প্রেমনোঙর ফেলে পর্ব-৪

0
1094

#প্রেমনোঙর_ফেলে
#লেখনীতে-মিথিলা মাশরেকা
#পর্ব-৪

-সবে কয়েকদিন হলো দেশে ফিরেছো। এখনই রাত দুটো বাজে বাসায় ফিরতে শুরু করেছো ইচ্ছে? এটা বিদেশের তোমার সেই রঙিন পৃথিবী না ,যে যখন খুশি,যেভাবে খুশি চলবে! এখানে রাত দুটো অবদি কোনো ভদ্রঘরের মেয়ে বাসার বাইরে থাকে না! এটা বুঝতে হবে তোমাকে! নেক্সটদিন থেকে সন্ধ্যের আগেই সব ঘোরাঘুরি শেষ করে বাসায় ফিরবে তুমি। বুঝেছো?

বাসায় ঢোকার সময়ই এসব কথা শুনে পা থেমে গেলো ইচ্ছের। কাধে থাকা গিটারের ব্যাগের ফিতা শক্তমুঠোয় ধরলো ও। কথাগুলো শাষন হলে খুশিখুশি মেনে নিতো ও। কিন্তু এ কথাগুলো ওকে কন্ট্রোল করার উদ্দেশ্যে বলা। সেটা বক্তা,ও দুজনেই খুব ভালোমতোন জানে। অন্যসময় হলে এই ভদ্রমহিলার একটাএকটা শব্দের জবাব দিতো ইচ্ছে। কিন্তু আজ কিছু না বলেই পা বাড়াচ্ছিলো ঘরের দিকে। নিজের কথায় কোনো প্রতিত্তর না পেয়ে অবাক হলেন নাফিজা বেগম। তার জানামতে,এই মেয়ে তার কথার জবাব না দিলে দম আটকে মারা পরবে। তবুও আজ জবাব কেনো দিলো না? ইচ্ছের হাতে থাকা গিফটবক্সে নজর গেলো তার। কি এমন আছে ওই‌ বক্সে,যে ইচ্ছে তাকে প্রতিত্তর করলো না? ওই বক্সে কি ইচ্ছের এতো খুশি হওয়ার কিছু থাকতে পারে? তড়িঘরি করে এগিয়ে এসে বললেন,

-তোমাকে কিছু বলেছি ইচ্ছে!

-গিয়ে ছিলে তো কনসার্টে। পেমেন্ট চেইকের পরিবর্তে গিফটবক্স নিয়ে ফিরছো। তা কোন ফ্যান কি গিফট করলো তোমাকে,আমিও তো শুনি? রাত দুটো অবদি তাকেই সময় দিয়ে আসলে বুঝি?

এটুকো শুনে সিড়িতে আরেকবার থামলো ইচ্ছে। বেশ বুঝতে পারছে ভদ্রমহিলা অকারন ঝামেলা তৈরী করতে চাইছে। এসব কথায় ইচ্ছে রিয়্যাক্ট করলেই সে নওশাদ সাহেবকে বলতে পারবে,ইচ্ছে বেয়াদবি করেছে তার সাথে। তারপর ওরই বাবা ওকে ভুল বুঝবে। এমনটাই হতো এতোগুলো বছর হলো। বিদেশ থেকে ফেরার পর তা আবার শুরু হয়েছে। তাই এসবে নিজেকে অভ্যস্ত করে নিয়েছে ইচ্ছে। পেছনদিক না তাকিয়ে বললো,

-তোমার এসব ননসেন্স শোনার মুডে আমি এখন নেই এস এম। জবাবের মুডও নেই। রুমে যাচ্ছি। বাকিটা সকালে শুনিয়ে দিও।

ইচ্ছে সিড়ি বেয়ে উপরে নিজের ঘরে চলে গেলো। আরেকদফায় অবাক নাফিজা বেগম। আজ এতোগুলো বছরে প্রথমবার ইচ্ছে বললো ওর জবাব দেওয়ার মুড নেই। আবার বললো বাকিটা পরে শুনিয়ে দিতে। মাথায় জট পাকাতে লাগলো বেশকয়েক প্রশ্ন। পা চালিয়ে উনিও নিজের রুমে চলে গেলেন। নওশাদ সাহেব তখন ঘুমে আছন্ন। আস্তেধীরে গিয়ে স্বামীর পাশে শুয়ে পরে হঠাৎই ইচ্ছে বলে চেচিয়ে উঠে বসলেন নাফিজা বেগম। ধরফরিয়ে উঠে বসলেন নওশাদ সাহেব। আবছা আধারে স্ত্রীকে অস্থিরভাবে শ্বাস নিতে দেখে আগে টেবিলল্যাম্প জ্বালিয়ে দিলেন। পাশ থেকে চশমাটা নিয়ে চোখে দিয়ে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন,

-কি হলো নাফিজা? ঠিক আছো তো তুমি? কি হয়েছে?

নাফিজা বেগম অস্থিরচিত্তে বললেন,

-ই্ ইচ্ছে!

-হ্যাঁ। কি হয়েছে ইচ্ছের? এমন করছো কেনো তুমি?

-ই্ ইচ্ছেকে নিয়ে আমি বাজে স্বপ্ন দেখিছি নওশাদ! ম্ মেয়েটা এখনো ফিরলো কি না,কে জানে! তোমাকে কতো করে বললাম ওকে যেতে দিও না কনসার্টে। শুনলে না। রাত দুটো বাজে নওশাদ! আমার ভয় হচ্ছে মেয়েটার জন্য!

-আচ্ছা শান্ত হও তুমি। ইচ্ছে ঠিক আছে। তুমি জানো ও কেমন। এভাবেই চলাফেরা করে অভ্যস্ত ও। কিছুই হবে না ওর। রিল্যাক্স।

নওশাদ সাহেব পানির গ্লাস এগিয়ে দিলেন স্ত্রীকে। দুচুমুক খেয়ে গ্লাস সরিয়ে দিলেন নাফিজা বেগম। বললেন,

-কিভাবে পারো তুমি এভাবে থাকতে নওশাদ? আমার তো প্রতিনিয়ত ভয় হয় তোমার মেয়েকে নিয়ে। আর তুমি…

-আমাদের মেয়ে নাফিজা। ইচ্ছে আমাদের মেয়ে।

নাফিজা বেগম থামলেন। মনের মধ্যে থাকা কোনো এক হিংস্র সত্ত্বা যেনো জ্বলে উঠে বলছে,আমার মেয়ে না ও! পেটে ধরিনি ওকে আমি! বরং ওর জন্য যাকে পেটে ধরেছি,সে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। ইচ্ছেকে কষ্ট দিলেই শান্তি মিলবে সে সত্ত্বার। অন্যকিছুতে না। নাফিজা বেগম মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন,

-হ্যাঁ! আমাদের মেয়ে!

নওশাদ সাহেবও মৃদ্যু হাসলেন। বললেন,

-ওকে নিয়ে এতো ভেবোনা। ঘুমিয়ে পরো। গুড নাইট।

মাথা নেড়ে শুয়ে পরলেন নাফিজা বেগম। স্ত্রীর গায়ে ঠিকঠাকমতো চাদর জরিয়ে দিয়ে নওশাদ সাহেব নিজেও শুয়ে পরলেন। তবে চোখ বন্ধ করতে কষ্ট হচ্ছে নাফিজা বেগমের। এই বাড়ি,গাড়ি,টাকা পয়সা সব অস্বীকার করে,অভিমান করে তার নিজের মেয়েটা চলে গেছে। মনে পরতেই বুকজুড়ে হাহাকার চলে তার। এরমাঝেই গিটারের টুংটাং। টের পেলেন,প্রতিরাতের মতো আজও পাশেই নিজের ঘরের ব্যালকনিতে বসেছে ইচ্ছে। বাবাকে জানান দিচ্ছে,বাসায় এসেছে সে। বালিশ খামচে রইলেন নাফিজা বেগম। তার নিরব আহাজারিতে এই গিটারের সুর কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা ছাড়া আর কিছুই নয়!

ইচ্ছে ব্যালকনির দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে কোলে গিটারটা নিয়ে বসেছে। গিটারে কোনো এক সুর তুলতে তুলতে,একধ্যানে তাকিয়ে আছে পাশের দেয়ালের দিকে। ওখানে ওর ভাঙা গিটারের প্রতিটা টুকরা অতিযত্মে লাগানো। এমনভাবে সাজিয়ে লাগিয়েছে,তাতে ‘মা’ শব্দটা স্পষ্টতর। ভাঙা গিটারের তারটা একটা বেশ পুরনো পেন্সিলে পেচিয়ে পাশেই ঝুলিয়ে দিয়েছে। একটা সাদা ওড়না গিট দেওয়া পাশের বেতের দোলনায়। ইচ্ছের মাথার উপর আকাশ ভর্তি তারা ঝিকিমিকি করছে। সামনে থাকা রাতের শহরও মিটমিট আলোতে সজ্জিত। কোনোদিকে চোখ গেলো না ইচ্ছের। মৃদ্যু বাতাসে সাদা জর্জেটের ওড়নাটা উড়ে এসে গালে লাগতেই চোখ আবেশে বন্ধ করে নিলো ইচ্ছে। গাইতে লাগলো,

Will you ever come and find me(ii)
Will you ever be mine?
Need you now,oh hold me closer(ii)
Stop the wheels of time…
When I,close my eyes
You’re here, by my side(ii)
All I ever really need is your love
Nothing I could say would ever be enough
Stay a little longer with me,hmm hmm
Won’t stay a little longer with me?
Just stay a little longer with me,hmmm
Won’t stay a little longer with me…

চোখের কোনা বেয়ে জল গরালো ইচ্ছের। গিটারের সুর ছেড়ে ফুপিয়ে কেদে বলে উঠলো,

-মা…

হুহু করে কাদতে লাগলো ইচ্ছে। পেছন থেকে কাধে কারো স্পর্শ পেয়ে কান্না হিচকিতে পরিনত হলো ওর। নওশাদ সাহেব এসে ওর পাশে বাবু হয়ে বসলেন। ইচ্ছের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। ইচ্ছে নিজেকে সামলে নিতে লাগলো আস্তে আস্তে। কান্না শেষ করে শুধু নাক টানতে লাগলো একসময়। নওশাদ সাহেব অসহায়ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলেন এতোক্ষন। একসময় বলে উঠলেন,

-তোর এস এম,তোর স্টেপ মম কেনো তোর মা হতে পারে না ইচ্ছে? কি দোষ করেছে সে?

ইচ্ছে চোখ তুলে বাবার দিকে তাকালো। কিছুক্ষন নিরবে তাকিয়ে থেকে,উঠে দাড়িয়ে গিটারটা নিয়ে ঘরের এককোনে দেয়ালে ঠেস দিয়ে রেখে বললো,

-আই উইশ,তোমাকে বুঝাতে পারতাম বাবা।

-ইচ্ছে…

-ঘুমোও গিয়ে। একা থাকতে চাই।

-মা রে….

ইচ্ছে হেডফোন কানে নিয়ে বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসলো। নওশাদ সাহেব বুঝলেন,তার বলা আর একটা বর্নও কানে তুলবে না ইচ্ছে। চুপচাপ বেরিয়ে আসলেন ঘর থেকে। বাবা বেরিয়ে গেলে কান থেকে হেডফোন নামিয়ে ঠোট কামড়ে ধরে কান্না সংবরন করলো ইচ্ছে। ফলে রাগটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে লাগলো আবারো। মায়ের রেখে যাওয়া শেষ চিহ্নটা একটা রাস্তার গ্যাংস্টার এসে এক মুহুর্তে শেষ করে দিলো! মনেমনে একপ্রকার প্রতিজ্ঞা করে বসলো ইচ্ছে,এই প্রাপ্ত নামের মানুষটাকে অপ্রাপ্তির যন্ত্রনায় নিঃশেষ করে দিয়ে,তবেই থা‌মবে ও! তার আগে নয়!

খাবার টেবিলে খাবার সাজিয়ে বইয়ে মুখ গুজে বসে আছেন সাদিক সাহেব। বয়স,দৈহিক গঠন সবদিক দিয়ে বেশ আকর্ষনীয় ব্যক্তিত্ব এই পঞ্চাশোর্ধ মানুষটার। স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক তিনি। ভার্সিটিতে তার গুরুগম্ভীর রুপেই সবাই পরিচিত। কিন্তু বাসায় সে তার ছেলেমেয়ের কাছে এক বটের ছায়া! বৃহৎ আদরবলয়! তার পাশেই পেট চেপে ধরে বসে আছে পিয়ালী। সামনে এসএসসি পরীক্ষা বলে বেশ অনেকরাত অবদিই জেগে পড়তে হয়েছে ওকে। কোথায় খেয়েদেয়ে সুখের একটা ঘুম দেবে,তা না এক নবাবপুত্তুরের জন্য বসেবসে অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাকে। অবশ্য কেউ জোর করেনি অপেক্ষা করতে। সাদিক সাহেব চশমার উপর দিয়ে চোখ তুলে তাকালেন মেয়ের দিকে। ওর বেহাল দশা দেখে আবারো বইয়ে মন দিয়ে বললেন,

-খেয়ে নিলেই তো পারো।

-তুমিও তো খেয়ে নিলেই পারো।

-খেয়ে ঘুমোতে যাও পিয়ালী। অনেক রাত হয়েছে। এভাবে থাকলে,খুদা,নির্ঘুমে অসুখ করবে।

-সেইম টু ইউ। আমার খিদে নেই। ঘুমও পায়নি। অসুখও‌ হবে না।

শব্দ করে বইটা টেবিলে রাখলেন সাদিক সাহেব। পিয়ালী নির্ভয়ে,শান্তদৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকালো। সাদিক সাহেব বেশ রাগী গলায় বললেন,

-আজকে আসুক এই ছেলে! আজকে তার একদিন কি আমার একদিন!

পিয়ালী বিরক্তি নিয়ে মাথা খাবার টেবিলে ঠেকালো। ছেলে বাড়ি ফেরার আগে এই আগ্নেয়গিরির মতো রাগ,আর ঘরে ঢুকলেই আইসক্রিমের মতো গলে যাওয়াটা সাদিক সাহেবের অভ্যাস। এরমাঝেই শার্টের কলারের কাছের বোতাম একহাতে খুলতে খুলতে ধীরস্থিরে বাসায় ঢুকলো প্রাপ্ত। সাদিক সাহেব ওর ঘর্মাক্ত চেহারা দেখেই সবেমাত্র বলা কথাটা ভুলে গেলেন যেনো। এগিয়ে গিয়ে নরম গলায় বললেন,

-কিরে বাবা? এভাবে ঘেমেছিস কেনো? হেটে আসলি? বাইক নিয়ে যাসনি?

বাবার স্বর শুনে টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে রেখেই হাসলো পিয়ালী। সব রাগ হাওয়া ওর বাবার। মাথা না তুলে বললো,

-তোমার ছেলের গায়ের ঘামগুলো বোতলজাত করে রাখো বাবা! কতো মুল্যবান সেগুলো! প্রফেসর সাদিকের রাগকে গলিয়ে দেয় বলে কথা!

প্রাপ্ত একপলক বোনের দিকে তাকিয়ে বাবাকে হতাশভাবে বললো,

-খেয়ে নিলেই পারো বাবা।

কিছুটা অন্যদৃষ্টিতে তাকালেন সাদিক সাহেব। পিয়ালীর সাথে দুষ্টুমি না করে প্রাপ্ত আজকে এভাবে কথা বলছে দেখেই কিছুটা অন্যরকম লাগলো তার। বললেন,

-কোনোদিনও খেয়েছি? যে আজ খাবো? কিন্তু তোর চোখমুখ এমন কেনো দেখাচ্ছে? কি হয়েছে প্রাপ্ত?

-এবার আমি খিদেয় মরেই যাবো বাবা! ছেলের উপর পরে স্নেহবর্ষন করিও! আগে খেতে দাও!

প্রাপ্ত বাবাকে ইশারায় বসতে বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। একটা অফ হোয়াইট টিশার্ট আর নেভি ব্লু ট্রাউজার পরে নিলো। রুম থেকে বেরিয়ে দেখে বাবা,বোন খেতে বসে গেছে। সাদিক সাহেব পিয়ালীকে খাইয়ে দিচ্ছেন। প্রাপ্তকে দেখে উনি খাবার মাখাতে মাখাতে বললেন,

-আজকে লাউ চিংড়িটা খুব মজা হয়েছে। তাইনা পিয়ালী?

-ইয়াপ!

ঠোটে হাসি ঝুলিয়ে পাশের চেয়ার টেনে বসে গেলো প্রাপ্ত। সাদিক সাহেব পরের লোকমা ওর মুখে তুলে দিয়ে বললেন,

-দেখতো খেয়ে! রুই আর ডালও রেধেছি। তবে আগে এটা টেস্ট কর!

প্রাপ্ত তৃপ্তি নিয়ে খেতে খেতে বললো,

-আপনি অধ্যাপনা ছেড়ে সাদিকস্ কিচেন খুলে বসুন জনাব! ইটস্ ইয়ামিয়েস্ট!

সাদিক সাহেব ভাব নিয়ে হেসে বললেন,

-দেখতে হবে তো! বাপটা কার!

-ইয়াহ্! পিয়ালীর বাবা বলে কথা!

পিয়ালীর মাথায় চাটি লাগালো প্রাপ্ত। বললো,

-কিচেনে গেছিস কোনোদিন? এসেছে শেইফ সাজতে! বাবা কথাটা দিয়ে প্রাপ্তর বাবা বুঝিয়েছে!

-এসেছে ক্রেডিট নিতে! আর রইলো কথা কিচেনে যাওয়ার? আমি কেনো যাবো কিচেনে? এখন তো বাবা খাওয়াচ্ছে। তুই তো কোনোদিন খাওয়াবি না রেধে। তবে ভাবি আসুক! সব উশুল করে নেবো!

-কিন্তু পিয়ালী,তোর ভাবি যদি রান্না না জানা কোনো মেম হয়? তখন?

হেসে দিলো পিয়ালী। সাথে সাদিক সাহেবও। কিন্তু বাবার কথা শুনে খাবার চিবোতে থাকা মুখ আপনাআপনি থেমে গেলো প্রাপ্তর। পিয়ালীর সাথে করা দুষ্টুমির হাসিটাও নেই আর ওর ঠোটে। মুহুর্তেই ইচ্ছের চেহারা ভেসে উঠেছে ওর সামনে। গ্লাসের পানি শেষ করে কোনোমতে নিজেকে সামলে বললো,

-আর খাবো না বাবা। ঘুম পেয়েছে।

পিয়ালী,সাদিক সাহেব দুজনেই বুঝলো প্রাপ্তর মনে এই মেমসাহেবের উল্টো প্রতিচ্ছবি আকা। তাই এই আলোচনা পছন্দ হয়নি ওর। সাদিক সাহেব বললেন,

-ডোন্ট ওয়ারী প্রাপ্ত,আমি এটলিস্ট তোমার অপছন্দের কাউকে বউমা করে আনার জন্য কোনোদিন বলবো না তোমাকে!

প্রাপ্ত মুচকি হেসে বললো,

-জানি বাবা!

সাদিক সাহেব হাত ধুয়ে উঠে দাড়ালেন। তোয়ালেতে হাত মুছতে মুছতে বললেন,

-দেন? নিজেকে বুঝতে শেখো। তাতেই হবে। আর দুদিন পর ডিপার্টমেন্ট থেকে ট্যুরে‌ যাচ্ছি। সোলার এনার্জী নিয়ে আলাদা কিছু করার প্লান আছে আমাদের। গ্রামের নাম ভাদুলগাঁও। একেবারে প্রত্যন্ত এলাকায়। তোমাদের ছেড়ে প্রথমবার এতোদুর যাবো। কিভাবে থাকবো জানিনা,তবে ইটস্ আ মাস্ট প্রাপ্ত!

বাবার কথায় মন খারাপ করে ফেললো পিয়ালী। কিন্তু প্রাপ্ত মাথা নেড়ে আশ্বস্ত করলো বাবাকে। বাবা ছাড়া ওরা দুজনই অসম্পুর্ন। তবু কিছুই করারও নেই। সবাই নিজনিজ ঘরে চলে গেলো। রুমে ঢুকে প্রাপ্ত চিৎ হয়ে শুয়ে পরলো বিছানায়। মনটা হঠাৎই এলোমেলো লাগছে ওর। অস্থির লাগছে অকারনে। সারাদিনে যা যা ঘটেছে,সবকিছুর সাথে অপরিচিত ও। জীবনের নতুন ঘটনাগুলো বড় অদ্ভুত! আর তারচেয়ে বড় কথা,যা কিছু নতুন,যা কিছু প্রথমবার ঘটে,নিয়তি তাতে অবশ্য অবশ্যই ব্যতিক্রম কিছু লিখে রাখে যে!

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here