রাত্রি-দুপুর
থেকে থেকে সুর তোলে তোমার নূপুর
তোমায় হলো ফিরে পাওয়া
আপন করে চাওয়া
বৃষ্টি ছুঁয়ে, আরও প্রেম নিয়ে
দু’টি মন আজ একই সাথে ভিজছে
বৃষ্টি ছুঁয়ে, আরও প্রেম নিয়ে
দু’টি মন আজ একই সাথে ভিজছে”
ইনশাআল্লাহ চলবে….
(রি চেইক করিনি। ভুলত্রুটি বুঝে নিবেন। কেমন হয়েছে অবশ্যই কমেন্ট করবেন গাইস!)