নিরবতা পর্ব-৫

0
5049

#নীরবতা
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_৫

সকালের খাবারের পাঠ চুকেছে বেশ খানিকক্ষণ। তবে এবাড়ির সকল সদস্যর সাথে একসাথে খেতে বসে সংকোচে কাজ করছিল উল্লাসীর। যার ফলে ইচ্ছে থাকা সত্বেও তেমন কিছু পেটে পুড়তে পারেনি সে। এখন হালকা ক্ষুধাভাব পেলেও কাউকে কিছু বলা ঠিক হবে কিনা তা নিয়ে একরকম দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছে। এমতবস্থায় শাড়ির আঁচলে টান অনুভব করতেই পিছন ফিরলো উল্লাসী। ছোট্ট বছর চারেকের মত এক বাচ্চা ঠোঁট ভর্তি হাসি নিয়ে তার আঁচল ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এখানে আসার আগে অবশ্য ছোটমা এবাড়ির আদ্যোপান্ত জানিয়েছে তাকে। ছোট থেকে শুরু করে এবাড়ির প্রতিটি সদস্য সম্পর্কে দিয়েছে নানান তথ্য। যা ভুল না হলে এমেয়ের নাম মৌমি। জন্মের পর মা ছেড়ে চলে গেলে বাবার ছায়ায় যে বেড়ে উঠছে ধীরেধীরে। আশ্চর্যজনক হলেও তার নিয়তির সঙ্গে মেয়েটির নিয়তি অনেকটাই মিলে যায়। তবে অমিল শুধু রয়ে যায় একটি জায়গায়। মেয়েটির বাবা মায়ের ছায়া না খুঁজে নিজেই তার মা হয়ে উঠেছে। যা আজকালকার দিনে দূর্লভ এক ব্যাপার। দীর্ঘশ্বাস ফেলে চারিপাশে চোখ বুলিয়ে মৌমিকে কোলে উঠালো উল্লাসী। তারপর ধীরপায়ে এগুলো বিছানার দিকে।
-“তুমিই কী আমার আম্মু?”
মৌমির ছোঁড়া প্রশ্নে একদন্ড ভেবে উল্লাসী জবাব দিল,
-“উহু..”
-“বাবা যে বললো তুমিই আমার আম্মু!”
-“বাবা যেহেতু বলেছে তাহলে হয়তো আমিই তোমার আম্মু।”
-“তাহলে প্রথমে কেনো উহু বললে?”
এপ্রশ্নের ঠিক কি জবাব দেবে তা ভেবে পেল না উল্লাসী! মৌমির চুলে হাত বুলিয়ে বললো,
-“জানো? তোমার মত আমার ছোট্ট একটি বোন আছে?”
-“কী নাম ওর? আর কোথায় ও?”
-“আমাদের বাড়িতে।”
-“অহ বুঝেছি! তাহলে তুমি ওর জন্যই এতদিন আমার কাছে আসোনি.. না?”
বিবর্ণ ঠোঁটে হাসি ফুটলো উল্লাসীর। মৌমির কপালে চুমু দিয়ে বললো,
-“জানি না। তবে তোমার বাবা বললে ঠিকাছে।”
-“কেনো? বাবা বললে ঠিক থাকবে কেনো?”
-“কারণ, বড়রা কখনোই মিথ্যে বলেনা। তাছাড়া ছোটমাও বলে দিয়েছে এবাড়ির সকলের কথা মেনে চলতে।”
-“ছোটমা কে?”
ঠিক সেই মুহূর্তে ঘরে প্রবেশ করলো মেসবাহ। তার উপস্থিতিতে চুপসে গেল উল্লাসী। শান্ত বেশে মৌমির হাত চেপে চুপচাপ বসে রইলো সে।
-“মেজ বাবা? ও মেজ বাবা…”
হাতের ঘড়ি খুলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে মৌমির দিকে এগিয়ে এল মেসবাহ। একটি চেয়ার টেনে বসে আদুরে গলায় বললো,
-“কী লাগবে আমার আম্মার?”
-“কিচ্ছুটিই না। জানো? আম্মু এতদিন আম্মুর বোনের জন্য আমার কাছে আসেনি? আমার তো ওর জন্য রাগ হচ্ছে। মনে হচ্ছে ওকে একটি মেরে দাঁত ফেলে দেই।”
মৌমির কথা বোধগম্য হলো না মেসবাহর। কপাল কুঁচকে সে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে উল্লাসীর দিকে তাকাতেই বুকের ভেতর উথালপাতাল শুরু হয়ে গেল উল্লাসীর। মৌমি তাকে আম্মু বলায় কী রাগ করেছেন উনি? কিন্তু সে নিজে তো কিছু বলেনি। মৌমির বাবাই তো ওকে শিখিয়ে দিয়েছেন!
-“ও বাবা! শিশি পেয়েছে।”
মৌমির কথায় তাড়াহুড়ো করে মেসবাহ চেয়ার ছেড়ে উঠে তার দিকে হাত বাড়াতেই পিছিয়ে গেল মৌমি। আহ্লাদী গলায় বললো,
-“আম্মুর কাছে শিশি করবো।”
একপলক মেসবাহর দিকে তাকিয়েই মৌমিকে কোলে চাপিয়ে দ্রুতপায়ে ওয়াশরুমের দিকে এগুলো উল্লাসী। উনি ক্ষেপেছেন। প্রচুর ক্ষেপেছেন। হয়তো সকালের মতো খানিকক্ষণ বকাবকিও করবেন! উল্লাসী সচকিত মনে মৌমিকে নিয়ে ঘরে ফিরে আসতেই তার কোল ছেড়ে নেমে একদৌড়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল মৌমি। তার যাত্রাপথের দিকে খানিকক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মেসবাহ। এরপর গম্ভীর গলায় বললো,
-“আম্মু তোমায় ডাকছে মৌমি?”
ঢোক চেপে হালকা মাথা নেড়ে উল্লাসী সম্মতি জানাতেই মেসবাহ আবারও বললো,
-“কে শিখিয়েছে?”
-“ওর বাবা…”
ভাইয়ের কথা আসতেই খানিকটা নরম হয়ে এল মেসবাহ। দু’কদম এগিয়ে বিছানায় শরীর মেলে দিয়ে চোখজোড়া বুজে কিছুক্ষণ কাটানোর পর ধীর গলায় সে বললো,
-“শাড়ি এখনো বদলাওনি কেনো? যা তুমি ঠিকঠাক রাখতে পারবে না সেগুলো পড়বেও না। যে কাজে নিজে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে সেগুলোই করার চেষ্টা করবে।”
-“জ্বি আচ্ছা।”
-“যাও.. শাড়ি বদলে অন্যকিছু পড়ে নাও।”
-“কিন্তু শাড়ি ছাড়া তো অন্য কিছু নেই আমার।”
চোখ মেলে উল্লাসীর দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে মেসবাহ বললো,
-“তোমার বাড়িতে কী পড়েছো তুমি?”
-“সালোয়ার কামিজ।”
-“তাহলে ওগুলোই পড়ো।”
-“কিন্তু ছোটমা তো বলেছে মেয়েদের বিয়ের পর শাড়ি ছাড়া অন্য কিছু পড়তে হয় না।”
বিরক্ত হলো মেসবাহ। আবারও চোখ বুজে ছোট্ট কিছু নিঃশ্বাস ফেলে সে বললো,
-“ইললজিক্যাল কথাবার্তা যতসব! চোখে আলো লাগছে। দরজা চাপিয়ে দিয়ে তুমি এখন যাও। আমি ঘুমোবো কিছুক্ষণ।”
মেসবাহর আদেশ পেয়ে দ্রুত ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়লো উল্লাসী। দরজা টেনে লম্বা বারান্দা ধরে সামান্য এগিয়ে একটি চেয়ারে বসে পড়লো সে। ভর দুপুরের চড়া রোদ গায়ে এসে লাগছে তার। তীব্র এই রোদের প্রখরতায় গায়ে জ্বালা ধরলেও নড়লো না উল্লাসী। রাশভারী চোখে তাকিয়ে রইলো উঠানের দিকে। সেখানে ছোট একটি বিড়ালের পেছনে পেছনে দৌড়ে তাকে ধরার চেষ্টা করছে মৌমি। তীব্র রোদে তার পুরো শরীর ঘামে ভিজে উঠলেও চোখেমুখে তার অদ্ভুত এক উজ্জ্বলতা ফুটে উঠেছে।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হবার উপক্রম.. বিছানায় শরীর মেলে জোর গলায় কয়েকবার অনাকে ডেকে উঠলো মুবিন। হঠাৎ করেই মাথাটা ধরেছে। একজন মাথা বানিয়ে দিলে হয়তো আরাম পাওয়া যেত!
-“ডাকছিলে?”
অনার উপস্থিতিতে স্বস্তি ফিরে পেল মুবিন। চোখজোড়া বুজে বোনের উদ্দেশ্যে বললো,
-“একটু মাথাটা টিপে দে। মাথার ব্যথার অসহ্য লাগছে।”
-“মাথা টিপে দিলে তাহলে কী পাবো আমি? বিনামূল্যে আমি কোনো কাজ করিনা।”
-“রাতে ঠান্ডা খাওয়াবো.. যা।”
চোখমুখ কুঁচকে অনা বললো,
-“শুধু ঠান্ডা?”
-“আর কী চাস? দু’দন্ড কাজের কত পারিশ্রমিক চাস তুই?”
-“পারিশ্রমিক বলছো কেন? এগুলো হচ্ছে বোনের প্রতি ভাইয়ের ভালোবাসা।”
মুবিনের পাশে বসে তার মাথায় হাত রাখলো অনা। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
-“এর পরের বার আসতে আমার জন্য সাজুগুজুর জিনিস আনবে মনে করে। এসব বই-পুস্তক আর আনবে না। ওসব কী আমি পড়ি?”
পরম শান্তিতে চোখজোড়া বুজে হালকা হেসে মুবিন বললো,
-“ওসব সাজুগুজুর জিনিস আমায় দ্বারা কেনা হবে না।”
-“এহ! ঠিকই কিনবে একসময়। আজ বোন বলে এসব বলছো। কাল যখন বউ চাইবে তখন কী বলবে?”
-“তোর মতো সাজুনী হবে নাকি আমার বউ!”
-“তো চৈতালির মতো বই পড়ুয়া হবে?”
অনার কথার পিঠে কিছু বললো না মুবিন। নীরবে খানিকক্ষণ কাটানোর পর নরম গলায় বললো,
-“তোর বান্ধবী চলে গেছে?”
-“হ্যাঁ.. একটু আগেই গেছে। জানো, আমার মাঝেমাঝেই মনে হয় ও আমার কাছ থেকে কিছু লুকোচ্ছে!”
-“হঠাৎ এমন মনে হবার কী কারণ?”
-“ছোট বেলা থেকেই তো ওকে দেখে আসছি। তাছাড়া ও নিজেও ওদের বাড়ির চেয়ে আমাদের বাড়িতেই বেশিরভাগ সময় কাটায়। আমি ওকে খুব ভালো করে চিনি, ভাই। ও কিছু তো একটা নিশ্চিত লুকাচ্ছে আমার কাছ থেকে!”
আবারও নিশ্চুপ হয়ে গেল মুবিন। মাথার ব্যথা অনেকটাই কমে এসেছে। শুধু মাঝেমাঝে কপালের ডান পাশটায় হালকা ঝিনঝিন করে উঠছে।

রাতে সকলে একসাথে খেতে বসে আলাউদ্দীন শেখ কোরবানির গরুর কথা উঠালেন। সকলের সাথে আলোচনা করে মাজহারুলের উপর গরু কেনার দায়িত্ব দিয়ে তিনি মেসবাহকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-“বাপজান ঈদের পর কয়দিন আছাও?”
-“একদিন আছি।”
-“অহ.. তা বৌমারে নিতেছো তো?”
একদন্ড ভেবে মেসবাহ বললো,
-“জ্বি না, আব্বা।”
-“কেন?”
ঠিক কি উত্তর দেবে না ভেবে পেল না মেসবাহ। শিক্ষিত এক লোক বাল্যবিবাহর মত নিকৃষ্ট এক কাজ করেছে! তার সোসাইটির লোকেরা একাজ কখনোই ভালো চোখে দেখবে না। সকলের চোখে তাকে নিয়ে যে সম্মান ছিল তা হারিয়ে ফেলবে সে। তাকে নিয়ে নানান সমালোচনা হবে, হাসাহাসি করবে সকলে। এমনকি তার পেশাগত দিকেও এর প্রভাব পড়বে। তাছাড়া তার স্ট্যাটাস, পজিশন.. কোনোএকটার সাথেও যায় না উল্লাসী। আর না উল্লাসী সেখানে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে। আজ বাচ্চা একটি মেয়ের জায়গায় প্রাপ্ত বয়স্ক কোনো গ্রাম্য মেয়ে হলেও তার কাছ থেকে কিছু প্রত্যাশা রাখতো মেসবাহ। নিজেই তাকে তৈরি করে নিত নিজের চাহিদা মতো। কিন্তু উল্লাসী.. বাচ্চা একটি মেয়ে। তার কাছে কী প্রত্যাশা রাখবে সে? প্রত্যাশার মানেই হয়তো জানা নেই তার।
-“তুমি থাকবা ওইখানে আর বউ থাকবো এইখানে। তাইলে আর প্রেম পিরিত কেমনে হইবো তোমাগো মাঝে? দেখা যাইবো কিছুদিন পর খবর আসবো হাজীসাবের মেজ বউ কোন পোলার লগে ভাগছে। খুব সুন্দর কথা হইবো.. না?”
ভাতের প্লেট থেকে হাত উঠিয়ে মেসবাহ তাকালো তার বাবার দিকে। ক্ষীণ গলায় বললো,
-“আব্বা, এবিষয়ে আমাকে জোর করবেন না। আপনাকে যথেষ্ট সম্মান করে আমি বিয়েটা করেছি। কিন্তু তাই বলে…”
-“তুমি যা বললা আরেকবার বলো! তোমার সাহস হয় কেমনে এই কথা মুখ দিয়া বাইর করার?”
আলাউদ্দিন শেখের মেজাজের সাথেসাথে তার গলার স্বর বাড়তে দেখে ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ফেললো মাজহারুল। মুখে কথা আসলেও কিছুই বললো না সে। নির্বাক শ্রোতা বেশে চুপচাপ তাকিয়ে রইলো মেসবাহর দিকে।
-“তোমারে আবারও আমি জিগাইতেছি। তুমি বৌমারে নিবা কী নিবা না?”
-“আব্বা, প্লিজ।”
-“এই শেষবার ভালো করে জিগাইতেছি। তারপর যা হইবো তার জন্য শুধু দায়ী হইবা তুমি। কথা খানা মাথায় রাইখা উত্তর দিও। তুমি তোমার লগে বৌমারে নিবা?”
-“জ্বি.. নিব।”
লম্বা একটি দম ছেড়ে চোখজোড়া বুজে মেসবাহ কথাটি বলেই উঠে পড়লো টেবিল ছেড়ে। কিছুসময় তার যাত্রাপথের দিকে তাকিয়ে থাকার পর নজর সরিয়ে উল্লাসীর দিকে দিল মোরশেদা বেগম। ইশারায় তাকে মেসবাহর পিছুপিছু যেতে আদেশ করলেও তা বোঝায় ব্যর্থ হলো উল্লাসী। তবে পরমুহূর্তেই পাশ থেকে অর্পা ধীর গলায় মেসবাহর পিছুপিছু তাকে যাবার কথা বলতেই খাবার ফেলে উঠে পড়লো সে। দ্রুত পায়ে ছুটলো সেদিকে।

-“কী সমস্যা? তুমি কেনো এখানে এসেছো? তোমাকে আসতে বলেছি আমি? তাহলে কেনো এসেছো? নিশ্চয়ই তোমাকে পাঠিয়ে দিয়েছে। আর তুমিও কুকুরের মতো ওদের কথা শুনে নাচতে নাচতে এখানে চলে এসেছো! নিজস্বতা বলতে কিছু নেই তোমার? অবশ্য তোমার কীভাবে থাকবে যেখানে আমার নিজেরই নেই! এবাড়িতে কারো সেই অধিকার নেই। দিস হাউজ ইজ রুইননিং মাই লাইফ।”
রাগে পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে মেসবাহর। খুবই ঠান্ডা মাথার একজন মানুষ তিনি। সকলের সঙ্গে ঠান্ডা মেজাজেই কথা বলে অভ্যস্ত। তাছাড়া মাঝেমাঝে কারো উপর রেগে গেলেও তা শুধু গম্ভীরমুখে কথা বলাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। তবে আজ নিজের ভেতরের এই ক্রোধকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলো না মেসবাহ। হাতের পাশের ফুলদানিটি ছুঁড়ে ফেলে আবারও চেচিয়ে উঠলো সে। ক্ষিপ্র গলায় বললো,
-“বের হও। এখনি বের হও। তোমার চেহারাও দেখতে চাই না আমি। বের হও বলছি!”
আতংকে কাঁপা বুক নিয়ে দ্রুত ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এল উল্লাসী। প্রচুর কান্না পাচ্ছে তার। কেনো শুধুশুধু বকেন উনি? সে নিজে তো কিছু বলেনি। যা বলেছেন উনার বাবা বলেছেন। উনাকে বকেছেন। এখানে ঠিক তার দোষ কোথায়? চোখভর্তি জল নিয়ে দেয়ালে শরীর ঠেকিয়ে মেঝেতে বসে পড়লো উল্লাসী। আজ অনেকদিন পর মাকে খুব করে মনে পড়ছে। মায়ের কোলে মাথা গুঁজে অঝোর ধারায় কাঁদতে ইচ্ছে করছে। একটিবার কী আসবে তার মা মেয়ের আবদার পূরণ করতে?

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here