#নীরব_রোদনে
#আলো_রহমান—Alo Rahman
#পর্ব:৭
.
.
.
শহরে রাত নেমেছে। ল্যাম্পপোস্টের সোডিয়াম আলো পরে চারিদিক হলদেটে দেখাচ্ছে। আবছা ঘোলা শহরের উপরে গাঢ় কালো চাদরে ঢাকা আকাশ। সেই নিকষ কালোর বুকে কোটি কোটি নক্ষত্র খচিত নকশা সোডিয়াম বাতিকে ঘিরে গিজগিজ করছে আলোর পোকা। যানবাহনের বিরাম নেই। এই রাতের বুক চিড়েও তারা ছুটছে। তাদের যন্ত্রণায় নিস্তব্ধতা আসতে পারছে না। নিস্তব্ধতা একরাশ বিরক্তি নিয়ে ভুরু কুঁচকে বসে আছে দূরের কোনো অজানায়। শহরটার উপর সে বড় বিরক্ত।
নীলয় ফুটপাত ধরে হেঁটে চলেছে। কঙ্কার খোঁজ সে পায় নি। থানায় ডায়েরি করবে কিনা সেটাও সে ঠিক বুঝতে পারে নি। থানার সামনে দিয়ে ঘুরেফিরে চলে এসেছে। ভেতরে যায় নি। সারাদিন বাড়িও ফেরে নি। বাড়ির সকলের সামনে কোন মুখ নিয়ে দাঁড়াবে সে? কঙ্কা কোথায় গেছে, সে কথা তার জানা নেই– এই সাংঘাতিক কথা কি করে বলবে সবাইকে? তাই রাত করে বাড়ি ফিরছে সে। পাড়ার ভেতরে ঢুকতেই কোলাহল কমে এলো। এদিকে প্রায় শান্ত সব। শুধু দুয়েকটা বাড়ি থেকে টিভির আওয়াজ আসছে। নীলয় ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাড়ির সামনে পৌঁছালো।সারাদিন যে খাওয়া হয় নি, তা এবার শরীর জানান দিচ্ছে। ক্লান্ত হাতে সে কলিং বেলের সুইচ টিপলো। দরজা খুলতে এলো সুরমা। চুপচাপ দরজা খুলে দিলো। কোনো প্রশ্ন করলো না। শুধু ছোট্ট করে বলল,
–হাতমুখ ধুয়ে নে। আমি খেতে দিচ্ছি।
নীলয় ইতস্তত করে প্রশ্ন করলো,
–চাচা, চাচী ঠিক আছে, আপা?
–ঘুমিয়ে আছে। তুই ভেতরে যা। হাতমুখ ধুয়ে খেতে আয়। তোর দুলাভাই এসেছে। তোর সাথে খাবে বলে অপেক্ষা করছে।
নীলয় কথা বাড়ালো না। ভেতরে চলে গেল। সুরমাও মূল দরজায় তালা লাগিয়ে দিয়ে ভেতরে ঢুকলো। ড্রয়িং রুমের বড় ঘড়িটা সময় জানান দিচ্ছে। এখন প্রায় মধ্যরাত।
শাদাব আর নীলয় খেতে বসেছে। সাথে সুরমাও বসেছে। নীলয় একমনে খেয়ে চলেছে। সারাদিন যে ওর পেটে কিছু পরে নি, সেটা ওকে দেখে বেশ বোঝা যাচ্ছে। শাদাব ভাত মুখে দিতে দিতে প্রশ্ন করলো,
–কঙ্কার খোঁজ পেলে না?
নীলয় মাথা নেড়ে বলল,
–না। ওরা কোথায় গেছে সেটা কঙ্কার কোনো বন্ধুবান্ধবও জানে না। কি করা যায় বলুন তো, দুলাভাই? থানায় ডায়েরি করবো?
–ডায়েরি করে রাখলে মন্দ হয় না।
–কিন্তু দুলাভাই, কিসের ডায়েরি করবো? মিসিং ডায়েরি? নাকি অপহরণ মামলা?
শাদাব এত দুঃখের মধ্যেও হেসে ফেললো। পানির গ্লাস হাতে নিতে নিতে বলল,
–অপহরণ মামলা হবে কেন? কঙ্কা তো স্বেচ্ছায় গেছে। মিসিং ডায়েরি করাটাই উচিত হবে।
–ঠিক আছে। তাই করবো। ইয়ে দুলাভাই, আপনি আমার সাথে একবার যাবেন?
–নিশ্চয়ই যাব।
সুরমা এবার শান্ত দৃষ্টিতে নীলয়ের দিকে তাকালো। শীতল গলায় বলল,
–কঙ্কা কার সাথে পালিয়েছে, সেটা তুই জানিস। তাই না, ভাই?
নীলয়ের খাওয়া থেমে গেল। গ্লাস থেকে এক চুমুক পানি খেয়ে সে বলল,
–হ্যাঁ, আপা।
–ও যে পালিয়ে যাবে, সেটাও কি তুই জানতি?
নীলয় ইতস্তত করে বলল,
–আসলে আপা, কঙ্কা সত্যিই যে এমনটা করবে, সেটা আমি বুঝতে পারি নি।
–ছেলেটাকে তুই চিনিস? সে কেমন, নীলয়? ভালো ছেলে?
নীলয় মাথা নিচু করে বলল,
–হ্যাঁ, ভালোই।
সুরমা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। বাকি সময়টা কেউ আর কোনো কথা বলল না। চুপচাপ খাওয়া শেষ করলো সকলে।
____________
শাদাব সুরমার ঘরের বিছানায় আধশোয়া হয়ে আছে। মাকে ফোন করে সে জানিয়েছে আজ সে বাড়ি ফিরতে পারবে না। এ বাড়িতে একটা বিপদ ঘটেছে। কি বিপদ সে ব্যাপারে অবশ্য বিস্তারিত এখনো বলে নি। বাসায় ফিরে বুঝিয়ে বলবে। সুরমা ঘরে ঢুকলো। দরজা বন্ধ করে দিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো। শাদাবের পাশে বসে কেমন যেন অস্থির লাগে সুরমার। কথা বলার জন্য মনটা ছটফট করে। কিন্তু কি কথা বলবে সেটা সুরমা বুঝতে পারে না। শাদাবও নিজে থেকে কোনো কথা বলছে না। শেষে সুরমাই মুখ খুললো। শাদাবের কিছুটা কাছাকাছি গিয়ে বলল,
–মাকে সব কথা বলেছেন?
শাদাব একবার সুরমার দিকে তাকালো। তারপর ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
–না। বাড়ি গিয়ে বলবো। তুমি চিন্তা করো না। তোমার বোনের পালানো নিয়ে মা তোমাকে কিছু বলবেন না। আমার মা ওরকম নন।
–আমি সেটা বলার কথা বলি নি।
–তাহলে?
–অন্য কথা বলছি আমি।
শাদাব ভ্রু কুঁচকে সুরমার দিকে তাকালো। জানতে চাইলো,
–কি কথা?
সুরমা মাথা নিচু করে বলল,
–আপনি যে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সে কথা কি মাকে বলেছেন?
শাদাব নির্বিকার ভঙ্গিতে জবাব দিলো,
–না। তবে বলবো।
–মা মেনে নেবেন?
শাদাব গম্ভীরমুখে বলল,
–না মানার কিছু নেই। জীবনটা আমার, সিদ্ধান্তও আমার।
সুরমার চোখ ছলছল করে উঠলো। সে ব্যথিত গলায় বলল,
–আপনি প্রতিশোধ নিচ্ছেন আমার উপরে। আমি এতদিন আপনার সাথে নিষ্ঠুরতা করেছি। এখন আপনি করছেন। তাই না?
–না। শুধু নিজের জীবনে ভালোবাসা খুঁজছি। এটা কি অপরাধ?
–আপনি কেন আমাকে বোঝার চেষ্টা করছেন না? আমাকে এভাবে ছেড়ে যাবেন না প্লিজ!
শাদাব হেসে উঠে বলল,
–আমি তো তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছি না। বরং তুমিই আমাকে ছেড়ে গিয়েছ।
সুরমা হুট করে শাদাবকে জড়িয়ে ধরলো। সে কেঁদে ফেলেছে। সুরমা প্রতিবাদ করে বলে উঠলো,
–না না। কখনো আমি আপনাকে ছেড়ে যেতে চাই না।
শাদাব হাসলো। সুরমার চোখের জল মুছতে মুছতে আবৃত্তি করলো চার লাইন কবিতা,
“হয়তো তোমাকে হারিয়ে দিয়েছি
নয় তো গিয়েছি হেরে
থাক না ধ্রুপদী অস্পষ্টতা
কে কাকে গেলাম ছেড়ে।”
সুরমা হুহু করে কেঁদে উঠলো। ভাঙা ভাঙা শব্দে উচ্চারণ করলো,
–প্লিজ না!
শাদাব মৃদু হেসে বলল,
–কবিতাটা কার লেখা জানো?
সুরমা প্রশ্নটার উত্তর দিলো না। প্রশ্নটা না শোনার ভঙ্গিতে বলল,
–আমাদের সংসারটা কি সত্যিই ভেঙে যাচ্ছে? আপনি সত্যিই আমাকে ছেড়ে দেবেন?
শাদাব এবার চোখ বুজলো। নিষ্ঠুরের মতো বলল,
–হ্যাঁ।
সুরমা স্তব্ধ হয়ে বসে থাকলো কিছুক্ষণ। মানুষটা এত পাষাণ কেন? তার ভেতরের এত কাছে আসার আকুলতা কেন এই মানুষটা বুঝতে পারছে না? কিছুক্ষণ পর মৃদু গলায় সুরমা বলল,
–এমনিতেই বাসায় এই অবস্থা। খালা আর খালুজান একটা মানসিক ধাক্কা পেয়েছেন। তার মধ্যে যদি আমার ডিভোর্সের কথা…..
শাদাব কাঠকাঠ গলায় বলল,
–চিন্তা করছো কেন? তুমি তোমার খালা খালুজানের কাছেই থাকবে। উনাদের দেখে রাখবে। ডিভোর্স পিটিশন আমার হাতে এলে আমি তোমাকে পাঠিয়ে দেবো। তুমি সই করে দেবে। আর পিটিশন হলেই তো ডিভোর্স হয়ে যায় না। অন্তত তিন মাস সময় লাগে। কাজেই তোমার খালা আর খালুজানকে কথাটা এখন না জানালেও চলছে।
কথা শেষ করে শাদাব লম্বা হয়ে শুয়ে পরলো। এক হাত কপালের উপরে রেখে চোখ বন্ধ করলো। সুরমা স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো। কথাগুলো কত সহজেই না বলে দিলো শাদাব! সে বড় করে একবার শ্বাস নিলো। তারপর ধীরে ধীরে বলল,
–শাদাব, আমার খুব মন খারাপ। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি একটু আপনাকে জড়িয়ে ধরে শুই?
শাদাব কথা বলল না। সুরমা কিছুক্ষণ উত্তরের অপেক্ষা করলো। তারপর ধীরে ধীরে শাদাবের বুকে মাথা রেখে শুলো। শাদাব নড়াচড়া করলো না। সুরমাকে জড়িয়ে ধরার তীব্র ইচ্ছা হলেও এই ইচ্ছাকে সে একেবারেই প্রশ্রয় দিলো না। শুধু মৃদু গলায় বলল,
–তুমি চিন্তা করো না, সুরমা। কঙ্কাকে নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে।
______________________
কঙ্কা আর আবির অনেক ঘুরে একটা ঘর ভাড়ায় পেয়েছে। সাধারণ একটা ঘর, উপরে টিনের ছাউনি, ঘরের সামনে একটা উঠান। উঠানের এক মাথায় বাড়িওয়ালার তিনটা ঘর। বাড়িওয়ালা কিছুতেই ওদের ভাড়া দিতে চাইছিলেন না। ওদের বাড়ির লোকের সাথে কথা বলতে চাইছিলেন। সত্যিই ওরা বাড়িতে জানিয়ে এসেছে কিনা সেটা জানার জন্য খুব গোলমাল করছিলেন ভদ্রলোক। পরিশেষে বাড়িওয়ালার হাতে পাঁচ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে এই ঘরটা পাওয়া গেছে।
কঙ্কা খুব আগ্রহ নিয়ে একটা তোশক, একটা কাঁথা আর দুটো বালিশ কিনে এনেছে। এই কটা জিনিস কিনতেই সন্ধ্যা হয়েছে তাদের। আবির মুগ্ধ হয়ে তাকে দেখেছে শুধু। সংসার ব্যাপারটা মন্দ লাগছে না। বাড়ি ফিরে রান্না করতে গিয়ে কঙ্কা আবিষ্কার করলো রান্নাবান্নার জন্য প্রয়োজনীয় কোনোকিছুই তারা কিনে আনে নি। এমনকি কোনো বাসনপত্রও নয়। রান্না করার জন্য কোনো স্টোভও তাদের নেই। শেষে আবিরকে বাইরে থেকে খাবার কিনে আনতে হয়েছে।
রাত অনেক হয়েছে। কঙ্কা বেনারসি বদলে একটা সাধারণ শাড়ি পরেছে। ঘরে মোমবাতি জ্বলছে। বাড়িতে বিদ্যুৎ আছে। কিন্তু তারা বাতি কিনে আনতে ভুলে গেছে। তাই বাড়িওয়ালার কাছ থেকে একটা মোমবাতি এনে জ্বালানো হয়েছে। কঙ্কা মেঝেতে বিছানা পেতেছে। আবির চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখছিল। এবার বিছানায় বসলো। কঙ্কা শুয়ে পরেছে। হাই তুলে বলল,
–খুব ক্লান্ত আমি। ভীষণ ঘুম পাচ্ছে।
আবির হাসলো। কঙ্কার একেবারে কাছাকাছি গিয়ে বলল,
–ঘুম পেলে হবে? আজ আমাদের বাসর রাত না?
কঙ্কা মৃদু হেসে বলল,
–তুমি তো কোনো ফুল আনলে না, আবির।
–ধুর! বাসর করতে ফুল লাগে নাকি? ওসব বাজে কথা।
–হোক বাজে কথা। আমার ফুল চাই। যাও নিয়ে এসো।
–এত রাতে ফুল কোথায় পাবো, কঙ্কা?
কঙ্কা হাই তুলে বলল,
–ফুল না আনলে বাসর রাত ক্যান্সেল।
আবির হেসে উঠলো। তারপরেই কঙ্কাকে সে কাছে টেনে নিলো। কঙ্কা এখন তার স্ত্রী। কাজেই এসব তুচ্ছ বাধা কানে নেওয়ার কোনো মানেই হয় না। কঙ্কাও তেমন বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে না। সে বুদ্ধিমতী। সে জানে গায়ের জোরে আবিরের সাথে সে পেরে উঠবে না। আবির যখন প্রায় পুরোপুরি কঙ্কার শরীরে মগ্ন হতে শুরু করেছে, তখন কঙ্কা ফিসফিস করে বলে উঠলো,
–তোমার ল্যাপটপে তোমার প্রেমিকাদের যতগুলো আপত্তিকর ছবি আছে সেসব ডিলেট করে দাও, আবির।
আবির চমকে উঠলো। কিছুটা দূরে সরে গেল কঙ্কার থেকে। কঙ্কা হেসে উঠে বলল,
–কি হলো? ভয় পেলে নাকি?
আবির বিরক্ত গলায় বলল,
–সুন্দর মুহূর্তটা কেন আজেবাজে কথা বলে নষ্ট করছো, কঙ্কা?
–আজেবাজে কথা আমি বলছি না। আমি তো ঠিকই বলছি। শুধু আমার নয়, আরও অনেক মেয়ের আপত্তিকর ছবি তোমার কাছে আছে। আমি ছাড়াও অনেক মেয়েকে তুমি ফাঁসিয়েছ।
আবির ঠান্ডা গলায় বলল,
–আমি কাউকে ফাঁসাই নি। তুমি ছাড়া বাকি সব মেয়েরাই স্বেচ্ছায় তাদের আপত্তিকর ছবি আমাকে দিয়েছে।
–মিথ্যা বলছো। স্বেচ্ছায় দেয় নি। তুমি তাদেরকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করেছ। বলো, করো নি? ভালোবাসার মিষ্টি মিষ্টি কথা তুমি তাদেরকে বলো নি? তাদের সেসব ছবি পাওয়ার পর আরেক দফা ব্ল্যাকমেইল করে তাদেরকে তুমি আবাসিক হোটেলে নিয়ে যাও নি?
আবিরের আর সত্য বলতে দ্বিধা হচ্ছে না। সে অকপটে বলে দিলো,
–হ্যাঁ, এসবই আমি করেছি। কিন্তু সবাইকে আমি ব্ল্যাকমেইল করি নি। কিছু মেয়ে স্বেচ্ছায় আমার সাথে বিছানায় এসেছে। আমি তাদের জোর করি নি।
কঙ্কা শান্ত গলায় বলল,
–তোমার এসব কর্মকান্ডের জন্য কত মেয়ে আত্মহত্যা করেছে জানো?
–না, জানি না। সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়ার পর তারা কি করেছে, সে দায় আমার নয়।
কঙ্কার প্রচন্ড রাগ হলো। কিন্তু সে তা প্রকাশ করলো না। শীতল গলায় বলল,
–তুমি কি জানো যে তুমি মানসিকভাবে অসুস্থ? কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে এ কাজগুলো করা সম্ভব নয়।
আবির হাসলো। পুনরায় কঙ্কার খুব কাছে গিয়ে বলল,
–অনেক কথা হয়েছে। এবার চুপ করো। আমি আজকের রাতকে ভীষণ সুন্দর করতে চাইছি। তুমি কিন্তু কথা বলে সময় নষ্ট করছো।
কঙ্কা বিদ্রূপ করে বলল,
–এমন করছো যেন তুমি এই প্রথমবার আমাকে হাতের মুঠোয় পেয়েছ।
আবির ফিচেল হেসে বলল,
–প্রথম যখন পেয়েছিলাম তখন তো তুমি অচেতন ছিলে। সচেতন অবস্থায় এই তো প্রথমবার।
কঙ্কার চোখে জল এসে গেল। সে আবিরকে এলোপাথাড়ি মারতে মারতে বলল,
–তুমি একটা চরিত্রহীন। অসভ্য, জানোয়ার তুমি।
আবির কঙ্কার হাত দুটো শক্ত করে ধরলো। ফিচেল গলায় বলল,
–জানোই যখন আমি চরিত্রহীন, তখন বিয়ে করলে কেন?
কঙ্কা হেসে উঠে বলল,
–তোমার মতো নোংরা লোক যে শরীর ছুঁয়ে ফেলেছে, সেই শরীর নিয়ে অন্য কোনো পবিত্র মানুষের কাছে যেতে চাই নি বলে।
আবির কঙ্কার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। মোমবাতির আবছা আলোয় কঙ্কার চোখের জল দেখা যাচ্ছে। তার চোখে জল, ঠোঁটের কোণে হাসি। এই হাসির কারণ আবির জানে না। জানতে চাওয়ার অবস্থাতেও সে নেই। সবুজ রঙের শাড়িটায় কঙ্কাকে দারুণ আবেদনময়ী লাগছে। সে আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না। কঙ্কার মাঝে ডুবিয়ে দিলো নিজেকে। কঙ্কাও কথা বাড়ালো না। কারণ তাতে কোনো লাভ নেই।
__________________
নীলয় বিছানায় বসে নতুন একটা কবিতা লেখার কথা ভাবছে; বিরহের কবিতা। কিন্তু পারছে না। সারাদিনে অনেক পঙক্তি তার মাথায় এসেছে। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, সেসবই আনন্দময় লাইন। বাড়িতে শোকের ছায়া। অথচ তার মাথায় কিনা ঘুরছে আনন্দের কবিতা! তবুও সে কবিতায় দুঃখ ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছে। একটা নামও সে ঠিক করেছে কবিতার। নাম দিয়েছে, “নতুনের আগমন”। নামের মধ্যেও কষ্টটা বুঝতে পারা যাচ্ছে না। কি অদ্ভুত! নীলয় দুটো লাইন বিরবির করলো,
“নব উচ্ছ্বাসে, নবরূপে তুমি ফিরে আসবে যেদিন
তোমাকে বরণ করতে আমিও থাকবো সেদিন।”
না, লাইন দুটোতে দুঃখ প্রকট হয় নি। আজ আর লিখবে না সে। কবিতা লেখা বাদ দিয়ে ঘুমাতে গেল নীলয় বালিশ ঠিক করতে গিয়ে সে বালিশের নিচে একটা কাগজ পেলো। হাতে নিতেই আবছা আলোয় কাগজের ভাঁজের উপর লেখা তিনটি লাইন দৃশ্যমান হলো। ওখানে লেখা আছে, “নীলয় ভাই, এই চিঠি আপনার জন্য। কেন পালিয়ে যাচ্ছি, সেটা আমি এখানে লিখেছি। না পড়ে ফেলে দেবেন না কিন্তু।”
নীলয় বুঝতে পারলো এটা কঙ্কার চিঠি। কঙ্কা যে কখন চিঠিটা তার বালিশের তলায় রেখে গেছে, সেটা সে জানে না। তার এখন উচিত তাড়াহুড়ো করে চিঠিটা পড়ে ফেলা। কিন্তু শুনতে আশ্চর্য লাগলেও সত্যি যে চিঠিটা পড়তে তার একবিন্দু ইচ্ছে করছে না। সে চিঠিটা আবার বালিশের তলায় রেখে শুয়ে পরলো। কঙ্কা ঠিকই বলতো। কবিতা ছাড়া আর কোনোকিছুকে সে গুরুত্ব দিতে শেখে নি।
.
#চলবে…….
(আমি আবার রাইটিং ব্লকে পরেছি। খুব আগ্রহ নিয়ে আবার লিখতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু আবার অনাগ্রহ এসে পরেছে। লিখতে চাইছি, কিন্তু পারছি না। এরচেয়ে কষ্টের অনুভূতি আর কিছুই নেই আমার জন্য।)
আমার লেখা কার অনুমতি নিয়ে পোস্ট করেছেন আপনি?