#পাগল_প্রেমিকা
#sharmin_akter_borsha
#পর্ব_২২.
___________
ওইদিকে রিমন রুমে ঢুকতেই অবাক হলো ভ্রু কুঁচকে সামনের টি টেবিলের উপর তাকালো। টেবিলের উপর একটা কাঁচের বাটি রাখা বাটি টার চারপাশে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে সাজানো পাপড়ি গুলোর উপর একটা চিরকুট রিমন কৌতূহল বসত টি টেবিলের সামনে হেঁটে গেলো। টেবিলের দিকে একটু ঝুঁকে চিরকুট টা হাতে নিলে উল্টে পাল্টে দেখলো ও চিরকুট টা খুলে লেখাটা দেখে রিমন এর ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি ফুটে উঠল..
চিরকুটে লেখা- শালীকার হাতে ফাস্ট মিষ্টি ছাড়া পায়েস খেয়ে কেমন লাগছে দুলা ভাই?
চিরকুট টা কপালের সাথে ঠেকিয়ে এক মনে হেসে যাচ্ছে হাসতে হাসতে চোখ গিয়ে পরলো টেবিলের উপর বাটি টার উপর একটা কাগজ ছিলো কাগজের উপর কিছু গোলাপের পাপড়ি। রিমন কাগজের উপর থেকে গোলাপের পাপড়ি গুলোকে আলতো হাতে সরিয়ে দিলো কাগজের উপর লেখা ছিলো -“শুধু তোমার জন্য”- রিমন কাগজ টা হাত দিয়ে সরাতে দেখল বাটি ভর্তি পায়েস। যা দেখে রিমনের প্রচুর অভিমান হলো শুরু তে জুতা মেরে এখন গরু দান করছে ব্যাপার এমন হয়ে গেলো। প্রথমে কি না কি পায়েস খাওয়াইলো আর এখন এত সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে। রিমন শুরুতে পায়েস খেতে চায়নি অভিমনে। পায়েসের বাটি থেকে মুখ সরিয়ে হেঁটে বিছানার উপর গিয়ে বসে পরে আর ফোন বের করে ফোম স্ক্রোল করতে শুরু করে। যতই ফোন স্ক্রোল করুক মনটা তো পায়েসের বাটির দিকেই পরে আছে। ফোন স্ক্রোল করার ফাঁকে ফাঁকে মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে বাটি টাকে দেখছে।
পায়েস জেনো রিমনকে বলছে- আয় বাবা আমাদের খেয়ে উদ্ধার কর!
রিমনের আকর্ষণ হচ্ছে পায়েস সাজানো দেখে পায়েসের উপর ডালিম দিয়ে সাজানো। রিমন চাইলেও আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না পায়েস বেচারার অনেক পছন্দের মনে মনে আবার একটু বিবেক খোঁচা দিচ্ছে! তাই রিমন নিজেই নিজেকে বলল…
– আগের মতো এখানে আবার বেজাল নেই তো তা যাইহোক ভেজাল হলে হবে সেটা পরে দেখা যাবে আগে খেয়ে তো দেখি।
রিমন বিছানা থেকে নেমে টি টেবিলের উপর থেকে বাটি টা নিয়ে সোফার উপর আরাম করে বসে এক চামচ পায়েস মুখে দিলো আহা কি টেস্ট মুখে লেগে থাকার মতো রিমন মুহুর্তেই পায়েস ভর্তি বাটিটা খালি করে ফেলল! মিষ্টি খাওয়ার পর ঘুম আসছে বাটিটা টেবিলের উপর রেখে হাত দিয়ে মুখের সামনে হাই তুলে হাঁটতে হাঁটতে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরল। বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই নিমিষের মধ্যে ঘুমিয়ে গেলো রিমন এখন তিন থেকে চার ঘন্টা ঘুমাবে যেখানে কেউ বিরক্ত করবে না।
সন্ধ্যায় রিমন ঘুম থেকে উঠে অবাক হয়! কারণ ও ঘুমিয়ে ছিলো বিছানায় এখন পরে আছে মাটিতে কিভাবে সম্ভব? আর পরে গেলে টের পায়নি কেনো ব্যাথাও পায়নি ঘুম ও ভাঙেনি আজব কিভাবে সম্ভব এত গভীর ঘুমে রিমন ঘুমায় না সেটা ও খুব ভালে করেই জানে ভাবতে ভাবতে রিমনের বৃষ্টি’র কথা মনে পরলো বসা থেকে তারাহুরো করে উঠতে গিয়ে পায়ের সাথে কম্বল মুড়ে ঠাসস করে নিচে পরে যায়। আগের থেকে রাগ একটু বেড়ে গেলো রিমন পায়ের সাথে পেঁচিয়ে থাকা কম্বল হাত দিয়ে সরিয়ে কম্বল টা বিছানার উপর ফেলে সোজা রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
হাঁটতে হাঁটতে হল রুমে আসে সবাইকে জিজ্ঞেস করে বৃষ্টি কোথায়? রিমনের এমন ক্রোধ দেখে রিমি বলল.
“বৃষ্টি কে ছাঁদে গেছে ওর বোনরা কল দিয়েছে ওনারা কাল তোদের নিতে আসবে! বৃষ্টি ওদের সাথে কথা বলতে গেছে ”
রিমন রিমিকে ওর কথা সম্পূর্ণ শেষ করতে না দিয়েই উল্টো পায়ে হাঁটতে শুরু করল। আবারও হাঁটতে হাঁটতে ছাঁদে চলে আসল ছাঁদে এসে যা দেখল তাতে রিমনের আরও রাগ হলো।
বোনদের সাথে কথা বলছে তো বলছেই সাথে প্রথম দিনেই জব্দ করেছে কিভাবে সে কাহিনি শোনাচ্ছে। শুরুতে উস্টা দিয়ে ফেলে দিছে নিরামিষ পায়েস খাওয়াইছে তারপর খাট থেকে নিচে নামিয়ে দিছে। বৃষ্টির কথাগুলো শুনে রিমন হেঁটে পেছন থেকে বৃষ্টির চুল ধরে টান দিলো। বৃষ্টি চুলে টান খেয়ে “আহহ” শব্দ করে ঘুরে পেছনে তাকায়।
পেছনে তাকিয়ে বৃষ্টি রিমনকে দেখে একটু চমকে গেলো ফোনটা কান থেকে সরিয়ে একটা শুকনো ঢোক গিলে হাল্কা হাসি দিয়ে ভয়ে মিশ্রিত কন্ঠে বলল!
” আ…প আপনি কখন আসলেন? ”
রিমন বৃষ্টির একটি সামনে গিয়ে রাগী কন্ঠে বলল।
” তুই যখন তোর বোন দের আমাকে জব্দ করার কাহিনি শোনাচ্ছিলি তখন আসছি আমি”
রিমনের কথায় বৃষ্টি আবারও ঢোক গিলল আর মনে মনে বলতে থাকল!
” এই জন্যই বলে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়। ইঁন্দুরের লেজ আড়ালে কথা বলার জন্য ছাঁদে আসলাম সেখানেও চলে আসলে কত্তো বজ্জাত ”
বৃষ্টির ঠোঁট জোড়া নাড়াচাড়া করতে দেখে রিমন বৃষ্টির উদ্দেশ্যে বলল।
” মনে মনে বকছিস কেন যা বলবি সামনা সামনি বল ”
রিমন এর দিকে তাকিয়ে বৃষ্টি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল!
” আমি কেনো বকতে যাবো আপনাকে “?
কথা টা বলে বৃষ্টি রিমনের সামনে থেকে কেটে পরতে গেলে রিমন বৃষ্টির হাত চেপে ধরে হাত ধরে টান দিয়ে বৃষ্টি কে রিমনের সামনে দাঁড় করায় তারপর কঠোর কন্ঠে প্রশ্ন ছুঁড়ে মারলো বৃষ্টির উদ্দেশ্যে আর বলল,.
” তুই আমাকে খাট থেকে নিচে নামাইছিস কিভাবে? ”
রিমনের দিকে তাকিয়ে হাহা শব্দ করে জোর করে হাসতে হাসতে বৃষ্টি বলল.
” আমি আপনাকে কখন নামালাম ওটা তো আপনি নিজেই পরে গেছিলেন! ”
বৃষ্টির হাত আরেকটু শক্ত করে চেপে ধরে রিমন বলল।
” একা পরে গেছি তাই-না আর আমি টেরও পাইনি পাগল পাইছিস আমাকে? ”
রিমনের হাত থেকে হাত ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে বৃষ্টি কিন্তু পারছে না ওর শক্তির কাছে হেরে যাচ্ছে। এমন সময় বৃষ্টির শয়তানি মাথায় তুফানি আইডিয়া ঘুরপাক খেলো। বৃষ্টি ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে রিমনের উদ্দেশ্যে ছাদের দরজার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল…
” রিমি আপু তুমি?”
বৃষ্টির মুখে রিমি শুনে রিমন চটজলদি বৃষ্টির হাত ছেড়ে দেয় আর পেছনে ঘুরে দরজার দিকে তাকায় কিন্তু দরজার সামনে কেউ নেই তা দেখে ভ্রু কুঁচকে দাঁতে দাঁত চেপে “বৃষ্টি ” বলে রিমন বৃষ্টির দিকে ঘুরলো। ওমা এটা কি বৃষ্টি গেলো কই নিজেই নিজেকে বলছে এমন সময় দরজার সামনে থেকে বৃষ্টি একটু জোরে শব্দ করে বলল.!
” ওই নষ্টা ”
পেছন থেকে বৃষ্টি’র ডাক শুনে রিমন পেছনে ঘুরে তাকায় বৃষ্টি রিমনকে পেছনে ঘুরতে দেখেই দিলো দৌঁড় এক দৌঁড়ে নিচে মা মা বলতে বলতে ছুটে মায়ের পাশে গিয়ে বসে।
সোফায় বসে এক প্রাণে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে বৃষ্টি তা দেখে ভ্রু কুঁচকে বৃষ্টি কে সোহান জিজ্ঞেস করল.
” কি হয়েছে তুমি হাঁপাচ্ছো কেনো? ”
সেইম প্রশ্ন রিমি ও ওর মা ও করলেন। বাড়ির সব আত্মীয় স্বজনরা বিকেলেই চলে গেছে এখন শুধু ওরাই আছে। বৃষ্টি টেবিলের উপর থেকে গ্লাসটা নিলো আর ঢোক ঢোক করে পুরো গ্লাস ফাঁকা করে দিলো। পানি পান করা শেষে বৃষ্টি তিনজনের দিকে একবার চোখ বুলালো আর বলল!
” মা আপনার ছেলে ভাইয়া, আপু আপনাদের ভাই আমাকে দৌড়ানি দিছে ও ঘুমের মধ্যে খাট থেকে নিচে পরে গেছে আর এখন বলছে আমি নাকি উনাকে নিচে নামিয়ে দিছি আপনারা বলেন এটা কি সম্ভব উনার মতো লোককে আমার মতো পিচ্চি মেয়ে কি নিচে নামাতে পারবে?”
রিমন খাট থেকে পরে গেছে শুনে সোহান আর রিমি হাসতে হাসতে মাটিতে ঘোরাঘুরি খাওয়ার মতো অবস্থা এদিকে রিমন দূর থেকে দাড়িয়ে সবটা দেখে শুনে বলল!
” ইজ্জতের ফালুদা করে দিলো সবার সামনে। না জানি আর কত কি করে আল্লাহ বাঁচালো মুজে ”
কথাটা বলে রিমন রুমে চলে গেলো।
রাতে সবাই এক সাথে খাওয়া দাওয়া কমপ্লিট করে যার যার রুমে চলে গেলো ঘুমাতে রুমে এসে আরেক যুদ্ধ।
বৃষ্টি একটা বালিশ হাতে নিয়ে ছুঁড়ে মারে সোফার উপর রিমন বালিশের দিকে এক নজর তাকিয়ে বৃষ্টিকে প্রশ্ন করল।
” বালিশ সোফায় কেনো ফেললি? বালিশের আসল জায়গা হলো বিছানায় আর তুই সোফায় ফেলে দিলি কিন্তু কেনো? ”
বৃষ্টি রিমনের দিকে তাকিয়ে হাহা করতে করতে বলল।
” ওখানে তুই ঘুমাবি তাই ”
বৃষ্টির কথা শুনে রিমন “আচ্ছা” বলে সোফার উপর থেকে বালিশ টা হাতে নিয়ে বিছানার উপর রেখে বিছানার উপর বসে বলল।
” তুই যদি ভেবে থাকিস ওই হিন্দি সিনেমার নায়কের মতো আমি সোফায় কষ্ট করে ঘুমাবো আর তুই বিছানায় আরাম করে ঘুমাবি তাহলে তুই ভুল ভাবছিস আমি তো বিছানাতেই ঘুমাবো তোর যদি আমার পাশে ঘুমাতে প্রবলেম হয় তাহলে তুই গিয়ে সোফায় ঘুমা আমি কেন ঘুমাতে যাবো সোফায় আমার বেড রেখে কেন যাবো কষ্ট করতে। ”
বৃষ্টি রেগে রিমনের হাত থেকে বালিশটা ধরে টান দিয়ে বলল।
” তোর সমস্যা কি সোফায় ঘুমালে?”
” তোর সমস্যা কি আমি বিছানায় ঘুমালে?” (রিমন)
” আমি তোর পাশে ঘুমাবো না। ” (বৃষ্টি)
বৃষ্টির কথা শুনে রিমন হালকা মৃদু হেঁসে বলল।
” বুঝেছি তুই আমার পাশে শুলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবি না আমার কাছে আসা থেকে তাই আমার সাথে বেড শেয়ার করতে চাচ্ছিস না হুম ”
রিমনের কথায় বৃষ্টি ওর হাতের বালিশটাকে রিমনের উপর ছুড়ে ফেলল রাগী কন্ঠে বলল ”
” যতসব আজাইরা কথা আমি এখানেই ঘুমাবো তোর পাশেই ঘুমাবো! তুই দেখিস নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি কি না আর ভুলেও আমার সাইডে আসবি না। আমাকে টাচ করলে তোর হাত ভেঙে দেবো হুহহ! ”
কথাটা বলে বৃষ্টি আলমারী থেকে কি জেনো একটা হাতে নিয়ে হনহনিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। রিমন বিছানার সাথে হেলান দিয়ে পায়ের উপর পা তুলে ফোন স্ক্রোল করছে কিছুক্ষণের মধ্যে বৃষ্টি ওয়াশরুম থেকে বের হলো। দুই হাত দিয়ে চুল গুলো উপরে উঠিয়ে খোঁপা বাঁধতে বাঁধতে বের হচ্ছে এমন সময় রিমন ফোনের উপর থেকে নজর সরিয়ে একবার বৃষ্টি’র দিকে তাকালো এক নজর তাকিয়ে আবারও ফোনের দিকে তাকালো। কি দেখলো রিমন ফোনের দিকে তাকিয়ে ভাবলো আবারও দেখার জন্য মাথা উপরে তুলে বৃষ্টির দিকে তাকালো যা দেখে রিমনের মাথা ঘুরে গেলো। কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে থাকার পর রিমন বৃষ্টি কে উদ্দেশ্য করে বলে।
– এইটা কি পড়ছিস তোর জামা কোই?
বৃষ্টি রিমন এর দিকে তাকিয়ে বলল।
” তুই যে কানা চোখে কম দেখিস জানতাম না দেখতে পাচ্ছিস না নাইট ড্রেস”
” এটা নাইট ড্রেস নাকি বাচ্চা দের ড্রেস হাঁটুর উপরে জামা হাতা তো নাই-ই এটা পড়ছিস কেন যা তু.. তুই তোর জামা পরে আয়। ”
বৃষ্টি বিছানার উপর দুই পা তুলে বসে আর রিমন কে বলে।
” আমি জামা পরে ঘুমাতে পারি না এই ছোট ছোট ড্রেস পরেই ঘুমাই সেটা তুই ভালো করেই জানিস তারপরেও কেন বলছিস ওওও বুঝেছি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবি না তাই তো ”
রিমন বৃষ্টির কথা শুনে দুই চোখ বন্ধ করে মাথা অন্য দিকে ঘুরিয়ে হাত দিয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল…
চলবে?
{সরি লেট পোস্ট দেওয়ার জন্য একটু ব্যক্তিগত সমস্যার জন্য গল্প লিখতে পারছিলাম না। রি-চেইক করা হয়নি ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন}