আত্মতৃপ্তি পর্ব ০৬

0
399

#আত্মতৃপ্তি

#লেখক_জীবন

#পর্ব ০৬

নিবিরের খাওয়া শেষ হলে ইশতিয়াক তার পরিবারের সবাইকে বাসার ভিতর থাকতে বলে আর সে সুপ্ত কে নিয়ে বাসার সামনে বাগানে বসে। এরপর সুপ্তর কাছে থেকে সম্পুর্ন গল্প আবার শুরু থেকে শোনে। তখন ইশতিয়াক সুপ্তকে নিয়ে সেই রেস্টুরেন্টে যায়। আর সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এবং ওয়েটারদের নিবিরের ওয়াশ রুমের যাওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারে। শুধু একজন ওয়েটার বলে,” স্যার, আমি ওই স্যারকে[নিবিরকে] ওয়াশ রুমের ভিতরে যেতে দেখেছি এবং সে শুধু শার্ট পরিষ্কার করে চলে এসেছে। সে খুন করেনি। ” ইশতিয়াক তাকে আবার জোরালো ভাবে জিজ্ঞেস করে, ” আচ্ছা তুমি কিভাবে শিউর হলে?” ওয়েটার টা তখন বলে,” আমিও ওয়াশ রুমে গিয়েছিলাম। বেরোনোর সময় দেখি ওই স্যার[নিবির] শার্ট পরিষ্কার করছে। আর ওই ম্যাজিস্ট্রেট টা কার সাথে যেন জোরে জোরে কথা বলছে।” ইশতিয়াক আর সুপ্ত খুশিতে আত্বহারা হয়ে উঠে। ইশতিয়াক ওয়েটার টিকে আবার জিজ্ঞেস করে,” আচ্ছা তুমি কি কোর্টে এই কথা গুলো বলতে পারবে?” ওয়েটার টা তখন নিঃশন্দেহে উত্তর দেয়,” হ্যাঁ স্যার বলতে পারব। সত্য কথা বলতে কিসের ভয় এতে করে আরো একজন নির্দোষ বেচে যাবে। ইশতিয়াক তখন ওই ওয়েটার এর নাম, ফোন নম্বর সহ তার ইনফরমেশন নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসে।

ইশতিয়াক আর সুপ্ত রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসার পর অন্যান্য ওয়েটার গুলো ওই ওয়েটারকে[যেই ওয়েটার কোর্টে সাক্ষি দিতে রাজি হয়েছে] গালি দিয়ে বলে,” তুই সবসময় এত ফটর ফটর করিস কেন? চুপ থাকতে তোর ভাল লাগে না। এসব পুলিশ কেসের মধ্যে পরার দরকার কি?” ওয়েটার টা তখন বুক ফুলিয়ে উত্তর দেয়,” দরকার আছে যে স্যার টাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে, সে খুব ভাল মানুষ। সেদিন আমি যখন পার্কে গিয়েছিলা, গিয়ে দেখি সে কিছু স্কুলের ছেলেমেয়েকে পার্কে দেখে তাদের[ছেলেমেয়েদের] স্কুল ফাকি দিয়ে পার্কে আসতে বারন করেছে। এমন কি সেও পরে আর পার্কে যায় নি। তার কথা বার্তাও অনেক সুন্দর। আর আমার এই ছোট একটা উপকারে দ্বারা একজন ভালো মানুষ তার শাস্তি থেকে বেচে যাবে। এতে আমি অনেক খুশি।” অন্যান্য ওয়েটার গুলো তার কথা শুনে তাকে বলতে থাকে,” এরজন্য তোকে একদিন এর ফল ভোগ করতেই হবে।” কিন্তু ওয়েটার টা আর কিছু বলে না। তারপর সবাই সবার কাজ শুরু করে দেয়।

ইশতিয়াক আর সুপ্ত সোজা পুলিশ স্টেশন যায় নিনিরের সাথে দেখা করতে। পুলিশ স্টেশনে কেউ তাদের[সুপ্ত আর ইশতিয়াক কে] নিবিরের সাথে দেখা করতে দেয় না। এরমধ্যেই ইন্সপেক্টর মেয়েটা চলে আসে। ইন্সপেক্টর এর সাথে ইশতিয়াক এর আগে থেকেই একটু-আধটু সম্পর্ক ছিল। ইশতিয়াক সেই হিসেবে ইন্সপেক্টর কে খুব জোরালো ভাবে রিকুয়েষ্ট করে নিবিরের সাথে দেখা করার জন্য। ইন্সপেক্টর অনেক ভেবে চিন্তে তাদের[সুপ্ত আর ইশতিয়াক কে] নিবিরের সাথে মাত্র ৫ মিনিট কথা বলার সু্যোগ দেয়। ইশতিয়াক আর সুপ্ত ইন্সপেক্টর কে ধন্যবাদ জানিয়ে নিবিরের ইস্পেশাল ক্রিমিনাল সাইটে নিয়ে যায়। তাদেরকে একজন কন্সট্রেবল সেই সাইটে নিয়ে যায়। তারা পৌছে গেলে কন্সট্রেবল টি চলে যায় এবং সেখানে শুধু থাকে সুপ্ত, ইশতিয়াক আর নিবির। আর গেটে সামনে দাঁড়িয়ে থাকে কয়েটা কন্সট্রেবল। সুপ্ত আর ইশতিয়াক গিয়ে দেখে নিবির টেবিলে উপর শুয়ে আছে। সুপ্ত নিবির কে ডাকতে থাকে কয়েকবার ডাকার পরে নিবির শুনতে পায়। নিবির দোড়ে তাদের কাছে আসে। আর বলতে থাকে, ” আমাকে প্লিজ এখান থেকে বের করে নিয়ে চল।” সুপ্ত নিবিরের মাথায় হাত রেখে বলে,” তুই টেনশন করিশ না এইযে আমার বন্ধু ইশতিয়াক। একজন ভাল উকিল। ও বলছ, ও তোর কেস লড়বে আর তোকে এখান থেকে বের করে নিয়ে যাবে।[ইশতিয়াক এর দিকে ইশারা করে বলে]” ইশতিয়াকও তখন নিবিরকে বলে, ” হুম। আপনি টেনশন করবেন। আমি আমার পুরো চেষ্টা করব আপনাকে এখান থেকে বের করার।” ইশতিয়াক আরো কিছু নিবিরকে জিজ্ঞেস করে সেদিন রেস্টুরেন্টের ব্যাপারে। নিবির সব খুলে বলে ইশতিয়াক কে।

খানিক্ষনের মধ্যেই ইন্সপেক্টর চলে আসে। আর ইশতিয়াক কে বলে,” এবার আপনারা যেতে। , আপনাকে চেনার খাতিরে আপনাকে এত টুকু সময় দিতে পারছি। এর বেশি সময় নিলে আমার উপর চাপ পড়বে।” ইশতিয়াক আর সুপ্ত আর কিছু বলে না। তারা পুলিশ স্টেশন থেকে চলে আসে।

এরপর তারা ইশতিয়াক এর অফিসে চলে যায়। এরপর ইশতিয়াক তার কাজ শুরু করে দেয়। সে ভাল ভাবে কেস লড়ার জন্য প্রস্তুত হয়। সব কাগজ আর প্রমান ভাল ভাবে দেখতে থাকে। আর সুপ্ত চেয়ারব বসে তার[ইশতিয়াক ] কাজ গুলো দেখতে থাকে। ইশতিয়াক সব প্রমান গুছিয়ে গাছিয়ে সুন্দর করে একটা ফাইল তৈরি করে। ইশতিয়াক কাজ শেষ করে সুপ্ত কে বাসায় যেতে বলে। সুপ্ত তখন বলে উঠে,

– কেস লড়বি কবে?

– দেখ এটা বলতে কষ্ট হচ্ছে যে, আমরা তিন এর আগে কেস লড়তে পারব না। কারন এটা মার্ডার কেস। তারউপর পুলিশ নিবিরের উপর করা ভাবে কেস সাজিয়েছে। এর জন্য আরো মুশকিল
ভাবছি কেস এ জিততে পারব কি না।

– ইশতিয়াক ভাই তুই চেষ্টা কর, করলেই তুই পারবি। আর নিবিরকে যেভাবেই হোক ওখান থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসতে হবে।

– হুম আমি বুঝতে পারছি। এখানে আমি আইনের বাইরে কিছু করেতে পারব না। আর আইনের বাইরে কিছু করলে আমার চাকরি নিয়ে টানাটানি করতে হবে।

– না তোকে আইনের বাইরে কিছু করতে হবে না। তুইও আমার বন্ধু নিবিরও আমার বন্ধু, আমি চাই দুজনেরই ভাল হোক।

এই বলে সুপ্ত বাসায় চলে আসে। আর ইশতিয়াক তার কাজ করতে ব্যস্ত হয়ে পরে।

[পুলিশ স্টেশনে নিবিরের দৃশ্য]

সুপ্ত আর ইশতিয়াক চলে যাওয়ার পরপরই কন্সট্রেবল মেয়েটিকে[রেস্টুরেন্টের সেই মেয়ে] নিয়ে আসে। ইন্সপেক্টর মেয়েটা সেই মেয়েটাকে নিবিরকে দেখিয়ে বলে,” আপনি কি উনাকে চেনেন?” মেয়েটা নিবিরকে দেখে, তারপর বলে উঠে, ” না.! আমি ওকে চিনি না।” নিবির তখন দোড়ে তাদের কাছে আসে। আর বলে,” আমাকে চিনছেন না আমি সেই ছেলেটা, যার সাথে আপনি ‘ নিউজ বিডি’ টিভি চ্যানেল অফিসে ধাক্কা খেয়ে পরে গেছিলেন। আর সেদিন রেস্টুরেন্টে আমি যখন আপনাকে সরি বলতে গিয়েছিলাম, আপনি আমার উপর জস ছুরে মেরেছিলেন।” মেয়েটার তখন মনে পরে যায়, আর বলে,” তাহলে আপনিই সে বাদর, এখন আবার কোন মেয়েকে ডিসট্রাব করেছেন? হুম!” ইন্সপেক্টর বলে উঠে, ” কোন মেয়েকে ডিসট্রাব করে নি। তার উপর একটা মার্ডার কেস আছে। তাও আবার একজন ম্যাজিস্ট্রেট কে!” মেয়েটা শুনে লাফ দিয়ে উঠে আর বলে,” তাহলে আমাকে এখানে ডেকে এনেছেন কেন? আবার আমাকে মার্ডার করানোর জন্য!” ইন্সপেক্টর বলে,” ব্যাপার টা সেরকম না। আসলে আপনাকে এখানে ডেকে আনা হয়েছে এই কারনে যে আপনি উনাকে ঠিক কতটুকু চেনেন?” মেয়েটি বলে,” কত টুকু তা তো সে বলেই দিয়েছে। এখন কি আমি যেতে পারি। আমাকে অফিসে যেতে হবে। আমার নিজেরও আজ আছে।” ইন্সপেক্টর মেয়েটিকে আবার পৌছে দেওয়ার জন্য আরেকজন কন্সট্রেবল কে পাঠায়।

দিকে নিবিরকে আরেকটা রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। নিবির যেতে চায় না কিন্তু তাকে টেনেহিছরে নিয়ে যায়। নিবিরকে নিয়ে ওর সব কাপড় খুলে ওকে একটা বড় বরফের খন্ডের উপর রাখা হয়। বরফের খন্ডটা দেখতে ছোট-খাটো একটা চৌকির মত। তারপর ওকে উপুর করে শুয়ে ওর দু হাত আর দু পা বেধে দেয়। এরপর কয়েকজন কন্সট্রেবল মোটা লাঠি নিয়ে এসে নিবিরের পিঠে আঘাত করতে থাকে। নিবির পাগলের মত চিৎকার করতে বলতে থাকে,” আমি খুন করি নি।” কিন্তু কেউ তার কথার কোন জবাব দেয় না। কন্সট্রেবল গুলো নিবিরকে মারতে থাকে। একটু পর ইন্সপেক্টর এসে, সেও মারতে থাকে। নিবিরের পিঠ মনে হচ্ছে ভেঙে চুরে খামচুর হয়ে যাচ্ছে। তার পিঠে লাঠির মোটা মোটা দাগ পরে গেছে। একটু পর ইন্সপেক্টর সবাইকে থামতে বলে। আর নিবিরকে জিজ্ঞেস করে,” এখন বল খুব করেছিস কেন?” নিবিরের মাথায় এবার রাগ উঠে যায় আর সে বলে উঠে, ” আমি কতবার বলছি আমি খুন করি নি। আপনারা শুধু একই প্রশ্ন বার বার করে যাচ্ছে।”

ইন্সপেক্টর আবার কন্সট্রেবলদের মারার আদেশ দেয়। আর কন্সট্রেবল তাকে আবার মারতে শুরু। একদিকে পেটের নিচে যেরকম ঠান্ডা বরফ এর খন্ড অন্যদিকে কন্সট্রেবল গুলো পিঠে একের পর এক লাঠি ভেঙেই চলছে। নিবিরের মনে হচ্ছে সে একবার জমের দড়জার গিয়ে করা লাড়ছে, আবার সেখান থেকে ফিরে আসছে। জায়গায় জায়গায় কালো আর লাল যখম এ ভরপুর নিবিরে পিঠে। নিবির আর কষ্ট সহ্য করতে পারছে না। তার ইচ্ছে করছে সুইসাইড করতে কিন্তু সে সুযোগও নেই। নিবিরের শরির রক্তাক্ত হয়ে যায়। তার সারা শরির শুধু ক্ষতবিক্ষত। এরপর নিবিরকে জল ছিটিয়ে তাকে ধুয়ে আবার তাকে আবার ইস্পেশাল ক্রিমিনাল সাইটে নিয়ে আসে। আর ইন্সপেক্টর মেয়েটা তাকে বার বারও জিজ্ঞেস করতে থাকে, ” এখন বল, কেন খন করিছিস? নইলে কাল থেকে তোর কিয়ামত ঘটিয়ে দিব।” নিবিরের এবার রাগ হয়ে যায়। সে চিৎকার করে বলে, ” কতবার বলব! আমি খুন করি নি! আমি খুন করি নি!” ইন্সপেক্টর কিছু বলে না। সারাদিন তার উপর বিভিন্ন পুলিশ অফিসার তাকে ভিন্ন রকমের প্রশ্ন করতে থাকে। প্রশ্ন গুলো শুনে নিবিরের রাগ আরো বেড়ে যায়। আর সারাদিন নিবিরের উপর চলে কঠোর অত্যাচার।

চলবে…

[বিঃদ্রঃ গল্পটি কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান কে কেন্দ্র করে লেখা হয়নি। তাই কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে গল্পটি তুলনা করবেন না। আর কারো বাস্তব জীবনের সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নয়।]

পরবর্তী পর্বগুলো সবার আগে পেতে আমার অফিসিয়াল পেজটিতে লাইক দিয়ে সাথেই থাকবেন👇👇…..

https://www.facebook.com/জীবনের-গল্প-Zibons-Story-116756624349083/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here