আরশিযুগল প্রেম❤পর্ব- ৮

0
1860

# আরশিযুগল প্রেম❤
# লেখিকাঃ নৌশিন আহমেদ রোদেলা ❤
#পর্ব- ৮

ঘড়ির কাটা ছুটে চলেছে নিঃসংকোচ। রাতের অন্ধকারটাও গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়ে চলেছে। ল্যাম্পপোস্টের হলদে আলোয় জমাট বেঁধেছে একঝাঁক জংলী কুয়াশা। সাত তলার ওপর থেকে আলো আর কুয়াশার সেই অদ্ভুত খেলাই দেখছে সাদাফ। চারদিকে বিষাক্ত নীরবতা। সেই নীরবতা কাটিয়ে জমাট অন্ধকারের কালো কাঁথায় গা ঢেকে, থেকে থেকেই অদ্ভুত কর্কশ কন্ঠে গুঙিয়ে উঠছে রাস্তার পাশের ওই ল্যাংড়া কুকুরটা। তার সাথে সাথে গুঙিয়ে উঠছে সাদাফের মন। রাতের এই অন্ধকার আকাশে উদ্দেশ্যহীন বিচরণ করে একটা কথায় ভাবছে সাদাফ, এই যান্ত্রিক শহরে রাতটা কি ভীষণ ভয়াবহ। কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে কফির কাপে চুমুক দিলো সাদাফ। ব্যালকনির এক কোণে রাখা ইজি চেয়ারটাই গা এলিয়ে দিয়ে আবারও অন্ধকার আকাশে চোখ রাখলো। আকাশটাকে আকাশ নয় মস্ত এক কালো চাদর বলে বোধ হচ্ছে আজ। আর সেই কালো চাদরে অসাবধানতায় হঠাৎ ছিটকে পড়া সাদা রঙের মতো থোকা থোকা তারার মেলা। তারাগুলোকেও আজ ঠিক তারা বলে মনে হচ্ছে না সাদাফের। মনে হচ্ছে, ওগুলো তারা নয় শুভ্রতার হাস্যোজ্জল ঝকঝকে দাঁত। হঠাৎ চমকে উঠে আড়চোখে তাকানো মায়াবী চোখের অদ্ভুত শুভ্রতা। ওই চাঁদটাও চাঁদ নয় শুভ্রতার কপালে পড়া টিপ। আর জমাট অন্ধকারগুলোও অন্ধকার নয় শুভ্রতার মেঘবরণ চুল। আজ এই আকাশটাও আকাশ নয়….সমস্তই শুভ্রতার মায়াবী মুখ! কথাগুলো ভেবেই চোখ বুজে সাদাফ। হঠাৎই চমকে উঠে চোখ মেলে তাকায় সে। ছি! কি সব ভাবছে সে? কোনো মেয়েকে এভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ভাবাটা যে অন্যায় বৈ কিছু নয়। ব্রেনের সেই ন্যায়পরায়নতায় ক্ষেপে যায় সাদাফের মন। তুমুল প্রতিবাদ করে বলে, ” একদমই অন্যায় নয়। একদমই না। শুভ্রতা তো বাকি মেয়েদের মতো অন্য মেয়ে নয়। সে তো তারই স্ত্রী। ধর্মের গুণে স্ত্রী।” মনের কথাটাকে ঠিক পাত্তা দেয় না সাদাফ। যে সম্পর্কটার কোনো ভিত্তিই নেই সেই সম্পর্কটাকে অযথা টেনে কি লাভ? সাদাফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালো। কফি কাপটাকে টেবিলের উপর রেখে একঝাঁক অলসতা নিয়ে নেতিয়ে পড়লো বিছানায়। আজ সন্ধ্যায় শুভ্রতাকে ডিবোর্সের কথাটা বলতে গিয়েও বার কয়েক আটকে গিয়েছে সে। কেনো জানি গলা ডেঙিয়ে শব্দটাকে জিহ্বা পর্যন্ত আনতেই পারে নি সে। বারবার মনে হয়েছে, যেমন চলছে চলুক না। কি দরকার আগ বাড়িয়ে ঘাটতে যাওয়ার? কিন্তু তা বললে কি চলে? শুভ্রতাকে তো মুক্তি দিতে হবে তার। এই অদ্ভুত সম্পর্কের বেড়াজালে জড়িয়ে থেকে পিষ্ট হয়েই বা কি লাভ? কোনো লাভ নেই। কিচ্ছুটি না।

___________________

ঘড়িতে একটার ঘন্টা বাজতেই চমকে উঠলো শুভ্রতা। বারকয়েক এপাশ ওপাশ করে কম্বলে মুখ লুকিয়ে চুপ করে পড়ে রইলো খানিক্ষন। তারপর আবারও পাশ ফিরলো। মুখ দিয়ে “চ” এর মতো শব্দ করে বিরক্তি প্রকাশ করেই উঠে বসলো। ডানপাশের দেয়ালে তাকিয়ে ঘড়ি দেখলো —- ১ঃ১৫। এই মধ্যরাতেও ঘুম নামক জিনিসটা ধরা দিচ্ছে না শুভ্রতার চোখে। বারবার মনে হচ্ছে সাদাফের কথা। তাদের এই সম্পর্কের ভবিষ্যতের কথা। কিভাবে কি হবে এবার?ঠিক কোথায় গিয়ে ঠেকবে তারা?আচ্ছা? সাদাফের কি গার্লফ্রেন্ড আছে? নিশ্চয় আছে। এমন একটা ছেলের গার্লফ্রেন্ড থাকবে না এমনটা ভাবাও একধরনের বোকামো। আচ্ছা?সাদাফের গার্লফ্রেন্ডের নাম কি পৃথা? সেদিন রাতে এই মেয়েটার নামটাই তো বলেছিল সাদাফ। নিজের এমন ভাবনায় নিজেই বিরক্ত হলো শুভ্রতা। ফু দিয়ে সামনের চুলগুলো উড়িয়ে নিয়ে জোরে জোরে বললো,

—” এতো কেন ভাবছি আমি?উনার গার্লফ্রেন্ড থাকলেই আমার কি? কিচ্ছু না, আমার কিচ্ছু না।”

কিন্তু মুখের সেই কথা মন পর্যন্ত পৌঁছালো না। সাদাফের হাসিমাখা মুখটাই চোখের সামনে ভেসে উঠলো হঠাৎ। পাশে রাখা বালিশটা শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বিছানায় ঠেস দিয়ে চোখ বন্ধ করলো শুভ্রতা। সবকিছুকে ছাপিয়ে সাদাফের প্রতি এক গভীর টান অনুভব করছে সে। সাদাফের ঘন ভ্র’জোড়ার নিচে বুদ্ধিদিপ্ত গম্ভীর দুটো চোখ, গভীর চোখে তাকানো, কথার তালে তালে ঠোঁট বেঁকিয়ে হাসা সবই যেন গভীর থেকে গভীর শিকড়ে আবদ্ধ করছে তাকে। প্রথম যেদিন ট্রেনে দেখা হয়েছিলো সেদিনও সাদাফকে খেয়াল করেছিলো শুভ্রতা। বেশ ভালোভাবেই খেয়াল করেছিলো কিন্তু এতোটা ভালো তো লাগে নি তখন। সবকিছু খুবই স্বাভাবিক লেগেছিল তার। তাহলে আজ কেন সাদাফের ছোট ছোট বিষয়গুলোতেই মুগ্ধ হচ্ছে শুভ্রতা। সাদাফের খুব স্বাভাবিক অভ্যাসগুলোকেই কেন অস্বাভাবিক সুন্দর লাগছে তার। সাদাফকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ বলে গর্ব হচ্ছে কেন? এ কেমন অদ্ভুত আকর্ষণ তার?

রাতের অন্ধকার আর হাড় কাঁপানো শীত কাটিয়ে উজ্জল রোদে হেসে উঠেছে ব্যস্ততার শহর ঢাকা। রাস্তাঘাটে ব্যস্ত পায়ে হেঁটে চলেছে কর্মব্যস্ততায় ব্যস্ত মানুষ। রাস্তাগুলো যানবহনের গর্জনে আবারও হয়ে উঠেছে চঞ্চল। এই ব্যস্ততাময় অস্থির সকালে শরীরের আগাগোড়া ঢেকে নিশ্চিন্ত ভঙ্গিতে ঘুমুচ্ছিলো শুভ্রতা। ঠিক তখনই মাথা থেকে কম্বলটা সরিয়ে নিয়ে ডানহাতের বাহু ধরে প্রচন্ড জোরে ঝাঁকি দিলো কেউ। শুভ্রতা ভ্রু কুঁচকে আধো আধো চোখে তাকালো। ঘোলাটে দৃষ্টিতে রাদিবা আহমেদকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বালিশ দিয়ে মুখটা আড়াল করে আবারও ঘুমিয়ে পড়লো। রাদিবা আহমেদ বালিশটা সর্বশক্তি দিয়ে ছিনিয়ে নিয়ে বললো,

—“শুভি? এই শুভি? ওঠ বলছি। ওঠ!”

শুভ্রতা বিরক্তিতে কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো,

—“প্লিজ মা। যাও তো। আজকে আপাতত ঘুমোতে দাও আমায়। উফফ…প্রত্যেকটা দিন এমন যন্ত্রণা একদম ভালো লাগে না। শুক্রবারটা তো ছাড়ো!”

—” এতো ঘুম কই পাস তুই, হ্যাঁ?তোদের বয়সে সেই ভোর রাতে বিছানা ছাড়তাম আমরা। আর তুই দেখ, দশটা বাজতে চললো তবু ঘুমুচ্ছিস। এমন অলস মেয়েকে দিয়ে কি করবো আমি। কি হলো? উঠছিস না কেন?”

শুভ্রতা এবার চেঁচিয়ে ওঠে বললো,

—” উফফ মা! যাও তো। প্রত্যেকটা দিন তোমার এইসব আজাইরা বানী শুনতে একদম ভালো লাগে না আমার। দয়া করে একটু ঘুমুতে দাও। আজ ভার্সিটিও নাই তাহলে এতো কেন চেচাচ্ছো বলো তো?”

—” একা একা উঠে গেলেই তো আর চেঁচাতে হয় না। এতোবেলা পর্যন্ত শুয়ে থাকলে চেঁচাবো না তো আদর করবো? লাট সাহেবের মেয়ে হয়ে গেছিস তুই। বাপের আদরেই এতোটা বিগড়েছে মেয়েটা। এক্ষুনি ওঠবি তুই। এমন ধিঙি মেয়ে নাকি বেলা দশটা পর্যন্ত পড়ে পড়ে ঘুমায়। ছি! ছি! মানুষ শুনলে কি বলবে শুনি? কি হলো, উঠলি না এখনও?”

বিরক্তিতে কিরমির করে ওঠে বসলো শুভ্রতা। রাগে শরীরটা জ্বলে যাচ্ছে তার। প্রতিটা সকালে মায়ের মুখের এমন সুধাবাণীতে অতিমাত্রায় বিরক্ত সে। দিন দিন মায়ের এই অত্যাচার চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। একমাত্র এই কারণটার জন্য মাঝে মাঝে সন্ন্যাসী হয়ে দেশান্তর হতে ইচ্ছে করে শুভ্রতার। যে জীবনে শান্তিতে দু’দন্ড ঘুমোনো যায় না সে আবার কেমন জীবন?শুভ্রতার এতোসব ভাবনার মাঝেই কম্বল টেনে ভাঁজ করতে লাগলেন রাদিবা আহমেদ। মেয়ের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললেন,

—” মুখ ফুলিয়ে বসে না থেকে ফ্রেশ হয়ে আয় যা। নাস্তা করে ঝটপট রেডি হয়ে নিবি। এভাবে থম মেরে বসে থাকলে দিবো এক চড়।”

শুভ্রতা মুখ ফুলিয়ে বললো,

—” রেডি হবো মানে? রেডি হবো কেন?”

রাদিবা আহমেদ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,

—” আজ যে শেফার বিয়ে, ভুলে গেছিস? কাল রাতেও না কতো শতো গল্প করলি আর সকালে ওঠেই ভুলে গেলি?”

শুভ্রতা বিছানা থেকে নামতে নামতে বললো,

—” ওহ্! মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো।”

রাদিবা আহমেদের উত্তরের অপেক্ষা না করেই ওয়াশরুমে ঢুকলো শুভ্রতা। রাদিবা আহমেদ কপাল কুঁচকে বিছানা ঝাড়লেন। কম্বল আর বালিশগুলো ঠিক জায়গায় গুছিয়ে রেখে ওয়াশরুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। দরজায় দুটো থাপ্পড় দিয়ে মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

—“শুভি? এই শুভি?”

শুভ্রতা ব্রাশ করছিলো। মুখে ব্রাশ নিয়েই অস্পষ্ট উত্তর দিলো,

—“হু।”

—“আমি রান্না ঘরে যাচ্ছি। তোর বাবা বাজার থেকে ফিরলে একটা ভালো সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে এপয়েন্টমেন্ট করে রাখতে বলিস তো। আমি বলতে ভুলে যাবো।”

সাইকিয়াট্রিস্টের নাম শুনে ভ্রু কুঁচকালো শুভ্রতা। তাড়াহুড়ো করে দরজা খুলে মুখ থেকে ব্রাশটা বের করে বললো,

—” সাইকিয়াট্রিস্ট? সাইকিয়াট্রিস্ট দিয়ে কি হবে মা? এনি হাও, তুমি কি মানুষিকভাবে অসুস্থ মা? আমি আগেই বুঝেছিলাম নয়তো রাতভোরে এভাবে চেঁচামেচি করে ঘুম ভাঙে কেউ? নির্ঘাত কোনো গলদ আছে।”

রাদিবা আহমেদ খোঁপাটা শক্তহাতে বাঁধতে বাঁধতে বললেন,

—“একটা থাপ্পড় বসাবো। ফাজলামো করিস? আমি অসুস্থ হতে যাবো কেন? সাইকিয়াট্রিস্ট তো তোর জন্য খুঁজছি।”

শুভ্রতা অবাক চোখে তাকালো। সবিস্ময়ে বললো,

—” আমার জন্য? মা? আমাকে কি তোমার পাগল মনে হয়?”

রাদিবা আহমেদ তাড়াহুড়ো করে বললেন,

—” আরে! তা কেন মনে হবে। কিন্তু আজকাল কিসব হচ্ছে না তোর সাথে? হুটহাট রেগে যাচ্ছিস, কেমন শুকিয়ে শুকিয়ে যাচ্ছিস, সবকিছু কেমন ভুলে ভুলেও যাচ্ছিস। না জানি মাথায় কিসব গোন্ডগোল পাকিয়েছিস। দু’দিন বাদে না পাগলই হয়ে যাস। প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ভালো জানিস না? তাই তুই পাগল হওয়ার আগেই পাগলামো প্রতিরোধ করার ব্যবস্থা করছি।”

শুভ্রতা কপাল কুঁচকে বললো,

—” ইউ আর জাস্ট ইম্পসিবল,মা।”

খাবার টেবিলে বসে রুটি চিবুচ্ছে শুভ্রতা। এমন সময় মাথায় চাটি মেরে ধপ করে পাশের চেয়ারে বসে পড়লো শুভ্রব। শুভ্রতা চেঁচিয়ে ওঠে বললো,

—” মা? দেখো ভাইয়া মারছে।”

—” মা দেখো ভাইয়া মারছে।”

ঠোঁট উল্টিয়ে শুভ্রতাকে ভেঙালো শুভ্রব। শুভ্রবের পিঠে ধপ করে একটা কিল বসিয়ে দিয়ে আবারও চেঁচিয়ে উঠলো শুভ্রতা,

—” মা? ও মা? দেখেছো? তোমার ছেলে কিভাবে ধুমধাম করে মারছে আমায়। তুমি কিছু বলবা, ওকে? জীবনেও তো আমার সাইড নাও না তুমি।
ছেলেই তো তোমার সব।”

শুভ্রব শুভ্রতার কান টেনে ধরে বললো,

—” হারামি মাইয়া। এতো কূটনীতি কই থেকে শিখিস তুই?”

—” মা…..”

দুই-ভাই বোনের চেঁচামেচিতে চামচ হাতেই বেরিয়ে এলেন রাদিবা আহমেদ। চামচ উঁচিয়ে বললেন,

—” আরেকটা শব্দ হলে দুটোর পিঠেই বসাবো বলে দিলাম। শুভ্রব? এতো বড় বোনের গায়ে হাত তোলাটা কোন ধরনের অসভ্যতা? দিন দিন বেলেহাজ হয়ে পড়ছো তুমি। খবরদার, এমনটা যেন আর না দেখি।”

কথা শেষ করে দু’জনের দিকে গরম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রান্না ঘরে ঢুকে গেলেন রাদিবা আহমেদ। সাথে সাথেই দুষ্টু হাসি দিয়ে মুখ ভেঙালো শুভ্রতা। শুভ্রব রাগী চোখে তাকিয়ে বললো,

—“শেফার বিয়েটা হতে দে খালি তারপরই তোর পালা। ডিরেক্ট শশুর বাড়ি ফেলে আসবো তোকে। মোষ্ট দজ্জাল শাশুড়ী দেখে বিয়ে দেবো তোকে। যে তোকে সকাল – বিকেল পেটাবে। আহা! কি শান্তি!”

শুভ্রতা আরেক টুকরো রুটি মুখে পুড়ে নিয়ে বললো,

—“এহহ্ বললেই হলো? আমারটা না ভেবে নিজেরটা ভাব। তোর বউটা পুরো পেত্নী হবে দেখিস। দিন রাত জ্বালাতে জ্বালাতে কয়লা করে ফেলবে তোকে।”

শুভ্রব আরো কিছু বলবে তার আগেই থালা হাতে ডাইনিং এ এলেন রাদিবা আহমেদ। মাকে আসতে দেখেই দু’জনে ভদ্র ছেলে মেয়ের মতো খাওয়ায় মন দিলো। রাদিবা আহমেদ শুভ্রবের প্লেটে রুটি তুলে দিতে দিতে বললো,

—” ছেলে পক্ষ থেকে ক’জন আসবে রে শুভ্রব?কিছু কি বলেছে ওরা?”

রুটির টুকরো ঝুলে ডুবাতে ডুবাতে বলে উঠলো শুভ্রব,

—” বড় খালু তো বললো দশজনের মতো আসবে। ছেলের দুই মামা, দুই বোন, দুই বোন জামাই,ছেলের বড় চাচা, মা, ছেলের একটা বন্ধু আর ছেলে নিজে। এই কয়েকজনই।”

রাদিবা আহমেদ চিন্তিত গলায় বললো,

—” দশজন কমই তো, তাই না রে? তবুও এই দশজনের খাবার রাঁধতেই জান বেরিয়ে যাবে বড় আপার তাছাড়া আমরা, মেজো আপারা আর বড় আপার বাড়ির লোকেরা তো আছেই। সব মিলিয়ে প্রায় ত্রিশ জনের মতো হয়ে যাবে। তাই না?

শুভ্রব মাথা নাড়লো। কিন্তু গলায় খাবার আটকে গেলো শুভ্রতার। “ছেলের বন্ধু” — ছেলের বন্ধু তো সাদাফ। তবে কি আজ আবারও দেখা হতে চলেছে তাদের?ভাবতেই শরীরব্যাপী শীতল শিহরণ বয়ে গেলো শুভ্রতার। বুকের ওঠানামা বেড়ে গেলো বহু গুন। শরীর-মন নিদারুণ অস্থিরতায় অস্থির হয়ে উঠলো। নিজের এই অতিরিক্ত আবেগ সাদাফের সামনে প্রকাশ পেয়ে যায় সেই ভয়ে নিজেকে খানিকক্ষণ বকলোও সে। কিন্তু, মন কি আর বারণ শুনে? নিজের স্বেচ্ছায় উড়ে বেড়ানোটাই যে তার ব্রত। বারবার বেহায়া হয়ে লজ্জায় রক্তিম হওয়াটাই যে তার জেদ!

___________________

বিকেল পাঁচটা। শেফাদের ড্রয়িং রুমে সবার সাথেই বসে আছে সাদাফ। মুখ দেখে বোঝা না গেলেও আরাফের প্রতি চরম রকম বিরক্ত সে। এখানে আসার বিন্দুমাত্র ইচ্ছেও ছিলো না তার। তবুও প্রতিবারের মতো আরাফ আর আরাফের মামার জোড়াজুড়িতে আসতে বাধ্য হয়েছে সে। দিনটা শুক্রবার বলে কাজের বাহানা দিয়ে পাড় পাওয়াটাও হয়ে ওঠে নি সাদাফের। আরাফের এমন লিমিটলেস বাড়াবাড়িটা কখনোই সহ্য হয় না তার। সাদাফ যখন তার বিরক্তির প্রহর গুণতে ব্যস্ত ঠিক তখনই পর্দার আড়াল থেকে তাকেই লক্ষ্য করতে ব্যস্ত দুটো চোখ। সাদাফের ফর্সা গায়ে হালকা গোলাপী পাঞ্জাবি, ক্রিম কালারের জিন্স, কপালের ওপর পড়ে থাকা মসৃন চুল, গম্ভীর চোখের এদিক-ওদিক চাহনী সবই যে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে কেউ তা হয়তো সাদাফের দৃষ্টির মধ্যেই পড়ে নি। সাদাফের কালচে লাল ঠোঁটের প্রসারিত হাসির রেখায় যে কেঁপে উঠছে কারো বুক সে কম্পনটাও হয়তো ঠাহর করতে পারে নি সাদাফ। বেখেয়ালি মনে পাঞ্জাবীর হাতা গুটানোর মতো সাধারণ দৃশ্যটাও যে কারো কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দর দৃশ্য বলে বোধ হচ্ছে, তার বেখেয়ালীপনায় করা ছোট্ট কাজটাকেও যে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরে অন্তর্ভুক্ত করে চেঁচিয়ে মরছে কারো মন সে খবরটাও তার পর্যন্ত পৌঁছায় নি। সবই রয়ে গেছে ওই পর্দাটুকুর আড়ালে। খুব গোপনে, এক টুকরো লাজুক হাসির অন্তরালে। ইশ! এতেই না কতো সুখ! বুকের কতো ধুকপুক! কতোই না অস্থিরতা মাখা ভয়!

#চলবে….

(চার্জ ছিলো না প্লাস কারেন্ট ছিলো না তাই লিখতে এবং পোষ্ট করতে দেরি হয়েছে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here