স্যার i love you পর্ব-১১

0
3179

#স্যার_I_Love_You
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
#পর্ব_১১
__________
আব্রু, মিম, মুন্নী, শ্রাবন, নাঈম, রুবেল।
ওরা যার যার গার্লফ্রেন্ড এর হাত ধরে সোজা হাঁটছে অন্য দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তাদের পেছনে আমরা আছি নাকি নেই একবারের জন্যও তাকাচ্ছে না।

ইতির তো ওদের এইভাবে দেখতে প্রচুর রাগ হচ্ছে স্যারের উপর। নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটছে উপরে আর তাকাবে না ভাবছে তাকালেই ওদের তিন জোড়া শালিক পাখি দেখতে হবে।

ইতি– আনরোমান্টিক গরু মহিষ কুত্তা ছাগল মিনিমাম কমন সেন্স টুকু নাই, ওরা সবাই হাত ধরে হাঁটছে আমারও তো ইচ্ছে করছে নাকি গরু একটা বুঝেও বুঝে না নাকি সত্যিই বুঝে না। আনরোমান্টিক পুরাই আনরোমান্টিক কি সুন্দর পরিবেশ কি সুন্দর হাতে হাত রেখে পায়ের সাথে পা মিলিয়ে হাঁটবো কিন্তু না স্যার না যেনো ছাগল। যা করার আমাকেই করতে হবে।
হুম আমি গিয়ে ধরবো নাকি উনার হাত, কিন্তু যদি কিছু বলে তাহলে তো পাবলিক প্লেসে মান সম্মান যাইবো।
কিন্তু আমার ফ্রেন্ডের সামনে কিছু বলতে পারবে না।

ইতি ধীর পায়ে হাঁটছে আর নিজে নিজেই বিড়বিড় করছে। এটাই ঠিক হবে আমি নিজেই গিয়ে ধরি।
বলে মাথা তুলে পাশে তাকাতেই দেখলো ওর পাশে স্যার নেই।

ইতি– আরে স্যার গেলো কোই আমাকে একা রেখে চলে যায়নি তো! খুঁজতে খুঁজতে ইতির চোখ গেলো সোজা রাস্তার দিকে একা একা হাঁটতে হাঁটতে বেশ অনেকখানি চলে গেছে স্যার!

ইতি– অসভ্য লোক ফাজিল লোক আমাকে রেখে একা একা চলে যাচ্ছে।

বলে শাড়ির কুঁচি গুলো দুইহাত দিয়ে ধরে হাঁটু সমান উপরে তুলে দিলো দৌঁড়।
স্যার নিজের মতো করে হাঁটছে ওনার মনেই নেই ওনার পাশে ইতি ছিলো সবসময় একা একা চলাচল করে তাই। ইতি দৌঁড়াচ্ছে আর স্যার বলে চিল্লাচ্ছে!

স্যার– মনে হচ্ছে কেউ আমাকে ডাকছে?

বলে পেছনে ঘুরতেই ওনার পেছনে ইতি নেই। ইতি গেলো কোই? বলেই সামনে চোখ পড়লো ইতির দৌঁড়ানোর দৃশ্যের উপর।
মনে হচ্ছে কোনো মুভির সিন সুট হচ্ছে আর হিরোইন শাড়ি দুই হাত দিয়ে ধরে দৌঁড়াচ্ছে।
স্যারের চোখ আটকে গেলো ইতির উপর মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইতির দিকে।
কি সুন্দর লাগছে ইতিকে ওই যে শাড়ি পরেছে স্যার শুু একবার দেখে ছিল ওনাকে পিক করার সময় গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ইতি তখন একবার তাকিয়ে সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিয়ে ছিল!
ইতির দিকে আজ পর্যন্ত স্যার এই ভাবে তাকায়নি যেভাবে এখন তাকিয়ে আছে, ইতি কেনো অন্য কোনো মেয়ের দিয়ে তাকায়নি আজই প্রথম আর সেটাও আবার ইতি।
ইতিকে দেখতে একদম একটা কিউটের ডিব্বা পুতুলের মতো লাগছে।

(আমি আবার এখন পর্যন্ত পরী টরী দেখি নাই তাই জানি না তারা দেখতে কেমন, পুতুল দেখছি তাই পুতুলের মতোই বললাম)

স্যারের দৃষ্টি এখনো ইতির উপরেই আটকে আছে, ইতির দৌঁড়ো এসে স্যার সামনে দুই হাঁটু চেপে ধরে হাঁপাচ্ছি।
একটু সোজা হয়ে দাড়িয়ে আপনার মাথায় কি কিছুই নেই সেই কখন থেকে ডাকছি হেঁটেই যাচ্ছেন আশে পাশে আমি আছি কি না নাই দেখার প্রয়োজন ও মনে করেন নাই যদি হারাই যাইতাম? আজব চুপ করে আছেন কেন স্যার ও স্যার?
স্যার যেনো হারিয়ে গেছে অজানায় ইতির এত কথা স্যার শুনতেই পাচ্ছে না, দুই চোখ দিয়ে তাকিয়ে আছে ভালোবাসার দৃষ্টিতে ইতির মুখের দিকে এত দূর দৌঁড়ে আসাতে ইতির কপালে নাকে ঘাম জমেছে,
তাতে ইতিকে আর সুন্দর লাগছে।
ইতি স্যারকে ডেকেই যাচ্ছে এতবার ডাকার পরও সাড়াশব্দ না পেয়ে স্যারের হাত ধরে নাড়া দিয়ে স্যার বলে ডাকলো স্যার একটু নড়েচড়ে উঠে।

স্যার– হুম হুম কি হইছে?
ইতি– কি হইছে মানে আমি যে আপনাকে এতক্ষণ ধরে এতকিছু বললাম আপনি কিছুই শুনতো পাননি?
স্যার– কি বলছো? (প্রশ্নবোধক চিহ্ন)
তারপর পরেই কিছু একটা ভেবে বললো হ্যাঁ হ্যাঁ শুনতে পেয়েছি!
ইতি– সত্যি?
স্যার– হুম হুম চলো এখন ওরা অনেকদূর চলে গেছে!
ইতি– জি চলুন!
স্যার– হু চলো! এই দাঁড়াও দাঁড়াও! তুমি আমার হাত ধরেছো কেনো? ছাড়ো আমার হাত!
ইতি– ধরেছিই যখন আর ছাড়ছি না!
স্যার– হাত ছাড়ো বলছি ইতি! রাস্তার মাঝখানে সিন ক্রিয়েট করো না!
ইতি– স্যার প্লিজ এমন করছেন কেনো হাত টাই তো ধরেছি!
স্যার– না তুমি আমার হাত ধরবা কেন আজব!
ইতি– আশ্চর্য আজবের কি আছে ওরাও তো ধরেছে।।
স্যার– ওরা গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড ইতি আর আমি তোমার স্যার হাত ছাড়ো।

হাত ইতিকে একটা ধমন দিয়ে নিজের বল শক্তি প্রয়োগ করে নিজের হাত ইতির হাতের মধ্য থেকে ছাড়িয়ে নিলো!
স্যার– কথায় কথায় গায়ে হাত দিবা না আর আমাকে তো টাচ করবেই না!

ইতি আর কিছু বলছে না নিচের দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে খাম্বার মতো সোজা হয়ে। ইতি না চাইতেও ইতির চোখ থেকে একফোঁটা জল বেয়ে পরলো! স্যার সেটা লক্ষ্য করলেও ইতিকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই! পাশ থেকে গ্রামের ৩/৪ জন লোক এসে দাঁড়িয়ে নানান প্রশ্ন করতে শুরু করলো!

প্রথম ব্যক্তি– কি হচ্ছে কি এখানে আর তোমরাই বা কারা এ গ্রামে তো আগে দেখি নাই!

দ্বিতীয় ব্যক্তি– দেখেতো মনে হচ্ছে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসছে, আর মেয়েটা কাঁদছে কেন এই মেয়ে এদিকে তাকাও। (ইতির দিকে হাত বাড়িয়ে)
স্যার সাথে সাথেই লোকটির হাত খোপ করে ধরে ফেলে রাগী গলায় বলল,
স্যার– একদম গায়ে হাত দেবেন না!
এতক্ষণ শান্ত থাকলেও এখন অনেক রেগে গেছে লোকটার সাহস কি করে হয় ইতিকে স্পর্শ করার কথা চিন্তা ভাবনা করার।

তৃতীয় ব্যক্তি– দেখো দেখো সাহসের কি দেখছো ছেড়া এক তো পলাইয়া আসছো আর এখন বড় বড় কথা বলতাছো, রাস্তার মধ্যে ফালাইয়া ধোলাই দিলে বুঝবা কত সাহস!

স্যার– আরে আপনাদের সমস্যা কি জানেন না বুঝেন না এসেই উল্টা পাল্টা কথা বলছেন!

চতুর্থ ব্যক্তি– দেহো দেহো চোরের মায়ের বড় গলা তোর বেডারে। (মারার প্রস্ততি নিয়ে)

স্যার ধমক দিয়ে কি বললেন আপনাদের সাহস কি করে হয় আমার মাকে নিয়ে বাজে কথা বলার!

ইতি আর চুপ করে থাকতে পারল না এখন কারণ এখন পরিস্থিতি কিছু টা ভিন্ন হয়ে গেছে এখন চুপ থাকলে মারামারি হতে পারে আর স্যারও বেশ রেগে গেছে!

ইতি লোকগুলোর দিকে ঘুরে দাঁড়ালো চোখের জল মুছে বলতে লাগলো!
ইতি– দেখুন আমরা এখানে ঘুরতে আসছি আপনারা ভুল বুজছেন আমাদের সাথে আরও মানুষ আছে ওই যে যাচ্ছে ওরা পেছনে তাকিয়ে।

প্রথম ব্যক্তি– কারা যাচ্ছে ওদিকে তো কেও নাই।

ইতি– স্যার ওরা সব গেলো কোই কই?

স্যার ইতির কথা শুনে পেছনে তাকালো দেখে তিন জোড়া শালিক পাখি উধাও।

তৃতীয় ব্যক্তি– আমাদের থেকে বাঁচার জন্য মিথ্যাে বলছে!

ইতি– না আমি মিথ্যে বলছি না! স্যার পেছনের দিকেই ঘুরে আছে আর রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে!

চতুর্থ ব্যক্তি– দুই টাকে ধইরা নিয়া চল বিয়া পরাই দেই।
ইতি– আহহ কি সুন্দর কথা আমিও তো এটাই চাই
কিন্তু এইভাবে না একটুও না। (মনে মনে)

ইতি– দেখুন আপনার ভুল করছেন!

দ্বিতীয় ব্যক্তি– মেয়েকে ছাড় পোলা ডারে ধর। (পরনে লুঙ্গি কাছা দিতে দিতে বলল)

ইতি– একদম না আপনারা উনাকে কিচ্ছু করবেন না আপনারা জানেন না আমি কার মেয়ে ভালো হবে না কিন্তু।

দ্বিতীয় ব্যক্তি– কিহহহ আমাদের ভয় দেখাইতাছে এই মাইয়া। আমাদের গ্রামে আইসা আমাদের কেই ভয় দেহায়।

ইতি– আপনার গ্রাম মানে কি গ্রামে আপনারা থাকেন পুরো গ্রাম টা তো আর আপনি কিনে রাখেননি।

দ্বিতীয় ব্যক্তি– কি কি কইলি মাইয়া! ( বলেই ইতিকে ধাক্কা নিয়ে রাস্তায় ফেলে দিলো)

ইতি– আহহহহহহহহহহ!

ইতির চিৎকার শুনে স্যার তাকালো আর দেখলো ইতি নিচে পরে আছে মানে ওকে ধাক্কা দিছে!

স্যার– ওর গায়ে হত কে দিছে। (রাগে চোখ লাল হয়ে গেছে এখনি বম ব্লাস্ট হবে)

স্যারের চোখ মুখ দেখে পেছন থেকে চতুর্থ আর তৃতীয় ব্যক্তি কেটে পরলো!

দ্বিতীয় ব্যক্তি– আমি দিছি ধাক্কা কি করবি তুই ওরে তো খালি খালি ধাক্কা দিছি তোরে তো
আর বলার আগেই খাইলো সোজা নাকের উপর!
স্যার– দ্বিতীয় ব্যক্তিকে পাঞ্চ মারলো নাক বেয়ে রক্ত বের হচ্ছে, তোর সাহস হয় কি রে ইতিকে টাচ করার ওকে ধাক্কা মারার ওকে হার্ট করার জন্য তোকে আজ আমি কি যে করবো আজ পর্যন্ত আমি ওকে একটা ধমক ও দেইনি আর তুই বলেই ইচ্ছা মতো পিটাইতাছে প্রথম ব্যক্তি ধরতে আসলে তাকেও দিছে কয়েকটা
ইতি তো অবাক এত শান্ত প্রকৃতির ছেলে স্যার আর এই স্যার কে তো ও চিনেই না।

ইতি– কি মিথ্যা কথা! কখনো বলে ধমক ও দেয় নাই একটু আগে ধমক দিলো কে? (মুখ ভেংচি দিয়ে)
স্যারের কথার গভীর মানে ইতি বুঝতে পারলো না!

ওইদিকে রাস্তার পাশেই কিছুটা দূরে ধান ক্ষেত আর সেখানে কিছু কৃষক কাজ করছে সেখানে গিয়ে চতুর্থ আর তৃতীয় ব্যক্তি কিছু একটা বললে কিছু মানুষ তারাতাড়ি ওদের সাথেই দৌড়াতে দৌড়াতে এদিকেই আসছে আর স্যার তো মারছেই আধা মরা করে ফেলছে।
ইতি দেখতে পেলো মানুষ ওদের দিকেই আসছে এখানে থাকা আর সেভ নয়, তারাতাড়ি করে উঠে স্যারের হাত ধরে টানতে থাকে কিন্তু হাতি তো হাতিই
হাতির শক্তির সামনে আমাদের ইতি তুচ্ছ
ইতি– স্যার থামুন লোকটা মরে যাবে তো!
স্যার ওদিকে দেখুন কত মানুষ আসছে চলুন পালাই!
স্যার ইতির কথায় সামনে তাকিয়ে দেখলো প্রায় ৭/৮ জন!
তারাতাড়ি উঠে দাঁড়িয়ে পরলো একা থাকলে হয়তো ভাবতো না কিন্তু ওর সাথে ইতি আছে আর ওই লোক গুলো ওর কিছু করতে না পারলেও ইতিকে নিয়ে রিস্ক নিতে চায় না।
সামনে আসতে তাকা লোক গুলোর দিকে তাকালো একবার নিচে মাটিতে পরা লোকটার দিকে তাকলো..
কিছু একটা ভেবে ইতির হাত শক্ত করে মুঠি বন্ধ করে নিয়ে উল্টো দিকে দিলো দৌঁড়!
ইতি হাত ধরায় অবাক হয়েছে কিছুক্ষণ আগে এই হাত ধরা নিয়েই কত কিছু হল আর এখন উনি নিজেই ধরছে!
স্যার যে দৌঁড় দিবে ইতি ভাবতেই পারেনি!
শাড়ি পরা ছিলো হঠাৎ দোঁড় দেওয়ার জন্য পরে যেতে নিলে স্যার ধরে ফেলে।
ইতি এক হাত তো স্যার ধরেই রাখছে আরেক হাত দিয়ে শাড়ি ধরে দু’জনেই দিলো দৌঁড়।
পেছনের লোক গুলো ওদের দৌড়াতে দেখে নিজেরাও দৌড় দিলো কিন্তু মাটিতে পড়ে থাকা মানুষ গুলোকে দেখে তাদের আর পিছু না নিয়ে ওদেরকে নিয়ে হাসপাতালে চলে যায়। পরে সব কিছু জিজ্ঞেস করাতে প্রথম তৃতীয় চতুর্থ ব্যক্তি সব খুলে বলে আর দোষ দ্বিতীয় ব্যক্তিরই ছিলো। লোকটা এমনই এর আগেও গ্রামেরই মানুষের সাথে এমন অনেকবার করেছে তাই আর ইতিদের খুঁজতে লোক ওদের পিছু করেনি!

স্যার আর ইতি এখনো হাত ধরে দৌড়াচ্ছে দেখে এবার সত্যি সত্যি মনে হচ্ছে ওরা বাড়ি থেকে পালিয়েছে!

দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে দু’জনেই হাঁপিয়ে গেছে
রাস্তার পাশে দুজনেই দাঁড়িয়ে পরছে দুজনেই হাঁপাচ্ছে। কোথায় এসে পৌঁছিয়েছে নিজেরাও জানে না!

ইতি– পানি।
স্যার– এখানে পানি কোথায় পাবো?

বলে সামনে তাকাতেই দেখতে পেলো সামনে মাঠে খুব বড় জমজমাট একটা মেলা বসেছে আর অনেক মানুষ মেলার মধ্যে তো নিমিষেই পানি পেয়ে যাবে! ইতি পেছনে তাকিয়ে দেখে ওদের পেছনে কেউ নেই!

ইতি– স্যার ওরা আমাদের পিছু পিছু কেনো এলো না?
স্যার– তো তুমি কি চাচ্ছিলে ওরা আমাদের পিছনে পিছনে আসুক?
ইতি– হ্যাঁ! ফিল্মে তো তাই হয়।
স্যার– এখানে কি কোনো ফিল্ম চলতেছে না-কি গাধা!
ইতি- স্যার?
স্যার– চুপ!
ইতি– কিন্তু স্যার?
স্যার– একদম চুপ! (ধমক দিয়ে)
আমি- কিন্তু আমি গাধা নই। আপনি গাধা।
স্যার- কি বললে?
আমি- কোই কি বললাম?
স্যার– ওই তো মেলা হচ্ছে চলো ভেতরে যাই পানি পেয়ে যাবো!
ইতি– ওয়াও এই প্রথম মেলায় আসলাম আব্বু তো কোথাও যেতেই দেয় না কি সুন্দর!

#চলবে?

[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here