মরুর বুকে বৃষ্টি 💖 পর্ব-২৪

0
1994

#মরুর_বুকে_বৃষ্টি 💖
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-২৪

★আদিত্য একটু আগেই অফিসে গেছে। আবিরও ওর বাবার অফিস জয়েন করেছে। তাই সেও অফিসে। নূর ড্রয়িং রুমে ওর বিড়াল ছানা নিয়ে খেলা করছে। তখনই শায়না উপর থেকে সিড়ি বেয়ে নেমে এলো। নূরকে দেখে বাঁকা হেসে ধীরে ধীরে নূরের কাছে গিয়ে বসলো।

শায়নাকে দেখে নূর ভ্রু কুঁচকে ফেললো। মেয়েটাকে তার একদমই পছন্দ না। তবুও হিরো বলেছে গেস্ট দের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে হয় না। তাই নূর কিছু বললো না। শায়না নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
–কি করছ নূর?

নূর বলে উঠলো।
–তুমি কি অন্ধ নাকি?দেখছোনা বেবির সাথে খেলা করছি।

শায়না বলে উঠলো।
–শুধু কি সবসময় খেলা করলে হবে? তুমিতো আদিত্যের বউ। তোমাকে বউদের মতো কাজকর্ম করা উচিত। তাহলে আদিত্য তোমাকে ভালোবাসবে। নাহলে আর তোমাকে ভালোবাসবে না। তোমার ওপর বিরক্ত হয়ে যাবে।

শায়নাকে নূরের পছন্দ না হলেও, শায়নার কথায় নূর কৌতূহল পোষণ করে বললো।
–মানে? কি করতে হবে আমাকে?

–তুমি চাইলে আমি তোমাকে বলতে পারি। তবে আমার একটা শর্ত আছে। তুমি যদি শর্ত মানো তাহলেই বলবো।

–কি শর্ত?

–শর্ত হলো। আমি তোমাকে যা যা শিখিয়ে দেব এগুলো তুমি কাওকে বলতে পারবে না। এটা আমাদের টপ সিক্রেট থাকবে বুঝেছ?

নূর সরল মনে রাজি হয়ে বললো।
–ঠিক আছে। আমি রাজি।এখন বলো আমাকে কি করতে হবে?

শায়না নূরকে এক এক করে বলতে লাগলো ওকে কি করতে হবে। আর অবুঝ নূর সেগুলো সব মেনে নিয়ে বললো।
–এমন করলে হিরো আমার উপর খুশি হবে?

–হ্যাঁ অবশ্যই হবে।

–ঠিক আছে তাহলে আমি এমনই করবো।

শায়না বাঁকা হেসে ওখান থেকেই উঠে গেল। ওর প্ল্যানের প্রথম অংশ সাকসেসফুল হয়েছে। এখন শুধু রেজাল্ট দেখার পালা। ইট উইল বি ফান।
_____

সন্ধ্যায় যথা সময়ে আদিত্য অফিস থেকে বাসায় এলো। আর রোজকার মতো নূর দরজা খুলে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরলো। আদিত্যও প্রশান্তির হাসি দিয়ে নূরকে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে নিল। তারপর নূরকে কোলে নিয়ে বেডরুমে চলে গেল।

বেডরুমে এসে আদিত্য নূরকে বেডের ওপর বসিয়ে দিয়ে, ল্যাপটপের ব্যাগ আর মোবাইল টা টি টেবিলের উপর রাখলো। তারপর কাবার্ড থেকে কাপড়চোপড় নিয়ে ওয়াশরুমে গেল ফ্রেশ হতে। কিছু সময় পর আদিত্য বের হলো ওয়াশরুম থেকে। রুমে এসে দেখলো নূর রুমে নেই। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে ভাবলো নূর আবার কই গেল? এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারিনা।একটুও এক জায়গায় থাকে না। সারাক্ষণ শুধু ছোটাছুটি করে বেরায়। হঠাৎ বেলকনি থেকে কোন কিছুর আওয়াজ শোনা গেল। আওয়াজের উৎস খোঁজার জন্য আদিত্য বেলকনির দিকে গেল।

বেলকনিতে এসে আদিত্যর চোখ চড়কগাছ হয়ে গেল। পুরো বাকরুদ্ধ হয়ে বললো বেচারা। কারণ ওর সামনে নূর ওর ল্যাপটপ আর সদ্য কেনা লেটেস্ট আইফোন টা বালতির ভেতর নিয়ে শাবান পানি দিয়ে ঘষে ঘষে পরিস্কার করছে। নূরের এহেন কাজে আদিত্য তাজ্জব হয়ে চেয়ে রইল। তারপর দ্রুত গতিতে নূরের কাছে গিয়ে ওর হাত থেকে ল্যাপটপ আর ফোন টা নিয়ে উঁচু করে ধরলো। ল্যাপটপ আর ফোনের গা বেয়ে পানি চুইয়ে চুইয়ে পরছে। আদিত্য করুন চোখে তাকিয়ে রইলো ওর সদ্য অক্কা পাওয়া ল্যাপটপ আর ফোনের দিকে। বেচারারা কি দোষ করেছিল? এমন অকাল মৃত্যু হলো তাদের। আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে করুন সুরে বললো।
–এটা কি করলে তুমি এঞ্জেল?

নূর হাসি মুখে বলে উঠলো।
–ভালো করেছি না আমি? দেখ তোমার ল্যাপটপ আর ফোন একদম চকচকা করে পরিস্কার করে দিয়েছি।আর কোন ময়লা নেই। ভালো করেছি না আমি?

আদিত্যের চোখ ফেটে কান্না আসছে। কি বলে এই মেয়ে? আমার ল্যাপটপ আর ফোনটাকে এমন বেরহম ভাবে হত্যা করে, বলছে ভালো করেছে। ল্যাপটপে ওর কতকাল জরুরি ফাইল ছিল। আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে হতাশার সুরে বললো।
–এসব কেন করেছ এঞ্জেল? তোমাকে আমি মানা করেছি না এসব কাজ তোমাকে করতে হবে না। তারপরও কেন করতে যাও এসব?

নূর ঠোঁট উল্টিয়ে অভিমানী সুরে বললো।
–তারমানে তুমি খুশী হওনি? ধ্যাৎ তুমি আমার কোন কাজে খুশিই হওনা। এতো সুন্দর করে পরিস্কার করে দিলাম তাও খুশী হওনা।পঁচা একটা কথা নেই তোমার সাথে হুহ্।
কথাটা বলে নূর অভিমান করে ওখান থেকে উঠে রুমে চলে এলো। রুমে এসে দুম করে বেডের ওপর গাল ফুলিয়ে বসে রইলো। ওই শায়না মেয়েটার ওপরও ওর অনেক রাগ হচ্ছে। কি একটা পচা বুদ্ধি দিল, হিরোতো খুশিই হলোনা।

আদিত্য রুমে এসে নূরকে অভিমান করে বসে থাকতে দেখে মুচকি হেসে ওর সামনে গিয়ে বসলো। আদিত্যকে দেখে নূর অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। আদিত্য দুই হাতে নূরের মুখটা ধরে আস্তে করে নিজের দিকে ঘুরিয়ে, আদুরে কন্ঠে বললো।
–আমার এঞ্জেল টা রাগ করেছে কেন?আমি কি এঞ্জেল কে বকা দিয়েছি বলো? আরে আমিতো এমনি এমনি বলছিলাম। তুমি ছাড়া আমার কাছে অন্য কিছু ইম্পর্ট্যান্ট হতে পারে বলো? তুমিতো আমার জান নিয়ে নিলেও আমি টু শব্দ করবোনা। সেখানে এই সামান্য জিনিসের কি মূল্য আছে। প্লিজ হাসোনা সোনাপাখি। জানো তোমাকে হাসলে কত্তো সুন্দর লাগে? একটু হাসোনা?

–হাসবো না আমি। তুমি তখন খুশি হওনি কেন? আমি তোমার জিনিস গুলো পরিস্কার করে দিলাম আর তুমি একটুও খুশী হলে না। যাও হাসবো না আমি।

–আচ্ছা হাসবে না? ঠিক আছে আমিও দেখছি তুমি কিভাবে না হেঁসে থাকো।
কথাটা বলেই আদিত্য নূরকে কাতুকুতু দিতে শুরু করলো। নূর এবার খিলখিল করে হেঁসে উঠে মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলো। নূরের হাসি দেখে আদিত্যও হেসে উঠলো।

এদিকে শায়না আদিত্য আর নূরের রুমের বাইরে এসে কান পেতে দাড়িয়ে আছে। ও তখন নূরকে যে কুবুদ্ধি শিখিয়ে দিয়েছে। সেই অনুযায়ী আদিত্য নিশ্চয় এখন রেগে নূরের সাথে রাগারাগি করবে। আর সেটা শোনার জন্যই শায়না অধীর আগ্রহে কান পেতে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু আদিত্যের রুম থেকে রাগারাগির বদলে হাসাহাসির শব্দ আসছে। তা শুনে শায়নার কপাল কুঁচকে এলো। মনে মনে ভাবলো, আদিত্য নূরের ওপর রাগ করেনি? নিজের প্ল্যান এভাবে ফেইল হতে দেখে শায়না রাগে ফ্লোরে একটা লাথি মেরে ওখান থেকে গটগট করে চলে গেল। ও ভেবে পায়না আদিত্য এই পাগল মেয়েটার জন্য এতো পাগল কেন? কি এমন আছে ওর মাঝে? তবে যাইহোক ওকে তো আদিত্যের জীবন থেকে সরিয়েই ছাড়বো। এসব ভাবতে ভাবতে নিজের রুমে চলে গেল শায়না।
_____

রাতে ডিনার শেষ করে সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে। বিহান আরচোখে আয়াতের দিকে তাকিয়ে আছে। ভাবছে, মেয়েটাকে কতো স্বাভাবিক লাগছে এখন। যেন কিছুই হয়নি। ওকে দেখে কে বলবে মেয়েটা তখন ওভাবে কেঁদেছে। আচ্ছা আয়াত কি আমার জন্য আগেও এভাবে কেঁদেছে। আমার মতো একটা লাওয়ারিশ ব্যাক্তির জন্যও কেউ কাঁদে। কেউ ওর জন্য তার মূল্যবান চোখের জল বিসর্জন দেয়। কথাটা ভাবতেই কেমন যেন অদ্ভুত ফিলিং হচ্ছে বিহানের।বুকের ভেতর কেমন যেন অপিরিচিত এলোমেলো একটা অনূভুতি হচ্ছে । না না আমাকে এভাবে দূর্বল হলে চলবে না। আমার জীবনে এসবের জায়গা নেই। আয়াত আমার কাছ থেকে দূরেই ভালো থাকবে। এসব নানান যুক্তি দিয়ে নিজের মনকে শক্ত করার অহেতুক চেষ্টা করছে বিহান।

আবির নিলার পাশে গা ঘেঁষে বসে আছে। আর সুযোগ বুঝে নিলার সাথে দুষ্টুমি করে যাচ্ছে। সবার সামনে তাই নিলা কিছু বলতেও পারছে না। আবির সবার অগোচরে নিজের ডান হাতটা পেছন দিক দিয়ে আস্তে আস্তে নামিয়ে নিলার কোমড়ের কাছে নিয়ে গেল। তারপর নিলার কোমড়ে টুস করে একটা চিমটি মেরে ফেলে। নিলা একটু ব্যাথা পেয়ে চোখ গরম করে তাকালো আবিরের দিকে। আর আবির দুষ্টু হাসি দিল। নিলা চোখের ইশারায় আবিরের হাত সরিয়ে নিয়ে যেতে বললো। কিন্তু আবিরের তা নিয়ে কোন ভাবান্তর নেই। ও ওভাবেই নিলার কোমড়ে হাত রেখে বসে আছে। নিলাও কি পাঁজি কম নাকি?নিলা নিজের মাথার চুল থেকে একটা পিন খুলে আবিরের হাতের ওপর টুস করে বিধিয়ে দিল। আবির এক ঝটকায় হাত সরিয়ে নিয়ে, হাত ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে মুখ দিয়ে উহ উহ শব্দ করতে লাগলো।
বাকি সবাই হাসতে লাগলো ওর কান্ড দেখে।

শায়নার এসবে মন নেই। ও শুধু ধান্দায় আছে কিভাবে নূরকে চেতানো যায়। যাতে আদিত্য ওর পাগলামো দেখে বিরক্ত হয়ে যায়। শায়নার হঠাৎ মনে পড়লো ও যখনই আদিত্যের কাছে যায় তখনই নূর বেশি ক্ষেপে যায়। কথাটা ভেবে শায়না নূরকে রাগানোর জন্য ইচ্ছে করে আদিত্যের গা ঘেঁষে বসে ওর সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলতে লাগলো। বিষয় টা আদিত্যের চরম বিরক্তিকর লাগলেও কিছু না বলে দাত কিড়মিড় করে বসে রইলো।

শায়নাকে আদিত্যের সাথে এভাবে দেখে নূরের রাগ হতে লাগলো। রাগে ওর ইচ্ছে করছে ওই পঁচা মেয়েটার মাথার ওপর আগুন ধরিয়ে দিতে। পঁচা মেয়েটা শুধু আমার হিরোর কাছে আসে।

শায়না আদিত্যের দিকে তাকিয়ে আহ্লাদী কন্ঠে বললো।
–আদিত্য আমাকে একটা গান শোনাও না? মায়ের কাছে শুনেছি তুমি নাকি অনেক ভালো গান গাইতে পারো। আজকে আমাদের একটা গান শোনাও না?

আদিত্য কিছু বলতে যাবে তার আগেই নূর তেড়ে এসে বললো।
–এই এই পঁচা মেয়েটা আমার হিরো কেন তোমাকে গান শোনাবে? হিরো কি তোমার বর নাকি? হিরো আমার বর। হিরো শুধু আমাকে গান শোনাবে বুঝেছ? পঁচা মেয়েটা যাও এখান থেকে তুমি যাও,,
নূর কথাগুলো বলতে বলতে শায়নার চুল ধরে টানতে লাগলো। আর শায়না ব্যাথায় ছটফট করতে লাগলো।

নূরের কান্ড দেখে আদিত্যের চোখ কপালে উঠে গেল। আদিত্য দ্রুত গিয়ে নূরের কোমড় জড়িয়ে ধরে নূরকে শায়নার কাছ থেকে ছাড়িয়ে আনলো। বাকি সবাই অনেক কষ্টে নিজেদের হাসি আটকে রেখেছে। শায়নাকে এভাবে হেনেস্তা করতে দেখে ওদের অনেক মজা লাগছে। আদিত্য নূরকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে বললো।
–শান্ত হও প্লিজ। এমন করছ কেন এঞ্জেল? তোমাকে বলেছি না শায়না আমাদের গেস্ট। আর গেস্টদের সাথে এমন মিসবিহেব করতে নেই।

নূর প্রতিবাদী কন্ঠে বলে উঠলো।
–তাহলে ওই পঁচা মেয়েটা তোমাকে গান গাইতে কেন বললো? তুমি আমার হিরো। তুমি শুধু আমার জন্য গান গাইবে আর কারোর জন্য না।

–আরে বাবা ও বললো বলেই কি আমি গাইলাম নাকি? আরে আমিতো মানাই করছিলাম, তার আগেই তুমি হাইপার হয়ে গেলে।
আদিত্যের কথায় নূর একটু শান্ত হলো।তবে এখনো ও শায়নার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে।

আদিত্য শায়নার দিকে তাকিয়ে নূরের বিহেভিয়ার এর জন্য সরি বললো। শয়ানা ভেতরে ভেতরে রাগে ফেটে গেলেও উপরে উপরে জোরপূর্বক হেসে বললো।
–ইটস ওকে।

আবির পরিবেশটা স্বাভাবিক করার জন্য বলে উঠলো।
–আরে শায়না তোমার যখন এতই গান শোনার ইচ্ছা, তাহলে আমাদের ভাবিডলকে বলনা। আমাদের ভাবিডল অনেক ভালো গান গাইতে পারে। সে তোমাকে গান গাইয়ে শোনাবে।

আবিরের কথায় সবাই ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকালো। ওরা ভাবছে, এই আবির টা আবার কখন নূরকে গান গাইতে শুনলো? আজ পর্যন্ত আদিত্যই কখনো নূরকে গান গাইতে শোনেনি। তাহলে এ কোথাথেকে শুনলো। এই ছেলে নির্ঘাত ঢপ মারছে।
তবে নূর আবিরের কথায় খুশিতে গদগদ হয়ে বললো।
–হ্যাঁ আমি পারিতো গান গাইতে। আমি শোনাবো তোমাদের গান।

আবির হাতে তালি দিয়ে বললো।
–বাহ্ এতো কামাল হোগেয়া,ধোতি ফাড়কে রুমাল হোগেয়া। তো শুধি দর্শকশ্রোতা পেশ হে আপনাদের সামনে দ্যা কোকিল কন্ঠি, সুরের রাগিণী আমাদের প্রিয় ভাবিডল।তালিয়া,,,

সবাই নূরের জন্য তালি বাজালো। নূর পাশে তাকিয়ে দেখলো শায়না আবারও আদিত্যর কাছে ঘেঁষে ওর সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে। নূরের আবারও রাগ উঠে গেল। নূর উঠে দাঁড়িয়ে শায়নার কাছে গিয়ে রাগী চোখে তাকিয়ে শায়নার হাত ধরে ওকে টেনে আদিত্যের কাছ থেকে সরিয়ে এনে একটা সিঙ্গেল সোফায় ঠাস করে বসিয়ে দিল। তারপর শায়নার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। শায়নার একটু ভয় লাগছে নাজানি নূর আবার কি করে বসে। শায়না ভয়ে ঢোক গিলতে লাগলো।

আদিত্যেরও অনেক টেনশন হচ্ছে। নাজানি নূর আবার কি করে বসে? যতই হোক আয়াত ওর ফুপির মেয়ে। আর ওর সাথে খারাপ কিছু হলে ব্যাপার টা ভালো দেখাবে না।আদিত্য ভাবছে, নূর শুধু শায়নার সাথেই কেন এমন করে? এমনিতেতো কতো সহজেই সবার সাথে মিশে যায়।তাহলে শায়নাকে দেখতে পারে না কেন এটাই বুঝতে পারছে না আদিত্য।
আদিত্য উঠে গিয়ে আবারও নূরকে নিয়ে এসে সোফায় বসিয়ে দিল।

আবির একটু মহল বানানোর জন্য গিটার নিয়ে এলো। গিটারে টুংটাং করে নূরকে গাইতে শুরু করতে বললো। নূর গান গাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে একটু নড়েচড়ে বসলো। সবাই নূরের গান শোনার জন্য আগ্রহী হয়ে বসে আছে।

নূর শায়নার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আচমকা অনেক জোরে একটা চিল্লানি দিয়ে উঠলো।
–আআআআআআআ

এমন একটা কান্ডের জন্য কেউই প্রস্তুত ছিলোনা। সবাই চমকে উঠলো। নূরের চিল্লানিতে সবার কানের তালা ফেটে যাওয়ার উপক্রম। সবাই যার যার কান চেপে ধরলো। আবির গিটার বাজাতে গিয়ে নূরের চিল্লানিতে হড়বড়িয়ে গিয়ে গিটারের তারই ছিঁড়ে ফেললো। আর বিহান মাত্রই মুখে পানি দিয়েছিল। নূরের কাজে তারও মুখের পানি সব বাইরে ছিটকে পরে গেল।

নূর উঠে দাঁড়িয়ে শায়নার কাছে এসে ওর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওর চারিদিকে ঘুরে ঘুরে গেয়ে উঠলো।
♬ ♬ ভাটকে পানছি….
♬ ♬ ভাটকে পানছি ভুল না জানা
♬ ♬ ইয়ে জাগ তেরা নেহি ঠিকানা
(নূরের এমন আজব গান আর কান্ড দেখে সবাই অবাক হয়ে চেয়ে রইল। নূর কখনো শায়নার চুল টানছে তো কখনো ঘাড় ঝাঁকাচ্ছে। শায়নার চারিদিকে ঘুরে নানান ভঙ্গিমায় মুখ ভাঙ্গিয়ে ভাঙ্গিয়ে গাইছে)
♬ ♬ ভাটকে পানছি ভুল না জানা
♬ ♬ ইয়ে জাগ তেরা নেহি ঠিকানা
♬ ♬ না না না না আ আ আ
♬ ♬ ভাটকে পানছি ভুল জানা
♬ ♬ ইয়ে জাগ তেরা নেহি ঠিকানা
♬ ♬ ইয়ে জাগ তেরা নেহি ঠিকানা
(নূর শায়নার অবস্থা নাজেহাল করে দিচ্ছে। আদিত্য চেষ্টা করেও নূরকে ঠেকাতে পারছে না। নূর ঘরের কোনা থেকে একটা ফুল ঝাড়ু এনে শায়নার মুখের ওপর বাড়ি মেরে দিল। বেচারি শায়নার নাকে মুখে ধূলো ঢুকে যাওয়ায় কাশতে লাগলো। নূর শায়নার দিকে আঙুল তুলে গাইলো)
♬ ♬ ভুল ছে তু ইহা পে আয়া
♬ ♬ তেরে লিয়ে ইয়ে দেশ পারায়া
♬ ♬ একদিন বাপাস পারেগা যানা
♬ ♬ যানা যানা যানা যা….আ….না
♬ ♬ ভুল ছে তু ইহা পে আয়া
♬ ♬ তেরে লিয়ে ইয়ে দেশ পারায়া
♬ ♬ একদিন বাপাস পারেগা যানা
(শায়নার অবস্থা শোচনীয়। নূর এবার টি টেবিলের ওপর থেকে একটা পানির বোল এনে শায়নার মাথার ওপর ঢেলে দিল। তারপর আবার গাইতে লাগলো)
♬ ♬ ভাটকে পানছি ভুল না জানা
♬ ♬ ইয়ে জাগ তেরা নেহি ঠিকানা
♬ ♬ ইয়ে জাগ তেরা নেহি ঠিকানা

গানের শেষে নূর আবারও গগনবিদারী একটা চিল্লানি দিয়ে উঠলো।
—আআআআআআ

নূরের চিল্লানির জোরে বেচারি শায়না সোফা উল্টে পড়ে গেল।

এতক্ষণ হাসি আটকে রাখলেও এবার আর পারলোনা।বিহান আর আবির হো হো করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। হাসতে হাসতে ওদের পেটের খিল লেগে গেল। নূর যে শায়নাকে এমন হোয়াইট ওয়াশ করে দিয়েছে তা দেখে ওরা কিছুতেই হাসি থামাতে পারছেনা। নিলা আর আয়াতও ঠোঁট চেপে হাসছে। তবে আদিত্যের টেনশন হচ্ছে। নূর এবার একটু বেশিই করে ফেলেছে।

আদিত্য দ্রুত গিয়ে নূরকে শায়নার কাছ থেকে সরিয়ে এনে সোফায় বসিয়ে দিল। তারপর শায়নার কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে ওকে উঠতে সাহায্য করলো। শায়না আদিত্যকে দেখে ন্যাকা কান্না শুরু করে দিল। আদিত্য বলে উঠলো
–সরি শায়না।নূরের হয়ে আমি সরি বলছি। তুমিতো জানোই ও কতটা অবুঝ।

শায়না একটু থেমে নিজের চোখ দেখিয়ে বললো।
–আদিত্য দেখনা একটু, নূর তখন ঝাড়ু দিয়ে বাড়ি মারায় চোখে ময়লা গেছে। একটু দেখনা?

আদিত্য অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভদ্রতার খাতিরে শায়নার চোখে দেখতে লাগলো।
এটা দেখে নূরের রাগ আরও বেড়ে গেল। নূর হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে টি টেবিলের উপর রাখা কোকা কোলার একটা কাচের বোতল হাতে তুলে নিল। তারপর শায়নার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো।
–পঁচা মেয়ে সর আমার হিরোর কাছ থেকে।

নূরের কথায় আদিত্য পেছনে ফিরে তাকালো। তখনই নূর কাচের বোতল উঠিয়ে শায়নার মাথায় বাড়ি দেওয়ার জন্য আগ্রাসী হলো। আদিত্য চমকে গিয়ে নূরের হাত ধরে ওকে ঠেকানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু নূর কিছুতেই মানছে না। ও শায়নার মাথা আজ ফাটিয়েই ছাড়বে।নূরের সাথে না পেরে উঠে আদিত্য আর উপায় না পেয়ে উচ্চস্বরে একটা ধমক দিয়ে উঠে বললো।
–স্টপ ইট নূর। স্টপ ইট রাইট নাউ। কি করছ তুমি এসব? পাগল হয়ে গেছ তুমি?

আদিত্যের ধমকে নূর কেঁপে উঠল। মাথা নিচু করে চুপ করে দাঁড়িয়ে গেল। অনেক অভিমান হচ্ছে ওর। আদিত্য আজ পর্যন্ত কখনো ওর সাথে এভাবে কথা বলেনি। আর আজওই পঁচা মেয়েটার জন্য হিরো আমাকে বকলো। কথাটা ভাবতেই নূরের কান্না পাচ্ছে।
আদিত্য আবার বললো।
–যাও রুমে যাও।

নূর চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।
আদিত্য এবার উচ্চস্বরে বলে উঠলো।
–কি হলো শুনতে পাওনি? গো টু ইউর রুম রাইট নাউ।

নূর এবার ঠোঁট উল্টিয়ে চোখ মুছতে মুছতে দৌড়ে উপরে চলে গেল। আদিত্য বুঝতে পারছে নূর অনেক কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু ওর হাতে যে আর কোন উপায় ছিল না। নূরকে না ঠেকালে ও আজ বড় কোন অঘটন ঘটিয়ে ফেলতো। তাইতো ওকে এমন করতে হলো। নাহলে ও ওর কলিজাটাকে কখনোই এভাবে বকতো না। আদিত্য একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শায়নার দিকে তাকিয়ে ছোট্ট করে একটা সরি বলে ওখান থেকে চলে গেল। ধীরে ধীরে বাকি সবাইও নিজেদের রুমে চলে গেল।

সবাই চলে যেতেই শায়না একটা বিশ্বজয়ের হাসি দিল। এটাই তো ও চাচ্ছিল। আদিত্য ধীরে ধীরে নূরের ওপর বিরক্ত হচ্ছে। এভাবেই একসময় ও নূরের ওপর পুরোপুরি অতিষ্ঠ হয়ে উঠবে। আর একসময় নূরকে ওর জীবন থেকে ছুড়ে ফেলবে।তারপর আদিত্য শুধু আমার হবে। কথাগুলো ভেবে খুশি মনে নিজের রুমে গেল শায়না।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here