#নতুন_তুই_আমি#
💜💜💜💜💜💜💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
!
পর্ব:- ৪৬………………………….
তামান্না সর্বশক্তি দিয়ে রোদকে আটকানোর চেষ্ঠা করছে।
রোদ যেন পুরো পাগলা কুকুরের মতো ব্যবহার করছে।তামান্না কখনো ভাবেনি রোদ এতটা খারাপ মনের মানুষ।
তামান্নার শরীরের গন্ধ নিচ্ছে রোদ।আর এমন ভাবে নিচ্ছে যেন তামান্না কোনো সুগন্ধি খাবার।ঘৃণা লাগছে তামান্নার।
রোদ তামান্নার মুখের কাছে মুখ আনলো।ভয়ে তামান্না চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো।কিন্তু পরমুহুর্তেই তার মনে হলো-এখানে তার নিজেই নিজকে রক্ষা করতে হবে।
কেউ আসতে পারবে না তাকে বাঁচাতে।তাই হার মানলে চলবে না।শেষ পর্যন্ত চেষ্ঠা চালিয়ে যেতে হবে।তামান্না চোখ খুললো।কোনো ভাবে হাত দিয়ে রোদের গালে একটা আচড় কেটে দেয়।তামান্না নখ বড় করে না।তাই আচড় টা সেরকম ভাবে লাগে নি।রোদ হাসছে তামান্নাকে দেখে।তামান্নার দু চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।
রোদ বললো,
“আচ্ছা যখন সেক্স করো তখন কি সিয়ামকে এভাবেই খামচি দাও??সিয়ামের কিন্তুতু বেশ লাগে তাহলে??”
তামান্নার কাছে পুরো পৃথিবীটা অন্ধকার লাগছে।কোনো মানুষ একটা মানুষকে এভাবে বলতে পারে তার জানে ছিলো না!
“কি হলো বলো??মজা তো পায় নাকি??”
“রোদ!!!ছাড়ো আমায়।কি করছো তুমি!!ছাড়ো বলছি….”
রোদ তামান্নার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।তামান্নার মনে হচ্ছে এতোদিনের সমস্ত সম্মান আজ শেষ হয়ে যাচ্ছে ওর।যে ঠোঁটে সিয়াম তার ভালোবাসার পরশ দেয় সেখানে অন্য কেউ লোভের নেশা ফলাচ্ছে।তামান্না হোশহীন হয়ে যাচ্ছে আজ সকালেও তো সিয়াম তাঁকে কত সুন্দর করে আদর করলো।ভার্সিটিতে ডুকার সময় গাড়িতেও আলতো করে কিস করেছিলো ঠোঁটে।তাহলে এখন কেনো এমন হচ্ছে!ও তো কোনো পাপ করে নি???
তামান্না ভাবতে ভাবতেই রোদ তামান্নার হিজাব টা টান দিয়ে খুলে ফেললো।আর তার সাথে সাথেই তামান্নার হাত দুটোও রোদের হাত থেকে মুক্তি পেলো।এই সুযোগটাই ব্যবহার করলো তামান্না।রোদকে ধাক্কা দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।তবে দু পা এর বেশি ফেলতে পারলো না সে।রোদ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
“আল্লাহর দোহায় লাগে রোদ।আমাকে ছাড়ো….”
“ঐ….কেনো??সিয়াম যখন তোকে সবার সামনে লিপ কিস দেখায়।তখন তো তোর আল্লাহর দোহায় দিস না।প্রতি রাতে যখন ওর সাথে এক বিছানায় যাস তখন??”
“ও আমার স্বামী।হারামী মানুষ এতোটা কি করে হয়।তোর মতো জানোয়ার না দেখলে বুঝতে পারতাম না আমি।”
“আচ্ছা!!তাই বুঝি???তাহলে আজ দেখবি আমি কতটা জানোয়ার।”
বলেই রোদ তামান্নার ওড়না খোলার চেষ্ঠা করে।পিন লাগানো থাকায় একটানে খুলতে পারে নি।
হঠাৎ তামান্নার চোখ পড়লো সামনের দিকে সল্ফের দিকে।অনেক রকমের এসিড ওর সামনে।তামান্না আর কিছু ভাবলো না।নিজেকে বাঁচানোর জন্য ওকে এই কাজটা করতেই হবে।আর এদিকে রোদ তামান্নার ওড়না খোলায় ব্যস্ত।তামান্না আর এক মুহুর্তও দেরী করলো না।হাইড্রোক্লোরিক এসিডের রাখা টেস্টটিউব হাতে নিয়ে ছুড়ে মারলো রোদের শরীরে।
সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে উঠলো রোদ।তামান্না তাঁকালো না আর রোদের দিকে।ওড়না টা রোদের হাত থেকে নেওয়ার জন্যও না।শুধু মাত্র নিজের প্রাণ টা নিয়ে দরজা খোলে বেরিয়ে গেলো।রোদ কমশ্র চিৎকার করছে।আর তামান্না করিডোর বয়ে দৌড়ে বাইরে যাওয়ার চেষ্ঠা করছে।
আকাশ,রিধী,সামিয়া ওরা এদিকে আসছিলো।তামান্নাকে এভাবে দেখে ওরাও ঘাবড়ে যায়।রিধী তামান্নাকে আটকালো।
“দোস্ত কি হয়েছে??”
তামান্না কাঁপছে কাঁদছে।ওড়না নেই ওর তবে হিজাব টা আসার সময় টান দিয়ে নিয়ে এসেছিলো।
আকাশ ভর্য়াত গলায় বললো,
“তামান্না!!কি হয়েছে বল আমাদের??এমন অবস্থা কেনো তোর?”
তামান্না উত্তর দিতে পারলো না।তবে ওর গালে নখের আচড় দেখে তার বন্ধুরা আন্দাজ করতে পারলো তামান্নার সাথে খারাপ কিছু হতে যাচ্ছিলো।
আকাশের হঠাৎ মাথায় আসে রোদের কথা!রোদ যে কতটা খারাপ তারা সবাই জানে।এজন্যই সিয়ামকে বার বার বারণ করেছিলো যেনো ওদের বিয়েতে তাকে না ডাকা হয়।কিন্তু সিয়াম কথা শোনে নি।জেদ করে বিয়ে থেকে বৌ-ভাত সব জায়গায় রোদকে ইনভাইট করেছে।
আকাশ তামান্নার দু কাঁধ ঝাকিয়ে বললো,
“ঐ??কে করছে তোর সাথে এইসব??হ্যাঁ…বল???”
তামান্না হাতের ইশারায় ল্যাবের দিকে দেখালো।
ওদের সবার মাথায় আসলো যে রোদ তামান্নার গ্রুপে ছিলো।দূরে থাকায় রোদের চিৎকার ওদের কানে আসছে না।তবে তামান্নাকে এভাবে কার কেউ যেনো না দেখে সেজন্য ওরা তাকে নিয়ে একটা রোমে ডুকে যায়।
তামান্না হাউমাউ করে কাঁদছে।
আকাশ সিয়ামকে কল করে।
“হ্যা,বল…”
“হারামি কই তুই?.”
“এই তো ল্যাব থেকে বের হলাম……..”
“জলদি তামান্নার ল্যাবের দিকে আয়।আর শোন কাউকে সাথে নিয়ে আসিস না আবার…..”
“মানে??”
“আরে শালা। মানে রাখ…জলদি আয়….”
“ওয়েট ওয়েট আসছি।তামান্নার কিছু হয় নি তো??তোর আওয়াজ টাও ভালো শোনাচ্ছে না….”
“আরে আয় না আগে রে বাপ….”
সিয়াম কল না কেঁটেই দৌঁড়ে তামান্নার ল্যাবের দিকে আসে।
আকাশ তামান্না যে রোমে তার সামনে দাঁড়িয়ে।
সিয়াম আকাশকে দেখে বললো,
“কি রে??কি প্রবলেম?”
কিন্তু চোখ পড়লো ভেতরে।তামান্নাকে রিধীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।সিয়াম আকাশের উত্তরের অপেক্ষা করলো না।
ভেতরে গেলো।
তামান্নাকে এভাবে কাঁদতে কখনো দেখে নি ও।
ভেতরে একটা ঝড় বয়ে যাচ্ছে সিয়ামের।তামান্নাকে টান দিকে নিজের দিকে ফিরালো ও।
“কি হয়ে….”
পুরো প্রশ্ন করার আগেই ওর গালে নখের আচড় দেখে সিয়ামের মাথাটা বিঘড়ে গেলো।এটা যে কোনো স্বাভাবিক ঘটনা না সিয়াম বুঝতে পারলো।পুরুষের নাকি দু সময়ে রক্ত সবচেয়ে বেশী পাগলমী করে।যৌনক্রিয়ার সময় আর খুন করার সময়।
একটা ভালোবাসার আর একটা ধ্বংসের।সিয়ামের মাথায় এই মুহুর্তে খুন চেপেছে।
তামান্না সিয়ামের বুকে মাথা রেখে কাঁদছে।
সিয়াম মাথা ঠান্ডা করলো।জড়িয়ে ধরলো তামান্নাকে।
“ঐ,,চুপ।কাঁদবি না।চুপ।চুপ।”
“আমি…..”
কান্নার জন্য কথাও বলতে পারছে না তামান্না।
“বল।কি করে হলো??”
তামান্না এতটাই ঘাবড়ে গিয়েছলো যে শুধু বললো
“ল্যাবে….”
আর কিছু ওর মুখ দিয়ে আসলো না।সিয়ামের বুকেই সেন্সলেস হয়ে গেলো সে।
“তামান্না!!!”
“ও…মাই গড।ও তো সেন্স হারিয়ে ফেলেছে।”
“তামান্নু,এই তামান্নু,চোখ খোল না…..পানি দে না কেউ তোরা।”
সিয়াম তামান্নাকে বেঞ্চের উপর শুইয়ে দিলো।
চোখে মুখে পানি দিচ্ছে।
আকাশ বললো,
“সিয়াম আমার মনে হচ্ছে এটা রোদের কাজ।”
সিয়াম কিছু বললো না।তবে ওর চিবুক কাঁপছে।নালিগুলো ফুলে উঠছে।
রিধী বললো,
“আমার মনে হয় তেমন কিছু করতে পারে নি।তামান্না তার আগেই ছুটে এসেছে।”
সামিয়া বললো,
“আমরা কিন্তু শুধু তামান্নাকেই এদিকে দেখেছি।তাহলে রোদ গেলো কোথায়??”
“আমি একটা ল্যাব থেকে আসছি।রোদ কি আবার ঐ পাশ থেকে চলে গেলো নাকি??বা ল্যাবে আর কেউ আছে নাকি??”
!
ল্যাবে গিয়ে আকাশ স্তব্ধ হয়ে যায়।রোদ সেন্সলেস অবস্থায় পড়ে আছে।এটা কি করে সম্ভব।তবে ওর বুকের দিকে তাকাতেই দেখলো গলা আর বুকের উপরের অনেকটা অংশ পুরে গেছে।এসিড পুরা।সেটা ভালোভাবেই বুঝা যাচ্ছে।আর তামান্নার ওড়নাটাও ওর হাতে।তামান্নার ব্যাগও মেঝেতে পড়ে আছে।
তার মানে তামান্না নিজেকে বাঁচানোর জন্য রোদকে এসিড ছুড়ে দিয়েছে।
আকাশ দ্রুত বের হয়ে আসে।আসার আগে ওর ব্যাগ থেকে একটা তালা বের করে ল্যাবে দিয়ে আসে।দ্রুত সিয়ামের কাছে এসে বললো,
“রিধী,সাইমা তোরা এখন তামান্না কে ওর বাসায় চলে যাবি।সিয়ামের বাসায় না।ওদের বাসায়।আর ওকে ডাক্তার দেখাতে হবে।ও ভয়ে এতটাই ঘাবড়ে গেছে।আর সিয়াম আমার সাথে চল।”
“ওয়াট??তামান্নাকে রেখে?আমি নিয়ে যাচ্ছি তামান্নাকে…..”
“আরে তামান্নার চেয়ে দরকারী কাজ আছে।চল….”
“কি বলছিস তুই??”
আকাশ উত্তেজিত হয়ে বলে ফেললো,
“যা বলছি।ঠিক বলছি।তামান্না রোদকে এসিড মেরে দিয়েছে।”
উপস্থিত সবাই চমকে গেলো।
“ওয়াট!!!”
“হ্যাঁ।আমি ল্যাবে তালা দিয়ে এসেছি।পাঁচটা বাজতে চললো।মামা তালা দিতে এসে যদি এসব দেখে কেলেঙ্কারী হয়ে যাবে।চল….”
সিয়াম বললো,
“কিচ্ছু হবে না।কেউ আসবে না।রোদের কি অবস্থা??”
“মুখে লাগে নি এসিড।তবে বুকে আর গলা ঝলসে গেছে।সেন্স নেই।”
“ও ল্যাবে ওভাবেই ওখানে পড়ে থাকবে।আমি আগে তামান্নাকে বাসায় নিয়ে যাবো তারপর সব দেখবো।”
সাইয়া আতঙ্কিত হয়ে বললো,
“দোস্ত কেউ যদি রোদকে ওভাবে দেখে ফেলে তাহলে তো….”
“তামান্না বিপদে পড়বে তাই তো??ভুলে যাস না তামান্না আমার ওয়াইফ।কি করতে হবে আমি ভেবে চিন্তেই করবো।”
সিয়াম তামান্নাকে কোলে তুলে নিলো।
“আকাশ,ল্যাবে তালা আছে তো??”
“হ্যাঁ।আমি দিয়ে আসছি।”
“ওকে যথেষ্ঠ।চল…..”
“কিন্তু…”
“কেউ আসবে না এদিকে।আমি ব্যবস্থা করছি।”
☺☺☺☺☺☺☺☺☺☺☺☺☺☺