#নতুন_তুই_আমি
💜💜
Writer:-Nargis Sultana Ripa
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
!
পর্ব:-৭০
!
সিয়ামের গান শুনে মুগ্ধ তামান্না। আজ কত দিন পর এই গলায় গান উঠলো। আগে যখন শোনতো তখন ভালো লাগলেও এতটা কাছের মনে হতো না সুরটাকে। কিন্তু আজ? সিয়ামের গানের প্রতিটা শব্দ, গিটারের প্রতিটা টুং-টাং শব্দও একান্ত নিজের মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে কতদিন সুর যেনো নিজ হাতে কুড়িয়ে বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিচ্ছে তামান্না। সিয়ামকে সবাই মিলে আরো একটা গান গাওয়ার জন্য চেপে ধরলো। সিয়াম রাজি না হয়ে উপায় কি? তবে শর্ত দিলো তামান্নাকেও তার সাথে তাল মিলাতে হবে। অর্থাৎ একটা ডুয়েল গান।
তামান্নার যদিও ভীষণ লজ্জা লাগে সবার সামনে গান গাইতে। তারপর আজ সে রাজি হয়ে গেলো। সিয়ামের গলার সাথে গলা মিলিয়ে তাল ধরলো,
“তুমি ভাবনায় ডুবে থাকা
দূর আকাশের নীলিমায়
তুমি হৃদয়ে লোকনো প্রেম
মিশে থাকা গভীর মুগদ্ধতায়।
তুমি এলে, মন ছোঁলে
অন্য রকম হয়ে যাই;
ইচ্ছেগুলো জড়োসড়ো
ভালোবাসি বলে তাই।
আমার আমি বলতে-
তোমায় জানি।
ঐ আকাশ জানে
তুমি আমার কতখানি!
আমার আমি বলতে
তোমায় জানি।
ঐ আকাশ জানে তুমি আমার কতখানি!
চিলে কোঠায় ইচ্ছেগুলো
নেই তো কোনো দাড়িকমা।
বুক পকেটে তোমার জন্য
রেখেছি ভালোবাসা জমা।
শিশির রোদের লোকচুরি
তোমার হাসি ফোটা বকুল,
ছোঁয়া পেলে স্বপ্ন হাজার
আনমনে হয়ে যাই ব্যাকুল।
তুমি এলে, মন ছোঁলে
অন্য রকম হয়ে যাই।
ইচ্ছেগুলো জড়োসড়ো
ভালোবাসি বলে তাই।
আমার আমি বলতে
তোমায় জানি,
ঐ আকাশ জানে তুমি আমার কতখানি!
আমার আমি বলতে
তোমায় জানি,
ঐ আকাশ জানে তুমি আমার কতখানি!
ও হো…..”
তামান্না আর সিয়ামের কন্ঠে তাহসানের গান শোনে সবাই তাঁক লেগে গেছে। সিয়াম এত বছর পরেও কি সুন্দট গান ধরে রেখেছে। আর তামান্না! যে কি খুব হলে দু-একটা রবীন্দ্রসঙ্গীত গায় তার কন্ঠে তাহসানের এতো ভালো গান। দুজন দুজনার জন্য প্রেয় দিয়ে গেয়েছে গানটা। তাই এতো মুগ্ধতা ছড়িয়েছে তাদের সুর। হৃদয়ে আচর কেটেছে সবার।
সিয়াম আর তামান্নার বন্ধুরা সিয়াম আর তামান্নার আজকের রাতটা হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করেছে। যেটা তামান্না বা রাইয়ান কেউ আগে থেকে জানতো না।
রাইয়ান তো অবাক?
আর তামান্না অবাকের চেয়ে লজ্জা পাচ্ছে বেশী।
এভাবে দুজনে একা থাকবে সেটা সবাই মিলে আয়োজন করলো!
ব্যাপার টা অনেক টা ফুলশয্যার রাতে মতো।
খাট সাজা অন্যরা কিন্তু বিশেষ সময় বর-বউয়ের।
কিন্তু তখন বর-বউ অবশ্য জানে।
কিন্তু আজ তাদের জন্য অজনা।
রাইয়ান বললো,
“কিন্তু আমি?”
আকাশ সবার সামনে ঝট করে বলে ফেললো,
“তোমার তো বিয়ে হয় নি। বিয়ে হোক তারপর সব ব্যবস্থা করে দিবো।”
আকাশের কথা শোনে রাইয়ান এবার আর রাগ করতে পারলো না। সবার সামনে কেমন একটা গুটিয়ে গেলো হঠাৎ করে। বিয়ে? ব্যবস্থা? কেমন একটা অদ্ভুত লাগালো রাইয়ানের কাছে। সে অদ্ভুত অনুভূতি কাটিয়ে রাগ হওয়ার আর সময় হয়ে উঠে নি।
প্রভা রাইয়ানের অবস্থা বেশ বুঝতে পারছে। এতো গুলো বড় মানুষের সামনে মেয়েটা এরকম একটা কথা ঠিক হজম করতে পারে নি।
তাই রাইয়ানকে স্বাভাবিক করার জন্য প্রভা বললো,
“আরে আকাশ বাজে বকছিস কেনো? রাইয়ান বলছে ও একা বাড়ি ফিরবে কি করে?”
সিয়াম বললো,
“আচ্ছা। আমরা এই প্ল্যান টা বাদ দিই। আমরা বাসাই চলে যাই।”
তামান্নাও সায় জানালো সিয়ামের কথায়।
আকাশ ধমকে উঠলো,
“হপ ব্যাটা। বাসায় তো রোজ থাকিস। আজ এখানে থাক। আর তোর বোনকে নিয়ে চিন্তা করিস না। ঐ পিচ্চিকে আমি বাসায় ছেড়ে দিবো।”
রাইয়ানের ইচ্ছা করছে মুখের উপর বলে দিতে-“না আমি আপনার সাথে যাবো না।”
কিন্তু এখন আকাশের সাথে না গেলে সিয়াম আর তামান্নাও বাড়ি চলে যাবে ওর জন্য। সেটা রাইয়ানের কাছে অন্য রকম লাগবে। তাই সে ও আকাশের সাথে যাওয়ার জন্য রাজি হয়ে যায়।
আকাশ ড্রাইভ করছে।
রাস্তায় শোনশান নিড়বতা। দু-একটা গাড়ি অবশ্য মাঝে মাঝে ক্রস করে যাচ্ছে তাদের।
রাইয়ান এতোক্ষণ জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকলেও আকাশের এই স্লো মোশনে গাড়ি চালানোতে রেগে গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আপনি কি সাইকেল চালানো বাদ দিবেন?”
“কিহ?”
“হ্যাঁ। এরকম সাইকেলের গতিতে গাড়ি চালাচ্ছেন কেনো?”
“তুমি জানো আমার গাড়িটা আমি কত টাকা দিয়ে কিনেছে? ব্যান্ড টা দেখেছো একবার?”
“হ্যাঁ চাইনিজ জিনিস আপনার।”
“এই মেয়ে। চাইনিজ মানে কি? হ্যাঁ? আকাশ কখনো চীনের মাল ব্যবহার করে না। ওকে?”
“ছিহ! কিসব ভাষা!”
“হা হা হা। মেয়ে বয়সেও পিচ্চি আবার ভাষাগতও পিচ্চি।”
“দেখুন এইসব বাজে ভাষা ব্যবহার না করায় যদি আমি ভাষাগত পিচ্চি হই তাহলে আমি সারাজীবন ভাষাগত পিচ্চিই থাকতে চাই।”
“ওয়াও গ্রেট।”
“গাড়িটা জোরে চালান না।”
“গাড়ি জোরে চালানো ঠিক না। এক্সিডেন্ট হতে পারে।”
“কিন্তু আপনি তো খুব আস্তে চালচ্ছেন।”
“সেইভ জার্নি হচ্ছে আমাদের।
“আরেকটু জোরে চালালেও আমরা সেভ থাকবো।”
আকাশ কিছু বললো না। আর গাড়ির স্প্রিডও বাড়ালো না। কিছুসময় পর খেয়াল করলো-রাইয়ান কোনো কথা বলছে না। তাঁকাতেই দেখলো-রাইয়ান সীটে মাথা ঝুলিয়ে ঘুমাচ্ছে।
আকাশ হাসলো। এতো অল্প সময়ে মেয়েটা ঘুমিয়ে গেছে। তাছাড়া সে যে আস্তে গাড়ি চালাচ্ছে তাতে যে কারোই ঘুম চলে আসার কথা।
আকাশ হঠাৎ গাড়ি থামিয়ে দিলো। অবাক হয়ে দেখছে রাইয়ানকে। এইটুকু একটা মেয়ে অথচ মুখটা কত মায়াবী!
ঘুমের মধ্যেও সারা দিনের ক্লান্ত বলিরেখায় ছেয়ে যাওয়া আদলটাও আকাশের কাছে চমৎকার লাগছে। ইচ্ছা করছে গালটা আলতো করে ছুয়ে দিতে। কপালে আসা এলোমেলো চুলগুলো কানের পাশে গুজে দিতে পারলে বেশ লাগতো আকাশের।
যদি সারা রাত মেয়েটা গাড়িতে এভাবেই ঘুমিয়ে থাকতো!
আকাশ নিজের অবাস্তব চিন্তাগুলোকে আরো হরেক রকম রঙ দিয়ে সাজিয়ে নিচ্ছে। আর নিজের অজান্তেই ধরা পরে যাচ্ছে রাইয়ানের নামের ছোট্ট মেয়েটার মায়ায়।
সিয়াম আর তামান্না ওদের জন্য সাজিয়ে রাখা রোমটাতে ডুকে প্রচন্ড রকমের আর্শ্চয হয়ে গেছে। মনেই হচ্ছে না সিয়ামের জন্মদিনের জন্য এমন আয়োজন! মনে হচ্ছে কোনো ফুলশয্যার ঘর বা হানিমুনে আসা কাপলদের জন্য বিশেষ সাজে সজ্জিত কোনো ঘর।
সিয়াম তামান্নাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে রোমে এসেছিলো।
আরোও শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বললো,
“মনে হচ্ছে আবার বিয়ে করে নতুন বউ নিয়ে ফুলশয্যা করতে যাচ্ছি।”
তামান্না কিছু বললো না। সারা ঘর ভর্তি লাল গোপালের পাপড়ি আর ক্যান্ডেলের আলোয় বিমোহিত হয়ে আছে সে।
সিয়াম তামান্নার দিকে তাকালো। একদম নতুন বউ! সিয়াম মুঁচকি হেসে তামান্নার মাথায় ঘোমটা উঠিয়ে দিয়ে বললো,
“ব্যাস এবার একটি লজ্জা পা….”
সিয়ামের এই কথাটাই তামান্না সত্যি সত্যি ভীষণ লজ্জায় পড়ে গেলো। সিয়ামের দু হাতে ধাক্কা দিয়ে লজ্জাস্বরে বললো,
“যাহ্।”
সিয়াম তামান্নাকে বেশীদূর সরে যেতে দিলো না। বেনারসির আঁচলটা নিজের হাতে পেঁচিয়ে নিলো। তামান্না ধমকে গেলো।
সিয়াম পেছন থেকে তার প্রিয়তমাকে জড়িয়ে ধরলো। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
“এতো সারপ্রাইজ প্ল্যান করতে পারিস?”
তামান্না কিচ্ছু বললো না। শুধু সিয়ামের বুকে নিজের পিঠ টা শক্ত করে ঠেকিয়ে রাখলো।
সিয়াম বললো,
“আমার কাছে রির্টার কিছু চাই না?”
তামান্না কথা বললো এবার,
“দিয়েছো তো।”
“কি?”
“গান।”
“আর কিছু না?”
“আর কি?”
“আর কিছু চাই না তোর?”
“উমহু।”
“সত্যি তো?”
“হুম।”
সিয়াম তামান্নাকে আচমকা সরিয়ে দিলো। বিছানায় ধুপ করে বসে পড়ে তামান্নাকে বললো,
“ওকে। চল ঘুমিয়ে পড়।”
তামান্না হা করে সিয়ামের দিকে তাকিয়ে আছে।
হঠাৎ রেগে গেলো কেনো? এটাই বুঝতে পারছে না সে।
হাবলার মতো সিয়ামের পাশে বসে জানতে চাইলো,
“কি হয়েছে?”
“কি?”
“রাগ করলে?”
“রাগ করবো কেনো? ঘুমা। সকালে বাড়ি ফিরবো।”
তামান্না আঁচলে আঙুল পেঁচাচ্ছে। জবাব দিলো,
“তাহলে তো এখনি ফিরতে পারতাম।”
“ফিরবি এখন তুই?”
তামান্না ডানে বায়ে মাথা নাড়লো,
“উমহু।”
“যেতে চাইলে বল।”
“না।”
“তাহলে ঘুমা।”
“না।”
“তাহলে কি করবি?”
তামান্না কোনো উত্তর দিতে পারলো না। শুধু সিয়ামের গা ঘেষে বসলো।
সিয়াম দূরে সরে আসলো একটু। তামান্না আবারো কাছে চেপে বসলো।
সিয়াম ককর্শ গলায় বললো,
“কি চাই?”
তামান্না মুঁচকি হেসে বললো,
“অনেক কিছু।”
“আমার কাছে কিছু নেই।”
“আমাকে কেমন লাগছে?”
“ভূতের বউয়ের মতো। হয়েছ এবার? যা দূরে সরে বস।”
“ঘাড় মটকে দিবো কিন্তু।”
“তামান্না?”
“তামান্নু বলো।”
“আমি রেগে আছি।”
“আমার আরো রাগাতে ইচ্ছা করছে।”
“ভালো হবে না কিন্তু।”
“অবশ্যই ভালো হবে। কারণ বেবীর আব্বু-আম্মু দুজনেই খুব ভালো।”
সিয়াম চোখ বড় বড় করে তাকালো তামান্নার দিকে।
“বেবী? বেবী কোথায়?”
“কোথায় আবার। আমার পেটে।”
“মানে?”
“মানে আবার কি?”
“তোর পেটে বেবী-এটার মানে কি?”
“আমি ম্যারিড একটা মেয়ে আমার পেটে বেবী থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক।”
সিয়াম আচমকা তামান্নাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো। তার উপরে ভর দিয়ে চোখে চোখ রেখে বললো,
“কি বলছিস এসব?”
“কি?”
“বেবী মানে?”
তামান্না মাথা টা কিঞ্চিত উঁচু করে সিয়ামের কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
“বেবী আসছে। আমাকে নক করেছিলো। কিন্তু বেবীর বাবা তো এখনো আপিল জমা দেয় নি।”
তামান্না কথাটা বলেই চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো।
সিয়াম তামান্নার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলো। তারপরও সে ও একই ভাবে তামান্নার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,
“বেবীর মা কি চায় বেবীর বাবা আপিল জমা দিক।”
তামান্না চোখ বন্ধ রেখেই মৃদু স্বরে জবাব দিলো,
“হুম।”
“আচ্ছা? কি করে আপিল জমা দিতে হয়?”
তামান্নার চোখ দুটো খোলে গেলো। সিয়ামের দিকে তাকিয়ে একরকম মুখ ফুসকেই বলে ফেললো,
“কিহ?”
সিয়াম দাঁতে নিজের ঠোঁট কেটে বললো,
“কি করে আপিল করবো?”
“মানে?”
“জানতে চাচ্ছি আর কি। কোনো দিন বাবা হই নি তো।”
“ধুর। সরো। সব সময় ফাযলামি।”
“আরে রাগ করছিস কেনো?”
“না রাগ করবো না। যতসব।”
“বেবী দিয়ে কি করবি?”
তামান্নার এবার আর রাগ থেমে থাকছে না। সিয়ামের কোটের কলার চেপে ধরে বললো,
“বেবী দিয়ে কি করে মানুষ? হুম?”
“কি করে?”
“কি করবে শুনবি?”
“হ্যাঁ। বল, কি করবি বেবী নিয়ে।”
“বুকের দুধ খাওয়াবো। বুঝলি?”
“আচ্ছা?”
“দেখ। তুই সর আমার উপর থেকে।”
“আমি সরলে পারবি তো বেবীর মা হতে?”
“শুধু থেকেই কি বেবীর মা করে দিবি?”
“কেনো আর কিছু করতে হবে তোকে?”
তামান্না চোখ মুখ কুচকে তাকিয়ে আছে সিয়ামের দিকে। ছেলেটা পাড়েও বটে!
“কি হলো?”
“কিছু না।”
“আমার মনে হয় কিছু করতে হবে তোর সাথে। তাই না?”
সিয়াম তামান্নার ঘোমটা টা সরিয়ে নিলো। কানের লতিতে আলতো করে কামড় দিয়ে বললো,
“আমারও বেবীর বাবা হতে ইচ্ছা করছে।”
তামান্না অস্ফুট স্বরে উত্তর দিলো,
“তো কে না করেছে!”
“হুমমম। তাই তো।”
সিয়াম তামান্নার গলায় মুখ গুজলো। তামান্নার দু হাতের আঙুলের ভাজে নিজের আঙুল রেখে চোখে, গালে, ঠোঁটে ভালোবাসা ছড়িয়ে দিয়ে বললো,
“পুরনো বেনারসি পড়ে কেনো?”
তামান্না মাদকীয় কন্ঠে জানান দিলো,
“আবার পুরনো আদরে হারাতে চাই নতুন করে, তাই।”