প্রেমনোঙর ফেলে পর্ব-১৬

0
732

#প্রেমনোঙর_ফেলে
#লেখনীতে: মিথিলা মাশরেকা

১৬.

প্রাপ্ত পিয়ালীকে একসাথে দেখে, পিয়ালীর‌ প্রাপ্তকে ভাইয়া ডাকতে দেখে ইচ্ছের বুঝতে বাকি রইলো না ওরা দুজন ভাইবোন। টমি তখনও প্রাপ্তকে দেখে‌ চেচাচ্ছে। ইচ্ছে ঠোট টিপে হাসলো। এই টমিটা একদমই সহ্য করতে আারে না প্রাপ্তকে। যেখানে প্রাপ্ত ওর প্রান বাচিয়েছে দুদিন আগে। ইচ্ছেকে হাসতে দেখে দাতে দাত চেপে টমির দিকে তাকালো প্রাপ্ত। একটা রাগী শ্বাস ফেলে পিয়ালীকে শান্তভাবে বললো,

-ফোন কেনো দিয়েছি তোকে? সুইচড্ অফ করে রাখার জন্য?

পিয়ালী মাথা নিচু করে নিলো। ও এখন যাই বলবে, তাতে প্রাপ্তর এই‌ শান্তস্বর মুহুর্তেই তুলকালাম বাধানোর মতো মেজাজে পরিবর্তিত হয়ে যাবে। ইচ্ছে ভাইবোনের কথার মাঝে থাকবে না ভেবে “টমি কাম” বলে চুল নাড়তে নাড়তে উল্টোদিকে হাটা লাগালো। পিয়ালী একপলক চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলো ইচ্ছে চলে যাচ্ছে। তারপর ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

-ভাইয়া, ইচ্ছে ম্যাম চলে যাচ্ছে তো! ওকে কিছু বল? আজকে ম্যাম না থাকলে কিন্তু…

-কিছুই হতো না তোর। আমি এসে গেছি না?

-তুই তো এতোক্ষনে এলি! আর ইচ্ছে ম্যাম…

-কি ম্যাম ম্যাম শুরু করেছিস! তোর ম্যাম বুঝি বডিগার্ড হয়ে সবসময় থাকে তোর সাথে?

পিয়ালী অবাক হলো। কিসের কথায় কি তুলছে প্রাপ্ত? ওর ভাইকে ভালোমতোই চেনে ও। যাই কিছু হোক, এভাবে অকৃতজ্ঞের মতো কথা বলার ছেলে প্রাপ্ত না, সেটা ও ভালোমতোই জানে। অবিশ্বাসের স্বরে বললো,

-এভাবে বলছিস কেনো? ম্যাম না থাকলে এতোক্ষনে সত্যিই কিন্তু আমাকে বাজে পরিস্থিতিতে থাকতে হতো ভাইয়া! কয়েকটা ছেলে…

ইচ্ছে খানিকটা দুর চলে গেলেও টমি একচুলও নড়েনি। দু সেকেন্ড পরপর প্রাপ্তকে লক্ষ্য করেই শব্দ ছুড়ছে ও। ওউ যেনো মতামত দিচ্ছে, ইচ্ছেকে ধন্যবাদ না দিয়ে চরম পাপ করছে প্রাপ্ত। সরু দৃষ্টিতে টমির দিকে তাকালো প্রাপ্ত। দাতে দাত চেপে বললো,

-ওকে সরি বলেছি। ওটা ওর প্রাপ্য ছিলো। থ্যাংকস্ দেবো না! এটা ওর প্রাপ্য না! সো উইল ইউ প্লিজ কিপ কোয়াইট?

পিয়ালীর দৃষ্টি আবারো প্রসারিত হলো। প্রাপ্ত সরি বলার মতো কাজ করতে পারে, এটাও ওর ধারনায় ছিলো না। আর সেটাও ইচ্ছেকে সরি বলেছে! ঘটনার আগামাথা কিছুই মাথায় ঢুকলো না পিয়ালীর। টমি প্রাপ্তর কথা শুনে আরো দুবার জোরে চেচিয়ে উঠলো। প্রাপ্ত এবার ধমকে বললো,

-স্টপ ইট!

ইচ্ছে সবে হুইস্টলিং শুরু করেছিলো। প্রাপ্তর ধমক শুনে পেছন ফিরলো ও। প্রাপ্তর রাগী চাওনি টমির দিকে। বুঝলো ধমকটা টমিকেই দিয়েছে প্রাপ্ত। টমি তখনো থামেনি। ওর মতে, প্রাপ্ত ইচ্ছেকে থ্যাংকস্ না দিয়ে আগে বড়সর দোষ করেছে, এরপর ওকে ধমক দিয়ে আরোবড় দোষ করে ফেলেছে। টমি নিজেও যে ধ‌মক দিতে পারে, সেটা প্রদর্শন করা জায়েজ আছে ওর। ইচ্ছে বিরক্ত হলো ভালোমতো। এই দুটোতে মানুষ-পোষ্যর সম্পর্ককে সাপে-নেউলে সম্পর্ক কেনো বানিয়ে দিচ্ছে, কে জানে? এগিয়ে গিয়ে আগে টমিকে বললো,

-টমি চুপ। আর একটুও আওয়াজ করবে না তুমি। একটুও না! গট ইট?

টমি গুটিয়ে লেজ নেড়ে ইচ্ছের পায়ে গা ঘেষলো। প্রাপ্ত মনেমনে খুশি হয়েছে ইচ্ছের ওকে ধমকাতে দেখে। তবে প্রকাশ করলো না সেটা। “ঝামেলা তৈরী করে এখন ভালো সাজা হচ্ছে!” ইচ্ছের পায়ে টমিকে গা ঘেষতে দেখে মনেমনে ‌এ কথাটাও নাড়া দিলো ওর। ইচ্ছে প্রাপ্তর দিকে ফিরলো। তুড়ি বাজিয়ে আগে প্রাপ্তর চাওনি টমির থেকে নিজের দিকে ফেরালো। অতঃপর সিরিয়াসনেস দেখিয়ে বললো,

-আর এইযে মিস্টার গ্যাংস্টার! কাকে ধমকাচ্ছো তুমি? হ্যাঁ? কাকে ধমকাচ্ছো? আমার আগে টমিই তোমার বোনকে দেখেছিলো। আজ টমি না থাকলে ওই‌ ছেলেগুলো…

ইচ্ছেকে শেষ করতে না দিয়ে প্রাপ্ত‌ পিয়ালীর কাধ থেকে ওর ব্যাগ কেড়ে নিলো। ব্যাগের ভেতরের এক চেইন থেকে একটা ডিভাইস বের করলো দু সেন্ডের ভেতর। ইচ্ছে কপালে ভাজ ফেলে তাকিয়ে রইলো সেদিকে। আচমকাই প্রাপ্ত ইচ্ছের ডানহাতের কনুইয়ের উপরে ধরে টান লাগালো ওকে। ইচ্ছে চমকে উঠতে বাধ্য হলো। হাত দিয়ে কোনো‌‌মতে দুরুত্ব গুজলো দুজনের মাঝে। পিয়ালীর চোখ এবার বেরিয়েই আসবে। কিংকর্তব্যবিমুঢ় ও। টমি নিজেও যেনো করনীয় বুঝতে পারছে না। ইচ্ছের সাথে এভাবে কাউকে‌ দেখেনি বলেই হয়তো। প্রাপ্ত চোয়াল শক্ত করে ওর হাতে ডিভাইসটা গুজে দিয়ে বললো,

-একটা থ্যাংকসের জন্য ক্রেডিট নেওয়ার এতো চেষ্টা করে লাভ হবে না মিস রকস্টার। কিভাবে বোনকে প্রোটেকশন দিতে হয়, তা প্রাপ্ত খুব ভালোমতোই জানে! আ’ম নট গোয়িং টু থ্যাংক ইউ!

ইচ্ছে একপলক হাতে থাকা ট্র্যাকারের দিকে তাকাচ্ছে, তো আরেকবার প্রাপ্তর দিকে। প্রাপ্ত তখনো রাগী চেহারা করে ওর হাত ধরে আছে। আর পিয়ালী ভয়ার্ত চেহারা করে দুজনকেই দেখছে। ও যেমন ওর ভাইয়ের রাগকে চেনে, তেমন ইচ্ছের ক্ষমতাও জানে ও। কিজানি এর পর কি ঘটেছে। ওদের দু ভাইবোনকে অবাক করে দিয়ে কয়েকমুহুর্ত পর শব্দ করে হেসে দিলো ইচ্ছে। হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো প্রাপ্ত, পিয়ালী। ইচ্ছে শব্দ করে হাসতে হাসতে প্রাপ্তর কাছ থেকে হাত ছাড়িয়ে নিলো নিজের। বেশ কিছুক্ষন হাসার পর টমিকে কোলে তুলে হাসতে হাসতে বললো,

-ইগো দেখানো কেউ তোমার কাছ থেকে শিখুক মিস্টার গ্যাংস্টার! সরিটা এক্সেপ্ট করতে একটু দেরি কিনা করে দিলাম, তুমি তোমার ইগো দেখাতে এখন থ্যাংকস্ দেওয়া নিয়েও এতোকিছু বলছো? ওয়াও! ইউ আর সামথিং এলস্ ম্যান! লেটস্ গো টমি! এখানে থাকলে আমাকে‌ জোর করে থ্যাংকস্ আদায় করার দায়ে লকাপে‌ যেতে হতে পারে। তারচেয়ে বরং চল এখান থেকে‌ যাই! আফটার অল, বেচারা থ্যাংকস্ দেবে না বলে কতোবড় যুক্তি দেখালো বল?

টমিকে কোলে নিয়ে কথাগুলো বললো ইচ্ছে। আরেকবার প্রাপ্তর দিকে তাকিয়ে ঠোট টিপে হেসে চলে গেলো ও। পিয়ালী ঠাস করে নিজেই নিজের কপালে চড় লাগালো একটা। প্রাপ্ত একধ্যানে ইচ্ছের চলে যাওয়া দেখছে। ওর মস্তিষ্কে এখন শুধু একটা কথাই ঘুরছে, ইচ্ছে এর আগে কোনোদিন কি এভাবে প্রানখুলে হেসেছে? হাসবে হয়তো! কিন্তু ওর এমন কেনো মনে হলো, এই অভুতপুর্ব হাসিটা দেখার সৌভাগ্য বুঝি একমাত্র ওরই হলো। মায়ের স্মৃতিকে মনে করে, রাতের সেই চাপা কান্নাগুলোর মতো অন্য কেউই হয়তো দেখেনি ইচ্ছের এই প্রানোচ্ছল হাসি। প্রাপ্ত ছাড়া আর কেউ না। কেউই না!


নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ ” নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ” এবং ফলো করে সাথেই থাকুন।

জমির হুজুরের খালি‌ গলায় ফজরের আযান শুনে ঘুম ভেঙে গেছে খইয়ের। দুহাতে জরিয়ে ঘুমিয়ে থাকা মায়ের দিকে তাকালো ও। ওকে আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে গভীর ঘুমে আছন্ন সাহেরা। যেনো ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে খই। খই মায়ের হাতদুটো থেকে আস্তেধীরে ছাড়িয়ে নিলো নিজেকে। উঠে বসে আরেকপলক তাকালো মায়ের দিকে। সাহেরা তখনও ঘুমোচ্ছে। খইয়ের ঠোটে হাসি। বেরোবে ও। এ সময় শুকমরার তীর দিয়ে টাকি মাছ ঘোরাঘুরি করে। স্বচ্ছ পানির নিচে আবছা আলোতে দেখা যায় সে মাছ। কোঁচ দিয়ে একেবারে মাথা বরাবর ঘা লাগিয়ে টাকি ধরা যায় অনায়াসে। উঠোনের লাউয়ের মাচায় দুটো কচি লাউ ঝুলছে দুদিন হলো। টাকি-লাউয়ের তরকারীর কথা ভেবেই জ্বিভে জল চলে আসলো খইয়ের। ঘরের এককোনে দেয়ালে ঠেকানো কোঁচ হাতে করে নিশব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে আসলো ও।

খই হেলতে দুলতে খালিপায়ে শুকমরার দিকে এগোলো। যদিও শীতকাল না,তবুও ঘাসের ডগা ভিজে আছে পায়ের তলার। খালি পায়ের তালুতে ভেজা ঘাসের ডগা স্পর্শ করতেই শিরশিরিয়ে ওঠে পুরো শরীর। খই আস্তেআস্তে পায়ের ছাপ ফেলে ফেলে এগোচ্ছিলো। ভোর হতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে আলো ফুটবে চারপাশে।খই নির্দ্বিধায় পা চালালো। কিন্তু খানিকটা যাবার পরই থেমে গেলো ওর পা। সামনে কোনো মানুষের অবয়ব। কোনো পুরুষের অবয়ব। টিশার্ট, প্যান্ট তার পরনে। তার পাশেই পাইপের মতো কিছু একটা পূর্ব আকাশের দিকে তাক করা। আর সে মানুষটা পাশে দাড়িয়ে পকেটে দুহাত গুজে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। কপালে ভাজ পরলো খইয়ের। এ সময় এদিকে নিতুন জেলে ছাড়া আর কারো আসার কথা না। কিন্তু এটা কোনোমতেই জেলেবেশ না, সেটা স্পষ্ট বুঝলো ও। কাধে রাখা কোঁচটা সামনে তাক করে বললো,

-কেডায় ওইহানে?

পাশ ফিরে কোঁচ হাতে আবছা আলোয়া খইকে দেখে ছোট্ট একটা দম ছাড়লো রাকীন। মেয়েলি গলা শুনেই আন্দাজ করেছিলো এটা খইই হবে। গ্রামের এই শুকমরা খালটা একদম পুর্ব পশ্চিমে আড়াআড়িভাবে গেছে। রাকীন ভেবেছিলো ভোরের শুকতারা আর সুর্যোদয়, দুটোই শুকমরার তীর থেকে দেখবে। তাই চলে এসেছে এদিকে। মনেমনে শুকমরাকেই নির্বাচন করার আরো একটা কারন ছিলো। গত রাতে ঘুম হয়নি ওর। পুরোটা রাত হাশফাশ করেছে ও বিছানায় শুয়ে শুয়ে। চোখ বন্ধ করলেই বারবার খইয়ের একদম সন্নিকটে থাকা চেহারাটা ভেসে উঠেছে ওর চোখের সামনে। সেই অনুভবের পরিনামে তৈরী হওয়া একরাশ অস্থিরতার জেরেই হয়তো পা বাড়িয়েছিলো ও শুকমরার দিকে। খইয়ের দেখা পেয়ে আচমকাই ভালো লাগছে ওর ভেতরটায়। প্যান্টের পকেট থেকে হাত বের করে, কিছু না বলে খইয়ের দিকে দুপা এগোলো ও। রাকীনের চেহারা স্পষ্টতর হতেই‌ ভ্রু কুচকালো খই। কোঁচটা আবারো কাধে আটকিয়ে একহাত কোমড়ে রেখে বললো,

-ওহ্! আপনে?

-অন্যকেউ‌ হলে ভয় পেতে?

-খই কাউরে ডরায় না! এ গেরামের কেউ আমার ক্ষতি করনের চিন্তাও করবো না। সেখানে আপনারে তো আমি বাচাইছি। আপনারে দেইখা ডরামু ক্যান? আইজ নতুন আমি কোঁচ নিয়া বাইর হইছি এমন না!

রাকীন খুশি হলো এটা ভেবে যে, ওকে নিয়ে খইয়ের কোনো নেগেটিভ ধারনা নেই। এটাও‌ হতে পারে, মেয়েটা বেশিই সরল। ওর সাথে কোনোদিন বাজে কিছু ঘটেনি বলেই হয়তো এতোটা আত্মবিশ্বাস ওর। ওকে আনমনে হাসতে দেখে খই কপাল কুচকে বললো,

-তা আপনে ‌এইহানে ক্যান? আবারো ম’রার শখ জাগছে নাকি? ভোরবেলায় শুকমরার তীরে যে?

-শুকমরার তীরে শুকতারা দেখতে এসেছিলাম।

বড়বড় চোখে তাকালো খই। আকাশে তাকিয়ে দেখে শুকতারা তখনইও জ্বলজ্বল করছে। চাঁদও আছে। রাকীনের চাওনি ওর নথে নিবদ্ধ। সবে পরিষ্কার হতে শুরু করেছে চারপাশ। এটুকো আলোয় সামনের শ্যামাঙ্গীর চেহারা একেবারে স্পষ্ট না হলেও ওর নাকের নোলক ঠিকই দেখা যায়। আচমকাই ওর নথ ছুইয়ে দেওয়ার অদম্য ইচ্ছা হলো রাকীনের। একধ্যানে তাকিয়ে এগোলো আরেকপা ও। এরইমাঝে খই বলে উঠলো,

-খালি চোখে শুকতারা দেখতাছিলেন?

রাকীন থামলো। কিছুটা চমকালো যেনো। যেনো কোনো ঘোর থেকে বেরোলো। স্বাভাবিক গলায় বলার চেষ্টা করলো,

-আব…না। দুরবীক্ষন আছে আমার আছে।

চকচক করে উঠলো খইয়ের চোখ। না দেখা এই‌ একটা জিনিসের প্রতিই বরাবর ঝোক বেশি ছিলো ওর। চাঁদ দেখা যন্ত্রের নাম স্কুলের আপার থেকে শুনে মুখস্থ করে রেখেছে ও একদম। শহর থেকে কেউ আসলেই মাকে বারবার করে বলতো,দুরবীক্ষন এনেছে কিনা কেউ। খই চঞ্চলভাবে এগিয়ে গেলো রাকীনের দিকে। হুট করে বেশ অনেকটাই কাছে চলে যাওয়ায় আবারো চকিত হলো রাকীন। খই উৎসাহ নিয়ে বললো,

-আমারে দেখাইবেন?

-কি?

-শুকতারা! দুরবীক্ষন!

-মানে?

-ছোটবেলা থাইকাই আমার মেলা শখ! দুরবীক্ষন দিয়া চাঁদতারা দেখুম! দেখাইবেন? আমি না আপনারে পানিতে পইরা ম’রা থাইকা বাচাইলাম! দেখাইবেন না আমারে?

রাকীনের দৃষ্টি থেমে রইলো। এই শখ চেনা ওর। এই শখ পুরনের আবদারটাও ওর চেনা। শুধু মানুষটা অচেনা। খই ওকে চুপ থাকতে দেখে আবােরো তাড়া দেখিয়ে বললো,

-আরে চুপ কইরা আছেন ক্যান? দেখাইবেন? একটুপরেই চাঁদ ডুইবা যাইবো! আইজকা না দেখলে এ‌ জীবনেও আর কাছ থাইকা চাঁদ দেখা হইতো না আমার! দেখান না আমারে দুরবীক্ষন দিয়া চাঁদ! দেখান একটু?

কিছু না বলে রাকীন কয়েকমুহুর্ত তাকিয়ে রইলো খইয়ের দিকে। খই শশব্যস্ত চোখে পরখ করছে,চাঁদ শুকতারা ডুবে না‌ যায়! রাকীন টেলিস্কোপটা ঠিকঠাকমতো সেট করে দিয়ে বললো,

-এইযে নাও। এখানে চোখ‌ রাখো।

কাধের কোঁচটা মাটিতে ফেলে তৎক্ষনাৎ টেলিস্কোপে চোখ‌ রাখলো খই। রাকীন পাশ থেকে মুগ্ধচোখে দেখতে লাগলো ওকে। মৃদ্যু বাতাসে খইয়ের বিনুনির বাইরে থাকা ছোটছোট চুলগুলো উড়ছে। চোখে এসে পরছে বলে বিরক্ত হচ্ছে খই। রাকীন আস্তেকরে চুলগুলো খইয়ের কানে গুজে দিলো। একপলক ওর দিকে তাকিয়ে নিষ্পাপ হেসে আবারো‌ টেলিস্কোপে চোখ রাখলো খই। রাকীন বুকে দুহাত গুজে পিছিয়ে দাড়ালো। তাকিয়ে রইলো খইয়ের দিকে। দুরের কোনো এক মসজিদের মাইক থেকে আযানের শব্দ শোনা যায়। একটুপরেই এই‌ চাঁদ থাকবে না আকাশে। এই শুকতারাও থাকবে না। সেভাবে ওউ তো এ ভাদুলগায়ে থাকতে আসেনি। ওকেও‌ ওর চেনা শহরে ফিরতে হবে। কিন্তু এই মুহুর্তগুলো? শুকমরাকে সাক্ষী করে‌ তৈরী হওয়া এ স্মৃতিগুলো? এগুলো কি আদৌও ফেলে যাওয়া‌ সম্ভব? কে জানে!

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here