নতুন তুই আমি পর্ব-৭৩

0
3749

#নতুন_তুই_আমি
পর্ব : ৭৩
লেখক : নার্গিস সুলতানা রিপা

সন্ধ্যার পর সিয়াম তামান্নাকে সাথে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলো। খালামনিকে দেখে রাইয়ানকে সাথে নিয়ে বাসায় চলে এসেছে। কাজের বুয়া দুজন ছুটিতে আজ। সিয়ামের আম্মুও হাসপাতালে তার বোনের কাছে। তাই রাতের খাবারটা তামান্নাকে করতে হচ্ছে। রাইয়ান তার মায়ের অসুস্থতার জন্য কেঁদে কেটে একাকার অবস্থা। তার মানসিক প্রশান্তির জন্য তামান্না চেষ্টা করছে যদি তার প্রিয় খাবারগুলো রান্না করে কিছুটা হাসি ফুটানো যায়।
তামান্না ভুনা খিচুরি করছে। রাইয়ানের বেশ প্রিয় খাবার এটা। সাথে বেগুন ভাজি আর গরুর গোস্ত হলে তো কথাই নেই। তামান্না বেগুন ভাজি করলো। ফ্রিজ খুলে দেখলো বাসায় গরুর গোস্ত নেই। বাসার পাশেই দোকান। কিন্তু এই রাতের বেলা সিয়াম কোনোভাবেই গরুর গোস্ত কেনার জন্য বের হবে না। তাই মুরগির গোস্ত দিয়েই কাজ চালিয়ে দিলো সে। সিয়ামের জন্য আলুর দম টাও বেশ ভালো করে কসিয়ে রান্না করলো মেয়েটা। প্রায় দু-ঘন্টার রান্নার ঝক্কি শেষ করে রুমে গিয়ে দেখলো সিয়াম মনোযোগ দিয়ে ইংলিশ মুভি দেখছে। তামান্নার মেজাজটাই বিগড়ে গেলো। বেচারী একা একা কত কষ্ট করেছে সিয়াম তো পারতো একটু জিজ্ঞাস করতে, সাহায্য না করুক, একটু দেখে আসা তো যেতো। অথচ সে কিনা দেখছে মুভি। তারউপর যেটা আবার তামান্নার কাছে রীতিমতো বিরক্তিকর।

তামান্না ওয়াশরুমে ঢুকে হাত-মুখ ধুয়ার বদলে একেবারে গোসল সেরে নিলো। হাসপাতাল তারপর রান্নাঘর; গোসলটা করে শরীর বেশ তাজা মনে হচ্ছে।
তামান্না চুল শুকাচ্ছে। হেয়ার ড্রায়ারের শব্দে সিয়াম পিসি বন্ধ করে উঠে বসলো।
“কি ব্যাপার চুল শুকাচ্ছিস কেনো?”
“আমার একটু ঠাণ্ডা লাগছে। তাই শুকিয়ে নিচ্ছি।”
“ঠাণ্ডা লাগছে তো গোসল করলি কেনো?”
“এতো প্রশ্ন করবি না।”
“রেগে আছিস মনে হচ্ছে।”
“না।”
“দে, আমি ড্রাই করে দিচ্ছি।”
“খবরদার হাত দিবি না। যা সর এখান থেকে।”
“আরে রাগ করছিস কেনো?”
“তোকে বলতে হবে আমার?”
“তো রাগটা আমার উপরেই তাই না? তাই বলবি।”

তামান্না হেয়ার ড্রায়ারটা রেখে উঠে দাঁড়ালো। বললো,
“খাবার দিচ্ছি। সময় হলে খেয়ে যা।”
তামান্না সামনের দিকে পা দাঁড়াতেই সিয়াম তামান্নার হাত ধরে। আর তখনি তামান্না মৃদু আওয়াজ করে,
“আউচ।”
সিয়াম দ্রুত তামান্নার হাত দেখার জন্য উতলা হয়। তামান্নার আঙুল কেটে গেছে।
“কি ব্যাপার? হাত কি করে কাটলো?”
“অল্প কেটেছে।”
“সেটা আমি দেখতে পাচ্ছি।”
“হাত ছাড়ো। খেতে আসো।”
“এখন হাত কাটার প্রশ্ন করায় তুই থেকে তুমি হয়ে গেলাম। যাই হোক, আমি ডক্টর কল করছি।”
“মানে কি? এতটুকুর জন্য ডাক্তারের দরকার নেই। আর আমি রাগ করলেই কি না করলেই কি?”
“আচ্ছা বাবা সরি। আর এমন হবে না।”
“কি হবে না?”
“বাইরে থেকে এসে ফ্রেস হয়েই শুয়ে পরেছি কিন্তু নামায পড়ি নি। তারপর আবার ইংলিশ মুভি দেখছিলাম। এসব আর হবে না?”
“এখন পর্যন্ত কতবার বলেছিস?”
সিয়াম তামান্নাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো,
“তুই তো জানিস আমি এখনো এলোমেলো, তুই তো ঠিক করার দায়িত্ব নিয়েছিস। পুরোপুরি ঠিক করে দে না।”
“হয়েছে ছাড়ো। নিজে বারবার ভুল করবে আর আমি যেনো দায় নিয়ে বসে আছি।”
“তোরই তো বর, একটু সামলে নে না।”
“হ্যাঁ তা তো নিতেই হবে। এবার ছাড়, আর খাবার খেয়ে এসে নামাযটা পড়ে নিবি।”
“তাহলে হ্যাপী হবি তো?”
“আমার হ্যাপীর জন্য না সিয়াম, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করতে হবে। তাহলেই আমাদের ছোট্ট পরিবারটা আরো বেশী সুখীময় হবে।”
সিয়াম মুচকি হেসে বললো,
“ইনশাল্লাহ।”
“জ্বী, এবার আসেন-খাবার রেডি।”
“তোর হাত?”
“আমি ড্রেসিং করে নিয়েছি।”
“ব্যান্ডেজ করা দরকার তো।”
“অল্প তো।”
“তবুও করতে হবে।”
“আচ্ছা, ডিনারের পর করি। রাইয়ান সকাল থেকে তেমন কিছু খায় নি।”
“সবার কথা কি করে ভাবিস?”
“ইশশ! আমি আমার কথা ভাবি, আমি মানেই আমার পরিবার। আমার পরিবার ভালো না থাকলে আমি কি করে ভালো থাকি? তাই নিজের ভালো থাকার জন্যই এসব বুঝলেন স্যার?”
সিয়াম তামান্নার কপালে চুমু খেয়ে বললো,
“জ্বী ম্যাডাম।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here