আমার প্রিয় তুমি পর্ব-১৬

0
1507

#আমার_প্রিয়_তুমি
#মেহজাবিন_তানিয়া
পর্ব-১৬

৩১.

মানুষের জীবন-মরণ সব আল্লাহর হাতে যার হায়াত যতটুকু সে বাঁচবেও ততটুকু । কেউ বলতে পারবে না কার মরণ কখন , কিভাবে এবং কি পরিস্থিতিতে হবে।

তেমনি টানা আট ঘন্টা লাইফ সাপোর্টে রাখার পর জিবনের কাছে হেরে গেলো তাহুর বাবা নাসিম উদ্দিন। প্রচলিত কথা আছে ভালো মানুষ দুনিয়াতে টিকে না বেশি দিন। এই কথার মর্মতা বুঝিয়ে দিয়ে গেলো তাহুর বাবা। যে মানুষটা সারা জীবন মানুষকে শিক্ষা দিলো মানুষের মতো মানুষ হবার আজ সেই শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষগুলো তাকেই শিক্ষা দিয়ে দিলো তাদের বিষাক্ত কথায় । তাই বলে মানুষে মুখের কথা বিষধর সাপের চেয়েও বিষাক্ত।

তাহুর মা যখন জানতে পারেন তার মেয়েকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং একই হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে তখন তিনি ছুটে যান মেয়ের কেবিনে । গিয়ে দেখেন তার মেয়ের জ্ঞান নেই , মাথা-হাতে ব্যান্ডেজ করা বেডে শুয়ে আছে । অজ্ঞান অবস্থাতেই মেয়েকে চুমুতে ভরিয়ে তুলেন । ডাক্তারের কাছে শুনেছেন মেয়ের তেমন ক্ষতি হয়নি সামান্য হাতে এবং মাথায় আঘাত পেয়েছে। এখন ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করলেন মেয়েকে আদর করতে যেয়ে।

দরজায় দাঁড়িয়ে তানভি মা-মেয়ের ভালোবাসা দেখতে থাকে । তানভি গিয়েছিলো বাহিরে একটা কাজে।ফেরার পথে তাহুর মার সাথে কথা বলার জন্য নাসিম উদ্দিনের কেবিনের দিকে যায়। আসছে পর থেকে কোনো কথা হয় নাই তার উপর তাহু আর নিজের বেপারটাও তো জানাতে হবে । কিন্তু গিয়ে দেখে একজন নার্স দৌড়ে বের হলো কেবিন থেকে । প্রথমে তানভি ভাবে এটা রাকিবের লোক পরে দেখে কেবিনের ভেতর নাসিম উদ্দিন কেমন যেনো করছে । তানভি দ্রুত কেবিন ঢুকে পিছন পিছন ডাক্তারও চলে আসে কেবিনে। ডাক্তার এসেই চিকিৎসা শুরু করে । এর মধ্যে তাহুর বাবা একবার চোখ খুলে তাকিয়ে ছিলো। তানভি‌ গিয়ে তাহুর বাবার হাতটা শক্ত করে ধরে। শুধু মুখ ফুটে ভরসা দেবার সময়টুকু দিলো না এটা বলতে দিলো না যে আমি আছি আপনার মেয়ের পাশে কখনো কষ্ট পেতে দিবো না । কিন্তু তার আগেই ডাক্তার বলে দিলো we are sorry he is no more.
এই ছোট্ট কথাটা তানভির বুকে গিয়ে লাগলো।চোখ বুজে বললো একটা সুযোগও দিলেন না আমায় । কি করে তাহু আর আন্টিকে সামাল দিবো।

তাহুর মা মন ভরে মেয়েকে আদর করে উঠে দাঁড়ালো তার মেয়েকে কে উদ্ধার করলো তাকে খুজার জন্য । তার ঋণ যে সুদ করার মতো নয়। পিছন ঘুরে দেখে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে একটা ছেলে ঠিক চিনতে পারলো না । সামনে এসে বলে আন্টি আমি তানভি আজিজ হাওলাদারের বড় নাতি । তাহুর মা চিনতে পারলো খুব ছোট বেলায় একবার দেখেছিলো। এখন তো মাশআল্লাহ অনেক বড় হয়ে গেছে।

আন্টি তাহরিমাকে আমি এখানে নিয়ে আসছি । কথা বলে তানভির সামনে দাঁড়িয়ে উশখুশ করছে কি করে বলবে কথাটা । আন্টি বলছিলাম কি আঙ্কেল…কথাটা আর বলতে পারলো না । পিছন থেকে একজন নার্স বলে উঠলো ৩০১ নাম্বার কেবিনের রোগীর জনাব নাসিম উদ্দিনের বাসার লোক তো আপনারা … কিছু ফর্মালিটি আছে সেগুলো পূরণ করে আপনাদের DEAD BODY নিয়ে যান।

কথাটা শুনেই তানভি সামনে তাকিয়ে তাহুর মা নিচে পরে গেছে ।

৩২.

আজ নাসিম উদ্দিনের বাসায় মানুষের আনাগোনা চোঁখে পড়ার মত । কেউ আসছে শ্বান্তনা দিয়ে , কেউ আসছে সুযোগে সৎ ব্যবহার করতে , কেউ আবার সরাসরি মেয়ের নামে কটু কথা বলতে আসছে । আবার কেউ কেউ আসছে এই সব কিছু দেখে মজা নিতে । আবার সব কিছু ছাপিয়ে কিছু ভালো মানুষও আছে যারা সত্যিকার অর্থে মানুষের দুঃখের সাথী হয়ে আসে।

নিজ বাড়ির উঠানে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত অবস্থায় বসে আছে তাহুর মা। আর পাশে তার শাশুড়ি ছেলের জন্য আহাজারি করছেন । এই বুড়ো বয়সে এসে এভাবে ছেলেকে হারাবে এটা মানতে পারতেছে না। আল্লাহ কাছে দুই হাত তুলে বলছে ‘ আল্লাহ কেন তুমি আমারে নিলা না ,আমার পোলা নাই আমি কেমনে সজ্জো করমু ‘বলে বুক চাপরে কান্না করছে ।

পাঁচ বছর পর টানা ছাব্বিশ ঘন্টা জার্নি করে বাবার লাশ নিয়ে বাসায় ফিরে মেঘ ।
এয়ারপোটে থাকা কালীনই কাজিনদের কাছ থেকে জানতে পারে তার বোন আর বাবা হসপিটালে কিন্তু তার বাবা আর নেই । ওর জন্য দাফন করা হয় নাই তাকে হসপিটালে লাশ ঘরে রাখা হয়েছে। তাই এক কাজিনকে দিয়ে ওর সমস্ত জিনিস পত্র বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে ছুটে যায় হসপিটালে বাবার লাশ আনতে।

বাবার মর দেহ দেখে নিজেকে আর আটকে রাখতে পারে না মেঘ ঝরঝর করে কেঁদে উঠে। তার যে মাথার উপর থেকে ছায়া চলে গেছে সারা জীবনের জন্য । বাবার সাথে সামনাসামনি বসে দুটো কথাও বলতে পারলো না , জড়িয়ে ধরে বলতে পারলো না বাবা চিন্তা করো না আমি এসে গে়ছি। কিন্তু আফসোস।

বাবার লাশকে গাড়িতে উঠিয়ে বোনকে দেখতে যায় মেঘ। বোনের পাশে অন্য ছেলেকে দেখে কিছুটা অবাক হয় । কিন্তু তানভি মেঘকে সব খুলে বলে এবং ভরসা দেয় আমি ওর পাশে আছি আপনি বাসায় যান আমি তাহুর জ্ঞান ফিরলে নিয়ে আসবো।
তানভিরের উপর বোনের সব দায়িত্ব দিয়ে বাবার লাশ নিয়ে বাসার পথে রওনা দেয় মেঘ।
…….……

ছেলের লাশ দেখে মেঘের দাদি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন । নিজে বেঁচে থাকতে কোনো মাই সন্তানের লাশ দেখে সহ্য করতে পারবে না।
মেঘের মাও বুক ভাঙ্গা আহাজারিতে কেঁদে উঠেন ।স্বামী নামক বটবৃক্ষ ছায়া যে চিরদিনের মতো বিলিন হয়ে গেছে ।

বাবার লাশ স্বযত্মে রেখে মার কাছে এগিয়ে গেলো মেঘ। ছেলেকে দেখে বুকে জাপটে ধরে মেঘের মা আজ যে ছেলেকে কাছে পাবার আনন্দটাও উপভোগ করতে পারছে না । মেঘ নিজেকে শক্ত করে মাকে বুকে জরিয়ে ধরে । তারই তো এখন নিজের পরিবারের পাশে ঢাল হয়ে দাঁড়াতে হবে।

চলবে………

সবাইকে অনেক অপেক্ষা করিয়েছি তাই সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী । আইডির জটিলতার কারণে এই দূরত্ব।
যাই হোক গল্পের থিম ভুলে গেলে কষ্ট করে আগের পর্বটা পরে নিবেন।
চেষ্টা করবো রাতে আরেক পর্ব দেবার । আর যদি না পারি তো কাল দুপুরে মধ্যেই পরবর্তী দিব । ইনশাআল্লাহ ♥️♥️
HAPPY READING 😊

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here