নতুন তুই আমি পর্ব-৬২

0
1698

#নতুন_তুই_আমি#
💜💜💜💜💜💜💜💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
!
পর্ব:-৬২……………………………
!
তামান্না আর রাইয়ান বসার ঘরে বসে কিছু একটা নিয়ে আলোচনা করছে।লান্সের পর থেকেই এ আলেচনার শুরু।সময় খুব বেশি অতিবাহিত হয় নি।এরমাঝেই সিয়াম দু দুবার তামান্নাকে ডাকতে পাঠিয়েছে।তামান্না অবশ্য যায় নি।বলেছে-দরকারী কাজ করছে।
আরও মিনিট দশেক পর তাদের আলোচনা শেষ হলো।
রাইয়ান বললো,
“ওকে।তুমি এবার যাও।না হলে ভাইয়া রাগ করবে।”
“হু।ওর তো সারা জীবনের বদরাগ।তুই কিন্তু কথাগুলো মাথায় রাখিস।”
“উহু!ভাবী!নো টেনশন।আমি সব করবো।”
তামান্না হাসলো।
বললো,
“আচ্ছা।ঠিক আছে।”
!
তামান্না রোমে গিয়ে দেখলো-সিয়াম বালিশে মুখ গুজে উবু হয়ে শুয়ে আছে।সিয়াম যে ঘুমায় নি তামান্না সেটা ধরছে পেরেছে।আর বেচারা যে রেগেমেগে একাকার সে বিষয়েও তামান্না নিশ্চিত।
তামান্না মুঁচকি হাসলো।
সিয়ামের পাশে বসে মাথায় আলতো করে হাত রেখে বললো, “একটা দরকারী বিষয়ে কথা বলছিলাম রাইয়ানের সাথে।”
সিয়াম আগের মতোই শুয়ে রইলো।না একটু নড়লো-না কোনো কথা বললো।
তামান্না বললো, “ঘুমাও তো নি।কথা বললে কি হয়??”
এবারও সিয়াম আগের মতোই শুয়ে রইলো তবে জবাব দিলো,
“জরুরী কাজটাও একেবারে সেরে আয়।”
“সত্যি বলছি-একটা ইমর্পোটেন্ট কাজ……”
তামান্নার কথা শেষ হয় নি তার আগেই সিয়াম ধুম করে উঠে বসে।
তামান্না একটু চমকে গেলেও সিয়ামকে বুঝতে দিলো না।
সিয়াম তামান্নার চোখে চোখ রেখে বললো, “কি সমস্যা??”
সিয়ামের রাগ দেখে তামান্নার হাসি পাচ্ছে।
সে হাসিটা চাপিয়ে রেখে বললো,
“কোনো সমস্য না। ”
“তাহলে??”
“কি??”
“এতো বকবক করছিস কেনো??”
“আমি কই বকবল করলাম??”
“রোমে এসেই কথা বলা শুরু করেছিস।আর একটা কথাও বলবি না।আমি ঘুমাবো।”
সিয়াম আবার শুয়ে পড়লো।
তামান্না বললো, “হু!আমার বয়েই গেছে তোমার সাথে বকবক করতে। আমিও ঘুমাবো।”
তামান্নাও সিয়ামকে পাশ কাটিয়ে গিয়ে তার জায়গায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।
কিছু সময় পড়েই তামান্না নিজে থেকেই সিয়ামের গা ঘেষে এলো।সিয়াম কিছু বললো না।
তামান্না আরও একটু কাছে গেলো সিয়ামের।কিন্তু এবার সিয়াম চোখ গরম করে তাকালে তামান্নার দিকে।
বললো, “এমন করছিস কেনো??”
তামান্না হাসলো।
জবাব দিলো, “ঘুমাবো।”
“তাহলে আমার কাছে আসছিস কেনো। ঘুমা।যা,তোর বালিশে যা।”
“উমহু!ঐ বালিশে ঘুম আসে না।”
“রাগ উঠাবি না।”
“তুমি ঘুমাও।আমিও ঘুমাই।”
সিয়াম আর কিছু বললো না তামান্নাকে।তবে মাথা টা চেপে ধরে তার বালিশ থেকে সরিয়ে দিলো।
তামান্না আবারও সিয়ামের বালিশেই মাথা রাখলো।
বললো, “আমি এই বালিশেই শুবো।”
“দেখ!তামান্নু…..”
তামান্না এবার চেঁচালো,
“আমি বললাম না আমি এই বালিশে শুবো।”
সিয়াম তামান্না ধাক্কা দিয়ে বালিশ থেকে সরিয়ে দিলো।
তামান্নারও এবার জেদ লেগে যায় সে আবার জোর করেই বালিশে মাথা রাখে।
সিয়াম আবার সরিয়ে দিলো।
তামান্না রাগে উঠে বসলো।
চুলগুলো হাত খোপা করে সিয়ামের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো, “হয় আমি তোমার বুকে মাথা রাখবো না হয় তোমার বালিশে।”
“তোর যা খুশি কর যা।আমার বুকেও আসবি না আর বালিশে তো নাই।”
“কেনো আসবো না??একশো বার আসবো।”
“এসে দেখতে পারিস।বাকী টা আমি দেখে নিবো।”
তামান্না তৎক্ষনাৎ সিয়ামের বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।সিয়াম বেচারাও কি কম যায় নাকি!সেও সঙ্গে সঙ্গে তামান্নাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো।
তামান্না একটু ব্যথা পেয়েছে এবার।তাই সেও সিয়ামকে ধাক্কা দিলো।
“তুমি ধাক্কা দিতে পারো।আমি পারি না??”
“আচ্ছা??আমি ধাক্কা দিলে তুইও দিবি?”
“হ্যাঁ,দিবো।কেনো দিবো না?”
তামান্না কথাটা বলে আর শ্বাস ফেলতে পারে নি তার আগেই সিয়াম সিয়াম তামান্না সজোরে একটা ধাক্কা দিলো।তামান্না বেশ খানিক টা পিছিয়ে গেলো এতো।
তামান্নাও এগিয়ে এসে সিয়ামকে ধাক্কা দিলো-কিন্তু এতে সিয়ামকে বেচারী নাড়াতেই পারলো না।
তারপর আবার সিয়াম ধাক্কা দিয়েছে তামান্নাকে।
আর চোখ রাঙিয়ে বলছে, “বিছানা থেকে ফেলে দিবো কিন্ত!”
তামান্নাও চোখ রাঙিয়ে বললো, “মোটো কোথাকার!এটা তোর একার বিছানা??এটা আমার বিছানা।”
“উহু।বলছে তোরে!তোর কত বছর আগে থেকে এটার উপরে ঘুমাই আমি তুই জানিস??”
“সেটা আমার জানতে হবে না।তুই এটা জেনে রাখ!এটা আমার বিছানা।আর শুধু এই বিছানায় না আমি ইচ্ছা করলে তোর বালিশে এমনকি তোর বুকেও শুয়ে থাকতে পারি।সব রাইট আমার আছে।”
“হপপপ।যা তো।পটপট করিস না।”
সিয়াম তার হাত পা ছড়িয়ে দিলো চারদিকে।তামান্নার জন্য শুয়ার জায়গা রাখলো না।
তামান্না সিয়ামের পা সরানোর চেষ্ঠা করলো।কিন্তু পারলো না।
তাই সে ও স্বজোরে একটা ধাক্কা দিলো সিয়ামের শরীরে।
“ধাক্কা দিলি কেনো??”
“আমি শুবো।”
সিয়াম নির্ধিধায় বললো, “যা অন্য রোমে যা।”
“কিহ্!”
“হুম।এটা আমার রোম।আমার বিছানা।”
“তুই বললেই হলো। ঐ তুই রাগ করেছিস কেনো??হ্যাঁ??তোর রাগের ধার আমাকে ধারতে হবে।বদমাইশ একটা।এই রোম আমার,এই বিছানা আমার,আর তুইও আমার।একদম বাড়াবাড়ি করবি না।”
তামান্না এবার আর সিয়ামকে সরানোর জন্য ধাক্কা দিলো না।সিয়ামের শরীরে উপরই শুয়ে পড়লো।আর সিয়াম কোনো কিছু খেয়াল না করেই শরীর ঝটকা দিয়ে তামান্নাকে সরিয়ে দিলো।
তামান্না এবার আর সামলাতে পারে নি নিজেকে ব্যালেন্স না রেখতে পেরে চোখের পলকেই ফ্লোরে পড়ে গেলো।
“আওও।মাম্মাম গো।উহুহুহু……”
সিয়াম অবাক!
বেশি জোরেও দেয় নি তো ধাক্কা টা।তারপরও যে কিভাবে তামান্না পড়ে গেলো।টাইলসের উপর ধুপ করে শব্দ হয়েছে।
সিয়াম দ্রুত উঠে বসলো।
তামান্না কমড়ে হাত দিয়ে ফ্লোরে ভর দিয়ে উঠে বসার চেষ্ঠা করছে।
তবে পারছে না।
ব্যালেন্স হারিয়ে পড়ে যাওয়ায় হাতে পায়ে ভালোই লেগেছে তার।
সিয়াম তামান্নাকে ধরে উঠলো।
তামান্নার চোখে পানি এসে গেছে।বেচারা সিয়াম কি বললে!সে তো আর ইচ্ছা করে ফেলে দিতে চায় নি।
তামান্না হাতের কনুই ঘষছে।
“উহু।মাম্মাম!!!”
“সরি সরি। আমি সত্যিই এতো জোরে দেয় নি।প্লিজ প্লিজ কাঁদিস না।”
তামান্না সিয়ামের হাতটা ঝটকা দিয়ে সরিয়ে দিলো।
বললো, “ধরতে হবে না আমাকে।তুমি ঘুমাও তোমার বিছানায়।”
তামান্না আস্তে করে উঠে দাঁড়াতে চাইলো কিন্তু হাটুতে লেগেছে।তাই পা সোজা করতে পারছে না।
সিয়াম তামান্নার হাত ধরে বললো, “আপাতত দাঁড়া তো আমার হাত ধরে।”
তামান্না দাঁড়ালো।
সিয়াম বিছানায় বসাতে চাইলে বসলো না মেয়েটা।
নাক টেনে বললো, “আমি বসবো না তোমার বিছানায়।”
“আরে বাবা!সরি তো।এতোটা খেয়াল করি নি।কি করে আনব্যালেন্সড হয়ে গেছে।”
“ভালো হয়েছে।আমিই তো বাড়াবাড়ি করছিলাম তাই শাস্তি পেয়েছি।”
তামান্না খুড়িয়ে খুড়িয়ে সোফার দিকে হাটা শুরু করলো।
সিয়াম তামান্নাকে ধরে বললো, “পরে রাগ করিস,আগে বিছানায় বোস।ব্যথা টা কমুক।”
তামান্না কাঁদছে।সিয়ামের দিকে তাকিয়ে অভিমানের সুরে বললো, “ওটা তোমার বিছানা আমি শুবো কেনো!আমি না শুবো!না বসবো।”
“ওটাতো তোরও বিছানা।”
“না। সরো তুমি।”
“আচ্ছা। আপাতত আমার বিছানাতেই আয়।”
তামান্না চোখ মুছলো।
বলল,
“আমি কিন্তু আম্মুকে ডাকবো এবার।”
তামান্না ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে হেঁটে সোফায় বসল।
জামার থ্রি কোয়াটার হাতা টা উঠিয়ে দেখল কোন বরাবর কেমন ফুলে আছে।
তামান্না চোখ বড় বড় করে তাকালো।
বললো,
“তোমার জন্য আমি এতটা ব্যথা পেয়েছি আজকে।”
তামান্না সিয়ামের পাশে বসে ওর হাতটা নিয়ে দেখল বেশ ভালই লেগেছে। বিছানা থেকে টাইলস এর উপরে পড়েছে লাগবেই তো।
সিয়াম বলল, “বরফ লাগাতে হবে।”
“লাগবে না আমার।”
“একবার ধাক্কা দিয়ে বিছানা থেকে ফেলেছি। এবার ধাক্কা দিয়ে একদম দোতলা থেকে নিচে মাটিতে ফেলে দেবো।”
তামান্না সিয়ামের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো।
“বেশি শক্তি তো নিজের।”
“শক্তির আলাপ পরে করিস আপাতত এখানে চুপচাপ হয়ে বসে থাকবি। আমি আইস নিয়ে আসছি।”
তামান্না কিছু একটা ভাবলো।
তারপর নরম গলায় বলল,
“এখন যেতে হবে না।”
“তোকে চুপচাপ বসতে বলছি আমি।”
“আম্মু এখন ড্রইং রুমে সিরিয়াল দেখছে। ফ্রিজ খুলে আইস আনতে গেলে জানতে চাইবে কিসের জন্য আইস লাগছে তোমার। তখন কি বলবে!”
“বলব আমার গরম লাগছে তাই আইস মাথায় দেব।”
“কিহ?”
“তাহলে কি বলবো। বলব তোর পেট ব্যথা তাই দিতে হবে।”
তামান্না সে আমাকে পাশে বসতে বলে বলল,
“আমার পেট ব্যথার কথা শুনে আম্মু আর সেখানে থাকবে না সোজা রুমে চলে আসবে। তখন? আর পেট ব্যথা হলে কেউ পেটে বরফ দিয়ে রাখে না।”
সিয়াম প্রশ্ন করলো, “তাহলে?”
“তুমি ওয়াশরুম থেকে একটু পানি এনে দাও। তাহলেই হবে।”
“কিন্তু তোর হাত তো অনেকটা ফুলে গেছে।”
“আরে ওই টুকুতে কিছু হবে না।”
সিয়াম অজ্ঞতা ছোট একটা বুলে করে তামান্নার জন্য পানি নিয়ে আসলো। তামান্না বেশ খানিক সময় নিজের হাতটা সেই পানিতে ভিজিয়ে রাখলো।
কিন্তু তাতে খুব একটা কাজ হয়নি। ব্যথা করছে এখনো। আর দুই হাঁটুতে ব্যথা লেগেছে সেখানে তো আর পানি দিচ্ছে না।
“কিরে ব্যথা করছে এখনো?”
“না করবে না? ধাক্কা দেওয়ার সময় মনে ছিল না?”
সিয়াম সত্যি সত্যি এবার গিল্টি ফিল করছে।
বন্ধু হলে বিষয়টা একটু আধটু মেনে নেওয়া যায়। মেয়ে বন্ধুর ক্ষেত্রে মানা তা কষ্টকর। আর সেখানে কিনা তামান্না তার নিজের ওয়াইফ। তাকে সে ধাক্কা দিয়ে এমন ব্যথা দিলো!
সিয়াম ভাবতে ভাবতেই তামান্না পা দুটো সোফায় তুলে সালোয়ারের বোতামটা খুলে হাটু পর্যন্ত তুললো।
হাঁটুটা দেখে তামান্না কিছু বলার আগেই সিয়াম আতকে উঠে বলল, “ও মাই গড। একই অবস্থা তোর পায়ের।”
তামান্না বিছানা থেকে পড়েছিল উপুড় হয়ে তাই সরাসরি হাঁটু আর কনুইয়ে বেশী লেগেছে। কোন এরচেয়ে হাঁটুটা আরো বেশি ফুলে আছে। একদম ডিমের মতো। সিয়াম হাত লাগাতে তামান্না চিৎকার করল, “আওওওও….. ব্যথা পাই আস্তে।”
“ওয়েট।আমি মেডিসিন আনিয়ে নিচ্ছি।”
“আবার মেডিসিন কেনো?ঐ ড্রয়ারে দেখো একটা পেইন কিলার মলম আছে দাও।”
সিয়াম মলম নিয়ে এসে তামান্নার ব্যথাযুক্ত জায়গায় লাগিয়ে দিলো।
তামান্না বেচারী উশআশ করতে করতে শেষ।
সিয়াম বললো, “সরি রে।”
তামান্নার কি হলো হঠাৎ সব ব্যথা ভুলে ফিক করে হেসে ফেললো।
বললো, “হাসবেন্ড হয়ে বেঁচে গেছো।এই কাজটা তিন মাস আগে করলেও আমি স্কেল দিয়ে পিটাতাম তোমায়।”
সিয়ামও হাসলো।বললো,
“তোকে যদি মাস আগে আমি এভাবে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতাম তাহলে ঘটনা টা ভাইরাল করে বেড়াতাম আমি।বাট আফসোস এখন তুই আমার ওয়াইফ।তোর মান সম্মান যাওয়া যে কথা আমার যা আমার যাওয়া একই কথা।”
“হু।এখন তেল মারা হচ্ছে আমায়?আমি কি বুঝি না??”
সিয়ামও সোফার উপর পা দুটো তুলে বসলো।
তামান্নার দিকে ফিরে বললো,
“মানে?”
“মানে আবার কি!আমি যেন এখন আম্মুর কাছে গিয়ে না বলি।তাই তুমি আমাকে এসব বলছো।”
“তামান্নু!!!!”
“জ্বী।ঠিক বলছি আমি।না হলে এতক্ষণ সব তোমার ছিলো।এখন তোমার আমার মিলিয়ে সব আমাদের হয়ে গেলো?”
সিয়াম তামান্নার দুগালে হাত দিয়ে বললো, “এতো বুঝতে হবে না তোর।উঠ,একটু শুয়ে থাক।”
“না।। আমি শুবো না ওখানে।যেখানে থাকার জন্য এত কষ্ট আমার!আমি কেনো সেখানে যাবো!”
দুজনে আবার শুরু করলো তর্ক।
এ পর্যায়ে তামান্না বললো,
“দেখো,আমি কিন্তু এবার আম্মুকে ডাকবো।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here