আত্মতৃপ্তি পর্ব ০১

0
3166

#আত্মতৃপ্তি

#লেখক_জীবন

#পর্ব ০১

ঢাকার এক জনপূর্ণ রাস্তা।
মামা আলু নিয়া যান..। মামা পিয়াজ কিন্তু একদম সস্তা লাগায়ে দিছি..। এই মামা আম লাগবে নাকি একদম পাকা আর মিষ্টি, আসল রাজশাহীর আম..। আপা মাছটা লইয়া যান, খাইয়া অনেক মজা পাবেন। মামা কই যাবেন?(রিকশা ওয়ালা)। এসব শব্দে নিবিরের কান একদম তালা লেগে গেছে। প্রায় আধ ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছে এই বাজারের সামনে। এই প্রথম নিবির ঢাকায় আসল। বন্ধু সুপ্তের বাসায় আসছে সে। ওওওওহহ… সুপ্ত এর নিজস্ব বাসা না। সে পুরান ঢাকায় ভাড়া থাকে। নিবির সেই বাসাতেই উঠবে। সবচেয়ে বড় কথা নিবির আর সুপ্ত খুব ভাল বন্ধু। সুপ্ত অনেক রিকুয়েষ্ট করার পর নিবির ঢাকাতে আসে। নিবির ঢাকার এই জ্যাম-জট আর হাকা-হাকির কারনে ঢাকা আসতে ইতস্তত বোধ করে। গ্রামের পাখির ডাক, বাতাসের কুলকুল শব্দ এক কথায় গ্রামের পরিবেশ নিবির কে মুগ্ধ করে। কিন্তু সুপ্ত এর অতি রিকুয়েষ্ট এর কারনে ঢাকা আসতে বাধ্য হয়। আসলে ওদের কারোরই বাবা-মা কেউ নেই অনেক আগেই মারা গেছে। তবে সুপ্ত এর বাবা-মা বেচেছিল, দু-বছর আগে মারা গেছে। তারপরই সে ঢাকায় চলে আসে। আর সুপ্ত যেই বাসায় থাকে সেই বাসায় মালিকের কোন ছেলে মেয়ে নেই। যার জন্য নিবির এর থাকার কথা শুনেও কোন প্রকার দেয় নি। বাড়িওয়ালা আরো খুশি হয় নিবির এর আসার কথা শুনে। নিবিরের সাথে এর আগে অনেক কথা হয়েছে বাড়িওয়ালার। লোকটা অনেক ভাল। আর আন্টি(বাড়িওয়ালার স্ত্রী) তো মাদারতেরেসা এর চেয়ে কোন অংশে কম না। নিরব রান্না করছে কিনা, খাইছে কিনা সব খবরই থাকে তার কাছে। ছেলের মত আচরন করে ওর সাথে।

যাহোক নিবিরের এখন যেন একেবারে দম বন্ধ হয়ে আসে, আশেপাশের শব্দ শুনে। অনেক্ষন ধরে সুপ্তকে ফোন দিচ্ছে কিন্তু ফোন আন রিচাবল দেখাচ্ছে। নিবির চোখ বন্ধ করে থাকে। একটু পর চোখ খুলে দেখে সুপ্ত তার একদম মুখের কাছে এসে তাকিয়ে আছে। নিবির ভয় পেয়ে লাফ দিয়ে উঠে বলে,” ভুত.. ভুত..!” বি
সুপ্তও ভয় পেয়ে পরে যায়। বলে উঠে, ” কই ভুত..কই..?” “আরে ধুর তোকে ভুত মনে করেছিলাম। আগে বল এতক্ষন কইছিলি। আধ ঘন্টা ধরে ফোনে তোর সাথে কনট্যাক্ট করার চেষ্টা করছি, কিন্তু কোন লাভই হচ্ছে। তোর আসার কথা ১০টায় আর এখন বাজে ১০ঃ৪৫। তোকে খুব খিস্তি দেওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে।” কথা গুলো বলতে বলতে বসে পরে নিবির। এ যেন এই মাত্র কোন যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে আসল, একদম হয়রান হয়ে যায়। সুপ্ত নিবিরের কাধে হাত রেখে বলে,” ভাই যা বলার বাসায় গিয়ে বলিস। এখন দয়া করে বাসায় চল আগে।”

বাসায় পৌছে দেখে বাড়িওয়ালা দু-জনেই বাগানে পানি দিচ্ছে। নিবির গিয়ে দুজনকেই সালাম করে। বাড়িওয়াল ওকে পা থেকে তুলে, বুকে তুলে নেয়। আর বলে,” তোমরা দু-জন তো আমার ছেলের মত। আর ছেলের জায়গা তো পায়ে হয় না। বুকে হয়। এই কথা শুনে নিবির এর চোখ দিয়ে পানি চলে আসে। বাড়িওয়ালার স্ত্রী তখন তার আচল দিয়ে নিবির এর চোখের পানি মুছে দেয়। আর বলে,”কাদো কেন বাবা.. আমাদের ছেলে নেই তো কি হয়েছে, তোমরা আছো তো। আগে শুধু সুপ্ত ছিল আর এখন তুমিও চলে এসেছো। আমরা সত্যি অনেক খুশি।” আন্টির কথা গুলো খুব ভাল লাগে নিবিরের। পরিচয় পর্ব শেষ হলে সুপ্ত আর নিবির রুমে চলে আসে। বাসাটা দোতলা। নিচের তলায় বাড়িওয়ালা থাকে আর উপরের তলায় সুপ্ত থাকে। আর এখন থেকে নিবিরও থাকবে। নিরব অনেক বলেছে বাড়িওয়ালাকে উপরের তলায় থাকতে কিন্তু তারা রাজি হয় না। বলে, তাদের নাকি উপরে উঠতে নামতে বিরক্ত লাগে। এজন্য তারা নিচের তলাকেই নিজেদের রাজপ্রাসাদ বানিয়ে নিয়েছে।

রুমে এসে নিবির বিছানায় শুয়ে পরে ঠাস করে। অনেক ধকল গেছে সারাদিন ওর উপর। অনেক রাস্তা জার্নি করে ঢাকায় আসছে। তার উপর রাস্তায় হকারদের বেশুরে ডাকা-ডাকি। সুপ্ত ব্যাগ গুলো রেখে দিয়ে নিবিরকে বলে,

– ভাই তুই রান্না করতে পারিস!

– হুম পারি কেন?

– তো একটু রান্না করে খাওয়া না এখন। ঘরে কিছুই নেই খাওয়ার মত।

– তুই আমার ব্যাগ গুলো দে আমায়। আমি আমার বাড়ি চলে যাই, এই চেয়ে আমি ওখানেই ভালছিলাম।

– আচ্ছা ঠিক আছে তোর যাওয়া লাগবে না। আমি দেখছি কি করা যায়।

এই বলে সুপ্ত বাইরে যেতে লাগে। যেই দড়জার কাছে যায়, তখনই দেখে আন্টি তাদের জন্য খাবার নিয়ে আসছে। খাবারের প্লেট গুলো দেখে সুপ্ত এর মুখ এক কাল জয়ী হাসিতে ভরে উঠে। সুপ্ত খাবারের প্লেট গুলো নিয়ে টেবিলে রেখে দেয়। আন্টিকে খুব কৃতজ্ঞতা জানায়। আন্টি চলে গেলে দড়জাটা বন্ধ করে একদৌড়ে খাবার টেবিলের কাছে চলে যায়। আর নিবিরকে বল,” বন্ধু, যদি কিছু খেতে চাস তাহলে তারতারি ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়।” নিবির অবাক হয়ে যায়। এই মাত্র রান্না করতে গেল। এতদ্র‍ুত রান্না করা শেষও হয়ে গেল। নিবির সুপ্তকে অধিক আগ্রহের সাথে জিজ্ঞেস করে কোথায় পেল খাবার। সুপ্ত আন্টির কথা বলে। সুপ্ত ভালভাবে কথাও বলতে পারছে না। তার মুখে একের পর এক খাবার তুলতেই থাকে।

নিবির ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নেয়। নিরবেরও খাওয়া শেষ। নিবির সুপ্তকে বলে,

– কিরে তুই অফিসে যাবি না?

– নাহ

– কেন?

– বস এর কাছে থেকে দু-দিনের ছুটি নিয়েছি তুই আসবি বলে।

– ওহহ। ভালই হয়েছে তাহলে। এই দু-দিনে আমার একটা চাকরি খুজে বের করতে হবে।

– চাকরির কথা মনে করে দিয়ে ভাল করেছিস। আচ্ছা তুই শুধু রিপোর্টার এর চাকরি করতে চাস কেন। তোর জন্য এত ভাল ভাল চাকরি দেখলাম। কিন্তু সেদিকে তোর কোন নিজরই পড়ল না।

– আসলে আমার রিপোর্টার এর চাকরি টা খুব ভাল লাগে।

ওরা দুজনের গল্পে মেতে উঠে। নিবির আর সুপ্তর বন্ধুত্তের বয়স বেশি হবে না। এই মাত্র ২-৩ বছর হবে খুব বেশি হলে। ওদের প্রথম পরিচয় হয় তাদের গ্রামের বাড়িতে। দু-জন পাশাপাশি দুই গ্রামে থাকত তারা। সুপ্ত এর বাবা মারা যাওয়ার দিন ওদের পরিচয় হয়। এর ১০ দিন পর সুপ্ত এর মাও মারা যায়। সুপ্ত একদম ভেঙে পরে তখন নিবির গিয়ে তার বন্ধুত্তের হাত বাড়িয়ে দেয়। তখন থেকেই তাদের বন্ধুত্ত গভির হতে থাকে। ওদিকে নিবিরের ছোট বেলায়ই ওর বাবা-মা মারা যায়। এজন্য হয়ত ওদের বন্ধুত্ত আরো মজবুত হয়ে যায়। দুজন দুজনকে অনেক ভালবাসে।

গল্প করতে করতে ওরা দুপুরের রান্না সেরে ফেলে। আজ অনেক রকমের রান্না করেছে দুজনে। ওরা গিয়ে তাদের বাড়িওয়ালাদের দুজনকে দুপুরে রাধতে না। কারন তারা একসাথে দুপুরে খাবার খাবে। রান্না শেষ হলে বাড়িওয়ালাদের ডাকতে যায় সুপ্ত। বাড়িওয়ালা প্রথম দিয়ে কে আসতে চায় না। যখন নিবির গিয়ে আরো জোরালো ভাবে রিকুয়েষ্ট করে তাদের, তারা স্বীকার না হয়ে আর পারে না। খাবার খেয়ে বাড়িওয়ালারা দুজন পুরো অবাক হয়ে যায়। ছেলেরাও এত ভাল রান্না করতে পারে! দুপুরের খাবার খাওয়া শেষ হলে বাড়িওয়ালারা চলে যায়। আর নিবিররা দুজন বিকেল হওয়ার অলেক্ষায় থাকে।

বিকেলে অনেক ঘোরাঘুরি করে দুজনে, আর নিবিরের একটা চাকরির খোজও করে। অনেক খোজাখুজির পরে “নিউজ বিডি” নামে এক নিউজ চ্যানেলে ইন্টারভিউ দেওয়ার সুযোগ পায়। চ্যানেলটি সুপরিচিত একটা টিভি চ্যানেল। আগামীকাল নিবিরের ইন্টারভিউ। নিবিরের খুব টেনশন হচ্ছে, কারন জব টা তার লাগবেই। নিবির আর সুপ্ত অনেক রাতে বাসায় ফেরে। রাতে তারা বাইরে থেকেই খেয়ে আসে যার জন্য বাসায় এসে তাদের আর খাওয়ার প্রয়োজন হয় না। আগামীকাল ইন্টারভিউ দেওয়ার ছোট-খাটো প্রস্তুতি নেয় নিবির। এই ধরেন ওর সব সার্টিফিকেট গুছিয়ে নেয়।

[ নোটঃ এখানে টিভি চ্যানেল এর নাম “নিউজ বিডি” ব্যবহার করেছি। কারন এতে করে যেন কোন প্রতিষ্ঠান প্রতিকুল পরিস্থিতিতে না পরে।]

[বিঃদ্রঃ গল্পটি কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান কে কেন্দ্র করে লেখা হয়নি। তাই কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে গল্পটি তুলনা করবেন না। আর কারো বাস্তব জীবনের সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নয়।]

পরবর্তী পর্বগুলো সবার আগে পেতে আমার অফিসিয়াল পেজটিতে লাইক দিয়ে সাথেই থাকবেন👇👇…..

https://www.facebook.com/জীবনের-গল্প-Zibons-Story-116756624349083/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here