#বাঁধিব_হৃদয়ে_তোমায়
#পর্ব_২১ ( অন্তিম পর্ব )
#সুমাইয়া মনি
ঘরোয়া ভাবে বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ হবে। আবির ওর আম্মু’কে মানিয়ে নিয়েছে। আফিনের কোনো সমস্যা নেই। রাতে বিয়ে। হঠাৎ এভাবে বিয়ে হবে কে-ই বা জানতো! আইরিম বেগম হাতেগোনা ক’জন আত্মীয়দের নিমন্ত্রণ জানিয়েছে। সামিম, মারুফ ঘরের সাজসজ্জায় ব্যস্ত। মোহনা এসেছে। আফিন প্রিন্সিপাল ও সুমনা মেডাম’কে নিমন্ত্রণ করেছে। সুমনা আসার সময় সিমা’কে সঙ্গে নিয়ে এসেছে। আফিন সিমা’কে দেখে কোনো রিয়াকশন করে না। বিয়ের তোড়জোড় করতে করতে সন্ধ্যা গড়িয়ে আসে।
বিভা’কে সাজানো শেষ। অতি সিম্পল একটি লেহেঙ্গা পড়েছে। ভারী লেহেঙ্গা কিনতে নিষেধ করেছিল আবির’কে। মার্কেটে গিয়ে ভিডিও কলে নিজেই লেহেঙ্গা চয়েস করেছে।আজ তার জীবনের প্রথম অধ্যায় শুরু হবে। সঙ্গে বাকি কাজ গুলোর সমাধান করবে। গেস্ট সকলে উপস্থিত আছে। সামিমের চারজন কাজিন এসেছে। ইতিমধ্যে কাজি সাহেব সেখানে উপস্থিত হয়েছে। মেহমানদের খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ। বিভা’কে হল রুমে নিয়ে আসা হয়। আত্মীয়দের সঙ্গে সময় কাঁটাতে কাঁটাতে রাত নয়টা বেজে যায়। বিয়ের কাজ শুরু করা হয়। আবির আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে তিনবার কবুল বলে সাইন করে দেয়।
বিভাও কবুল বলে সাইন করে। সাক্ষী হিসাবে দু’জনার পক্ষ থেকে মারুফ, সামিম, আফিন দের সাইন করতে হবে। তারা দু’জন সাইন করে ঠিকিই। কাজী যখন আফিনের নাম জিজ্ঞেস করে, তখন আফিন তার নাম উচ্চারণ করার পূর্বেই বিভা বলে উঠে,
‘মাহাথির মুনির।’
নামটি শুনে সকলে বিভার পানে তাকায়। আফিনের ভ্রু সরু হয়ে আসে। বিভা সকলের চাহনি দেখে স্বাভাবিক ভাবে বলল,
‘এমন করে তাকিয়ে আছেন কেন আপনারা। আফিন ভাইয়ার আসল নামই তো বলেছি।’
‘ফাজলামো বন্ধ করো বিভা। এটা ভাইয়ার নাম না।’ আবির কিঞ্চিৎ রাগ নিয়ে বলল।
উপস্থিত সকলে একবার আফিনের দিকে তাকায় তো একবার বিভার দিকে। কনফিউজড হয়ে আছে সবাই।
‘এটাই আফিন ভাইয়ার আসল নাম। জিজ্ঞেস করো ভাইয়া’কে।’
‘কি বলছো এসব। থামো বলছি।’ আবির ক্ষুব্ধ স্বরে বলল। বিভা উঠে দাঁড়ায়। আফিনের দিকে আঙুল তাক করে বলল,
‘কিছু বলছেন না কেন মাহাথির ভাইয়া। নিজের আসল নামটি সকলকে বলুন?’
আফিনের আদলে জড়ো হয় এক রাশ রাগের আভা। দাঁতে দাঁত চেপে এক হাত মুঠোবন্দী করে রাখে। আবির সহ বাকিরাও উঠে দাঁড়ায়। কেউ বুঝতে পারছে না বিভা কি বলতে চাইছে। ওদের দিকে দ্বিধান্বিত নজরে তাকিয়ে আছে সকলে। আবির বিভা’কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে তেজী কণ্ঠে বলল,
‘এখন কিন্তু বেশি হচ্ছে বিভা।’
‘মোটেও বেশি হচ্ছে না। তাকেই নিজের মুখে বলতে বলুন না সত্যিটা।’
আবির আফিনের দিকে তাকায়। শান্ত, গম্ভীর নজর আফিনের। না কিছু বলতে পারছে, না আবির কিছু জিজ্ঞেস করছে তাকে। বিভা হেঁটে আফিনের নিকট এসে তাচ্ছিল্য করে বলল,
‘আপনি ধরা পড়ে গেছেন মাহাথির ভাইয়া। এবার সকলকে নিজের আসল পরিচয় দেন। বলুন নিজেক কুকর্মের কথা।’
‘বিভা!’ চিল্লিয়ে উঠে আবির।
‘চুপ!’ চেঁচিয়ে মুখে আঙুল রেখে বলল বিভা।
পুরো হল রুম নিস্তব্ধ! বিন্দুমাত্র আওয়াজ নেই। বিভা আঙুলের ইশারা করে কাঠ কাঠ কণ্ঠে বলে,
‘আজ আমি বলব, সবাই দেখবে, শুনবে একজন সৎ মানুষের আড়ালে লুকানো কুকর্মের কথা।’ আফিনের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
‘আপনার সময় শেষ মাহাথির মুনির।’ আফিন ক্রুদ্ধ চোখে বিভার দিকে তাকায়। রাগে মাথার রগ দপদপ করছে। বিভা এক কদম এগোতেই সামিমের কাজিন নামে পরিচিত চারজন লোক কয়েকটি কাগজ বিভার হাতে তুলে দেয়।
বিভা কাগজ গুলো খুলে দেখতে দেখতে বলল,
‘দশ বছর আগে শিলন নামের গার্মেন্টসটি কিনে মাহাথির নাম দিয়েছিলেন। গার্মেন্টসটি কাপড় তৈরীর জন্য হলেও সেটা অবৈধ ব্যবসা চালাতেন। তিনি কি করতেন জানেন? গার্মেন্টসের নিরীহ কর্মচারীদের অসুস্থতার বাহানা দিয়ে কিডনি বের করে নিতেন। তারপর সেই কিডনি গুলো বাহিরের দেশ গুলোতে বিক্রি করে দিতেন। তারা শুধু মেয়েদেরই বেশি টার্গেট করতেন। এমন অনেক কর্মচারী আছেন, যারা একটি মাত্র কিডনি নিয়ে বেঁচে আছে। অথচ তারা জানেনও না এটা। ওনি হলো সেই গার্মেন্টসে মালিক মাহাথির মুনির। এ বাড়ির বড়ো ছেলে আফিন নামে পরিচিত।’ লাস্টের কথা টুকু চিল্লিয়ে বলল বিভা।
সকলে বাকরূদ্ধ। হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে আছে। আবির বিশ্বাস করে না। তার ফেরেস্তার মতো ভাইয়ের এমন কুকর্ম, সে মেনে নিতে পারছে না। মনে পড়ে তার ভাইয়ের সঙ্গে কাটান অতীত। খুনসুটি গুলো। বিশ্বাস করতে তার বড্ড কষ্ট হচ্ছে। সব কিছু কেমন ঘোলাটে অবিশ্বাস্য বলে মনে হচ্ছে। প্রায় সময় আফিন না বলে কোথায় চলে যেত। মাঝেমধ্যে ফোনও বন্ধ রাখতো। তবে কী এটাই ছিল ফোন বন্ধের কারণ? ভাবতে পারছে না সে। মাথাটা ভার অনুভব হচ্ছে। প্রিন্সিপাল স্যার ও সিমার মুখ ঘৃণায় থমথমে হয়ে আছে।
বিভা কিছু কাগজ আবিরের পায়ের কাছে ছুঁড়ে দিয়ে বলল,
‘এই তার প্রমাণ। তিন বছর লেগেছে আসল রহস্য উদঘাটন করতে।’
‘তুমি সি..’ বাকিটুকু আবিরকে বলতে না দিয়ে বিভা বলে উঠে।
‘হ্যাঁ! আমি একজন সি,আই,ডি কর্মকর্তা। আমার সহপাঠী সুমনা। যাকে আমি টিচার বানিয়ে পাঠিয়েছিলাম সেই কলেজে। সমাজে নিজেকে সৎ, মার্জিত দেখান তিনি। সামাজিকতা পালন করেন। অথচ, তিনি একজন জঘন্যতম খুনি। আমার ববি আপুকে খুন করেছেন তিনি। শুধু আমার আপুকেই নই, নিজের বাবারও খুনি।’
আবির অনুভব করছে সে শূন্যে ভাসছে। পায়ের তলায় মাটির অংশ ফাঁকা ফাঁকা অনুভব হচ্ছে। বিভার প্রতিটা কথা বুকে আঘাত এনেছে। আইরিন বেগম রীতিমতো কাঁদতে আরম্ভ করেছে। বিভা তার কাছে এসে হাত ধরে টেনে আফিনের সামনে এনে দাঁড় করায়। বলল,
‘এনারা আপনার আপন মা, ভাই না। আপনি এতদিন ভুল জেনেছেন। এরা শুধু আপনার উপর এতদিন দয়া করেছেন দয়া। আপনাকে জন্ম দেওয়ার সময়ই আপনার মা মারা যান। তারপর তাকে বিয়ে করে এ বাড়িতে আনে। তখন তার ছেলের বয়স ছিল তিন বছর। আপনাকে অবহেলায়, অযত্নে বড়ো করেছেন ওনি। আর যাকে আপন ভাই ফেরেস্তা ভাবছেন তিনি আপনাকে সহ্য করতে পারত না।’ বিভা আইরিন বেগমের দিকে তাকায়। বলে,
‘এসব কীভাবে জানলাম জানেন? জরিনাকে তো চিনেন। এ বাড়িতে কাজ করতো।’ আইরিন বেগম ভয়তে শক্ত হয়ে যায়। বুঝতে পারে জরিনার মাধ্যমেই এসব জানতে পেরেছে বিভা।
‘এবার বলুন বাকি গুলো।’ কাঠিন্য কণ্ঠে বলল বিভা।
আইরিন বেগম কান্না থামিয়ে চেহারায় রাগের রেশ ফুটিয়ে বললেন,
‘আবির আমার আপন ছেলে না। মাহাথিরই আমার একমাত্র ছেলে। আমি ওঁকে কখনোই নিজের আপন ছেলে হিসাবে দেখি নি। কক্ষণো না!’
আবিরের চোখ ছলছল করছে। মায়া ভরা কণ্ঠে বলল,
‘আম্মু…’
‘আমি তোর আম্মু নই। জন্মের সময় তুই তোর নিজের মা’কে খেয়েছিস। যখন তোর তিন বছর হলো। তখনই তোর বাবা সব সম্পত্তি তোর নামে করে দিলো। আমরা কি পেলাম? কিচ্ছু না। ভাস্যমান হয়ে রয়ে গেলাম এ বাড়িতে। নিজের গহনা বিক্রি করে, টাকা পয়সা হাতিয়ে মাহাথির’কে আমি ঐ গার্মেন্টসটি কিনতে সাহায্য করেছি। তিন বছরের মাথায় যখন তোর বাবা আমাদের গোপন রহস্যের কথা জানতে পারলো। মাহাথির’কে নির্দেশ দেই তাকে মেরে ফেলতে। অতিরিক্ত ড্রাগস দেওয়ার ফলে তার মৃত্যু হয়। আমরা দু’জনে হার্ট অ্যাটাক বলে চালিয়ে দেই।’ তিনি থেমে পুনোরায় বললেন,
‘তোর বোন’কে মাহাথিরের সঙ্গে বিয়ে দেওয়াটা ছিল একটা বাহানা মাত্র। আর এসব ভালোবাসা, আবেক এগুলো অভিনয় ছিল। আমাদের পথে যে এসেছে তাকেই মারতে হয়েছে।’
আবির দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। সামিম, মারুফ দের পাশে সরিয়ে চেয়ারে বসে যায়। তার চোখ থেকে পানি ঝড়ছে। কথা বলার শক্তিটুকু যেন হারিয়ে ফেলে। কিছু পরিস্থিতি মানুষকে বোবাতে পরিনত করে। আবির বোবা হয়ে গেছে। বলার অনেক কিছু থাকলেও, শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলেছে । মানুষ এমন নিখুঁতভাবে কীভাবে অভিনয় করতে পারে। নিঃসন্দেহে তারা অভিনেত্রী – অভিনেতা! সবাই যেন পাথরে পরিনত হয়েছে। আবিরের মতো তারাও বাক্শক্তিহীন হারিয়ে ফেলতে বসেছে। সিমা এক ধ্যানে আফিন’কে দেখছে। এই মানুষটার জন্য এতটা পাগলামি করেছে। ভাবতেই গা গুলিয়ে আসছে তার। বিভা আইরিন বেগমের উদ্দেশ্যে বলল,
‘আপনি তো একজন শিক্ষিকা ছিলেন। স্টুডেন্টদের সুনির্দিষ্ট শিক্ষা দিতেন। অথচ নিজের জ্ঞানের ভান্ডার খালি। শিক্ষক জগতে থেকেও বিন্দুমাত্র জ্ঞান অর্জন করতে পারেন নি। জন্ম দিলেই মা হওয়া যায় না। আপনি আপনার নিজের ছেলেকে শিক্ষা দিতে পারেন নি। অন্যের ছেলেকে কীভাবে ভালোবাসবেন? শুধু মাত্র সম্পত্তির, টাকা পয়সার লোভে নিজের ছেলে আর অন্যের জীবন নষ্ট করেছেন। আপনি মা নামের কলংক।’
মায়ের নামে এসব শুনে মাহাথির বিভার দিকে রেগে এগিয়ে আসতে নিলে সামিমের কাজিনরা তাকে ধরে ফেলে। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে মাহাথির। বিভা মাহাথিরের কাছে এসে আস্তেধীরে বলল,
‘এরাও সি.আই.ডি-এর লোক। আর তোর দুই সঙ্গীকে আমিই মেরেছি।’
মাহাথির যেন আরো ক্ষেপে গেল। নিজেকে ছাড়ানোর অধিক চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিভা নরম স্বরে বলল,
‘তোকে আমি বড়ো ভাই হিসাবে মানতাম। খুব শ্রদ্ধা করতাম। কিন্তু তুই তো একটা নরপশুর থেকেও খারাপ। অনেক কষ্ট দিয়ে আমার বোনকে মেরেছিস। কলিজা একবারও কাঁপেনি তোর। দেখ আবির’কে! ফেরেস্তার আসনে বসিয়েছিল তোকে। কিন্তু তুই তো দাজ্জালের সমতুল্য। ভাই নামের অভিশাপ।’
‘আমার কোনো ভাই নেই। আমি কারো ভাই না।’ চিৎকার করে বলে মাহাথির।
‘তোর ভাই হবার কোনো যোগ্যতা নেই। নিয়ে যান তাদের।’ বিভার নির্দেশে তাদের থানাতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। আবির মাঝপথে থামিয়ে দেয়। তাদের দু’জনার মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল,
‘এসব করার কি খুব বেশি প্রয়োজন ছিল আম্মু? একবার বলে দেখতে আমায়। সব কিছু দিয়ে দিতাম। আমি শুধু তোমাদের চেয়েছি। সম্পত্তি চাই নি।’ কথা গুলো বলে আবির ঘুরে দাঁড়ায়। তার ঘৃণা লাগছে। আইরিন বেগম মাথা নত করে রাখে। মাহাথিরের আদলে অনুশোচনার ছিটেফোঁটাও দেখা গেল না। তাদের নিয়ে যাওয়া হয়। বিভা সকল আত্মীয়দের নিকট বলল,
‘আপনারা আমাদের বিয়েতে এসেছেন খুশি হয়েছি। দোয়া করবেন আমাদের জন্য। পারলে আমাদের ক্ষমা করে দিবেন। আপনারা এখন আসতে পারেন।’ সবাই আবিরকে সান্ত্বনা দিয়ে চলে যায়। রয়ে যায় সামিম, মারুফ, মোহনা, সিমা। বিভা সিমাকে যাওয়ার সময় আটকায়। ওঁকে মোটেও স্বাভাবিক দেখাচ্ছে না। বিভা সিমাকে জড়িয়ে ধরে। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
‘কিছু মানুষের ভাগ্যে এমন কিছু লিখা থাকে যেটা মেনে নেওয়া কঠিন হয়ে যায়। তোমাকে এখানে আনার জন্য আমিই সুমনা’কে বলেছিলাম। সত্যিটা জানানোর খুব প্রয়োজন ছিল তোমায়। মানুষের জীবনে সঠিক সময়ে ভালোবাসা আসে। হয়তো দেরিতে, নয়তো আগে। আশা করি এখন থেকে তুমি পাগলামি করবে না সিমা।’ সিমাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে আশ্বাস দিয়ে বলল। সিমা মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ সম্মতি জানায়।
‘মারুফ ভাইয়া সিমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিবেন।’
হ্যাঁ সূচক জবাব দেয় মারুফ। বিভা সামিমের উদ্দেশ্যে বলল,
‘অনেক সাহায্য করেছেন আমায়। আপনার কাছে আমি ঋণী ভাইয়া।’
‘এমন করে বোলো না বিভা। তুমি শুধু আমার প্রিশ বন্ধু’কে আগলে রেখো। এখন তুমি ছাড়া ওর কেউ নেই।’
‘অবশ্যই! ভাইয়া। আমাদের জন্য আপনারা দোয়া করবেন।’
সামিম বিভার মাথায় হাত রেখে মোহনাকে সঙ্গে নিয়ে বেরোয়। মারুফও চলে যায় সিমা’কে নিয়ে। আপাতত আবির’কে বিভার কাছে একা ছেড়ে দেয়। আবির স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এবাড়িতে তারা দু’জন ছাড়া আর কেউ নেই।
বিভা আবিরের মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়। হাত ধরে সোফায় বসিয়ে মাথাটা নিজের কোলের ওপর রাখে। আবির নির্মল কণ্ঠে বলল,
‘আপন বলতে আমার আর কেউ রইলো না বিভা। সবাই আমাকে ঘৃণা করে। আমি বড্ড একা হয়ে গেছি বিভা, বড্ড একা।’
‘উঁহু! আমি আপনার জীবনে আছি। শেষ অব্দি থাকবো।’
আবির উঠে বিভার হাত ধরে বলল,
‘কথা দেও আমাকে ছেড়ে যাবে না।’
বিভার আবিরের কঁপালে আলতো চুমু এঁকে দিয়ে বলল,
‘নিজের স্বামীকে ছেড়ে কোথায় যাব? আপনিই তো আমার সব।’
আবির বিভাকে ঝাপটে ধরে। গালে চুমু দিয়ে বলল,
‘আমি তোমাকে নিয়ে নতুন করে বাঁচতে চাই বিভা। যেখানে থাকবে না প্রতিহিংসার ভালোবাসা, লোভ-লালসা। শুধু থাকবে ভালোবাসা।’
‘আমিও তোমাকে ভালোবেসে হৃদয়ে বেঁধে রাখতে চাই আবির। ঠিক যেমন তুমি বলেছিলে বাঁধিব হৃদয়ে তোমায়!’ অতি কষ্টের মাঝেও আবিরের ঠোঁটে তৃপ্তিময় হাসি ফুটে উঠে।
প্রিয়তমকে বুকের মাঝে টেনে নেয়। দু’টি হৃদয় এক হয়। বেঁধে রাখার বাঁধন অটুট হয়েছে। তাদের হৃদয়ের বন্ধন দীর্ঘস্থায়ী হোক। এভাবেই বেঁচে থাকুক, ভালো থাকুক তাদের ভালোবাসার বাঁধন।
সমাপ্ত।
আমি চাইলে গল্পটি পেঁচিয়ে আরো বড়ো করতে পারতাম। কিন্তু ঘোরপেঁচ আমার পছন্দ নয়। তাই সুষ্ঠ ভাবে সমাপ্তি দিলাম। আশা করি কেউ নিরাশ হবেন না সমাপ্তি পর্ব নিয়ে। ভালো থাকবেন সবাই। অগ্রীম ঈদ মোবারক!