#নতুন_তুই_আমি#
💜💜💜💜💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
পর্ব:-৪
!
সিয়ামের মা আর রাইয়ান বসে আছে।
ইশশশ কি হবে এখন???
যে দিন থেকে সিয়াম আর তামান্নার বিয়ে ঠিক হয়েছে,ঐদিন থেকে সিয়ামের আম্মু তামান্নাদের বাসায় আসা কমিয়ে দিয়েছে।ওনার কথা”ছেলের বিয়ে দিতে ছারা হাত-পা হয়ে আসবেন ঘন ঘন….”
তাহলে আজকে হঠাৎ কেনো এলো??
এসব ভেবে বিব্রত তামান্না।
“কি রে,দাঁড়িয়ে থাকবি না কি??আয় নিঁচে নাম।কখন থেকে এসেছি…..”
সিয়ামের মায়ের কথায় ভাবনা থেকে ফিরে আসে তামান্না।
তামান্না এসে রাইয়ানের পাশে বসে।
সিয়ামের আম্মু আর তামান্নার মাম্মাম গল্প করছে।রাইয়ান তামান্নাকে টেনে উপড়ে নিয়ে যায়।
“আপু,চুলগুলো দেখাও না একটু……”
“কিহ???”
“হ্যাঁ….আমি তো আর ছেলে না তাই না।প্লিজ দেখাও।তুমি তো বলেছিলে কোনো পরপুরুষকে তোমার চুল দেখাবে না,শুধু তোমার বরকে দেখাবে।বাট আমি তো মেয়ে…..”
“রাইয়ান!!!!তুই দেখিস নি আমার চুল??”
“দেখেছি,আজ আবার ইচ্ছে করছে।প্লিজ আপু….প্লিজজজজজজজ”
“আচ্ছা।আচ্ছা।দেখাচ্ছি……”
মাথার ওড়না সরিয়ে,বিশাল আকারের একটা হাত খোপা টান দিয়ে খুলে দিলো।আর সাথে সাথে তরঙ্গে রূপান্তিত হয়ে হাঁটুর দু আঙ্গুল উপড় পর্যন্ত একরাশ ঘন,কালো,কমল চুল ছড়িয়ে পড়লো।
রাইয়ান হা করে তাঁকিয়ে আছে।পাঁচ ছয় মাস আগেও সে তামান্নার চুল দেখেছিলো।
আর এখন সেটা আরও সুন্দর লাগছে ওর কাছে।
লাগবেই না কেনো??
এতো লম্বা-ঘন-কালো-সুন্দর কেশ কার না ভালো লাগে।
“হয়েছে,আর হা করে তাঁকিয়ে থাকতে হবে না…..”
“আপুুুুপুুপুপু…..”
“পাঁজি একটা….”
“আপু আসো না একটা সেলভি তুলি…..”
“খবরদার না……”
“কেনো???”
চুলে খোঁপা করতে করতে তামান্না জবাব দেয়,
“তুই জানিস ই তো।আমি সেলভি লাইক করি না।আর তারউপর আমি এটাও জানি তুই কেনো পিক নিতে চাচ্ছিস আমার…..”
“ঔফফফ…….”
“হ্যাঁ…..দেখায় নি যখন।তো দেখাবোও না।দু দিন পর ই তো রেজিস্ট্রি হচ্ছে।তখন না হয় তুলিস…..”
“আপু…..ভাইয়া তো বলে নি….আমিই….”
“আমি জানি তো।সিয়াম হারামী বলবেও না।ও কি ভাবে নাকি কখনো আমি একটা মেয়ে???”
“আপুুুুপুপু…..তার মানে তুমি ভাইয়াকে ছেলে ভাবো,তাই না??”
“এটা আবার কেমন প্রশ্ন???ছেলেকে ছেলে না তো কি ভাববো??মেয়ে??”
“আপুওওও…..সেটা না সেটা না।তার মানে তুমি ভাইয়াকে স্বামী……”
“এই চুপ কর তো….বেশি পেঁকে গেছিস…….”
“উফফফ…আপু আর মাত্র দু দিন পর তোমরা…..”
“রাইয়ান!!!!!”
“আচ্ছা বাবা সরি….আমি বুঝি না তোমাদের দুজনের যে কি হয় বিয়ের কথা শোনলে……হুমমম।।।।আমাকে যদি এখন বিয়ের কথা বলা হয় তো আমি এখনি করে নিবো….”
“কিহহহহ!!!!!??????”
“হ্যাঁ……..”
“থাপ্পর চিনিস???পাকনী কোথাকার।মাত্র সতেরো আর ওনি নাকি……”
“ওহহহ আপু…প্লিজ রেডি হয়ে নাও……”
“মানে???”
“হ্যাঁ….বাইরে যাবো আমরা।”
“বাইরে আবার কোথায়???”
“কোনো প্রশ্ন না করে;তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও…..”
রোমে আসার সময় বলছে সিয়ামের আম্মু।
“আন্টি!!!!কোথায় যাবো এখন??”
“বললাম না রেডি হয়ে নাও……কোনো প্রশ্ন হবে না….”
তামান্না খুব ভালো একটা মেয়ে।বড়দের সাথে আজ পর্যন্ত জোরে কথা পর্যন্ত বলে নি।হোক সে নিজের মা বা পাশের বাসার আন্টি।সবার সাথে খুব মার্জিত ব্যবহার করে।
!
একটা হলুদ-সাদা থ্রি-পিস পড়েছে তামান্না।তামান্নার থ্রি-পিস গুলো সব সাধারণ ভাবে বানায় সে।টাইট ফিট জামা পড়ে না কখনো সে;আর সালোয়ারও সব সময় সাধারণ পড়ে।না প্লাজো-না চুরি…সব সাধারণ পড়ে।এতেই রূপ উঁপচে পড়ে।
আজও তাই হয়েছে।বেশ লাগছে।এমন সুন্দর একটা থ্রি-পিসের সাথে কালো রঙের একটা হিজাব সুন্দর করে লাগিয়ে নিয়েছে আর এজন্য যেনো সৌন্দর্য টা আরও বেড়ে গেছে।
!
সিয়ামের আম্মু তো তামান্নাকে এইভাবে দেখে মহা খুশি।
এমন ছেলের বউ কেউ না চায়!!!!
“চলো….”
“দাঁড়া আগে দেখি আমার পুত্রবধুকে…..”
লজ্জা পেয়ে যায় তামান্না।
সোফায় যে ওর বাবা,ভাইয়া বসা ওরাও মিটিমিটি হাঁসছে।
তাতে যে আরও বেশি লজ্জা লাগছে।
“আহা রে,আন্টি তুমি কেনো এতো লজ্জা দিচ্ছো আমার ননদ টাকে…..যাও না কোথায় নিয়ে যাবে…..”
“হ্যাঁ রে বাবা যাচ্ছি।আর শোন মিষ্টি টা খুব ভালো ছিলো।আমার বউ মাকে একটু শিখিয়ে দিস তো।আর কিছু না হোক এই মিষ্টি টা বানাতে বললো ওকে…..”
তামান্না এতক্ষণ নিঁচের দিকে তাঁকিয়ে ছিলো লজ্জায়।
সিয়ামের আম্মুর মুখে মিষ্টির কথা শোনে,উপড়ের দিকে তাঁকায়।অতন্ত্য সাবলীল ভঙ্গি বলল,
“আন্টি তোমার তো ডায়াবেটিস…….”
“আরে তুই একটা দুটো মিষ্টি বানিয়ে দিলে কিচ্ছু হবে না…..”
“আরে আন্টি কোনো চিন্তা করো না।তোমার বউ মায়ের কাছেই শিখেছিলাম এই মিষ্টি টা…..সো নো টেনশন…..”
“ওরে ব্বাস….তাই নাকি??”
“না না আমি তো ইউ টিউব থেকে……”
“সে যাই হোক।তুই যে পারিস এটাই আসল কথা…….”
“চলো খালামনি….লেট হচ্ছে তো……”
!
“আন্ট,শপিং মল??”
“হ্যাঁ….তোর কোনো সমস্যা??”
“না বাট আমি কিন্তু কিছু কিনবো না……”
“আহা রে,বললেই হলো….আপনার জন্যই আসা আমাদের……..”
“হ্যাঁ….আপু…..হাঁটো তাড়াতাড়ি,শাড়ির স্টল টা কেনো যে কর্ণারে….কে জানে…..”
“বাট,আন্টি…..আমি যদি শাড়ি কিনি তাহলে তোমার ছেলে আবার বলবে যে ওর আম্মুর টাকায় কিনেছি…..পরে যদি শাড়ি ফেরত দিতে বলে???
আমার তো তখন মন খারাপ হবে…..আমি তো শাড়ি পড়ি নি বড় হওয়ার পর আর তাই মায়া পড়ে যাবে তো শাড়িটার উপর….”
“বোকা মেয়ে,দেখিস কিচ্ছু বলবে না।ও তো শাড়ি পড়া অবস্থায় তোকে কখনো দেখে নি।আমরাও দেখি নি।তবে আমার বিলিভ আছে,তোকে শাড়ি পড়লে হুরপরি লাগবে….আর আমার ছেলেও নজরে নিবে তোকে……..”
“না আন্টি মোটেই না।তোমার ছেলে কেমন জানি……”
“বাব্বা….এতো।এখনি তোমার ছেলে,তোমার ছেলে করছিস…..হা হা হা হা হা…..”
“মোটেই না আন্টি….তুমি না…..”
“খালামনি,এই স্টল টাই…..এখানেই আপু শাড়ি চুস করেছিলো কাল…..বাট ভাইয়ার জন্য কিনতে পারে নি……”
!
সিয়ামের আম্মু তামান্নাকে গতকাল তামান্নার রেখে যাওয়া সব কটা শাড়ি কিনে দিয়েছে।
আর এনগেজমেন্টের দিন পড়ানোর জন্য পিংক কালারের একটা গর্জিয়াস শাড়ি কিনে দিয়েছে।
শাড়ি টা তামান্নার কাঁধে রাখতেই তামান্নার ভেতরে কেমন যেনো লাগছে।
ওর আংটি পড়ানোর মুহুর্ত টা ভাবতেই গা শিউরে উঠছে।
যা কে কোনো দিন ভাবেই নি,সে নাকি ওকে হাতে ধরে আঙ্গুলে রিং পড়াবে।
আর সিয়ামের আম্মু তো তামান্নার রূপ দেখে আরও মুগ্ধ হয়ে আছেন।শাড়ি টা বেশ মানবে তামান্নাকে,বুঝে গেছেন ওনি……..।
আরও অনেক রকম জিনিস কিনে দিয়েছেন ওনি তামান্নাকে।
তামান্না বার বার বারণ করলেও শুনে নি সিয়ামের আম্মু।
রাইয়ানের জন্যও অনেক শপিং করা হয়েছে।
রাইয়ান তো মহা খুশি…….
ওর প্রিয় আপু আর দু দিন পর ওর ভাইয়ের বউ হবে,এর চেয়ে ভালো খবর আর কি হতে পারে!!!!
!
সন্ধ্যার দিকে,তামান্নাকে বাসার সামনে ড্রপ করে যায় সিয়ামের আম্মু।
“আন্টি,চলো না ভেতরে….”
“না মা,তুই যা…এখন বাসায় ডুকলে লেটট হয়ে যাবে মা….তোর খালামনিরা(রাইয়ানের বাবা-মা)এসে গেছে বাসায়…ওয়েট করছে আমার জন্য অনেকক্ষণ হলো যে…..”
“আচ্ছা,ঠিক আছে……ভালোভবে যেও….”
“হ্যাঁ…তুই সাবধানে উপরে বাড়ির ভেতরে যা……”
তামান্না ভারী ভরী সাত-আট টা ব্যাগ হাতে বাসার ভেতরে ডুকে…….ট্রায়াড হয়ে গেছে শপিং করতে করতে………..
বাসার সবাই ড্রয়িং রোমে বসে আছে…….তামান্নাকে দেখা মাত্রই সবাই হাঁসাহাঁসি শুরু করেছে……….
“আহা রে,বোনটার মুখ শুকিয়ে গেছে…..অনু যাও যাও আমার বোনের জন্য এক গ্লাস শরবত করে আনো…..বেচারী শপিং করতে করতে ক্লান্ত….”
“ভাইয়া!!!!!!!”
“রাফিন,আমার মামনি তো আসলেই ক্লান্ত তুই এমন করছিস কেনো…….”
তামান্বার জেঠি মনি তামান্নার হাত থেকে ব্যাগ গুলো নিয়ে বললেন কথাটা।
তামান্নার মাথায় হাত রেখে বললো,
“আমরা দেখি তোমার শাশুড়ি মা কি কি শপিং করে দিলেন তোমাকে….তুমি যাও চেন্জ করে ফ্রেস হয়ে নাও……”
“হুম….ওকে……ভাবী,সায়মান কোথায়??”
“ও ঘুমিয়ে গেছে….”
“এতো আগে??”
“হ্যাঁ…..তুই যা আগে ফ্রেস হয়ে নে……”
!
সবাই বেশ খুশি,তামান্নার শপিং দেখে।বেস্ট বেস্ট জিনিসগুলো ই তামান্নার জন্য কিনেছে সিয়ামের আম্মু।
পচ্ছন্দ না হওয়ার কোনো উপায় নেই।
“আমার মনে কি হয়য় জানো,তামান্নার বাবা…..”
“হ্যাঁ….ভাবী…কি মনে হয় তোমার??”
“আমাদের তামান্না টা ঐ বাড়িতে ভালোই সুখে থাকবে…..অন্য জায়গায় বিয়ে দিলে ভয় থাকতো একটা আমাদের….বর কেমন হবে বা বরের পরিবারের সদস্য রা কেমন হবে??এসব ভেবে…কিন্তু এখানে তো সব মাশাল্লাহ্……”
“দোয়া করো ভাবী,আমার মেয়ে যেনো সারা জীবন হাঁসি মুখে থাকে…..”
“শুধু তোর মেয়ে নাকি???ও তো আমারও মেয়ে……..”
“আসলেই,আমার চেয়ে আমার মেয়ে তুমি ই মায়ের আদর টা বেশি করছো ভাবী……”
“হয়েছে,আর কথা না বাড়িয়ে যা উপরে যা,মেয়ের কাছে যা….আমি শরবত নিয় আসছি ওর জন্য……”
“আচ্ছা,যাচ্ছি….আসো তুমি……”
!
তামান্নার মা গিয়ে দেখে,তামান্না শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে একদম।
“কি রে মাম্মাম,সাওয়ার নিলি সন্ধ্যায়??”
“মাম্মাম,গরম লাগছিলো খুব….. ”
“ভালো করেছিস……আচ্ছা,কেমন লেগেছে আজ??”
“কেমন লাগছে,মানে??”
“মানে কেমন লাগলো শপিল করতে তোর হবু শাশুড়ির সাথে??”
শরবত হাতে রোমে আসতে আসতে বললো রাফিনের মা।
“জেঠি মনি!!!!”
“আহা রে মা আমার…লজ্জা পায় না…..আমরা জানি তোমার খারাপ লাগে নি…..”
“আসলেই শপিংগুলো খুব ভালো হয়েছে……”
“মাম্মাম!!!তোমরা না……”
“আচ্ছা….শোনো….চুলগুলো শুকাক আজ…তেল দিয়ে দিবো….তারপর কাল শেম্পু করে নিবে…..”
“জেঠি মনি,আমি গতকাল শেম্পু করলাম তো….”
“তো কি আসে যায়….আগামী কাল আবার করবে…..তার আগে এখন এই শরবত টা খেয়ে নাও বাধ্য মেয়ের মতো….”
তামান্না হাতের টাওয়েল টা চেয়ারে রেখে ওর জেঠিমনি আর মায়ের পাশে বসে বললো,
“তারমানে তোমরা কি বলতে চাইছো;আমি বাধ্য নই??”
“কে বলেছে শুনি??আমাদের মেয়ের মতো এতো ভালো মেয়ে কয়টা আছে শুনি…..হুম…”
মা,জেঠি দুজনেই মেয়েকে মাথায় হাত দিয়ে আদর করে দিলো।
শরবত টা খাওয়ার পর।তামান্না ওর জেঠির কোলে শুয়ে পড়ে।
মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ওর জেঠি।চোখ লেগে আসছে তামান্নার……