নতুন তুই আমি পর্ব-৫৯

0
1658

#নতুন_তুই_আমি#
💜💜💜💜💜💜💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
!
পর্ব:-৫৯……………………………………..
!
খাওয়া শেষ করে যে যার ঘরে।আমরা বাঙালীরা দুপুরে খাবার টা যে পরিমাণ খাই সকাল বা রাতে সে পরিমাণ খাদ্য খেলে আর কিছুতে প্রথম না হলেও পেটমোটা মানুষের সংখ্যায় বিশ্বের সব জাতির চেয়ে এগিয়ে থাকতাম।
এ বাড়িতেও ঠিক তাই।তামান্না বাদে বাকি সব পেটপুড়ে খায়।রাইয়ান তুলানামূলক কম তবে তামান্নার মতো এতটা কম না।আর দুপুরে খেয়ে ঠান্ডা হাওয়ায় ডান মুখী হয়ে বিছানায় গা মিলিয়ে দিতে কার না ভালো না!
সিয়াম সেভাবেই শুয়ে আছে।তবে তার চার হাত-পা চার দিকে।তামান্না রোমে এসে সিয়ামের হাত টা সরিয়ে সোজা করে রাখলো।তারপর সে হাতো মাথা রেখে সেও শুয়ে পড়লো।
সিয়াম তার বাকী তিন হাত পা এবার তামান্নার উপর দিয়ে শান্তিতে চোখ বন্ধ করলো।
তামান্না কিছু বললো না।না সিয়ামের হাত-পা সরিয়ে দিলো।শুধু মুঁচকি হেসে সেও চোখ বন্ধ করলো।
বেশ কিছুক্ষণ দুজনেই সেভাবেই শুয়ে ছিলো।প্রথমে তামান্না কথা বললো, “ঘুমিয়ে গেছো?”
সিয়াম চোখ বন্ধ রেখেই তামান্নার গলায় গাল ঘষে জবাব, “উমহু”
“এক্সামের প্রিপারেশনের কি অবস্থা??আমাদের দুজনের পড়ালেখা তো ডাব্বায় যাচ্ছে।”
সিয়াম হাসলো।তামান্নার কথার জবাব না দিয়ে উল্টো তার গালে আলতো করে কামড় বসিয়ে দিলো।
তামান্না অস্ফুস্ট স্বরে আওয়াজ করলো, “আওও….”
সিয়াম তামান্নার আওয়াজ পেয়ে হাসলো।
কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল, “আস্তে চিৎকার করো।বাইরে গেলে তো নিজেই লজ্জা পাবে।এই ভরদুপুর বেলায় তো আর আমি তো কিছু করছি না।”
তামান্না সিয়ামের বুকে কনুই মেরে বললো, ” যাহ্।অসভ্য কোথাকার।”
“হুম।অসভ্য।” বলেই সিয়াম তামান্নার কানের লতিতে আরও জোরে একটা কামড় দিলো।
তামান্না চিৎকার করার সুযোগ পায় নি তার আগেই সিয়াম তামান্নার ঠোঁট দুটোতে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দিলো।
তামান্না তাল না মিলিয়ে বেশিক্ষণ থাকে নি।সে ও আকড়ে ধরলো সিয়ামকে।
দু জোড়া ঠোঁট আলাদা হলে সিয়াম তাকালো তামান্নার দিকে।হালকা গোলাপী ঠোঁট দুটো টকটক লাল হয়ে গেছে মুহুর্তেই।
শুধু যে ঠোঁট তা নয় লজ্জায় লাল দুটোও বর্ণপরিবর্তন করে ফেলেছে।
সিয়াম তামান্নার ঠোঁটে আলতো করে একটা চুমু দিলো।তারপর বলল, “নো পরীক্ষা!হুম??আর নো প্রিপারেশন।অনলি আমার সাথে রোমান্স।ওকে?”
তামান্না তাকালো সিয়ামের দিকে।চোখ চোখ রেখে আস্তে করে বললো, “তাহলে তো ক্যারিয়ার শেষ??”
“ক্যারিয়ার করে বউয়ের জন্য।আমি উইথ আউট ক্যারিয়ার যে এতো সুন্দরী একটা বই পেয়েছি….”
“ইশশ্…..”
“হুশশশ।এখন আমি তোর একটা পরীক্ষা নিবো।দিবি??”
“পরীক্ষা??”
“হুম।”
“কিসের??”
“তোর সাহসের।”
“মানে.?তোমার কি মনে হয় আমার সাহস নেই।”
“থাকলে পরীক্ষা টা নিতে চাইতাম না।”
“কেয়েশ্চেন করো।উত্তর দিচ্ছি।”
“কাজ করে উত্তর দিতে হবে।”
“বলো।”
“আলমারিতে দেখে একটা প্যাকেট আছে নিয়ে আয়।”
তামান্না ঝট করে উঠে বসলো।
আলমারি খুলে একটা নতুন প্যাকেট দেখতে পেলো।যেটূ একটু আগেও ছিলো না।
সিয়ামের কথায় অগত্যা সেটা খুললো তামান্না।
প্যাকেট টা খোলে রীতিমতো অবাক সে।এগুলো কি!!!
এগুলো এখানে এইভাবে প্যাকেটে করে রাখার কি মানে হয়!
হঠাৎ-ই তামান্নার চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো।
সিয়াম উঠে বসলো।তামান্নার হাতে হাত রেখে বললো, “আমি চাই তুই এগুলো নিজের হাতে পুড়িয়ে দে।”
তামান্না তার হাতে রাখা প্যাকেটে ছবিগুলো দিকে তাকালো।যে কোনো স্ত্রীর পক্ষে তার নিজের স্বামীর এমন সব ছবি চোখে দেখা যে কতটা কষ্টের সেটা তামান্না বুঝতে পারছে।যে সত্য টাকে মাটি চাপা দিয়ে তামান্না সিয়ামের সাথে ঘর করছে সিয়াম কেনো সেটা সামনে আনতে গেলো??
তামান্না তো আনতে বলে নি??
আর সবটা জেনেও তো সিয়ামকে কোনো প্রশ্ন করে নি!
সিয়াম তামান্নার চোখ টা মুছলো।
তারপর নির্ধায় বললো, “অণুপমার সাথে কাটানো এই মুহুর্তের ছবি গুলোই একমাত্র রয়ে গিয়েছিলো।আমি জানি এগুলো তোর সামনে এভাবে আমার উচিত হয় নি।তবুও কি করবো বল-আমি চাই তুই নিজের হাতে আমার পুরানো সব খারাপ পুড়িয়ে দে।”
তামান্না সিয়ামের দিকে তাকালো।চোখ দুটো পানিতে টলমল করছে।
তামান্না প্রশ্ন করলো, “অণুপমা এখন কোথায়??”
সিয়াম একটা দীর্ঘশ্বাবাস নিলো, “ব্রেকাপের পর আমেরিকা চলে গিয়েছিলো।তারপর জানি না??”
“এখনও মনে পড়ে??”
সিয়াম তামান্নার গাল বেয়ে পড়া চোখের জল টুকু মুছে দিয়ে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো তাকে।উত্তর দিলো, “মানুষের মন থেকে ছোট্ট বেলার পালিত বিড়াল টাকেও মুছে ফেলে যায় না।আর কোনো জলজ্যান্ত মানুষ।যার সাথে আবার প্রণয় ছিলো।প্রশ্নটা যদি এমন হয়-ভালোবাসি কি না!তাহলে উত্তর দিতে পারি।”
“উত্তর টা শুনতে চাই না।জানা প্রশ্নের উত্তর কারও কাছে শুনতে ভালো লাগে না।”
সিয়াম তামান্নার কপালে একটা চুমু দিলো।চোখ দুটো বন্ধ করে মাথায় আরও একটা ভালোবাসার পরশ একে প্রশ্ন করলো, “কষ্ট হচ্ছে?”
“হঠাৎ করে মনে হচ্ছিলো-শ্বাস টা কোথাও আটকে গিয়েছিলো।”
“আর কেউ না জানুক তুই তো জানতি আমার অতীত টা।যদিও অণুপমার সাথে সম্পর্ক টা কিছু মাসের ছিলো তারপরও অনেকটা অনুভূতি দখল করে নিয়েছিলো।তারউপর প্রথম।”
“প্রথম কিন্তু শেষ তো নয়।আমি তোর প্রথম অনুভূতি হতে চাই না।শেষ অনুভূতি টা যেনো আমার জন্যই হয়।”
সিয়াম অবাক হয়ে তামান্নার দিকে তাকিয়ে রইলো।
সিয়াম কিছু বলার আগেই তামান্না বললো, “প্রথম হয়ে কি লাভ যদি শেষবেলায় মনে না থাকি।মনে তো অনেকেই পড়ে কিন্তু মনে থাকে একজন।আমি সে একজন হতে চাই।অনেকের ভীরে হারিয়ে যাওয়া কোনো নিসঙ্গ নক্ষত্র হয়ে উজ্জ্বলতা ছড়াতে চাই না।”
সিয়াম মুঁচকি হাসলো।
তামান্নাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো, “দোকলা নক্ষত্র কি আছে??”
“সাত নক্ষত্রও একসাথে থাকে কিন্তু!”
“তাহলে তো বিশাল বড় পরিবার হয়ে যাবে।”
“অলরেডি তুই আর আমি। দুজন আছিই।বাকী রইলো পাঁচ।”
সিয়াম তামান্নার কথায় চমকে উঠলো।
তামান্নার মুখটা দু হাতে তুলে ধরে বললো, “পাঁচটা!!”
তামান্না একটু লজ্জা পেলো।
মাথা নিঁচু করে মু্ঁচকি হেসে বললো, “সংখ্যায় কি আসে যায়!ভালোবেসে দুই থেকে তিন হলেই বা কম কিসে!তিন নক্ষত্রের মেলা হয়ে রয়ে যাবো।”
সিয়াম তামান্নাকে আবারও বুকে আগলে নিলো।
পরম আবেশে জড়িয়ে নিয়ে বললো, “এই বাসনা যেনো নক্ষত্রের মতো খসে না যায়।”
“দোয়া করি।তা যেনো কখনো না হয়।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here