#নতুন_তুই_আমি#
💜💜💜💜💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
পর্ব:-৩…………………………
সিয়ামের আম্মু রোমে ডুকেই সিয়ামকে ওরাধুরা পেটানো শুরু করলো।
ছেলে টা বিছানায় শুয়ে লেপটপ নিয়ে কিছু একটা করছিলো।তখনি তার আম্মাজান টেবিলে থালা স্কেল টা নিয়ে উরাধুরা মারতে শুরু করলো পিঠে।
“আওওও……আম্মু…..কি করছো???লাগছে তো……”
সিয়ামের লাফালাফি দেখে রাইয়ান তো বেশ মজা পাচ্ছে।
হাঁসতে হাঁসতে ঢলে পড়ছে বারবার।
“রাইয়ানের বাচ্চা কি বলছিস তুই আম্মুকে???
ওহু আম্মু লাগছে তো…..থামো এবার……”
“কি থামবো হ্যাঁ???কি থামবো???তুই জানিস জত কষ্টে তামান্নার বাবাকে রাজি করাতে হয়েছে আমাদের।এখন যদি শোনে তুই ওনার মেয়েকে এসব বলেছিস তাহলে কি হবে???”
সিয়াম ওর মায়ের হাত থেকে স্কেল টা নিয়ে,সারা শরীরে হাত বুলিয়ে বলছে,
“আম্মু,দেখো দাগ করে ফেলেছো।আর শোনো বিয়ে না হলে না আমি আরও খুশি।ভালো হবে……”
“থাপ্পর দিয়ে না তোমার সব কটা দাঁত ভেঙে দিবো।বেয়াদপ ছেলে।আর তিন দিন পর আংটি বদল আর সাথে রেজিস্টি।মাথায় রাখবে তুমি……”
বলেই রাইয়ানকে নিয়ে সিয়ামের রোম থেকে চলে আসে।
কিছুক্ষণ পর আবার এসে নিজের এটিএম কার্ড টা নিয়ে যায়।
!
তামান্না বাসায় আসার পর সব ওর ভাবী আর মাম্মামকে খুলে বলেছে।কেঁদে কেঁটে একাকার অবস্থা।কিন্তু শ্রোতা দুজনে তো এমন হাঁসি হেঁসেছে;বলে বুঝানো যাবে না।
রাগ হয় তামান্নার খুব-মা আর ভাবীর উপর।কেউ তাঁকে বুঝছে না এটা ভেবে।
!
রাত দশ টা;
ফেসবুকে ঢু মারছে সিয়াম।
মেসেন্জারে ডুকে দেখলো তামান্না ব্লক দিয়ে রেখেছে।
প্রায় সব ই অবশ্য এমন হয়।
কারণ সিয়াম প্রায় সময় ই তামান্না ভীষণ রকম জ্বালায় আর বেচারী রেগে আর কিছু করতে না পারে মেসেন্জারে ব্লক দিয়ে দেয়।
সিয়াম কিছুটা একটা ভেবে কল করলো তামান্নাকে।
ওপাশ থেকে ফোন ধরলো তামান্নার ভাবী।
“হ্যালো……”
“ভাবী???রাইট???”
“হ্যাঁ।ভয়েসও চিনো দেখছি…..”
“ওর নারি নক্ষত্রও চিনি আমি ভাবী।তা কেমন আছো বলো??আর ঐ পেঁচী কি করে??”
“আলহামদুলিল্লাহ,তুমি নিশ্চয় ভালো আছো??”
“তোমাদের জ্বালায় আর থাকতে পারলাম কই??”
“আহা রে…..তা কি করলাম আমরা শুনি??”
“তোমার অচল ননদকে আমার গলায় বাঁধছো……”
“এই খবরবার…….তুমি জানো আমার ননদকে গলায় বাঁধার জন্য কত ছেলে লাইন ধরে আছে???আর তুমি……”
“ওয়েট ওয়েট ভাবী,সারা দিন ই তো থাকি ওর সাথে জানি না নাকি আমি??জীবনেও তো দেখলাম না কাউকে……”
“সেটা তো তোমার জন্য…..”
“মানে???”
“ওকে মানে টানে সব বাদ।ফোন কেনো করেছো সেটা বলো…..”
“কোথায় তামান্না।কাল ওকে শেষ করবো আমি।ওর জন্য আম্মু পেটায় আজ কাল আম্মু…..”
“কিহ!!!!!”
“আরে রে সত্যি বলছি…..ওকে তো দেখে নিবো আমি কালকে……”
“কেনো এতো তাড়া কিসের??বিয়ের পর দেখো সব…….হালাল করে দেখো ভাই……”
“ঐ কি সব বলো!!!!মাথা ঠিক আছে তোমার??”
“কেনো???হুমমমম??ঠিক ই তো বললাম……”
“ওহ্ মাই গড।আর ইউ ওকে??”
“ইয়াহ,জামাইবাবু আম ওকে…..আর শোনো তোমার হবু বউ ঘুমাচ্ছে।তুমি যে সব উল্টা পাল্টা বলেছো আমার ননদিনী টাকে;বিয়ের ওর বলে দেখো একবার কি হাল করি তোমার।কাঁদতে কাঁদতে বাসায় ডুকেছে বেচারী,আর যদি কখনো এমন হয় না তাহলে…..”
“পিটাবো তোমার ননদকে।যা প্যারা দেয় না সব সুদে আসলে মিটিয়ে নিবো……”
“সে না হয় পরে দেখা যাবে……এখন রাখছি…..”
“ওকে ডিয়ার…..”
“আহা রে;আগলা পিরত দেখানো লাগবে না।আমাকে ‘ডেয়ার’বলার লোক আছে…..”
“আচ্ছা!!!!!তাই নাকি??”
“কেনো কোনো সন্দেহ??”
“থাকতেই পারে…..”
“বাসায় আনাগোনা বাড়াও দেখতে পারবে,মানুষ আছে কি না নেই…….”
“আচ্ছা,দেখা যাবে…….এখন রাখছি আমি না হলে তো আবার……”
“রাখো রাখো…..আর শোনো কাল যদি আমার ননদিনী একটু কেঁদে বাসায় ফিরেছে তো তোমার একদিন আর আমার যতদিন লাগে।”
!
রোজকার মতো একটা নতুন সূর্যের আভা।কাঁচ ভেদ করে প্রবেশ করে তামান্নার খোলা কুরআনের উপর।নামায পড়ে কুরআন তেলাওয়াত না করলে দিন টাই ভালো যায় না মেয়ে টার।যত কাজ ই থাকুক,যত পড়া ই থাকুক….এমনকি পরীক্ষার দিনও রোজ সকালে ফযরের নামায পড়ে কুরআন পড়বেই সে।নুন্যতম দুই পাতা তো পড়েবেই পড়বে।এতে আত্নার শুদ্ধি হয়।আর অর্থ সহকারে পড়ে সে;যেনো বুঝতে পারে সব কিছু,নিজে জানতে পারে আর অন্য কেউ জানাতে পারে।
আজ তো বেশি পড়া নেই।আর অন্য কোনো কাজও নেই।তাই অনেকগুলো পাতাই পড়ছে সকাল থেকে।
সাড়ে সাতটায়;উঠে গিয়ে যত্ন নিয়ে কুরআন শরীফ টা স্বজায়গায় রেখে দিলো।
সবার সাথে দেখা করে,তিন বছরের ভাতিজাটাকে নিয়ে খুনসুটিতে মেতে উঠে।
সায়মান টা না অনেক কিউট।
আর ভীষণ দুষ্টু।বুড়ি বলে ডাকে তামান্নাকে। আর তামান্নাও বেশ মানিয়ে চলে ওর সাথে,আদর করে লাড্ডু বলে ডাকে।
!
“তোমাদের হয়ে গেলে,খেতে আসো…..”(সায়মানের আম্মু)
“আম্মু পলে খাবো……দেখো আম্মু বুলিল(তামান্নার)চুলগুলো কত্ত বলো…..”
“হ্যাঁ আমি দেখেছি….তুমি আসো….আর তামান্না জলদি আয়।জেঠুমনি আসে গেছে…..”
“ওফফফ….ভাবী।আট টাও তো বাজে নি ঠিক করে……”
“তামান্না কথা বাড়াবি না,দ্রুত আয়…….”(সায়মানের আব্বু;তামান্নার বড় ভাই;আপন তবে সহোদর না;তবে বুঝার কোনো উপায় নেই যে চাচাতো ভাই-বোন ওরা।রাফিন তামান্নার চেয়ে দশ বছরের বড়….তাই নিজের ছোট্ট বোনটাকে একদম ছোট বেলা থেকেই আদরে-সোহাগে-শাসনে সব দিক থেকেই ভরিয়ে রেখেছে।তামান্নার জীবনে যে কোনো সিধান্ধ-হোক সেটা বড় বা ছোট রাফিনের অনুমতি ছাড়া নেওয়ার সাহস কারও নেই স্বয়ং তামান্নার বাবারও না)
“আসছি তো………”(তামান্না)
ভাতিজাকে কোলে নিয়ে ড্রয়িং রোম থেকে;ডায়নিং রোমে আসে তামান্না।খাবারের প্রতি খুব বেশি মনোযোগ নেই মেয়েটার।তবে ফুচকা,পুরি,চটপটি,বার্গার এগুলো দাও তো সে লুটেপুটে শেষ করে ফেলবে।
একুশ বছর পাড় হতে চললো আজ পর্যন্ত কখনো সকাল বেলা নিজের হাতে পানি টা পর্যন্ত খায় নি।প্রতিদিন সকাল বেলা কখনো ওর মাম্মাম বা পাপা কখনো রাফিন কখনো রাফিনের মা মানে তামান্নার জেঠি।রোজ এক কাহিনী হবেই।একুশ টা বছরের অভ্যাস।
“বুলি,তোমাকে এখনো খাইয়ে দিতে হয়??”
“এই তোর কি রে,তোকেই তো তোর আম্মু খাইয়ে দিচ্ছে…..”
“তুমি তো বলো….আল আমি তো ছোট….”
“উহহহুুু…কে বলেছে তুই ছোট??তুই তো বুড়ো একটা…..”
“উউুু উউু উউু উউউউ…….”
“ভাইয়া,ভাইয়া দেখলে তো তোমার ছেলে কেমন ভেঙ্গাচ্ছে আমার সাথে……..”
“সায়মান,ফুপ্পি তো তোমার……”
“আব্বু….ফুপ্পি তো দুষ্টু কলে সব সময়…..”
“ওকে বাট এখন খাও…….”
সায়মান ওর মায়ের হাতে আর তামান্না ওর জেঠিমনির কাছে খাচ্ছে।সকালে কেউ না খাইয়ে না দিলে,সকালের খাওয়াটা বোধহয় কোনোদিন খাবে না তামান্না।
!
ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য আজকে গাড়ি নিয়েছে তামান্না।
আসবে না সিয়ামের সাথে,যাবেও না।
রাগ হয়েছে যে খুব।
ভার্সিটিতে গিয়ে গাড়ি থেকে নেমে সোজা ক্যান্টিনে চলে যায়।যাওয়ার আগে,
“কাকু(ড্রাইভার)তুমি চাইলে বাসায় যেতে পারো।পরে না হয় তিনটায় এসো,আমার তো তিন টা পর্যন্ত ভার্সিটিতে থাকতে হবে…..”
“মামনি,তুমি যাও।আমি যাবো এখন বাসায়,বউমনি বাইরে যাবে….আমাকে যেতে বলেছে।”
“আচ্ছা।যাও তাহলে,আসসালামু আলাইকুম….”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম…..”
!
ভার্সিটির ক্যান্টিনে কফি না খেয়ে ক্লাস করা অসম্ভব ব্যাপার তামান্নার জন্য।
খোঁজে খোঁজে ফাঁকা একটা টেবিলে এসে বসে।
কফিতে একটা চুমুক দেওয়া মাত্রই কোথা থেকে সিয়াম উড়ে এসে হাত থেকে কফিরর মগ টা নিয়ে নেয়।
রাগে ফুসে উঠে,তামান্না……
সিয়াম কোনো কিছু আমালে না নিয়ে,কফি খাচ্ছে।
তামান্না বাসা থেকে নিয়ত করে এসেছে,সিয়ামের সাথে আর কথা বলবে না।তাই করলো সে।কোনো কথা না বলে সোজা হেঁটে চলে গেলো।
আর সিয়াম কফি শেষ করেই রওনা দিলো ক্লাসের উদ্দেশ্যে।
আজকে তামান্না অন্য বান্ধবীদের সাথে বসেছে।
সিয়াম ব্যাপার টা ঠিক মানতে পারলো না।এট লিস্ট পাশে তো একটা সিট ওরর জন্য রাখতে পারতো।
কি আর করার!!!তামান্নার পেছনের সিটে গিয়ে বসে।
তামান্না একদম হাঁসছে না আজ।ফাঁকা ফাঁকা লাগছে সিয়ামের।
তামান্নার হুজাব ধরে টান দিয়ে বলল,
“ঐ হারামি,ভাব কমা…..”
“উফফফ…….”
“দেখ…..খবর আছে তোর।তোর জন্য কালকে আম্মু মেরেছে আমাকে…..তামান্নু…..”
“……..”
“তোর তো খবর আছে……”
সারা টা দিন ভার্সিটিতে থেকেও একটা কথাও বলে নি তামান্না সিয়ামের সাথে।
সিয়াম দু এক বার চেষ্ঠা করেছে বটে তারপর সেও নিজে ভাব ধরে ঘুরে বেরিয়েছে।
!
বাসায় গিয়ে সাওয়ার নিলো তামান্না।ওর ও ভালো লাগছে না।সিয়াম টা যদি আর একটু জোড়াজোড়ি করতো তাহলে রাগ টা ভেঙে ফেলতো সে।
কিন্তু!!!!উল্টো সে আরও ভাব ধরে বসেছে।
খাওয়া শেষ করে,ঘুমানোর জন্য শুয়ে পড়ে।
পনেরো-বিশ মিনিট শুয়ে থাকার পর,চোখ লেগে আসছিলো প্রায়।ওর মাম্মামের ডাকে ঘুম কেঁটে যায়।
“ওহু…মাম্মাম।সারা দিন অনেক কিছু করেছি।প্লিজ একটু ঘুমাই…..”
“আচ্ছা…রাতে ঘুমিও।এখন উঠো….দেখো কে এসেছে….”
“ওফফ….কে এলো আবার??ঘুম পাচ্ছে মাম্মাম….”
“আহা রে বাবুন একটা…….উঠো……”
“মাম্মাম………”
“চোখ মুখ ধুয়ে আসো….আমি যাচ্ছি……”
!
চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে,মাথায় উড়না টা দিয়ে ড্রয়িং রোমে চলে আসে তামান্না;কে এসেছে;সেটা দেখার জন্য।
সিড়ি থেকেই নজর যায়,ড্রয়িং রোমের সোফায়।
রিতীমতো অবাক সে………