প্রেমনোঙর ফেলে পর্ব-২৭

0
609

#প্রেমনোঙর_ফেলে
লেখনীতেঃ মিথিলা মাশরেকা

২৮.

প্রেমবায়বের সাথে সময় চলছিলো বেসুরোভাবে। ইচ্ছের দেখা না পাওয়ার দিনগুলো প্রাপ্তর কাছে রঙহীন ক্যানভাসের মতো কাটতে লাগলো। তবে প্রকাশ করাটা হয়ে ওঠেনি। মিষ্টিঘরের নতুন স্কুল তৈরীর কাজে বেশ ব্যস্ত সময় পার করতে হয়েছে ওকে। তাছাড়া খই লক্ষনীয়ভাবে সবটার সাথে মানিয়ে নিতে শুরু করেছে ইদানিং। মিষ্টিঘরের বাচ্চাদের সাথে হাসতে শেখা, পড়াশোনায় আগ্রহ, আচরন, অভিযোজন সবার সাথে ওর সাথেও টুকটাক কথা বলতে শুরু করেছে খই। এইতো সেদিনই! সাদিক সাহেব ছিলেন না বলে খই নিজে ওকে বলেছিলো পড়াতে। মানা করেনি প্রাপ্ত। বরং খুশি হয়েছিলো ওর পড়ার প্রতি জোর দেখে। তবে এটাও বেশ ভালোমতোই বুঝেছে, ইচ্ছের সাথে জরিয়ে গেছে ও। ইচ্ছেকে না দেখার অস্থিরতায় সুগভীর স্পষ্টতা, ওকে অনুভব করতে শুরু করেছে ও। মনেমনে সারাক্ষন ওকেই ভাবতে শুরু করেছে। না চাইতেও ইচ্ছে নামের এই বিপরীত স্রোতস্বীনিতে বাধা পরেছে ও। প্রেমনোঙরে। আজ অস্বীকার করার কিছুই নেই, ইচ্ছেকে ভালোবাসে ও।

এদিকে রাকীনের কথামতো নিজেকে সাজাতে শুরু করেছে খই। ওর নিজের কাছে এখন নিজেকেই নতুন লাগে। আয়নায় নিজেকে পরখ করে নিলো খই। গ্রামের সেই শাড়ি পেচিয়ে দৌড়ে বেরানো মেয়েটা আজ মার্জিত থ্রিপিসে। ফিতায় বাধা বিনুনির চুল আজ উচুতে রাবার ব্যান্ডে ঝুটি করা। সবটার জন্য নকশাদার দায়ী। মনেমনে কথাটা ভেবে মুচকি হাসলো খই। রুম থেকে বেরোতেই দেখে প্রাপ্তদের বাসার পেছনের বাগানে সাফোয়ানের সামনে একটা কাগজহাতে দাড়িয়ে মিষ্টি। খই কৌতুহলী হয়ে এগোতে লাগলো। মিষ্টি সাফোয়ানকে বলছে,

-আর কতোদিন উত্তরের অপেক্ষা করবি তুই?

-যতোদিন তুই উত্তর না দিবি।

-যদি আমার উত্তর না হয়, কি করবি?

-বলেছি তো। এখান থেকে চলে যাবো। তোর সামনে থাকার মুখ নেই আমার। বন্ধুত্বর মাঝে একপাক্ষিক ভালোবাসা টেনে দেওয়া, তাকে প্রতিনিয়ত মনে করাতে থাকা বিপরীতপাশের মানুষটার জন্য একপ্রকার অপমান। আমি তোকে অপমান করতে পারবো না। দুরে চলে যাবো তোর থেকে।

বড়বড় চোখে তাকালো খই। পরিস্থিতি বুঝে উঠতে সময় লাগলো না ওর। মিষ্টির দিকে তাকালো ও। এই মেয়েটাকে বুঝে ওঠে নি ও এখনো। কখনো মনে হয় প্রাপ্তকে আড়াল থেকে দেখে। কখনো মনে হয়, প্রাপ্তকেই আড়াল করে। মেয়ে হয়ে মেয়ের চাওনি এটুকো বুঝেছে ও। মিষ্টি ওর হাতের কাগজটা তুলে ধরলো সাফোয়ানের সামনে। ওটা দেখেই চুপ মেরে গেলো সাফোয়ান। নিজেকে সামলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাগজটা হাতে নিয়ে বললো,

-ট্রান্সফার লেটার? আ্ আচ্ছা, ভালো থাকিস।

এটুক বলেই সাফোয়ান পেছন ফিরলো। ও‌‌ জানে, মিষ্টির দিকে তাকালে আরো দুর্বল হয়ে পরবে ও। খই মিষ্টির জবাবের কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না। তবে সাফোয়ানের কষ্টটা বেশ বুঝতে পারলো। চলে আসবে বলে পা বাড়াতে যাচ্ছিলো সাফোয়ান। হুট করেই পেছন থেকে ওকে জরিয়ে ওর পিঠে মাথা ঠেকালো মিষ্টি। চমকে উঠলো সাফোয়ান। একইসাথে খইও। মিষ্টি আস্তেকরে বললো,

-যেখানে যাবি, আমাকে নিয়ে যা সাফোয়ান। তোর মতো আমিও অনাথ। আমারও কেউ নেই এখানে। তোকে লাগবে আমার। প্লিজ নিয়ে চল আমাকেও তোর সাথে। তোর করে!

সাফোয়ান থমকে গেলো। কি বুঝে মুচকি হেসে বুকের ওপর থাকা মিষ্টির হাতজোড়ার ওপর হাত রাখলো ও। চোখ বন্ধ করে নিলো আবেশে। পুরোটাই দেখে খুশিতে নেচে উঠলো খইয়ের মন। ও ছুটলো পিয়ালীকে সবটা বলবে বলে। একছুটে যেইনা পিয়ালীর ঘরে ঢুকেছে, বিছানায় স্কার্ফের এক টুকরো হাতে বসাবস্থায় প্রাপ্ত বলে উঠলো,

-আই লাভ ইউ।

ঠিক সে সময়েই ওই ঘরের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন সাদিক সাহেব। প্রাপ্তর কথাটা কানে গেছে তার। একপা পিছিয়ে প্রাপ্তর রুমের দরজা দিয়ে ভেতরে তাকালেন উনি। রুমে প্রাপ্ত খই ছাড়া আর কেউ নেই। সাদিক সাহেবের চোখ পরলো সোজা খইয়ের দিকে। তার ঠোটে খুশির হাসি। আর প্রাপ্তর চেহারায় মুগ্ধতা। হাসি ফুটলো সাদিক সাহেবের ঠোটেও। প্রাপ্তর জন্য ভুল কাউকে পছন্দ করেননি তিনি। কিছুটা দেরিতে হলেও, সেই হয়ে উঠেছে প্রাপ্তর ভালোবাসা, ওর সেই কল্পকন্যা, খই!

-বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে বলে, খেয়া ইচ্ছে করে হারিয়ে যায়নি ইচ্ছে। তোমার জন্যই ও হারিয়ে গেছে আমাদের‌ জীবন থেকে। ওর‌ অভিমান করার কারন তুমি ছিলে। ওর না ফেরার জন্য দায়ী তুমি ইচ্ছে! তুমিই!

কথাগুলো বলে দুটো ছোটছোট স্বর্নের চুড়ি ইচ্ছের সামনে ছুড়ে মারলেন নাফিজা বেগম। সবে একটা প্রোগ্রাম শেষ করে বাসায় ঢুকছিলো ইচ্ছে। সিড়ি থেকে চুড়িদুটো গরিয়ে ওর পায়ের কাছে এসে ঠেকলো। এ দিনগুলো হাউজিং, মিউজিক সব মিলিয়ে অনেক ব্যস্ততায় কেটেছে ও। বড্ড ক্লান্ত লাগছিলো ইচ্ছের। তবুও ঝুকে মেঝে থেকে তুললো চুড়িগুলো। ড্রয়িংরুমে তাকিয়ে দেখে সোফায় বসা থেকে দাড়িয়ে গেছেন নওশাদ সাহেব আর রাজীব মাহমুদ। আর সিড়িতে দাড়িয়ে তীব্র ঘৃনা আর রাগে কাপছেন নাফিজা বেগম। ইচ্ছে বুঝলো তার আকস্মাৎ রাগের কারন। আজ আবারো রাজীব মাহমুদ ওর আর রাকীনের বিয়ের প্রসঙ্গে কথা বলতে এসেছেন হয়তো। চুড়িদুটো মুঠোতে নিয়ে ইচ্ছে শান্তস্বরে বললো,

-সিন ক্রিয়েট করো না এস এম। যা ভাবছো, তেমন কিছুই ঘটবে না। তুমিও জানো এটা।

রাগে নাফিজা বেগমের চোখ ফেটে জল বেরিয়ে এলো এবার। কঠোরকন্ঠে বললেন,

-কি ঘটবে, কি ঘটবে না, সেটা তো সময় বলবে। কিন্তু আমি তোমাকে কোনোদিনও ক্ষমা করবো না ইচ্ছে! আমার মেয়েটাকে কেড়ে‌ নিয়েছো তুমি আমার কাছ থেকে! কোল খালি করে‌ দিয়েছো আমার তুমি!

-নাফিজা…

নওশাদ সাহেব কিছু বলবেন বলে এগোচ্ছিলেন। আজ তাকেও মানলেন না নাফিজা বেগম। হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বললেন,

-আমাকে আজ আটকিও না নওশাদ! কি দোষ ছিলো আমার বলো? কি দোষ ছিলো? দুজন দুজনকে খুব বেশি ভালোবেসেছিলাম বলে বিবাহিত জেনেও তোমার দেওয়া বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলাম। হ্যাঁ আক্রোশ ছিলো। তবে জীবিত থাকতে কখনোই কিন্তু ইচ্ছের মায়ের কোনো অধিকার খুন্ন হবে, এমন কোনো আবদার করিনি তোমার কাছে। এটা তো তুমিও জানো ইচ্ছে। সৎ হলেও আমার মেয়েটাও কিন্তু কখনো এতোটুকো কম ভালোবাসেনি তোমাকে আর তোমার মাকে। বরং বেশিই ভালোবাসতো। আমার চেয়েও বেশি।

ইচ্ছে চুপ রইলো। ভুল বলেনি নাফিজা বেগম। নিজের মায়ের চেয়ে খেয়ার কাছে ইচ্ছে আর ওর মাই বেশি প্রাধান্য পেতো বরাবর। আর তাই হয়তো প্রথম থেকেই ওর প্রতি এতো ক্ষোভ নাফিজা বেগমের। চুড়িদুটো মুঠোয় নিয়ে শক্ত হয়ে দাড়িয়ে রইলো ও। নাফিজা বেগম এগিয়ে এসে বললেন,

-আর তার বিনিময়ে তুমি কি দিয়েছিলে ওকে ইচ্ছে? মনে পরে চৌদ্দ বছর আগের কথা? গায়ের রঙ একটু চাপা বলে আমার মেয়েটাকে এতো বাজেভাবে উপহাস করেছিলে তুমি, অভিমান করে এই বাসা থেকেই বেরিয়ে গিয়েছিলো ও। মনে পরে?

ইচ্ছে চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো। চৌদ্দটা বছর হলো এই তিক্ত সত্য কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে ওকে। অন্যান্যদিনের মতো রাকীন, ও আর খেয়া একসাথে পার্কে খেলছিলো সেদিনও। বয়সের দিক দিয়ে ইচ্ছে-রাকীন কিছুটা বড় হলেও খেয়া ছিলো শিশুসুলভ। চাপা গায়ের রঙ নিয়ে কথা শুনতে হতো বলে, সেভাবে কারো সাথে মিশতো না ও। রাকীন ইচ্ছেই ছিলো ওর কমফোর্ট জোন। আর সেদিন খেলতে খেলতে সেই ইচ্ছের কথাতেই হয়তো কষ্ট পেয়েছিলো খেয়া। রাকীন খেয়ার সাথে বেশি মিশতো বলে ইচ্ছে শুধু মজার ছলে খেয়াকে বলেছিলো, “এই গায়ের রঙ নিয়ে রাকীনের সাথে খেলা তোকে মানায় না খেয়া। কাল থেকে ফুটপাতের বাচ্চাদের সাথে খেলবি কেমন?” কথাটা বলার পর সেদিন ও আর রাকীন হাসাহাসি করেছিলো প্রচুর। পার্ক থেকে দুজন ফিরলেও এককোনে চুপচাপ বসে ছিলো খেয়া। আর ফেরেনি। ওকে হারানোর পর ইচ্ছের অনুভব হয়েছে, ওর ঠাট্টাছলে বলা কথাটা ওর সবচেয়ে আদরের মানুষটাকে হারিয়ে যেতে বাধ্য করেছিলো। অতীত মনে করে গাল বেয়ে পানি গরালো ইচ্ছের। নওশাদ সাহেব একপলক রাজীব মাহমুদের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে এসে বললেন,

-শান্ত হও নাফিজা। কি হলো আজ তোমার? খেয়ার বাসা ছাড়ার কারন ইচ্ছে না! ওরা তো তখনও অনেক ছোট। এই গায়ের রঙ নিয়ে সামান্য ঠাট্টাই তো করেছিলো ইচ্ছে। ওর কোনো দোষ…

-দোষটা ইচ্ছেরই নওশাদ! ইচ্ছেরই দোষ! আচ্ছা? তোমার কি একবারও মনে হয় না নওশাদ, আরেকটা মেয়ে ছিলো তোমার? একবারও মনে হয়না, তোমার এই মেয়ের জন্য আরেকটা মেয়েকে হারিয়েছো তুমি। একবারও মনে হয়না, এই ইচ্ছের জন্য আজ আমি সন্তান হারা। মনে হয়না নওশাদ? একবারও মনে হয়না?

এবার শব্দ করে কাদতে লাগলেন নাফিকা বেগম। দাতে দাত চেপে নিজেকে সামলালেন নওশাদ সাহেব। স্ত্রীকে শান্ত করতে বললেন,

-শান্ত হও নাফিজা।
নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ ” নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ” এবং ফলো করে সাথেই থাকুন।
-কতো খুজেছি। কতো জায়গায় ডায়রি করেছি। কোথাও পাইনি আমার মেয়েটাকে। পেতামই বা কি করে? ও ত ফিরতে চাইই নি! ওর জায়গা তো ইচ্ছে কবেই নিয়ে নিয়েছে তাইনা? খেয়া ফিরবে না আর! ফিরবে না! নিয়ে নাও ইচ্ছে! ওই চুড়িদুটোর সাথে ওর সব অংশীদারীত্ব আমি তোমাকে ভিক্ষা দিলাম। নিয়ে নাও!

কথাটা বলে হনহনিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন নাফিজা বেগম। ইচ্ছে চোখ মেলে তাকালো। গাল মুছে একটা শুকনো ঢোক গিলে বাবাকে বললো,

-এস এমের কি হয়েছে বাবা?

নওশাদ সাহেব কিছু বলার আগেই রাজীব মাহমুদ এগিয়ে আসলেন। ইচ্ছের সামনে দাড়িয়ে বললেন,

-রাকীন এসেছে ইচ্ছে। তোমার রুমে আছে। তোমার সাথে দেখা করতে চায়। কথা বলতে চায় ও।

ইচ্ছে অবুঝের মতো বাবার দিকে তাকালো। নওশাদ সাহেবেরও অসহায় চাওনি। রাজীব মাহমুদ বললেন,

-আমার ছেলেটাও এতোগুলো বছর হলো গুমরে মরেছে মা। যে হারিয়ে গেছে, তাকে ভেবে ভেবে সোনালী জীবনটার অনেক বড় একটা অংশকে শেষ করে দিয়েছে। তুমিও স্বাভাবিক নেই ইচ্ছে। কিন্তু আর না! বাবা হয়ে না আমি ওকে এভাবে দেখতে পারছি, নাইবা নওশাদ তোমাকে। তোমাদের মুভ অন করা প্রয়োজন। আমি জানি, খেয়ার পরে যদি রাকীনের সবচেয়ে কাছের কেউ হয়, সেটা তুমি। আর এটাও‌ জানি, রাকীনের চেয়ে ভালো কেউই বুঝবে না তোমাকে। আমার ছেলেটাকে বোঝার চেষ্টা করো ইচ্ছে। একটু বুঝো ওকে।

ইচ্ছে বিস্ময়ে তাকালো রাজীব মাহমুদের দিকে। রাকীনকে বুঝবে মানে? কি বুঝাতে চায় রাকীন? বিস্ময় নিয়েই বললো,

-এসব কি বলছেন আপনি রাজীব আঙ্কেল?

-তুমি গিয়ে একটু কথা বলো ওর সাথে। তারপর বাকিটা তুমি নিজেই বুঝে যাবে।

আবারো একপলক বাবার দিকে তাকালো ইচ্ছে। সিড়ি বেয়ে উঠে চলে এলো নিজের রুমে। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে দেখে রাকীন ওর ব্যালকনিতে পকেটে দুহাত গুজে উল্টোদিক হয়ে দাড়িয়ে। দেখে মনে হবে, পশ্চিমে হেলতে থাকা সূর্যে পৃথিবীর সব রুপ খুজে নেওয়ার চেষ্টায় আছে ও। দরজার শব্দ শুনে রাকীন যেনো টের পেলো ইচ্ছে এসেছে। তবে পেছন ফিরলো না। ওভাবেই অস্তগামী সুর্যের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,

-এসেছিস?

-কি হয়েছে রাকীন?

রাকীন আস্তেধীরে পেছন ফিরলো। ওর ঠোটের কৃত্রিম হাসিটা দেখে ইচ্ছের বিস্ময় বাড়লো আরো। বাইরে থেকে দেখে গোছানো মনে হলেও, বোঝাই যাচ্ছে, ভেতরে তান্ডব চলেছে কোনো এক। ইচ্ছে সবে কিছু বলতে যাবে, তার আগেই রাকীন বলে উঠলো,

-বিয়ে করবি আমাকে ইচ্ছে?

থেমে গেলো ইচ্ছে। পরপরই মনে পরলো, গত কিছুদিন দেখাসাক্ষাৎ কম হয়েছে বলে কথাটা অচেনা লাগছে ওর কাছে। নইলে এমন মজা সচারচর হতোই ওদের মাঝে। কিন্তু আজকে কিছু তো আলাদা। মাথায় ঘুরতে লাগলো, আচমকাই‌ নাফিজা বেগমের আক্রোশ, নওশাদ সাহেবের নিরবতা। আর রাকীনকে বোঝা নিয়ে রাজীব মাহমুদই বা কি বোঝাতে চাইলেন? ইচ্ছে একটা শুকনো ঢোক গিললো। জোরপুর্বক হেসে বললো,

-মজা করিস না। রাজীব আঙ্কেল বললো কি নাকি বলতে চাস? আমি…

-আমি তোকে বিয়ে করতে চাই ইচ্ছে। একবিন্দু মজা নেই এতে। ঠাট্টার ফল যে কতোটা যন্ত্রনার, তা তো তুই‌ জানিসই। আমি নিজেকে আর যন্ত্রনা দিতে চাই না। এতোগুলো বছর হলো চলে আসা এই সম্পর্কের বিচ্ছিন্নতাকে শেষ করতে চাই এবার। তোকে পুরোপুরিভাবে বুঝতে চাই। নিজেকেও‌ বোধগম্য করতে চাই তোর কাছে। আমি জানি, আমাকে ভালোবাসিস না তুই। আর এটাও জানি, তোকে ভালোবাসতে হলে তাকে আগে আমার‌ চেয়ে বেশি জানতে হবে তোকে। তোকে আমার চেয়ে বেশি কেউ‌ জানে না। নাইবা আমাকে তোর চেয়ে ভালোমতোন কেউ‌ আগলে‌ নিতে পারবে।

-রাকীন…

রাকীন এগিয়ে এসে দুহাত মুঠো করে নিলো ইচ্ছের। মাথা নিচু করে বললো,

-আর মানা করিস না। আমরা দুজন দুজনের সাথে ঠিক মানিয়ে নেবো! বিয়েটাতে রাজি হয়ে যা ইচ্ছে। আমার কথা ভেবে হলেও। প্লিজ!

ইচ্ছের হাত ছেড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো রাকীন। এতোক্ষন যেনো দম বন্ধ হয়ে আসছিলো ইচ্ছের। রাকীন বেরিয়ে যেতেই শ্বাস ছেড়ে ধপ করে বিছানায় বসে পরলো ও। চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গরাতে লাগলো ওর। ফাকা দৃষ্টিতে অসহায়ের মতো এদিকওদিক তাকালো ইচ্ছে। খেয়া ফেরেনি। রাকীনের সাথে আস্তেধীরে এভাবেই জুড়ে যাওয়ার কথা ছিলো ওর। আজ রাকীন নিজে ওকে বিয়ের কথা বলেছে। অবশেষে, দুই পরিবার খুশী। এতোদিন হলো, এতো ভালোভাবে চেনে, এমন কারো সাথেই বিয়েটা হবে ওর। রাকীনের অপেক্ষাকে আর দীর্ঘায়িত করবে না ও। হ্যাঁ-ই বলবে ইচ্ছে। তবে ওর এতো কষ্ট কেনো হচ্ছে? কেনো বিয়ের কথা ভাবতেই শ্বাস আটকে আসছে ওর? কেনো মনে হচ্ছে সে ভাবনা অনেক আগেই অন্যত্র নোঙর ফেলেছে। প্রেমনোঙর…

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here