পাগল_প্রেমিকা পর্ব-১৫

0
333

#পাগল_প্রেমিকা
#sharmin_akter_borsha
#পর্ব_১৫
________
কাব্য কথা শেষ হলে বর্ষা রিমা মাথা নাড়িয়ে সোফা থেকে উঠে দরজার সামনে আসে দরজা খুলতে যাবে তখনই পেছন থেকে কাব্য আবারও ডাক দেয় রিমা, বর্ষা পেছনে ঘুরে তাকাতেই কাব্য বলল.

ওই তোরা যে কাঁদতে কাঁদতে বের হচ্ছিস বাহিরে আম্মু দেখলে বলবে আমি তোদের মারছি বকছি। যা দু’জনে বাথরুমে ঢোক আর ফেসওয়াস করে পরে যা।

বর্ষা রিমা কাব্যর কথা গুলো শুনে দু’জনেই কাব্যর দিকে তাকিয়ে ঠোঁট জোড়া বাকা করে মুখ ভেংচি দিলো তারপর দরজা খুলে কাব্যর দিকে তাকিয়ে আছে কাব্য ওদের দু’জনকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ওদের উপর থেকে মুখ সড়িয়ে আবার ল্যাপটবে গুতাগুতি শুরু করছে দরজার পাশে টেবিলের উপর কাব্য একটা শার্ট রাখা ছিলো এই সুযোগে রিমা বর্ষা দুজনেই সেটা দিয়ে মুখ মুছলো তারপর শার্ট টা ওখানে ফেলে দিলো উড়াধুড়া দৌঁড়। দু’জনেই অবাক হলো তাকালো নাহিদ কাব্য কে প্রশ্ন করলো.

” বর্ষা রিমা দৌড় দিলো কেন? ”

কাব্য ল্যাপটব এর দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো!
” আমি কি জানি? ”

সেদিকে দু’জনে পাত্তা না দিয়ে দু’জনেই আবার কি জেনো কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলো। এদিকে বর্ষা রিমা সারাদিন রাত এখন বৃষ্টির চারপাশেই থাকে। তেমন কোনো কিছুই ওদের চোখে পরে না শুধু মোবাইল হাতে নিয়ে বসে থাকতেই দেখে। রাতে বৃষ্টি না ঘুমিয়ে জেগে ছিলো এই আশায় হয়তো আজ রিমন ওর সাথে কথা বলবে। বৃষ্টি অধির আগ্রহ নিয়ে বসে ছিলো একটু কথা বলার জন্য ওর রাইটার বাবুর কন্ঠ শুনে কলিজাটা ঠান্ডা করার জন্য কিন্তু রাত গভীর হতেই রিমন বৃষ্টির সাথে কথা বলল না। বৃষ্টি রিমন কে একটু কলে কথা বলার জন্য বললে সে বলে।

” আমি তোর সাথে কেনো কথা বলবো আর আমি তো ভুলেই গেছিলাম তুই একটা বেঈমান তোর সাথে আমার কোনো কথা নাই ”

রিমনের এমন মেসেজ দেখে বৃষ্টির কলিজা ফেটে কান্না আসলো দুই চোখ ভিজে গাল বেয়ে পানি ঝরতে শুরু হলো কাঁদতে কাঁদতে বৃষ্টি মেসেজ করলো।

প্লিজ আমাকে বিশ্বাস করো আমি বেঈমান না আমি কোনো কিছুই ইচ্ছে করে করিনি ভুল করে হয়েছে প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও আর কখনো হবে না প্লিজ আমার সাথে একটু কথা বলো আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে কতদিন তোমার ভয়েস শুনিনি প্লিজ রাইটার বাবু আমার সাথে একটু কথা বলো প্লিজ..!

রিমন মেসেজ তো সিন করে রিপ্লাই দেয় “তুই বেঈমান ” বৃষ্টির এত বার বলার পরও ও ওকে ক্ষমা করছে না রিমন বৃষ্টি কে বিশ্বাস করছে না। যা বৃষ্টির কাছে পাহাড় সমান কষ্টের মতো আগে বৃষ্টি সব বর্ষা রিমাকে বলতো এখন আর বলে না। নিজের ভেতরেই চেপে রাখে। বিছানায় শুয়ে বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরে। পরেরদিন ও সেম কাহিনি বৃষ্টি সবার থেকে দূরে ও আলাদা থাকছে ওর কোনো কিছুই ভালো লাগছে না সব কিছুই ওর কাছে বিরক্ত লাগছিলো মনের মধ্যে রিমন এর প্রতি ভালোবাসা মাথার মধ্যে রিমন এর বলা কথাগুলো ওকে জেনো সুস্থ থাকতে দিচ্ছে না। আগে রিমনের কথা বৃষ্টি সারাদিন ভাবতো আর ভাবলে মুখে থাকতো তৃপ্তি ময় হাসি ভালোবাসা আর রিমনের প্রতি অনূভুতি আর এখন রিমনের কথা ভাবতে ভাবতে বৃষ্টির চোখের পানি শুকিয়ে যাচ্ছে।
সারাদিন বৃষ্টি রিমনকে অনেক মেসেজ করে কিন্তু রিমন পাত্তা দেয় না ইগনোর করে রাখে সন্ধ্যায় বৃষ্টির মেসেজ সিন করে বৃষ্টি বলে একটু কথা বলতে বা একটা ভয়েস দিতে সেটাতে রিমন বলে তুই বেঈমান তোকে আমি কখনো ক্ষমা করবো না। সন্ধ্যা প্রায় ৭টা বাজে বৃষ্টি কাঁদতে কাঁদতে বারান্দা থেকে রুমে প্রবেশ করে মোবাইলটা বিছানার উপর ছুঁড়ে মারে বৃষ্টির এমন আচরণে। রিমা বর্ষা বৃষ্টির দিকে অবাক হয়ে তাকায়। বৃষ্টি চোখের পানি মুছে রিমাকে বলল..

তোর গিটার টা দে আমায় আর একটা প্রশ্নও করবি না দু’জনের একজনেও. বৃষ্টির কথা অনুযায়ী বর্ষা রিমা বৃষ্টি কে একটা প্রশ্ন ও করে না সোজা রিমা গিটার টা ওর রুম থেকে নিয়ে আসে। গিটার টা বৃষ্টি হাতে নিয়ে বলে আজ গিটার আমি বাজাবো। বৃষ্টি কে দেখে রিমার মোটেও স্বাভাবিক লাগেনি কিছুটা পাগল পাগল লাগছিলো চোখ দু’টো রক্ত বর্ণের মতো লাল হয়ে ছিল। রিমা একটা শুঁকনো ঢোক গিললো আর বৃষ্টির উদ্দেশ্যে বলল।

” তোকে দেখে স্বাভাবিক লাগছে না তুই পারবি দে আমি বা.. জা? ”

কথাটা শেষও করতে পারেনি রিমা বৃষ্টি চোখ বড়বড় করে রাগান্বিত চোখে রিমার দিকে তাকায় যা দেখে রিমা ভয়ে চুপ হয়ে যায় আর কিছু না বলে গিটার টা নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো। বৃষ্টি যেতেই রিমা বলল.

” ওই লুচ্চা ছেলের সাথে পারে না যত রাগ শুধু আমার উপর উফফ আজ শুধু ছোটো বইলা..”

রিমার কথা শুনে বর্ষা মুচকি হেসে রিমার কাঁধে হাত রাখল আর বলল..

” ও হঠাৎ এতদিন পর গিটার নিয়ে কি করবে বল তো.”

বর্ষার কথায় রিমার বেশ রাগ হলো আর বলল।

“গিটার নিয়ে গেছে নিশ্চয়ই মাছ ধরবে না অবশ্যই গান গাইবে ”

বর্ষা রিমার কথায় বিরক্ত হয়ে রিমার মাথায় আসতে করে থাপ্পড় দিলো তাতে রিমা “আহহ” এমন শব্দ করলো তারপর বর্ষা রিমাকে বলল।

“চল বারান্দায়”

দু’জনেই বারান্দার দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো বৃষ্টি বারান্দার গ্রিল দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে আর হাত দিয়ে গিটারের তারে সুর তুলছে.!
কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি গান গাইতে শুরু করল.!
🎶🎶
মাধবী লতা আমি, আমি কানন বালা
তোমার গানের সুর আমি, আমি গলার মালা
দিঘির জলের রোদ আমি, আমি সাঝের বেলা
তোমার গানের সুর আমি, আমি গলার মালা
মাধবী লতা আমি, আমি কানন বালা
তোমার গানের সুর আমি, আমি গলার মালা
নীল আকাশের সূর্য আমি, আমি জোসনার আলো
তোমার সাধের প্রদীপ আমি, তাই আমায় ভাশো ভাল
মাধবী লতা আমি, আমি কানন বালা..

“বৃষ্টি গান গাইতে গাইতে কাদছিলো যা ওর গানের সুর শুনেই যে কেউ বলে দিবে, চোখের কার্ণিশ বেয়ে নোনা জল বেয়েই যাচ্ছে এদিকে বৃষ্টি গান করছে”

তোমার গানের সুর আমি, আমি গলার মালা
নদীর মাঝে ঢেউ আমি, আমি মাতাল হাওয়া
এক পলকে দেখা দিয়ে মন করেছি উতলা
মাধবী লতা আমি, আমি কানন বালা
তোমার গানের সুর আমি, আমি গলার মালা
দিঘির জলের রোদ আমি, আমি সাঝের বেলা
মাধবী লতা আমি, আমি কানন বালা
তোমার গানের সুর আমি, আমি গলার মালা..!🎶🎶

গানের শেষে গিটারের তার ছিঁড়ে বৃষ্টির আঙুল কেটে যায় আর বৃষ্টি “আহহহ” নামক শব্দ করে হাত নাড়াতে থাকে দুইচোখ বন্ধ করে নেয়। বর্ষা রিমা পেছন থেকে এসে বৃষ্টির হাত চেপে ধরে। বর্ষা বৃষ্টি কে ধরে রুমে নিয়ে আসে রিমা গিটার টা নিয়ে এসে টেবিলের উপর রাখে রিমা বৃষ্টির পায়ের কাছে বসে বর্ষা বৃষ্টির পাশে বিছানার উপর বসে আর এমন পাগলামো করার কারণ জিজ্ঞেস করে। এতদিন নিজের মধ্যে সব চেপে রাখলেও আজ আর বৃষ্টি নিজেকে সামলাতে পারছে না। বুকের মধ্যে চেপে রাখা কথাগুলো জেনো ওকে ভেতরে ভেতরে কামড়ে খাচ্ছে বৃষ্টি বর্ষার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকালো দুই চোখ দিয়ে পানি বেয়ে পরলো বৃষ্টি বর্ষাকে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করল। রিমা বৃষ্টির পায়ের কাছে বসে হাতের কাটা আঙুলে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে বিছানার অপর পাশে বসে আর বৃষ্টি কে জরিয়ে ধরে। বৃষ্টির কাঁদতে কাঁদতে হিচকি উঠে যায়।
বর্ষা বৃষ্টিকে ধরে ওর সামনে বসিয়ে কপালে মুখে এসে পরা থাকা চুলগুলো সরিয়ে দেয় চোখের জল মুছে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে। বৃষ্টি কাঁদতে কাঁদতে বলল.
আমি বেঈমান না বর্ষা তুই তো জানিসই সব শুধু তোর কথায় মেম্বার এড দিয়েছিলাম আমি বেঈমান নই ও কেনো বুঝে না আমাকে কেনো ভুল বুঝে বসে আছে কেনো ক্ষমা করছে না আমাকে আমি থাকতে পারছি না ওকে ছাড়া আমার বাঁচতে ইচ্ছে করছে না ওকে ছাড়া মরে যেতে ইচ্ছে করে আমি ওকে অনেক ভালোবাসি রে বর্ষা ও কেনো আমার ভালোবাসা বুঝে না কেনো আমাকে এত কষ্ট দিচ্ছে কেনো আমার সাথে এমন করছে ও বলেছিলো আমি কেনো কোনো কিছু ভুলে যাই না, কিন্তু আমি কোনো কিছুই ভুলতে পারছি না আমি ওকে এক মুহুর্তের জন্য ও ভুলতে পারছি না আমি সত্যি ওকে ভালোবাসি ও কি করে সব ভুলে গেলো এত সহজে সব কিছু কি করে ভুলে গেলো আমি ওকে ছাড়া বাঁচবো না আমি মরে যাবো বর্ষা আমি পাগো হয়ে যাচ্ছি ওর সাথে একটু কথা বলার জন্য বর ও দিব্বি অন্য মেয়েদের সাথে টাইমপাস করছে ও এমন কেনো বর্ষা বল না ও বলেছিলো ওর আমার প্রতি টান আছে তাহলে কোথায় গেলো সেই টান আমার সাথে এত কিছু করার পরও আমি সব মেনে নিয়েছি ওকে ক্ষমা করে দিয়েছি কিন্তু ও কেনো আমাকে ক্ষমা করতে পারছে না কেনো আমার সাথে কথা বলছে না আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। কথা বলে “আহহহহহ” বলে চিৎকার দিয়ে বৃষ্টি বিছানা থেকে গড়িয়ে ফ্লোরে বসে পরে আর কাঁদতে থাকে.. বর্ষা রিমা দু’জনেই দু’জনকে পর্যবেক্ষণ করছে কি করা উচিত এখন ওদের ওরা নিজেও জানি না অনেক তো বুঝিয়েছে কিন্তু কোনো কিছুতেই পাগলামো কমছে না বৃষ্টির শুধু রাইটার বাবু রাইটার বাবু করেই যাচ্ছে ভালোবেসে পাগলামো করছে যার জন্য সে তো বিন্দাস আছে ফুর্তিতে এদিকে ওর জীবন তছনছ করে দিয়ে। বৃষ্টি কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে শুয়ে পরেছে বর্ষা রিমারও চোখে পানি টলমল করছে কলিজার বোনকে এত কষ্টে দেখলে কোনো বোনই নিজেকে সামলাতে পারবে না। বৃষ্টির নিঃশব্দে কান্না আসতে আসতে শব্দে পরিনত হলো চাইলেও আসতে কাঁদতে পারছে না। মুখ দিয়ে শব্দ বেরিয়ে আসছে। বর্ষা রিমা বৃষ্টি কে উঠিয়ে দু’জনে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বৃষ্টির কান্না ওদের কলিজায় গিয়ে লাগছে না পারতে নিজেরাও শব্দ করে কেঁদে ফেলে যা পুরো রুমটাকে একটা মরা বাড়ির মতো করে গড়ে তুলেছে।
কিছুক্ষণ পর রিমা বর্ষা বৃষ্টি কে শান্ত করতে পারলেও পর মনের ভেতরের যন্ত্রণা কমাতে পারেনি সেই যন্ত্রণা শুধু একজনেই কমাতে পারবে আর সেটা শুধু একজনেই কমাতে পারবে আর সেটা শুধু বৃষ্টির রাইটার বাবু… (কপি পোস্ট করা রাইটার)
বৃষ্টি রোজ মেসেজ করে রিমনকে বলে ওর সাথে কথা বলতে কিন্তু রিমন বলে না ইগনোর করে। এইদিকে বৃষ্টি নিজের যত্ন নেওয়া বন্ধ করে দেয় খাওয়া দাওয়া ও বন্ধ করে দেয়। যে এক বেলা সময় মতো না খেলে খাবারের জন্য চিৎকার করতো সে দিনের পর দিন রাতের পর রাত খেতো না।বর্ষা রিমা জোর করে রুমে এসে খাইয়ে দেয়। আর জোর করে ডাইনিং টেবিলে খাওয়ার জন্য নিয়ে গেলে সবার প্রশ্ন শুরু হয়। আশা করি আপনাদের গল্পটা বোরিং লাগছে না। ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন, ভুলক্রটি ক্ষমা ও সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই ধন্যবাদ। আমার গল্পের গ্রুপে জয়েন্ট হওয়ার আমন্ত্রণ রইল!

চলবে….?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here