#নীরবতা
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_১৬
পুরো ঘরজুড়ে বিরাজ করছে শুভ্রতা। ফুলের সৌরভে চারিপাশটা ম ম করছে। চারিদিক থেকে অদ্ভুত এক শীতল বাতাস গায়ে এসে লাগছে। পুলকিত মনে বিছানায় এসে বসলো মেসবাহ। তাকালো খানিকটা দূরে গুটিসুটি মেরে বসে থাকা উল্লাসীর দিকে। মেয়েটির মুখে উজ্জ্বল এক আভা ফুটে উঠেছে। এইরূপে দারুণ দেখাচ্ছে তাকে। তাদের প্রথম বিয়ের দিনেও কি উল্লাসীর মুখে একই আভা ফুটে উঠেছিলো? হয়তোবা। তবে সেদিন তা নজরে আসেনি। অপার্থিব এক পরিবর্তন ঘটেছে তার নিজের মাঝে। আজ খুব করে ইচ্ছে করছে বয়সের ব্যবধান ভুলে উল্লাসীর প্রতি প্রত্যাশা রাখতে। ধীরস্থির ভাবে তাকে নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতে। তবে একদিন না একদিন তো বড় হবে উল্লাসী। সব কিছু বুঝতে শিখবে। সেসময় যদি বেঁকে বসে সে? নিজের জীবনে আর তার প্রয়োজন বোধ না করে! তখন? তখন কী অন্যায় করা হবে না মেয়েটির সাথে? বুকচিরে একটি দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল মেসবাহর। নিজের চিন্তাভাবনা সংযত করে ঠোঁটের কোণায় হালকা হাসির রেখা টেনে সে বললো,
-“গরম লাগছে না?”
মুখ তুলে মেসবাহকে দেখামাত্র উল্লাসী এগিয়ে এল তার দিকে। মাথার ঘোমটা নামিয়ে দিয়ে বললো,
-“উহু.. রাতে আপনি খেয়েছেন?”
-“খেয়েছি.. তুমি?”
-“আমিও খেয়েছি। একটা সত্যি কথা বলুন তো। মুন্নি ভাবির রান্না আপনার ভালো লাগে নাকি আমার হাতের রান্না?”
-“তোমার।”
-“আমি জানতাম! আমি জানতাম আপনি এটাই বলবেন।”
-“তাহলে প্রশ্ন করলে কেনো? যেহেতু জানাই ছিল!”
-“মুন্নি ভাবি জিজ্ঞেস করতে বলেছিলো বলে। ভাবি যে আজ ইলিশ মাছ ভাজি করেছিলো ওটায় কিন্তু ভাবি লবণ দেয়নি। আপনি খেয়ে বুঝেছিলেন?”
-“বুঝেছিলাম…”
-“আমিও বুঝেছিলাম। কিন্তু কিছু বলিনি।”
-“গুড.. ভালো কাজ করেছো।”
বিছানা ছেড়ে উঠে ঘরের আলো নিভিয়ে ডিম লাইট জ্বালিয়ে আবারও বিছানায় এল মেসবাহ। পা উঠিয়ে আরাম করে বসে বললো,
-“তুমি গ্রামের মেয়ে হয়েও যথেষ্ট শুদ্ধ ভাষায় কথা বলো। ব্যপারটি প্রথম আমায় বেশ ভাবিয়েছে। অনাও এভাবে কথা বলেনা যেভাবে তুমি বলো। দারুণ লাগে শুনতে।”
হাসলো উল্লাসী। উচ্ছ্বসিত গলায় বললো,
-“আমার মা শিখিয়েছে।”
-“তোমার মার পড়াশোনা কতদূর?”
-“জানি না। তবে অনেক পড়েছে। পড়তে পড়তে বাবার সাথে বিয়ে হয়ে যাবার পর আর পড়েনি।”
-“তোমার বাবামায়ের কাহিনী টা কী বলোতো! কিভাবে কী হলো উনাদের মাঝে? ঢাকা থেকে সব ছেড়েছুড়ে সরাসরি গ্রামে!”
-“আমিও খুব বেশি জানি না। তবে মার মুখে যেটুকু শুনেছি তাতে মার বাবারা ছিল অনেক বড়লোক। মা ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় বাবাকে নতুন ড্রাইভার হিসেবে নিয়োগ দেয় নানা। মাকে নিয়ে যাওয়া আসাই ছিল তার প্রধান কাজ। দীর্ঘদিন এভাবে চলার পর মা বুঝতে পারে উনি বাবাকে পছন্দ করে। তার ধীর স্বভাব, তার মুখের হাসি, তার নীরবতা.. সবটাই নাকি মাকে খুব করে টানতো। আমার বাবাকে দেখেছেন তো আপনি। সুন্দর মনে হয়নি আপনার?”
মাথা নেড়ে উল্লাসীর কথায় সম্মতি জানাতেই আবারও সাদাকালোর দুনিয়ায় নিজের বাবামাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ শুরু করলো উল্লাসী। বেশ লাগে তার এই গল্পটি সকলের কাছে শুনাতে। তবে আজকাল আর এগল্প কেউ শুনতে চায়না। শুনলেও বা নাক শিটকোয়। তবে আজপর্যন্ত তাদের এই অদ্ভুত কাজকর্মের কোনো ব্যখ্যা খুঁজে পায়নি সে।
-“মা একদিন হুট করেই বাবাকে বলে সে বাবাকে বিয়ে করতে চায়। সবশুনে বাবার নাকি একঘন্টার মতো কোনো মুখের জবান ছিল না। হাস্যকর না ব্যাপারটি?”
-“হ্যাঁ.. তারপর?”
-“তারপর আর কী? বাবা রাজি ছিল না ওদিকে মাও ছাড়ার পাত্রী ছিলেন না। ঠিকই নিজের মায়াজালে বাবাকে আটকে ফেলে মা। এসব কিন্তু আমি না, মা বলেছে।”
বালিশের নিচ থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে একটি সিগারেট ধরালো মেসবাহ। তারপর বললো,
-“বুঝেছি.. তারপর?”
-“তারপর যখন মায়ের বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে, তখন বাবাকে হুট করেই বিয়ে করে ফেলে মা। নানাকে জানায় তবে সে মেনে নেয় না। বের করে দেয় বাড়ি ছেড়ে। ঘুড়েফিরে গ্রামে মাকে নিয়ে ফিরে আসে বাবা। তারপর আসি আমি.. মা আমাকে কী বলতো জানেন?”
-“কী?”
-“আমি নাকি তাদের ভালোবাসার ফসল বুনতেই পৃথিবীতে এসেছি। আমিও তখন মাকে জড়িয়ে ধরে বলতাম, কোথায় মা? ফসল তো বুনছে বাবা। আমি তো ফসল বুনছি না। মা আমার তখন হেসে কুটিকুটি হতো।”
গলা হঠাৎ ধরে এল উল্লাসীর। চোখভর্তি জল নিয়ে বিছানার চাদরে দৃষ্টি স্থির করে আবারও বললো,
-“মা যেদিন মারা যায় সেদিনও মা আমার চুল বেঁধে দিয়েছিলো। কপালে চুমু দিয়ে বলেছিল, বলতো আমাদের ভালোবাসার ফসল বুনতে তোর ভাই আসছে না বোন? আমি বলেছিলাম, বোন। ওকে আমি খুব আদর করবো মা। সারাদিন নিজের কোলে রাখবো। মা বলেছিল, আর পড়াশোনা? আমি বলেছিলাম, গোল্লায় যাক!”
স্তব্ধতা কাটিয়ে উঠতে পারলো না মেসবাহ। অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো উল্লাসীর দিকে। ওদিকে উল্লাসী বলার উপরেই রয়েছে,
-“আশেপাশের সবাই বলছিলো, মারে শেষ দেখা দেইখা দে। আর কখনোই আসবো না তোর মা। আমিও খুব করে শেষ দেখা দেখে নিয়েছিলাম সেদিন। মার ঘুমন্ত মুখে হাজার হাজার চুমো দিয়েছিলাম। চিৎকার করে কেঁদে বলেছিলাম, মা আমাকে ফেলে কোথাও যাবে না.. যেতে পারে না।”
উচ্চ স্বরে কেঁদে উঠলো উল্লাসী। পাঁচ বছর আগের সেই দৃশ্য আজও স্পষ্ট দেখতে পায় সে। সাথেসাথেই বুকের ভেতরটায় অসহ্য যন্ত্রণা হয় তার। মাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে, মুখে চুমো দিতে ইচ্ছে করে। তবে কোথায় পাবে সে তার মায়ের দেখা!
-“আমি মায়ের আদর পেয়েছি, কিন্তু আমার বোন তা পায়নি। কথা বলতে, ভালোভাবে চলতে না পারলেও ও যে মায়ের আঁচল খুঁজে বেরায় তা আমি খুব বুঝি। ওর কষ্ট উপলব্ধি করতে পারি। আপনি তো ডাক্তার.. সব কিছুর ঔষধই আপনার কাছে আছে। আমার বোনটাকে ভালো করে দেবেন আপনি? ওর কষ্ট কমিয়ে দেবেন?”
বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠলো মেসবাহর। এপরিস্থিতিতে ঠিক কী করা উচিৎ ভেবে পেল না সে। তবে মেয়েটির কান্নার বেগ ধীরেধীরে বাড়ছে। কিছু একটা করা উচিৎ তার…
-“ছোটমা কথা দিয়েছে আমায়।আপনাকে বিয়ে করলে ছোটমাও খোকনের মতোই আদর করবে সুহাকে। সুহাও মায়ের আদর পাবে। আমি তো বিয়ে করেছি আপনাকে। কিন্তু ছোটমা কী তার কথা রেখেছে? যে মেয়েটি আমায় ছাড়া একদন্ড থাকতে পারতো না, সেই মেয়েটি আজ আমায় ছাড়া কী করে থাকে বলতে পারবেন? আমি ছাড়া ওর দুনিয়ায় আর কেউ নেই। প্রতিবন্ধী বলে কেউ ওকে ভালোবাসে না, কেউ আদর করে কাছে টেনে নেয় না। কী দোষ ওর? বলুন না..”
এগিয়ে এসে উল্লাসীকে নিজের বুকে আঁকড়ে নিল মেসবাহ। মেয়েরটির বলা একেকটি কথা তার বুকে এসে বিঁধছে তীরের মতো। মেয়েটির মা নেই ভাবতেই বুকের ভেতরটায় শূন্যতা অনুভব হচ্ছে। মায়া হচ্ছে মেয়েটির জন্য। নাম না জানা এক কষ্ট বারবার এসে গলা চেপে ধরছে।
-“ওর কেউ নেই। ওকে কেউ আদর করে না। বাবাও না.. বাবাও ওকে আদর করে না। আমার কত কষ্ট হয় জানেন?”
-“জানি..”
-“জানেন না। আপনি জানেন না। কেউ জানে না।”
মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মেসবাহ বললো,
-“ঠিকাছে। কেউ জানে না। একটু শান্ত হও তুমি।”
মেসবাহর মমতাময়ী স্পর্শে ধীরেধীরে শান্ত হয়ে এল উল্লাসী। তবে খানিকটা ফোঁপানি রয়েই গেল। মেয়েটির নীরবতা যতটা ভালোলাগে, ততটাই কষ্ট হয় মেয়েটির কান্নামাখা মুখ দেখলে। বুকের ভেতরটায় উথালপাথাল শুরু হয়, অস্থির লাগে। উল্লাসী কি বোঝে তার এই অস্থিরতার কারণ? নিজের বাহুডোর থেকে ছাড়িয়ে দু’হাতের আঁজলে মেসবাহ তুলে ধরলো উল্লাসীর মুখ। মৃদু আলোয় মেয়েটির চোখ জ্বলজ্বল করে উঠছে। কী আছে তার ওই দুই চোখে? প্রশ্নের জবাব না পেলেও নিজের ঠোঁটজোড়া নিয়ে সে ঠেকালো উল্লাসীর কপালে। চোখজোড়া বুজে সময় নিয়ে তাতে এঁকে দিল স্নেহের স্পর্শ।
-“সেদিন আপনাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, বাবা মাকে যতটা ভালোবাসতো আপনিও কি আমায় ততোটাই ভালোবাসেন? কিন্তু আজ বলছি, আপনি কখনোই আমাকে সেভাবে ভালোবাসবেন না, যে ভালোবাসা আমি হারিয়ে গেলেই ফুরিয়ে যাবে। আপনি আমাকে সেভাবেই ভালোবাসবেন, যে ভালোবাসায় আমি মার মতো হারিয়ে গেলেও ছোটমার মতো কেউ কখনোই আসবে না।”
বুকচিরে আবারও একটি দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল মেসবাহর। ঠোঁটজোড়া উল্লাসীর কপাল থেকে উঠিয়ে বালিশে মাথা গুঁজলো সে। ভাগ্য তাকে একোন স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে? যার একূল অকূল দুকূলই ঘন আঁধারময়।
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মাথার চুল থেকে পা পর্যন্ত উল্লাসীকে আগাগোড়া লক্ষ্য করলো মুন্নি সরকার। তারপর ভ্রু নাচিয়ে বললো,
-“গোসল দাও নি?”
-“উহু.. বাড়িতে আম্মা সকালে গোসল দিতে বললেও উনি তো আমাকে সকালে গোসল করতে নিষেধ করে দিয়েছেন।”
-“কে? মেসবাহ?”
-“হ্যাঁ…”
উদ্বিগ্ন মনে প্রশ্নের হাঁড়ি খুলে বসলো মুন্নি সরকার। মেসবাহ কেনো উল্লাসীকে সকালে গোসল করতে নিষেধ করবে? এটুকো বোঝার বয়স তো মেসবাহর হয়েছে৷ তাহলে কী তেমন কিছুই হয়নি দুজনের মাঝে? পরমুহূর্তেই নিজের প্রশ্নের জবাব নিজেই করে নিল মুন্নি সরকার। কেনো হবে না ওসব? তাহলে প্রেম করে বিয়ে করেছে কী কাজে? অবশ্যই রান্নাবান্না করে শুধু খাওয়ানোর কাজে তো নয়। তবুও নিজের মনে চলা প্রশ্নোত্তরের পাঠ চুকাতেই উল্লাসীকে নিজের কাছে এনে বসালো মুন্নি সরকার। একদন্ড ভেবে ক্ষীণ গলায় বললো,
-“তোমায় মেসবাহ আদর করে?”
মাথা নেড়ে তাতে সম্মতি জানিয়ে উল্লাসী বললো,
-“করে তো।”
-“কোথায় কোথায় করে?”
ভ্রু কুঁচকে ফেললো উল্লাসী। বিস্ময় নিয়ে বললো,
-“আদর আবার জায়গায় জায়গায় করা যায় নাকি!”
-“যায় তো.. জানো না?”
-“উহু..”
মনের ভেতরে চলা সন্দেহ আরও জোরজার হলো মুন্নি সরকারের। উল্লাসীর দিকে চেয়ে আগ্রহী গলায় বললো,
-“মুখে, গলায়, ঠোঁটে আলাদা আলাদাভাবে পুরো শরীরেই তো স্বামীরা আদর করে। কেনো? তোমায় মেসবাহ এভাবে আদর করে না?”
চিন্তায় নিমগ্ন হয়ে উল্লাসী জবাব দিল,
-“না তো।”
পুরো ব্যপার বোধগম্য না হলেও এর কারণ খুঁজতে মরিয়া হয়ে উঠলো মুন্নি সরকারের মন। কেন করবে না মেসবাহ এসব? সে যতটুকু মেসবাহকে চেনে জানে তাতে অত্যন্ত ভদ্র সুলভ একজন ব্যক্তি সে। কথাবার্তা খুব একটা না বললেও অত্যন্ত আন্তরিক। এবং ডাক্তার হবার সুবাদে প্রচুর স্বাস্থ্য সচেতন। তাহলে কী ঠিক একারণটাই তাদের ভালোবাসার মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে? মেসবাহ উল্লাসীকে এতটাই বাচ্চা ভাবে যে পারলে তাকে এখনি ধরে ফিডার খাওয়াবে! সেখানে বাচ্চা একটি মেয়ের সাথে মেসবাহর মতো ছেলে এসব করতে অবশ্যই দশবার ভাববে। কারণ খুঁজে পেয়ে বেস উচ্ছ্বসিত হলো মুন্নি সরকার। উল্লাসীর দিকে আবারও ফিরে সে ফিসফিস করে বললো,
-“আমার কথা মন দিয়ে শুনো। আমি যা বলবো তাই করবে। কী? করবে তো?”
শুক্রবার হওয়ায় বেশ বেলা করেই ঘুম থেকে উঠলো মেসবাহ। ফ্রেশ হয়ে ডাইনিংয়ে এসে বসে জোর গলায় কয়েকবার উল্লাসীকে ডাকতেই রান্নাঘর ছেড়ে বেরিয়ে এল সে। টেবিলে গোছানো সব খাবারের দিকে ইশারা করে বললো,
-“সব মুন্নি ভাবি দিয়ে গেছে।”
-“আশ্চর্য! সে আবার কেনো দিয়েছে এসব? তুমি নিষেধ করোনি?”
-“উহু..”
-“এটা কী ঠিক করেছো?”
-“কী যে!”
আর কথা বাড়ালো না মেসবাহ। থালায় খিচুড়ি উঠিয়ে মাংসের ঝোল নিয়ে মুখে পুড়তে শুরু করলো একের পর এক।
খাবার শেষে মেসবাহ ড্রয়িংরুমে এসে বসতেই তার পিছুপিছু এল উল্লাসী। পাশে বসে নরম গলায় বললো,
-“আপনি আমায় আদর করেন না কেনো?”
প্রশ্ন শুনে বড়সড় একটি ধাক্কা খেলো মেসবাহ৷ চোখজোড়া প্রশস্ত করে বললো,
-“মানে?”
-“মানে আপনি আমায় কেনো আদর করেন না? স্বামী তো তার স্ত্রীকে অনেক জায়গায় আদর করে। আপনি কেনো আমায় করেন না?”
ওপাশ থেকে মেসবাহর কোনো জবাব না পেয়ে উল্লাসী আবারও বললো,
-“মুখে, ঠোঁটে, গলায় আলাদা আলাদাভাবে পুরো শরীরেরই তো স্বামীরা আদর করে। তাহলে আপনি কেনো করেন না? একটু সবজায়গায় আদর করলে কী এমন হয়?”
ঢোক গিলে নিজেকে সামলে নিল মেসবাহ। আশেপাশে নজর বুলিয়ে ধীর গলায় বললো,
-“কাল রাতে তো করলাম। ঐযে কপালে…”
-“ওটা তো চুমু ছিলো।”
-“আরে পাগলি! চুমু আদর একই।”
একমুহূর্ত ভেবে মুন্নি সরকারের বলা কথাগুলো স্মরণ করলো উল্লাসী। তারপর আহ্লাদী গলায় বললো,
-“তাহলে এখনি ঠোঁটে একটু আদর করে দিন..”
সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো মেসবাহ। দ্রুত পায়ে সদর দরজার দিকে এগুতে এগুতে বললো,
-“সর্বনাশ! আমি ফোন করেছিলো, না মানে লিমন ফোন করেছিলো। দেখা করে আসি। লিমন লাগাও। না মানে.. ইশশ! দরজা লাগাও।”
(চলবে)